আব্দুর রহমান

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা জোহানেসবার্গে শুরু হয়েছে বিশ্বের উদীয়মান শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—জোট ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন। কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বলয়ের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব ভূরাজনীতিকেও নতুন মোড়ে টেনে এসেছে। এমন সময়ে এবারের ব্রিকস সম্মেলনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক নানা বিষয়ে জোরালো অবস্থান তৈরির মাধ্যমে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই জোট। এবারের সম্মেলন দেশগুলোর জন্য গর্বের ও মুক্তির এবং একই সঙ্গে অস্বস্তিরও।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মেলনে সশরীরে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই মুহূর্তে জোটের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির। এতে আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটাই নির্ভার। কারণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পুতিন সম্মেলনে এলে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ বিপদেই পড়ত। সদস্য দেশ হিসেবে আদালতের নির্দেশনা মেনে সহযোগিতা করতে হতো দেশটিকে।
যেসব বিষয়কে সামনে রেখে ব্রিকস সম্মেলন শুরু হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈরথের প্রভাব মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা উল্লেখযোগ্য। আর এখানেই প্রশ্ন আসে, তাহলে কি ব্রিকস পশ্চিমা বিশ্ববিরোধী অবস্থান নিতে যাচ্ছে? কিংবা তারা নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়তে যাচ্ছে—নিদেনপক্ষে এমন কোনো চেষ্টা করছে কি?
চলতি বছরের মাঝামাঝি কেপটাউনে অনুষ্ঠিত ব্রিকস জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে রাশিয়ার সাংবাদিকেরা বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হার্ডিংকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তোমাদের পশ্চিমা দুনিয়ায় মানবাধিকারের স্বর্গ সাজাতে থাকো। আমরা দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে যাচ্ছি।’
কিন্তু চাইলেই কি ব্রিকস দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে পারবে? এর জন্য ব্রিকসের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলির বোঝাপড়া জরুরি। ২০০১ সালের দিকে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাস প্রথম চারটি দেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য অগ্রগতি বোঝাতে ব্রিক-বিআরআইসি (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) ধারণা নিয়ে আসে। চীনের উদ্যোগে এর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে যাত্রা শুরু করে ব্রিকস। প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে।
যাত্রা শুরুর পর অনেক বিশ্লেষক ধারণা করেন, ব্রিকস শিগগিরই শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করবে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরুতে কিছুটা সংশয় তৈরি করে। কিন্তু বাস্তবে বিশ্লেষকদের ধারণাকে জোরালো করে জোট বিকশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২ আগস্ট জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে।
এই সম্মেলনে উল্লিখিত দুটি বিষয় ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে, তাহলো জোটের বিস্তার। এই বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট—চীন ও রাশিয়া জোটের সম্প্রসারণ চায়। কিন্তু ভারত ও ব্রাজিলের অবস্থান এর বিপরীত। ‘বৃহত্তর ব্রিকস’-এর অর্থ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি আসন্ন। কিন্তু সেটা সামরিক হুমকি না হওয়া এখনই পশ্চিমের অতটা ভীত হওয়ার কিছু নেই।
পশ্চিমা বিশ্বের ভীত না হওয়ার কারণ জোটের গঠনের মধ্যেই নিহিত। কারণ, জোটের দেশগুলো আদর্শিক বা শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর দিক থেকে এক রকম নয়। যেমন—ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চললেও চীন-রাশিয়ায় তা নেই। শুধু তা-ই নয়, এ দুই দেশ পশ্চিমা গণতন্ত্র ও উদারনৈতিকতার বড় সমালোচকও। ভারত, চীন ও রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর হলেও ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা তা নয়। আবার ব্রাজিল ও রাশিয়ার পণ্যের অন্যতম বড় গন্তব্যস্থল চীন হলেও এর বিপরীত হার খুবই সামান্য। অর্থাৎ তাদের মধ্যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু জোটের বাকি সদস্য দেশগুলোর মোট অর্থনীতির আকার চীনের চেয়ে অনেক ছোট। এ ছাড়া ভারত ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া জোটের এখনো কোনো নির্দিষ্ট সনদ, গঠনতন্ত্র বা সদস্য গ্রহণের নির্ধারিত কোনো শর্তাবলি নেই।
ফলে জোটের টিকে থাকার বিষয়টি এখনো একটি মৌলিক প্রশ্ন। তবে জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যেমন মতপার্থক্য রয়েছে, তেমনি আবার জোটকে টিকিয়ে রাখার জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। এর একটি হলো পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ‘গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের’ দেশগুলোকে (পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো) একপাশে সরিয়ে রেখেছে সে বিষয়ে মুখর ব্রিকসের দেশগুলো। পাশাপাশি দেশগুলো চেষ্টা করছে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। যার ফলে অধিকাংশ দেশকেই অল্প কয়েকটি দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।
জোটের টিকে থাকার আরেকটি কারণ হলো—নিজের সম্মান রক্ষা করা। বিশেষ করে যেসব দেশ বিশ্বসম্প্রদায়ে টিকে থাকতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যেমন ২০১৩ সালের পর থেকে ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সামষ্টিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশেরও কম। বিপরীতে ভারত ও চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশেরও বেশি। ফলে নিজেদের সম্মান রক্ষায় কিছু দেশের জন্য জোটে থাকাটা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্রিকস সম্মেলনকে বড় করে দেখানোটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। টানা কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকার পর এই প্রথম দলটির ক্ষমতার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে।
এর বাইরে জোটটি পতিতদের আশ্রয়স্থলে হিসেবে একটি ভালো জায়গা। যেমন ব্রাজিলে যখন জাইর বলসোনারে ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মিত্র ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলসোনারোর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরে বলসোনারো ব্রিকসকে নিজের আশ্রয় হিসেবে খুঁজে নেন। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত, তখন দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হলো ব্রিকস। ব্রিকসের সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ব্রিকসে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে দ্য ইকোনমিস্টের তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, জোটের উদ্দেশ্য কী? জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরও বন্ধু বাড়ানো।’
রাশিয়ার মতো চীনেরও অবস্থান একই। বেইজিংও চায় জোট সম্প্রসারিত হোক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা মিত্ররা যেভাবে চীনের সঙ্গে আচরণ করছে তাতে ব্রিকসের মাধ্যমে নতুন ‘বন্ধু’ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অমূলক নয়। কারণ, চীনের দৃষ্টি থেকে বিবেচনা করলে পশ্চিমা বিশ্বের বিপরীতে একটি পাল্টা জোট হয়ে ওঠার যতটা সম্ভাবনা রয়েছে অন্য জোট—সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, জি-২০-এর সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা অনেকটাই ইউরেশিয়া চরিত্রের এবং জি-২০ জোটেও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর প্রাধান্য। তাই পশ্চিমা বিশ্বের ‘ক্ষুদ্র বৃত্তের’ বিপরীতে ব্রিকসকে একটি ‘বড় পরিবারে’ পরিণত করতেই আগ্রহ বেশি।
চীন যে এই প্রথম সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর আগে, বেইজিংই দক্ষিণ আফ্রিকাকে জোটের নেওয়ার উকালতি করেছিল। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় বেইজিং আবারও জোটে সদস্য বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। যদিও জোটে সদস্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবারই ঐকমত্য জরুরি তারপরও চীনের প্রভাব উপেক্ষা করা অনেকটাই কঠিন। কারণ ব্রিকসের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ একাই করে থাকে চীন। যার বড় ভোক্তা আবার বাকি চার দেশ।
জোটটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দেশগুলো সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছে তার তালিকা প্রকাশ করেনি। তবে দ্য ইকোনমিস্ট বিভিন্ন শর্ত মিলিয়ে হিসেবে করে দেখেছে যে ১৮টি দেশ সম্ভবত ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। এই তালিকায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য। ব্রিকসে জোট দেওয়ার মাধ্যমে দেশ দুটি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নিতে চায়।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো জনবহুল এবং এত দিন জোট নিরপেক্ষ বলে পরিচিত দেশও জোটের সদস্য হতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমা মানদণ্ডের মানবাধিকারের যে সমালোচনা তা থেকে আশ্রয় খুঁজে পাওয়া। এর বাইরে আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়ার মতো জনবহুল দেশগুলোও জোটের সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত যদি এই ১৮টি দেশই জোটের সদস্য হয়ে যায়, তবে হয়তো জোটটি নতুন নাম নেবে। এ ছাড়া জোটটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল জোটে পরিণত হবে এবং জোটের মোট জিডিপির পরিমাণ হবে বিশ্বের মোট জিডিপির ৩৪ শতাংশ।
জোটকে কার্যকরী করতে ব্রিকস দেশগুলো শিক্ষা, গবেষণা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রী, থিংক ট্যাংক এমনকি ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রতিনিধি পর্যায়ের সম্মেলনও আয়োজন করছে নিয়মিত। কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়ে গেল ব্রিকস ইয়ুথ সামিট। রাশিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকের আগেই ব্রিকস গেমসের আয়োজন করবে। এই যে আন্তদেশীয় সফট টুলসের ব্যবহার এগুলো জোটের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে ব্রাজিলীয় থিংক ট্যাংক গুতলিও ভার্গাস ফাউন্ডেশনের ফেলো অলিভার স্টুয়েঙ্কেল বলেন, ‘এসব বৈঠক চরিত্রগত দিক থেকে খুব নিরামিষ হলেও এগুলো কূটনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়।’
জোটের টিকে থাকার ক্ষেত্রে আরও বড় একটি রক্ষাকবচ হলো দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেগুলো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, মিনি বিশ্বব্যাংক এবং মিনি আইএমএফ। সদস্য দেশগুলোকে সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারাঞ্জমেন্ট বা সিআরএ—যা মিনি আইএমএফ নামে পরিচিত। সহজশর্তে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এনডিবি। ২০১৫ সালে গঠনের পর থেকে মিনি বিশ্বব্যাংক বা এনডিবি ৩৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এনডিবি এখনো অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া এনডিবির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা এখনো বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় কম। বিষয়টি আমলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যানিয়েল ব্র্যাডলো বলেন, বিশ্বব্যাংক এনডিবির তুলনায় এখনো অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ।
অনেক সীমাবদ্ধতার পরও টিকে থাকার চেষ্টায় ব্রিকস অনেকটাই সফল। তবে জোটটির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, তা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে ভারত-চীন সম্পর্ক, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক, ভারত ও ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক ইত্যাদি সমীকরণ মেলানোর পর বোঝা যাবে আসলে জোটের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দুর্বলতা থাকলেও তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিশেষ করে জোট সম্প্রসারণ এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে জোটের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও এ বিষয়ে যে নজর রয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তিনটি মহাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিধি করা ব্রিকসের দেশগুলোর একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, আর তা হলো, ধনী পশ্চিমাশক্তির হয়ে কাজ করা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অনীহা।
এ বিষয়ে এশিয়া ও ব্রিকসবিষয়ক দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ অনিল সুকলাল গত শুক্রবার এএফপিকে বলেন, এই জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ছে কোনো কোনো দেশের। এর অন্যতম কারণ, মেরুকৃত বিশ্বের আরও মেরুকরণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে। তাই দেশগুলোকে বাধ্য হয়ে কোনো পক্ষে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলো কাকে সমর্থন করবে, কীভাবে আচরণ করবে এবং কীভাবে তাদের সার্বভৌম বিষয়গুলো পরিচালনা করবে, তা বলতে চায় না। তারা এখন তাদের নিজ নিজ অবস্থান জাহির করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’ ফলে ‘বিশ্বকাঠামো’ পুনর্গঠন করতে চাওয়া দেশগুলোর জন্য ব্রিকস আশা জাগিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
লিম্পোপো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাষক লেবোগং লেগোডি এই বিষয়ে একমত যে বর্তমান বিশ্বে কর্তৃত্বের বিকল্প হিসেবে অনেক দেশই এখন ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু ব্রিকসের প্রতি নজর রাখা বিশ্লেষকেরা এই সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। কেননা, বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ক্ষমতা এখনো পশ্চিমা দেশগুলোর হাতেই রয়েছে এবং চীন এখনো প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠেনি।
সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান তার পালে হাওয়া লাগবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি, দ্য ইকোনমিস্ট এবং বিবিসি

দক্ষিণ আফ্রিকার সবচেয়ে সম্পদশালী এলাকা জোহানেসবার্গে শুরু হয়েছে বিশ্বের উদীয়মান শীর্ষ পাঁচ অর্থনীতির—ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা—জোট ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন। কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পর বিশ্ব অর্থনীতি নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে; যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বলয়ের সঙ্গে চীন ও রাশিয়ার নানামাত্রিক দ্বন্দ্ব ভূরাজনীতিকেও নতুন মোড়ে টেনে এসেছে। এমন সময়ে এবারের ব্রিকস সম্মেলনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, পশ্চিমা বিশ্বের আধিপত্য মোকাবিলায় এবং বৈশ্বিক নানা বিষয়ে জোরালো অবস্থান তৈরির মাধ্যমে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এই জোট। এবারের সম্মেলন দেশগুলোর জন্য গর্বের ও মুক্তির এবং একই সঙ্গে অস্বস্তিরও।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মেলনে সশরীরে যোগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া—এই মুহূর্তে জোটের জন্য সবচেয়ে স্বস্তির। এতে আয়োজক দক্ষিণ আফ্রিকা অনেকটাই নির্ভার। কারণ, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পুতিন সম্মেলনে এলে নেলসন ম্যান্ডেলার দেশ বিপদেই পড়ত। সদস্য দেশ হিসেবে আদালতের নির্দেশনা মেনে সহযোগিতা করতে হতো দেশটিকে।
যেসব বিষয়কে সামনে রেখে ব্রিকস সম্মেলন শুরু হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক সংকট কাটিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের দ্বৈরথের প্রভাব মোকাবিলা করে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায়, তা উল্লেখযোগ্য। আর এখানেই প্রশ্ন আসে, তাহলে কি ব্রিকস পশ্চিমা বিশ্ববিরোধী অবস্থান নিতে যাচ্ছে? কিংবা তারা নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়তে যাচ্ছে—নিদেনপক্ষে এমন কোনো চেষ্টা করছে কি?
চলতি বছরের মাঝামাঝি কেপটাউনে অনুষ্ঠিত ব্রিকস জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে রাশিয়ার সাংবাদিকেরা বিবিসির সাংবাদিক অ্যান্ড্রু হার্ডিংকে বলেছিলেন, ‘তোমরা তোমাদের পশ্চিমা দুনিয়ায় মানবাধিকারের স্বর্গ সাজাতে থাকো। আমরা দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে যাচ্ছি।’
কিন্তু চাইলেই কি ব্রিকস দুনিয়াকে নতুন করে গড়তে পারবে? এর জন্য ব্রিকসের অভ্যন্তরীণ ঘটনাবলির বোঝাপড়া জরুরি। ২০০১ সালের দিকে বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাস প্রথম চারটি দেশের অর্থনীতির সম্ভাব্য অগ্রগতি বোঝাতে ব্রিক-বিআরআইসি (ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন) ধারণা নিয়ে আসে। চীনের উদ্যোগে এর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকে যুক্ত করে যাত্রা শুরু করে ব্রিকস। প্রথম সম্মেলন হয় ২০০৯ সালে।
যাত্রা শুরুর পর অনেক বিশ্লেষক ধারণা করেন, ব্রিকস শিগগিরই শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-৭-এর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু করবে। তবে অভ্যন্তরীণ কোন্দল শুরুতে কিছুটা সংশয় তৈরি করে। কিন্তু বাস্তবে বিশ্লেষকদের ধারণাকে জোরালো করে জোট বিকশিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ২২ আগস্ট জোটের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলন হচ্ছে।
এই সম্মেলনে উল্লিখিত দুটি বিষয় ছাড়াও অন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্ব পাবে, তাহলো জোটের বিস্তার। এই বিষয়ে সদস্য দেশগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট—চীন ও রাশিয়া জোটের সম্প্রসারণ চায়। কিন্তু ভারত ও ব্রাজিলের অবস্থান এর বিপরীত। ‘বৃহত্তর ব্রিকস’-এর অর্থ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য বড় হুমকি আসন্ন। কিন্তু সেটা সামরিক হুমকি না হওয়া এখনই পশ্চিমের অতটা ভীত হওয়ার কিছু নেই।
পশ্চিমা বিশ্বের ভীত না হওয়ার কারণ জোটের গঠনের মধ্যেই নিহিত। কারণ, জোটের দেশগুলো আদর্শিক বা শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর দিক থেকে এক রকম নয়। যেমন—ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকায় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা চললেও চীন-রাশিয়ায় তা নেই। শুধু তা-ই নয়, এ দুই দেশ পশ্চিমা গণতন্ত্র ও উদারনৈতিকতার বড় সমালোচকও। ভারত, চীন ও রাশিয়া পারমাণবিক শক্তিধর হলেও ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকা তা নয়। আবার ব্রাজিল ও রাশিয়ার পণ্যের অন্যতম বড় গন্তব্যস্থল চীন হলেও এর বিপরীত হার খুবই সামান্য। অর্থাৎ তাদের মধ্যে বড় বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু জোটের বাকি সদস্য দেশগুলোর মোট অর্থনীতির আকার চীনের চেয়ে অনেক ছোট। এ ছাড়া ভারত ও চীনের মধ্যে ঐতিহাসিকভাবে সীমান্ত নিয়ে বিরোধ রয়েছে। এ ছাড়া জোটের এখনো কোনো নির্দিষ্ট সনদ, গঠনতন্ত্র বা সদস্য গ্রহণের নির্ধারিত কোনো শর্তাবলি নেই।
ফলে জোটের টিকে থাকার বিষয়টি এখনো একটি মৌলিক প্রশ্ন। তবে জোটের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে যেমন মতপার্থক্য রয়েছে, তেমনি আবার জোটকে টিকিয়ে রাখার জন্য একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও রয়েছে। এর একটি হলো পশ্চিমা বিশ্বের সমালোচনা। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও জাতিসংঘের মতো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে ‘গ্লোবাল সাউথ বা বৈশ্বিক দক্ষিণের’ দেশগুলোকে (পৃথিবীর দক্ষিণ গোলার্ধের দেশগুলো) একপাশে সরিয়ে রেখেছে সে বিষয়ে মুখর ব্রিকসের দেশগুলো। পাশাপাশি দেশগুলো চেষ্টা করছে গ্লোবাল সাউথের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠার। এ বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছিলেন, বিশ্বের অর্থনৈতিক শক্তি এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। যার ফলে অধিকাংশ দেশকেই অল্প কয়েকটি দেশের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে।
জোটের টিকে থাকার আরেকটি কারণ হলো—নিজের সম্মান রক্ষা করা। বিশেষ করে যেসব দেশ বিশ্বসম্প্রদায়ে টিকে থাকতে সংগ্রাম করে যাচ্ছে। যেমন ২০১৩ সালের পর থেকে ব্রাজিল, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার সামষ্টিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ১ শতাংশেরও কম। বিপরীতে ভারত ও চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ শতাংশেরও বেশি। ফলে নিজেদের সম্মান রক্ষায় কিছু দেশের জন্য জোটে থাকাটা অনেকটা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের জন্য ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য ব্রিকস সম্মেলনকে বড় করে দেখানোটা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। টানা কয়েক দশক ক্ষমতায় থাকার পর এই প্রথম দলটির ক্ষমতার ভিত নড়বড়ে হয়ে গেছে।
এর বাইরে জোটটি পতিতদের আশ্রয়স্থলে হিসেবে একটি ভালো জায়গা। যেমন ব্রাজিলে যখন জাইর বলসোনারে ক্ষমতায় ছিলেন তখন তিনি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর মিত্র ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার পর যুক্তরাষ্ট্র বলসোনারোর ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। পরে বলসোনারো ব্রিকসকে নিজের আশ্রয় হিসেবে খুঁজে নেন। একইভাবে ইউক্রেন যুদ্ধের পর থেকে রাশিয়া যখন পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় জর্জরিত, তখন দেশটির জন্য সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা হলো ব্রিকস। ব্রিকসের সর্বশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে ব্রিকসে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতকে দ্য ইকোনমিস্টের তরফ থেকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, জোটের উদ্দেশ্য কী? জবাবে রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আরও বন্ধু বাড়ানো।’
রাশিয়ার মতো চীনেরও অবস্থান একই। বেইজিংও চায় জোট সম্প্রসারিত হোক। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর পশ্চিমা মিত্ররা যেভাবে চীনের সঙ্গে আচরণ করছে তাতে ব্রিকসের মাধ্যমে নতুন ‘বন্ধু’ বাড়ানোর প্রচেষ্টা অমূলক নয়। কারণ, চীনের দৃষ্টি থেকে বিবেচনা করলে পশ্চিমা বিশ্বের বিপরীতে একটি পাল্টা জোট হয়ে ওঠার যতটা সম্ভাবনা রয়েছে অন্য জোট—সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা, জি-২০-এর সে রকম সম্ভাবনা নেই। কারণ, সাংহাই সহযোগিতা সংস্থা অনেকটাই ইউরেশিয়া চরিত্রের এবং জি-২০ জোটেও পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলোর প্রাধান্য। তাই পশ্চিমা বিশ্বের ‘ক্ষুদ্র বৃত্তের’ বিপরীতে ব্রিকসকে একটি ‘বড় পরিবারে’ পরিণত করতেই আগ্রহ বেশি।
চীন যে এই প্রথম সদস্য বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে তা কিন্তু নয়। এর আগে, বেইজিংই দক্ষিণ আফ্রিকাকে জোটের নেওয়ার উকালতি করেছিল। এখন ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় বেইজিং আবারও জোটে সদস্য বাড়ানোর দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। যদিও জোটে সদস্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে সবারই ঐকমত্য জরুরি তারপরও চীনের প্রভাব উপেক্ষা করা অনেকটাই কঠিন। কারণ ব্রিকসের মোট উৎপাদনের প্রায় ৭০ শতাংশ একাই করে থাকে চীন। যার বড় ভোক্তা আবার বাকি চার দেশ।
জোটটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোন দেশগুলো সদস্য হওয়ার জন্য আবেদন করেছে তার তালিকা প্রকাশ করেনি। তবে দ্য ইকোনমিস্ট বিভিন্ন শর্ত মিলিয়ে হিসেবে করে দেখেছে যে ১৮টি দেশ সম্ভবত ব্রিকসের সদস্য হতে চায়। এই তালিকায় বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক প্রভাবশালী দেশ রয়েছে। এসব দেশের মধ্যে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত উল্লেখযোগ্য। ব্রিকসে জোট দেওয়ার মাধ্যমে দেশ দুটি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক নতুন করে ঝালিয়ে নিতে চায়।
বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়ার মতো জনবহুল এবং এত দিন জোট নিরপেক্ষ বলে পরিচিত দেশও জোটের সদস্য হতে চায়। তাদের উদ্দেশ্য হলো পশ্চিমা মানদণ্ডের মানবাধিকারের যে সমালোচনা তা থেকে আশ্রয় খুঁজে পাওয়া। এর বাইরে আর্জেন্টিনা, ইথিওপিয়া, মেক্সিকো ও নাইজেরিয়ার মতো জনবহুল দেশগুলোও জোটের সদস্য হওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। শেষ পর্যন্ত যদি এই ১৮টি দেশই জোটের সদস্য হয়ে যায়, তবে হয়তো জোটটি নতুন নাম নেবে। এ ছাড়া জোটটি বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল জোটে পরিণত হবে এবং জোটের মোট জিডিপির পরিমাণ হবে বিশ্বের মোট জিডিপির ৩৪ শতাংশ।
জোটকে কার্যকরী করতে ব্রিকস দেশগুলো শিক্ষা, গবেষণা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, মন্ত্রী, থিংক ট্যাংক এমনকি ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রতিনিধি পর্যায়ের সম্মেলনও আয়োজন করছে নিয়মিত। কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকায় হয়ে গেল ব্রিকস ইয়ুথ সামিট। রাশিয়া এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছে তাঁরা আগামী বছর প্যারিস অলিম্পিকের আগেই ব্রিকস গেমসের আয়োজন করবে। এই যে আন্তদেশীয় সফট টুলসের ব্যবহার এগুলো জোটের স্থায়ীত্ব বাড়ানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ বিষয়ে ব্রাজিলীয় থিংক ট্যাংক গুতলিও ভার্গাস ফাউন্ডেশনের ফেলো অলিভার স্টুয়েঙ্কেল বলেন, ‘এসব বৈঠক চরিত্রগত দিক থেকে খুব নিরামিষ হলেও এগুলো কূটনীতিবিদদের বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক বাড়ানোর সুযোগ করে দেয়।’
জোটের টিকে থাকার ক্ষেত্রে আরও বড় একটি রক্ষাকবচ হলো দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। যেগুলো রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ বলেন, মিনি বিশ্বব্যাংক এবং মিনি আইএমএফ। সদস্য দেশগুলোকে সহজশর্তে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে কন্টিনজেন্ট রিজার্ভ অ্যারাঞ্জমেন্ট বা সিআরএ—যা মিনি আইএমএফ নামে পরিচিত। সহজশর্তে উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়ার জন্য গঠিত হয়েছে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা এনডিবি। ২০১৫ সালে গঠনের পর থেকে মিনি বিশ্বব্যাংক বা এনডিবি ৩৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ঋণ দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের তুলনায় ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এনডিবি এখনো অনেক পিছিয়ে। এ ছাড়া এনডিবির কার্যক্রমের স্বচ্ছতা এবং অন্যান্য বিষয়ে দক্ষতা এখনো বিশ্ব ব্যাংকের তুলনায় কম। বিষয়টি আমলে নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড্যানিয়েল ব্র্যাডলো বলেন, বিশ্বব্যাংক এনডিবির তুলনায় এখনো অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং দায়বদ্ধ।
অনেক সীমাবদ্ধতার পরও টিকে থাকার চেষ্টায় ব্রিকস অনেকটাই সফল। তবে জোটটির ভবিষ্যৎ কোন পথে যাবে, তা অনেকগুলো শর্তের ওপর নির্ভর করে। বিশেষ করে ভারত-চীন সম্পর্ক, ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক, ভারত ও ব্রাজিলের সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের সম্পর্ক ইত্যাদি সমীকরণ মেলানোর পর বোঝা যাবে আসলে জোটের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে দুর্বলতা থাকলেও তারা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। বিশেষ করে জোট সম্প্রসারণ এবং নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার বিষয়ে। এ বিষয়ে জোটের দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি পরিষ্কার না হলেও এ বিষয়ে যে নজর রয়েছে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, তিনটি মহাদেশের কোটি কোটি মানুষের প্রতিনিধি করা ব্রিকসের দেশগুলোর একটি বিষয়ে মিল রয়েছে, আর তা হলো, ধনী পশ্চিমাশক্তির হয়ে কাজ করা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি অনীহা।
এ বিষয়ে এশিয়া ও ব্রিকসবিষয়ক দক্ষিণ আফ্রিকার অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ অনিল সুকলাল গত শুক্রবার এএফপিকে বলেন, এই জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহ বাড়ছে কোনো কোনো দেশের। এর অন্যতম কারণ, মেরুকৃত বিশ্বের আরও মেরুকরণ হচ্ছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে। তাই দেশগুলোকে বাধ্য হয়ে কোনো পক্ষে যেতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘দক্ষিণের দেশগুলো কাকে সমর্থন করবে, কীভাবে আচরণ করবে এবং কীভাবে তাদের সার্বভৌম বিষয়গুলো পরিচালনা করবে, তা বলতে চায় না। তারা এখন তাদের নিজ নিজ অবস্থান জাহির করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী।’ ফলে ‘বিশ্বকাঠামো’ পুনর্গঠন করতে চাওয়া দেশগুলোর জন্য ব্রিকস আশা জাগিয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে।
লিম্পোপো বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রভাষক লেবোগং লেগোডি এই বিষয়ে একমত যে বর্তমান বিশ্বে কর্তৃত্বের বিকল্প হিসেবে অনেক দেশই এখন ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহ দেখাচ্ছে। কিন্তু ব্রিকসের প্রতি নজর রাখা বিশ্লেষকেরা এই সম্মেলনের ফলাফল নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন। কেননা, বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ক্ষমতা এখনো পশ্চিমা দেশগুলোর হাতেই রয়েছে এবং চীন এখনো প্রভাবশালী শক্তি হয়ে ওঠেনি।
সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান তার পালে হাওয়া লাগবে।
তথ্যসূত্র: আল-জাজিরা, এএফপি, দ্য ইকোনমিস্ট এবং বিবিসি

আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান, তার পালে হাওয়া
২৩ আগস্ট ২০২৩
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান, তার পালে হাওয়া
২৩ আগস্ট ২০২৩
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান, তার পালে হাওয়া
২৩ আগস্ট ২০২৩
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

সব মিলিয়ে জোহানেসবার্গে চলমান ব্রিকস সম্মেলন জোটকে নতুন করে ‘সংজ্ঞায়িত’ করার মুহূর্ত। কারণ, জোটের সম্প্রসারণ একই সঙ্গে এতে চীনের প্রভাবকে বৃদ্ধি করবে এবং একই সঙ্গে জোটের পশ্চিমাবিরোধী মনোভাব বাড়বে, যা রাশিয়াকেও প্রকারান্তে সুবিধা দেবে। এতে নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়া নিয়ে যে আলোচনা চলমান, তার পালে হাওয়া
২৩ আগস্ট ২০২৩
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
২ দিন আগে