মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত
‘তিন পয়েন্ট নিতেই এখানে এসেছি আমরা’—জামাল ভূঁইয়ার কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস বেশ জোরালোভাবেই ফুটে উঠেছে। কাগজ-কলম ও অতীত ইতিহাস বিবেচনায় অবশ্য ভারতকে ফেবারিটের কাতারে রাখতে হচ্ছে। খোদ বাংলাদেশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরাও রাখছেন। ম্যাচ যে ভারতেরই মাঠে। তাই বলে নিজেদের পিছিয়ে রাখছে না বাংলাদেশ, রাখার সুযোগও নেই। দলে একজন হামজা চৌধুরী আছেন না!
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে আসা হামজাকে ঘিরেই আশার দানা বেঁধে রেখেছেন দেশের ফুটবলভক্তরা। ঘুমিয়ে পড়া ফুটবল তাঁর এক ছোঁয়াতেই যেন প্রাণবন্ত হয়ে উঠল ১৭ মার্চের পর। সেদিন দেশের মাটিতে পা রাখেন তিনি, এরপর থেকে যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই তিনি থাকছেন আগ্রহের কেন্দ্রে। হামজার কাছে মানুষের বিপুল প্রত্যাশা। সেই প্রত্যাশা পূরণের কঠিন পরীক্ষাও শুরু হচ্ছে আজ থেকে।
এএফসি এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আজ বাংলাদেশকে আতিথ্য দেবে ভারত। সাধারণত ম্যাচের ৪৮ ঘণ্টা আগে আয়োজক দেশে পা রাখে সফরকারী দল। কিন্তু বাংলাদেশ শিলংয়ে পৌঁছেছে ৫ দিন আগে। বাফুফের অপরিকল্পিত সফরে প্রস্তুতির জন্য উপযুক্ত কোনো ভেন্যু খুঁজে পায়নি হাভিয়ের কাবরেরার দল। দায়টা বাফুফেরই বেশি। দুই দিন টার্ফে অনুশীলনের পর গতকাল নিয়ম অনুযায়ী ম্যাচ ভেন্যু জওহরলাল স্টেডিয়ামে অনুশীলনের সুযোগ পান জামাল-হামজারা।
তবু প্রস্তুতি নিয়ে ঠিক কতটা সন্তুষ্ট কাবরেরা? বাংলাদেশ কোচ বলেন, ‘এ নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। তবে আমরা কোনো অজুহাত দাঁড় করাতে চাই না। এটা অতীত। অবশেষে আমরা আজ (কাল) স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে যাচ্ছি। হয়তো সেরা সুযোগ-সুবিধা পাইনি, তবে আমরা খুব ভালোভাবেই প্রস্তুত। ওসব নিয়ে আর ভাবছি না।’
টার্ফের অনুশীলনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরেনি বলে মনে করেন কাবরেরা, ‘২৪ দিন ধরে কঠোর পরিশ্রম ও অনুশীলন করছে দল। সত্যি বলতে আমরা প্রস্তুত এবং আত্মবিশ্বাসী। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক ম্যাচের প্রত্যাশা আমাদের এবং আশা করছি, ভারতকে কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলতে পারব।’
ভারত ম্যাচ সামনে রেখে ২৪ দিন ধরে কেবল অনুশীলনই করেছে বাংলাদেশ। খেলেনি কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ। সেদিক থেকে ভারত অবশ্য এগিয়ে আছে। বাংলাদেশের পরে ক্যাম্প শুরু করলেও ছয় দিন আগে মালদ্বীপ ৩-০ গোলে হারিয়েছে তারা। কাটিয়েছে ৪৮৯ দিনের জয় না পাওয়ার খরা। তাই বলে যে বাংলাদেশ চাপে থাকবে, তেমনটা মনে করছেন না ভারতের কোচ মানোলো মারকেস, ‘প্রতিটি ম্যাচেই আমরা একই ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোই। তাই বাংলাদেশ হোক বা অন্য কেউ, আমরা সব সময় প্রত্যাশা করি, প্রতিপক্ষ তার সেরা রূপেই হাজির হবে। একেক ম্যাচে একেক ধরন নিয়ে খেলতে পারি না আমরা। তবে সব প্রতিপক্ষেরই ভালো ও খারাপ দিক জানাটা জরুরি।’
ভারতের কাছে ম্যাচটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে অবসর ভেঙে জাতীয় দলে ফিরেছেন অভিজ্ঞ সুনীল ছেত্রী। বয়স ৪০ হলেও পারফরম্যান্সের ধার কমেনি আন্তর্জাতিক ফুটবলে ৯৫ গোল করা এই ফরোয়ার্ডের। মারকেস তাঁকে নিয়ে বলেছেন, ‘সুনীল ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি। সর্বোচ্চ গোলদাতা। তবে এটা সত্যি, আমার প্রথম ম্যাচে আমরা গোল করতে পারিনি। আমাদের কিছু সমস্যা হচ্ছিল। তবে সেরা খেলোয়াড় হিসেবে সে অনেক ব্যবধানে এগিয়ে আছে।’
প্রতিপক্ষ যখন ভারত, তখন ঘুরেফিরে চাপের প্রসঙ্গটা চলেই আসে। ভারতকে ‘বড় ভাই’ হিসেবে দেখা জামাল অবশ্য চাপকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেন না, ‘আপনি যখন আপনার বড় ভাইয়ের সঙ্গে খেলেন, তখন আপনারা জিততে চান, তাই না। আমরাও তাই। ভারতের বিপক্ষে আমরা জিততে চাই। চাপ তো আছেই, প্রতি ম্যাচেই থাকে; তবে এই ম্যাচ নিয়ে আমরা আরও বেশি মনোযোগী এবং শান্ত রয়েছি। দলে হামজার মতো খেলোয়াড় এসেছে। দলকে অনুপ্রাণিত করছে সে।’
ম্যাচের আগে শান্ত থাকলেও ম্যাচের পর জয়োল্লাস করবেন জামাল-হামজারা! এমন প্রত্যাশা তো করাই যায়। ২০০৩ সাফের পর থেকে যা অধরাই রয়েছে।