Ajker Patrika

বিএনপির সমাবেশ: রাজশাহীতে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, চলছে ধরপাকড়

আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২২, ২৩: ১৪
বিএনপির সমাবেশ: রাজশাহীতে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, চলছে ধরপাকড়

রাজশাহীতে ৮ শর্তে বিভাগীয় গণসমাবেশের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি। আগামী ৩ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে (হাজী মুহম্মদ মুহসীন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ) হবে গণসমাবেশ। এরই মধ্যে সমাবেশের আগে ১০ দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) থেকে রাজশাহী বিভাগে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছে পরিবহন মালিক সমিতি।

অন্যদিকে সমাবেশকে ঘিরে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে মামলা ও ধরপাকড়। রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলায় গতকাল ও আজ বুধবার মিলিয়ে ৭২ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া প্রায় ৪২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং হাজার খানেক অজ্ঞাত নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক রাতে বিএনপির ৬২ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) দিবাগত রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদরে ১১, শিবগঞ্জে ১৩, নাচোলে ১৯, গোমস্তাপুরে ১৪ ও ভোলাহাটে ৫ জন বিএনপি নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে স্থানীয় থানা-পুলিশ। পাঁচ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিস্ফোরক আইনের মামলায় আজ বুধবার (৩০ নভেম্বর) তাঁদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের একের পর এক মামলা করার অভিযোগ করেছে বিএনপি। ১০ দিনে জেলার ৫ থানায় বিস্ফোরক আইনে ৫টি মামলা হয়েছে বলে দাবি বিএনপি নেতাদের। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর বিভাগীয় গণসমাবেশ ঠেকাতে নেতা-কর্মীদের নামে পুলিশ এসব ‘গায়েবি মামলা’ করছে বলে অভিযোগ তাদের। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক গোলাম জাকারিয়া জানান, পুলিশের সাজানো মামলায় প্রায় ৪ শতাধিক কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। কাউকে বাড়ি থেকে, কাউকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা রাস্তা থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

রাজশাহী 
নাশকতার মামলায় রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার গনিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান রঞ্জুকে (৫৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩০ নভেম্বর) দুপুরে বাগমারার দেউলা চারমাথা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। মনিরুজ্জামান উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক। বিকেলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানান বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম।

বাঘা (রাজশাহী)
রাজশাহীর বাঘায় নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিএনপির তিন নেতাকে মামলায় গ্রেপ্তার করে বাঘা থানা-পুলিশ। বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, বাঘা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোখলেচুর রহমান মুকুল, জেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও উপজেলা যুবদলের আহবায়ক কমিটির সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক শফিকুল ইসলাম (শফি), উপজেলার পাকুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপি নেতা ফিরোজ হোসেন।

গত ১৯ নভেম্বর রাতে পাকুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতিসহ ১৫০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বাঘা থানায় উপপরিদর্শক (এসআই) শাহরিয়ার নাসিম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে, পাকুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি দস্তুল হোসেনকে। এ ছাড়া এজাহারে কয়েকজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে কয়েকজনকে।

পুঠিয়া (রাজশাহী)
রাজশাহীর পুঠিয়ায় নাশকতা মামলায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক নাজমুল ইসলাম মুক্তাকে (৫০) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বুধবার (৩০ নভেম্বর) ভোররাতের দিকে পুঠিয়া সদরের কাঠালবাড়িয়া গ্রামের বাসভবন থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জানা গেছে, স্থানীয় বিএনপির কর্মী সমাবেশ ঘিরে গত ২১ নভেম্বর রাতে পুঠিয়ার মোল্লাপাড়া বাজারে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানা পুলিশ ১৬ জনের নামে ও আরও শতাধিক অজ্ঞাতনামা আসামি করে নাশকতার মামলা দায়ের করে।

এ মামলায় গত ২১ নভেম্বর জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি অধ্যাপক খোরশেদ আলমকে মোল্লাপাড়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। থানার ওসি সোহরাওয়ার্দী হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জে আওয়ামী লীগ দলীয় কার্যালয়ের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনায় বিএনপির ২০ নেতা-কর্মীর নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ১৫০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) গভীর রাতে রায়গঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. জুয়েল আকন্দ বাদী হয়ে রায়গঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। রায়গঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসিফ মোহাম্মদ সিদ্দিকুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

মামলায় রায়গঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আইনুল হক, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস মন্ডল, জেলা বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক রেজাউল করীম খানসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরও ১৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ)
সিরাজগঞ্জের তাড়াশে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনার মামলায় বিএনপির ৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তাড়াশ থানার ভারপ্রাপ্ত  কর্মকর্তান (ওসি) মো. শহিদুল ইসলাম। মঙ্গলবার (২৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার তাড়াশ-রানীরহাট আঞ্চলিক সড়কের লাউতা চার মাথা আকবর আলী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তালম ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মোজ্জামেল হক মজনু বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১২০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে পুলিশ রাতভর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বিএনপির ৫ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, উপজেলার তালম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. সোহরাব হোসেন (৫৫), ইউনিয়ন যুব দলের আহ্বায়ক মো. দিদার খাঁন (৪২), তাড়াশ উপজেলা যুব দলের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাজিব আহম্মেদ মাসুম (৩৮), বারুহাস ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক  মুক্তার হোসেন সরকার (৪৫) ও মাধাইনগর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কালাম আজাদ (৪০)।

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ)
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর ও বেলকুচিতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাদের লক্ষ্য করে ককটেল বিস্ফোরণের অভিযোগ এনে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের ৩৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ২০৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বুধবার (৩০ নভেম্বর) সকালে খুকনী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ আফাজ উদ্দিন বেপারী বাদী হয়ে এনায়েতপুর থানায় বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করেন। এ ছাড়া গত রোববার রাতে বেলকুচি পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ আহম্মেদ উৎস বাদী হয়ে বেলকুচি থানায় পৃথক মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন এনায়েতপুর থানার ওসি আনিছুর রহমান।

প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন- চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, বাঘা (রাজশাহী), পুঠিয়া (রাজশাহী), সিরাজগঞ্জ, তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ), বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) ও সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মাদক কেনার টাকার জন্য সহকর্মীকে হত্যা, রিকশা ছিনতাই; গ্রেপ্তার ২

ফরিদপুর প্রতিনিধি
গ্রেপ্তার করা দুই আসামি। ছবি: আজকের পত্রিকা
গ্রেপ্তার করা দুই আসামি। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদক কেনার টাকা জোগাতে পূর্বপরিকল্পিতভাবে সহকর্মীকে হত্যা করে ব্যাটারিচালিত রিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল আসামিসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ফরিদপুর সদর উপজেলার চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের বাছের মোল্যা ডাঙ্গী এলাকার মৃত ফিরোজ খানের ছেলে রাজিব খান (৪১) ও শহরতলির বায়তুল আমান এলাকার মানিক হাওলাদারের ছেলে মো. মান্নান হাওলাদার (৩২)।

আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. আজমীর হোসেন। তিনি বলেন, রাজিব খান তাঁর সহকর্মী টিপু শেখকে (৪০) নেশাগ্রস্ত করে হত্যা করেন এবং ছিনতাই করা রিকশাটি মান্নান হাওলাদারের কাছে বিক্রি করেন। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে ছিনতাই হওয়া রিকশা ও হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ১৮ ডিসেম্বর সকালে সদর উপজেলার ঈশানগোপালপুর ইউনিয়নের চাঁদপুর এলাকার একটি কলাবাগান থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা মরদেহটি শহরতলির রঘুনন্দপুর এলাকার রিকশাচালক ও ইটভাটার শ্রমিক টিপু শেখের বলে শনাক্ত করেন। এই ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ভাই সিদ্দিক শেখ বাদী হয়ে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজমীর হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলের কাছেই নিহত ব্যক্তির ব্যবহৃত একটি মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফোনটির কললিস্ট ও অবস্থান বিশ্লেষণ এবং সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে রাজিব খানকে শনাক্ত করা হয়। পরে ২০ ডিসেম্বর ভোররাতে শহরতলির সিঅ্যান্ডবি ঘাট এলাকার মজিবুর রহমানের ইটভাটা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

আজমীর হোসেন আরও বলেন, আদালতে রাজিব খানের ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হলে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাঁর দেওয়া তথ্যে ছিনতাই হওয়া রিকশাটি উদ্ধার করা হয় এবং ক্রেতা মান্নান হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, নিহত টিপু শেখ ও রাজিব খান একই ইটভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। পাশাপাশি টিপু শেখ রিকশা চালাতেন। রাজিব খান মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং মাদক সংগ্রহের নামে বিভিন্ন খুচরা বিক্রেতার কাছ থেকে টাকা নিতেন। পরে সেই টাকা খরচ করে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ঋণদাতাদের চাপ ও মাদক কেনার অর্থ জোগাড়ের উদ্দেশ্যে তিনি টিপু শেখকে হত্যা করে রিকশা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন।

সংবাদ সম্মেলনে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক হিরামন বিশ্বাসসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা উপস্থিত ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নরসিংদীর পলাশে তাঁতশ্রমিকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার

নরসিংদী প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ১৬
আজ সকালে ডাঙ্গার কেন্দুয়াবো গ্রামের একটি তাঁত কারখানার পাশ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে ডাঙ্গার কেন্দুয়াবো গ্রামের একটি তাঁত কারখানার পাশ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

নরসিংদীর পলাশ উপজেলায় একটি তাঁত কারখানার শ্রমিকের রক্তাক্ত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত শ্রমিকের নাম এমরান মিয়া (৩০)। তিনি উপজেলার ডাঙ্গার কেন্দুয়াবো গ্রামের আমির ইসলামের ছেলে। আজ মঙ্গলবার সকালে ডাঙ্গার কেন্দুয়াবো গ্রামে একটি তাঁত কারখানার পাশ থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ ও নিহত ব্যক্তির পরিবার জানায়, এমরান বাড়ির পাশে মোস্তফা নামে এক ব্যক্তির তাঁত কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। গতকাল রাতে নাইট ডিউটির সময় তিনি হঠাৎ কারখানা থেকে বের হন। এরপর আর ফেরেননি। পরে ভোরে কারখানার এক শ্রমিক রাস্তার পাশে এমরানের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় বাসিন্দাদের জানান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।

পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে নিহত ব্যক্তির মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহেদ আল মামুন বলেন, পূর্বশত্রুতার জেরে এই হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনার রহস্য উদ্‌ঘাটন ও জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ কাজ করছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শরীয়তপুরে ছাত্রদল-এনসিপি সংঘর্ষের পর এনসিপির কার্যালয় তছনছ, বাড়িঘরে হামলা-ভাঙচুর

শরীয়তপুর প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫: ১২
এনসিপির জেলা কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
এনসিপির জেলা কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

শরীয়তপুরে ছাত্রদল ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা-কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের পর এনসিপির জেলা কার্যালয় ও এক কর্মীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল সোমবার (২২ ডিসেম্বর) রাত ৮টার দিকে এই হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা এই হামলা ও ভাঙচুর চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন জেলা এনসিপির সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সোহেল তালুকদার।

এর আগে সন্ধ্যায় শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন।

এই ঘটনায় এখনো কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ দায়ের করেনি বলে জানিয়েছেন পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদি হত্যার বিচারের দাবিতে এনসিপির জেলা সদস্যসচিব সবুজ তালুকদারের নেতৃত্বে সোমবার সন্ধ্যায় শরীয়তপুর শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি শহরের গার্লস স্কুল এলাকা থেকে শুরু হয়ে শরীয়তপুর-ঢাকা সড়কের চৌরঙ্গী মোড় অতিক্রম করে তামিম ফ্যামিলি ফুড সেন্টারের সামনে পৌঁছালে আকাশ নামের ছাত্রদলের এক কর্মী মোটরসাইকেল নিয়ে মিছিলের মধ্যে ঢুকে পড়েন। এ নিয়ে আকাশের সঙ্গে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ভুল-বোঝাবুঝি থেকে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।

এ সময় এনসিপির সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ছাত্রদল কর্মী আকাশকে রক্ষা করার জন্য চৌরঙ্গী মোড়ে নিয়ে আসেন।

এ সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে এনসিপির লোকজন ছাত্রদল কর্মী আকাশকে আটকে রেখে মারধর করছে।

এই খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সোহেল তালুকদারের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছান। এরপরই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

একপর্যায়ে সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নেয়। উভয় পক্ষ হাতবোমা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর হামলায় জড়িয়ে পড়ে। হাতবোমা বিস্ফোরণ ও অস্ত্রের আঘাতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ জন আহত হন। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং যান চলাচল সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এনসিপির কর্মী সাইফুজ্জামান খানের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা
এনসিপির কর্মী সাইফুজ্জামান খানের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। ছবি: আজকের পত্রিকা

আহত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন জেলা এনসিপির সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার (৩৮), ছাত্রদল কর্মী নিরব তালুকদার (১৮), আকাশ (২২), আরমান (২৬), মামুন (৩০), আবিদ খান (২৮), ইসাহাক সরদার (৩২), যুবদল কর্মী নাঈম ব্যাপারী (২৫), বিএনপি কর্মী মোহাম্মদ আলীসহ (৫০) আরও কয়েকজন। তাঁদেরকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহত যুবদল কর্মী নাঈম ব্যাপারীর অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।

নাঈমকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা পাঠানোর পর উত্তেজিত ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা একযোগে মিছিল নিয়ে এনসিপির জেলা কার্যালয় ও এনসিপি কর্মী সাইফুজ্জামান খানের বাড়িতে হামলা ও বাঙচুর চালান বলে অভিযোগ এনসিপির।

আজ মঙ্গলবার সকালে শরীয়তপুর জেলা শহরের গার্লস স্কুল-সংলগ্ন এনসিপির জেলা কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অফিসের সব চেয়ার-টেবিল, আলমারি, ফ্যানসহ সবকিছু তছনছ অবস্থায় পড়ে আছে। এদিকে শহরের চৌরঙ্গী মোড়-সংলগ্ন ব্যাপারীপাড়া এলাকায় এনসিপির কর্মী সাইফুজ্জামান খানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির দরজা-জানালা, টিনের বেড়া, চেয়ার-টেবিল, হাঁস-মুরগির খোঁয়াড়সহ বিভিন্ন মালপত্র ভাঙচুর অবস্থায় পড়ে আছে।

এ বিষয়ে জেলা এনসিপির সদস্যসচিব সবুজ তালুকদার বলেন, ‘ওসমান হাদির হত্যার প্রতিবাদে গতকাল আমরা এনসিপির পক্ষ থেকে শহরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করি। আমাদের মিছিলে ছাত্রদলের এক কর্মী ঢুকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। পরে এ নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আমি ওই ছাত্রদল কর্মীকে রক্ষা করার জন্য তাকে চৌরঙ্গী মোড়ে নিয়ে আসি। তখন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে গুজব ছড়ায়, আমরা তাকে আটকে রেখে মারধর করছি। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সোহেল তালুকদারের নেতৃত্বে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্র ও হাতবোমা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। এতে আমাদের সাত-আটজন আহত হন। আহত ব্যক্তিদের বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়ার সময় ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা আবারও সংগঠিত হয়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এনসিপির জেলা কার্যালয় ও কর্মী সাইফুজ্জামান খানের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। সেই সঙ্গে ঘটনায় জড়িত ছাত্রদল, যুবদলের সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাই।’

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব সোহেল তালুকদার বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় ছাত্রদল কর্মী আকাশকে ধরে নিয়ে মারধর করে এনসিপির লোকজন। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গেলে তারা আমাদের ওপরও হামলা করে। এনসিপির সন্ত্রাসীরা আমাদের ওপর একাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে আমাদের সাতজন গুরুতর আহত হন। বোমা হামলার ঘটনা ভিন্ন খাতে নিতে এনসিপির লোকজন নিজেরাই নিজেদের অফিস ও বাড়িঘর ভাঙচুর করে ছাত্রদলের ওপর দোষ চাপাচ্ছে। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিচার দাবি করছি।’

পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম বলেন, ‘তুচ্ছ ঘটনায় ভুল-বোঝাবুঝি থেকে এনসিপি ও ছাত্রদলের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে জানতে পারি এনসিপির কার্যালয় ও একজনের বাড়িতে ভাঙচুর করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো পক্ষই এখনো অভিযোগ দায়ের করেনি। জানতে পেরেছি, দুই দলের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন: বিএনপির নেতা-কর্মীদের বহনে পশ্চিমে চার জোড়া বিশেষ ট্রেন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে দলের নেতা-কর্মীদের ঢাকায় নিতে বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) চার জোড়া বিশেষ ট্রেন চালাবে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে। এ জন্য বিভিন্ন রুটের তিনটি ট্রেনের স্বাভাবিক যাত্রা স্থগিত করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘খুলনা-ঢাকা-খুলনা, যশোর-ঢাকা-যশোর, চাটমোহর-ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট-চাটমোহর এবং পঞ্চগড়-ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে একটি করে ট্রেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ও সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিএনপির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ট্রেনগুলো আপ ও ডাউন মিলিয়ে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এসব ট্রেনে প্রায় ১ হাজার ৯০০ যাত্রী পরিবহন করা যাবে।’

ফরিদ আহমেদ জানান, বিশেষ ট্রেন চালানোর কারণে রাজবাড়ী কমিউটার (রাজবাড়ী-পোড়াদহ), ঢালারচর এক্সপ্রেস (পাবনা-রাজশাহী) ও রহনপুর কমিউটার (রহনপুর-রাজশাহী) ট্রেনের স্বাভাবিক চলাচল এক দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।

এ সময় সাময়িক অসুবিধার জন্য নিয়মিত যাত্রীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের মহাব্যবস্থাপক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত