Ajker Patrika

জেনারেশন জেড–এ আলাদা কী আছে

অনলাইন ডেস্ক
জেনারেশন জেড–এ আলাদা কী আছে

কিশোর তরুণদের উদাসীনতা নিয়ে বয়স্কদের আহাজারি বহু পুরোনো প্রথা। বাবা-মা কিংবা দাদা-দাদি যে-ই হোন না কেন, নতুন প্রজন্মকে নিয়ে তাঁরা আশার চেয়ে হতাশার কথাই বেশি শোনান। নতুন প্রজন্মের কোনো রাজনৈতিক জ্ঞান না থাকা, মোবাইল-কম্পিউটারের স্ক্রিনে বেশি বেশি সময় কাটানো কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অতিরিক্ত ব্যস্ততা নিয়ে আক্ষেপ করেন তাঁরা। 

কিন্তু আসল সত্যিটা হলো—হতাশা নয়, নতুন প্রজন্মকে নিয়ে বরং আশার পাল্লাটাই বেশি ভারী। আটলান্টিকের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন, সন্ত্রাসবাদ, আয়ের বৈষম্য, নির্বাচন কিংবা পরিসংখ্যানের মতো বিষয়গুলোতে তাঁরা সুস্পষ্টভাবে ইতিবাচক প্রভাব রাখতে সক্ষম। 

নতুন যে প্রজন্মের কথা বলা হচ্ছে, বর্তমানে সেই প্রজন্মটিই বিশ্বজুড়ে জেনারেশন জেড নামে পরিচিত। মোটাদাগে, ১৯৯০-এর দশক থেকে ২০১০ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণ করা শিশুরাই এখন জেড প্রজন্ম। এই প্রজন্মের মধ্যে সক্রিয়তার বিষয়টি ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ—আফগানিস্তানের মালালা ইউসুফজাই। মাত্র ১৮ বছর বয়সেই তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়ে গেছেন। জলবায়ু নিয়ে কাজ করে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই সুইডিশ কিশোরী গ্রেটা থানবার্গ প্রভাবশালী বৈশ্বিক ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন। গত কয়েক বছর ধরেই নোবেল পুরস্কারের জন্য সম্ভাব্যদের তালিকায় দেখা যাচ্ছে তাঁর নামটি। যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার কিশোরী সেজাল মাখেজার কথাও উল্লেখ করা যায়। মাত্র ১৪ বছর বয়সেই তিনি এমন একটি প্রকল্পের সূত্রপাত করেছিলেন যা হাজার হাজার দরিদ্র মানুষের চাকরির প্রশিক্ষণ প্রদান করে। 

সাংস্কৃতিক পূর্বাভাস ফার্ম ‘স্পার্কস অ্যান্ড হানির’ সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৬ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৬ শতাংশই নানা ধরনের স্বেচ্ছাসেবী কাজ-কর্মের সঙ্গে জড়িত। এই অর্থে তাঁরা তাঁদের পূর্ববর্তী জেনারেশন-মিলেনিয়ালের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। 

জেড প্রজন্মের সবচেয়ে বড় ইভেন্ট হিসেবে পরিচিত ‘উই ডে’। কানাডার দুই ভাই মার্ক ও ক্রেইগ কিয়েলবার্গার শিক্ষার্থী সমাবেশের এই ইভেন্ট শুরু করেছিলেন। ২০০৭ সাল ২০২০ সাল পর্যন্ত কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বড় বড় বিভিন্ন শহরের স্টেডিয়ামে লাখ লাখ শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণে দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান পরিচালিত হয়েছে। স্থানীয় ও বৈশ্বিক ক্ষেত্রে নিজেদের প্রজন্মের সাফল্য ও অবদানকে নেচে গেয়ে উদ্‌যাপন করাই ছিল এই সমাবেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। 

নিজের প্রজন্ম সম্পর্কে মার্ক কিয়েলবার্গার বলেছেন, ‘এটি একটি অবিশ্বাস্যভাবে শক্তিশালী প্রজন্ম। উই ডেতে আমরা সেই শক্তিটাকেই নাড়া দিই।’ 

প্রত্যেক উই ডে ইভেন্টেই একটি ভিডিও প্রদর্শনীর অংশ রাখা হতো। এই প্রদর্শনীতে সাধারণত ‘বিশ্ব বদলে ভূমিকা রাখা’ তরুণদের কথা তুলে ধরা হতো। যেমন—একটি ইভেন্টে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো অঞ্চলের দুই যুবক অ্যাজিয়া হাচিনস এবং মরিস ইয়ংকে দেখানো হয়েছিল। জেড প্রজন্মের এই দুই যুবক তাদের সম্প্রদায়ের গ্যাং সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি পদযাত্রার আয়োজন করেছিলেন। এটি পরে একটি জাতীয় আন্দোলনে রূপ নিয়েছিল। ভিডিওটি শেষ হয়ে গেলে, ওই দুজনকে সেবার মঞ্চে ডেকে নিয়েছিলেন অলস্টেটের সিইও টম উইলসন। পরে তাঁদের দুজনকে ১০ হাজার ডলার করে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছিল। 

বলা যায়, প্রজন্ম কেন্দ্রিক এমন সম্মিলন অন্য প্রজন্মগুলোর ক্ষেত্রে খুবই বিরল। ২০২০ সালে উই ডে’র ইভেন্ট থেমে গেলেও জেড প্রজন্মের মধ্যে যে ঐক্য গড়ে দিয়েছে তা ভবিষ্যৎ পৃথিবীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত