জাহীদ রেজা নূর
তোয়াব খান সাংবাদিকতা জগতে প্রবেশ করেন গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে। সেটা ছিল বাঙালির পরিচয় সন্ধানের কাল। রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি—সব দিকেই নতুনের আবাহন। নতুন করে সে সময় জীবনকে দেখছিল এই ভূখণ্ডের মানুষ এবং এ কথা অনস্বীকার্য, সে সময়টিতে সংহত হচ্ছিল এই এলাকার সাংবাদিকতা।
স্বভাবতই সে সময়ের প্রতিনিধিরা যদি তাঁদের সময় ও কাজ নিয়ে কিছু লিখে থাকেন, তবে তা পাঠকের জন্য হয়ে ওঠে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি যখন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হন, তখন তাঁদের বলা প্রতিটি কথাই সেই প্রতিষ্ঠানের অবয়ব গড়ে দিতে থাকে। হাতে যখন তোয়াব খানের ‘আজ এবং ফিরে দেখা কাল’ বইটি, তখন একটু গভীরভাবেই এর দিকে তাকাতে হয়।
বইটি পাঁচমিশালি। রয়েছে তরুণ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে পরামর্শমূলক প্রবন্ধ, বৈদ্যুতিন প্রচারমাধ্যম সম্পর্কে নিজ চিন্তার প্রকাশ, গণতন্ত্র নিয়ে ভাবনা। রয়েছে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত তাঁর কথিকাগুলো, যা সংখ্যায় সাত। বইটি পড়লে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গগুলোও চোখে পড়বে অনায়াসে।
‘আজ এবং ফিরে দেখা কাল’ প্রবন্ধটি দিয়েই বইটির শুরু। পঞ্চাশ দশক থেকে কীভাবে সাংবাদিকতা এগিয়েছে, সে সময়ে কীভাবে জংলি আইন এসে গ্রাস করে নিচ্ছিল সংবাদপত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দাবিতে কীভাবে রাজপথে নেমে এসেছিলেন সাংবাদিকেরা, তার একটি নিখুঁত বর্ণনা আছে এই প্রবন্ধে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ষাটের দশকে ওয়েব অফসেট মেশিন এসে কীভাবে সংবাদপত্রের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিল, কীভাবে তাতে আলোড়িত হলো সংবাদজগৎ, তা জেনে ভালো লাগবে পাঠকের। প্রথম এই মেশিন এনেছিল ইংরেজি দৈনিক অবজারভার। এরপর দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক পাকিস্তানসহ আরও কিছু নতুন পত্রিকা এই প্রযুক্তি গ্রহণ করেছিল। তবে এর আগে পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে পাকিস্তান অবজারভারই প্রথম রোটারি মেশিন এনেছিল। তারা সগর্বে একটি ঘোষণাও ছেপেছিল, ‘এখন থেকে অবজারভার ইংল্যান্ড থেকে আনা রোটারি মেশিনে রাশিয়ান নিউজপ্রিন্টে ভারত থেকে আনা কালিতে ছাপা হয়ে পাঠকের কাছে পৌঁছবে।’ অতীতের এ দুটি ঘটনা বুঝিয়ে দেয়, নতুন নতুন প্রযুক্তি কীভাবে আলোড়িত করছিল এই শিল্পকে। এই প্রবন্ধেই তোয়াব খান জানাচ্ছেন স্বাধীনতা-পরবর্তী সাংবাদিকতার কথা। এক অশুভ ঘটনার কথা লিখছেন এভাবে, ‘এ অবস্থায় সংবাদপত্রজগতে প্রায় সবার অলক্ষ্যেই একটি সমূহ সর্বনাশ ঘটতে থাকে—সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান, যা সম্পাদকের মাধ্যমেই প্রতিভাত, তার পতন। একে একে ঘটে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসসাধন। সরকারি ও বেসরকারি দুই তরফেই এই অধঃপতনটি লক্ষ করা যায়।’ এখানেই তিনি বলেন,…‘সংবাদপত্রে বেতনবোর্ড রোয়েদাদে সংবাদপত্রের সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহীর পদ এক করে সজ্ঞানে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্বের অপমৃত্যুতে ঘৃতাহুতি দেওয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি। অন্যদিকে প্রধান নির্বাহী ও সম্পাদকের পদ একীভূত হওয়াতে বেসরকারি খাতের নতুন নতুন মালিকরাও রাতারাতি সম্পাদক বনে যান।’
তোয়াব খানের এ কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে পেশাদার সাংবাদিকদের হটিয়ে দিয়ে মালিক যখন নিজেই সম্পাদক হয়ে বসেন, তখন এ প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে ভেঙে যায়, তার ভূরি ভূরি নজির আমাদেরই সংবাদপত্রের ইতিহাসে পাওয়া যাবে।
পাঁচটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে বইটি। এর মধ্যে তোয়াব খানের ‘পিন্ডির প্রলাপ’ ইয়াহিয়া খানদের কীভাবে সমালোচনার মুখে ফেলেছিল, তার স্বাদ দেবে। ‘সত্য মিথ্যা সত্যবাক’ অধ্যায়ে ১৯৭২ সালে লেখা চারটি ছোট প্রবন্ধে বৈচিত্র্য ধরা পড়বে এবং পাঠক আবিষ্কার করবেন, কত সহজ ও সাবলীল ভাষায় কথাগুলো বলছেন তোয়াব খান।
এবং সেই আবিষ্কারের বিস্ময় টিকে থাকবে পরবর্তী প্রতিটি অধ্যায়েই। বৈদ্যুতিন মাধ্যমের কথা আছে যে অধ্যায়ে, সেখানে তথ্যের মুক্তি বিষয়ে রয়েছে চমকপ্রদ আলোচনা ।
আর সাক্ষাৎকার ও বক্তৃতাপর্বে তো সরাসরি সহজ ভাষায় কত বিষয়েই না আলোচনা করেছেন তিনি। বইটি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক নয়, কিন্তু সাংবাদিকতার ছাত্রদের জন্য অবশ্যপাঠ্য এবং চিন্তক পাঠককেও বইটি নতুন ভাবনার দিশা দেবে।
তোয়াব খান সাংবাদিকতা জগতে প্রবেশ করেন গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে। সেটা ছিল বাঙালির পরিচয় সন্ধানের কাল। রাজনীতি, সংস্কৃতি, অর্থনীতি—সব দিকেই নতুনের আবাহন। নতুন করে সে সময় জীবনকে দেখছিল এই ভূখণ্ডের মানুষ এবং এ কথা অনস্বীকার্য, সে সময়টিতে সংহত হচ্ছিল এই এলাকার সাংবাদিকতা।
স্বভাবতই সে সময়ের প্রতিনিধিরা যদি তাঁদের সময় ও কাজ নিয়ে কিছু লিখে থাকেন, তবে তা পাঠকের জন্য হয়ে ওঠে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ব্যক্তি যখন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হন, তখন তাঁদের বলা প্রতিটি কথাই সেই প্রতিষ্ঠানের অবয়ব গড়ে দিতে থাকে। হাতে যখন তোয়াব খানের ‘আজ এবং ফিরে দেখা কাল’ বইটি, তখন একটু গভীরভাবেই এর দিকে তাকাতে হয়।
বইটি পাঁচমিশালি। রয়েছে তরুণ সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে পরামর্শমূলক প্রবন্ধ, বৈদ্যুতিন প্রচারমাধ্যম সম্পর্কে নিজ চিন্তার প্রকাশ, গণতন্ত্র নিয়ে ভাবনা। রয়েছে ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে প্রচারিত তাঁর কথিকাগুলো, যা সংখ্যায় সাত। বইটি পড়লে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, সাংবাদিকদের নিরাপত্তার প্রসঙ্গগুলোও চোখে পড়বে অনায়াসে।
‘আজ এবং ফিরে দেখা কাল’ প্রবন্ধটি দিয়েই বইটির শুরু। পঞ্চাশ দশক থেকে কীভাবে সাংবাদিকতা এগিয়েছে, সে সময়ে কীভাবে জংলি আইন এসে গ্রাস করে নিচ্ছিল সংবাদপত্র, সংবাদপত্রের স্বাধীনতার দাবিতে কীভাবে রাজপথে নেমে এসেছিলেন সাংবাদিকেরা, তার একটি নিখুঁত বর্ণনা আছে এই প্রবন্ধে। প্রযুক্তির ক্ষেত্রে ষাটের দশকে ওয়েব অফসেট মেশিন এসে কীভাবে সংবাদপত্রের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিল, কীভাবে তাতে আলোড়িত হলো সংবাদজগৎ, তা জেনে ভালো লাগবে পাঠকের। প্রথম এই মেশিন এনেছিল ইংরেজি দৈনিক অবজারভার। এরপর দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক পাকিস্তানসহ আরও কিছু নতুন পত্রিকা এই প্রযুক্তি গ্রহণ করেছিল। তবে এর আগে পঞ্চাশের দশকের শুরুর দিকে পাকিস্তান অবজারভারই প্রথম রোটারি মেশিন এনেছিল। তারা সগর্বে একটি ঘোষণাও ছেপেছিল, ‘এখন থেকে অবজারভার ইংল্যান্ড থেকে আনা রোটারি মেশিনে রাশিয়ান নিউজপ্রিন্টে ভারত থেকে আনা কালিতে ছাপা হয়ে পাঠকের কাছে পৌঁছবে।’ অতীতের এ দুটি ঘটনা বুঝিয়ে দেয়, নতুন নতুন প্রযুক্তি কীভাবে আলোড়িত করছিল এই শিল্পকে। এই প্রবন্ধেই তোয়াব খান জানাচ্ছেন স্বাধীনতা-পরবর্তী সাংবাদিকতার কথা। এক অশুভ ঘটনার কথা লিখছেন এভাবে, ‘এ অবস্থায় সংবাদপত্রজগতে প্রায় সবার অলক্ষ্যেই একটি সমূহ সর্বনাশ ঘটতে থাকে—সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান, যা সম্পাদকের মাধ্যমেই প্রতিভাত, তার পতন। একে একে ঘটে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসসাধন। সরকারি ও বেসরকারি দুই তরফেই এই অধঃপতনটি লক্ষ করা যায়।’ এখানেই তিনি বলেন,…‘সংবাদপত্রে বেতনবোর্ড রোয়েদাদে সংবাদপত্রের সম্পাদক ও প্রধান নির্বাহীর পদ এক করে সজ্ঞানে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিত্বের অপমৃত্যুতে ঘৃতাহুতি দেওয়া হয়েছে বলে আমি মনে করি। অন্যদিকে প্রধান নির্বাহী ও সম্পাদকের পদ একীভূত হওয়াতে বেসরকারি খাতের নতুন নতুন মালিকরাও রাতারাতি সম্পাদক বনে যান।’
তোয়াব খানের এ কথাগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে পেশাদার সাংবাদিকদের হটিয়ে দিয়ে মালিক যখন নিজেই সম্পাদক হয়ে বসেন, তখন এ প্রতিষ্ঠানটি কীভাবে ভেঙে যায়, তার ভূরি ভূরি নজির আমাদেরই সংবাদপত্রের ইতিহাসে পাওয়া যাবে।
পাঁচটি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করা হয়েছে বইটি। এর মধ্যে তোয়াব খানের ‘পিন্ডির প্রলাপ’ ইয়াহিয়া খানদের কীভাবে সমালোচনার মুখে ফেলেছিল, তার স্বাদ দেবে। ‘সত্য মিথ্যা সত্যবাক’ অধ্যায়ে ১৯৭২ সালে লেখা চারটি ছোট প্রবন্ধে বৈচিত্র্য ধরা পড়বে এবং পাঠক আবিষ্কার করবেন, কত সহজ ও সাবলীল ভাষায় কথাগুলো বলছেন তোয়াব খান।
এবং সেই আবিষ্কারের বিস্ময় টিকে থাকবে পরবর্তী প্রতিটি অধ্যায়েই। বৈদ্যুতিন মাধ্যমের কথা আছে যে অধ্যায়ে, সেখানে তথ্যের মুক্তি বিষয়ে রয়েছে চমকপ্রদ আলোচনা ।
আর সাক্ষাৎকার ও বক্তৃতাপর্বে তো সরাসরি সহজ ভাষায় কত বিষয়েই না আলোচনা করেছেন তিনি। বইটি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তক নয়, কিন্তু সাংবাদিকতার ছাত্রদের জন্য অবশ্যপাঠ্য এবং চিন্তক পাঠককেও বইটি নতুন ভাবনার দিশা দেবে।
দ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
২১ দিন আগে‘প্রগাঢ় কাব্যিক গদ্যে ঐতিহাসিক ক্ষত তুলে ধরা এবং মানবজীবনের নাজুক পরিস্থিতির উন্মোচনের জন্য’ তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে নোবেল কমিটি।
২১ দিন আগেতানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর জন্মদিন উপলক্ষে ‘দশম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা’–এর আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের প্রথম দশ জনকে সনদ, বই ও ক্রেস্ট দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে বই, বিশেষ ক্রেস্ট ও সনদ এবং প্রথম স্থান অধিকারীকে ‘ত্বকী পদক ২০২৪’ দেওয়া হবে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও পরে সরকার পতনের আন্দোলনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁদের কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান তাঁরা গণহত্যার সমর্থক। এ কারণে একটি গণ আদালত গঠন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এই নেতাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানিয়েছে উদীচী।
১৭ আগস্ট ২০২৪