জাহাঙ্গীর আলম
আজকাল সারা বিশ্বে লাখ লাখ সমরূপ কোম্পানি লাখ লাখ অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদন করছে। সেখানে যুক্ত হয়েছে একই চেহারার ই-কমার্স ও ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম। তারাও একই ধরনের দাম অফার করে। সব মিলিয়ে ভোক্তাদের ভিরমি খাওয়ার মতো অবস্থা। তার ওপর বোর্ডরুম থেকে করপোরেট অফিসের কিউবিকল ধাঁচের ক্ষুদ্র ঘুপচি ঘর পর্যন্ত অভিন্ন ব্যবস্থাপনা এবং অভিন্ন করপোরেট আচরণ রীতিমতো ক্লান্ত-বিরক্ত করে ফেলছে মানুষকে।
শুধু তাই নয়, অভিন্ন ব্র্যান্ড, অভিন্ন নাম এবং অভিন্ন ব্যবসায়িক পরিচয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর পরস্পরের মধ্যে এতটাই মিল যে আপনার মনে হবে, সবই তো দেখে ফেলেছেন! এদের মৌলিকত্ব, সারবস্তু, সাহস এবং নেতৃত্বের গুরুতর অভাব রয়েছে বলেও মনে হতে পারে।
প্রখ্যাত করপোরেট ফিলোসফার নাসিম জাভেদ ২০০৫ সালে তাঁর এক নিবন্ধে চমৎকার একটা ক্রম দেখিয়েছিলেন। তাঁর মতে, আমরা কৌতূহলের যুগ থেকে বেরিয়ে অভাবের যুগে প্রবেশ করেছি। আর এখন অবস্থান করছি প্রাচুর্যের যুগে। এই যে বাজার অর্থনীতি ও ভোগের দুনিয়ায় চারদিকে ক্লান্তিকর বৈচিত্র্যহীনতা, তাতে উদ্ভাবনের কী হাল? প্রাচুর্যের এই যুগ কি আমাদের ডুবিয়ে দেবে? এসব প্রশ্নই এখন তুলছেন অনেকে।
কৌতূহল, অভাব ও প্রাচুর্যের এই কালক্রমের ধারণাটি খুব পুরোনো না হলেও এরই মধ্যে এটি ক্লিশে হয়ে যেতে শুরু করেছে। ‘প্রাচুর্যের যুগ’ ধারণাটি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতারা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন। তাঁরা নিজস্ব স্বার্থের নিরাপদ জগতের একটি ছাতা হিসেবে এই ধারণাকে ব্যবহার করছেন। প্রকৃতপক্ষে ‘প্রাচুর্যের যুগ’ এখন ‘পতনের যুগ’-এর অগ্রদূত হয়ে উঠেছে, যখন আমরা একটি নতুন ‘সহনশীলতার যুগ’-এর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছি।
বোঝার সুবিধার জন্য এই তিন যুগের ধারণাটি একটু বিস্তৃত করা যাক। কৌতূহলের যুগে মানবজাতি টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু বাছাই করতে তার ইন্দ্রিয় বিশেষ করে স্পর্শ, অনুভূতি এবং ঘ্রাণের মতো প্রাথমিক ইন্দ্রিয়গুলোর সঙ্গে লড়াই করেছিল। এই বেঁচে থাকার কৌশলগুলোর মধ্যেই সেরা উদ্ভাবনগুলোর শিকড় নিহিত। এটি আধুনিককালের জন্য প্রযোজ্য। বিদ্যুৎ, রেলপথ, সিনেমা এবং উড়োজাহাজ হলো এসবের কয়েকটি নগণ্য উদাহরণ। মানবজাতি এই কালেই সবচেয়ে বেশি উদ্ভাবন করেছে এবং জীবন বদলে দেওয়া যুগান্তকারী সব সমাধান আবিষ্কার করেছে, যার সুফল আমরা আজও পাচ্ছি।
অভাবের যুগ: মানবজাতি তত দিনে উন্নয়নের স্বাদ পেয়ে গেছে এবং প্রায় সবকিছুই একটি ন্যায্য এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। বস্তুর প্রাপ্যতা এবং ব্যবহার সামাজিক মর্যাদার (শ্রেণি) পরিমাপক হয়ে উঠেছে। মানবজাতি চিন্তার অভিগম্যতা এবং বাণিজ্যিকীকরণ ছড়িয়ে দিতে অনুলিপি, প্রতিলিপি এবং স্বয়ংক্রিয়তার কৌশল আবিষ্কার করেছে। সস্তায় সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোই সাধারণ নিয়ম হয়ে উঠেছে। ওই সময়ই মানুষের মন একটি নিশ্চিন্তির এলাকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বস্তুনিচয় সম্পর্কে ‘নির্বিকার’ থাকা এবং ‘উপবন’-এ অলস সময় যাপনই মানুষের মূল মন্ত্র হয়ে উঠেছে।
প্রাচুর্যের যুগ: গত কয়েক দশকে মানবজাতি কৌতূহলের ব্যাগ্রতা হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। বরং একটি খুব অলস ভঙ্গিতে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে চলেছে বলে মনে হয়। উদ্ভাবনের সেই বন্য উদ্দামতার শিকড়ের প্রতি ক্রমেই উদাসীন হয়ে পড়ছে। আর এখন বিগত আবিষ্কারগুলোর কল্যাণে আরাম-আয়েশ ও নিশ্চয়তার মধ্যে মানুষ নিজেকে ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে।
এটা সত্য যে, আমরা উদ্ভাবনের একটা দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ভাসছি। একটিমাত্র স্মার্টফোন প্ল্যাটফর্মে লাখ লাখ অ্যাপ ব্যবহারের অপার সুযোগ পাচ্ছি। কম্পিউটার প্ল্যাটফর্মের জন্য দৈনিক যোগ হচ্ছে আরও হাজার হাজার নতুন সফটওয়্যার। অবশ্য এসবই সেই কৌতূহলের যুগের সময়কার প্রাথমিক উদ্ভাবনেরই সম্প্রসারণ।
তাহলে কি বলা যেতে পারে যে, আমরা এক অবক্ষয়ের যুগ অতিক্রম করছি? এটা বলা নিরাপদ যে, আজ আমরা অযোগ্যতার (অকর্মন্যতাও বলা যায় হয়তো) নতুন যুগে আছি। এটি অন্তত অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্নে সত্য, যেখানে প্রলম্বিত একঘেঁয়েমিকে ‘উদ্ভাবনী কর্মক্ষমতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এমন বিভ্রান্তি চারদিকে, অবশ্য দূরবর্তী বজ্রপাতের মতো গুড়গুড় আওয়াজ ক্রমেই কানে বাজতে শুরু করেছে। অসন্তুষ্ট নাগরিকদের ক্ষীণ আওয়াজ যে রাজনৈতিক অঙ্গনকে ক্রমেই পুঁতিগন্ধময় করে তুলছে, তা তো বিশ্বজুড়েই ক্রমশ প্রকাশ্য।
প্রাচুর্যের এই যুগের ধরন চিনতে পাঁচটি নতুন লক্ষণ অনুসরণ করা যেতে পারে—
অবক্ষয়: যখন মৌলিকতা মরে যায়, অশ্লীলতা এবং অমর্যাদার স্তরগুলো এরই মধ্যে মৃত ধারণাগুলোর স্থান দখল করে।
অযোগ্যতা: যখন পুরোনো চিন্তা একেবারেই অকেজো হয়ে যায়, কিন্তু ঐতিহ্যের নামে তারা টিকে থাকে।
প্রশাসন: যখন জনগণ চুপচাপ নির্বিকার অন্ধভাবে শাসিত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করে।
অনুরণন: যখন কোটি কোটি মানুষের ডাক শোনার কেউ থাকে না বা সচেতনভাবে উপেক্ষা করা হয়। নীরব নির্বিকার সংখ্যাগরিষ্ঠরা যখন শাসক পরিবর্তনের নিয়ামক হয়ে ওঠে।
সহনশীলতা বা সহিষ্ণুতা: যখন প্রগতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করে গোঁড়ামি এবং সেই সূত্রে সহনশীলতার একটি নতুন যুগের উদয় হতে শুরু করে।
এই নতুন সহিষ্ণুতার যুগটি বুঝতে হলে আমাদের আগে বুঝতে হবে কীভাবে ১০০ বছরের বিবর্তনে এটি আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে। ১৯০০ সালে প্রিন্ট সোসাইটির কালে মুদ্রিত শব্দই ছিল শক্তি, সাক্ষরতা ছিল একটা আশীর্বাদ বা অনুগ্রহ এবং শুধু সমাজের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তরাই জ্ঞানের জগতে প্রবেশের অধিকার পেতেন। অনুরূপ দৃশ্য কিন্তু ১২০ বছর পরও মঞ্চায়িত হচ্ছে। আজও এটি ঘটে চলেছে। হাজার হাজার বিকল্প উন্মুক্ত আছে শুধু নতুন বৈশ্বিক যুগের সাক্ষরদের জন্য। আর বাকিরা বিস্মিত উৎসুক দর্শক হিসেবে হুড়োহুড়ি করছে। আজ ব্লক-চেইন (সুরক্ষিত নথি সংরক্ষণ ব্যবস্থা) এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, টেকনোক্যালামিটি (ডিজিটাল পরিসরে সুনামি বলা যায়, যা তথ্যের দুনিয়াকে নাড়িয়ে দিতে পারে) বিষয়ে দখল রাখে যারা, তারাই সেই ভয়ংকর স্বপ্নবাজ, যারা প্রগতির উপকারভোগী, যারা আমাদের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
তথাকথিত রেডিও সোসাইটি প্রভাব ফেলতে পেরেছিল প্রিন্ট বিপ্লবের অন্তত ২৫ বছর পর। ইথারে বিনা মূল্যে তথ্যের বিস্তার, ঘরে বসে গান শোনা বা রেডিওতে গান চালিয়ে স্কুলের অ্যাসেম্বলি লাইনের মেঝেতে নাচার মতো সুযোগ করে দেয় এই রেডিও। রেডিও-ব্যক্তিত্বরা তাদের মতামত এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে যে কণ্ঠস্বর হয়ে উঠছিলেন, সেটি ছিল লক্ষণীয়। ধাপে ধাপে এটি এগিয়েছে। এই হিসাবে পশ্চিমা সমাজকে প্রধান পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। টিভি সোসাইটি লাইভ অ্যাকশন ড্রামা নিয়ে আসে, শুরু হয় রঙিন ভোগবাদ। টেলিকম সোসাইটি দূরত্ব সংক্ষিপ্ত করে আনে। কম্পিউটার সোসাইটি দৈনন্দিন ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো আরও ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করে ফেলে, সঙ্গে আনে নির্ভুলতার ধারণা। সাইবার সোসাইটি বিশ্বকে ছোট্ট ডেস্কে এনে হাজির করে এবং সেই সঙ্গে কাজ ও জীবনধারার মধ্যে এক অভূতপূর্ব সমন্বয় ঘটায়। অতি সম্প্রতি আমরা ক্লিক সোসাইটি ছাড়িয়ে গেছি, যা বিশ্বকে আমাদের পকেটে নিয়ে এসেছিল এবং প্রথাগত কাজের মডেলকে দারুণভাবে ব্যাহত করেছে।
বর্তমানে আমরা নতুন সার্বজনীন ‘প্লাগড সোসাইটি’-তে আছি। আমরা এখন বেঁচে থাকার কৌশল হিসেবে আমাদের রক্তপ্রবাহ এবং মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে একটি ‘নলেজ প্লাগ’-এর সঙ্গে গভীরভাবে নমনীয় তারে যুক্ত থাকার জন্য জৈবিকভাবে আকাঙ্ক্ষা করছি। প্রায়োগিক জ্ঞান, মানবজাতি সম্পর্কে বাস্তব উপলব্ধি এবং মানবতাবাদী প্রয়োজনের দিক থেকে আজ আমরা সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে অগ্রসর। তৃণমূল পর্যন্ত সমৃদ্ধির ভাবনা এবং টিকে থাকার মধ্যে একটি বোঝাপড়া রয়েছে, যার জন্য পূর্ববর্তী সমাজ-সভ্যতাগুলো খুব বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা এবং ধ্বংসাত্মক মানসিকতার উপাদানগুলো শান্ত সহযোগিতা এবং তৃণমূলের ধারণাগুলোর সমন্বয় দিয়ে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। পৃথিবী অবশেষে একটি গ্রামে (গ্লোবাল ভিলেজ) পরিণত হচ্ছে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—প্রথম চারটি সমাজ বিকশিত হতে প্রায় এক শতাব্দী সময় নিয়েছে, যেখানে শেষ তিনটি বিকশিত হতে সময় নিয়েছে মাত্র এক শতাব্দীর এক চতুর্থাংশ। অনুমিতভাবেই ২০২০ সালের মধ্যে আমরা একেবারে আনকোরা এক সমাজে অবতরণ করেছি। দ্বিতীয়ত, এই পর্যায়ের প্রভাবটি হবে শেষ তিনটি সমাজের চরম সমন্বয়। আমাদের নতুন সমাজ আমাদের দৈনন্দিন কাজের মডেলকে চ্যালেঞ্জ করে এমন একটি রূপান্তর হাজির করছে, যা আমরা গত ২০০ বছরে অনুভব করিনি। যা একটি রেজিমেন্টেড (কাঠামোবদ্ধ) কর্ম-দিন থেকে বেরিয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন এক কর্মপ্রবাহ এবং জীবনযাপনে অভ্যাসের নাটকীয় পরিবর্তন এবং বড় ধরনের মানসিক অভিযোজন ঘটাবে।
এই সত্যটা মেনে নিতেই হয় যে, অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের ধারণার মাত্রাতিরিক্ত প্রতিলিপির বন্যা বইছে সবখানে। সেই সঙ্গে আমরা এমন এক গড়পড়তা অনুভূতির মধ্যে নিমজ্জিত করছে যে, প্রাচুর্যের যুগ একটা অর্থহীন ধারণা বলে প্রতিভাত হচ্ছে। ঘুরে-ফিরে একই খবর। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্নরা উদ্যোক্তা ব্যবসা এবং বৈশ্বিক যুগের বাণিজ্যিক বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয়হীন। জাতীয় উদ্ভাবন এজেন্ডাগুলো শুধু ঠোঁট মেলানো বুলি এবং সময়োপযোগী ফটোসেশন করার জন্য তৈরি করা হয়। কঠিন বাস্তবতাগুলো ভুয়া খবরের নিচে চাপা পড়ে। এটি বার্ষিক গালা অ্যাওয়ার্ডের রাত নয়, একই সার্কাসের ক্রমাগত পুনরাবৃত্তিসহ সারবস্তুর অনুপস্থিতি, যা প্রাচুর্যের শুধু বিভ্রম তৈরি করে। এটা আসলে বাস্তব সত্যের অনুপস্থিতি।
অন্যদিকে, মানবজাতি, প্রকৃতির আহ্বানে অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে এবং সহজাতভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য সুরক্ষার ধারণার সঙ্গে কঠোরভাবে সম্পর্কিত। তারা নিজেদের বোধ বুদ্ধির বিকাশে এবং বেঁচে থাকার জন্য ক্রমাগত সমন্বয় করে চলে। প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ এই ধারণার সাক্ষী ও জীবন্ত প্রমাণ। অন্যথায় আমরা এখনো বর্গাকার চাকার দখল নিয়ে গুহার মধ্যে লড়াইরত থাকতাম।
গত শতাব্দীতে পতনোন্মুখ আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যর্থতা মানুষের মস্তিষ্কে প্রচুর ছুরি-কাঁচি চালিয়েছে এবং এর মাধ্যমে তাকে আরও পরিপক্ব করে তুলেছে। দীর্ঘ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এই অভিজ্ঞতায় আকার পাওয়া মানুষের মস্তিষ্ক আসন্ন বেঁচে থাকার কৌশল হিসেবে সহনশীলতাকে ধারণের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। এই সত্য মুক্তমনা দেশগুলোতে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। সেখানে সমস্ত বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ এবং বিশ্বাসের লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন মিশে যায় এবং তারা একটা প্রগতিশীল জীবন উপভোগ করে। যে জাতিগুলো এই সহনশীলতাকে ভয় পায় এবং তাদের নাগরিকেরা ভুয়া খবরে মগজ ধোলাই করতে থাকে, তাদের জন্য সহনশীলতার সৌন্দর্য আবিষ্কার করা কঠিনই হবে। নতুন বৈশ্বিক যুগের দুনিয়া মাত্র কয়েক দশক আগের চেয়েও অনেক বেশি সহনশীল এবং বৈচিত্র্যময়। বিশ্বব্যাপী বন্ধুত্বপূর্ণ, খোলামেলাভাবে যুক্ত এবং উন্মুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা রাখা দেশগুলোর জন্য বিষয়টি স্পষ্টভাবেই দৃশ্যমান।
তবুও, এই বাস্তবতা এখনো বিশ্বের দূরতম কোণে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ। গ্রহণ করার মানসিকতা এবং সহনশীলতার দিকে অগ্রগতি একটি দীর্ঘ যাত্রা। তারপরও আজ কোটি কোটি মানুষ অনেক বেশি সচেতন, আলোকিত এবং সহনশীল হয়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার সময় এটি। দেখাটা জরুরি, সহনশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী সংযোগের নতুন বিশ্ব কীভাবে বিকশিত হচ্ছে, সেটির সাক্ষী হওয়ার আগ্রহ থাকতে হবে। মানবজাতির ক্ষমতা অনেক। প্রতিটি অন্ধকার যুগ থেকে এই প্রজাতি আগের চেয়ে বেশি উজ্জ্বলতা নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। আমরা মানুষের নতুন উপলব্ধি এবং মানসিক আলোকায়নের যুগে প্রবেশ করছি।
আজকাল সারা বিশ্বে লাখ লাখ সমরূপ কোম্পানি লাখ লাখ অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা উৎপাদন করছে। সেখানে যুক্ত হয়েছে একই চেহারার ই-কমার্স ও ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম। তারাও একই ধরনের দাম অফার করে। সব মিলিয়ে ভোক্তাদের ভিরমি খাওয়ার মতো অবস্থা। তার ওপর বোর্ডরুম থেকে করপোরেট অফিসের কিউবিকল ধাঁচের ক্ষুদ্র ঘুপচি ঘর পর্যন্ত অভিন্ন ব্যবস্থাপনা এবং অভিন্ন করপোরেট আচরণ রীতিমতো ক্লান্ত-বিরক্ত করে ফেলছে মানুষকে।
শুধু তাই নয়, অভিন্ন ব্র্যান্ড, অভিন্ন নাম এবং অভিন্ন ব্যবসায়িক পরিচয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর পরস্পরের মধ্যে এতটাই মিল যে আপনার মনে হবে, সবই তো দেখে ফেলেছেন! এদের মৌলিকত্ব, সারবস্তু, সাহস এবং নেতৃত্বের গুরুতর অভাব রয়েছে বলেও মনে হতে পারে।
প্রখ্যাত করপোরেট ফিলোসফার নাসিম জাভেদ ২০০৫ সালে তাঁর এক নিবন্ধে চমৎকার একটা ক্রম দেখিয়েছিলেন। তাঁর মতে, আমরা কৌতূহলের যুগ থেকে বেরিয়ে অভাবের যুগে প্রবেশ করেছি। আর এখন অবস্থান করছি প্রাচুর্যের যুগে। এই যে বাজার অর্থনীতি ও ভোগের দুনিয়ায় চারদিকে ক্লান্তিকর বৈচিত্র্যহীনতা, তাতে উদ্ভাবনের কী হাল? প্রাচুর্যের এই যুগ কি আমাদের ডুবিয়ে দেবে? এসব প্রশ্নই এখন তুলছেন অনেকে।
কৌতূহল, অভাব ও প্রাচুর্যের এই কালক্রমের ধারণাটি খুব পুরোনো না হলেও এরই মধ্যে এটি ক্লিশে হয়ে যেতে শুরু করেছে। ‘প্রাচুর্যের যুগ’ ধারণাটি রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক নেতারা ব্যাপকভাবে ব্যবহার করেন। তাঁরা নিজস্ব স্বার্থের নিরাপদ জগতের একটি ছাতা হিসেবে এই ধারণাকে ব্যবহার করছেন। প্রকৃতপক্ষে ‘প্রাচুর্যের যুগ’ এখন ‘পতনের যুগ’-এর অগ্রদূত হয়ে উঠেছে, যখন আমরা একটি নতুন ‘সহনশীলতার যুগ’-এর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করেছি।
বোঝার সুবিধার জন্য এই তিন যুগের ধারণাটি একটু বিস্তৃত করা যাক। কৌতূহলের যুগে মানবজাতি টিকে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় বস্তু বাছাই করতে তার ইন্দ্রিয় বিশেষ করে স্পর্শ, অনুভূতি এবং ঘ্রাণের মতো প্রাথমিক ইন্দ্রিয়গুলোর সঙ্গে লড়াই করেছিল। এই বেঁচে থাকার কৌশলগুলোর মধ্যেই সেরা উদ্ভাবনগুলোর শিকড় নিহিত। এটি আধুনিককালের জন্য প্রযোজ্য। বিদ্যুৎ, রেলপথ, সিনেমা এবং উড়োজাহাজ হলো এসবের কয়েকটি নগণ্য উদাহরণ। মানবজাতি এই কালেই সবচেয়ে বেশি উদ্ভাবন করেছে এবং জীবন বদলে দেওয়া যুগান্তকারী সব সমাধান আবিষ্কার করেছে, যার সুফল আমরা আজও পাচ্ছি।
অভাবের যুগ: মানবজাতি তত দিনে উন্নয়নের স্বাদ পেয়ে গেছে এবং প্রায় সবকিছুই একটি ন্যায্য এবং তাৎক্ষণিক প্রয়োজন হয়ে উঠেছে। বস্তুর প্রাপ্যতা এবং ব্যবহার সামাজিক মর্যাদার (শ্রেণি) পরিমাপক হয়ে উঠেছে। মানবজাতি চিন্তার অভিগম্যতা এবং বাণিজ্যিকীকরণ ছড়িয়ে দিতে অনুলিপি, প্রতিলিপি এবং স্বয়ংক্রিয়তার কৌশল আবিষ্কার করেছে। সস্তায় সহজপ্রাপ্যতা নিশ্চিতের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটানোই সাধারণ নিয়ম হয়ে উঠেছে। ওই সময়ই মানুষের মন একটি নিশ্চিন্তির এলাকায় প্রবেশ করতে শুরু করেছে। বস্তুনিচয় সম্পর্কে ‘নির্বিকার’ থাকা এবং ‘উপবন’-এ অলস সময় যাপনই মানুষের মূল মন্ত্র হয়ে উঠেছে।
প্রাচুর্যের যুগ: গত কয়েক দশকে মানবজাতি কৌতূহলের ব্যাগ্রতা হারিয়ে ফেলতে শুরু করেছে। বরং একটি খুব অলস ভঙ্গিতে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে চলেছে বলে মনে হয়। উদ্ভাবনের সেই বন্য উদ্দামতার শিকড়ের প্রতি ক্রমেই উদাসীন হয়ে পড়ছে। আর এখন বিগত আবিষ্কারগুলোর কল্যাণে আরাম-আয়েশ ও নিশ্চয়তার মধ্যে মানুষ নিজেকে ক্রমেই হারিয়ে ফেলছে।
এটা সত্য যে, আমরা উদ্ভাবনের একটা দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যে ভাসছি। একটিমাত্র স্মার্টফোন প্ল্যাটফর্মে লাখ লাখ অ্যাপ ব্যবহারের অপার সুযোগ পাচ্ছি। কম্পিউটার প্ল্যাটফর্মের জন্য দৈনিক যোগ হচ্ছে আরও হাজার হাজার নতুন সফটওয়্যার। অবশ্য এসবই সেই কৌতূহলের যুগের সময়কার প্রাথমিক উদ্ভাবনেরই সম্প্রসারণ।
তাহলে কি বলা যেতে পারে যে, আমরা এক অবক্ষয়ের যুগ অতিক্রম করছি? এটা বলা নিরাপদ যে, আজ আমরা অযোগ্যতার (অকর্মন্যতাও বলা যায় হয়তো) নতুন যুগে আছি। এটি অন্তত অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রশ্নে সত্য, যেখানে প্রলম্বিত একঘেঁয়েমিকে ‘উদ্ভাবনী কর্মক্ষমতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এমন বিভ্রান্তি চারদিকে, অবশ্য দূরবর্তী বজ্রপাতের মতো গুড়গুড় আওয়াজ ক্রমেই কানে বাজতে শুরু করেছে। অসন্তুষ্ট নাগরিকদের ক্ষীণ আওয়াজ যে রাজনৈতিক অঙ্গনকে ক্রমেই পুঁতিগন্ধময় করে তুলছে, তা তো বিশ্বজুড়েই ক্রমশ প্রকাশ্য।
প্রাচুর্যের এই যুগের ধরন চিনতে পাঁচটি নতুন লক্ষণ অনুসরণ করা যেতে পারে—
অবক্ষয়: যখন মৌলিকতা মরে যায়, অশ্লীলতা এবং অমর্যাদার স্তরগুলো এরই মধ্যে মৃত ধারণাগুলোর স্থান দখল করে।
অযোগ্যতা: যখন পুরোনো চিন্তা একেবারেই অকেজো হয়ে যায়, কিন্তু ঐতিহ্যের নামে তারা টিকে থাকে।
প্রশাসন: যখন জনগণ চুপচাপ নির্বিকার অন্ধভাবে শাসিত হওয়াকে প্রত্যাখ্যান করে।
অনুরণন: যখন কোটি কোটি মানুষের ডাক শোনার কেউ থাকে না বা সচেতনভাবে উপেক্ষা করা হয়। নীরব নির্বিকার সংখ্যাগরিষ্ঠরা যখন শাসক পরিবর্তনের নিয়ামক হয়ে ওঠে।
সহনশীলতা বা সহিষ্ণুতা: যখন প্রগতির ওপর আধিপত্য বিস্তার করে গোঁড়ামি এবং সেই সূত্রে সহনশীলতার একটি নতুন যুগের উদয় হতে শুরু করে।
এই নতুন সহিষ্ণুতার যুগটি বুঝতে হলে আমাদের আগে বুঝতে হবে কীভাবে ১০০ বছরের বিবর্তনে এটি আমাদের সামনে এসে হাজির হয়েছে। ১৯০০ সালে প্রিন্ট সোসাইটির কালে মুদ্রিত শব্দই ছিল শক্তি, সাক্ষরতা ছিল একটা আশীর্বাদ বা অনুগ্রহ এবং শুধু সমাজের বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্তরাই জ্ঞানের জগতে প্রবেশের অধিকার পেতেন। অনুরূপ দৃশ্য কিন্তু ১২০ বছর পরও মঞ্চায়িত হচ্ছে। আজও এটি ঘটে চলেছে। হাজার হাজার বিকল্প উন্মুক্ত আছে শুধু নতুন বৈশ্বিক যুগের সাক্ষরদের জন্য। আর বাকিরা বিস্মিত উৎসুক দর্শক হিসেবে হুড়োহুড়ি করছে। আজ ব্লক-চেইন (সুরক্ষিত নথি সংরক্ষণ ব্যবস্থা) এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, টেকনোক্যালামিটি (ডিজিটাল পরিসরে সুনামি বলা যায়, যা তথ্যের দুনিয়াকে নাড়িয়ে দিতে পারে) বিষয়ে দখল রাখে যারা, তারাই সেই ভয়ংকর স্বপ্নবাজ, যারা প্রগতির উপকারভোগী, যারা আমাদের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
তথাকথিত রেডিও সোসাইটি প্রভাব ফেলতে পেরেছিল প্রিন্ট বিপ্লবের অন্তত ২৫ বছর পর। ইথারে বিনা মূল্যে তথ্যের বিস্তার, ঘরে বসে গান শোনা বা রেডিওতে গান চালিয়ে স্কুলের অ্যাসেম্বলি লাইনের মেঝেতে নাচার মতো সুযোগ করে দেয় এই রেডিও। রেডিও-ব্যক্তিত্বরা তাদের মতামত এবং নেতৃত্বের মাধ্যমে যে কণ্ঠস্বর হয়ে উঠছিলেন, সেটি ছিল লক্ষণীয়। ধাপে ধাপে এটি এগিয়েছে। এই হিসাবে পশ্চিমা সমাজকে প্রধান পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। টিভি সোসাইটি লাইভ অ্যাকশন ড্রামা নিয়ে আসে, শুরু হয় রঙিন ভোগবাদ। টেলিকম সোসাইটি দূরত্ব সংক্ষিপ্ত করে আনে। কম্পিউটার সোসাইটি দৈনন্দিন ব্যবহৃত ডিভাইসগুলো আরও ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর করে ফেলে, সঙ্গে আনে নির্ভুলতার ধারণা। সাইবার সোসাইটি বিশ্বকে ছোট্ট ডেস্কে এনে হাজির করে এবং সেই সঙ্গে কাজ ও জীবনধারার মধ্যে এক অভূতপূর্ব সমন্বয় ঘটায়। অতি সম্প্রতি আমরা ক্লিক সোসাইটি ছাড়িয়ে গেছি, যা বিশ্বকে আমাদের পকেটে নিয়ে এসেছিল এবং প্রথাগত কাজের মডেলকে দারুণভাবে ব্যাহত করেছে।
বর্তমানে আমরা নতুন সার্বজনীন ‘প্লাগড সোসাইটি’-তে আছি। আমরা এখন বেঁচে থাকার কৌশল হিসেবে আমাদের রক্তপ্রবাহ এবং মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে একটি ‘নলেজ প্লাগ’-এর সঙ্গে গভীরভাবে নমনীয় তারে যুক্ত থাকার জন্য জৈবিকভাবে আকাঙ্ক্ষা করছি। প্রায়োগিক জ্ঞান, মানবজাতি সম্পর্কে বাস্তব উপলব্ধি এবং মানবতাবাদী প্রয়োজনের দিক থেকে আজ আমরা সভ্যতার ইতিহাসে সবচেয়ে অগ্রসর। তৃণমূল পর্যন্ত সমৃদ্ধির ভাবনা এবং টিকে থাকার মধ্যে একটি বোঝাপড়া রয়েছে, যার জন্য পূর্ববর্তী সমাজ-সভ্যতাগুলো খুব বাজেভাবে ব্যর্থ হয়েছিল। প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা এবং ধ্বংসাত্মক মানসিকতার উপাদানগুলো শান্ত সহযোগিতা এবং তৃণমূলের ধারণাগুলোর সমন্বয় দিয়ে প্রতিস্থাপিত হচ্ছে। পৃথিবী অবশেষে একটি গ্রামে (গ্লোবাল ভিলেজ) পরিণত হচ্ছে।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—প্রথম চারটি সমাজ বিকশিত হতে প্রায় এক শতাব্দী সময় নিয়েছে, যেখানে শেষ তিনটি বিকশিত হতে সময় নিয়েছে মাত্র এক শতাব্দীর এক চতুর্থাংশ। অনুমিতভাবেই ২০২০ সালের মধ্যে আমরা একেবারে আনকোরা এক সমাজে অবতরণ করেছি। দ্বিতীয়ত, এই পর্যায়ের প্রভাবটি হবে শেষ তিনটি সমাজের চরম সমন্বয়। আমাদের নতুন সমাজ আমাদের দৈনন্দিন কাজের মডেলকে চ্যালেঞ্জ করে এমন একটি রূপান্তর হাজির করছে, যা আমরা গত ২০০ বছরে অনুভব করিনি। যা একটি রেজিমেন্টেড (কাঠামোবদ্ধ) কর্ম-দিন থেকে বেরিয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন এক কর্মপ্রবাহ এবং জীবনযাপনে অভ্যাসের নাটকীয় পরিবর্তন এবং বড় ধরনের মানসিক অভিযোজন ঘটাবে।
এই সত্যটা মেনে নিতেই হয় যে, অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের ধারণার মাত্রাতিরিক্ত প্রতিলিপির বন্যা বইছে সবখানে। সেই সঙ্গে আমরা এমন এক গড়পড়তা অনুভূতির মধ্যে নিমজ্জিত করছে যে, প্রাচুর্যের যুগ একটা অর্থহীন ধারণা বলে প্রতিভাত হচ্ছে। ঘুরে-ফিরে একই খবর। প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শিক্ষাগত যোগ্যতাসম্পন্নরা উদ্যোক্তা ব্যবসা এবং বৈশ্বিক যুগের বাণিজ্যিক বাস্তবতার সঙ্গে সমন্বয়হীন। জাতীয় উদ্ভাবন এজেন্ডাগুলো শুধু ঠোঁট মেলানো বুলি এবং সময়োপযোগী ফটোসেশন করার জন্য তৈরি করা হয়। কঠিন বাস্তবতাগুলো ভুয়া খবরের নিচে চাপা পড়ে। এটি বার্ষিক গালা অ্যাওয়ার্ডের রাত নয়, একই সার্কাসের ক্রমাগত পুনরাবৃত্তিসহ সারবস্তুর অনুপস্থিতি, যা প্রাচুর্যের শুধু বিভ্রম তৈরি করে। এটা আসলে বাস্তব সত্যের অনুপস্থিতি।
অন্যদিকে, মানবজাতি, প্রকৃতির আহ্বানে অন্ধকার থেকে ধীরে ধীরে এবং সহজাতভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য সুরক্ষার ধারণার সঙ্গে কঠোরভাবে সম্পর্কিত। তারা নিজেদের বোধ বুদ্ধির বিকাশে এবং বেঁচে থাকার জন্য ক্রমাগত সমন্বয় করে চলে। প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ এই ধারণার সাক্ষী ও জীবন্ত প্রমাণ। অন্যথায় আমরা এখনো বর্গাকার চাকার দখল নিয়ে গুহার মধ্যে লড়াইরত থাকতাম।
গত শতাব্দীতে পতনোন্মুখ আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক ব্যর্থতা মানুষের মস্তিষ্কে প্রচুর ছুরি-কাঁচি চালিয়েছে এবং এর মাধ্যমে তাকে আরও পরিপক্ব করে তুলেছে। দীর্ঘ দ্বন্দ্ব-সংঘাতের এই অভিজ্ঞতায় আকার পাওয়া মানুষের মস্তিষ্ক আসন্ন বেঁচে থাকার কৌশল হিসেবে সহনশীলতাকে ধারণের জন্য প্রস্তুত হয়েছে। এই সত্য মুক্তমনা দেশগুলোতে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। সেখানে সমস্ত বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ এবং বিশ্বাসের লাখ লাখ মানুষ প্রতিদিন মিশে যায় এবং তারা একটা প্রগতিশীল জীবন উপভোগ করে। যে জাতিগুলো এই সহনশীলতাকে ভয় পায় এবং তাদের নাগরিকেরা ভুয়া খবরে মগজ ধোলাই করতে থাকে, তাদের জন্য সহনশীলতার সৌন্দর্য আবিষ্কার করা কঠিনই হবে। নতুন বৈশ্বিক যুগের দুনিয়া মাত্র কয়েক দশক আগের চেয়েও অনেক বেশি সহনশীল এবং বৈচিত্র্যময়। বিশ্বব্যাপী বন্ধুত্বপূর্ণ, খোলামেলাভাবে যুক্ত এবং উন্মুক্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা রাখা দেশগুলোর জন্য বিষয়টি স্পষ্টভাবেই দৃশ্যমান।
তবুও, এই বাস্তবতা এখনো বিশ্বের দূরতম কোণে একটি গুরুতর চ্যালেঞ্জ। গ্রহণ করার মানসিকতা এবং সহনশীলতার দিকে অগ্রগতি একটি দীর্ঘ যাত্রা। তারপরও আজ কোটি কোটি মানুষ অনেক বেশি সচেতন, আলোকিত এবং সহনশীল হয়ে উঠেছে। ধীরে ধীরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার সময় এটি। দেখাটা জরুরি, সহনশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী সংযোগের নতুন বিশ্ব কীভাবে বিকশিত হচ্ছে, সেটির সাক্ষী হওয়ার আগ্রহ থাকতে হবে। মানবজাতির ক্ষমতা অনেক। প্রতিটি অন্ধকার যুগ থেকে এই প্রজাতি আগের চেয়ে বেশি উজ্জ্বলতা নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। আমরা মানুষের নতুন উপলব্ধি এবং মানসিক আলোকায়নের যুগে প্রবেশ করছি।
গত সেপ্টেম্বরে ভ্লাদিভস্টকের একটি অর্থনৈতিক ফোরামে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। এ বিষয়ে পরে তিনি একটি উপহাসমূলক হাসি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
৭ ঘণ্টা আগেআব্রাহাম অ্যাকর্ডস মূলত একটি চটকদার বিষয়। এতে বাস্তব, স্থায়ী আঞ্চলিক শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছুই এতে ছিল না। যেসব রাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করেছে তারা তা করেছে—কারণ, তারা ইসরায়েলকে ওয়াশিংটনে প্রভাব বিস্তারের পথ হিসেবে দেখে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ইসরায়েলের ওপর মার
৯ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেখেয়ালি, সেটা আগা থেকেই সবার জানা। তবে দেশটির নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এসেও তিনি অসংলগ্ন, অশ্লীল, স্বৈরতান্ত্রিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ থেকে অন্তত একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে একটি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।
৯ দিন আগেএবারের আইএমইএক্স মহড়ায়ও কিছু দেশ আছে যারা আগেরবারও অংশগ্রহণ করেছিল। এসব দেশের নাম আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই মহড়ার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—ইরান ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেকে এমন দেশগুলোর কক্ষপথে নিয়ে যাচ্ছে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত
১০ দিন আগে