মারুফ ইসলাম
একুশ বছর আগে যে নৃশংস অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিল মার্কিনিরা, তা আজও ভুলত পারেনি। নাইন ইলেভেন—শব্দটি আজও তাড়া করে ফেরে তাদের। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা হয়েছিল। সে হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। তবে আশার কথা, পরবর্তী সময়ে ওই ধরনের ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি আর হয়নি যুক্তরাষ্ট্র। কেন হয়নি, তা নিয়ে আছে নানা ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ।
কারা হামলা করেছিল টুইন টাওয়ারে
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ছিল। সেখানে ছিল সাতটি ভবন, একটি বড় প্লাজা এবং একটি ভূগর্ভস্থ শপিং মল। আর কমপ্লেক্সটির ঠিক মাঝখানে ছিল টুইন টাওয়ার। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসী হামলায় পুরো কমপ্লেক্সটি ধ্বংস হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ওই দিন সকালে সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদার সন্ত্রাসীরা এখানে হামলা করেছিল। এ হামলার জন্য আল-কায়েদার ১৯ জন সন্ত্রাসী চারটি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ ছিনতাই করেছিল। সন্ত্রাসীরা দুটি উড়োজাহাজকে টুইন টাওয়ার কমপ্লেক্সের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ারে বিধ্বস্ত করে। আর তৃতীয় উড়োজাহাজটি ভার্জিনিয়ার পেন্টাগন টাওয়ারে বিধ্বস্ত করে। চতুর্থ উড়োজাহাজটি পশ্চিম পেনসিলভানিয়ার একটি খোলা মাঠে বিধ্বস্ত হয়েছিল।
কেন এই হামলা
বিশ্লেষকদের ধারণা, মার্কিন সামরিক শক্তিকে ধ্বংস করার ক্ষমতা ছিল না সন্ত্রাসীদের। তাই তারা প্রতীকী লক্ষ্যবস্তু হিসেবে প্রধান দুটি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। টুইন টাওয়ার—যা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কেন্দ্রবিন্দু। স্থাপনাটি মার্কিনিদের অর্থনৈতিক শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। অন্যদিকে পেন্টাগন হচ্ছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর। সেটি মার্কিন সামরিক শক্তির প্রতীক। যে উড়োজাহাজটি পেনসিলভানিয়ার মাঠে বিধ্বস্ত হয়েছে, ধারণা করা হয়, সেটি মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলের দিকে যাচ্ছিল।
আল-কায়েদা আশা করেছিল, আমেরিকার শৌর্য-বীর্যের প্রতীক এই তিন স্থাপনাকে গুঁড়িয়ে দিতে পারলে, তারা বিশ্বব্যাপী ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতে পারবে। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে মার্কিন মোড়লিপনারও অবসান হবে। এর ফলে সহজ হবে মুসলিম বিশ্বের আধিপত্য বিস্তার।
আল-কায়েদার পরিণতি
আল-কায়েদার আশা অবশ্য পূরণ হয়নি। নাইন ইলেভেনের ঘটনার পর ‘ওয়ার অন টেররিজম’ নাম দিয়ে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে আফগানিস্তান, ইরাক ও ইয়েমেনসহ বেশ কয়েকটি দেশে অভিযান শুরু করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই আল-কায়েদার শক্ত ঘাঁটি বলে মনে করা হয়। সে সব ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করাই ছিল মূল লক্ষ্য।
ওসামা বিন লাদেনকে মনে করা হয় ৯ / ১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। অবশেষে ২০১১ সালে মার্কিন বাহিনী ওসামাকে খুঁজে পায় পাকিস্তানে। ওই বছরের ১ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামার আস্তানায় অভিযান চালায় মার্কিন সেনারা। চল্লিশ মিনিটের সেই অভিযানে ওসামা বিন লাদেনসহ পাঁচজন মার্কিন সেনাদের হাতে নিহত হন।
পরে ওসামা বিন লাদেনের মরদেহ শনাক্ত করার জন্য হেলিকপ্টারে করে আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে আরব সাগরের একটি অজ্ঞাত স্থানে তাঁকে সমাহিত করে মার্কিন প্রশাসন।
এভাবেই ৯ / ১১ হামলার প্রতিশোধ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এবং এর মাধ্যমে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, এ ধরনের হামলা কঠোর হাতেই দমন করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আর কোনো ৯ / ১১ কেন ঘটেনি
নাইন ইলেভেনের মতো দুর্ধর্ষ হামলার ঘটনা আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি, এটি যেমন সত্য, তেমনি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি, এটিও সত্য। তারা তাদের কৌশল পাল্টেছে এবং ভিন্নভাবে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে চাচ্ছে। গত বছর আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এসেছে তালেবান গোষ্ঠী। এরাও যুক্তরাষ্ট্রের চোখে সন্ত্রাসী সংগঠন। এই সংগঠনের কাছেই গত বছরের মধ্য আগস্টে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে এক প্রকার পালিয়ে আসতে হয়েছে দখলদার মার্কিন সেনাদের।
অন্যদিকে উত্থান ঘটেছে ইসলামিক স্টেট বা আইএস গোষ্ঠীর। ওমর মতিন নামের একজন বন্দুকধারী ২০১৬ সালে ফ্লোরিডার একটি জনাকীর্ণ নাইটক্লাবে ৪৯ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। ওমর মতিন ছিলেন আইএস গোষ্ঠীর সদস্য। সুতরাং এ ঘটনাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
এমন ছোটখাটো হামলার ঘটনা বিশ্বজুড়েই চলমান থাকা সত্ত্বেও ৯ / ১১ এর মতো বড় হামলা কেন ঘটল না? বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ প্রশ্নের আসলে একক কোনো উত্তর নেই। মার্কিন প্রশাসনের বেশ কিছু পদক্ষেপ এ ক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে বলে মনে করা হয়। যেমন দৃশ্যমান দুটি পদক্ষেপ হচ্ছে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর অভিযান। অদৃশ্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি। এটিকে অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ বলেও মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করেছিল মার্কিন সেনারা। এর বিশ বছর পর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের সরে আসতে হলেও আফগান অভিযানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ ইসলামি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অভয়ারণ্য ছিল আফগানিস্তান ও আফগানিস্তান সংলগ্ন পাকিস্তানের কিছু অংশ। ওসামা বিন লাদেন ও তাঁর শেষ উত্তরসূরি আয়মান আল জাওয়াহিরির মতো বড় বড় নেতারা সেখানে লুকিয়ে থেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।
৯ / ১১ এর আরেকজন জন মূল পরিকল্পনাকরী খালেদ শেখ মোহাম্মদও সেখানে ভ্রমণ করতেন বলে মার্কিন বাহিনীর হাতে প্রমাণ ছিল।
মার্কিন গোয়েন্দারা এমনও প্রমাণ পেয়েছিলেন যে আল-কায়েদা ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছিল। তারা সদস্যদের অস্ত্র চালানো ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিত। ৯০ এর দশকে সেখানে ১০ থেকে ২০ হাজার যোদ্ধা প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল। এই সব দুর্গম জায়গায় বসে আল-কায়েদার নেতারা আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, সোমালিয়া, ইয়েমেন এবং অন্যান্য দেশে বিদ্রোহের ইন্ধন জোগাত। আল-কায়েদার আদর্শে উদ্বুদ্ধ যোদ্ধারা রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও আরব বিশ্বের ধর্মত্যাগী (আল-কায়েদার মতে) রাষ্ট্রের শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল।
মার্কিন গোয়েন্দারা এমনও প্রমাণ পেয়েছে যে, মালয়েশিয়া ও স্পেনে ৯ / ১১ এর মতো হামলা চালানোর জন্য আল-কায়েদার নেতারা বৈঠক করেছিলেন।
ফলে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে আল-কায়েদার অভয়ারণ্য ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া ছিল মার্কিন সরকারের প্রধান কর্তব্য। সে কাজে অনেকটাই সফল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের ভূমিকাও প্রশংসার দাবিদার। তারা বিদেশি হামলায় মার্কিন নাগরিকদের মৃত্যুর তদন্তে অধিকতর মনোনিবেশ করেছিল। যদিও তারা ৯ / ১১ এর সময়ে যারা উড়োজাহাজ ছিনতাই করেছিল তাদের সম্পর্কে তেমন তথ্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি।
যা হোক, এফবিআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতেই মার্কিন সেনারা অভিযান চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনসহ আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদিকে হত্যা করতে পেরেছে। মার্কিন সেনাদের অব্যাহত অভিযানের ফলেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছে এবং ৯ / ১১ এর মতো আরেকটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি এখনো ঘটেনি।
ইরাক, মালি, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের কিছু অঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরা এখনো কিছুটা মুক্ত পরিবেশ উপভোগ করছে বটে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এসব অঞ্চলেও শক্ত নজর রাখছে।
সন্দেহ নেই, এসব পদক্ষেপের কারণেই ৯ / ১১ এর মতো আরেক নৃশংস হামলা বিশ্ববাসীকে এখনো দেখতে হয়নি।
তথ্যসূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, নাইন ইলেভেন মেমোরিয়াল ওআরজি, বিবিসি ও ব্রিটানিকা ডট কম
একুশ বছর আগে যে নৃশংস অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছিল মার্কিনিরা, তা আজও ভুলত পারেনি। নাইন ইলেভেন—শব্দটি আজও তাড়া করে ফেরে তাদের। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা হয়েছিল। সে হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্রায় ৩ হাজার মানুষ। তবে আশার কথা, পরবর্তী সময়ে ওই ধরনের ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি আর হয়নি যুক্তরাষ্ট্র। কেন হয়নি, তা নিয়ে আছে নানা ব্যাখ্যা, বিশ্লেষণ।
কারা হামলা করেছিল টুইন টাওয়ারে
যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটনে ১৬ একর জায়গা নিয়ে একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স ছিল। সেখানে ছিল সাতটি ভবন, একটি বড় প্লাজা এবং একটি ভূগর্ভস্থ শপিং মল। আর কমপ্লেক্সটির ঠিক মাঝখানে ছিল টুইন টাওয়ার। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরে সন্ত্রাসী হামলায় পুরো কমপ্লেক্সটি ধ্বংস হয়ে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ওই দিন সকালে সন্ত্রাসী সংগঠন আল-কায়েদার সন্ত্রাসীরা এখানে হামলা করেছিল। এ হামলার জন্য আল-কায়েদার ১৯ জন সন্ত্রাসী চারটি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ ছিনতাই করেছিল। সন্ত্রাসীরা দুটি উড়োজাহাজকে টুইন টাওয়ার কমপ্লেক্সের উত্তর ও দক্ষিণ টাওয়ারে বিধ্বস্ত করে। আর তৃতীয় উড়োজাহাজটি ভার্জিনিয়ার পেন্টাগন টাওয়ারে বিধ্বস্ত করে। চতুর্থ উড়োজাহাজটি পশ্চিম পেনসিলভানিয়ার একটি খোলা মাঠে বিধ্বস্ত হয়েছিল।
কেন এই হামলা
বিশ্লেষকদের ধারণা, মার্কিন সামরিক শক্তিকে ধ্বংস করার ক্ষমতা ছিল না সন্ত্রাসীদের। তাই তারা প্রতীকী লক্ষ্যবস্তু হিসেবে প্রধান দুটি স্থাপনায় হামলা চালিয়েছিল। টুইন টাওয়ার—যা ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের কেন্দ্রবিন্দু। স্থাপনাটি মার্কিনিদের অর্থনৈতিক শক্তি ও সমৃদ্ধির প্রতীক। অন্যদিকে পেন্টাগন হচ্ছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর। সেটি মার্কিন সামরিক শক্তির প্রতীক। যে উড়োজাহাজটি পেনসিলভানিয়ার মাঠে বিধ্বস্ত হয়েছে, ধারণা করা হয়, সেটি মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলের দিকে যাচ্ছিল।
আল-কায়েদা আশা করেছিল, আমেরিকার শৌর্য-বীর্যের প্রতীক এই তিন স্থাপনাকে গুঁড়িয়ে দিতে পারলে, তারা বিশ্বব্যাপী ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতে পারবে। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে মার্কিন মোড়লিপনারও অবসান হবে। এর ফলে সহজ হবে মুসলিম বিশ্বের আধিপত্য বিস্তার।
আল-কায়েদার পরিণতি
আল-কায়েদার আশা অবশ্য পূরণ হয়নি। নাইন ইলেভেনের ঘটনার পর ‘ওয়ার অন টেররিজম’ নাম দিয়ে বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে আফগানিস্তান, ইরাক ও ইয়েমেনসহ বেশ কয়েকটি দেশে অভিযান শুরু করে মার্কিন সামরিক বাহিনী। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেই আল-কায়েদার শক্ত ঘাঁটি বলে মনে করা হয়। সে সব ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেওয়া এবং আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করাই ছিল মূল লক্ষ্য।
ওসামা বিন লাদেনকে মনে করা হয় ৯ / ১১ হামলার মূল পরিকল্পনাকারী। অবশেষে ২০১১ সালে মার্কিন বাহিনী ওসামাকে খুঁজে পায় পাকিস্তানে। ওই বছরের ১ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামার আস্তানায় অভিযান চালায় মার্কিন সেনারা। চল্লিশ মিনিটের সেই অভিযানে ওসামা বিন লাদেনসহ পাঁচজন মার্কিন সেনাদের হাতে নিহত হন।
পরে ওসামা বিন লাদেনের মরদেহ শনাক্ত করার জন্য হেলিকপ্টারে করে আফগানিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর ২৪ ঘণ্টারও কম সময়ের মধ্যে আরব সাগরের একটি অজ্ঞাত স্থানে তাঁকে সমাহিত করে মার্কিন প্রশাসন।
এভাবেই ৯ / ১১ হামলার প্রতিশোধ নেয় যুক্তরাষ্ট্র। এবং এর মাধ্যমে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেয় যে, এ ধরনের হামলা কঠোর হাতেই দমন করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আর কোনো ৯ / ১১ কেন ঘটেনি
নাইন ইলেভেনের মতো দুর্ধর্ষ হামলার ঘটনা আর দ্বিতীয়টি ঘটেনি, এটি যেমন সত্য, তেমনি জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়নি, এটিও সত্য। তারা তাদের কৌশল পাল্টেছে এবং ভিন্নভাবে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দিতে চাচ্ছে। গত বছর আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এসেছে তালেবান গোষ্ঠী। এরাও যুক্তরাষ্ট্রের চোখে সন্ত্রাসী সংগঠন। এই সংগঠনের কাছেই গত বছরের মধ্য আগস্টে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে এক প্রকার পালিয়ে আসতে হয়েছে দখলদার মার্কিন সেনাদের।
অন্যদিকে উত্থান ঘটেছে ইসলামিক স্টেট বা আইএস গোষ্ঠীর। ওমর মতিন নামের একজন বন্দুকধারী ২০১৬ সালে ফ্লোরিডার একটি জনাকীর্ণ নাইটক্লাবে ৪৯ জনকে গুলি করে হত্যা করেছিলেন। ওমর মতিন ছিলেন আইএস গোষ্ঠীর সদস্য। সুতরাং এ ঘটনাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।
এমন ছোটখাটো হামলার ঘটনা বিশ্বজুড়েই চলমান থাকা সত্ত্বেও ৯ / ১১ এর মতো বড় হামলা কেন ঘটল না? বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ প্রশ্নের আসলে একক কোনো উত্তর নেই। মার্কিন প্রশাসনের বেশ কিছু পদক্ষেপ এ ক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে বলে মনে করা হয়। যেমন দৃশ্যমান দুটি পদক্ষেপ হচ্ছে ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর অভিযান। অদৃশ্য পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি। এটিকে অন্যতম প্রধান পদক্ষেপ বলেও মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
২০০১ সালের অক্টোবরে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করেছিল মার্কিন সেনারা। এর বিশ বছর পর আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনাদের সরে আসতে হলেও আফগান অভিযানকে খাটো করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ ইসলামি সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর অভয়ারণ্য ছিল আফগানিস্তান ও আফগানিস্তান সংলগ্ন পাকিস্তানের কিছু অংশ। ওসামা বিন লাদেন ও তাঁর শেষ উত্তরসূরি আয়মান আল জাওয়াহিরির মতো বড় বড় নেতারা সেখানে লুকিয়ে থেকে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।
৯ / ১১ এর আরেকজন জন মূল পরিকল্পনাকরী খালেদ শেখ মোহাম্মদও সেখানে ভ্রমণ করতেন বলে মার্কিন বাহিনীর হাতে প্রমাণ ছিল।
মার্কিন গোয়েন্দারা এমনও প্রমাণ পেয়েছিলেন যে আল-কায়েদা ও অন্যান্য সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের দুর্গম এলাকায় প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছিল। তারা সদস্যদের অস্ত্র চালানো ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিত। ৯০ এর দশকে সেখানে ১০ থেকে ২০ হাজার যোদ্ধা প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছিল। এই সব দুর্গম জায়গায় বসে আল-কায়েদার নেতারা আলজেরিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, সোমালিয়া, ইয়েমেন এবং অন্যান্য দেশে বিদ্রোহের ইন্ধন জোগাত। আল-কায়েদার আদর্শে উদ্বুদ্ধ যোদ্ধারা রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও আরব বিশ্বের ধর্মত্যাগী (আল-কায়েদার মতে) রাষ্ট্রের শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল।
মার্কিন গোয়েন্দারা এমনও প্রমাণ পেয়েছে যে, মালয়েশিয়া ও স্পেনে ৯ / ১১ এর মতো হামলা চালানোর জন্য আল-কায়েদার নেতারা বৈঠক করেছিলেন।
ফলে আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে আল-কায়েদার অভয়ারণ্য ছিন্নভিন্ন করে দেওয়া ছিল মার্কিন সরকারের প্রধান কর্তব্য। সে কাজে অনেকটাই সফল হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের ভূমিকাও প্রশংসার দাবিদার। তারা বিদেশি হামলায় মার্কিন নাগরিকদের মৃত্যুর তদন্তে অধিকতর মনোনিবেশ করেছিল। যদিও তারা ৯ / ১১ এর সময়ে যারা উড়োজাহাজ ছিনতাই করেছিল তাদের সম্পর্কে তেমন তথ্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি।
যা হোক, এফবিআইয়ের তথ্যের ভিত্তিতেই মার্কিন সেনারা অভিযান চালিয়ে ওসামা বিন লাদেনসহ আইএস প্রধান আবু বকর আল বাগদাদিকে হত্যা করতে পেরেছে। মার্কিন সেনাদের অব্যাহত অভিযানের ফলেই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সদস্য লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হয়েছে এবং ৯ / ১১ এর মতো আরেকটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি এখনো ঘটেনি।
ইরাক, মালি, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের কিছু অঞ্চলে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীরা এখনো কিছুটা মুক্ত পরিবেশ উপভোগ করছে বটে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এসব অঞ্চলেও শক্ত নজর রাখছে।
সন্দেহ নেই, এসব পদক্ষেপের কারণেই ৯ / ১১ এর মতো আরেক নৃশংস হামলা বিশ্ববাসীকে এখনো দেখতে হয়নি।
তথ্যসূত্র: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, নাইন ইলেভেন মেমোরিয়াল ওআরজি, বিবিসি ও ব্রিটানিকা ডট কম
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
৫ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগে