প্রজেক্ট সিন্ডিকেটের নিবন্ধ
২০২৪ সাল ছিল বিশ্বজুড়ে নির্বাচনের বছর। এই বছরটি বিভিন্ন দেশে ক্ষমতাসীন নেতাদের জন্য কঠিন ছিল। কারণ, হতাশ ভোটাররা পরিবর্তন চেয়েছেন এবং এখনো চাচ্ছেন। রাজনৈতিক নেতাদের উচিত তাঁদের পূর্বসূরিদের থেকে শিক্ষা নেওয়া এবং ভবিষ্যতের জন্য এমন এক দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করা—যা ভোটারদের আশা এবং চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
অনলাইন ডেস্ক
গত বছরটি ছিল এমন এক বছর, যেখানে সারা বিশ্বে ক্ষমতাসীনেরা হয় নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন অথবা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রিপরিষদ বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ আল গারজাভির একটি কথা গুরুত্বপূর্ণ, ‘সরকারের কাজ হলো এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করা, যা নাগরিকদের আশার আলো দেয়।’
পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির আলোকে ২০২৫–এর দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের উচিত, এই বার্তাটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা এবং সংকট সমাধানে কূটচালের পরিবর্তে একটি সাহসী, আশাব্যঞ্জক পরিকল্পনা তৈরি করা।
বছরজুড়ে বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জনরোষের ঢেউ ছিল চোখে পড়ার মতো। মার্চে সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সল নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। জুনে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি প্রথমবারের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে জোট সরকার গঠন করে। একই মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়।
এই ধারা পরেও বছরজুড়ে অব্যাহত ছিল। জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টি বিপুল বিজয় অর্জন করে এবং কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসন শেষ হয়। অক্টোবরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরুর এলডিপি প্রথমবারের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। এরপর, ডিসেম্বরে শুরুতে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান। কয়েক দিন পর জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ আস্থা ভোটে হারেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাঁর অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে দেশকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ফেলে দেন।
এ তো গেল ভোটের আলাপ। এ বছর গণ-আন্দোলনের মাধ্যমেও ক্ষমতাসীনদের গদি থেকে নামানোর ইতিহাস রচিত হয়েছে। আগস্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণ-আন্দোলনের মুখে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে দেশত্যাগ করেন (ভারতে চলে যান)। আর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যান।
ক্ষমতাসীনেরা কেন হারছেন (বরং বলা ভালো, কেন জনসমর্থন হারাচ্ছেন)? এর একটি কারণ হতে পারে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের প্রতি আস্থা কমাতে ভূমিকা রাখে এবং রাজনৈতিক বিভাজন বাড়িয়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ—যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান মেরুকরণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং বাড়ছে। পাশাপাশি প্রতিটি পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানুষের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে, তাদের ধারণাগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তোলে এবং ‘অনুগমন প্রবণতা’ (সমাজে কোনো একটি বিষয় যখন প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তখন সাধারণ মানুষ তা কোনো ধরনের বিবেচনা ছাড়াই অনুসরণ করার বিষয়টি কনফরমিটি বায়াস বা অনুগমন প্রবণতা বলা হয়) নামক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব সৃষ্টি করে। এর অ্যালগরিদম আবেগপূর্ণ এবং সহজ–সরল বার্তাগুলোকে আরও ছড়িয়ে দেয়। এই বিষয়টি সমাজে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং ভীতির বিস্তার ঘটায়।
তবে প্রাথমিক প্রমাণ দেখাচ্ছ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফাররাইট পপুলিস্ট তথা কট্টর ডানপন্থী জনতোষণবাদী দলগুলোর সমর্থন বাড়াতে সাহায্য করলেও, সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল বলছে—এই বিষয়টি সব সময় তাদের ক্ষমতায় যেতে সাহায্য করার মতো যথেষ্ট নয়। মেক্সিকো, স্পেন, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, জাপান ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষমতাসীনেরা বা অন্য প্রধান দলগুলো বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে ভোট পাওয়ার মার্জিন (ভোটের পার্থক্য) বলে—তারা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এ কারণে, ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনী বছরে একটি স্পষ্ট শিক্ষা হলো—সরকারে থাকা পক্ষগুলোকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে শিখতে হবে। শুরু করার জন্য ভালো একটি পদ্ধতি হলো—ভোটারদের উদ্বেগ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা। এ বছরের শুরুতে কিয়ার স্টারমারের দুই উপদেষ্টা গ্রিমসবি শহরে গিয়েছিলেন এবং বাসিন্দাদের বিদ্যমান সরকারকে এক শব্দে বর্ণনা করতে বলেছিলেন। তাঁরা যে উত্তরগুলো পেয়েছিল, তা অনেক দেশের ভোটারদের কাছেও শোনা যায়। সেগুলো হলো—অচল, স্বৈরাচারী, আন্তরিক নয়, অভিজাত, সহজে কাছে পাওয়া যায় না, স্বার্থপর, হতাশাজনক, বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং হাস্যকর।
আরেকটি বড় শিক্ষা হলো—আস্থা পুনরুদ্ধার করতে নেতাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নাগরিক ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পপুলিজম তথা জনতুষ্টির রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে ২০২২ সালের একটি গবেষণা দেখায়, অর্থনৈতিক অবস্থা, যেমন—বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং সামাজিক খাতে কাটছাঁট—সরকারের প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীর প্রভাব ফেলে।
এই বিষয়গুলো বুঝতে সাহায্য করে কেন ২০২৩ সালে স্পেন, গ্রিস এবং চলতি বছর আয়ারল্যান্ডের ভোটাররা ক্ষমতাসীন নেতাদের পুনর্নির্বাচিত করেছেন এবং ফ্রান্সের ভোটাররা শাসক দলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ২০২২ সালে স্পেনের অর্থনীতি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং গ্রিসের ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে বেড়েছে। অন্যদিকে, জার্মানিতে—যেখানে নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দলগুলো খারাপ ফলাফল করছে—২০২৩ সালে অর্থনীতি দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে এবং ২০২৪ সালে আরও দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। ফ্রান্স কিছুটা ভালো করেছে। দেশটিতে ২০২৪ সালে জিডিপি ১ দশমিক ১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আছে, ২০২৩ সালে এই হার ছিল দশমিক ৯ শতাংশ।
কেবল স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো নয়, রাজনৈতিক নেতাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবতে হবে। অনেক রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকের পরিকল্পনা বার্ষিক বাজেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং মূলত কাটছাঁটের দিকেই তাঁরা মনোযোগী। এদিকে ভোটাররা—যাঁরা জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, পরবর্তী সময়ে কৃচ্ছ্র সাধন ও জীবনযাত্রায় নিয়ন্ত্রণ হারানোর অনুভূতিতে ভুগছেন—তাঁদের জন্য এমন নেতার প্রয়োজন, যারা তাঁদের আশা দিতে পারেন।
বাজেটের সীমাবদ্ধতা কখনো ‘ভালো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ করতে না পারার অজুহাত হতে পারে না। কঠিন অর্থনৈতিক সময়েও অনেক সাহসী সরকারি উদ্যোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডিলানো রুজভেল্টের নিউ ডিল, ব্রিটেনের যুদ্ধোত্তর কল্যাণ রাষ্ট্র, দুবাইয়ের ১৯৫৮-পরবর্তী অবকাঠামো বিপ্লব এবং সিঙ্গাপুরের ১৯৫৯-পরবর্তী দ্রুত উন্নয়নের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
রাজনৈতিক নেতাদের এসব সাহসী উদ্যোগ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে এবং নাগরিকদের হতাশার মূল কারণগুলো সমাধান করতে আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে হবে। ভালো খবর হলো—প্রতিটি দেশ এবং সম্প্রদায়ে সৃজনশীল মানুষ আছেন—যাঁরা সরকারি ও বেসরকারি খাতে কাজ করছেন—যাঁদের কাজ ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা এবং পরিকল্পনা করা। নেতাদের এসব সৃজনশীল মানুষকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ, এই ধরনের লোকেরা সাধারণত নীতিনির্ধারণী আলোচনার অংশ হন না।
আশাবাদী রাজনীতি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিমসবি শহরে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছিলেন, তাঁরা এমন একটি রাজনীতি চান—যা বাস্তবসম্মত, অর্থপূর্ণ, দরদি, আশা দানকারী এবং ক্ষমতায়নকারী। তাঁরা এমন একটি সরকার চান, যা এই আকাঙ্ক্ষাগুলো পূর্ণ করতে পারে এবং নাগরিকদের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হবে।
লেখক নাইরি উডস ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের ব্লাভান্টিক স্কুল অব গভর্নমেন্টের ডিন। প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত নিবন্ধটি অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান।
গত বছরটি ছিল এমন এক বছর, যেখানে সারা বিশ্বে ক্ষমতাসীনেরা হয় নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন অথবা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রিপরিষদ বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ আল গারজাভির একটি কথা গুরুত্বপূর্ণ, ‘সরকারের কাজ হলো এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করা, যা নাগরিকদের আশার আলো দেয়।’
পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির আলোকে ২০২৫–এর দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের উচিত, এই বার্তাটি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা এবং সংকট সমাধানে কূটচালের পরিবর্তে একটি সাহসী, আশাব্যঞ্জক পরিকল্পনা তৈরি করা।
বছরজুড়ে বিশ্বজুড়ে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে জনরোষের ঢেউ ছিল চোখে পড়ার মতো। মার্চে সেনেগালের প্রেসিডেন্ট ম্যাকি সল নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। জুনে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষমতাসীন আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি প্রথমবারের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়ে জোট সরকার গঠন করে। একই মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়।
এই ধারা পরেও বছরজুড়ে অব্যাহত ছিল। জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টি বিপুল বিজয় অর্জন করে এবং কনজারভেটিভ পার্টির ১৪ বছরের শাসন শেষ হয়। অক্টোবরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইশিবা শিগেরুর এলডিপি প্রথমবারের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। এরপর, ডিসেম্বরে শুরুতে ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ের অনাস্থা ভোটে ক্ষমতা হারান। কয়েক দিন পর জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ আস্থা ভোটে হারেন এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো তাঁর অর্থমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে দেশকে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তায় ফেলে দেন।
এ তো গেল ভোটের আলাপ। এ বছর গণ-আন্দোলনের মাধ্যমেও ক্ষমতাসীনদের গদি থেকে নামানোর ইতিহাস রচিত হয়েছে। আগস্টে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণ-আন্দোলনের মুখে একটি সামরিক হেলিকপ্টারে দেশত্যাগ করেন (ভারতে চলে যান)। আর সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে যান।
ক্ষমতাসীনেরা কেন হারছেন (বরং বলা ভালো, কেন জনসমর্থন হারাচ্ছেন)? এর একটি কারণ হতে পারে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। গবেষণায় দেখা গেছে, ইন্টারনেট ব্যবহার বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের প্রতি আস্থা কমাতে ভূমিকা রাখে এবং রাজনৈতিক বিভাজন বাড়িয়ে তোলে। উদাহরণস্বরূপ—যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান মেরুকরণ ব্যাপকভাবে বেড়েছে এবং বাড়ছে। পাশাপাশি প্রতিটি পক্ষই নিজ নিজ অবস্থানে আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মানুষের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে, তাদের ধারণাগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তোলে এবং ‘অনুগমন প্রবণতা’ (সমাজে কোনো একটি বিষয় যখন প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তখন সাধারণ মানুষ তা কোনো ধরনের বিবেচনা ছাড়াই অনুসরণ করার বিষয়টি কনফরমিটি বায়াস বা অনুগমন প্রবণতা বলা হয়) নামক মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব সৃষ্টি করে। এর অ্যালগরিদম আবেগপূর্ণ এবং সহজ–সরল বার্তাগুলোকে আরও ছড়িয়ে দেয়। এই বিষয়টি সমাজে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং ভীতির বিস্তার ঘটায়।
তবে প্রাথমিক প্রমাণ দেখাচ্ছ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফাররাইট পপুলিস্ট তথা কট্টর ডানপন্থী জনতোষণবাদী দলগুলোর সমর্থন বাড়াতে সাহায্য করলেও, সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফল বলছে—এই বিষয়টি সব সময় তাদের ক্ষমতায় যেতে সাহায্য করার মতো যথেষ্ট নয়। মেক্সিকো, স্পেন, গ্রিস, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, জাপান ও দক্ষিণ আফ্রিকায় ক্ষমতাসীনেরা বা অন্য প্রধান দলগুলো বিজয়ী হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনে ভোট পাওয়ার মার্জিন (ভোটের পার্থক্য) বলে—তারা অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে।
এ কারণে, ২০২৪ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনী বছরে একটি স্পষ্ট শিক্ষা হলো—সরকারে থাকা পক্ষগুলোকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আরও ভালোভাবে ব্যবহার করতে শিখতে হবে। শুরু করার জন্য ভালো একটি পদ্ধতি হলো—ভোটারদের উদ্বেগ নিয়ে তাঁদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা। এ বছরের শুরুতে কিয়ার স্টারমারের দুই উপদেষ্টা গ্রিমসবি শহরে গিয়েছিলেন এবং বাসিন্দাদের বিদ্যমান সরকারকে এক শব্দে বর্ণনা করতে বলেছিলেন। তাঁরা যে উত্তরগুলো পেয়েছিল, তা অনেক দেশের ভোটারদের কাছেও শোনা যায়। সেগুলো হলো—অচল, স্বৈরাচারী, আন্তরিক নয়, অভিজাত, সহজে কাছে পাওয়া যায় না, স্বার্থপর, হতাশাজনক, বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং হাস্যকর।
আরেকটি বড় শিক্ষা হলো—আস্থা পুনরুদ্ধার করতে নেতাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও নাগরিক ক্ষমতায়নকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পপুলিজম তথা জনতুষ্টির রাজনৈতিক অর্থনীতি নিয়ে ২০২২ সালের একটি গবেষণা দেখায়, অর্থনৈতিক অবস্থা, যেমন—বেকারত্ব বৃদ্ধি এবং সামাজিক খাতে কাটছাঁট—সরকারের প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিতে গভীর প্রভাব ফেলে।
এই বিষয়গুলো বুঝতে সাহায্য করে কেন ২০২৩ সালে স্পেন, গ্রিস এবং চলতি বছর আয়ারল্যান্ডের ভোটাররা ক্ষমতাসীন নেতাদের পুনর্নির্বাচিত করেছেন এবং ফ্রান্সের ভোটাররা শাসক দলকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ২০২২ সালে স্পেনের অর্থনীতি ৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং গ্রিসের ৬ দশমিক ২ শতাংশ হারে বেড়েছে। অন্যদিকে, জার্মানিতে—যেখানে নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন দলগুলো খারাপ ফলাফল করছে—২০২৩ সালে অর্থনীতি দশমিক ৩ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে এবং ২০২৪ সালে আরও দশমিক ১ শতাংশ সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। ফ্রান্স কিছুটা ভালো করেছে। দেশটিতে ২০২৪ সালে জিডিপি ১ দশমিক ১ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আছে, ২০২৩ সালে এই হার ছিল দশমিক ৯ শতাংশ।
কেবল স্বল্পমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো নয়, রাজনৈতিক নেতাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবতে হবে। অনেক রাজনীতিবিদ ও নীতিনির্ধারকের পরিকল্পনা বার্ষিক বাজেটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ এবং মূলত কাটছাঁটের দিকেই তাঁরা মনোযোগী। এদিকে ভোটাররা—যাঁরা জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, পরবর্তী সময়ে কৃচ্ছ্র সাধন ও জীবনযাত্রায় নিয়ন্ত্রণ হারানোর অনুভূতিতে ভুগছেন—তাঁদের জন্য এমন নেতার প্রয়োজন, যারা তাঁদের আশা দিতে পারেন।
বাজেটের সীমাবদ্ধতা কখনো ‘ভালো ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা’ করতে না পারার অজুহাত হতে পারে না। কঠিন অর্থনৈতিক সময়েও অনেক সাহসী সরকারি উদ্যোগ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডিলানো রুজভেল্টের নিউ ডিল, ব্রিটেনের যুদ্ধোত্তর কল্যাণ রাষ্ট্র, দুবাইয়ের ১৯৫৮-পরবর্তী অবকাঠামো বিপ্লব এবং সিঙ্গাপুরের ১৯৫৯-পরবর্তী দ্রুত উন্নয়নের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
রাজনৈতিক নেতাদের এসব সাহসী উদ্যোগ থেকে অনুপ্রেরণা নিতে হবে এবং নাগরিকদের হতাশার মূল কারণগুলো সমাধান করতে আরও উচ্চাকাঙ্ক্ষী হতে হবে। ভালো খবর হলো—প্রতিটি দেশ এবং সম্প্রদায়ে সৃজনশীল মানুষ আছেন—যাঁরা সরকারি ও বেসরকারি খাতে কাজ করছেন—যাঁদের কাজ ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা এবং পরিকল্পনা করা। নেতাদের এসব সৃজনশীল মানুষকে চিহ্নিত করতে হবে এবং তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে হবে। কারণ, এই ধরনের লোকেরা সাধারণত নীতিনির্ধারণী আলোচনার অংশ হন না।
আশাবাদী রাজনীতি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশ্বাস পুনরুদ্ধারে গুরুত্বপূর্ণ। গ্রিমসবি শহরে স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছিলেন, তাঁরা এমন একটি রাজনীতি চান—যা বাস্তবসম্মত, অর্থপূর্ণ, দরদি, আশা দানকারী এবং ক্ষমতায়নকারী। তাঁরা এমন একটি সরকার চান, যা এই আকাঙ্ক্ষাগুলো পূর্ণ করতে পারে এবং নাগরিকদের বিশ্বাস অর্জন করতে সক্ষম হবে।
লেখক নাইরি উডস ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব অক্সফোর্ডের ব্লাভান্টিক স্কুল অব গভর্নমেন্টের ডিন। প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত নিবন্ধটি অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান।
পুতিন ও ট্রাম্প উভয়েই একধরনের ‘আদর্শহীন বাস্তবতাবাদী’ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। পুতিন মানবাধিকার ও পশ্চিমা উদারনৈতিক মূল্যবোধকে প্রত্যাখ্যান করেন। ট্রাম্পও প্রায় একই ধাঁচে আদর্শের চেয়ে ক্ষমতার গতিপ্রকৃতির বাস্তবতাকে বেশি প্রাধান্য দেন। পুতিন ট্রাম্পের এই বৈশিষ্ট্যকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন, যেখানে একটি..
৮ ঘণ্টা আগেভূতাত্ত্বিক ফান সিয়াও বলেছিলেন, বাঁধটির অবস্থান একটি বিরল ‘জৈববৈচিত্র্য হটস্পটে’ এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে এটি অবস্থিত। বিষয়টি পরিবেশের জন্য ‘অপ্রত্যাবর্তনীয় ক্ষতির’ কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকা খুব বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ।
১৩ ঘণ্টা আগেডাচ রাষ্ট্রদূতের নিবন্ধে রোহিঙ্গা সংকটের নতুন বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের উদ্যোগে ২০২৫ সালে একটি উচ্চপর্যায়ের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। নিবন্ধে আরাকান আর্মির উত্থান, রাখাইন রাজ্যের রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চ্যালেঞ্জসহ বাংলাদেশ-মিয়ানমার দ্বিপক্ষীয় স
৪ দিন আগেবাংলাদেশে জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। সেই প্রক্রিয়ায় কী কী জরুরি তার ইঙ্গিত মিলবে ২০২৪ সালে অর্থনীতিতে নোবেলজয়ী ড্যারন আসেমোগলোর নিবন্ধ থেকে। প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত নিবন্ধটি অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান।
৪ দিন আগে