অনলাইন ডেস্ক
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে তা হলো—দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা কে? বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে ইরানের বয়োবৃদ্ধ সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ছেলে মুজতবা খামেনি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। প্রথা ভেঙে তিনিই হতে পারেন বাবার উত্তরসূরি। অথবা আড়ালে থেকে ক্ষমতার কলকাঠি নাড়বেন।
অধিকাংশ ইরানির কাছেই আলী খামেনির ছেলের বিষয়টি ধোঁয়াটে। তিনি রাষ্ট্রীয় কোনো পদে নেই, কালেভদ্রে উদয় হন, কখনো ভাষণ দেন না। কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বিগত কয়েক দশক ধরে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলেছেন মুজতবা খামেনি, যা তাঁকে দেশটির ক্ষমতা বলয়ে শক্তিশালী করে তুলেছে। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির শাসনামলে তিনি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন।
ইব্রাহিম রাইসিকে ইরানের পরবর্তী আয়াতুল্লাহ মনে করা হচ্ছিল। অন্তত কর্ম জীবনজুড়ে তাঁকে সেভাবেই গড়ে তোলা হচ্ছিল। কারণ, বর্তমান আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বয়স ৮৫ বছর এবং তাঁর স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাইসি মূলত পর্দার অন্তরালে থাকা ক্ষমতাধরদের নেটওয়ার্কের কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী ছিলেন।
রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের শাসক শ্রেণি নিয়ে নানা মত সামনে এসেছে। খামেনির উত্তরসূরি কে হবেন এবং যিনি প্রেসিডেন্ট হবেন, তিনি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি), খামেনির ছেলে এবং তাঁর আশপাশে থাকা ক্ষমতার অংশীদারদের পছন্দের হবেন কি না—ইত্যাদি প্রশ্নও ভেসে বেড়াচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকেই অনুমান করছেন, মুজতবা খোমেনি বাবার উত্তরসূরি হতে পারে। তবে ইরান বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং মুজতবা খামেনি পাদপ্রদীপের আলোয় না থেকেই ইরানের ক্ষমতাকেন্দ্রে চলে আসতে পারেন।
জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের ভিজিটিং ফেলো ও ইরান বিশেষজ্ঞ হামিদরেজা আজিজি বলেন, ‘মুজতবা এবং তাঁর চারপাশের নেটওয়ার্কই দুই দশক ধরে ইরানের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করছে। এই অবস্থায় রাইসির মতো উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যের কাউকে খুঁজে বের করাই এখন খোদ (আলী) খামেনির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। এর মাধ্যমে খামেনি এমন পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হবেন যেখানে মুজতবা অন্তরালে থেকেই ভূমিকা পালন করবেন, জনসাধারণের মধ্যে কোনো প্রশ্নের উদ্রেক না করেই নিজের ক্ষমতা রক্ষা ও প্রসারিত করতে পারবেন।’
যাই হোক, আগামী জুনের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং খামেনির উত্তরসূরি বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সামনে রেখে ইরানের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের পুনর্বিন্যাসে মুজতবা খামেনিই কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখবেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়াই ইরানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেবে। বিশেষ করে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে ইরানের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই পুনর্বিন্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুখবারও মুজতবা খামেনির ঘনিষ্ঠ। হয়তো ভারমুক্ত হতে তিনি আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করবেন। মুখবার যে খামেনির ঘনিষ্ঠ তা বোঝা যায় বিলিয়ন ডলারের সেতাদ প্রকল্পে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়ার ঘটনায়। ফলে ক্ষমতার বিবেচনায়ও তাঁর খামেনির আস্থাভাজন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
মুজতবা খামেনির জন্ম ১৯৬৯ সালে, মাশহাদে। ঠিক সেই সময়টাতে তাঁর বাবা আলী খামেনি ইরানে শাহ বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠছিলেন। মুজতবার কৈশোরে শাহের গোপন পুলিশ আলী খামেনিকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করেছিল। একবার শাহের পুলিশ মুজতবার সামনেই তাঁর বাবাকে মারধর করে।
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর খামেনির পরিবার তেহরানে চলে যায়। সেখানেই হাইস্কুল এবং অন্যান্য পর্যায়ের শিক্ষা শেষ করেন মুজতবা। এর মাঝে ১৯৮১ সালে আলী খামেনি ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মুজতবা খামেনি ১৯৮০–৮৮ সালের ইরাক–ইরান যুদ্ধে সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করেছেন। তিনি যে ব্যাটালিয়নে ছিলেন সেটির অনেকেই ইরানের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে আছেন। তাঁদেরই একজন হোসেইন তায়েব। যাকে ধরা হয় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ভবিষ্যৎ গোয়েন্দা প্রধান। এ ছাড়া, হোসেইন নেজাত নামে মুজতবার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে আছেন।
বিগত শতকের ৯০–এর দশকের শেষ দিক থেকে মুজতবা খামেনি আলোচনায় আসতে থাকেন। বিশেষ করে চলতি শতকের প্রথম দশকে ২০০৫ ও ২০০৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহমুদ আহমেদিনেজাদকে জেতাতে তিনি নির্বাচনে কারসাজি করেছেন বলে সংস্কারপন্থীদের অভিযোগ।
বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর এক উপদেষ্টার মতে, ২০০৯ সালে তৎকালীন আধাসামরিক বাহিনী বাসিজ মিলিশিয়ার কমান্ডার তায়েবের সমর্থনে মুজতবা সংস্কারপন্থীদের ওপর ক্র্যাকডাউন চালিয়েছেন। ২০২২ সালে ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় বিক্ষোভকারীরা মুজতবা খামেনির ভূমিকাকে প্রশ্ন করেন।
ইরানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পরবর্তীতে একাধিকবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মীর হোসেন মুসাভিও এক সময় মুজতবার বিষয়ে প্রচলিত গুঞ্জন খোলাসা করার জন্য খামেনির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু আয়াতুল্লাহ সাড়া দেননি।
মুজতবার যেভাবে উত্থান ঘটছিল তাতে এই জল্পনা আরও দৃঢ় হয় যে, তিনি বাবার উত্তরসূরি হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে ইরানের ধর্মীয় তাত্ত্বিক ও খামেনি বিষয়ক গবেষক মেহেদি খালাজি বলেন, মুজতবার আয়াতুল্লাহ হওয়ার সম্ভাবনা কম। খালাজি একজন ধর্মতাত্ত্বিক, তিনি পবিত্র ইরানি শহর কোমে প্রশিক্ষিত এবং সুপ্রিমো আলী খামেনির ওপর একটি বইয়ের লেখক। ২০২৩ সালে বইটি প্রকাশ পায়।
মেহেদি খালাজি বলেন, ‘পরবর্তী আয়াতুল্লাহ হওয়ার লক্ষ্যে মুজতবার যে আকাঙ্ক্ষার কথা বলা হয়, সেটি পুরোপুরি কাল্পনিক। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বলতে পারি, খামেনি তাঁর কোনো উত্তরাধিকারী মনোনীত করবেন না। তাঁর ছেলেকে তো নয়ই।’
মুজতবা খামেনির বয়স কম। আর আয়াতুল্লাহ হওয়ার জন্য যেসব বৈশিষ্ট্য থাকাটা আনুষ্ঠানিকভাবে দরকার সেগুলো তাঁর মধ্যে নেই। বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়ে জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা এবং নির্বাহী অভিজ্ঞতা মুজতবা খামেনির নেই। এ ছাড়া আলী খামেনি এবং তাঁর পূর্বসূরি রুহুল্লাহ খোমেনি পরিবারের কারও কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও রাজতন্ত্রকে ‘অনৈসলামিক’ বলে খারিজ করে দিয়েছেন।
তবে ইরানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদ গোলকার বলেন, ‘ক্ষমতার অলিন্দে মুজতবা খামেনি কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে, শাসন ব্যবস্থায় তাঁর নেটওয়ার্কও অতুলনীয়। কিন্তু আয়াতুল্লাহ হিসেবে তাঁর নিয়োগ রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে খামেনির উত্তরাধিকারকেই বিপন্ন করবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলী খামেনি মারা গেলে মুজতবার ক্ষমতা হয়তো হুমকির মুখে পড়বে। তবে শক্তিশালী নেটওয়ার্কের কারণে পর্দার আড়ালে থেকেই বরং আরও ভালো প্রভাব বজায় রাখতে পারবেন। ১৯৮৯ সালে রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর আগে তাঁর ছেলে আহমেদ খোমেনি—যিনি তৎকালে আয়াতুল্লাহর প্রধান স্টাফ ছিলেন—বর্তমান মুজতবা খামেনির চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় আলী খামেনি ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানির কাছাকাছিই ছিলেন আহমেদ। তবে বাবার মৃত্যুর পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। মুজতবা খামেনির ক্ষেত্রেও এমন ঘটতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি নিহত হওয়ার পর বিশ্বজুড়ে যে প্রশ্নটি সবচেয়ে জোরেশোরে উচ্চারিত হচ্ছে তা হলো—দেশটির পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা কে? বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে ইরানের বয়োবৃদ্ধ সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির ছেলে মুজতবা খামেনি কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হবেন। প্রথা ভেঙে তিনিই হতে পারেন বাবার উত্তরসূরি। অথবা আড়ালে থেকে ক্ষমতার কলকাঠি নাড়বেন।
অধিকাংশ ইরানির কাছেই আলী খামেনির ছেলের বিষয়টি ধোঁয়াটে। তিনি রাষ্ট্রীয় কোনো পদে নেই, কালেভদ্রে উদয় হন, কখনো ভাষণ দেন না। কিন্তু বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ইরানের গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে বিগত কয়েক দশক ধরে ঘনিষ্ঠতা বজায় রেখে চলেছেন মুজতবা খামেনি, যা তাঁকে দেশটির ক্ষমতা বলয়ে শক্তিশালী করে তুলেছে। প্রয়াত প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির শাসনামলে তিনি আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন।
ইব্রাহিম রাইসিকে ইরানের পরবর্তী আয়াতুল্লাহ মনে করা হচ্ছিল। অন্তত কর্ম জীবনজুড়ে তাঁকে সেভাবেই গড়ে তোলা হচ্ছিল। কারণ, বর্তমান আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির বয়স ৮৫ বছর এবং তাঁর স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাইসি মূলত পর্দার অন্তরালে থাকা ক্ষমতাধরদের নেটওয়ার্কের কর্মসূচি বাস্তবায়নকারী ছিলেন।
রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের শাসক শ্রেণি নিয়ে নানা মত সামনে এসেছে। খামেনির উত্তরসূরি কে হবেন এবং যিনি প্রেসিডেন্ট হবেন, তিনি ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি), খামেনির ছেলে এবং তাঁর আশপাশে থাকা ক্ষমতার অংশীদারদের পছন্দের হবেন কি না—ইত্যাদি প্রশ্নও ভেসে বেড়াচ্ছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অনেকেই অনুমান করছেন, মুজতবা খোমেনি বাবার উত্তরসূরি হতে পারে। তবে ইরান বিশ্লেষকেরা বলছেন, এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা কম। বরং মুজতবা খামেনি পাদপ্রদীপের আলোয় না থেকেই ইরানের ক্ষমতাকেন্দ্রে চলে আসতে পারেন।
জার্মান ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের ভিজিটিং ফেলো ও ইরান বিশেষজ্ঞ হামিদরেজা আজিজি বলেন, ‘মুজতবা এবং তাঁর চারপাশের নেটওয়ার্কই দুই দশক ধরে ইরানের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করছে। এই অবস্থায় রাইসির মতো উপযুক্ত বৈশিষ্ট্যের কাউকে খুঁজে বের করাই এখন খোদ (আলী) খামেনির জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ। এর মাধ্যমে খামেনি এমন পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হবেন যেখানে মুজতবা অন্তরালে থেকেই ভূমিকা পালন করবেন, জনসাধারণের মধ্যে কোনো প্রশ্নের উদ্রেক না করেই নিজের ক্ষমতা রক্ষা ও প্রসারিত করতে পারবেন।’
যাই হোক, আগামী জুনের শেষ দিকে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং খামেনির উত্তরসূরি বাছাইয়ের প্রক্রিয়া সামনে রেখে ইরানের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের পুনর্বিন্যাসে মুজতবা খামেনিই কেন্দ্রীয় ভূমিকা রাখবেন বলে ধারণা করছেন অনেকে। এই রাজনৈতিক প্রক্রিয়াই ইরানের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে দেবে। বিশেষ করে আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে ইরানের ব্যাপক অংশগ্রহণ ও সংঘাতে জড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই পুনর্বিন্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ইরানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পাওয়া ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুখবারও মুজতবা খামেনির ঘনিষ্ঠ। হয়তো ভারমুক্ত হতে তিনি আসন্ন নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করবেন। মুখবার যে খামেনির ঘনিষ্ঠ তা বোঝা যায় বিলিয়ন ডলারের সেতাদ প্রকল্পে তাঁকে দায়িত্ব দেওয়ার ঘটনায়। ফলে ক্ষমতার বিবেচনায়ও তাঁর খামেনির আস্থাভাজন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
মুজতবা খামেনির জন্ম ১৯৬৯ সালে, মাশহাদে। ঠিক সেই সময়টাতে তাঁর বাবা আলী খামেনি ইরানে শাহ বিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় চরিত্র হয়ে উঠছিলেন। মুজতবার কৈশোরে শাহের গোপন পুলিশ আলী খামেনিকে একাধিকবার গ্রেপ্তার করেছিল। একবার শাহের পুলিশ মুজতবার সামনেই তাঁর বাবাকে মারধর করে।
১৯৭৯ সালে ইরানে ইসলামি বিপ্লবের পর খামেনির পরিবার তেহরানে চলে যায়। সেখানেই হাইস্কুল এবং অন্যান্য পর্যায়ের শিক্ষা শেষ করেন মুজতবা। এর মাঝে ১৯৮১ সালে আলী খামেনি ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। মুজতবা খামেনি ১৯৮০–৮৮ সালের ইরাক–ইরান যুদ্ধে সেনাবাহিনীর হয়ে লড়াই করেছেন। তিনি যে ব্যাটালিয়নে ছিলেন সেটির অনেকেই ইরানের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে আছেন। তাঁদেরই একজন হোসেইন তায়েব। যাকে ধরা হয় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর ভবিষ্যৎ গোয়েন্দা প্রধান। এ ছাড়া, হোসেইন নেজাত নামে মুজতবার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ে আছেন।
বিগত শতকের ৯০–এর দশকের শেষ দিক থেকে মুজতবা খামেনি আলোচনায় আসতে থাকেন। বিশেষ করে চলতি শতকের প্রথম দশকে ২০০৫ ও ২০০৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাহমুদ আহমেদিনেজাদকে জেতাতে তিনি নির্বাচনে কারসাজি করেছেন বলে সংস্কারপন্থীদের অভিযোগ।
বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর এক উপদেষ্টার মতে, ২০০৯ সালে তৎকালীন আধাসামরিক বাহিনী বাসিজ মিলিশিয়ার কমান্ডার তায়েবের সমর্থনে মুজতবা সংস্কারপন্থীদের ওপর ক্র্যাকডাউন চালিয়েছেন। ২০২২ সালে ইরানের নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যুর পর দেশজুড়ে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় বিক্ষোভকারীরা মুজতবা খামেনির ভূমিকাকে প্রশ্ন করেন।
ইরানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পরবর্তীতে একাধিকবার প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মীর হোসেন মুসাভিও এক সময় মুজতবার বিষয়ে প্রচলিত গুঞ্জন খোলাসা করার জন্য খামেনির প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু আয়াতুল্লাহ সাড়া দেননি।
মুজতবার যেভাবে উত্থান ঘটছিল তাতে এই জল্পনা আরও দৃঢ় হয় যে, তিনি বাবার উত্তরসূরি হওয়ার চেষ্টা করছেন। তবে ইরানের ধর্মীয় তাত্ত্বিক ও খামেনি বিষয়ক গবেষক মেহেদি খালাজি বলেন, মুজতবার আয়াতুল্লাহ হওয়ার সম্ভাবনা কম। খালাজি একজন ধর্মতাত্ত্বিক, তিনি পবিত্র ইরানি শহর কোমে প্রশিক্ষিত এবং সুপ্রিমো আলী খামেনির ওপর একটি বইয়ের লেখক। ২০২৩ সালে বইটি প্রকাশ পায়।
মেহেদি খালাজি বলেন, ‘পরবর্তী আয়াতুল্লাহ হওয়ার লক্ষ্যে মুজতবার যে আকাঙ্ক্ষার কথা বলা হয়, সেটি পুরোপুরি কাল্পনিক। ঐতিহাসিক অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বলতে পারি, খামেনি তাঁর কোনো উত্তরাধিকারী মনোনীত করবেন না। তাঁর ছেলেকে তো নয়ই।’
মুজতবা খামেনির বয়স কম। আর আয়াতুল্লাহ হওয়ার জন্য যেসব বৈশিষ্ট্য থাকাটা আনুষ্ঠানিকভাবে দরকার সেগুলো তাঁর মধ্যে নেই। বিশেষ করে ধর্মীয় বিষয়ে জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা এবং নির্বাহী অভিজ্ঞতা মুজতবা খামেনির নেই। এ ছাড়া আলী খামেনি এবং তাঁর পূর্বসূরি রুহুল্লাহ খোমেনি পরিবারের কারও কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও রাজতন্ত্রকে ‘অনৈসলামিক’ বলে খারিজ করে দিয়েছেন।
তবে ইরানের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের টেনেসি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদ গোলকার বলেন, ‘ক্ষমতার অলিন্দে মুজতবা খামেনি কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা রয়েছে, শাসন ব্যবস্থায় তাঁর নেটওয়ার্কও অতুলনীয়। কিন্তু আয়াতুল্লাহ হিসেবে তাঁর নিয়োগ রাজতন্ত্র ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে খামেনির উত্তরাধিকারকেই বিপন্ন করবে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আলী খামেনি মারা গেলে মুজতবার ক্ষমতা হয়তো হুমকির মুখে পড়বে। তবে শক্তিশালী নেটওয়ার্কের কারণে পর্দার আড়ালে থেকেই বরং আরও ভালো প্রভাব বজায় রাখতে পারবেন। ১৯৮৯ সালে রুহুল্লাহ খোমেনির মৃত্যুর আগে তাঁর ছেলে আহমেদ খোমেনি—যিনি তৎকালে আয়াতুল্লাহর প্রধান স্টাফ ছিলেন—বর্তমান মুজতবা খামেনির চেয়ে বেশি শক্তিশালী ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনায় আলী খামেনি ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আকবর হাশেমি রাফসানজানির কাছাকাছিই ছিলেন আহমেদ। তবে বাবার মৃত্যুর পর বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। মুজতবা খামেনির ক্ষেত্রেও এমন ঘটতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
১৫ ঘণ্টা আগেট্রাম্প ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে পারে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পেছনের সারিতে থাকলেও বাংলাদেশ,
২১ ঘণ্টা আগেড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
২ দিন আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৩ দিন আগে