আনজীর লিটন
তাঁর সঙ্গে প্রথম কবে কোথায় দেখা হয়েছে, স্মৃতি হাতড়ে খোঁজার চেষ্টা করছি। কোথায় দেখা হলো? ময়মনসিংহে? ঢাকায়? বিটিভিতে? বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে? খেলাঘরে? কচি-কাঁচার আসরে? নাকি কিশোর বাংলা অফিসে? মনে পড়ছে না।
তবে মনে পড়ছে তাঁর প্রবাল দ্বীপের আতঙ্কের কথা। কালো রঙের প্রচ্ছদে বোর্ড বাঁধাই এ বইটি আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন ছড়াকার সরকার জসীম। তিরাশি-চুরাশি সাল হবে। অথবা আরও পরের কোনো বছর। ঘটনাটি লিখে রাখিনি বলে স্মৃতিগুলো অস্পষ্ট হয়ে আছে। তবু মনে পড়ছে, আমি তখন নবীন লেখকদের একজন। কৌতূহলী মন নিয়ে ঘুরে বেড়াই। যা পাই, তা-ই পড়ি। পড়ার জন্য বই খুঁজি। ময়মনসিংহ শহরের পাবলিক লাইব্রেরি, মুসলিম স্কুল পাঠাগার আর স্টেশন রোডের গসপেল হল—এই ছিল সেই সময়ের ময়মনসিংহ শহরের পাঠকেন্দ্র।
মনে পড়ছে জসীম ভাইয়ের বাউন্ডারি রোডের বাসায় কোনো এক বিকেলে আলী ইমামের বই পড়তে দিলেন আমাকে। পড়লাম। প্রবাল দ্বীপ চিনলাম। সাগর চিনলাম।
সাগরের ঢেউ চিনলাম। সেই উত্তাল ঢেউয়ের ছবি বুকে ধরে আলী ইমামকে খুঁজে পেলাম বইয়ের পাতায়, পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায়, বিটিভির অনুষ্ঠান শেষে চমৎকার হাতে লেখা টাইপোগ্রাফিতে ভেসে উঠতে দেখলাম প্রযোজনা আলী ইমাম। তত দিনে আরও পড়লাম ‘অপারেশন কাঁকনপুর’, ‘তিতিরমুখী চৈতা’। ‘আলী ইমাম’-এ নামটি আস্তে আস্তে আমার মনকে রঙিন করে তুলতে লাগল।
স্মৃতি থেকে ভেসে এল একটা দৃশ্য। তিনি মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে কোনো এক অনুষ্ঠানে আমার পঠিত ছড়া নিয়ে চমৎকার উৎসাহব্যঞ্জক কথা বললেন।
নবীন-লেখকদের প্রতি দরদমাখা প্রশংসা যেন প্রশংসা ছিল না, ছিল হাত বাড়িয়ে হাতটি ধরা। পরে দেখেছি এটিই তাঁর বৈশিষ্ট্য। নবীনদের কাছে টেনে নিতে জানতেন।
কাউকে নিরুৎসাহিত করতেন না। একটা দুর্বল লেখাকে সবল করে তোলার জন্য এমন সব উদ্দীপনামূলক বাক্য ব্যবহার করে উৎসাহ জোগাতেন—যারা তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছে, তারা জানে। আর তাই তো আধুনিক শিশুসাহিত্যে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম আলী ইমাম।
আধুনিক শিশুসাহিত্যে সারথি আলী ইমাম। সুবিশাল অধ্যায় রচনা করেছেন শব্দের জাদু দিয়ে। বাক্যের বুননে চিনিয়েছেন বাংলার অপরূপ ভাষার সৌন্দর্য। বৈচিত্র্যময় বিষয় তাঁর সুলিখিত রচনাগুলো হয়ে উঠল শিশুসাহিত্যের সম্পদ। এই সম্পদ আঁকড়ে ধরে আমরা আলী ইমামকে নিয়ে খুলছি শোক বইয়ের পাতা।
তিনি নেই। চিরতরে বিদায় নিলেন ২১ নভেম্বর, ২০২২। সেদিনের সন্ধ্যা স্তব্ধ করে দিল আমাদের চারপাশ। কী বিষণ্ন এক মুহূর্ত আমাদের জাপটে ধরল খবরটা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে।
তিনি আর হাঁটবেন না। তিনি আর লিখবেন না। তিনি আর কথা বলবেন না, স্বাক্ষর দেবেন না। তাহলে তিনি কোথায় থাকবেন? থাকবেন পাঠকের অন্তরে, বইয়ের পাতায় এবং শিশুসাহিত্যের শাখা-প্রশাখায়।
শিশুসাহিত্যের প্রতি দরদমাখা স্পর্শ ছিল তাঁর। যেমন তাঁর ব্যক্তিত্ব, তেমনি তাঁর লেখার শক্তি। দুইয়ে মিলে আলী ইমামকে এমন এক লেখকসত্তা দিয়েছে, যা তাঁকে বানিয়েছে শিশুসাহিত্যের রত্নখনি।
গল্প, কবিতা, উপন্যাস, গবেষণা, প্রকৃতি, পশুপাখি, চলচ্চিত্র—প্রতিটি বিষয় তিনি শিশুসাহিত্যের পাতায় ভরিয়ে দিয়েছেন। সমৃদ্ধ করেছেন শিশুসাহিত্যের ভান্ডার; যা কখনোই ফুরানোর নয়। দৃঢ়চিত্তে বলতে দ্বিধা নেই, বাঙালির যে ঘরে শিশুকিশোর রয়েছে, সেই ঘরে আছেন আলী ইমাম। বুকশেলফের কোনো এক তাকে শোভা পায় তাঁরই গ্রন্থ।
আলী ইমাম এমনই একজন অনিবার্য শিশুসাহিত্যিক হয়ে উঠেছিলেন, যাঁকে পাঠ করতেই হবে। তাঁর রচনার জাদুকরি শব্দ বুননের স্পর্শে বাংলার প্রকৃতি হেসে ওঠে। বৈশাখ, নবান্ন, হেমন্ত, শিশির, ঘাসবিচালি, পাখ-পাখালি, আকাশ-চন্দ্র-সূর্য, তারা-নক্ষত্র-গ্রহ—কোনো কিছুই এড়ায়নি আলী ইমামের চোখ থেকে।
বাদুড়ের নীল নখ খুঁজে বেড়ানো কিশোরের কৌতূহলী মন তিনি যেমন ধরতে পেরেছিলেন, তেমনি ধরতে পেরেছেন কল্পবিজ্ঞানের যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্যমালা কিংবা রহস্যভরা গোয়েন্দাগিরির শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাডভেঞ্চার।
আলী ইমামের নিজস্ব একটা পাঠক মহল আছে। এই মহলে বাস করেন তরুণ থেকে বৃদ্ধরা। এই মহলে বসে স্বপ্নের রঙিন ঘুড়ি ওড়ায় কিশোর-কিশোরীর দল।
লোকজ ঐতিহ্য লালন করার মধ্য দিয়ে এ দেশের শিশুকিশোর পাঠকদের জন্য আলী ইমাম নিষ্ঠার সঙ্গে রচনা করেছেন দেশ-মহাদেশের গল্প এবং ছন্দময় বিষয়-আশয়।
বাঙালির আবেগঘন গর্বিত উচ্চারণে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি চেতনা, বারবার নতুন স্পন্দনে জেগে উঠেছে আলী ইমামের কলমে। বিদেশি শিশুসাহিত্যও পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তাঁর লেখনীর মধ্য দিয়ে।
তিনি যখন হ্যান্ডস অ্যান্ডারসনের কথা বলেন, মনে হয় অ্যান্ডারসনের বাড়িতে বসে আছি। তিনি যখন সুকুমার রায়কে চিনিয়ে দেন, মনে হয় ওই তো, সুকুমার রায় দাঁড়িয়ে।
ঈশ্বরচন্দ্র, অবন ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, জসীমউদ্দীন তাঁদের জাদুকরি বর্ণনায় শিশুসাহিত্যের পাতায় পাতায় তুলে ধরতেন তিনি; শুধু তা-ই নয়, শিশুসাহিত্যবিষয়ক পত্র-পত্রিকা নিয়ে তাঁর ছিল বিস্তর গবেষণা। জাতীয় জাদুঘরের জন্য নির্মাণ করেছেন প্রামাণ্যচিত্র। নিশ্চয়ই জাদুঘর কর্তৃপক্ষ মর্যাদার সঙ্গে এসব প্রামাণ্যচিত্র সংরক্ষণ করবে।
তিনি জন্মেছেন ১৯৫০ সালের ৩১ ডিসেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। স্থায়ীভাবে তাঁদের পরিবার ঢাকায় চলে আসে। ঢাকা শহরে তাঁর বেড়ে ওঠা। শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
লেখকসত্তার বাইরে তিনি কর্মময়কাল প্রবাহিত রেখেছিলেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হিসেবে। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তিনি মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
টেলিভিশনের পর্দায় এনে দিয়েছেন শুদ্ধ ভাষা ও উচ্চারণের মধ্য দিয়ে দর্শকপ্রিয় অনুষ্ঠান। শিশুসাহিত্যের পাতায় যেমন উজ্জ্বল তিনি, তেমনি টেলিভিশন পর্দায় উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে হয়েছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। ইউনিসেফের মীনা কার্টুনের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।
তাঁর প্রযোজিত অনুষ্ঠান ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া’, ‘হ্যালো’, ‘আপনাকে বলছি’, ‘কুইজ-কুইজ সুখী পরিবার’, ‘পুষ্টি তথ্য’, ‘শিশুর অধিকার নিশ্চিত এবং সুরক্ষা’বিষয়ক অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ছড়ায় ছন্দ দিয়ে অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট আমাকে দিয়ে লেখাতেন তিনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ শিক্ষাটা লাভ করেছি তাঁর কাছ থেকেই।
ছয় শর বেশি বই লিখে আলী ইমাম এক বিশাল অধ্যায় রচনা করেছেন। দুঃখকে আড়াল করতে জানতেন। কাজকে ভীষণ ভালোবাসতেন। নিত্যনতুন সৃজনশীল উদ্ভাবনের মধ্যে ডুবে থাকতেন। যেমন লিখতেন, তেমনি পড়তেন।
তিনি যখন হাঁটতেন—হন হন করে হাঁটতেন। যখন কথা বলতেন, শুদ্ধ উচ্চারণে তথ্যের বাহারে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতেন। আর যখন লিখতেন,
তখন তাঁর লেখায় শব্দমালায় ঝরে পড়ত অপূর্ব এক কোমলতা। পুকুরজলের তিরতির করা ঢেউ, বুনো হাঁসের ডিম, রূপকথার রাজ্যের ডালিমকুমার—এমন এক
আবহ তৈরি করে দেয়, যা পাঠকদের নিয়ে যায় আবহমান বাংলার চিরচেনা প্রকৃতির কাছে।
প্রকৃতির কোলজুড়ে তখন নেমে আসে একরাশ স্নিগ্ধতা। পাঠকের অনুভূতিতে তৈরি হয় অপূর্ব এক মুগ্ধতা।
আমরা আলী ইমামের মুগ্ধ পাঠক। জীবনভর বয়ে বেড়াব আলী ইমামের সান্নিধ্যের স্মৃতিকথা। বারবার পাঠ করব তাঁকে। কিশোর মনের কৌতূহল মেটানো দুর্দান্ত সব মনকাড়া রচনা থেকে খুঁজব চাঁদ-তারা-জোনাকি।
তাঁর সঙ্গে প্রথম কবে কোথায় দেখা হয়েছে, স্মৃতি হাতড়ে খোঁজার চেষ্টা করছি। কোথায় দেখা হলো? ময়মনসিংহে? ঢাকায়? বিটিভিতে? বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে? খেলাঘরে? কচি-কাঁচার আসরে? নাকি কিশোর বাংলা অফিসে? মনে পড়ছে না।
তবে মনে পড়ছে তাঁর প্রবাল দ্বীপের আতঙ্কের কথা। কালো রঙের প্রচ্ছদে বোর্ড বাঁধাই এ বইটি আমার হাতে তুলে দিয়েছিলেন ছড়াকার সরকার জসীম। তিরাশি-চুরাশি সাল হবে। অথবা আরও পরের কোনো বছর। ঘটনাটি লিখে রাখিনি বলে স্মৃতিগুলো অস্পষ্ট হয়ে আছে। তবু মনে পড়ছে, আমি তখন নবীন লেখকদের একজন। কৌতূহলী মন নিয়ে ঘুরে বেড়াই। যা পাই, তা-ই পড়ি। পড়ার জন্য বই খুঁজি। ময়মনসিংহ শহরের পাবলিক লাইব্রেরি, মুসলিম স্কুল পাঠাগার আর স্টেশন রোডের গসপেল হল—এই ছিল সেই সময়ের ময়মনসিংহ শহরের পাঠকেন্দ্র।
মনে পড়ছে জসীম ভাইয়ের বাউন্ডারি রোডের বাসায় কোনো এক বিকেলে আলী ইমামের বই পড়তে দিলেন আমাকে। পড়লাম। প্রবাল দ্বীপ চিনলাম। সাগর চিনলাম।
সাগরের ঢেউ চিনলাম। সেই উত্তাল ঢেউয়ের ছবি বুকে ধরে আলী ইমামকে খুঁজে পেলাম বইয়ের পাতায়, পত্রিকার পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায়, বিটিভির অনুষ্ঠান শেষে চমৎকার হাতে লেখা টাইপোগ্রাফিতে ভেসে উঠতে দেখলাম প্রযোজনা আলী ইমাম। তত দিনে আরও পড়লাম ‘অপারেশন কাঁকনপুর’, ‘তিতিরমুখী চৈতা’। ‘আলী ইমাম’-এ নামটি আস্তে আস্তে আমার মনকে রঙিন করে তুলতে লাগল।
স্মৃতি থেকে ভেসে এল একটা দৃশ্য। তিনি মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র মিলনায়তনে কোনো এক অনুষ্ঠানে আমার পঠিত ছড়া নিয়ে চমৎকার উৎসাহব্যঞ্জক কথা বললেন।
নবীন-লেখকদের প্রতি দরদমাখা প্রশংসা যেন প্রশংসা ছিল না, ছিল হাত বাড়িয়ে হাতটি ধরা। পরে দেখেছি এটিই তাঁর বৈশিষ্ট্য। নবীনদের কাছে টেনে নিতে জানতেন।
কাউকে নিরুৎসাহিত করতেন না। একটা দুর্বল লেখাকে সবল করে তোলার জন্য এমন সব উদ্দীপনামূলক বাক্য ব্যবহার করে উৎসাহ জোগাতেন—যারা তাঁর সান্নিধ্য পেয়েছে, তারা জানে। আর তাই তো আধুনিক শিশুসাহিত্যে উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম আলী ইমাম।
আধুনিক শিশুসাহিত্যে সারথি আলী ইমাম। সুবিশাল অধ্যায় রচনা করেছেন শব্দের জাদু দিয়ে। বাক্যের বুননে চিনিয়েছেন বাংলার অপরূপ ভাষার সৌন্দর্য। বৈচিত্র্যময় বিষয় তাঁর সুলিখিত রচনাগুলো হয়ে উঠল শিশুসাহিত্যের সম্পদ। এই সম্পদ আঁকড়ে ধরে আমরা আলী ইমামকে নিয়ে খুলছি শোক বইয়ের পাতা।
তিনি নেই। চিরতরে বিদায় নিলেন ২১ নভেম্বর, ২০২২। সেদিনের সন্ধ্যা স্তব্ধ করে দিল আমাদের চারপাশ। কী বিষণ্ন এক মুহূর্ত আমাদের জাপটে ধরল খবরটা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে।
তিনি আর হাঁটবেন না। তিনি আর লিখবেন না। তিনি আর কথা বলবেন না, স্বাক্ষর দেবেন না। তাহলে তিনি কোথায় থাকবেন? থাকবেন পাঠকের অন্তরে, বইয়ের পাতায় এবং শিশুসাহিত্যের শাখা-প্রশাখায়।
শিশুসাহিত্যের প্রতি দরদমাখা স্পর্শ ছিল তাঁর। যেমন তাঁর ব্যক্তিত্ব, তেমনি তাঁর লেখার শক্তি। দুইয়ে মিলে আলী ইমামকে এমন এক লেখকসত্তা দিয়েছে, যা তাঁকে বানিয়েছে শিশুসাহিত্যের রত্নখনি।
গল্প, কবিতা, উপন্যাস, গবেষণা, প্রকৃতি, পশুপাখি, চলচ্চিত্র—প্রতিটি বিষয় তিনি শিশুসাহিত্যের পাতায় ভরিয়ে দিয়েছেন। সমৃদ্ধ করেছেন শিশুসাহিত্যের ভান্ডার; যা কখনোই ফুরানোর নয়। দৃঢ়চিত্তে বলতে দ্বিধা নেই, বাঙালির যে ঘরে শিশুকিশোর রয়েছে, সেই ঘরে আছেন আলী ইমাম। বুকশেলফের কোনো এক তাকে শোভা পায় তাঁরই গ্রন্থ।
আলী ইমাম এমনই একজন অনিবার্য শিশুসাহিত্যিক হয়ে উঠেছিলেন, যাঁকে পাঠ করতেই হবে। তাঁর রচনার জাদুকরি শব্দ বুননের স্পর্শে বাংলার প্রকৃতি হেসে ওঠে। বৈশাখ, নবান্ন, হেমন্ত, শিশির, ঘাসবিচালি, পাখ-পাখালি, আকাশ-চন্দ্র-সূর্য, তারা-নক্ষত্র-গ্রহ—কোনো কিছুই এড়ায়নি আলী ইমামের চোখ থেকে।
বাদুড়ের নীল নখ খুঁজে বেড়ানো কিশোরের কৌতূহলী মন তিনি যেমন ধরতে পেরেছিলেন, তেমনি ধরতে পেরেছেন কল্পবিজ্ঞানের যাবতীয় খুঁটিনাটি তথ্যমালা কিংবা রহস্যভরা গোয়েন্দাগিরির শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাডভেঞ্চার।
আলী ইমামের নিজস্ব একটা পাঠক মহল আছে। এই মহলে বাস করেন তরুণ থেকে বৃদ্ধরা। এই মহলে বসে স্বপ্নের রঙিন ঘুড়ি ওড়ায় কিশোর-কিশোরীর দল।
লোকজ ঐতিহ্য লালন করার মধ্য দিয়ে এ দেশের শিশুকিশোর পাঠকদের জন্য আলী ইমাম নিষ্ঠার সঙ্গে রচনা করেছেন দেশ-মহাদেশের গল্প এবং ছন্দময় বিষয়-আশয়।
বাঙালির আবেগঘন গর্বিত উচ্চারণে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাঙালি চেতনা, বারবার নতুন স্পন্দনে জেগে উঠেছে আলী ইমামের কলমে। বিদেশি শিশুসাহিত্যও পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তাঁর লেখনীর মধ্য দিয়ে।
তিনি যখন হ্যান্ডস অ্যান্ডারসনের কথা বলেন, মনে হয় অ্যান্ডারসনের বাড়িতে বসে আছি। তিনি যখন সুকুমার রায়কে চিনিয়ে দেন, মনে হয় ওই তো, সুকুমার রায় দাঁড়িয়ে।
ঈশ্বরচন্দ্র, অবন ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ-নজরুল, জসীমউদ্দীন তাঁদের জাদুকরি বর্ণনায় শিশুসাহিত্যের পাতায় পাতায় তুলে ধরতেন তিনি; শুধু তা-ই নয়, শিশুসাহিত্যবিষয়ক পত্র-পত্রিকা নিয়ে তাঁর ছিল বিস্তর গবেষণা। জাতীয় জাদুঘরের জন্য নির্মাণ করেছেন প্রামাণ্যচিত্র। নিশ্চয়ই জাদুঘর কর্তৃপক্ষ মর্যাদার সঙ্গে এসব প্রামাণ্যচিত্র সংরক্ষণ করবে।
তিনি জন্মেছেন ১৯৫০ সালের ৩১ ডিসেম্বর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। স্থায়ীভাবে তাঁদের পরিবার ঢাকায় চলে আসে। ঢাকা শহরে তাঁর বেড়ে ওঠা। শিশুসাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার এবং শিশু একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
লেখকসত্তার বাইরে তিনি কর্মময়কাল প্রবাহিত রেখেছিলেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব হিসেবে। বাংলাদেশ টেলিভিশনে তিনি মহাব্যবস্থাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
টেলিভিশনের পর্দায় এনে দিয়েছেন শুদ্ধ ভাষা ও উচ্চারণের মধ্য দিয়ে দর্শকপ্রিয় অনুষ্ঠান। শিশুসাহিত্যের পাতায় যেমন উজ্জ্বল তিনি, তেমনি টেলিভিশন পর্দায় উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে হয়েছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। ইউনিসেফের মীনা কার্টুনের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন।
তাঁর প্রযোজিত অনুষ্ঠান ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া’, ‘হ্যালো’, ‘আপনাকে বলছি’, ‘কুইজ-কুইজ সুখী পরিবার’, ‘পুষ্টি তথ্য’, ‘শিশুর অধিকার নিশ্চিত এবং সুরক্ষা’বিষয়ক অনুষ্ঠান জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ছড়ায় ছন্দ দিয়ে অনুষ্ঠানের স্ক্রিপ্ট আমাকে দিয়ে লেখাতেন তিনি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ শিক্ষাটা লাভ করেছি তাঁর কাছ থেকেই।
ছয় শর বেশি বই লিখে আলী ইমাম এক বিশাল অধ্যায় রচনা করেছেন। দুঃখকে আড়াল করতে জানতেন। কাজকে ভীষণ ভালোবাসতেন। নিত্যনতুন সৃজনশীল উদ্ভাবনের মধ্যে ডুবে থাকতেন। যেমন লিখতেন, তেমনি পড়তেন।
তিনি যখন হাঁটতেন—হন হন করে হাঁটতেন। যখন কথা বলতেন, শুদ্ধ উচ্চারণে তথ্যের বাহারে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতেন। আর যখন লিখতেন,
তখন তাঁর লেখায় শব্দমালায় ঝরে পড়ত অপূর্ব এক কোমলতা। পুকুরজলের তিরতির করা ঢেউ, বুনো হাঁসের ডিম, রূপকথার রাজ্যের ডালিমকুমার—এমন এক
আবহ তৈরি করে দেয়, যা পাঠকদের নিয়ে যায় আবহমান বাংলার চিরচেনা প্রকৃতির কাছে।
প্রকৃতির কোলজুড়ে তখন নেমে আসে একরাশ স্নিগ্ধতা। পাঠকের অনুভূতিতে তৈরি হয় অপূর্ব এক মুগ্ধতা।
আমরা আলী ইমামের মুগ্ধ পাঠক। জীবনভর বয়ে বেড়াব আলী ইমামের সান্নিধ্যের স্মৃতিকথা। বারবার পাঠ করব তাঁকে। কিশোর মনের কৌতূহল মেটানো দুর্দান্ত সব মনকাড়া রচনা থেকে খুঁজব চাঁদ-তারা-জোনাকি।
দ্য ভেজিটেরিয়ানের পর হান কাঙের পরের উপন্যাস ছিল ‘দ্য উইন্ড ব্লোজ, গো’। এই উপন্যাস লেখার সময়ই ঘটে বিপত্তি! হান অনুভব করেন তিনি আর লিখতে পারছেন না। গত বছর নিজের পঞ্চম উপন্যাস ‘গ্রিক লেসন’ ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হলে স্পেনের এল-পাইস পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছিলেন তিনি।
২০ দিন আগে‘প্রগাঢ় কাব্যিক গদ্যে ঐতিহাসিক ক্ষত তুলে ধরা এবং মানবজীবনের নাজুক পরিস্থিতির উন্মোচনের জন্য’ তাঁকে বিশ্বের সবচেয়ে মর্যাদাবান পুরস্কারের জন্য বেছে নিয়েছে নোবেল কমিটি।
২১ দিন আগেতানভীর মুহাম্মদ ত্বকীর জন্মদিন উপলক্ষে ‘দশম জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা’–এর আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের প্রথম দশ জনকে সনদ, বই ও ক্রেস্ট দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে বই, বিশেষ ক্রেস্ট ও সনদ এবং প্রথম স্থান অধিকারীকে ‘ত্বকী পদক ২০২৪’ দেওয়া হবে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী
০১ সেপ্টেম্বর ২০২৪বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও পরে সরকার পতনের আন্দোলনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের নেতারা আওয়ামী লীগ সরকারের দোসর হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁদের কর্মকাণ্ডে প্রতীয়মান তাঁরা গণহত্যার সমর্থক। এ কারণে একটি গণ আদালত গঠন করে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের এই নেতাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দাবি জানিয়েছে উদীচী।
১৭ আগস্ট ২০২৪