আব্দুর রহমান
ইউরোপে চরম নিপীড়নের শিকার ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতি ছিল ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর। কিন্তু তিনি ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী ছিলেন। তিনি লিখেছেন, আরব ভূমিতে ইহুদিদের বসতি চাপিয়ে দেওয়া হবে অমানবিক এবং ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে ইহুদিদের পাঠানো হবে মানবতাবিরোধী অপরাধ।
মহাত্মা গান্ধী ১৯৩৮ সালে ২৬ নভেম্বর তৎকালীন আলোচিত সাপ্তাহিক ‘হরিজন’ পত্রিকায় ‘ইহুদি’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন। সেখানে বলেন, ‘যে অর্থে ইংল্যান্ড ইংরেজদের দেশ, ফ্রান্স ফরাসিদের দেশ, ঠিক সেই অর্থেই প্যালেস্টাইন আরবদের দেশ। ইহুদিদের আরবদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় ও অমানবিক।’
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের বিরোধী হলেও মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী সব সময়ই ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। বিশেষ করে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইহুদিদের সঙ্গে যা হয়েছে তা নিয়ে তাঁর মর্মপীড়া ছিল।
হরিজন পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে গান্ধী বলেছিলেন, ‘ইহুদিদের প্রতি আমি সহানুভূতিশীল...খ্রিষ্টানদের কাছে তারা অচ্ছুত। খ্রিষ্টানেরা তাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে তা অনেকটা অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ের মানুষজনের সঙ্গে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের আচরণের সঙ্গে তুলনীয়। উভয় ক্ষেত্রেই অমানবিক আচরণকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ধর্মীয় বিধিনিষেধকে টেনে আনা হয়েছে।’
গান্ধী আরও বলেছিলেন, ইহুদিদের ওপর জার্মানদের যে নিপীড়ন, ইতিহাসে তার সমান্তরাল কোনো ঘটনা নেই। সে সময়ে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে) অ্যাডলফ হিটলারকে ব্রিটেন আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখতে দেশটি যে নীতি গ্রহণ করেছিল, সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। মহাত্মা গান্ধী এও বলেন, মানবতার কারণে ইহুদি জনগণের নিপীড়ন প্রতিরোধে জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলেও সেটি হবে ‘সম্পূর্ণ ন্যায়সংগত’। তবে তিনি যুদ্ধে বিশ্বাসী নন।
তারপরও গান্ধী ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি স্থাপনের বিরোধী ছিলেন। তিনি লেখেন, ‘আরবদের ওপর ইহুদি জনগোষ্ঠীকে চাপিয়ে দেওয়া হবে খুবই অন্যায় ও অমানবিক এবং ইহুদিদের জায়গা পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে গর্বিত আরবদের তাদের জাতীয় আবাসভূমি থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে মানবতাবিরোধী অপরাধ।’
মহাত্মা গান্ধী ফিলিস্তিনে ইহুদি জাতীয়তাবাদী ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করেছিলেন মূলত দুটি মৌলিক কারণে। প্রথমত, ফিলিস্তিন শুরু থেকেই আরব ফিলিস্তিনিদের আবাসস্থল ছিল এবং এখানে ব্রিটেন অস্ত্রের মুখে ইহুদি বসতি স্থাপন করেছিল, যা ছিল ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে গান্ধী লেখেন, ‘একটি ধর্মীয় কাজ (ইহুদিদের ফিলিস্তিনে ফেরত পাঠানো) কখনোই বেয়নেট বা বোমার সহায়তায় করা যায় না, করা উচিতও না।’ গান্ধী বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের সজ্ঞান, স্বেচ্ছা অনুমতির পরই কেবল সেখানে ইহুদিদের পাঠানো উচিত। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ব্রিটিশদের বন্দুক বা বেয়নেট থেকে দূরে থাকতে হবে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বসতির বিরোধিতার দ্বিতীয় মৌলিক কারণটি ছিল এই যে, ইহুদিদের জন্য নির্দিষ্ট আবাসভূমির ধারণা বিশ্বের অন্যত্র তাদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের সঙ্গে মৌলিকভাবে বিরোধী বলে গান্ধী মনে করতেন।
তিনি লেখেন, ‘ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিন ছাড়া যদি আর কোনো আবাসভূমি নাই থাকে, তবে তারা (ইহুদিরা) কি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের যে স্থায়ী আবাস তা চিরতরে ছেড়ে যাওয়ার ধারণাকে কি পছন্দ করবে?’
তিনি বলেছিলেন, ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের আবাসভূমির ধারণা জার্মানি থেকে ইহুদিদের বিতাড়নকেই ন্যায্যতা দেবে।
উল্লেখ্য, উনিশ শতকের আশির দশকে ইউরোপে বসবাসকারী ইহুদিরা ব্যাপক বিদ্বেষ ও নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন। এই নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রগঠনের মতাদর্শের জন্ম নেয়, যার নাম জায়নবাদ। এই জায়নবাদই আজকের ইসরায়েলের আধিপত্যবাদী চরিত্রটি নির্ধারণ করে দিয়েছে।
মূলত জেরুজালেম ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে এটি ছিল এক দীর্ঘ আন্দোলনের সূচনা। এই সূচনা সাংগঠনিক রূপ পেতে সময় লাগেনি। ১৮৯৭ সালে গড়ে ওঠে জায়নবাদী সংঘ। প্রথম জায়নিস্ট কংগ্রেসে ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র পত্তনের লক্ষ্য ধার্য করা হয়।
এই লক্ষ্য অনুযায়ী ১৯০২ সালের মধ্যেই ৩৫ হাজার ইহুদি চলে আসে ফিলিস্তিনে। তাদের হাতেই জন্ম হয় আজকের ইসরায়েল। তখন ইসরায়েলে ছিল মুসলিম নিয়ন্ত্রিত একটি ভূখণ্ড। ১৯১৪ সালের মধ্যেই আরও ৪০ হাজার ইহুদি এ এলাকায় আসে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিরা সমর্থন দেয় জার্মানিকে। কারণ, তারা শত্রু রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছিল।
জায়নবাদীরা চাইছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সমর্থন পেতে। ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ তত দিনে ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোর ইহুদি কমিউনিটির নেতা রথসচাইল্ডকে চিঠি দেন, যা বেলফোর ঘোষণা নামে পরিচিত। ব্রিটিশরা ১৯১৭ সালে এই বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য ‘ইসরায়েল’ রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার করে।
বেলফোর ঘোষণার পর ১৯৩৮ সালে প্রায় আড়াই লাখ ইহুদি চলে আসে ফিলিস্তিনে। ফিলিস্তিনের জনমিতি দ্রুত বদলাতে থাকে; সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতিও তৈরি হতে থাকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যেভাবে লাখ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয়, তাতে ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চাপ বাড়তে থাকে। ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা অঞ্চলটি তখন ফিলিস্তিনি ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়।
এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ১৯৪৮ সালের ১৪ মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল। এর পরদিনই মিসর, জর্ডান, সিরিয়া ও ইরাক মিলে অভিযান চালায় ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা অঞ্চলে। সেটিই ছিল প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। ইহুদিদের কাছে এটি স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। তখনো সদ্যোজাত ইসরায়েলের কোনো ভারী অস্ত্র ছিল না। চেকোস্লোভাকিয়া ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে। ওই বছরের ১১ জুন এক মাসের শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করে জাতিসংঘ।
এরপর আরব বিশ্ব ও ইসরায়েলের মধ্যে আরও একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হয় কিন্তু ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায় সম্ভব হয়নি। সেই থেকে প্রতিবছর হাজারো ফিলিস্তিনি আরব ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে, প্রতিদিনই একটু একটু করে ফিলিস্তিনি ভূমি ইসরায়েলের দখলে চলে গেছে।
ইসরায়েলিদের দখলদারত্ব থেকে বাঁচার তাগিদে বিগত ৭৫ বছর ধরে বলা চলে এক প্রকার একলাই লড়াই চালিয়ে এসেছে ফিলিস্তিনিরা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রচেষ্টা থাকলেও ইসরায়েল সেগুলোকে থোড়াই কেয়ার করেছে। এমনকি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দুই রাষ্ট্র সমাধানও ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। সর্বশেষ গত ৭ অক্টোবর অবরুদ্ধ গাজাকেন্দ্রিক ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস সীমানা অতিক্রম করে ইসরায়েলে হামলা চালায়। সেই হামলায় অন্তত ১৪ শ ইসরায়েলি নিহত হয়। আহত হয় আরও কয়েক হাজার।
হামাসের সেই আকস্মিক হামলার জবাবে ইসরায়েলও পাল্টা আক্রমণ শানানো শুরু করে গাজায়। সেই থেকে বিগত ২৭ দিনে ইসরায়েলি হামলায় গাজা ও পশ্চিম তীরে ৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত প্রায় ৩০ হাজার। নিহতদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিশু। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলকে আক্রমণ বন্ধ করার আহ্বান জানালেও সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ইসরায়েল এখনো আকাশ ও স্থল দুই ক্ষেত্র থেকেই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, হিস্ট্রি ডট কম, এপি ও জিউয়িশ ভার্চুয়াল লাইব্রেরি
ইউরোপে চরম নিপীড়নের শিকার ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতি ছিল ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর। কিন্তু তিনি ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী ছিলেন। তিনি লিখেছেন, আরব ভূমিতে ইহুদিদের বসতি চাপিয়ে দেওয়া হবে অমানবিক এবং ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে ইহুদিদের পাঠানো হবে মানবতাবিরোধী অপরাধ।
মহাত্মা গান্ধী ১৯৩৮ সালে ২৬ নভেম্বর তৎকালীন আলোচিত সাপ্তাহিক ‘হরিজন’ পত্রিকায় ‘ইহুদি’ শিরোনামে একটি নিবন্ধ লিখেন। সেখানে বলেন, ‘যে অর্থে ইংল্যান্ড ইংরেজদের দেশ, ফ্রান্স ফরাসিদের দেশ, ঠিক সেই অর্থেই প্যালেস্টাইন আরবদের দেশ। ইহুদিদের আরবদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায় ও অমানবিক।’
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের বিরোধী হলেও মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধী সব সময়ই ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। বিশেষ করে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ইহুদিদের সঙ্গে যা হয়েছে তা নিয়ে তাঁর মর্মপীড়া ছিল।
হরিজন পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধে গান্ধী বলেছিলেন, ‘ইহুদিদের প্রতি আমি সহানুভূতিশীল...খ্রিষ্টানদের কাছে তারা অচ্ছুত। খ্রিষ্টানেরা তাদের সঙ্গে যে আচরণ করেছে তা অনেকটা অস্পৃশ্য সম্প্রদায়ের মানুষজনের সঙ্গে উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের আচরণের সঙ্গে তুলনীয়। উভয় ক্ষেত্রেই অমানবিক আচরণকে ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য ধর্মীয় বিধিনিষেধকে টেনে আনা হয়েছে।’
গান্ধী আরও বলেছিলেন, ইহুদিদের ওপর জার্মানদের যে নিপীড়ন, ইতিহাসে তার সমান্তরাল কোনো ঘটনা নেই। সে সময়ে (দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে) অ্যাডলফ হিটলারকে ব্রিটেন আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখতে দেশটি যে নীতি গ্রহণ করেছিল, সে বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। মহাত্মা গান্ধী এও বলেন, মানবতার কারণে ইহুদি জনগণের নিপীড়ন প্রতিরোধে জার্মানির সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলেও সেটি হবে ‘সম্পূর্ণ ন্যায়সংগত’। তবে তিনি যুদ্ধে বিশ্বাসী নন।
তারপরও গান্ধী ফিলিস্তিনে ইহুদি বসতি স্থাপনের বিরোধী ছিলেন। তিনি লেখেন, ‘আরবদের ওপর ইহুদি জনগোষ্ঠীকে চাপিয়ে দেওয়া হবে খুবই অন্যায় ও অমানবিক এবং ইহুদিদের জায়গা পুনরুদ্ধার করতে গিয়ে গর্বিত আরবদের তাদের জাতীয় আবাসভূমি থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে মানবতাবিরোধী অপরাধ।’
মহাত্মা গান্ধী ফিলিস্তিনে ইহুদি জাতীয়তাবাদী ইসরায়েল রাষ্ট্র গঠনের বিরোধিতা করেছিলেন মূলত দুটি মৌলিক কারণে। প্রথমত, ফিলিস্তিন শুরু থেকেই আরব ফিলিস্তিনিদের আবাসস্থল ছিল এবং এখানে ব্রিটেন অস্ত্রের মুখে ইহুদি বসতি স্থাপন করেছিল, যা ছিল ফিলিস্তিনিদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।
এ বিষয়ে গান্ধী লেখেন, ‘একটি ধর্মীয় কাজ (ইহুদিদের ফিলিস্তিনে ফেরত পাঠানো) কখনোই বেয়নেট বা বোমার সহায়তায় করা যায় না, করা উচিতও না।’ গান্ধী বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিদের সজ্ঞান, স্বেচ্ছা অনুমতির পরই কেবল সেখানে ইহুদিদের পাঠানো উচিত। সেক্ষেত্রে অবশ্যই ব্রিটিশদের বন্দুক বা বেয়নেট থেকে দূরে থাকতে হবে।
ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি বসতির বিরোধিতার দ্বিতীয় মৌলিক কারণটি ছিল এই যে, ইহুদিদের জন্য নির্দিষ্ট আবাসভূমির ধারণা বিশ্বের অন্যত্র তাদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের সঙ্গে মৌলিকভাবে বিরোধী বলে গান্ধী মনে করতেন।
তিনি লেখেন, ‘ইহুদিদের জন্য ফিলিস্তিন ছাড়া যদি আর কোনো আবাসভূমি নাই থাকে, তবে তারা (ইহুদিরা) কি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাদের যে স্থায়ী আবাস তা চিরতরে ছেড়ে যাওয়ার ধারণাকে কি পছন্দ করবে?’
তিনি বলেছিলেন, ফিলিস্তিনের মাটিতে ইহুদিদের আবাসভূমির ধারণা জার্মানি থেকে ইহুদিদের বিতাড়নকেই ন্যায্যতা দেবে।
উল্লেখ্য, উনিশ শতকের আশির দশকে ইউরোপে বসবাসকারী ইহুদিরা ব্যাপক বিদ্বেষ ও নির্যাতনের শিকার হতে থাকেন। এই নির্যাতনের প্রেক্ষাপটে ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রগঠনের মতাদর্শের জন্ম নেয়, যার নাম জায়নবাদ। এই জায়নবাদই আজকের ইসরায়েলের আধিপত্যবাদী চরিত্রটি নির্ধারণ করে দিয়েছে।
মূলত জেরুজালেম ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে এটি ছিল এক দীর্ঘ আন্দোলনের সূচনা। এই সূচনা সাংগঠনিক রূপ পেতে সময় লাগেনি। ১৮৯৭ সালে গড়ে ওঠে জায়নবাদী সংঘ। প্রথম জায়নিস্ট কংগ্রেসে ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র পত্তনের লক্ষ্য ধার্য করা হয়।
এই লক্ষ্য অনুযায়ী ১৯০২ সালের মধ্যেই ৩৫ হাজার ইহুদি চলে আসে ফিলিস্তিনে। তাদের হাতেই জন্ম হয় আজকের ইসরায়েল। তখন ইসরায়েলে ছিল মুসলিম নিয়ন্ত্রিত একটি ভূখণ্ড। ১৯১৪ সালের মধ্যেই আরও ৪০ হাজার ইহুদি এ এলাকায় আসে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ইহুদিরা সমর্থন দেয় জার্মানিকে। কারণ, তারা শত্রু রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়ছিল।
জায়নবাদীরা চাইছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সমর্থন পেতে। ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লয়েড জর্জ তত দিনে ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছিলেন। ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লর্ড বেলফোর ইহুদি কমিউনিটির নেতা রথসচাইল্ডকে চিঠি দেন, যা বেলফোর ঘোষণা নামে পরিচিত। ব্রিটিশরা ১৯১৭ সালে এই বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জন্য ‘ইসরায়েল’ রাষ্ট্র গঠনের অঙ্গীকার করে।
বেলফোর ঘোষণার পর ১৯৩৮ সালে প্রায় আড়াই লাখ ইহুদি চলে আসে ফিলিস্তিনে। ফিলিস্তিনের জনমিতি দ্রুত বদলাতে থাকে; সঙ্গে সংঘাতের পরিস্থিতিও তৈরি হতে থাকে। এর মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যেভাবে লাখ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয়, তাতে ইহুদিদের জন্য একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চাপ বাড়তে থাকে। ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা অঞ্চলটি তখন ফিলিস্তিনি ও ইহুদিদের মধ্যে ভাগ করার সিদ্ধান্ত হয়।
এই সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই ১৯৪৮ সালের ১৪ মে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসরায়েল। এর পরদিনই মিসর, জর্ডান, সিরিয়া ও ইরাক মিলে অভিযান চালায় ব্রিটিশ ম্যান্ডেটের অধীনে থাকা অঞ্চলে। সেটিই ছিল প্রথম আরব-ইসরায়েল যুদ্ধ। ইহুদিদের কাছে এটি স্বাধীনতার যুদ্ধ হিসেবে পরিচিত। তখনো সদ্যোজাত ইসরায়েলের কোনো ভারী অস্ত্র ছিল না। চেকোস্লোভাকিয়া ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ করে। ওই বছরের ১১ জুন এক মাসের শান্তিচুক্তিতে বাধ্য করে জাতিসংঘ।
এরপর আরব বিশ্ব ও ইসরায়েলের মধ্যে আরও একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হয় কিন্তু ফিলিস্তিনিদের অধিকার আদায় সম্ভব হয়নি। সেই থেকে প্রতিবছর হাজারো ফিলিস্তিনি আরব ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে, প্রতিদিনই একটু একটু করে ফিলিস্তিনি ভূমি ইসরায়েলের দখলে চলে গেছে।
ইসরায়েলিদের দখলদারত্ব থেকে বাঁচার তাগিদে বিগত ৭৫ বছর ধরে বলা চলে এক প্রকার একলাই লড়াই চালিয়ে এসেছে ফিলিস্তিনিরা। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন প্রচেষ্টা থাকলেও ইসরায়েল সেগুলোকে থোড়াই কেয়ার করেছে। এমনকি ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে দুই রাষ্ট্র সমাধানও ইসরায়েল প্রত্যাখ্যান করেছে। সর্বশেষ গত ৭ অক্টোবর অবরুদ্ধ গাজাকেন্দ্রিক ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস সীমানা অতিক্রম করে ইসরায়েলে হামলা চালায়। সেই হামলায় অন্তত ১৪ শ ইসরায়েলি নিহত হয়। আহত হয় আরও কয়েক হাজার।
হামাসের সেই আকস্মিক হামলার জবাবে ইসরায়েলও পাল্টা আক্রমণ শানানো শুরু করে গাজায়। সেই থেকে বিগত ২৭ দিনে ইসরায়েলি হামলায় গাজা ও পশ্চিম তীরে ৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে আরও অন্তত প্রায় ৩০ হাজার। নিহতদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি শিশু। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইসরায়েলকে আক্রমণ বন্ধ করার আহ্বান জানালেও সেই আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ইসরায়েল এখনো আকাশ ও স্থল দুই ক্ষেত্র থেকেই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
তথ্যসূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, হিস্ট্রি ডট কম, এপি ও জিউয়িশ ভার্চুয়াল লাইব্রেরি
গত সেপ্টেম্বরে ভ্লাদিভস্টকের একটি অর্থনৈতিক ফোরামে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। এ বিষয়ে পরে তিনি একটি উপহাসমূলক হাসি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
৭ ঘণ্টা আগেআব্রাহাম অ্যাকর্ডস মূলত একটি চটকদার বিষয়। এতে বাস্তব, স্থায়ী আঞ্চলিক শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছুই এতে ছিল না। যেসব রাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করেছে তারা তা করেছে—কারণ, তারা ইসরায়েলকে ওয়াশিংটনে প্রভাব বিস্তারের পথ হিসেবে দেখে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ইসরায়েলের ওপর মার
৯ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেখেয়ালি, সেটা আগা থেকেই সবার জানা। তবে দেশটির নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এসেও তিনি অসংলগ্ন, অশ্লীল, স্বৈরতান্ত্রিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ থেকে অন্তত একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে একটি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।
৯ দিন আগেএবারের আইএমইএক্স মহড়ায়ও কিছু দেশ আছে যারা আগেরবারও অংশগ্রহণ করেছিল। এসব দেশের নাম আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই মহড়ার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—ইরান ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেকে এমন দেশগুলোর কক্ষপথে নিয়ে যাচ্ছে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত
১০ দিন আগে