সুলতান মাহমুদ, ঢাকা

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ অক্টোবর ‘মা না হওয়ার’ শর্ত বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সরকারি চাকরির আশায় অনেক নারী সন্তান নেননি, কেউ গর্ভপাত করিয়েছেন, অনেকের স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, সন্তান না নেওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিক গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে অনেককে। পারিবারিক চাপ সত্ত্বেও অনেকে বিয়ে পিছিয়েছেন। চার বছর পর হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় সাত হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী এখন চরম হতাশায় ভুগছেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
সারা দেশে এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আজকের পত্রিকার সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন এই চার বছরের করুণ অভিজ্ঞতার কথা।

খুলনা বিভাগের এক চাকরিপ্রার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি চাকরির আশায় আমরা লাইফটাই শেষ! খুলনা অঞ্চলে বাড়ি হলেও এখন থাকতে হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফে, অনেকটা একা। কাজ করছি একটি বেসরকারি সংস্থায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সার্কুলারটা হয় ২০২০ সালে মার্চে এবং আমার বিয়ে হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। পরিবার থেকে আমাকে বিয়ে দেয়। আমার ভাই নাই। বাসায় আমার বৃদ্ধ মা, বাবা ও ছোট দুই বোন আছে। অভাবের সংসার। পরিবারের পুরো দায়িত্ব আমার ওপর। মা-বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। পড়ালেখা করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। হোস্টেলে এক বেলার ভাত দুই বেলা খাইছি। কখনো এক দিনের ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে নষ্ট না করে পরের দিন খাইছি। আমি তিন-চারটা ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছি। সরকারি চাকরি হয়নি। ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যখন বিয়ে হয়, করোনার মধ্যে আমি আবেদন করেছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করার জন্য। ২৭ সেপ্টেম্বর চাকরিটা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বিয়ের পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর শ্বশুরবাড়ি যাই। আর ২৫ সেপ্টেম্বর হাতের মেহেদির লাল দাগ নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে চলে আসি চাকরিতে যোগ দিতে। বিয়ের আগে শুনেছি, আমার স্বামী ব্যবসা করে। করোনার কারণে নাকি তার ব্যবসা মাইর গেছে। সে বর্তমানে বেকার। সংসার রেখে আমি চলে এসেছি টেকনাফে। সার্কুলার হলেই আমি আবেদন করতাম এবং চেষ্টা করতাম পড়াশোনার।’
‘এদিকে শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে চাপ দেয় বাচ্চা নেওয়ার জন্য। আমি বাচ্চা নেই না। কারণ, চাকরিতে শর্ত আছে, বাচ্চা নেওয়া যাবে না। আমি স্বামীকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলি। বাচ্চা কয়েক দিন পরেও নেওয়া যাবে। চাকরিটা যদি হয়। এটা আমার জীবনের শেষ সরকারি চাকরির আবেদন। একটা পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলতে শুরু করল, এই মেয়ে সংসার করবে না। অন্য কারও সঙ্গে হয়তো সম্পর্ক আছে। এই মেয়ে চলে যাবে। যে কারণে বাচ্চা নিচ্ছে না। এই অপবাদও আমি নিয়েছি। এভাবে সময় পার করছিলাম। ২০২৩ সালে পরীক্ষা হলো। এর মধ্যে বাচ্চা কনসিভ হয়। যখন পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়, তখন গর্ভের বয়স ছয় মাস। রিটেন পরীক্ষায় আমার রোল নম্বর চলে আসলে, আমি মেডিসিন খেয়ে ছয় মাসের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি। শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ির কাউকে বলি না। বলি, আমি পড়ে গিয়েছিলাম। মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। ওদিকে স্বামী বেকার। বাবা-মাকে দেখতে হয়। বাচ্চার জন্য যদি আমার চাকরি না হয়! অ্যাবরশন হওয়ার পর অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। বাচ্চা না নেওয়ায় স্বামীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়। স্বামীর সঙ্গে এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই। পাঁচ মাস আগে স্বামীর সঙ্গে শেষ একবার যোগাযোগ হয়েছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। আমরা সেপারেশনে যাব এ রকম অবস্থায় আছি, সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি।’
তিনি ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে বলেন, ‘এখন চার বছর পর নিয়োগ বাতিল করল। আমি এখন কী করব! আমার বাচ্চা গেল, স্বামী গেল! এখন স্বামীর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই। এদিকে আমার বয়স ৩০ বছর পার হয়েছে। আমার কথা, যারা দুর্নীতি করেছে বা যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য আমি সবকিছু কেন হারাব। নোটিশ বাতিল করে আমাদের ভাইভার ফল প্রকাশ করা হোক।’
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না—এমন শর্ত দিয়ে ২০২০ সালে ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সেখানে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ১ হাজার ৮০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
তিন লাখের বেশি নারী ওই পদের জন্য আবেদন করেন। আর ওই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয় তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ওই বছরের ১১ মে। পরে ১৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করে ১৪ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১৩ ডিসেম্বর তারিখের পর্যবেক্ষণ ও পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন-সংক্রান্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির ১১ জানুয়ারির সভার মতামত/সিদ্ধান্তের আলোকে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো। প্রার্থীদের আবারও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ভুক্তভোগী কয়েকজন।
হাইকোর্টে রিট
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা পরিপত্র কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বাস্থ্যসচিব, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ চার বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চার নিয়োগপ্রত্যাশীর রিটে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) এই রুল জারি করেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রুলের শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ জবাব দিক বা না দিক, ওই দিন শুনানি হবে। ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সাড়ে তিন বছর পর এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষার পর ফল প্রকাশ না করে অনিয়মের অভিযোগ তুলে লিখিত পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে, ওই (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) পদে নিয়োগের আগে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ করতে হয়। ইতিমধ্যে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকার ১৫ কোটি টাকার মতো ব্যয় করেছে, আমরা রিটে উল্লেখ করেছি। এখন আবার লিখিত পরীক্ষা হলে আবার ব্যয় হবে। আর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়োগ পেতে আরও তিন বছর লেগে যেতে পারে নিয়োগপ্রত্যাশীদের।’
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার আগে থেকে সারা দেশে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ২ হাজার ৬৭৬টি শূন্য ছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। এই জবটা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এরা (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদান করে থাকে। এদের কারণে সরকার মাতৃমৃত্যু, প্রসূতিমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতে পেরেছে। এই জায়গাটায় সাকসেস আছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এই জায়গায় পাবলিক ইন্টারেস্ট আছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ইন্টারেস্ট আছে। তিনি বলেন, কোনো কথাবার্তা নাই, সচিব পরিবর্তনে হঠাৎ মনে হলো রিটেন নেবে। যদি রিটেন নেয়, তাহলে ভাইভা নিল কেন? রিটেনে গন্ডগোল, তাহলে তখনই বাতিল করত। তাঁর প্রশ্ন, রিটেন পরীক্ষায় দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, তাহলে কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’
একই ভুক্তভোগী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ছিটমহলের বাসিন্দা ফৌজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাই। এর আগে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আমাদের আবেদন করার কোনো সুযোগ ছিল না। নাগরিকত্ব লাভের পর সরকারি একাধিক চাকরিতে আবেদন করে তিনটিতে ভাইভায় অংশ নিই। আগের দুটিতে চাকরি হয়নি। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ছিল সরকারি চাকরির জন্য আমার শেষ ভাইভা পরীক্ষা। এরই মধ্যে বয়স ৩০ শেষ হয়েছে। তাই সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আর কোনো সুযোগও নেই। এফডব্লিউভি পদে নিয়োগের জন্য অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না বলে একটি শর্ত দেওয়া ছিল। যে কারণে বিয়ে করিনি। যখন আবেদন করি তখন বয়স ২৭ বছর ছিল, এখন ৩০ বছরের বেশি। হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় আমি হতাশ। আমি এখন কী করব জানি না। আমি পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তরের এই নোটিশ মানি না।’
জয়পুরহাটের একজন প্রার্থী চাকরির আশায় বিয়ের আট বছরেও সন্তান নেননি। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর স্বামী-সংসার সামাল দিয়ে সরকারি চাকরির আশায় পড়ালেখা করি। ২০২০ সালের মার্চে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে সার্কুলার হলে গত চার বছর আমরা বাচ্চা নিইনি। কেননা, যদি বাচ্চা কনসিভ করি, আর যদি চাকরির পরীক্ষা হয়ে যায়, আর যদি টিকে যাই, তাহলে গর্ভধারণের কারণে চাকরি থেকে বাদ পড়ব। এ কারণে আমরা বাচ্চা নেইনি।’
পরিচিত অনেক প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকে ভাইভা ভালো দিয়েছে। যে কারণে বাচ্চা নষ্ট করেছে।’ নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে আট বছর হয়েছে। প্রথম দিকে সরকারি চাকরির আশায় পড়াশোনার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর এই সার্কুলারে আবেদন করার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর যখন রিটেন দিয়ে টিকে যাই এবং ভাইভা দিই; এরপর তো বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবতেও পারিনি। এই কারণে যে হয়তো আমার চাকরিটা হয়ে যাবে। তারপর যখন ভাইভা দেওয়ার পর সাত মাস কেটে গেল, ওনারা রেজাল্ট দিচ্ছিলেন না। তারপর আমরা বারবার আন্দোলন করেছি। তখন ওনারা বিষয়টি দেখে ওই শর্ত বাতিল করেছে। এর আগে আমাদের সাড়ে তিন বছর জীবন থেকে চলে গেছে। ওনারা এখন অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগ বাতিল করছে। ওনারা কি আমাদের চারটি বছর ফিরিয়ে দিতে পারবেন! আমরা চাকরির আশায় এত দিন বাচ্চা নেইনি। এখন আমাদের বাচ্চা নিতে সমস্যা হচ্ছে। তাহলে এই দায়ভার কেন আমরা চাকরিপ্রার্থীরা নেব?’
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ৩০ হয়ে গেছে। আমার চাকরির বয়স শেষ। আমি বাচ্চাও নিলাম না। এই নিয়োগটা বাতিল করে মেয়েদের জন্য একটি হতাশাজনক বার্তা দিচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। ওনারা নিয়োগ যদি বাতিলই করবে, তাহলে এক বছরের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করত! চার বছর কেন নিল? আমাদের এই চারটা বছর কে ফিরিয়ে দেবে?’
চাকরির আশায় গর্ভপাত করিয়েছেন জামালপুরের এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমার একটি বাচ্চা আছে। বয়স ১০ বছর। ২০১৪ সালে ওর জন্ম। ২০১৯ সালে বাচ্চা নিতে চেয়েছিলাম। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কনসিভ করি। দুই মাস পর মার্চে সার্কুলার হয়। পরে অ্যাবরশন করে ফেলি। পরে অক্লান্ত পরিশ্রম করি। যে কারণে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করি। ভাইভা পরীক্ষায়ও আমি ভালো করেছি। আমাকে ১২টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আমি ৮টি প্রশ্নের উত্তর ভালো করে দিয়েছি। একটির উত্তর মোটামুটি দিয়েছি। আমি আশাবাদী যে চাকরিটা আমার হবে। এখন তীরে এসে তরি ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমি কী করব? আমার ৩০ বছর শেষ হয়েছে ২০২০ সালের নভেম্বরে। এ চাকরিটা পাওয়ার আশায় বাচ্চাটা অ্যাবরশন করলাম। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলো। তাদের (পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর) অযৌক্তিক শর্ত পালন করতে গিয়ে আমার এই সমস্যাগুলো হয়েছে। এই নিয়োগটা বাতিল করায় পরিবারে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে আছি। নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছি।’
জামালপুরের এই নারী বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এখন নিয়োগটা বাতিল করছে। দুর্নীতি করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করেছেন। তাঁদের শাস্তি হোক। আমরা কেন শাস্তি পাব? আমরা চাই, নিয়োগ বাতিলের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে আমাদের ফল প্রকাশ করা হোক।’

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ অক্টোবর ‘মা না হওয়ার’ শর্ত বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সরকারি চাকরির আশায় অনেক নারী সন্তান নেননি, কেউ গর্ভপাত করিয়েছেন, অনেকের স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, সন্তান না নেওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিক গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে অনেককে। পারিবারিক চাপ সত্ত্বেও অনেকে বিয়ে পিছিয়েছেন। চার বছর পর হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় সাত হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী এখন চরম হতাশায় ভুগছেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
সারা দেশে এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আজকের পত্রিকার সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন এই চার বছরের করুণ অভিজ্ঞতার কথা।

খুলনা বিভাগের এক চাকরিপ্রার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি চাকরির আশায় আমরা লাইফটাই শেষ! খুলনা অঞ্চলে বাড়ি হলেও এখন থাকতে হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফে, অনেকটা একা। কাজ করছি একটি বেসরকারি সংস্থায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সার্কুলারটা হয় ২০২০ সালে মার্চে এবং আমার বিয়ে হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। পরিবার থেকে আমাকে বিয়ে দেয়। আমার ভাই নাই। বাসায় আমার বৃদ্ধ মা, বাবা ও ছোট দুই বোন আছে। অভাবের সংসার। পরিবারের পুরো দায়িত্ব আমার ওপর। মা-বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। পড়ালেখা করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। হোস্টেলে এক বেলার ভাত দুই বেলা খাইছি। কখনো এক দিনের ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে নষ্ট না করে পরের দিন খাইছি। আমি তিন-চারটা ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছি। সরকারি চাকরি হয়নি। ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যখন বিয়ে হয়, করোনার মধ্যে আমি আবেদন করেছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করার জন্য। ২৭ সেপ্টেম্বর চাকরিটা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বিয়ের পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর শ্বশুরবাড়ি যাই। আর ২৫ সেপ্টেম্বর হাতের মেহেদির লাল দাগ নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে চলে আসি চাকরিতে যোগ দিতে। বিয়ের আগে শুনেছি, আমার স্বামী ব্যবসা করে। করোনার কারণে নাকি তার ব্যবসা মাইর গেছে। সে বর্তমানে বেকার। সংসার রেখে আমি চলে এসেছি টেকনাফে। সার্কুলার হলেই আমি আবেদন করতাম এবং চেষ্টা করতাম পড়াশোনার।’
‘এদিকে শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে চাপ দেয় বাচ্চা নেওয়ার জন্য। আমি বাচ্চা নেই না। কারণ, চাকরিতে শর্ত আছে, বাচ্চা নেওয়া যাবে না। আমি স্বামীকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলি। বাচ্চা কয়েক দিন পরেও নেওয়া যাবে। চাকরিটা যদি হয়। এটা আমার জীবনের শেষ সরকারি চাকরির আবেদন। একটা পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলতে শুরু করল, এই মেয়ে সংসার করবে না। অন্য কারও সঙ্গে হয়তো সম্পর্ক আছে। এই মেয়ে চলে যাবে। যে কারণে বাচ্চা নিচ্ছে না। এই অপবাদও আমি নিয়েছি। এভাবে সময় পার করছিলাম। ২০২৩ সালে পরীক্ষা হলো। এর মধ্যে বাচ্চা কনসিভ হয়। যখন পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়, তখন গর্ভের বয়স ছয় মাস। রিটেন পরীক্ষায় আমার রোল নম্বর চলে আসলে, আমি মেডিসিন খেয়ে ছয় মাসের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি। শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ির কাউকে বলি না। বলি, আমি পড়ে গিয়েছিলাম। মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। ওদিকে স্বামী বেকার। বাবা-মাকে দেখতে হয়। বাচ্চার জন্য যদি আমার চাকরি না হয়! অ্যাবরশন হওয়ার পর অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। বাচ্চা না নেওয়ায় স্বামীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়। স্বামীর সঙ্গে এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই। পাঁচ মাস আগে স্বামীর সঙ্গে শেষ একবার যোগাযোগ হয়েছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। আমরা সেপারেশনে যাব এ রকম অবস্থায় আছি, সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি।’
তিনি ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে বলেন, ‘এখন চার বছর পর নিয়োগ বাতিল করল। আমি এখন কী করব! আমার বাচ্চা গেল, স্বামী গেল! এখন স্বামীর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই। এদিকে আমার বয়স ৩০ বছর পার হয়েছে। আমার কথা, যারা দুর্নীতি করেছে বা যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য আমি সবকিছু কেন হারাব। নোটিশ বাতিল করে আমাদের ভাইভার ফল প্রকাশ করা হোক।’
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না—এমন শর্ত দিয়ে ২০২০ সালে ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সেখানে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ১ হাজার ৮০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
তিন লাখের বেশি নারী ওই পদের জন্য আবেদন করেন। আর ওই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয় তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ওই বছরের ১১ মে। পরে ১৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করে ১৪ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১৩ ডিসেম্বর তারিখের পর্যবেক্ষণ ও পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন-সংক্রান্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির ১১ জানুয়ারির সভার মতামত/সিদ্ধান্তের আলোকে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো। প্রার্থীদের আবারও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ভুক্তভোগী কয়েকজন।
হাইকোর্টে রিট
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা পরিপত্র কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বাস্থ্যসচিব, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ চার বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চার নিয়োগপ্রত্যাশীর রিটে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) এই রুল জারি করেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রুলের শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ জবাব দিক বা না দিক, ওই দিন শুনানি হবে। ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সাড়ে তিন বছর পর এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষার পর ফল প্রকাশ না করে অনিয়মের অভিযোগ তুলে লিখিত পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে, ওই (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) পদে নিয়োগের আগে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ করতে হয়। ইতিমধ্যে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকার ১৫ কোটি টাকার মতো ব্যয় করেছে, আমরা রিটে উল্লেখ করেছি। এখন আবার লিখিত পরীক্ষা হলে আবার ব্যয় হবে। আর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়োগ পেতে আরও তিন বছর লেগে যেতে পারে নিয়োগপ্রত্যাশীদের।’
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার আগে থেকে সারা দেশে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ২ হাজার ৬৭৬টি শূন্য ছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। এই জবটা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এরা (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদান করে থাকে। এদের কারণে সরকার মাতৃমৃত্যু, প্রসূতিমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতে পেরেছে। এই জায়গাটায় সাকসেস আছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এই জায়গায় পাবলিক ইন্টারেস্ট আছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ইন্টারেস্ট আছে। তিনি বলেন, কোনো কথাবার্তা নাই, সচিব পরিবর্তনে হঠাৎ মনে হলো রিটেন নেবে। যদি রিটেন নেয়, তাহলে ভাইভা নিল কেন? রিটেনে গন্ডগোল, তাহলে তখনই বাতিল করত। তাঁর প্রশ্ন, রিটেন পরীক্ষায় দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, তাহলে কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’
একই ভুক্তভোগী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ছিটমহলের বাসিন্দা ফৌজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাই। এর আগে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আমাদের আবেদন করার কোনো সুযোগ ছিল না। নাগরিকত্ব লাভের পর সরকারি একাধিক চাকরিতে আবেদন করে তিনটিতে ভাইভায় অংশ নিই। আগের দুটিতে চাকরি হয়নি। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ছিল সরকারি চাকরির জন্য আমার শেষ ভাইভা পরীক্ষা। এরই মধ্যে বয়স ৩০ শেষ হয়েছে। তাই সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আর কোনো সুযোগও নেই। এফডব্লিউভি পদে নিয়োগের জন্য অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না বলে একটি শর্ত দেওয়া ছিল। যে কারণে বিয়ে করিনি। যখন আবেদন করি তখন বয়স ২৭ বছর ছিল, এখন ৩০ বছরের বেশি। হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় আমি হতাশ। আমি এখন কী করব জানি না। আমি পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তরের এই নোটিশ মানি না।’
জয়পুরহাটের একজন প্রার্থী চাকরির আশায় বিয়ের আট বছরেও সন্তান নেননি। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর স্বামী-সংসার সামাল দিয়ে সরকারি চাকরির আশায় পড়ালেখা করি। ২০২০ সালের মার্চে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে সার্কুলার হলে গত চার বছর আমরা বাচ্চা নিইনি। কেননা, যদি বাচ্চা কনসিভ করি, আর যদি চাকরির পরীক্ষা হয়ে যায়, আর যদি টিকে যাই, তাহলে গর্ভধারণের কারণে চাকরি থেকে বাদ পড়ব। এ কারণে আমরা বাচ্চা নেইনি।’
পরিচিত অনেক প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকে ভাইভা ভালো দিয়েছে। যে কারণে বাচ্চা নষ্ট করেছে।’ নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে আট বছর হয়েছে। প্রথম দিকে সরকারি চাকরির আশায় পড়াশোনার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর এই সার্কুলারে আবেদন করার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর যখন রিটেন দিয়ে টিকে যাই এবং ভাইভা দিই; এরপর তো বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবতেও পারিনি। এই কারণে যে হয়তো আমার চাকরিটা হয়ে যাবে। তারপর যখন ভাইভা দেওয়ার পর সাত মাস কেটে গেল, ওনারা রেজাল্ট দিচ্ছিলেন না। তারপর আমরা বারবার আন্দোলন করেছি। তখন ওনারা বিষয়টি দেখে ওই শর্ত বাতিল করেছে। এর আগে আমাদের সাড়ে তিন বছর জীবন থেকে চলে গেছে। ওনারা এখন অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগ বাতিল করছে। ওনারা কি আমাদের চারটি বছর ফিরিয়ে দিতে পারবেন! আমরা চাকরির আশায় এত দিন বাচ্চা নেইনি। এখন আমাদের বাচ্চা নিতে সমস্যা হচ্ছে। তাহলে এই দায়ভার কেন আমরা চাকরিপ্রার্থীরা নেব?’
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ৩০ হয়ে গেছে। আমার চাকরির বয়স শেষ। আমি বাচ্চাও নিলাম না। এই নিয়োগটা বাতিল করে মেয়েদের জন্য একটি হতাশাজনক বার্তা দিচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। ওনারা নিয়োগ যদি বাতিলই করবে, তাহলে এক বছরের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করত! চার বছর কেন নিল? আমাদের এই চারটা বছর কে ফিরিয়ে দেবে?’
চাকরির আশায় গর্ভপাত করিয়েছেন জামালপুরের এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমার একটি বাচ্চা আছে। বয়স ১০ বছর। ২০১৪ সালে ওর জন্ম। ২০১৯ সালে বাচ্চা নিতে চেয়েছিলাম। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কনসিভ করি। দুই মাস পর মার্চে সার্কুলার হয়। পরে অ্যাবরশন করে ফেলি। পরে অক্লান্ত পরিশ্রম করি। যে কারণে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করি। ভাইভা পরীক্ষায়ও আমি ভালো করেছি। আমাকে ১২টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আমি ৮টি প্রশ্নের উত্তর ভালো করে দিয়েছি। একটির উত্তর মোটামুটি দিয়েছি। আমি আশাবাদী যে চাকরিটা আমার হবে। এখন তীরে এসে তরি ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমি কী করব? আমার ৩০ বছর শেষ হয়েছে ২০২০ সালের নভেম্বরে। এ চাকরিটা পাওয়ার আশায় বাচ্চাটা অ্যাবরশন করলাম। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলো। তাদের (পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর) অযৌক্তিক শর্ত পালন করতে গিয়ে আমার এই সমস্যাগুলো হয়েছে। এই নিয়োগটা বাতিল করায় পরিবারে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে আছি। নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছি।’
জামালপুরের এই নারী বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এখন নিয়োগটা বাতিল করছে। দুর্নীতি করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করেছেন। তাঁদের শাস্তি হোক। আমরা কেন শাস্তি পাব? আমরা চাই, নিয়োগ বাতিলের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে আমাদের ফল প্রকাশ করা হোক।’
সুলতান মাহমুদ, ঢাকা

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ অক্টোবর ‘মা না হওয়ার’ শর্ত বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সরকারি চাকরির আশায় অনেক নারী সন্তান নেননি, কেউ গর্ভপাত করিয়েছেন, অনেকের স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, সন্তান না নেওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিক গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে অনেককে। পারিবারিক চাপ সত্ত্বেও অনেকে বিয়ে পিছিয়েছেন। চার বছর পর হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় সাত হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী এখন চরম হতাশায় ভুগছেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
সারা দেশে এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আজকের পত্রিকার সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন এই চার বছরের করুণ অভিজ্ঞতার কথা।

খুলনা বিভাগের এক চাকরিপ্রার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি চাকরির আশায় আমরা লাইফটাই শেষ! খুলনা অঞ্চলে বাড়ি হলেও এখন থাকতে হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফে, অনেকটা একা। কাজ করছি একটি বেসরকারি সংস্থায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সার্কুলারটা হয় ২০২০ সালে মার্চে এবং আমার বিয়ে হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। পরিবার থেকে আমাকে বিয়ে দেয়। আমার ভাই নাই। বাসায় আমার বৃদ্ধ মা, বাবা ও ছোট দুই বোন আছে। অভাবের সংসার। পরিবারের পুরো দায়িত্ব আমার ওপর। মা-বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। পড়ালেখা করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। হোস্টেলে এক বেলার ভাত দুই বেলা খাইছি। কখনো এক দিনের ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে নষ্ট না করে পরের দিন খাইছি। আমি তিন-চারটা ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছি। সরকারি চাকরি হয়নি। ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যখন বিয়ে হয়, করোনার মধ্যে আমি আবেদন করেছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করার জন্য। ২৭ সেপ্টেম্বর চাকরিটা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বিয়ের পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর শ্বশুরবাড়ি যাই। আর ২৫ সেপ্টেম্বর হাতের মেহেদির লাল দাগ নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে চলে আসি চাকরিতে যোগ দিতে। বিয়ের আগে শুনেছি, আমার স্বামী ব্যবসা করে। করোনার কারণে নাকি তার ব্যবসা মাইর গেছে। সে বর্তমানে বেকার। সংসার রেখে আমি চলে এসেছি টেকনাফে। সার্কুলার হলেই আমি আবেদন করতাম এবং চেষ্টা করতাম পড়াশোনার।’
‘এদিকে শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে চাপ দেয় বাচ্চা নেওয়ার জন্য। আমি বাচ্চা নেই না। কারণ, চাকরিতে শর্ত আছে, বাচ্চা নেওয়া যাবে না। আমি স্বামীকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলি। বাচ্চা কয়েক দিন পরেও নেওয়া যাবে। চাকরিটা যদি হয়। এটা আমার জীবনের শেষ সরকারি চাকরির আবেদন। একটা পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলতে শুরু করল, এই মেয়ে সংসার করবে না। অন্য কারও সঙ্গে হয়তো সম্পর্ক আছে। এই মেয়ে চলে যাবে। যে কারণে বাচ্চা নিচ্ছে না। এই অপবাদও আমি নিয়েছি। এভাবে সময় পার করছিলাম। ২০২৩ সালে পরীক্ষা হলো। এর মধ্যে বাচ্চা কনসিভ হয়। যখন পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়, তখন গর্ভের বয়স ছয় মাস। রিটেন পরীক্ষায় আমার রোল নম্বর চলে আসলে, আমি মেডিসিন খেয়ে ছয় মাসের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি। শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ির কাউকে বলি না। বলি, আমি পড়ে গিয়েছিলাম। মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। ওদিকে স্বামী বেকার। বাবা-মাকে দেখতে হয়। বাচ্চার জন্য যদি আমার চাকরি না হয়! অ্যাবরশন হওয়ার পর অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। বাচ্চা না নেওয়ায় স্বামীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়। স্বামীর সঙ্গে এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই। পাঁচ মাস আগে স্বামীর সঙ্গে শেষ একবার যোগাযোগ হয়েছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। আমরা সেপারেশনে যাব এ রকম অবস্থায় আছি, সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি।’
তিনি ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে বলেন, ‘এখন চার বছর পর নিয়োগ বাতিল করল। আমি এখন কী করব! আমার বাচ্চা গেল, স্বামী গেল! এখন স্বামীর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই। এদিকে আমার বয়স ৩০ বছর পার হয়েছে। আমার কথা, যারা দুর্নীতি করেছে বা যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য আমি সবকিছু কেন হারাব। নোটিশ বাতিল করে আমাদের ভাইভার ফল প্রকাশ করা হোক।’
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না—এমন শর্ত দিয়ে ২০২০ সালে ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সেখানে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ১ হাজার ৮০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
তিন লাখের বেশি নারী ওই পদের জন্য আবেদন করেন। আর ওই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয় তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ওই বছরের ১১ মে। পরে ১৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করে ১৪ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১৩ ডিসেম্বর তারিখের পর্যবেক্ষণ ও পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন-সংক্রান্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির ১১ জানুয়ারির সভার মতামত/সিদ্ধান্তের আলোকে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো। প্রার্থীদের আবারও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ভুক্তভোগী কয়েকজন।
হাইকোর্টে রিট
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা পরিপত্র কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বাস্থ্যসচিব, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ চার বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চার নিয়োগপ্রত্যাশীর রিটে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) এই রুল জারি করেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রুলের শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ জবাব দিক বা না দিক, ওই দিন শুনানি হবে। ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সাড়ে তিন বছর পর এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষার পর ফল প্রকাশ না করে অনিয়মের অভিযোগ তুলে লিখিত পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে, ওই (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) পদে নিয়োগের আগে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ করতে হয়। ইতিমধ্যে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকার ১৫ কোটি টাকার মতো ব্যয় করেছে, আমরা রিটে উল্লেখ করেছি। এখন আবার লিখিত পরীক্ষা হলে আবার ব্যয় হবে। আর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়োগ পেতে আরও তিন বছর লেগে যেতে পারে নিয়োগপ্রত্যাশীদের।’
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার আগে থেকে সারা দেশে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ২ হাজার ৬৭৬টি শূন্য ছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। এই জবটা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এরা (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদান করে থাকে। এদের কারণে সরকার মাতৃমৃত্যু, প্রসূতিমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতে পেরেছে। এই জায়গাটায় সাকসেস আছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এই জায়গায় পাবলিক ইন্টারেস্ট আছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ইন্টারেস্ট আছে। তিনি বলেন, কোনো কথাবার্তা নাই, সচিব পরিবর্তনে হঠাৎ মনে হলো রিটেন নেবে। যদি রিটেন নেয়, তাহলে ভাইভা নিল কেন? রিটেনে গন্ডগোল, তাহলে তখনই বাতিল করত। তাঁর প্রশ্ন, রিটেন পরীক্ষায় দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, তাহলে কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’
একই ভুক্তভোগী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ছিটমহলের বাসিন্দা ফৌজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাই। এর আগে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আমাদের আবেদন করার কোনো সুযোগ ছিল না। নাগরিকত্ব লাভের পর সরকারি একাধিক চাকরিতে আবেদন করে তিনটিতে ভাইভায় অংশ নিই। আগের দুটিতে চাকরি হয়নি। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ছিল সরকারি চাকরির জন্য আমার শেষ ভাইভা পরীক্ষা। এরই মধ্যে বয়স ৩০ শেষ হয়েছে। তাই সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আর কোনো সুযোগও নেই। এফডব্লিউভি পদে নিয়োগের জন্য অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না বলে একটি শর্ত দেওয়া ছিল। যে কারণে বিয়ে করিনি। যখন আবেদন করি তখন বয়স ২৭ বছর ছিল, এখন ৩০ বছরের বেশি। হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় আমি হতাশ। আমি এখন কী করব জানি না। আমি পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তরের এই নোটিশ মানি না।’
জয়পুরহাটের একজন প্রার্থী চাকরির আশায় বিয়ের আট বছরেও সন্তান নেননি। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর স্বামী-সংসার সামাল দিয়ে সরকারি চাকরির আশায় পড়ালেখা করি। ২০২০ সালের মার্চে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে সার্কুলার হলে গত চার বছর আমরা বাচ্চা নিইনি। কেননা, যদি বাচ্চা কনসিভ করি, আর যদি চাকরির পরীক্ষা হয়ে যায়, আর যদি টিকে যাই, তাহলে গর্ভধারণের কারণে চাকরি থেকে বাদ পড়ব। এ কারণে আমরা বাচ্চা নেইনি।’
পরিচিত অনেক প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকে ভাইভা ভালো দিয়েছে। যে কারণে বাচ্চা নষ্ট করেছে।’ নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে আট বছর হয়েছে। প্রথম দিকে সরকারি চাকরির আশায় পড়াশোনার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর এই সার্কুলারে আবেদন করার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর যখন রিটেন দিয়ে টিকে যাই এবং ভাইভা দিই; এরপর তো বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবতেও পারিনি। এই কারণে যে হয়তো আমার চাকরিটা হয়ে যাবে। তারপর যখন ভাইভা দেওয়ার পর সাত মাস কেটে গেল, ওনারা রেজাল্ট দিচ্ছিলেন না। তারপর আমরা বারবার আন্দোলন করেছি। তখন ওনারা বিষয়টি দেখে ওই শর্ত বাতিল করেছে। এর আগে আমাদের সাড়ে তিন বছর জীবন থেকে চলে গেছে। ওনারা এখন অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগ বাতিল করছে। ওনারা কি আমাদের চারটি বছর ফিরিয়ে দিতে পারবেন! আমরা চাকরির আশায় এত দিন বাচ্চা নেইনি। এখন আমাদের বাচ্চা নিতে সমস্যা হচ্ছে। তাহলে এই দায়ভার কেন আমরা চাকরিপ্রার্থীরা নেব?’
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ৩০ হয়ে গেছে। আমার চাকরির বয়স শেষ। আমি বাচ্চাও নিলাম না। এই নিয়োগটা বাতিল করে মেয়েদের জন্য একটি হতাশাজনক বার্তা দিচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। ওনারা নিয়োগ যদি বাতিলই করবে, তাহলে এক বছরের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করত! চার বছর কেন নিল? আমাদের এই চারটা বছর কে ফিরিয়ে দেবে?’
চাকরির আশায় গর্ভপাত করিয়েছেন জামালপুরের এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমার একটি বাচ্চা আছে। বয়স ১০ বছর। ২০১৪ সালে ওর জন্ম। ২০১৯ সালে বাচ্চা নিতে চেয়েছিলাম। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কনসিভ করি। দুই মাস পর মার্চে সার্কুলার হয়। পরে অ্যাবরশন করে ফেলি। পরে অক্লান্ত পরিশ্রম করি। যে কারণে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করি। ভাইভা পরীক্ষায়ও আমি ভালো করেছি। আমাকে ১২টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আমি ৮টি প্রশ্নের উত্তর ভালো করে দিয়েছি। একটির উত্তর মোটামুটি দিয়েছি। আমি আশাবাদী যে চাকরিটা আমার হবে। এখন তীরে এসে তরি ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমি কী করব? আমার ৩০ বছর শেষ হয়েছে ২০২০ সালের নভেম্বরে। এ চাকরিটা পাওয়ার আশায় বাচ্চাটা অ্যাবরশন করলাম। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলো। তাদের (পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর) অযৌক্তিক শর্ত পালন করতে গিয়ে আমার এই সমস্যাগুলো হয়েছে। এই নিয়োগটা বাতিল করায় পরিবারে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে আছি। নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছি।’
জামালপুরের এই নারী বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এখন নিয়োগটা বাতিল করছে। দুর্নীতি করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করেছেন। তাঁদের শাস্তি হোক। আমরা কেন শাস্তি পাব? আমরা চাই, নিয়োগ বাতিলের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে আমাদের ফল প্রকাশ করা হোক।’

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১১ অক্টোবর ‘মা না হওয়ার’ শর্ত বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই সরকারি চাকরির আশায় অনেক নারী সন্তান নেননি, কেউ গর্ভপাত করিয়েছেন, অনেকের স্বামী ছেড়ে চলে গেছে, সন্তান না নেওয়ায় পারিবারিক ও সামাজিক গঞ্জনা সহ্য করতে হচ্ছে অনেককে। পারিবারিক চাপ সত্ত্বেও অনেকে বিয়ে পিছিয়েছেন। চার বছর পর হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় সাত হাজারের বেশি চাকরিপ্রার্থী এখন চরম হতাশায় ভুগছেন, মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন।
সারা দেশে এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর সঙ্গে আজকের পত্রিকার সরাসরি এবং মোবাইল ফোনে কথা হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন এই চার বছরের করুণ অভিজ্ঞতার কথা।

খুলনা বিভাগের এক চাকরিপ্রার্থী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারি চাকরির আশায় আমরা লাইফটাই শেষ! খুলনা অঞ্চলে বাড়ি হলেও এখন থাকতে হচ্ছে কক্সবাজারের টেকনাফে, অনেকটা একা। কাজ করছি একটি বেসরকারি সংস্থায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। সার্কুলারটা হয় ২০২০ সালে মার্চে এবং আমার বিয়ে হয় ওই বছরের সেপ্টেম্বরে। পরিবার থেকে আমাকে বিয়ে দেয়। আমার ভাই নাই। বাসায় আমার বৃদ্ধ মা, বাবা ও ছোট দুই বোন আছে। অভাবের সংসার। পরিবারের পুরো দায়িত্ব আমার ওপর। মা-বাবা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিল। পড়ালেখা করতে গিয়ে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে আমাকে। হোস্টেলে এক বেলার ভাত দুই বেলা খাইছি। কখনো এক দিনের ভাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে নষ্ট না করে পরের দিন খাইছি। আমি তিন-চারটা ভাইভা পরীক্ষা দিয়েছি। সরকারি চাকরি হয়নি। ২০২০ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর যখন বিয়ে হয়, করোনার মধ্যে আমি আবেদন করেছিলাম রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি বেসরকারি সংস্থার হয়ে কাজ করার জন্য। ২৭ সেপ্টেম্বর চাকরিটা হয়। ২৩ সেপ্টেম্বর বিয়ের পরের দিন ২৪ সেপ্টেম্বর শ্বশুরবাড়ি যাই। আর ২৫ সেপ্টেম্বর হাতের মেহেদির লাল দাগ নিয়ে উখিয়া-টেকনাফে চলে আসি চাকরিতে যোগ দিতে। বিয়ের আগে শুনেছি, আমার স্বামী ব্যবসা করে। করোনার কারণে নাকি তার ব্যবসা মাইর গেছে। সে বর্তমানে বেকার। সংসার রেখে আমি চলে এসেছি টেকনাফে। সার্কুলার হলেই আমি আবেদন করতাম এবং চেষ্টা করতাম পড়াশোনার।’
‘এদিকে শ্বশুরবাড়ির দিক থেকে চাপ দেয় বাচ্চা নেওয়ার জন্য। আমি বাচ্চা নেই না। কারণ, চাকরিতে শর্ত আছে, বাচ্চা নেওয়া যাবে না। আমি স্বামীকে বিষয়টা বুঝিয়ে বলি। বাচ্চা কয়েক দিন পরেও নেওয়া যাবে। চাকরিটা যদি হয়। এটা আমার জীবনের শেষ সরকারি চাকরির আবেদন। একটা পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলতে শুরু করল, এই মেয়ে সংসার করবে না। অন্য কারও সঙ্গে হয়তো সম্পর্ক আছে। এই মেয়ে চলে যাবে। যে কারণে বাচ্চা নিচ্ছে না। এই অপবাদও আমি নিয়েছি। এভাবে সময় পার করছিলাম। ২০২৩ সালে পরীক্ষা হলো। এর মধ্যে বাচ্চা কনসিভ হয়। যখন পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়, তখন গর্ভের বয়স ছয় মাস। রিটেন পরীক্ষায় আমার রোল নম্বর চলে আসলে, আমি মেডিসিন খেয়ে ছয় মাসের বাচ্চা নষ্ট করে ফেলি। শ্বশুরবাড়ি, বাপের বাড়ির কাউকে বলি না। বলি, আমি পড়ে গিয়েছিলাম। মিসক্যারেজ হয়ে গেছে। ওদিকে স্বামী বেকার। বাবা-মাকে দেখতে হয়। বাচ্চার জন্য যদি আমার চাকরি না হয়! অ্যাবরশন হওয়ার পর অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিলাম। বাচ্চা না নেওয়ায় স্বামীর সঙ্গে আমার সম্পর্ক খারাপ হয়। স্বামীর সঙ্গে এখন আর কোনো যোগাযোগ নেই। পাঁচ মাস আগে স্বামীর সঙ্গে শেষ একবার যোগাযোগ হয়েছে। এরপর আর যোগাযোগ হয়নি। আমরা সেপারেশনে যাব এ রকম অবস্থায় আছি, সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছি।’
তিনি ক্ষোভ ও হতাশা নিয়ে বলেন, ‘এখন চার বছর পর নিয়োগ বাতিল করল। আমি এখন কী করব! আমার বাচ্চা গেল, স্বামী গেল! এখন স্বামীর সঙ্গে আমার কোনো ধরনের যোগাযোগও নেই। এদিকে আমার বয়স ৩০ বছর পার হয়েছে। আমার কথা, যারা দুর্নীতি করেছে বা যারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, তাদের জন্য আমি সবকিছু কেন হারাব। নোটিশ বাতিল করে আমাদের ভাইভার ফল প্রকাশ করা হোক।’
অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না—এমন শর্ত দিয়ে ২০২০ সালে ১০ মার্চ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। সেখানে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ১ হাজার ৮০ জন নিয়োগ দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়।
তিন লাখের বেশি নারী ওই পদের জন্য আবেদন করেন। আর ওই নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হয় তিন বছর পর ২০২৩ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয় ওই বছরের ১১ মে। পরে ১৫ মে থেকে ১৮ জুন পর্যন্ত মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ না করে ১৪ জানুয়ারি নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের ১৩ ডিসেম্বর তারিখের পর্যবেক্ষণ ও পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন-সংক্রান্ত পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধীন বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির ১১ জানুয়ারির সভার মতামত/সিদ্ধান্তের আলোকে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা প্রশিক্ষণার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া বাতিল করা হলো। প্রার্থীদের আবারও লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
পরে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ভুক্তভোগী কয়েকজন।
হাইকোর্টে রিট
পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিলের বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ পদে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার পর নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা পরিপত্র কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। স্বাস্থ্যসচিব, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ চার বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
চার নিয়োগপ্রত্যাশীর রিটে গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) এই রুল জারি করেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চ। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রুলের শুনানি ১৩ ফেব্রুয়ারি নির্ধারণ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৩ ফেব্রুয়ারি মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ জবাব দিক বা না দিক, ওই দিন শুনানি হবে। ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সাড়ে তিন বছর পর এর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। মৌখিক পরীক্ষার পর ফল প্রকাশ না করে অনিয়মের অভিযোগ তুলে লিখিত পরীক্ষাটি বাতিল করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিষয়টি হচ্ছে, ওই (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) পদে নিয়োগের আগে মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের ১৮ মাসের প্রশিক্ষণ করতে হয়। ইতিমধ্যে মৌখিক পরীক্ষা পর্যন্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে সরকার ১৫ কোটি টাকার মতো ব্যয় করেছে, আমরা রিটে উল্লেখ করেছি। এখন আবার লিখিত পরীক্ষা হলে আবার ব্যয় হবে। আর সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নিয়োগ পেতে আরও তিন বছর লেগে যেতে পারে নিয়োগপ্রত্যাশীদের।’
জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারি শুরু হওয়ার আগে থেকে সারা দেশে পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকার ২ হাজার ৬৭৬টি শূন্য ছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালে ১ হাজার ৮০টি শূন্য পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। এই জবটা এতই গুরুত্বপূর্ণ যে এরা (পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা) প্রসূতি মায়েদের সেবা প্রদান করে থাকে। এদের কারণে সরকার মাতৃমৃত্যু, প্রসূতিমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমাতে পেরেছে। এই জায়গাটায় সাকসেস আছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে। এই জায়গায় পাবলিক ইন্টারেস্ট আছে, প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ইন্টারেস্ট আছে। তিনি বলেন, কোনো কথাবার্তা নাই, সচিব পরিবর্তনে হঠাৎ মনে হলো রিটেন নেবে। যদি রিটেন নেয়, তাহলে ভাইভা নিল কেন? রিটেনে গন্ডগোল, তাহলে তখনই বাতিল করত। তাঁর প্রশ্ন, রিটেন পরীক্ষায় দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, তাহলে কার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে?’
একই ভুক্তভোগী পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার ছিটমহলের বাসিন্দা ফৌজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাই। এর আগে বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে আমাদের আবেদন করার কোনো সুযোগ ছিল না। নাগরিকত্ব লাভের পর সরকারি একাধিক চাকরিতে আবেদন করে তিনটিতে ভাইভায় অংশ নিই। আগের দুটিতে চাকরি হয়নি। পরিবারকল্যাণ পরিদর্শিকা (এফডব্লিউভি) পদে ছিল সরকারি চাকরির জন্য আমার শেষ ভাইভা পরীক্ষা। এরই মধ্যে বয়স ৩০ শেষ হয়েছে। তাই সরকারি চাকরিতে আবেদন করার আর কোনো সুযোগও নেই। এফডব্লিউভি পদে নিয়োগের জন্য অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না বলে একটি শর্ত দেওয়া ছিল। যে কারণে বিয়ে করিনি। যখন আবেদন করি তখন বয়স ২৭ বছর ছিল, এখন ৩০ বছরের বেশি। হঠাৎ নিয়োগ বাতিল করায় আমি হতাশ। আমি এখন কী করব জানি না। আমি পরিবারকল্যাণ অধিদপ্তরের এই নোটিশ মানি না।’
জয়পুরহাটের একজন প্রার্থী চাকরির আশায় বিয়ের আট বছরেও সন্তান নেননি। তিনি বলেন, ‘২০১৫ সালে আমার বিয়ে হয়। এরপর স্বামী-সংসার সামাল দিয়ে সরকারি চাকরির আশায় পড়ালেখা করি। ২০২০ সালের মার্চে পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা পদে সার্কুলার হলে গত চার বছর আমরা বাচ্চা নিইনি। কেননা, যদি বাচ্চা কনসিভ করি, আর যদি চাকরির পরীক্ষা হয়ে যায়, আর যদি টিকে যাই, তাহলে গর্ভধারণের কারণে চাকরি থেকে বাদ পড়ব। এ কারণে আমরা বাচ্চা নেইনি।’
পরিচিত অনেক প্রার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের অনেকে ভাইভা ভালো দিয়েছে। যে কারণে বাচ্চা নষ্ট করেছে।’ নিজের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে আট বছর হয়েছে। প্রথম দিকে সরকারি চাকরির আশায় পড়াশোনার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর এই সার্কুলারে আবেদন করার কারণে বাচ্চা নেইনি। তারপর যখন রিটেন দিয়ে টিকে যাই এবং ভাইভা দিই; এরপর তো বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবতেও পারিনি। এই কারণে যে হয়তো আমার চাকরিটা হয়ে যাবে। তারপর যখন ভাইভা দেওয়ার পর সাত মাস কেটে গেল, ওনারা রেজাল্ট দিচ্ছিলেন না। তারপর আমরা বারবার আন্দোলন করেছি। তখন ওনারা বিষয়টি দেখে ওই শর্ত বাতিল করেছে। এর আগে আমাদের সাড়ে তিন বছর জীবন থেকে চলে গেছে। ওনারা এখন অনিয়মের অভিযোগ তুলে নিয়োগ বাতিল করছে। ওনারা কি আমাদের চারটি বছর ফিরিয়ে দিতে পারবেন! আমরা চাকরির আশায় এত দিন বাচ্চা নেইনি। এখন আমাদের বাচ্চা নিতে সমস্যা হচ্ছে। তাহলে এই দায়ভার কেন আমরা চাকরিপ্রার্থীরা নেব?’
ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার ৩০ হয়ে গেছে। আমার চাকরির বয়স শেষ। আমি বাচ্চাও নিলাম না। এই নিয়োগটা বাতিল করে মেয়েদের জন্য একটি হতাশাজনক বার্তা দিচ্ছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। ওনারা নিয়োগ যদি বাতিলই করবে, তাহলে এক বছরের মধ্যে নিয়োগ সম্পন্ন করত! চার বছর কেন নিল? আমাদের এই চারটা বছর কে ফিরিয়ে দেবে?’
চাকরির আশায় গর্ভপাত করিয়েছেন জামালপুরের এক চাকরিপ্রার্থী। তিনি বলেন, ‘আমার একটি বাচ্চা আছে। বয়স ১০ বছর। ২০১৪ সালে ওর জন্ম। ২০১৯ সালে বাচ্চা নিতে চেয়েছিলাম। পরে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে কনসিভ করি। দুই মাস পর মার্চে সার্কুলার হয়। পরে অ্যাবরশন করে ফেলি। পরে অক্লান্ত পরিশ্রম করি। যে কারণে লিখিত পরীক্ষায় ভালো করি। ভাইভা পরীক্ষায়ও আমি ভালো করেছি। আমাকে ১২টি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়েছে। আমি ৮টি প্রশ্নের উত্তর ভালো করে দিয়েছি। একটির উত্তর মোটামুটি দিয়েছি। আমি আশাবাদী যে চাকরিটা আমার হবে। এখন তীরে এসে তরি ডুবিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এখন আমি কী করব? আমার ৩০ বছর শেষ হয়েছে ২০২০ সালের নভেম্বরে। এ চাকরিটা পাওয়ার আশায় বাচ্চাটা অ্যাবরশন করলাম। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হলো। তাদের (পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর) অযৌক্তিক শর্ত পালন করতে গিয়ে আমার এই সমস্যাগুলো হয়েছে। এই নিয়োগটা বাতিল করায় পরিবারে অসহ্য যন্ত্রণার মধ্যে আছি। নানাভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছি।’
জামালপুরের এই নারী বলেন, ‘দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এখন নিয়োগটা বাতিল করছে। দুর্নীতি করলে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা করেছেন। তাঁদের শাস্তি হোক। আমরা কেন শাস্তি পাব? আমরা চাই, নিয়োগ বাতিলের যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে, তা প্রত্যাহার করে আমাদের ফল প্রকাশ করা হোক।’

জাতীয় নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২’ চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ
১ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকারীকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা জুলাই যোদ্ধাদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নস্যাৎ করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এই অভ্যুত্থানের অর্জনকে ব্যর্থ করার সব অপচেষ্টা রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকার...
২ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দীক, বোন মাসুমা এবং ইনকিলাব মঞ্চের তিন নেতা আব্দুল্লাহ...
৪ ঘণ্টা আগেবিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

জাতীয় নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২’ চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। এটিকে আরও জোরদার ও বেগবান করার জন্য এবং ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে কোর কমিটি ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২’ অবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে এত দিন শুধু সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারীদের অনুকূলে ইস্যু করা হতো। তিনি বলেন, এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চাইবেন, তাঁদেরও লাইসেন্স ইস্যু করা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরলে তাঁর নিরাপত্তায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে—এ-সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সরকার তারেক রহমানের নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এবং তাঁর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, আইজিপি বাহারুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জাতীয় নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২’ চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
আজ শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বাংলাদেশ সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এ কথা জানান।
উপদেষ্টা বলেন, লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান চলমান রয়েছে। এটিকে আরও জোরদার ও বেগবান করার জন্য এবং ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে কোর কমিটি ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২’ অবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যুর ক্ষেত্রে এত দিন শুধু সামরিক ও বেসামরিক কর্মচারীদের অনুকূলে ইস্যু করা হতো। তিনি বলেন, এখন জাতীয় নির্বাচনের প্রার্থীদের মধ্যে যাঁরা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স চাইবেন, তাঁদেরও লাইসেন্স ইস্যু করা হবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরলে তাঁর নিরাপত্তায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে—এ-সংক্রান্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, সরকার তারেক রহমানের নিরাপত্তায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এবং তাঁর সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।
ব্রিফিংয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বখস চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনি, আইজিপি বাহারুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদ
২৬ জানুয়ারি ২০২৪
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকারীকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা জুলাই যোদ্ধাদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নস্যাৎ করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এই অভ্যুত্থানের অর্জনকে ব্যর্থ করার সব অপচেষ্টা রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকার...
২ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দীক, বোন মাসুমা এবং ইনকিলাব মঞ্চের তিন নেতা আব্দুল্লাহ...
৪ ঘণ্টা আগেবিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকারী আততায়ীকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা জুলাই যোদ্ধাদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
আজ শনিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্তর্বর্তী সরকার গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। এই বিষয়টিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। অবিলম্বে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব। এই হামলায় জড়িত কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আমরা জনগণের সার্বিক সহযোগিতা পাব বলে বিশ্বাস করি। হাদির ওপর আক্রমণের ঘটনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস বলে আমরা মনে করি। নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত বা বানচাল করার সকল চেষ্টা সরকার দমন করবে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার চলমান। ডেভিল হান্ট ফেস-২ অবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হাদির ওপর হামলাকারী ফয়সালকে ধরিয়ে দিতে সরকার ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকারী আততায়ীকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা জুলাই যোদ্ধাদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
আজ শনিবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ অন্তর্বর্তী সরকার গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছে। এই বিষয়টিকে সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। অবিলম্বে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আশা করছি, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারব। এই হামলায় জড়িত কাউকে কোনো প্রকার ছাড় দেওয়া হবে না। এ ব্যাপারে আমরা জনগণের সার্বিক সহযোগিতা পাব বলে বিশ্বাস করি। হাদির ওপর আক্রমণের ঘটনা আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার অপপ্রয়াস বলে আমরা মনে করি। নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত বা বানচাল করার সকল চেষ্টা সরকার দমন করবে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বর্তমান সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। সরকারের পক্ষ থেকে তাঁদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। লুট হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার চলমান। ডেভিল হান্ট ফেস-২ অবিলম্বে চালু করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হাদির ওপর হামলাকারী ফয়সালকে ধরিয়ে দিতে সরকার ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে বলে জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদ
২৬ জানুয়ারি ২০২৪
জাতীয় নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২’ চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ
১ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নস্যাৎ করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এই অভ্যুত্থানের অর্জনকে ব্যর্থ করার সব অপচেষ্টা রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকার...
২ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দীক, বোন মাসুমা এবং ইনকিলাব মঞ্চের তিন নেতা আব্দুল্লাহ...
৪ ঘণ্টা আগেযমুনায় বৈঠক
আজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নস্যাৎ করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এই অভ্যুত্থানের অর্জনকে ব্যর্থ করার সব অপচেষ্টা রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকার জোরালো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে মতৈক্য প্রকাশ করেন।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্ব-পরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনটি হতে না দেওয়া। এই আক্রমণটি খুবই সিম্বলিক (প্রতীকী)। তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চায়। এগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।’
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পরস্পরের দোষারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে। কোনো ধরনের অপশক্তিকে আমরা বরদাশত করব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যতই রাজনৈতিক বক্তব্যের বিরোধিতা থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে।’
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার পরামর্শ দেন সালাহউদ্দিন।
জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নানা বক্তব্য একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়িয়েছে, যার ফলে আমাদের বিরোধীরা সুযোগ পেয়েছে। আমাদের পূর্বের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে আমরা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি। জাতিকে বিভক্ত করে এমন কথা আমরা কেন বলব? সব দলকে তাদের কমিটমেন্ট ঠিক করতে হবে।’
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই কিছু লোক এই অভ্যুত্থানকে খাটো করার জন্য নানা অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘সুসংগঠিতভাবে জুলাইয়ের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন চলছে। মিডিয়া ও প্রশাসনের নানা স্তরে এই কাজ হচ্ছে। নির্বাচনের পর যারা ক্ষমতায় আসবে, তারাও এর ভুক্তভোগী হবে। কেউই একা সরকার চালাতে পারবে না।’
নাহিদ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে যাতে মনে হয় যারা অভ্যুত্থান করেছে তারা অপরাধ করেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নরমালাইজ করতে নানা চেষ্টা চলছে। টিভি টকশোতে তারা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মিলিত হচ্ছে এবং আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দিচ্ছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের বিশেষ কোনো নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। আমরা এটা নেব না। জুলাইকে সবাই মিলে ওউন করতে হবে। জুলাইকে কে কী বলবে—এই টানাপোড়েনে আমরা জুলাইকে শেষ করে দিচ্ছি। ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের অনৈক্যকে আমাদের পরাজয় হিসেবে দেখছে। তারা ভারতে বসে যা ইচ্ছা তা-ই করছে, আর আমরা কিছুই করতে পারছি না।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী বেশে, সাংস্কৃতিক কর্মী বেশে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকারীদের থামাতে হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এ সময় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারলে কোনো নিরাপত্তাই আমাদের কাজে আসবে না। রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো আওয়ামী লীগকে নানা রকম সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের চিন্তা করতে হবে—ভবিষ্যতের জন্য আমরা কী করতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘শুধু সরকার নয়, সবাইকে শক্ত থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে যেন দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে, কিন্তু কাউকে শত্রু ভাবা বা আক্রমণ করার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে।’
‘নির্বাচনের সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে মাথায় রাখতে হবে—এটি যেন একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে থাকে, ’ দলগুলোর প্রতি এই পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের শুধু দলীয় স্বার্থ নয়, জাতীয় স্বার্থের বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে।’

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নস্যাৎ করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এই অভ্যুত্থানের অর্জনকে ব্যর্থ করার সব অপচেষ্টা রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকার জোরালো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর শীর্ষ নেতারা এ বিষয়ে মতৈক্য প্রকাশ করেন।
বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ও হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ, ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আবদুল্লাহ আল জাবের এবং আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল অংশগ্রহণ করেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ওসমান হাদির ওপর হামলা পূর্ব-পরিকল্পিত ও গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ; এর পেছনে বিরাট শক্তি কাজ করছে।
তিনি বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য হচ্ছে নির্বাচনটি হতে না দেওয়া। এই আক্রমণটি খুবই সিম্বলিক (প্রতীকী)। তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে চায়, নির্বাচনের সব আয়োজন ভেস্তে দিতে চায়। এগুলোকে ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গেছে, তাতে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করেছে। তারা প্রশিক্ষিত শুটার নিয়ে মাঠে নেমেছে।’
বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এই পরিস্থিতিতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কোনো অবস্থাতেই পরস্পরের দোষারোপ থেকে বিরত থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে আওয়াজ তুলতে হবে। কোনো ধরনের অপশক্তিকে আমরা বরদাশত করব না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যতই রাজনৈতিক বক্তব্যের বিরোধিতা থাকুক না কেন, জাতির স্বার্থে এবং জুলাইয়ের স্বার্থে আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতেই হবে।’
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার এবং ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করার পরামর্শ দেন সালাহউদ্দিন।
জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের নানা বক্তব্য একে অন্যকে দোষারোপ করার প্রবণতা বাড়িয়েছে, যার ফলে আমাদের বিরোধীরা সুযোগ পেয়েছে। আমাদের পূর্বের ন্যায় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে আমরা একে অন্যকে প্রতিপক্ষ বানিয়ে ফেলেছি। জাতিকে বিভক্ত করে এমন কথা আমরা কেন বলব? সব দলকে তাদের কমিটমেন্ট ঠিক করতে হবে।’
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই কিছু লোক এই অভ্যুত্থানকে খাটো করার জন্য নানা অপতৎপরতা চালিয়ে আসছে।’
তিনি বলেন, ‘সুসংগঠিতভাবে জুলাইয়ের বিরুদ্ধে ক্যাম্পেইন চলছে। মিডিয়া ও প্রশাসনের নানা স্তরে এই কাজ হচ্ছে। নির্বাচনের পর যারা ক্ষমতায় আসবে, তারাও এর ভুক্তভোগী হবে। কেউই একা সরকার চালাতে পারবে না।’
নাহিদ বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এমন ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে যাতে মনে হয় যারা অভ্যুত্থান করেছে তারা অপরাধ করেছে। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টিকে নরমালাইজ করতে নানা চেষ্টা চলছে। টিভি টকশোতে তারা নিয়মিত অংশ নিচ্ছে, প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গায় বৈঠক করছে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মিলিত হচ্ছে এবং আদালত প্রাঙ্গণে স্লোগান দিচ্ছে।’
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের বিশেষ কোনো নিরাপত্তার প্রয়োজন নেই। আমরা এটা নেব না। জুলাইকে সবাই মিলে ওউন করতে হবে। জুলাইকে কে কী বলবে—এই টানাপোড়েনে আমরা জুলাইকে শেষ করে দিচ্ছি। ষড়যন্ত্রকারীরা আমাদের অনৈক্যকে আমাদের পরাজয় হিসেবে দেখছে। তারা ভারতে বসে যা ইচ্ছা তা-ই করছে, আর আমরা কিছুই করতে পারছি না।’
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘বুদ্ধিজীবী বেশে, সাংস্কৃতিক কর্মী বেশে আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নকারীদের থামাতে হবে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
এ সময় এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা নিজেরা ঐক্যবদ্ধ থাকতে না পারলে কোনো নিরাপত্তাই আমাদের কাজে আসবে না। রাজনৈতিক স্বার্থে দলগুলো আওয়ামী লীগকে নানা রকম সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের চিন্তা করতে হবে—ভবিষ্যতের জন্য আমরা কী করতে পারি।’ তিনি বলেন, ‘শুধু সরকার নয়, সবাইকে শক্ত থাকতে হবে। নিজেদের মধ্যে যেন দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক বক্তব্য থাকবে, কিন্তু কাউকে শত্রু ভাবা বা আক্রমণ করার সংস্কৃতি থেকে সরে আসতে হবে।’
‘নির্বাচনের সময় উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, তবে মাথায় রাখতে হবে—এটি যেন একটি নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে থাকে, ’ দলগুলোর প্রতি এই পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টা।
এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি শুরু হওয়ার পর থেকেই আওয়ামী লীগ শক্তিশালী হয়েছে।’
রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনাদের শুধু দলীয় স্বার্থ নয়, জাতীয় স্বার্থের বিষয়েও সজাগ থাকতে হবে।’

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদ
২৬ জানুয়ারি ২০২৪
জাতীয় নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২’ চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ
১ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকারীকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা জুলাই যোদ্ধাদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। আজ শনিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দীক, বোন মাসুমা এবং ইনকিলাব মঞ্চের তিন নেতা আব্দুল্লাহ...
৪ ঘণ্টা আগেনিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শনিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দীক, বোন মাসুমা এবং ইনকিলাব মঞ্চের তিন নেতা আব্দুল্লাহ আল জাবের, ফাতিমা তাসনিম জুমা ও মো. বোরহান উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ওসমান হাদির সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সারা দেশ তাঁর জন্য দোয়া করছে। তাঁর সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিতে সবাই চেষ্টা করছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় যদি দেশের বাইরে পাঠাতে হয়, যেখানে পাঠানোর প্রয়োজন হবে, সরকার সেখানেই তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।’

ওসমান হাদির বোন বলেন, ‘সে ছোটবেলা থেকেই দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবাসত। ছোটবেলা থেকেই সে বিপ্লবী। বিদ্রোহী কবিতা তার প্রিয়, সে বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসত। তার একটি ১০ মাসের সন্তান আছে। হাদি আমাদের মেরুদণ্ড।’
তিনি বলেন, ‘ওর অনেক কাজ, ওকে বেঁচে থাকতে হবে। আপনারা বিপ্লবী সরকার, যে করেই হোক জুলাই বিপ্লবীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।’

অপরাধীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা জাবের বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অনেকে বাসায় ফিরে গিয়েছিল, ওসমান হাদি বাসায় ফিরে যায়নি। সে জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করত এবং জুলাই বিপ্লবের জন্য দিনরাত কাজ করত। যে ছেলেটা গুলি করেছে, শুনতে পাচ্ছি সে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। কোন প্রক্রিয়ায় সে জামিন পেয়েছে, সেটা তদন্ত করুন।’
এ সময় জুলাই যোদ্ধাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ফাতেমা তাসনিম জুমা।
এমন নৃশংস হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের পুরো চক্রকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এ ঘটনার আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ শনিবার সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ওসমান হাদির ভাই আবু বকর সিদ্দীক, বোন মাসুমা এবং ইনকিলাব মঞ্চের তিন নেতা আব্দুল্লাহ আল জাবের, ফাতিমা তাসনিম জুমা ও মো. বোরহান উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
ওসমান হাদির সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সারা দেশ তাঁর জন্য দোয়া করছে। তাঁর সর্বোত্তম চিকিৎসা নিশ্চিতে সবাই চেষ্টা করছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় যদি দেশের বাইরে পাঠাতে হয়, যেখানে পাঠানোর প্রয়োজন হবে, সরকার সেখানেই তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে।’

ওসমান হাদির বোন বলেন, ‘সে ছোটবেলা থেকেই দেশকে মনেপ্রাণে ভালোবাসত। ছোটবেলা থেকেই সে বিপ্লবী। বিদ্রোহী কবিতা তার প্রিয়, সে বিদ্রোহী কবিতা আবৃত্তি করতে ভালোবাসত। তার একটি ১০ মাসের সন্তান আছে। হাদি আমাদের মেরুদণ্ড।’
তিনি বলেন, ‘ওর অনেক কাজ, ওকে বেঁচে থাকতে হবে। আপনারা বিপ্লবী সরকার, যে করেই হোক জুলাই বিপ্লবীদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে এ দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব হুমকিতে পড়বে।’

অপরাধীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের নেতা জাবের বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অনেকে বাসায় ফিরে গিয়েছিল, ওসমান হাদি বাসায় ফিরে যায়নি। সে জুলাই বিপ্লবকে ধারণ করত এবং জুলাই বিপ্লবের জন্য দিনরাত কাজ করত। যে ছেলেটা গুলি করেছে, শুনতে পাচ্ছি সে একটি মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছিল। কোন প্রক্রিয়ায় সে জামিন পেয়েছে, সেটা তদন্ত করুন।’
এ সময় জুলাই যোদ্ধাদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান ফাতেমা তাসনিম জুমা।
এমন নৃশংস হামলার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের পুরো চক্রকে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা হবে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। এ ঘটনার আদ্যোপান্ত বিশ্লেষণ করে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের জন্য ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
এ সময় আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।

আবেদনের যোগ্যতায় ‘অন্তঃসত্ত্বা হওয়া যাবে না’ উল্লেখ করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর চার বছর আগে একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়। তিন বছর পর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের কথা বলে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করা হয়েছে। অবশ্য চাকরিপ্রার্থীদ
২৬ জানুয়ারি ২০২৪
জাতীয় নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতকরণ, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ফ্যাসিস্ট টেররিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে অবিলম্বে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেইজ-২’ চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। আজ দুপুরে বাংলাদেশ সচিবালয়ে এক সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এ
১ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির ওপর হামলাকারীকে ধরিয়ে দিতে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। একই সঙ্গে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা জুলাই যোদ্ধাদের বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগে
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনাকে ‘জুলাই অভ্যুত্থান’ নস্যাৎ করার সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে উল্লেখ করে, রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা এই অভ্যুত্থানের অর্জনকে ব্যর্থ করার সব অপচেষ্টা রুখে দিতে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে থাকার...
২ ঘণ্টা আগে