গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
কম্বোডিয়ার জাতীয় নির্বাচন হয়েছে গত জুলাই মাসের ২৩ তারিখে। নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে টানা ৩৮ বছর ক্ষমতায় থাকা হুন সেনের দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি)। নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল সিপিপিসহ ১৮টি রাজনৈতিক দল। যদিও কোনো দলেরই চালচুলো নেই। ১২৫টি সংসদীয় আসনে হুন সেনের সিপিপি পেয়েছে ১২০টি আসন। যদিও ১০০ ভাগ আসন পাবেন বলে নির্বাচনের এক দিন আগেই জানিয়েছিলেন হুন সেন। শেষ পর্যন্ত ৫টি আসন ছেড়ে দিতে হয়েছে।
হুন সেন প্রধান বিরোধী দলকে আগেই আইনের মারপ্যাঁচে নিষিদ্ধ করেছিলেন। অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বার্তা দিয়ে আসছিলেন শুরু থেকেই। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাওয়া ছিল একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সেটি অবশ্য তিনি করে দেখিয়েছেন! দেশের জনগণ ও পশ্চিমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি তিনি রেখেছেন!
নিজের ছত্রচ্ছায়ায় জন্ম বা বেড়ে ওঠা ১৭টি দলকে নিয়ে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করেছেন। নির্বাচনে কোথাও সহিংসতা হয়নি। নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো দল প্রশ্ন তোলেনি। বলতে গেলে, কম্বোডিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিয়েছেন তিনি। তাঁর হাতেই শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষিত হয়েছে!
কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি ছাড়াও নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ফানসিনপেক পার্টি, কম্বোডিয়া ইয়ুথ পার্টি, ধার্মাক্রেসি পার্টি, খেমার ইউনাইটেড পার্টি, খেমার অ্যান্টি পোভার্টি পার্টি, খেমার ন্যাশনাল ইউনাইটেড পার্টি, গ্রাসরুট ডেমোক্রেটিক পার্টি, কম্বোডিয়া ইন্ডিজিনিয়াস পিপল ডেমোক্রেসি পার্টি, খেমার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ওমেন ফর ওমেন পার্টি, কম্বোডিয়ান ন্যাশনাল পার্টি, ফারমার্স পার্টি, ডেমোক্রেসি পাওয়ার পার্টি, পিপল পারপাস পার্টি, বিহাইভ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, খেমার কনজারভেটিভ পার্টি এবং একপিপ চিট খেমার পার্টি। এই ১৭টি দলের বেশির ভাগই কার্যালয় সর্বস্ব। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা একটি আসনও পায়নি।
এই দলগুলোর মধ্যে ফানসিনপেক পার্টি পেয়েছে ৫টি আসন। বাকি ১৬টি সংবিধান রক্ষা স্বার্থে ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার দায় থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
নির্বাচন যে অত্যন্ত অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর পরিবেশে হয়েছে তার প্রমাণ হলো নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৯৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর মধ্যে সিপিপি পেয়েছে ৮২ দশমিক ৩ শতাংশ।
বাকিদের জামানত হারানোর দশা হলেও কেউ অখুশি নয়। কম্বোডিয়ান ইয়ুথ পার্টি, যারা ভোট পেয়েছে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। সেই দলের প্রধান নির্বাচন-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘ফলাফলে আমরা সন্তুষ্ট, আমরা কোনো আসনে জিততে ব্যর্থ হলেও সরকার গঠনে সহযোগী ছিলাম।’
একপিপ চিট খেমার পার্টি তো নির্বাচনে উদার গণতন্ত্র এবং বহুত্ববাদের আদর্শের সঙ্গে ন্যায্যতা ও নিরপেক্ষতার অবতার হিসেবে হুন সেনের প্রশংসা করেছেন। যদিও তাঁর দল পেয়েছে শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ ভোট।
গ্রাসরুট ডেমোক্রেটিক পার্টি বিবৃতিতে বলেছিল, ‘আমরা ফলাফলের প্রতি সম্মান জানাই। কম্বোডিয়ার বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করার এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য জনগণের রায়ই একমাত্র পথ।’
সুতরাং, এটা পরিষ্কার যে তথাকথিত এই কিংস পার্টিগুলো হুন সেনের সরকার গঠনে সহযোগী হতে পেরেই বর্তে গেছে!
নির্বাচনের ঠিক আগে দেশটির জনগণের কাছে একমাত্র আস্থাভাজন বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে একপ্রকার নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছিল। নানা কৌশলে দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল ‘ক্যান্ডেল লাইট পার্টিকে’ নির্বাচনে অনুপস্থিত থাকতে বাধ্য করে কিংস পার্টির কাঁধে ভর করে নির্বাচন করেছে এবং নির্বিবাদে সরকার গঠন করেছে।
২০১৮ সালে হুন সেন যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখনো বিরোধী দলকে দমনের একই খেলা মঞ্চায়িত হয়েছিল। সে সময়কার জনপ্রিয় প্রধান বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টিকেও আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে গতবারের মতো এবারও ফাঁকা মাঠে গোল দেন হুন সেন। যদিও বারবার তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
হুন সেনের সরকার কেবল প্রধান বিরোধী দলকে দমন করেই ক্ষান্ত হয়নি, সরকারের সমালোচক সব মুখও বন্ধ করেছে। গত ২৩ জুন কম্বোডিয়ার পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিপিপি দেশটির নির্বাচন আইন সংশোধন করে। যেখানে বলা হয়েছে, কেউ যদি নাগরিকদের ভোট না দিতে প্ররোচিত করে, তবে তা অপরাধমূলক ‘উসকানি’ বলে বিবেচিত হবে। সরকার সতর্ক করে বলেছে, যারা এমনটা করবে তাদের জেল-জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।
হুন সেনের দাবি ছিল, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং যারা মানুষকে ভোটদানে বিরত রাখার ‘অপচেষ্টা’ চালায়, তাদের রুখতেই এই আইন সংশোধন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে মূলত কম্বোডিয়ার বিগত ৩০ বছরের মধ্যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিদেশে থাকা ১৭ জন বিরোধী রাজনীতিবিদকে এ আইনের আওতায় ২০ থেকে ২৫ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করেছেন হুন সেন। কেবল তা-ই নয়, সরকারি নিয়ন্ত্রণের খড়্গ গিয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ওপরও। সরকার বেশ কয়েকটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এবং ডেটাবেইস সংস্থার ওয়েবসাইট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা জনমনে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়াচ্ছে এবং ‘সরকারের মর্যাদাকে’ আক্রমণ করছে।
গত ২৩ জুলাইয়ের নির্বাচনে ২০১৮ সালের নির্বাচনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে—এই আশঙ্কায় অগ্রিম হুমকি দিয়েছিলেন হুন সেন। তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা কী করছেন তা আমার অজানা নয় এবং আপনারা কী বলছেন তা-ও আমার কানে পৌঁছায়।’
একতরফা নির্বাচনে কম্বোডিয়ার ক্ষমতাসীন দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) বিজয়ী হওয়ার পর দেশটিতে সহায়তা স্থগিত করে ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার সঙ্গে’ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিনরা এই নির্বাচন নিয়ে বলেছে, কম্বোডিয়ার সাধারণ নির্বাচন ‘অবাধ বা সুষ্ঠু’ কোনোটাই হয়নি। এমনকি নির্বাচন শুরুর আগ থেকেই বিরোধী দল, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ এবং সর্বোপরি সংবিধানকে অবজ্ঞা করে আসছিল ক্ষমতাসীনেরা। এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানের ধারেকাছেও যায়নি।
সরকারি দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন আয়োজনের এখনো সময় আছে। ক্ষমতাসীনেরা চাইলে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারে। কিন্তু তার জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা বন্ধ করতে হবে; গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। কোনোভাবেই তাদের ওপর হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও এই নির্বাচনের সমালোচনা করেছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ পশ্চিমা অনেক দেশ। তাদের সমর্থন দিয়েছে চীন, রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ।
এমন একতরফা নির্বাচনের পর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা খড়্গ নামলে হুন সেন প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। তবে সে পদে বসান ছেলেকে। তাঁর ছেলে হুন মানেত তখন ছিলেন সেনাপ্রধান।
বিতর্কিত নির্বাচনে একতরফা বিজয়ে হুন সেনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছে দেশটির বেশির ভাগ মানুষ। তাঁকে আর ক্ষমতায় দেখতে চান না তাঁরা। অনেকে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পদত্যাগ করার সময় হুন সেন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, ‘জনগণকে কাছ থেকে দেখতে পদত্যাগ করছি। আমি ক্ষমতায় থাকলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, নম পেন পোস্ট, আনাদলু এজেন্সি, সিএনএন
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
কম্বোডিয়ার জাতীয় নির্বাচন হয়েছে গত জুলাই মাসের ২৩ তারিখে। নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে টানা ৩৮ বছর ক্ষমতায় থাকা হুন সেনের দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি)। নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল সিপিপিসহ ১৮টি রাজনৈতিক দল। যদিও কোনো দলেরই চালচুলো নেই। ১২৫টি সংসদীয় আসনে হুন সেনের সিপিপি পেয়েছে ১২০টি আসন। যদিও ১০০ ভাগ আসন পাবেন বলে নির্বাচনের এক দিন আগেই জানিয়েছিলেন হুন সেন। শেষ পর্যন্ত ৫টি আসন ছেড়ে দিতে হয়েছে।
হুন সেন প্রধান বিরোধী দলকে আগেই আইনের মারপ্যাঁচে নিষিদ্ধ করেছিলেন। অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বার্তা দিয়ে আসছিলেন শুরু থেকেই। যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর চাওয়া ছিল একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। সেটি অবশ্য তিনি করে দেখিয়েছেন! দেশের জনগণ ও পশ্চিমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি তিনি রেখেছেন!
নিজের ছত্রচ্ছায়ায় জন্ম বা বেড়ে ওঠা ১৭টি দলকে নিয়ে অত্যন্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন করেছেন। নির্বাচনে কোথাও সহিংসতা হয়নি। নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে কোনো দল প্রশ্ন তোলেনি। বলতে গেলে, কম্বোডিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন উপহার দিয়েছেন তিনি। তাঁর হাতেই শেষ পর্যন্ত গণতন্ত্র ও সংবিধান রক্ষিত হয়েছে!
কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি ছাড়াও নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল ফানসিনপেক পার্টি, কম্বোডিয়া ইয়ুথ পার্টি, ধার্মাক্রেসি পার্টি, খেমার ইউনাইটেড পার্টি, খেমার অ্যান্টি পোভার্টি পার্টি, খেমার ন্যাশনাল ইউনাইটেড পার্টি, গ্রাসরুট ডেমোক্রেটিক পার্টি, কম্বোডিয়া ইন্ডিজিনিয়াস পিপল ডেমোক্রেসি পার্টি, খেমার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট পার্টি, ওমেন ফর ওমেন পার্টি, কম্বোডিয়ান ন্যাশনাল পার্টি, ফারমার্স পার্টি, ডেমোক্রেসি পাওয়ার পার্টি, পিপল পারপাস পার্টি, বিহাইভ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, খেমার কনজারভেটিভ পার্টি এবং একপিপ চিট খেমার পার্টি। এই ১৭টি দলের বেশির ভাগই কার্যালয় সর্বস্ব। ২০১৮ সালের নির্বাচনে তারা একটি আসনও পায়নি।
এই দলগুলোর মধ্যে ফানসিনপেক পার্টি পেয়েছে ৫টি আসন। বাকি ১৬টি সংবিধান রক্ষা স্বার্থে ও গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার দায় থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।
নির্বাচন যে অত্যন্ত অংশগ্রহণমূলক ও উৎসবমুখর পরিবেশে হয়েছে তার প্রমাণ হলো নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৯৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এর মধ্যে সিপিপি পেয়েছে ৮২ দশমিক ৩ শতাংশ।
বাকিদের জামানত হারানোর দশা হলেও কেউ অখুশি নয়। কম্বোডিয়ান ইয়ুথ পার্টি, যারা ভোট পেয়েছে ১ দশমিক ২৫ শতাংশ। সেই দলের প্রধান নির্বাচন-পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘ফলাফলে আমরা সন্তুষ্ট, আমরা কোনো আসনে জিততে ব্যর্থ হলেও সরকার গঠনে সহযোগী ছিলাম।’
একপিপ চিট খেমার পার্টি তো নির্বাচনে উদার গণতন্ত্র এবং বহুত্ববাদের আদর্শের সঙ্গে ন্যায্যতা ও নিরপেক্ষতার অবতার হিসেবে হুন সেনের প্রশংসা করেছেন। যদিও তাঁর দল পেয়েছে শূন্য দশমিক ৩২ শতাংশ ভোট।
গ্রাসরুট ডেমোক্রেটিক পার্টি বিবৃতিতে বলেছিল, ‘আমরা ফলাফলের প্রতি সম্মান জানাই। কম্বোডিয়ার বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধান করার এবং গণতান্ত্রিক পদ্ধতি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার জন্য জনগণের রায়ই একমাত্র পথ।’
সুতরাং, এটা পরিষ্কার যে তথাকথিত এই কিংস পার্টিগুলো হুন সেনের সরকার গঠনে সহযোগী হতে পেরেই বর্তে গেছে!
নির্বাচনের ঠিক আগে দেশটির জনগণের কাছে একমাত্র আস্থাভাজন বিরোধী দলের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়ে একপ্রকার নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়েছিল। নানা কৌশলে দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান বিরোধী দল ‘ক্যান্ডেল লাইট পার্টিকে’ নির্বাচনে অনুপস্থিত থাকতে বাধ্য করে কিংস পার্টির কাঁধে ভর করে নির্বাচন করেছে এবং নির্বিবাদে সরকার গঠন করেছে।
২০১৮ সালে হুন সেন যখন প্রধানমন্ত্রী হন তখনো বিরোধী দলকে দমনের একই খেলা মঞ্চায়িত হয়েছিল। সে সময়কার জনপ্রিয় প্রধান বিরোধী দল কম্বোডিয়া ন্যাশনাল রেসকিউ পার্টিকেও আদালতের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে গতবারের মতো এবারও ফাঁকা মাঠে গোল দেন হুন সেন। যদিও বারবার তিনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
হুন সেনের সরকার কেবল প্রধান বিরোধী দলকে দমন করেই ক্ষান্ত হয়নি, সরকারের সমালোচক সব মুখও বন্ধ করেছে। গত ২৩ জুন কম্বোডিয়ার পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ সিপিপি দেশটির নির্বাচন আইন সংশোধন করে। যেখানে বলা হয়েছে, কেউ যদি নাগরিকদের ভোট না দিতে প্ররোচিত করে, তবে তা অপরাধমূলক ‘উসকানি’ বলে বিবেচিত হবে। সরকার সতর্ক করে বলেছে, যারা এমনটা করবে তাদের জেল-জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে।
হুন সেনের দাবি ছিল, গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং যারা মানুষকে ভোটদানে বিরত রাখার ‘অপচেষ্টা’ চালায়, তাদের রুখতেই এই আইন সংশোধন। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এর মাধ্যমে মূলত কম্বোডিয়ার বিগত ৩০ বছরের মধ্যে বহুদলীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন নিশ্চিত করা হয়েছে।
বিদেশে থাকা ১৭ জন বিরোধী রাজনীতিবিদকে এ আইনের আওতায় ২০ থেকে ২৫ বছরের জন্য রাজনীতিতে নিষিদ্ধ করেছেন হুন সেন। কেবল তা-ই নয়, সরকারি নিয়ন্ত্রণের খড়্গ গিয়ে পড়েছে সংবাদমাধ্যমের ওপরও। সরকার বেশ কয়েকটি স্বাধীন সংবাদমাধ্যম এবং ডেটাবেইস সংস্থার ওয়েবসাইট ব্লক করার নির্দেশ দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ—তারা জনমনে ‘বিভ্রান্তি’ ছড়াচ্ছে এবং ‘সরকারের মর্যাদাকে’ আক্রমণ করছে।
গত ২৩ জুলাইয়ের নির্বাচনে ২০১৮ সালের নির্বাচনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে—এই আশঙ্কায় অগ্রিম হুমকি দিয়েছিলেন হুন সেন। তিনি বিরোধীদের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনারা কী করছেন তা আমার অজানা নয় এবং আপনারা কী বলছেন তা-ও আমার কানে পৌঁছায়।’
একতরফা নির্বাচনে কম্বোডিয়ার ক্ষমতাসীন দল কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি) বিজয়ী হওয়ার পর দেশটিতে সহায়তা স্থগিত করে ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নস্যাৎ করার সঙ্গে’ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিনরা এই নির্বাচন নিয়ে বলেছে, কম্বোডিয়ার সাধারণ নির্বাচন ‘অবাধ বা সুষ্ঠু’ কোনোটাই হয়নি। এমনকি নির্বাচন শুরুর আগ থেকেই বিরোধী দল, গণমাধ্যম ও নাগরিক সমাজ এবং সর্বোপরি সংবিধানকে অবজ্ঞা করে আসছিল ক্ষমতাসীনেরা। এই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মানের ধারেকাছেও যায়নি।
সরকারি দলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন আয়োজনের এখনো সময় আছে। ক্ষমতাসীনেরা চাইলে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারে। কিন্তু তার জন্য রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক মামলা বন্ধ করতে হবে; গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে। কোনোভাবেই তাদের ওপর হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও এই নির্বাচনের সমালোচনা করেছে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জার্মানিসহ পশ্চিমা অনেক দেশ। তাদের সমর্থন দিয়েছে চীন, রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশ।
এমন একতরফা নির্বাচনের পর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা খড়্গ নামলে হুন সেন প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। তবে সে পদে বসান ছেলেকে। তাঁর ছেলে হুন মানেত তখন ছিলেন সেনাপ্রধান।
বিতর্কিত নির্বাচনে একতরফা বিজয়ে হুন সেনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের আওয়াজ তুলেছে দেশটির বেশির ভাগ মানুষ। তাঁকে আর ক্ষমতায় দেখতে চান না তাঁরা। অনেকে ব্যালট পেপার ছিঁড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পদত্যাগ করার সময় হুন সেন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, ‘জনগণকে কাছ থেকে দেখতে পদত্যাগ করছি। আমি ক্ষমতায় থাকলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।’
তথ্যসূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, নম পেন পোস্ট, আনাদলু এজেন্সি, সিএনএন
লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
১২ দিন আগে