অনলাইন ডেস্ক
রোগে অণুজীবের ভূমিকা এবং কীভাবে ভ্যাকসিন দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করা যায়, তা আবিষ্কার করা প্রথম দিককার বিজ্ঞানীদের একজন লুই পাস্তুর। আমরা অবশ্য তাঁকে বেশি চিনি জলাতঙ্ক রোগের টিকার আবিষ্কারক হিসেবেই। ১৮২২ সালের এই দিনে, অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর ফ্রান্সের দোলে জন্ম নেন এই বিজ্ঞানী।
ওই সময়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রচলিত সাধারণ ধারণা ছিল খাবার নষ্ট হওয়া এবং গাঁজন হলো এমন একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যা বাতাসের অক্সিজেনের কারণে ঘটে।
এদিকে ১৮৩০-এর দশকে দুই বিজ্ঞানী থিওডর সোয়ান এবং শার্ল কেনিয়ার দ্য লা তুর অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করেন যে বিয়ারের ইস্ট পুনরুৎপাদনকারী কোষ দ্বারা গঠিত। তাঁরা প্রস্তাব করেন, এদের বৃদ্ধির কারণে তৈরি হয় অ্যালকোহল। লুই পাস্তুর রাসায়নিক পচনতত্ত্বকে বাতিল করে তার নিজস্ব বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা পর্যন্ত তাদের ধারণাগুলো ছিল উপেক্ষিত।
পাস্তুর দেখিয়েছিলেন যে কোনো ফুটানো নির্যাস থেকে যদি বাতাস বের করে নেওয়া হয়ে যায়, এতে কোনো জীবাণু উপস্থিত হয় না, তবে যদি বায়ুমণ্ডলীয় ধূলিকণা প্রবেশ করতে দেওয়া হয়, তাহলে কয়েক দিনের মধ্যে জীবাণুগুলো উপস্থিত হবে।
পাস্তুর বুঝতে পেরেছিলেন যে খুদে জীবাণুগুলো খাবার নষ্ট করার জন্য দায়ী। বিষয়টির সঙ্গে ওয়াইনের সম্পর্ক থাকায় ফ্রান্সের অর্থনীতির জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এটি। পাস্তুর আবিষ্কার করেছিলেন যে ওয়াইনকে ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম করলে ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। এভাবে স্বাদকে প্রভাবিত না করেই ওয়াইন নষ্ট হওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রক্রিয়াটি পাস্তুরাইজেশন হিসেবে পরিচিতি পায়, যা আজও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
ফ্রান্সে রেশম পোকার এক মহামারিতে রেশমের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। ১৮৬৫ সালে ফ্রান্স সরকার পাস্তুরকে রেশমশিল্পের সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করেন। পাস্তুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝতে পারেন রেশম পোকার এই সমস্যা বংশগত। অর্থাৎ মায়ের থেকে পরবর্তী প্রজন্মে সংক্রামিত হয়। তিনি শিল্পটিকে বাঁচানোর জন্য রোগমুক্ত গুটি বাছাই করার প্রস্তাব করেন।
১৮৮০ সালে পাস্তুর মুরগির কলেরার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা জানান। জঁ জজি অরি ত্যুসাঁ আগে এটি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। পাস্তুর দেখতে পেলেন যে কিছু কৌশল ব্যবহার করে জীবাণুর বিষক্রিয়া হ্রাস করা সম্ভব। এই দুর্বল জীবাণু দিয়ে তৈরি টিকা মুরগিকে রোগটির থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করবে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই নীতি সমস্ত সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
তিনি ভ্যাকসিন অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত ভেড়াকে সুস্থ করে তুলতে একটি পরীক্ষা চালান। ঘটনাটি ১৮৮৫ সালের, দুই দল ভেড়াকে অ্যানথ্রাক্স জীবাণুর টিকা দেওয়া হলো। টিকা পেয়েছে এমন ভেড়াগুলো বেঁচে যায়, না পাওয়াগুলো মারা যায়। পাস্তুরের দাবি ছিল, তিনি প্রতিষেধকটা তৈরি করেন নিজের পদ্ধতিতে, মানে বাতাসে রেখে। এ ক্ষেত্রে পাস্তুর তাঁর নিজের নয়, ত্যুসাঁর একটি পদ্ধতি অনুসারে তৈরি একটি ভ্যাকসিন ব্যবহার করেছিলেন। তবে এ কথা তখন প্রকাশ করেননি। ১৯৭০-এর দশকে তাঁর গোপন নোটবুকগুলো ইতিহাসবিদদের হাতে আসার পর বিশ্ব এ বিষয়ে হতাশার কথা জানতে পারে।
পাস্তুরের নোট বই অনুসারে নিজের নয়, শুরুতে জঁ জজি অরি ত্যুসাঁর পদ্ধতিই অনুসরণ করেছিলেন। অবশ্য কয়েক মাসের মধ্যেই পাস্তুর বাতাসের উপস্থিতিতেই টিকা বানিয়েছিলেন বলে নোট বইয়ে উল্লেখ আছে।
১৮৮৫ সালে পাগলা কুকুরে কামড়ানো একটি ছেলেকে পাস্তুরের কাছে আনা হয়। পাস্তুর তাকে একের পর এক ইনজেকশন দেয় এবং সে বেঁচে যায়। আর এভাবেই লুই পাস্তুরের হাত ধরে আবিষ্কৃত হয় জলাতঙ্ক রোগের টিকা।
পরে পাস্তুর বাণিজ্যিকভাবে অ্যানথ্রাক্স ও জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন তৈরি করতে শুরু করেন এবং পাস্তুর ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য এই আয় ব্যবহার করেন। পাস্তুর ইনস্টিটিউটের পরিচালক থাকা অবস্থায় ১৮৯৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন এই বিজ্ঞানী।
সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট, ব্রিটানিকা, উইকিপিডিয়া
রোগে অণুজীবের ভূমিকা এবং কীভাবে ভ্যাকসিন দিয়ে রোগ প্রতিরোধ করা যায়, তা আবিষ্কার করা প্রথম দিককার বিজ্ঞানীদের একজন লুই পাস্তুর। আমরা অবশ্য তাঁকে বেশি চিনি জলাতঙ্ক রোগের টিকার আবিষ্কারক হিসেবেই। ১৮২২ সালের এই দিনে, অর্থাৎ ২৭ ডিসেম্বর ফ্রান্সের দোলে জন্ম নেন এই বিজ্ঞানী।
ওই সময়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে প্রচলিত সাধারণ ধারণা ছিল খাবার নষ্ট হওয়া এবং গাঁজন হলো এমন একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যা বাতাসের অক্সিজেনের কারণে ঘটে।
এদিকে ১৮৩০-এর দশকে দুই বিজ্ঞানী থিওডর সোয়ান এবং শার্ল কেনিয়ার দ্য লা তুর অণুবীক্ষণ যন্ত্র ব্যবহার করে পর্যবেক্ষণ করেন যে বিয়ারের ইস্ট পুনরুৎপাদনকারী কোষ দ্বারা গঠিত। তাঁরা প্রস্তাব করেন, এদের বৃদ্ধির কারণে তৈরি হয় অ্যালকোহল। লুই পাস্তুর রাসায়নিক পচনতত্ত্বকে বাতিল করে তার নিজস্ব বিশদ পরীক্ষা-নিরীক্ষা না করা পর্যন্ত তাদের ধারণাগুলো ছিল উপেক্ষিত।
পাস্তুর দেখিয়েছিলেন যে কোনো ফুটানো নির্যাস থেকে যদি বাতাস বের করে নেওয়া হয়ে যায়, এতে কোনো জীবাণু উপস্থিত হয় না, তবে যদি বায়ুমণ্ডলীয় ধূলিকণা প্রবেশ করতে দেওয়া হয়, তাহলে কয়েক দিনের মধ্যে জীবাণুগুলো উপস্থিত হবে।
পাস্তুর বুঝতে পেরেছিলেন যে খুদে জীবাণুগুলো খাবার নষ্ট করার জন্য দায়ী। বিষয়টির সঙ্গে ওয়াইনের সম্পর্ক থাকায় ফ্রান্সের অর্থনীতির জন্যও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এটি। পাস্তুর আবিষ্কার করেছিলেন যে ওয়াইনকে ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় গরম করলে ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। এভাবে স্বাদকে প্রভাবিত না করেই ওয়াইন নষ্ট হওয়া বন্ধ করে দেয়। প্রক্রিয়াটি পাস্তুরাইজেশন হিসেবে পরিচিতি পায়, যা আজও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।
ফ্রান্সে রেশম পোকার এক মহামারিতে রেশমের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছিল। ১৮৬৫ সালে ফ্রান্স সরকার পাস্তুরকে রেশমশিল্পের সমস্যা সমাধানের অনুরোধ করেন। পাস্তুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বুঝতে পারেন রেশম পোকার এই সমস্যা বংশগত। অর্থাৎ মায়ের থেকে পরবর্তী প্রজন্মে সংক্রামিত হয়। তিনি শিল্পটিকে বাঁচানোর জন্য রোগমুক্ত গুটি বাছাই করার প্রস্তাব করেন।
১৮৮০ সালে পাস্তুর মুরগির কলেরার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা জানান। জঁ জজি অরি ত্যুসাঁ আগে এটি নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। পাস্তুর দেখতে পেলেন যে কিছু কৌশল ব্যবহার করে জীবাণুর বিষক্রিয়া হ্রাস করা সম্ভব। এই দুর্বল জীবাণু দিয়ে তৈরি টিকা মুরগিকে রোগটির থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করবে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই নীতি সমস্ত সংক্রামক রোগের বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন বা টিকা তৈরিতে প্রয়োগ করা যেতে পারে।
তিনি ভ্যাকসিন অ্যানথ্রাক্সে আক্রান্ত ভেড়াকে সুস্থ করে তুলতে একটি পরীক্ষা চালান। ঘটনাটি ১৮৮৫ সালের, দুই দল ভেড়াকে অ্যানথ্রাক্স জীবাণুর টিকা দেওয়া হলো। টিকা পেয়েছে এমন ভেড়াগুলো বেঁচে যায়, না পাওয়াগুলো মারা যায়। পাস্তুরের দাবি ছিল, তিনি প্রতিষেধকটা তৈরি করেন নিজের পদ্ধতিতে, মানে বাতাসে রেখে। এ ক্ষেত্রে পাস্তুর তাঁর নিজের নয়, ত্যুসাঁর একটি পদ্ধতি অনুসারে তৈরি একটি ভ্যাকসিন ব্যবহার করেছিলেন। তবে এ কথা তখন প্রকাশ করেননি। ১৯৭০-এর দশকে তাঁর গোপন নোটবুকগুলো ইতিহাসবিদদের হাতে আসার পর বিশ্ব এ বিষয়ে হতাশার কথা জানতে পারে।
পাস্তুরের নোট বই অনুসারে নিজের নয়, শুরুতে জঁ জজি অরি ত্যুসাঁর পদ্ধতিই অনুসরণ করেছিলেন। অবশ্য কয়েক মাসের মধ্যেই পাস্তুর বাতাসের উপস্থিতিতেই টিকা বানিয়েছিলেন বলে নোট বইয়ে উল্লেখ আছে।
১৮৮৫ সালে পাগলা কুকুরে কামড়ানো একটি ছেলেকে পাস্তুরের কাছে আনা হয়। পাস্তুর তাকে একের পর এক ইনজেকশন দেয় এবং সে বেঁচে যায়। আর এভাবেই লুই পাস্তুরের হাত ধরে আবিষ্কৃত হয় জলাতঙ্ক রোগের টিকা।
পরে পাস্তুর বাণিজ্যিকভাবে অ্যানথ্রাক্স ও জলাতঙ্কের ভ্যাকসিন তৈরি করতে শুরু করেন এবং পাস্তুর ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য এই আয় ব্যবহার করেন। পাস্তুর ইনস্টিটিউটের পরিচালক থাকা অবস্থায় ১৮৯৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন এই বিজ্ঞানী।
সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট, ব্রিটানিকা, উইকিপিডিয়া
আবদুস সালাম ছিলেন বিজ্ঞানে নোবেল পাওয়া প্রথম মুসলিম এবং প্রথম পাকিস্তানি বিজ্ঞানী। পাকিস্তানি এই তাত্ত্বিক পদার্থবিদ ইলেক্ট্রোউইক ইউনিফিকেশন থিওরির জন্য নোবেল পুরস্কার পান।
১ দিন আগেঢাকা কলেজ, এ দেশের শিক্ষা ইতিহাসেই শুধু নয়, জাতির ইতিহাসেরও এক অনন্য অধ্যায়ের সঙ্গে জড়িত এক নাম। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ, ’৯০-এর স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামে এ কলেজের ছাত্রদের অবদান অনস্বীকার্য। এ কলেজের কৃ
১ দিন আগে‘ভাষাকন্যা’ হিসেবে খ্যাত সুফিয়া আহমেদের জন্ম ১৯৩২ সালের ২০ নভেম্বর ফরিদপুরে। ভাষা আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্রী একুশে ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গকারীদের মধ্যে অন্যতম। সেদিন তিনি পুলিশি নির্যাতনে আহত হন। পরবর্তী সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য...
২ দিন আগেমাত্র ৪৩ বছর বেঁচে ছিলেন সঞ্জীব চৌধুরী। এই স্বল্প জীবনে বাংলা গানে নতুন ধারা সৃষ্টি করেছিলেন। নিজের লেখা কবিতা থেকে সুর দিয়ে নিজেই গান গেয়েছেন। শুধু গান গাওয়া নয়, সরাসরি যুক্ত ছিলেন এরশাদবিরোধী আন্দোলনেও।
৩ দিন আগে