
ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। গত মাসে আরব লিগের ডাকা জরুরি বৈঠকেও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার’ আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে গাজায় অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরায়েল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে ২০০৫ সালে দখলদার দেশটি ৮ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেয় ও গাজা হামাসের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন কেউই সঠিকভাবে জানত না এই সিদ্ধান্তের ফল কী হবে বা ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কেউ কেউ আশা করেছিলেন, ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সদিচ্ছা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাবে। তবে অন্যরা এখানে ইসরায়েলের চতুর চক্রান্ত দেখেছিলেন। তাঁদের মতে, গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। এই অনুমানই সত্য হয়ে ফলেছে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনের এই অংশে কল্পনাতীতভাবে অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর থেকে একই ধরনের দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহতের পর আইডিএফ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে। এতে ৯ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর অধিকাংশই আবার শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা। তাঁরা এখন আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ দ্বিতীয় নাকবার (বিপর্যয়) দিকে নিয়ে যাবে। যেখানে ১৯৪৮ সালে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের উত্থানের সময় প্রথম নাকবায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। উগ্র-ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীরা আশা করছেন, এই যুদ্ধ গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং সরিয়ে নেওয়া ইহুদি বসতি পুনর্নির্মাণের সুযোগ দেবে। এত কিছুর মধ্যেও বাইডেন আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেবে।
আপাতত, দ্বি-রাষ্ট্র বা শান্তি চুক্তি এক দূরের স্বপ্ন। হামাসের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বলে জানাচ্ছেন ইসরায়েলি জেনারেলরা। তবে যুদ্ধ শেষে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে হস্তান্তর করার আশা করছে ইসরায়েল ও বিশ্ব মোড়লেরা। পিএর সঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে। তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি ছাড়া এমন কিছু মেনে নেবেন বলে মনে হয় না।
যা হোক, গাজা যুদ্ধের পর একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বা যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বিবেচনা করা দরকার। এর জন্য বিস্তৃত রূপরেখা কয়েক দশক ধরে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি। গাজা ও পশ্চিম তীর মিলে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে; ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশের জন্য তার ভূখণ্ডের অংশ অদলবদল করবে, যেখানে তারা বড় বসতি তৈরি করেছে। জেরুজালেম বিভক্ত হবে, পুরোনো শহরের ওপর একধরনের যৌথ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী ইসরায়েলে ফিরে যেতে পারে, বাকিরা ফিলিস্তিন বা অন্য কোথাও তাঁদের বর্তমান বাড়িতে বসতি স্থাপন করবে। তবে ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সামরিক বাহিনী মুক্ত করার।
দুই দশকের গভীর আলোচনার পর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে অসলো চুক্তির আশাবাদী যুগ ও বারাক ওবামার অধীনে একটি অসংলগ্ন প্রচেষ্টার পর ২০১৪ সালে শান্তি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে বড় কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
আগের আলোচনা ঠিক যেখানে থেমেছিল, সেখান থেকেই নতুন আলোচনা শুরুর সুযোগ নেই। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সংকট।
২০২১ সালের শেষের দিক পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ছিল, যেখানে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির সময় এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০। বিষয়টি শান্তির জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বাধা হয়ে উঠেছে। এসব অবৈধ বসতি এমন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে যে এগুলো চুক্তিনামায় ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। কিন্তু অবৈধ বসতির সঙ্গে ইসরায়েলে রাজনৈতিক প্রভাবও বেড়ে গগনচুম্বী হয়েছে, ফলে তারা যেসব জমিতে বসতি স্থাপন করেনি সেগুলোও ছাড়তে চাইবে না।
সংকটের পটভূমিই সব
আঞ্চলিক রাজনীতির চিত্রও আরও জটিল। ২০০২ সালে আরব লীগ সৌদি আরবের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন দেয়, যেখানে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পর আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ছিল। ব্যাপারটি এমন যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিরোধের অবসান ঘটালেই ইসরায়েল সমস্ত আঞ্চলিক সংঘাত কাটিয়ে উঠতে পারবে। ওই সময় আরব দেশগুলোর এই শান্তি উদ্যোগকে একটি শক্তিশালী প্রস্তাব বলে ধারণা করে হয়েছিল।
আঞ্চলিক হামলার আশঙ্কামুক্ত হলেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মাটি ছাড়তে ইচ্ছুক হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকে এই অঞ্চলের সমর-রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে ইয়েমেনের হুথিরা এখন দেশ দুটিতে সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গোষ্ঠী দুটি যত দিন সক্রিয় থাকবে, ইসরায়েল তত দিন অনিরাপত্তায় ভুগবে। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো এখন আর চাইলেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ইতি টানতে পারবে না, অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোরও সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এদিকে একটি দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব বাস্তবায়ন বেশ ব্যয়বহুল হবে। যুদ্ধের আগেও ফিলিস্তিনিরা গাজা পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এই অর্থের পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ২০০০ সালে ব্যর্থ ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলনে আলোচকেরা ফিলিস্তিনিদের হারানো সম্পত্তির জন্য শরণার্থীদের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে, তারা নিজ দেশ ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের জন্য এই অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দাবি করবে।
তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য এখন বিশদ বিবরণী নয় বরং আলোচনা ও বাস্তবায়নের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উগ্র-ডানপন্থী এবং ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের জোটের সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনা হবে না। এই জোটের গাজা যুদ্ধের পরে টিকে থাকার সম্ভাবনাও নেই।
নেতানিয়াহুর বিরোধীরা আশা করছে, পরবর্তী সরকার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আরও উপযুক্ত হবে। একজন মধ্যপন্থী ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা হয়েছে যে তাঁদের (ফিলিস্তিনি) থেকে আমাদের ভালোভাবে আলাদা হতে হবে। এটি আলোচনা শুরুর উপযুক্ত সময়।’ কিন্তু উদার ও বামপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
ফিলিস্তিনের পক্ষে হামাস সব সময়ই উদ্দেশ্যহীন খেলায় আগ্রহী। নব্বইয়ের দশকে হামাসের প্রথম আত্মঘাতী-বোমা হামলা অসলো শান্তি প্রক্রিয়াকে ঘোলা পানিতে ডুবিয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত হামাসের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (অভ্যুত্থান) হত্যাযজ্ঞ দেখে একটি ইসরায়েলি প্রজন্ম আপসের ধারণা থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। এবার গাজা যুদ্ধের পর হামাস হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে—কিন্তু অন্য কোনো দল সেই জায়গা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে আস্থা হারিয়েছে। ইসরায়েলের একটি নির্দলীয় থিংক-ট্যাংক ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জরিপে দেখা গেছে, যে ইসরায়েলি ইহুদিদের মাত্র ৩২ শতাংশ দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব সমর্থন করে, যা পাঁচ বছর আগে ৪৭ শতাংশ ছিল।
ইসরায়েলি জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ আরব বংশোদ্ভূত, তাঁরা এখনো এই প্রস্তাব সমর্থন করছে, যদিও তাঁদের সমর্থনও কমে গেছে। ২০১৭ সালে ৮৭ শতাংশ ইসরায়েলি-আরব এর সমর্থন করত, যা ২০২২ সালে ৭১ শতাংশে নেমে এসেছে। ইসরায়েলি ইহুদিদের অধিকাংশই আবার বর্তমান পরিস্থিতিকেই পছন্দ করে।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমর্থন আরও কমে গেছে। প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের চলতি বছরের জুন পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ২৮ শতাংশ ফিলিস্তিনি এখন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রস্তাবকে সমর্থন করে। দশ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৩ শতাংশ, যদিও এটি সম্ভব বলে মনে করেছিল মাত্র ৩৯ শতাংশ ফিলিস্তিনিরা।
তবে আশাবাদীরা মনে করেন এই ফলাফলগুলো উপরি-উপরি। যেটা দৃশ্যত অসম্ভব সেটাকে সমর্থন দেবে না সেটাই স্বাভাবিক। একটি অর্থবহ শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে এই ফলাফল দ্রুত বদলে যাবে। একজন সাবেক ফিলিস্তিনি মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, আমাদের জনগণ দখলদারির অবসানের সুযোগ কখনো হাতছাড়া করবে।’ তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহের ঘটনাগুলো উভয় পক্ষকেই সমঝোতার ধারণার বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।
হামাসের আক্রমণের পর হাতে গোনা ইসরায়েলি জনসমক্ষে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বা সংঘাতের অন্য কোনো সমাধান নিয়ে কথা বলছেন। তবে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। এর কারণ হতে পারে, যুদ্ধের শেষ পরিস্থিতিই পরবর্তী পর্যায়ের রূপ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতেও অক্ষম।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে, এই সংকট নিয়ে তাহলে মধ্যস্থতা করবে কে তা নিয়ে। যদিও রাশিয়া এবং চীন উভয়ের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তবে তারা যে সত্যিই এগিয়ে আসবে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘সৎ দালাল’ হিসাবে এখানে আসতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইইউকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় না।
ফলে দায়িত্ব পড়ছে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার ঘাড়েই। তবে বাইডেন তাঁর শাসনামলের প্রথম তিন বছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ২০২৪ সালে তাঁর মাথায় হয়তো অন্যান্য বিষয় থাকবে। ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিরা কখনোই ক্ষমতার শেষপ্রান্তে থাকা কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কখনোই শান্তি আলোচনা শুরু করবে না—এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাইডেন আবার জয়ী হলে তিনি এ শান্তি প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে পারেন।
অপরদিকে, মধ্যস্থতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প হলে সে হবে এক ভিন্ন গল্প। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। যদিও পরিকল্পনাটি ছিল হাস্যকর ও পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট। ওই পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের মাত্র ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনের অনুকূলে দেওয়া, এই অঞ্চলের রুটির ঝুড়ি জর্ডান উপত্যকা ইসরায়েলের মালিকানায় দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেগেভের অনুর্বর মরুভূমির কিছু অংশ হস্তান্তর ও ফিলিস্তিনের রাজধানী পূর্ব জেরুজালেমের কয়েকটি নিঃস্ব উপকণ্ঠে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব ছিল। ফলে স্বভাবতই ফিলিস্তিনিরা প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করতেও অস্বীকার করে।
দ্য ইকোনোমিস্ট অবলম্বনে আবদুল বাছেদ

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। গত মাসে আরব লিগের ডাকা জরুরি বৈঠকেও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার’ আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে গাজায় অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরায়েল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে ২০০৫ সালে দখলদার দেশটি ৮ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেয় ও গাজা হামাসের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন কেউই সঠিকভাবে জানত না এই সিদ্ধান্তের ফল কী হবে বা ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কেউ কেউ আশা করেছিলেন, ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সদিচ্ছা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাবে। তবে অন্যরা এখানে ইসরায়েলের চতুর চক্রান্ত দেখেছিলেন। তাঁদের মতে, গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। এই অনুমানই সত্য হয়ে ফলেছে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনের এই অংশে কল্পনাতীতভাবে অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর থেকে একই ধরনের দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহতের পর আইডিএফ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে। এতে ৯ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর অধিকাংশই আবার শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা। তাঁরা এখন আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ দ্বিতীয় নাকবার (বিপর্যয়) দিকে নিয়ে যাবে। যেখানে ১৯৪৮ সালে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের উত্থানের সময় প্রথম নাকবায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। উগ্র-ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীরা আশা করছেন, এই যুদ্ধ গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং সরিয়ে নেওয়া ইহুদি বসতি পুনর্নির্মাণের সুযোগ দেবে। এত কিছুর মধ্যেও বাইডেন আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেবে।
আপাতত, দ্বি-রাষ্ট্র বা শান্তি চুক্তি এক দূরের স্বপ্ন। হামাসের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বলে জানাচ্ছেন ইসরায়েলি জেনারেলরা। তবে যুদ্ধ শেষে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে হস্তান্তর করার আশা করছে ইসরায়েল ও বিশ্ব মোড়লেরা। পিএর সঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে। তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি ছাড়া এমন কিছু মেনে নেবেন বলে মনে হয় না।
যা হোক, গাজা যুদ্ধের পর একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বা যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বিবেচনা করা দরকার। এর জন্য বিস্তৃত রূপরেখা কয়েক দশক ধরে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি। গাজা ও পশ্চিম তীর মিলে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে; ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশের জন্য তার ভূখণ্ডের অংশ অদলবদল করবে, যেখানে তারা বড় বসতি তৈরি করেছে। জেরুজালেম বিভক্ত হবে, পুরোনো শহরের ওপর একধরনের যৌথ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী ইসরায়েলে ফিরে যেতে পারে, বাকিরা ফিলিস্তিন বা অন্য কোথাও তাঁদের বর্তমান বাড়িতে বসতি স্থাপন করবে। তবে ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সামরিক বাহিনী মুক্ত করার।
দুই দশকের গভীর আলোচনার পর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে অসলো চুক্তির আশাবাদী যুগ ও বারাক ওবামার অধীনে একটি অসংলগ্ন প্রচেষ্টার পর ২০১৪ সালে শান্তি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে বড় কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
আগের আলোচনা ঠিক যেখানে থেমেছিল, সেখান থেকেই নতুন আলোচনা শুরুর সুযোগ নেই। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সংকট।
২০২১ সালের শেষের দিক পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ছিল, যেখানে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির সময় এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০। বিষয়টি শান্তির জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বাধা হয়ে উঠেছে। এসব অবৈধ বসতি এমন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে যে এগুলো চুক্তিনামায় ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। কিন্তু অবৈধ বসতির সঙ্গে ইসরায়েলে রাজনৈতিক প্রভাবও বেড়ে গগনচুম্বী হয়েছে, ফলে তারা যেসব জমিতে বসতি স্থাপন করেনি সেগুলোও ছাড়তে চাইবে না।
সংকটের পটভূমিই সব
আঞ্চলিক রাজনীতির চিত্রও আরও জটিল। ২০০২ সালে আরব লীগ সৌদি আরবের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন দেয়, যেখানে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পর আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ছিল। ব্যাপারটি এমন যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিরোধের অবসান ঘটালেই ইসরায়েল সমস্ত আঞ্চলিক সংঘাত কাটিয়ে উঠতে পারবে। ওই সময় আরব দেশগুলোর এই শান্তি উদ্যোগকে একটি শক্তিশালী প্রস্তাব বলে ধারণা করে হয়েছিল।
আঞ্চলিক হামলার আশঙ্কামুক্ত হলেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মাটি ছাড়তে ইচ্ছুক হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকে এই অঞ্চলের সমর-রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে ইয়েমেনের হুথিরা এখন দেশ দুটিতে সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গোষ্ঠী দুটি যত দিন সক্রিয় থাকবে, ইসরায়েল তত দিন অনিরাপত্তায় ভুগবে। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো এখন আর চাইলেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ইতি টানতে পারবে না, অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোরও সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এদিকে একটি দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব বাস্তবায়ন বেশ ব্যয়বহুল হবে। যুদ্ধের আগেও ফিলিস্তিনিরা গাজা পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এই অর্থের পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ২০০০ সালে ব্যর্থ ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলনে আলোচকেরা ফিলিস্তিনিদের হারানো সম্পত্তির জন্য শরণার্থীদের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে, তারা নিজ দেশ ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের জন্য এই অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দাবি করবে।
তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য এখন বিশদ বিবরণী নয় বরং আলোচনা ও বাস্তবায়নের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উগ্র-ডানপন্থী এবং ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের জোটের সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনা হবে না। এই জোটের গাজা যুদ্ধের পরে টিকে থাকার সম্ভাবনাও নেই।
নেতানিয়াহুর বিরোধীরা আশা করছে, পরবর্তী সরকার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আরও উপযুক্ত হবে। একজন মধ্যপন্থী ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা হয়েছে যে তাঁদের (ফিলিস্তিনি) থেকে আমাদের ভালোভাবে আলাদা হতে হবে। এটি আলোচনা শুরুর উপযুক্ত সময়।’ কিন্তু উদার ও বামপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
ফিলিস্তিনের পক্ষে হামাস সব সময়ই উদ্দেশ্যহীন খেলায় আগ্রহী। নব্বইয়ের দশকে হামাসের প্রথম আত্মঘাতী-বোমা হামলা অসলো শান্তি প্রক্রিয়াকে ঘোলা পানিতে ডুবিয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত হামাসের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (অভ্যুত্থান) হত্যাযজ্ঞ দেখে একটি ইসরায়েলি প্রজন্ম আপসের ধারণা থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। এবার গাজা যুদ্ধের পর হামাস হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে—কিন্তু অন্য কোনো দল সেই জায়গা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে আস্থা হারিয়েছে। ইসরায়েলের একটি নির্দলীয় থিংক-ট্যাংক ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জরিপে দেখা গেছে, যে ইসরায়েলি ইহুদিদের মাত্র ৩২ শতাংশ দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব সমর্থন করে, যা পাঁচ বছর আগে ৪৭ শতাংশ ছিল।
ইসরায়েলি জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ আরব বংশোদ্ভূত, তাঁরা এখনো এই প্রস্তাব সমর্থন করছে, যদিও তাঁদের সমর্থনও কমে গেছে। ২০১৭ সালে ৮৭ শতাংশ ইসরায়েলি-আরব এর সমর্থন করত, যা ২০২২ সালে ৭১ শতাংশে নেমে এসেছে। ইসরায়েলি ইহুদিদের অধিকাংশই আবার বর্তমান পরিস্থিতিকেই পছন্দ করে।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমর্থন আরও কমে গেছে। প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের চলতি বছরের জুন পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ২৮ শতাংশ ফিলিস্তিনি এখন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রস্তাবকে সমর্থন করে। দশ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৩ শতাংশ, যদিও এটি সম্ভব বলে মনে করেছিল মাত্র ৩৯ শতাংশ ফিলিস্তিনিরা।
তবে আশাবাদীরা মনে করেন এই ফলাফলগুলো উপরি-উপরি। যেটা দৃশ্যত অসম্ভব সেটাকে সমর্থন দেবে না সেটাই স্বাভাবিক। একটি অর্থবহ শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে এই ফলাফল দ্রুত বদলে যাবে। একজন সাবেক ফিলিস্তিনি মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, আমাদের জনগণ দখলদারির অবসানের সুযোগ কখনো হাতছাড়া করবে।’ তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহের ঘটনাগুলো উভয় পক্ষকেই সমঝোতার ধারণার বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।
হামাসের আক্রমণের পর হাতে গোনা ইসরায়েলি জনসমক্ষে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বা সংঘাতের অন্য কোনো সমাধান নিয়ে কথা বলছেন। তবে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। এর কারণ হতে পারে, যুদ্ধের শেষ পরিস্থিতিই পরবর্তী পর্যায়ের রূপ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতেও অক্ষম।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে, এই সংকট নিয়ে তাহলে মধ্যস্থতা করবে কে তা নিয়ে। যদিও রাশিয়া এবং চীন উভয়ের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তবে তারা যে সত্যিই এগিয়ে আসবে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘সৎ দালাল’ হিসাবে এখানে আসতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইইউকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় না।
ফলে দায়িত্ব পড়ছে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার ঘাড়েই। তবে বাইডেন তাঁর শাসনামলের প্রথম তিন বছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ২০২৪ সালে তাঁর মাথায় হয়তো অন্যান্য বিষয় থাকবে। ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিরা কখনোই ক্ষমতার শেষপ্রান্তে থাকা কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কখনোই শান্তি আলোচনা শুরু করবে না—এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাইডেন আবার জয়ী হলে তিনি এ শান্তি প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে পারেন।
অপরদিকে, মধ্যস্থতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প হলে সে হবে এক ভিন্ন গল্প। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। যদিও পরিকল্পনাটি ছিল হাস্যকর ও পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট। ওই পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের মাত্র ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনের অনুকূলে দেওয়া, এই অঞ্চলের রুটির ঝুড়ি জর্ডান উপত্যকা ইসরায়েলের মালিকানায় দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেগেভের অনুর্বর মরুভূমির কিছু অংশ হস্তান্তর ও ফিলিস্তিনের রাজধানী পূর্ব জেরুজালেমের কয়েকটি নিঃস্ব উপকণ্ঠে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব ছিল। ফলে স্বভাবতই ফিলিস্তিনিরা প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করতেও অস্বীকার করে।
দ্য ইকোনোমিস্ট অবলম্বনে আবদুল বাছেদ

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। গত মাসে আরব লিগের ডাকা জরুরি বৈঠকেও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার’ আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে গাজায় অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরায়েল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে ২০০৫ সালে দখলদার দেশটি ৮ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেয় ও গাজা হামাসের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন কেউই সঠিকভাবে জানত না এই সিদ্ধান্তের ফল কী হবে বা ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কেউ কেউ আশা করেছিলেন, ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সদিচ্ছা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাবে। তবে অন্যরা এখানে ইসরায়েলের চতুর চক্রান্ত দেখেছিলেন। তাঁদের মতে, গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। এই অনুমানই সত্য হয়ে ফলেছে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনের এই অংশে কল্পনাতীতভাবে অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর থেকে একই ধরনের দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহতের পর আইডিএফ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে। এতে ৯ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর অধিকাংশই আবার শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা। তাঁরা এখন আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ দ্বিতীয় নাকবার (বিপর্যয়) দিকে নিয়ে যাবে। যেখানে ১৯৪৮ সালে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের উত্থানের সময় প্রথম নাকবায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। উগ্র-ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীরা আশা করছেন, এই যুদ্ধ গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং সরিয়ে নেওয়া ইহুদি বসতি পুনর্নির্মাণের সুযোগ দেবে। এত কিছুর মধ্যেও বাইডেন আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেবে।
আপাতত, দ্বি-রাষ্ট্র বা শান্তি চুক্তি এক দূরের স্বপ্ন। হামাসের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বলে জানাচ্ছেন ইসরায়েলি জেনারেলরা। তবে যুদ্ধ শেষে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে হস্তান্তর করার আশা করছে ইসরায়েল ও বিশ্ব মোড়লেরা। পিএর সঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে। তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি ছাড়া এমন কিছু মেনে নেবেন বলে মনে হয় না।
যা হোক, গাজা যুদ্ধের পর একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বা যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বিবেচনা করা দরকার। এর জন্য বিস্তৃত রূপরেখা কয়েক দশক ধরে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি। গাজা ও পশ্চিম তীর মিলে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে; ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশের জন্য তার ভূখণ্ডের অংশ অদলবদল করবে, যেখানে তারা বড় বসতি তৈরি করেছে। জেরুজালেম বিভক্ত হবে, পুরোনো শহরের ওপর একধরনের যৌথ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী ইসরায়েলে ফিরে যেতে পারে, বাকিরা ফিলিস্তিন বা অন্য কোথাও তাঁদের বর্তমান বাড়িতে বসতি স্থাপন করবে। তবে ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সামরিক বাহিনী মুক্ত করার।
দুই দশকের গভীর আলোচনার পর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে অসলো চুক্তির আশাবাদী যুগ ও বারাক ওবামার অধীনে একটি অসংলগ্ন প্রচেষ্টার পর ২০১৪ সালে শান্তি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে বড় কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
আগের আলোচনা ঠিক যেখানে থেমেছিল, সেখান থেকেই নতুন আলোচনা শুরুর সুযোগ নেই। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সংকট।
২০২১ সালের শেষের দিক পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ছিল, যেখানে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির সময় এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০। বিষয়টি শান্তির জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বাধা হয়ে উঠেছে। এসব অবৈধ বসতি এমন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে যে এগুলো চুক্তিনামায় ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। কিন্তু অবৈধ বসতির সঙ্গে ইসরায়েলে রাজনৈতিক প্রভাবও বেড়ে গগনচুম্বী হয়েছে, ফলে তারা যেসব জমিতে বসতি স্থাপন করেনি সেগুলোও ছাড়তে চাইবে না।
সংকটের পটভূমিই সব
আঞ্চলিক রাজনীতির চিত্রও আরও জটিল। ২০০২ সালে আরব লীগ সৌদি আরবের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন দেয়, যেখানে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পর আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ছিল। ব্যাপারটি এমন যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিরোধের অবসান ঘটালেই ইসরায়েল সমস্ত আঞ্চলিক সংঘাত কাটিয়ে উঠতে পারবে। ওই সময় আরব দেশগুলোর এই শান্তি উদ্যোগকে একটি শক্তিশালী প্রস্তাব বলে ধারণা করে হয়েছিল।
আঞ্চলিক হামলার আশঙ্কামুক্ত হলেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মাটি ছাড়তে ইচ্ছুক হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকে এই অঞ্চলের সমর-রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে ইয়েমেনের হুথিরা এখন দেশ দুটিতে সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গোষ্ঠী দুটি যত দিন সক্রিয় থাকবে, ইসরায়েল তত দিন অনিরাপত্তায় ভুগবে। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো এখন আর চাইলেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ইতি টানতে পারবে না, অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোরও সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এদিকে একটি দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব বাস্তবায়ন বেশ ব্যয়বহুল হবে। যুদ্ধের আগেও ফিলিস্তিনিরা গাজা পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এই অর্থের পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ২০০০ সালে ব্যর্থ ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলনে আলোচকেরা ফিলিস্তিনিদের হারানো সম্পত্তির জন্য শরণার্থীদের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে, তারা নিজ দেশ ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের জন্য এই অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দাবি করবে।
তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য এখন বিশদ বিবরণী নয় বরং আলোচনা ও বাস্তবায়নের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উগ্র-ডানপন্থী এবং ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের জোটের সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনা হবে না। এই জোটের গাজা যুদ্ধের পরে টিকে থাকার সম্ভাবনাও নেই।
নেতানিয়াহুর বিরোধীরা আশা করছে, পরবর্তী সরকার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আরও উপযুক্ত হবে। একজন মধ্যপন্থী ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা হয়েছে যে তাঁদের (ফিলিস্তিনি) থেকে আমাদের ভালোভাবে আলাদা হতে হবে। এটি আলোচনা শুরুর উপযুক্ত সময়।’ কিন্তু উদার ও বামপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
ফিলিস্তিনের পক্ষে হামাস সব সময়ই উদ্দেশ্যহীন খেলায় আগ্রহী। নব্বইয়ের দশকে হামাসের প্রথম আত্মঘাতী-বোমা হামলা অসলো শান্তি প্রক্রিয়াকে ঘোলা পানিতে ডুবিয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত হামাসের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (অভ্যুত্থান) হত্যাযজ্ঞ দেখে একটি ইসরায়েলি প্রজন্ম আপসের ধারণা থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। এবার গাজা যুদ্ধের পর হামাস হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে—কিন্তু অন্য কোনো দল সেই জায়গা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে আস্থা হারিয়েছে। ইসরায়েলের একটি নির্দলীয় থিংক-ট্যাংক ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জরিপে দেখা গেছে, যে ইসরায়েলি ইহুদিদের মাত্র ৩২ শতাংশ দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব সমর্থন করে, যা পাঁচ বছর আগে ৪৭ শতাংশ ছিল।
ইসরায়েলি জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ আরব বংশোদ্ভূত, তাঁরা এখনো এই প্রস্তাব সমর্থন করছে, যদিও তাঁদের সমর্থনও কমে গেছে। ২০১৭ সালে ৮৭ শতাংশ ইসরায়েলি-আরব এর সমর্থন করত, যা ২০২২ সালে ৭১ শতাংশে নেমে এসেছে। ইসরায়েলি ইহুদিদের অধিকাংশই আবার বর্তমান পরিস্থিতিকেই পছন্দ করে।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমর্থন আরও কমে গেছে। প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের চলতি বছরের জুন পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ২৮ শতাংশ ফিলিস্তিনি এখন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রস্তাবকে সমর্থন করে। দশ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৩ শতাংশ, যদিও এটি সম্ভব বলে মনে করেছিল মাত্র ৩৯ শতাংশ ফিলিস্তিনিরা।
তবে আশাবাদীরা মনে করেন এই ফলাফলগুলো উপরি-উপরি। যেটা দৃশ্যত অসম্ভব সেটাকে সমর্থন দেবে না সেটাই স্বাভাবিক। একটি অর্থবহ শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে এই ফলাফল দ্রুত বদলে যাবে। একজন সাবেক ফিলিস্তিনি মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, আমাদের জনগণ দখলদারির অবসানের সুযোগ কখনো হাতছাড়া করবে।’ তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহের ঘটনাগুলো উভয় পক্ষকেই সমঝোতার ধারণার বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।
হামাসের আক্রমণের পর হাতে গোনা ইসরায়েলি জনসমক্ষে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বা সংঘাতের অন্য কোনো সমাধান নিয়ে কথা বলছেন। তবে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। এর কারণ হতে পারে, যুদ্ধের শেষ পরিস্থিতিই পরবর্তী পর্যায়ের রূপ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতেও অক্ষম।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে, এই সংকট নিয়ে তাহলে মধ্যস্থতা করবে কে তা নিয়ে। যদিও রাশিয়া এবং চীন উভয়ের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তবে তারা যে সত্যিই এগিয়ে আসবে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘সৎ দালাল’ হিসাবে এখানে আসতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইইউকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় না।
ফলে দায়িত্ব পড়ছে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার ঘাড়েই। তবে বাইডেন তাঁর শাসনামলের প্রথম তিন বছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ২০২৪ সালে তাঁর মাথায় হয়তো অন্যান্য বিষয় থাকবে। ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিরা কখনোই ক্ষমতার শেষপ্রান্তে থাকা কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কখনোই শান্তি আলোচনা শুরু করবে না—এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাইডেন আবার জয়ী হলে তিনি এ শান্তি প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে পারেন।
অপরদিকে, মধ্যস্থতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প হলে সে হবে এক ভিন্ন গল্প। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। যদিও পরিকল্পনাটি ছিল হাস্যকর ও পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট। ওই পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের মাত্র ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনের অনুকূলে দেওয়া, এই অঞ্চলের রুটির ঝুড়ি জর্ডান উপত্যকা ইসরায়েলের মালিকানায় দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেগেভের অনুর্বর মরুভূমির কিছু অংশ হস্তান্তর ও ফিলিস্তিনের রাজধানী পূর্ব জেরুজালেমের কয়েকটি নিঃস্ব উপকণ্ঠে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব ছিল। ফলে স্বভাবতই ফিলিস্তিনিরা প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করতেও অস্বীকার করে।
দ্য ইকোনোমিস্ট অবলম্বনে আবদুল বাছেদ

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। গত মাসে আরব লিগের ডাকা জরুরি বৈঠকেও দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার’ আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়েছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের পর থেকে গাজায় অবৈধ ইহুদি বসতি স্থাপন শুরু করে ইসরায়েল। তবে নানা প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়ে ২০০৫ সালে দখলদার দেশটি ৮ হাজার ইহুদি বসতি স্থাপনকারীকে সরিয়ে নেয় ও গাজা হামাসের হাতে ছেড়ে দেয়। তখন কেউই সঠিকভাবে জানত না এই সিদ্ধান্তের ফল কী হবে বা ভিন্ন কোন সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। কেউ কেউ আশা করেছিলেন, ইসরায়েলের দখলকৃত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার সদিচ্ছা ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাবে। তবে অন্যরা এখানে ইসরায়েলের চতুর চক্রান্ত দেখেছিলেন। তাঁদের মতে, গাজার নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে ইসরায়েল পশ্চিম তীরে কঠোর নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পাবে। এই অনুমানই সত্য হয়ে ফলেছে। এরপর থেকে ফিলিস্তিনের এই অংশে কল্পনাতীতভাবে অবৈধ বসতি স্থাপন করেছে ইসরায়েল।
গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার পর থেকে একই ধরনের দ্বিধার সৃষ্টি হয়েছে। হামাসের হামলায় ১ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি নিহতের পর আইডিএফ গাজায় স্থল অভিযান শুরু করেছে। এতে ৯ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, এর অধিকাংশই আবার শিশু। বাস্তুচ্যুত হয়েছেন কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা। তাঁরা এখন আশঙ্কা করছেন, এই যুদ্ধ দ্বিতীয় নাকবার (বিপর্যয়) দিকে নিয়ে যাবে। যেখানে ১৯৪৮ সালে দখলদার রাষ্ট্র ইসরায়েলের উত্থানের সময় প্রথম নাকবায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিরা বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন। উগ্র-ডানপন্থী ইসরায়েলি মন্ত্রীরা আশা করছেন, এই যুদ্ধ গাজার ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠিত এবং সরিয়ে নেওয়া ইহুদি বসতি পুনর্নির্মাণের সুযোগ দেবে। এত কিছুর মধ্যেও বাইডেন আশার বাণী শুনিয়ে বলেছেন, এটি ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি শান্তি প্রক্রিয়াকে পুনরুজ্জীবিত করার সুযোগ দেবে।
আপাতত, দ্বি-রাষ্ট্র বা শান্তি চুক্তি এক দূরের স্বপ্ন। হামাসের সঙ্গে কয়েক মাস ধরে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে বলে জানাচ্ছেন ইসরায়েলি জেনারেলরা। তবে যুদ্ধ শেষে গাজার নিয়ন্ত্রণ ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) কাছে হস্তান্তর করার আশা করছে ইসরায়েল ও বিশ্ব মোড়লেরা। পিএর সঙ্গে গাজায় জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীও মোতায়েন করা হতে পারে। তবে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গ্যারান্টি ছাড়া এমন কিছু মেনে নেবেন বলে মনে হয় না।
যা হোক, গাজা যুদ্ধের পর একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান বা যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বিবেচনা করা দরকার। এর জন্য বিস্তৃত রূপরেখা কয়েক দশক ধরে খুব বেশি পরিবর্তিত হয়নি। গাজা ও পশ্চিম তীর মিলে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা হবে; ইসরায়েল পশ্চিম তীরের কিছু অংশের জন্য তার ভূখণ্ডের অংশ অদলবদল করবে, যেখানে তারা বড় বসতি তৈরি করেছে। জেরুজালেম বিভক্ত হবে, পুরোনো শহরের ওপর একধরনের যৌথ নিয়ন্ত্রণ থাকবে। অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি শরণার্থী ইসরায়েলে ফিরে যেতে পারে, বাকিরা ফিলিস্তিন বা অন্য কোথাও তাঁদের বর্তমান বাড়িতে বসতি স্থাপন করবে। তবে ইসরায়েলের অন্যতম লক্ষ্য থাকবে, ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে সামরিক বাহিনী মুক্ত করার।
দুই দশকের গভীর আলোচনার পর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে অসলো চুক্তির আশাবাদী যুগ ও বারাক ওবামার অধীনে একটি অসংলগ্ন প্রচেষ্টার পর ২০১৪ সালে শান্তি প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। এরপর থেকে বড় কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি।
আগের আলোচনা ঠিক যেখানে থেমেছিল, সেখান থেকেই নতুন আলোচনা শুরুর সুযোগ নেই। সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, যুক্ত হয়েছে নতুন রাজনৈতিক সংকট।
২০২১ সালের শেষের দিক পর্যন্ত পশ্চিম তীরে ৪ লাখ ৬৫ হাজার ৪০০ ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ছিল, যেখানে ১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির সময় এই সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১৬ হাজার ৩০০। বিষয়টি শান্তির জন্য একটি ক্রমবর্ধমান বাধা হয়ে উঠেছে। এসব অবৈধ বসতি এমন এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে যে এগুলো চুক্তিনামায় ইসরায়েলের হাতে ছেড়ে দেওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। কিন্তু অবৈধ বসতির সঙ্গে ইসরায়েলে রাজনৈতিক প্রভাবও বেড়ে গগনচুম্বী হয়েছে, ফলে তারা যেসব জমিতে বসতি স্থাপন করেনি সেগুলোও ছাড়তে চাইবে না।
সংকটের পটভূমিই সব
আঞ্চলিক রাজনীতির চিত্রও আরও জটিল। ২০০২ সালে আরব লীগ সৌদি আরবের একটি প্রস্তাবকে সমর্থন দেয়, যেখানে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পর আরব দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের স্বাভাবিক সম্পর্কের প্রতিশ্রুতি ছিল। ব্যাপারটি এমন যে ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে বিরোধের অবসান ঘটালেই ইসরায়েল সমস্ত আঞ্চলিক সংঘাত কাটিয়ে উঠতে পারবে। ওই সময় আরব দেশগুলোর এই শান্তি উদ্যোগকে একটি শক্তিশালী প্রস্তাব বলে ধারণা করে হয়েছিল।
আঞ্চলিক হামলার আশঙ্কামুক্ত হলেই ইসরায়েল ফিলিস্তিনের মাটি ছাড়তে ইচ্ছুক হতে পারে বলে অনেকেই মনে করেন। কিন্তু ২০০২ সালের পর থেকে এই অঞ্চলের সমর-রাজনীতিতে অনেক পরিবর্তন এসেছে। লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে ইয়েমেনের হুথিরা এখন দেশ দুটিতে সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। গোষ্ঠী দুটি যত দিন সক্রিয় থাকবে, ইসরায়েল তত দিন অনিরাপত্তায় ভুগবে। ফলে আরব রাষ্ট্রগুলো এখন আর চাইলেই ইসরায়েলের সঙ্গে দ্বন্দ্বের ইতি টানতে পারবে না, অ-রাষ্ট্রীয় সংগঠনগুলোরও সম্মতির প্রয়োজন হবে।
এদিকে একটি দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব বাস্তবায়ন বেশ ব্যয়বহুল হবে। যুদ্ধের আগেও ফিলিস্তিনিরা গাজা পুনর্বাসনে আন্তর্জাতিক সাহায্য বা ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। এই অর্থের পরিমাণ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হবে। ২০০০ সালে ব্যর্থ ক্যাম্প ডেভিড শীর্ষ সম্মেলনে আলোচকেরা ফিলিস্তিনিদের হারানো সম্পত্তির জন্য শরণার্থীদের ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতিপূরণ নিয়ে আলোচনা করেছিলেন।
সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, যারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়িয়েছে, তারা নিজ দেশ ও মুসলিম বিশ্বের রাজনীতির প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনিদের জন্য এই অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দাবি করবে।
তবে সমস্যাটি সমাধানের জন্য এখন বিশদ বিবরণী নয় বরং আলোচনা ও বাস্তবায়নের রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উগ্র-ডানপন্থী এবং ধর্মীয় রাজনীতিবিদদের জোটের সঙ্গে কোনো গুরুত্বপূর্ণ শান্তি আলোচনা হবে না। এই জোটের গাজা যুদ্ধের পরে টিকে থাকার সম্ভাবনাও নেই।
নেতানিয়াহুর বিরোধীরা আশা করছে, পরবর্তী সরকার ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আরও উপযুক্ত হবে। একজন মধ্যপন্থী ইসরায়েলি আইনপ্রণেতা বলেন, ‘আমরা শিক্ষা হয়েছে যে তাঁদের (ফিলিস্তিনি) থেকে আমাদের ভালোভাবে আলাদা হতে হবে। এটি আলোচনা শুরুর উপযুক্ত সময়।’ কিন্তু উদার ও বামপন্থী ইসরায়েলি রাজনীতিবিদরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জনসমক্ষে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
ফিলিস্তিনের পক্ষে হামাস সব সময়ই উদ্দেশ্যহীন খেলায় আগ্রহী। নব্বইয়ের দশকে হামাসের প্রথম আত্মঘাতী-বোমা হামলা অসলো শান্তি প্রক্রিয়াকে ঘোলা পানিতে ডুবিয়েছিল। ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত হামাসের দ্বিতীয় ইন্তিফাদার (অভ্যুত্থান) হত্যাযজ্ঞ দেখে একটি ইসরায়েলি প্রজন্ম আপসের ধারণা থেকে মুখ সরিয়ে নেয়। এবার গাজা যুদ্ধের পর হামাস হয়তো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে—কিন্তু অন্য কোনো দল সেই জায়গা নিতে পারে।
এমতাবস্থায় উভয় পক্ষের সাধারণ মানুষ দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানে আস্থা হারিয়েছে। ইসরায়েলের একটি নির্দলীয় থিংক-ট্যাংক ডেমোক্রেসি ইনস্টিটিউটের ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে একটি জরিপে দেখা গেছে, যে ইসরায়েলি ইহুদিদের মাত্র ৩২ শতাংশ দ্বি-রাষ্ট্র প্রস্তাব সমর্থন করে, যা পাঁচ বছর আগে ৪৭ শতাংশ ছিল।
ইসরায়েলি জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ আরব বংশোদ্ভূত, তাঁরা এখনো এই প্রস্তাব সমর্থন করছে, যদিও তাঁদের সমর্থনও কমে গেছে। ২০১৭ সালে ৮৭ শতাংশ ইসরায়েলি-আরব এর সমর্থন করত, যা ২০২২ সালে ৭১ শতাংশে নেমে এসেছে। ইসরায়েলি ইহুদিদের অধিকাংশই আবার বর্তমান পরিস্থিতিকেই পছন্দ করে।
ফিলিস্তিনিদের মধ্যে সমর্থন আরও কমে গেছে। প্যালেস্টাইন সেন্টার ফর পলিসি অ্যান্ড সার্ভে রিসার্চের চলতি বছরের জুন পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে, মাত্র ২৮ শতাংশ ফিলিস্তিনি এখন দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের প্রস্তাবকে সমর্থন করে। দশ বছর আগে এই সংখ্যা ছিল ৫৩ শতাংশ, যদিও এটি সম্ভব বলে মনে করেছিল মাত্র ৩৯ শতাংশ ফিলিস্তিনিরা।
তবে আশাবাদীরা মনে করেন এই ফলাফলগুলো উপরি-উপরি। যেটা দৃশ্যত অসম্ভব সেটাকে সমর্থন দেবে না সেটাই স্বাভাবিক। একটি অর্থবহ শান্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে এই ফলাফল দ্রুত বদলে যাবে। একজন সাবেক ফিলিস্তিনি মন্ত্রী বলেছেন, ‘আমি মনে করি না, আমাদের জনগণ দখলদারির অবসানের সুযোগ কখনো হাতছাড়া করবে।’ তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহের ঘটনাগুলো উভয় পক্ষকেই সমঝোতার ধারণার বিরুদ্ধে নিয়ে যেতে পারে।
হামাসের আক্রমণের পর হাতে গোনা ইসরায়েলি জনসমক্ষে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বা সংঘাতের অন্য কোনো সমাধান নিয়ে কথা বলছেন। তবে প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা এ নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। এর কারণ হতে পারে, যুদ্ধের শেষ পরিস্থিতিই পরবর্তী পর্যায়ের রূপ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নেতানিয়াহুর সরকার ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিয়ে আলাপ চালিয়ে যেতেও অক্ষম।
এরপর প্রশ্ন উঠেছে, এই সংকট নিয়ে তাহলে মধ্যস্থতা করবে কে তা নিয়ে। যদিও রাশিয়া এবং চীন উভয়ের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে, তবে তারা যে সত্যিই এগিয়ে আসবে কোনো বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ‘সৎ দালাল’ হিসাবে এখানে আসতে পারে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে ইইউকে কখনোই গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হয় না।
ফলে দায়িত্ব পড়ছে বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার ঘাড়েই। তবে বাইডেন তাঁর শাসনামলের প্রথম তিন বছর বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের দ্বন্দ্ব উপেক্ষা করার চেষ্টা করেছেন। ২০২৪ সালে তাঁর মাথায় হয়তো অন্যান্য বিষয় থাকবে। ইসরায়েলি বা ফিলিস্তিনিরা কখনোই ক্ষমতার শেষপ্রান্তে থাকা কোনো প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কখনোই শান্তি আলোচনা শুরু করবে না—এমনটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ২০২৪ সালের নির্বাচনে বাইডেন আবার জয়ী হলে তিনি এ শান্তি প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিতে পারেন।
অপরদিকে, মধ্যস্থতাকারী ডোনাল্ড ট্রাম্প হলে সে হবে এক ভিন্ন গল্প। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁর জামাতা জ্যারেড কুশনার নানা জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে একটি গুরুত্বপূর্ণ শান্তি পরিকল্পনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। যদিও পরিকল্পনাটি ছিল হাস্যকর ও পুরোপুরি ইসরায়েলের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট। ওই পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের মাত্র ৭৫ শতাংশ ফিলিস্তিনের অনুকূলে দেওয়া, এই অঞ্চলের রুটির ঝুড়ি জর্ডান উপত্যকা ইসরায়েলের মালিকানায় দেওয়া, ফিলিস্তিনিদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে নেগেভের অনুর্বর মরুভূমির কিছু অংশ হস্তান্তর ও ফিলিস্তিনের রাজধানী পূর্ব জেরুজালেমের কয়েকটি নিঃস্ব উপকণ্ঠে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব ছিল। ফলে স্বভাবতই ফিলিস্তিনিরা প্রস্তাবটি নিয়ে আলোচনা করতেও অস্বীকার করে।
দ্য ইকোনোমিস্ট অবলম্বনে আবদুল বাছেদ

আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
৩ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছ
০২ নভেম্বর ২০২৩
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
৩ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন, তখন একই অফিসে বসে সৌম্যা বসরমালিংগম বিভিন্ন ভিডিওর ঘরানা, চরিত্রের মুড ও টোন বিশ্লেষণ করছেন। আসলে তাঁরা দুজনই এমন এক শিল্পের কর্মী, যে শিল্প বিশ্বজুড়ে এআই মডেল প্রশিক্ষণের জন্য বিপুল পরিমাণ তথ্য ছাঁকছে ও বিশ্লেষণ করছে।
এই কাজকে প্রযুক্তি জগতে বলা হয় ডেটা অ্যানোটেশন—যেখানে মানুষ ছবি, ভিডিও ও টেক্সট ডেটাকে ট্যাগ করে এআইয়ের শেখার উপযোগী করে তোলে। ভারত এখন এই শিল্পের সবচেয়ে বড় বাজারগুলোর একটি। ২০২০ সালে যেখানে মাত্র ৭০ হাজার মানুষ এই খাতে কাজ করত, ২০৩০ সালের মধ্যে তা পৌঁছাতে পারে ১০ লাখে। একই সময়ে এই বাজারের মূল্য বেড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার হতে পরে বলে জানিয়েছে ভারতের সফটওয়্যার শিল্প সংস্থা নাস্কম।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চিত্রটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেখানে শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই ৭১ হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৬ হাজারের বেশি চাকরি হারানোর কারণ হিসেবে সরাসরি এআইকে দায়ী করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আমেরিকায় এআই–সম্পর্কিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানি—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, মেটা—সবাই কর্মী ছাঁটাই করছে। ফলে এআইকে ঘিরে উদ্বেগ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।
কিন্তু একই এআই যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাগুলোর আউটসোর্সিং বাড়িয়ে দিচ্ছে এশিয়ায়। এর ফলে পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইনে আউটসোর্সিং কর্মীসংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন—দক্ষিণ এশিয়ার কম খরচের দক্ষ জনবলকে এআই সহজে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না। স্ট্যানফোর্ডের অর্থনীতিবিদ নিল মাহোনি বলেন, ‘যে কাজ খুব সহজ এবং ব্যয়বহুল—সেই কাজই প্রথমে এআই দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয়। এশিয়ার শ্রমবাজার এখনো খুব সস্তা।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এআই–চালিত ‘হিউম্যান ইন দ্য লুপ’ মডেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে—যেখানে মানুষ এআইয়ের ভুল সংশোধন করবে। উদাহরণ হিসেবে ভারতের নেক্সটওয়েলথ কোম্পানির কাজ উল্লেখযোগ্য। তারা এমন দোকানে নজরদারি করে যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ক্যাশিয়ার ছাড়াই কেনাকাটা করা যায়। কোনো ভুল হলে কয়েক সেকেন্ডেই মানুষ যাচাই করে তা সংশোধন করে।
এই সব কাজ ভারতের ছোট শহরের যুবকদের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করেছে। কারুর শহরের সেই কর্মী ধারাণি চন্দ্রশেখর জানান, পারিবারিক কারণে তিনি কখনো বড় শহরে চাকরি খোঁজেননি, কিন্তু এখন তিনি প্রযুক্তি খাতে কাজ করতে পারছেন নিজের শহরেই। অন্যদিকে তাঁর সহকর্মী ধনাসীলন পলানিয়াপ্পান এই শিল্পে কাজ করে জীবনে প্রথমবারের মতো বিদেশযাত্রার সুযোগ পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের কিংদাও শহরে গিয়েছিলেন ক্লায়েন্ট মিটিংয়ে।
এআই যতই উন্নত হোক, শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেটা অ্যানোটেশনের প্রয়োজন কখনোই শেষ হবে না। কারণ বাস্তব জগতে কাজ করতে গেলে এআইকে সব সময় মানুষের সুপারভিশনের প্রয়োজন হবে। এমনকি মেটার মতো কোম্পানি যখন স্কেল এআই–এ ১৪.৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে, তখন তা প্রমাণ করে এই ক্ষেত্রের গুরুত্ব কমছে না।
তবুও অনেক কর্মীর মনের ভেতর প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে—এআই কি একদিন আমাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে? কারুরের তরুণ নবিন বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তির যুগের সবচেয়ে বড় ঢেউয়ের সঙ্গে কাজ করছি। কিন্তু মনে মনে একটা ভয় তো থেকেই যায়—এআই যেন আমাদের জায়গা দখল না করে।’

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছ
০২ নভেম্বর ২০২৩
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
৩ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ওয়াশিংটনে যখনই কোনো নতুন প্রশাসন আসে, সঙ্গে করে তারা নিজস্ব মতাদর্শগত অবস্থানও নিয়ে আসে। আর সঙ্গে অনিবার্যভাবে তারা এমন এক দলিল প্রকাশ করে, যেখানে তাদের জাতীয় নিরাপত্তানীতির ধারণাগুলো মূর্ত হয়ে ওঠে। গত সপ্তাহে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রকাশিত জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলের (এনএসএস) সর্বশেষ সংস্করণটিও সেই চিরায়ত ঐতিহ্যের অংশ। তবে এর তাৎপর্য আরও গভীরে—আগের কৌশলগত দলিলগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ও স্নায়ুযুদ্ধপরবর্তী যুগের বিস্তৃত পররাষ্ট্রনীতির ঐকমত্যের সামান্য হেরফেরকে প্রতিফলিত করে থাকলেও এই দলিল সেই ঐকমত্য থেকে এক নাটকীয় বিচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছে।
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কারভাবে ধরা পড়েছে এবং আমেরিকার পরিবর্তিত মানসিকতাও তাতে প্রতিফলিত হয়েছে।
এশিয়ার জন্য এই দলিল এক নতুন জানালা খুলে দিয়েছে, যেখান থেকে বোঝা যায়—দ্বিতীয় ট্রাম্প প্রশাসন কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে দেখছে, কীভাবে মার্কিন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক বিচার করছে ও চীনকে মূল্যায়ন করছে এবং ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার এই যুগে আমেরিকার নেতৃত্বকে কীভাবে কল্পনা করছে।
একদিকে এনএসএসে মাগা জাতীয়তাবাদের সেই পরিচিত ভাবনারই প্রতিফলন ঘটেছে—যা সংযম, জাতীয়তাবাদ ও সর্বজনীন লক্ষ্যযুক্ত আন্তর্জাতিকতাবাদী বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রত্যাখ্যান করার এক মিশ্রণ। দলিলটি এমন একটি কৌশলের ডাক দিয়েছে, যা ঐতিহ্যগত ও রাজনৈতিক মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে তৈরি নয়। তার বদলে এটি সবার ওপরে আমেরিকার জন্য যা কাজ করে বা সহজ কথায়, আমেরিকা ফার্স্ট—তা দিয়েই অনুপ্রাণিত।
নতুন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল যুক্তরাষ্ট্রের প্রাধান্যের বিস্তৃত আকাঙ্ক্ষা থেকে সরে এসে আঞ্চলিক স্বার্থের পুনর্নবীকরণের ভিত্তিতে জাতীয় স্বার্থের এক সংকীর্ণ সংজ্ঞার দিকে ঝুঁকতে চাইছে। যেসব দেশ বহুদিন ধরে ওয়াশিংটনের উপদেশ দেওয়ার ধরনে ক্ষুব্ধ ছিল, তাদের জন্য এই পরিবর্তন একটি ‘স্বাগত জানানো’ আদর্শিক পুনর্বিন্যাস।
নতুন মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল এশিয়ার জন্য একই সঙ্গে সুসংবাদ ও দুঃসংবাদ—দুটোই নিয়ে এসেছে। প্রথম ইতিবাচক দিকটি হলো—এই দলিলে এশিয়া বা আধুনিক কৌশলগত ভাষায় ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল পশ্চিমা গোলার্ধের বাইরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির একেবারে শীর্ষে স্থান পেয়েছে। পশ্চিম গোলার্ধ ট্রাম্পের কৌশলের মূল কেন্দ্রে রয়েছে। এশিয়ার ওপর এই মনোযোগ ওবামা প্রশাসনের ‘এশিয়া পিভট’, ট্রাম্পের প্রথম প্রশাসনের ‘মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক’ এবং বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে। চীনের উত্থান ও এই অঞ্চলের দীর্ঘস্থায়ী অর্থনৈতিক গতিশীলতার কারণে এই মনোযোগ অনিবার্য ছিল। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, কোনো একক শক্তি যদি এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, তার বিরোধিতা করার দৃঢ় অঙ্গীকার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বৃহত্তর কৌশলের দীর্ঘকালীন মূল প্রতিপাদ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা কৌশলে এ বিষয়ের পুনরাবৃত্তি চীনের ক্রমবর্ধমান শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন এশিয়ার রাজধানীগুলোতে স্বাগত জানানো হবে।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্পের এই কৌশল এশিয়াকে সেই চরম কঠোর সমালোচনা থেকে রেহাই দিয়েছে, যা তিনি ইউরোপের ওপর বর্ষণ করেছেন। এই নথিতে ইউরোপকে অবক্ষয়, নির্ভরশীলতা ও উদারনৈতিক বাড়াবাড়ির জন্য তিরস্কার করা হয়েছে। কিন্তু এশিয়াকে স্পষ্ট কৌশলগত সম্মান দিয়ে বিবেচনা করা হয়েছে। ইউরোপকে ‘পশ্চিমা সভ্যতাকে রক্ষা’ করার জন্য সামরিক সক্রিয়তার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার বিপরীতে ইন্দো-প্যাসিফিক ও মধ্যপ্রাচ্যে সীমিত ও বাছাই করা হস্তক্ষেপের কথা বলেছে। এর কারণ এই নয় যে, ট্রাম্প ইউরোপের চেয়ে এশিয়াকে বেশি পছন্দ করেন। বরং, মাগার আদর্শিক যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক মূল্যবোধ ও উদারনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে পশ্চিমা সভ্যতার অভ্যন্তরের একটি গৃহযুদ্ধ। এশিয়া আপাতত এই বিবাদের বাইরে রয়েছে।
তৃতীয়ত, এশিয়া আন্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার ওপর আমেরিকান সমালোচনার শিকার কম। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আমলাতান্ত্রিক ও নিয়ন্ত্রক ক্ষমতা মাগার ক্রোধের জন্ম দেয়; কিন্তু আঞ্চলিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঘাটতি থাকা এশিয়া এখন ট্রাম্পীয় বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই দৃষ্টিভঙ্গি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও লেনদেনভিত্তিক সহযোগিতার ওপর কেন্দ্রীভূত। মানবাধিকার ও সামাজিক মানদণ্ডের ওপর উদার ও আন্তর্জাতিকতাবাদী জোর সব সময়ই অধিকাংশ এশীয় সরকারের কাছে নেতিবাচকভাবে গৃহীত হয়েছে। কেবল চীনই নয়, এই অঞ্চলের গণতান্ত্রিক অথচ গভীরভাবে জাতীয়তাবাদী সমাজগুলোতেও একইভাবে মূল্যায়িত হয়েছে এই মার্কিন অবস্থান। তাদের কাছে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’-এর জাতীয় সার্বভৌমত্বের ওপর জোর এবং বিশ্বকে স্বাধীন রাষ্ট্রগুলোর এক সম্প্রদায় হিসেবে দেখার ধারণাটি অত্যন্ত যুক্তিসংগত।
চতুর্থত, বেইজিংসহ কিছু এশীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিয়মভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার বাগাড়ম্বরকে অবিশ্বাস করেছে। এই কথা পশ্চিমা রাজধানীগুলোতে সান্ত্বনাদায়ক শোনালেও এশিয়ার কিছু অংশে এটি জবরদস্তিমূলক বা ভন্ডামি বলে মনে হয়েছে। বিশেষ করে, ওয়াশিংটন সব সময় তাদের উচ্চারিত নিয়মগুলো মেনে চলত না। ট্রাম্পের বাস্তববাদ ও স্বার্থের ওপর জোর এবং কূটনীতিকে বাণিজ্যনীতি হিসেবে দেখা ব্যাপকভাবে বিশ্বজুড়েই অনুরণিত হচ্ছে। আদর্শের ওপর উদারনৈতিক বাগাড়ম্বরে সন্দিহান এশীয় সরকারগুলো লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতায় স্বচ্ছন্দ। এই গত শরৎকালেও ট্রাম্পের এশিয়া ভ্রমণে তাঁর সঙ্গে চুক্তি করার জন্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে যে প্রতিযোগিতা দেখা গিয়েছিল, তা ছিল বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। লেনদেনভিত্তিক একটি যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝা, তার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া এবং দর-কষাকষি করা তুলনামূলকভাবে সহজ।
পঞ্চমত, চীনকে প্রায় সমকক্ষ প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ট্রাম্পের স্বীকৃতি এবং বেইজিংয়ের সঙ্গে একটি ‘পারস্পরিক সুবিধাজনক অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ আহ্বানকে স্বাগত জানাচ্ছে অনেক এশীয় রাষ্ট্র। ১৯৮০-এর দশক থেকে সিনো–মার্কিন ‘ঐক্য’ থেকে এশিয়ার একটি বৃহৎ অংশ ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছে এবং তারা একটি নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে অস্বস্তিতে আছে। ওয়াশিংটন বা বেইজিংয়ের মধ্যে কাউকে বেছে নিতে না চাওয়ার যে ব্যাপক অনুভূতি, তা চীনকে প্রায় সমকক্ষ হিসেবে পুনরায় যুক্ত করার ট্রাম্পের আপাত ইচ্ছার মধ্যে স্বস্তি খুঁজে পায়। ভারতের মতো রাষ্ট্রগুলোর জন্য বৃহত্তর রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার বেশি দায়িত্ব কাঁধে নেওয়ার জন্য ট্রাম্পের আহ্বান তাদের নিজস্ব কৌশলগত পরিচিতি বাড়ানোর সুযোগ তৈরি করে।
তবে এই সুসংবাদের আড়ালে কিছু উদ্বেগজনক দিকও রয়েছে, আছে ঝুঁকিও। প্রথমত, যদিও ট্রাম্পের সার্বভৌমত্ব ও হস্তক্ষেপ না করার ওপর জোর দেওয়াকে স্বাগত জানানো হচ্ছে, তবু এশিয়া খুব ভালোভাবেই ওয়াশিংটনের অন্যের বিষয়ে নাক গলানোর কাঠামোগত প্রলোভন সম্পর্কে সচেতন। এটি নীতি থেকে নয়, বরং ক্ষমতা থেকে উদ্ভূত। বৃহৎ শক্তিগুলো হস্তক্ষেপ করে, কারণ, তারা তা করতে পারে এবং অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো প্রায়শই এটির দাবি করে। দক্ষিণ আফ্রিকা ও নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি আমেরিকানদের শাস্তি দেওয়া ও জবরদস্তি করার স্থায়ী প্রবৃত্তিকেই তুলে ধরে। সংযমের ঘোষণা সেই প্রবৃত্তিকে দূর করবে না।
দ্বিতীয়ত, যদিও ট্রাম্পের বাণিজ্যনীতি এশিয়ায় অনুরণিত হয়, কিন্তু বাস্তবে ট্রাম্প সাধারণ লেনদেনভিত্তিক বাস্তবতার সীমা ছাড়িয়ে বহুদূর চলে যাচ্ছেন। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে তাঁর বিশাল নতুন বিনিয়োগের দাবিগুলো এমন শর্তের সঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, যা কেবল চাঁদাবাজির মতো বলেই মনে করা যেতে পারে। একই রকম উদ্বেগজনক ছিল সাম্প্রতিক আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তিতে চাপানো শর্তাবলি। এই ব্যবস্থাগুলোর সার্বভৌমত্বের প্রতি সম্মান জানানোর সঙ্গে সামান্যই সম্পর্ক আছে। বরং এগুলো ক্ষমতাগত অসামঞ্জস্যতা ও চাপকেই প্রতিফলিত করে। এশীয় রাষ্ট্রগুলো লেনদেনভিত্তিক নীতিকে স্বাগত জানাতে পারে, কিন্তু তারা জবরদস্তিমূলক ‘বাণিজ্যবাদে’ ক্ষুব্ধ।
তৃতীয়ত, ওয়াশিংটনের নিয়মভিত্তিক বৈশ্বিক শৃঙ্খলা বর্জন এশীয় দেশগুলোর বাস্তববাদীদের খুশি করতে পারে। তবে এই বিসর্জনেরও মূল্য আছে। যদি যুক্তরাষ্ট্র দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতার পক্ষে দাঁড়াতে অস্বীকার করে, তবে এশিয়ার দুর্বল রাষ্ট্রগুলো শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর করুণার পাত্র হয়ে উঠবে। ইউক্রেনকে রাশিয়ার কাছে ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে চাপ দেওয়ার বিষয়টি চীনা সম্প্রসারণবাদের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিষয়ে অবিলম্বে উদ্বেগ সৃষ্টি করে। ছোট এশীয় রাষ্ট্রগুলো বিস্তৃত, অনুমানযোগ্য নিয়ম চায়—তারা উদার আদর্শবাদী বলে নয়, বরং নিয়মগুলো দুর্বলকে শক্তিশালী থেকে রক্ষা করে বলে এটা চায়। এর পাশাপাশি, উদার মূল্যবোধ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসা ভিন্নমতাবলম্বী গোষ্ঠী ও নাগরিক সমাজ আন্দোলনগুলোকে হতাশ করবে, যারা দমন-পীড়নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের দিকে তাকিয়ে থাকত।
চতুর্থত, চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পৃক্ততার ওপর ট্রাম্পের জোর বাণিজ্যিক স্বার্থ এবং নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতির মধ্যে সম্ভাব্য আপস নিয়ে অস্বস্তি সৃষ্টি করছে। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কৌশল পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে চীনের আগ্রাসন প্রতিরোধের প্রয়োজনীয়তা নিশ্চিত করে, কিন্তু অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা ও সামরিক প্রতিযোগিতার মধ্যকার টানাপোড়েন বাস্তব এবং ক্রমবর্ধমান। চীনের ক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আধিপত্য বজায় রাখা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
নয়া নিরাপত্তা কৌশল: চীনের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাদ, ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে জোর যুক্তরাষ্ট্রেরওয়াশিংটন ও তার আঞ্চলিক অংশীদারদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করার চীনা সক্ষমতা বাড়বে। মিত্রদের কাছে ট্রাম্পের বৃহত্তর প্রতিরক্ষা ব্যয়ের দাবি কিছু দেশকে চরম সমাধানের দিকে ঠেলে দিতে পারে—যার মধ্যে পারমাণবিক বিকল্পগুলো পুনরায় বিবেচনা করাও অন্তর্ভুক্ত। চীন যে ক্রমশ তাঁর পক্ষে সামরিক ভারসাম্যকে স্থানান্তরিত করছে, এই উপলব্ধিতে এই অঞ্চলের উদ্বেগ আরও তীব্র হচ্ছে।
পঞ্চমত, তাইওয়ান নিয়ে এনএসএসের ভাষার তীব্র আলোচনা এশিয়ার কেন্দ্রীয় ভূরাজনৈতিক ফাটলকে তুলে ধরে। তবু কেবল আভিধানিক বিতর্ক থেকে বোঝা যায় না যে, কোনো প্রকৃত সংকটে ট্রাম্প বা অন্য কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট কীভাবে আচরণ করবেন। এ সময়ে আঞ্চলিক পরিস্থিতি ও আমেরিকান অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ওপর অনেকটাই নির্ভর করবে। চীনা আক্রমণকে জাপানের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানাই তাকাইচির মন্তব্যের পর ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে যে পাল্টা চাপ দেওয়া হয়েছিল, তা একটি সতর্কসংকেত। এমনকি ট্রাম্প যখন এশীয় মিত্রদের কাছ থেকে আরও বেশি কিছু দাবি করছেন, তখন যুক্তরাষ্ট্র এর বিনিময়ে কী সরবরাহ করবে, সে বিষয়ে তিনি কম স্পষ্টতা দিচ্ছেন। তাই এই কৌশলগত অস্পষ্টতা এখন প্রতিশ্রুতির বদলে অনিশ্চয়তার জন্ম দিচ্ছে।
সব মিলিয়ে এশিয়া—ইউরোপের মতো নয়—যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলের এই পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্য আরও বেশি সময় ও সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু এর চ্যালেঞ্জগুলো অনেক বেশি গুরুতর। রাশিয়ার বিপরীতে—যার শক্তিমত্তা ইউরোপের তুলনায় সীমিত—সেখানে চীন এশিয়ার ওপরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। এই অঞ্চলের নিরাপত্তা অনেকাংশে নির্ভর করবে ওয়াশিংটন কীভাবে বেইজিংয়ের সঙ্গে তার জটিল সম্পর্ককে পরিচালিত করবে—যে সম্পর্ক ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা ও অর্থনৈতিক আন্তনির্ভরশীলতা দ্বারা চিহ্নিত। চীনের প্রতি মার্কিন নীতির দ্বিধাদ্বন্দ্ব ইন্দো-প্যাসিফিকজুড়ে মারাত্মক পরিণতি আনতে পারে।
এশিয়াকে এই নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বা ট্রাম্পবাদের কৌশলগত বিবর্তনের গতিপথকে প্রভাবিত করার মতো ক্ষমতা এশিয়ার নেই বললেই চলে। ইউরোপীয়রা হয়তো উদার আন্তর্জাতিকতাবাদ এবং আটলান্টিকতাবাদের পুনরুদ্ধারের আশা করতে পারেন, এশিয়ার সেই বিলাসিতা নেই। চীন যখন বিশাল আকার ধারণ করছে এবং যুক্তরাষ্ট্র তার আন্তর্জাতিক অভিমুখ পুনরায় সংজ্ঞায়িত করছে, তখন এশিয়াকে স্বনির্ভরতার কৌশল অবলম্বন করতে হবে—জাতীয় সক্ষমতা জোরদার করা, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে অংশীদারত্ব প্রসারিত করা এবং নমনীয় জোট গঠন করা।
একই সময়ে, এই কৌশলপত্র ওয়াশিংটন–সমর্থিত একটি ‘দায়িত্ব বণ্টন নেটওয়ার্ক’-এর প্রস্তাব করেছে। যেসব দেশ তাদের নিজেদের আশপাশে নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছায় আরও বেশি দায়িত্ব নেবে—তাদের বাণিজ্যিক বিষয়ে আরও অনুকূল আচরণ, প্রযুক্তি ভাগাভাগি ও প্রতিরক্ষা সংগ্রহের মাধ্যমে—যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবে।’ এশিয়ার এই প্রস্তাবের সুযোগগুলো কাজে লাগানো উচিত।
ফরেন পলিসি থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছ
০২ নভেম্বর ২০২৩
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

চীন ও জাপানের কূটনৈতিক সম্পর্ক আবারও উত্তেজনার মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, তাইওয়ান প্রসঙ্গে জাপানের প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে এই উত্তেজনা এখন তুঙ্গে। এই প্রেক্ষাপটে নতুন করে আলোচনায় এসেছে চীনের একটি পুরোনো শব্দ, ‘ফেংশি’। বহু চীনা নাগরিকের কাছেও অপরিচিত এই শব্দটির অর্থ হলো—সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কোনো বার্তা বা আদেশ পৌঁছে দেওয়া। এবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে এই শব্দটির ব্যবহার খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। ধারণা করা হচ্ছে, সম্প্রতি জাপানি রাষ্ট্রদূতকে ডাকা হয়েছিল শীর্ষ নির্দেশেই—অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের আদেশে।
তাকাইচির মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সি চিনপিং সরাসরি ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টার ফোনালাপে সি অর্ধেক সময় ব্যয় করেন তাইওয়ান নিয়ে চীনের অবস্থান বুঝিয়ে বলতে। ট্রাম্প পরে মন্তব্য করেন—সির উপস্থিতিতে পাশে থাকা কর্মকর্তারা ভয়ে যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, সির এই ক্ষোভের পেছনে রয়েছে ইতিহাস। ডাইতো বুনকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তাকাশি সুজুকির বক্তব্য অনুযায়ী, সি চিনপিং বিশ্বাস করেন তাইওয়ান ইস্যুর মূল উৎস ১৮৯৪-৯৫ সালের প্রথম চীন-জাপান যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে অনেক শক্তিশালী কুইং সাম্রাজ্য সহজেই পরাজিত হয় উদীয়মান জাপানের কাছে এবং সেই পরাজয়ের পরই তাইওয়ান চলে যায় জাপানের অধীনে।
২০১৮ সালে সির লিউগং দ্বীপ সফরও এই ঐতিহাসিক ক্ষতের স্মরণ। এ দ্বীপেই অবস্থান করত বেইয়াং নৌবহর, যেটিকে একসময় এশিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী হিসেবে ধরা হতো। কিন্তু ১৮৯৫ সালে জাপানের হামলায় তা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়। সির সফর ছিল ওই পরাজয় মনে রাখার বার্তা, যেন আবারও চীন দুর্বলতা প্রদর্শন করে একই পরিণতির শিকার না হয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠছে। সম্প্রতি জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর বিমানের দিকে চীনা যুদ্ধবিমান রাডার লক্ষ্য করে সতর্ক বার্তা দিয়েছে। চীন অভিযোগ করছে, তাকাইচির মন্তব্য দিয়ে জাপান তাইওয়ান প্রশ্নে সামরিক হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে জাপানের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে—এমন ব্যাখ্যা অতিরঞ্জিত; তাদের না ইচ্ছা আছে, না সক্ষমতা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই অচলাবস্থা কাটাতে সবচেয়ে জরুরি হলো সংলাপের সুযোগ তৈরি করা। অবিশ্বাস দূর করে আলোচনার টেবিলে ফিরে এলে তবেই উত্তেজনা কমার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে সি চিনপিংয়ের রাগ প্রশমিত না হওয়া পর্যন্ত পরিস্থিতি অচলাবস্থাতেই থাকতে পারে।

ফিলিস্তিন-ইসরায়েল সংকটের ভবিষ্যৎ সুরাহার জন্য বিশ্ব নেতারা অতীতের দিকেই ফিরে তাকাচ্ছেন। কেননা, এই যুদ্ধ শেষে সংকটের সমাধান কীরূপ হবে তার ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেছেন, ‘যুদ্ধ শেষে আমাদের লক্ষ্য হবে একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান।’ শুধু বাইডেন নন, এমনটিই বার্তা দিয়েছ
০২ নভেম্বর ২০২৩
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
১ দিন আগে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই যখন যুক্তরাষ্ট্রে চাকরি সংকট সৃষ্টি করছে, ঠিক তখনই ভারতের ছোট ছোট শহরে বেড়ে চলেছে কর্মসংস্থানের নতুন সুযোগ। এই বিষয়ে নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—দক্ষিণ ভারতের কারুর শহরের একটি অফিসে বসে ধারাণি চন্দ্রশেখর যখন কৃত্রিমভাবে তৈরি ছবি শনাক্ত করছেন...
২ দিন আগে
এই দলিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কার্যকলাপের নির্ভরযোগ্য নির্দেশক হবে কি না, তা যদিও স্পষ্ট নয়। কিন্তু এটি যে বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক নিয়ে অভ্যন্তরীণ বিতর্কের বিবর্তনে এক অনিবার্য মাইলফলক, তাতে সন্দেহ নেই। এই দলিলে মাগা বা মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন আন্দোলনের বৈশ্বিক দৃ
৩ দিন আগে