অনলাইন ডেস্ক
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই সপ্তাহ। এই কদিনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার ফিলিস্তিনি। মাত্র দুই দিন আগেও ইসরায়েলি হামলায় গাজার একটি হাসপাতালে প্রায় ৫০০ লোক নিহত হয়েছে। যদিও ইসরায়েল এই হামলার দায় অস্বীকার করেছে। কিন্তু তাতেই বা কী আসে-যায়। প্রাণহানি, হতাহত যা হওয়ার তা হয়েই গেছে।
গাজাবাসীর ওপর ইসরায়েলের এই বর্বরতার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পশ্চিম তীর থেকে শুরু করে জর্ডান, সিরিয়া থেকে সুদূর তিউনিসিয়াও। আজও আরব বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু ২০১৪ সালে হামাস-ইসরায়েলের মধ্যকার ৫০ দিনের যুদ্ধের সময় আরব বিশ্ব যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, তার থেকে বর্তমানে বেশ কিছু বিষয় আলাদা।
প্রথম যে বিষয়টি ভিন্ন সেটি হলো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। ২০২০ সালে চারটি আরব দেশ বাহরাইন, মরক্কো, সুদান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত একসময়কার বৈরী ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। সৌদি আরবও উল্লিখিত চারটি দেশের পথেই হাঁটছে। এর আগে মাত্র দুটি দেশ মিসর ও জর্ডান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এই সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ফলে এসব দেশের গণমাধ্যমেও বর্তমান হামাস-ইসরায়েল সংকট কভার করার ধরন বদলে গেছে।
হামাসের অন্যতম দাতা দেশ কাতারের সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা হামাস-ইসরায়েল সংকটকে বেশ প্রাধান্য দিচ্ছে। সেখানে গাজাবাসীর খবর প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু সৌদি আরবের গণমাধ্যমগুলোকে গ্রহণ করতে হয়েছে কৌশলী অবস্থান। সৌদি গণমাধ্যমগুলো গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন-ধ্বংসযজ্ঞ তুলে ধরলেও হামাসকে কভারেজ দিচ্ছে না। কিন্তু প্রায়ই আরবিভাষী ইহুদিদের আলোচনায় ডেকে আনছে। এর পাশাপাশি ফিলিস্তিনের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীকে দখলদার বাহিনী বলা হবে কি না, তা নিয়েও সৌদি আরবের গণমাধ্যমগুলোতে বিতর্ক রয়েছে।
দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হলো বড় আকারের সংঘাতের আশঙ্কা। ২০১৪ সালের যুদ্ধ ফিলিস্তিনে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা আশপাশের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে। যেমন—যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিসরকে উদ্বাস্তু গাজাবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মিসরীয়দের প্রতিক্রিয়া আগের মতো নয়।
মিসরীয় সমাজের বড় একটি অংশ চায় না গাজার উদ্বাস্তুদের গ্রহণ করতে। এ বিষয়ে মিসরের সরকারপন্থী রাজনীতি বিশ্লেষক ইব্রাহিম ঈসা হামাসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা কেন আপনাদের যুদ্ধ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা কেন আপনাদের স্বার্থে ১০ কোটি মিসরীয়র জীবন বিপন্ন করতে চান?’ মিসরীয় সমাজের অন্যান্য পণ্ডিতও প্রায় একই ধরনের মনোভাব পোষণ করেছেন। অনেকে হয়তো বলতে পারেন, এটি মিসর সরকারের অবস্থান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মিসরের জনগণের বড় একটি অংশই এমন মনোভাব পোষণ করে।
একই পরিস্থিতি লেবাননেও। বিগত চার বছর ধরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে থাকা লেবাননবাসী আশঙ্কা করছে, দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী গেরিলা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ হয়তো ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। ফলে রাষ্ট্র হিসেবে লেবানন ২০০৬ সালের মতো আবারও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়ে লেবাননের জনপ্রিয় কলামিস্ট ও ফিলিস্তিনপন্থী সাংবাদিক দিমা সাদেক হামাসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমাদের এই নরকে প্রবেশ করতে বাধ্য করবেন না।’
তৃতীয় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, এই অঞ্চল আগের চেয়ে অনেক বেশি বিভক্ত। উদাহরণ হিসেবে সিরিয়ার কথাই ধরা যাক। দেশটিতে ইসরায়েলবিরোধী মানুষের অভাব নেই। আবার হামাসবিরোধী মানুষেরও অভাব নেই। এর বাইরেও বিগত কয়েক দিনে বিভিন্ন আরব দেশের অনেকেই গাজা ও হামাস সম্পর্কে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা কেবল কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলিদের পক্ষ থেকেই শোনা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা জানিয়েছেন, হামাসের জন্য তাঁদের কোনো সমর্থন নেই। কিন্তু তাঁরা খোলাখুলি বিষয়টি প্রকাশ করতে সাহস পান না।
বিপরীত চিত্রও আছে। যেমন—ফিলিস্তিন ইস্যুতে আলোচনার আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছিলেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি এমনটা করেছেন, কারণ তার দেশের সাধারণ জনগণ এখনো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে। জনরোষ কমাতে তিনি হয়তো এ ধরনের আচরণের আশ্রয় নিয়েছেন।
আবার জর্ডান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়েলি বোমা হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় দেশটির বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ ইস্যুতে বাইডেন ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করেন। এর কারণও একটি। ফিলিস্তিন ইস্যুতে জর্ডানের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের ক্ষোভ প্রশমন।
আরব বিশ্বের জনসাধারণের মনে চলমান যুদ্ধ নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণের একটি কারণ হলো ইসরায়েলের গোয়েন্দা ব্যর্থতা। অনেক বিশ্লেষকই ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণকে ১৯৭৩ সালের ইয়াম কিপ্পুরের যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সর্বশেষ সেবারই ইসরায়েল ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছিল।
তবে ১৯৭৩ সালে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে আক্রমণ চালিয়েছিল, তা দেশটির জন্য অস্তিত্বের সংকট ছিল। সে সময় ইসরায়েল আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারেরও চিন্তাভাবনা করেছিল। সেই ঘটনার ৫০ বছর পর সেই ইসরায়েলকেই যুদ্ধে টেনে নামিয়েছে কোনো দেশ নয়; স্রেফ একটি সশস্ত্র সংগঠন, যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক একটি অনারব দেশ। ফলে এই সংকটের প্রকৃতি কোনোভাবেই ইয়াম কিপ্পুরের যুদ্ধের সময়কার ঘটনার মতো নয়।
ইসরায়েলের জন্য এই যুদ্ধ হয়তো অস্তিত্বের সংকট নয়, কিন্তু অনেক আরব দেশের বিদ্যমান ‘ভঙ্গুর’ রেজিমের জন্য হানিকর হয়ে উঠতে পারে এই যুদ্ধ। এ বিষয়ে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেন, যুদ্ধে লেবানন জড়িয়ে পড়বে কি না, সেবিষয়ক সিদ্ধান্ত আসলে তাঁর হাতে নেই। মিসর ও জর্ডানের শাসকেরা চাইবেন না এই যুদ্ধে তাদের দেশ জড়িয়ে পড়ুক। কারণ তাতে তাঁদের ক্ষমতার তখত কেবলই নাজুক হয়ে উঠবে। আবার উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোও চাইবে না হামাসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরানকে চটাতে। সে ক্ষেত্রে ইরানের হয়ে সৌদি আরব ও আরব আমিরাতে আশপাশের অনেক গোষ্ঠীই তাদের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে। সব মিলিয়ে এই যুদ্ধ আরব রাষ্ট্রগুলোর জন্য এক উভয়সংকট নিয়ে হাজির হয়েছে।
দ্য ইকোনমিস্টের নিবন্ধ অনুবাদ করেছে আব্দুর রহমান
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ শুরুর পর পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই সপ্তাহ। এই কদিনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে সাড়ে ৩ হাজার ফিলিস্তিনি। মাত্র দুই দিন আগেও ইসরায়েলি হামলায় গাজার একটি হাসপাতালে প্রায় ৫০০ লোক নিহত হয়েছে। যদিও ইসরায়েল এই হামলার দায় অস্বীকার করেছে। কিন্তু তাতেই বা কী আসে-যায়। প্রাণহানি, হতাহত যা হওয়ার তা হয়েই গেছে।
গাজাবাসীর ওপর ইসরায়েলের এই বর্বরতার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে পশ্চিম তীর থেকে শুরু করে জর্ডান, সিরিয়া থেকে সুদূর তিউনিসিয়াও। আজও আরব বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষ ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু ২০১৪ সালে হামাস-ইসরায়েলের মধ্যকার ৫০ দিনের যুদ্ধের সময় আরব বিশ্ব যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, তার থেকে বর্তমানে বেশ কিছু বিষয় আলাদা।
প্রথম যে বিষয়টি ভিন্ন সেটি হলো আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। ২০২০ সালে চারটি আরব দেশ বাহরাইন, মরক্কো, সুদান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত একসময়কার বৈরী ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করেছে। সৌদি আরবও উল্লিখিত চারটি দেশের পথেই হাঁটছে। এর আগে মাত্র দুটি দেশ মিসর ও জর্ডান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এই সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের ফলে এসব দেশের গণমাধ্যমেও বর্তমান হামাস-ইসরায়েল সংকট কভার করার ধরন বদলে গেছে।
হামাসের অন্যতম দাতা দেশ কাতারের সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা হামাস-ইসরায়েল সংকটকে বেশ প্রাধান্য দিচ্ছে। সেখানে গাজাবাসীর খবর প্রাধান্য পাচ্ছে। কিন্তু সৌদি আরবের গণমাধ্যমগুলোকে গ্রহণ করতে হয়েছে কৌশলী অবস্থান। সৌদি গণমাধ্যমগুলো গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন-ধ্বংসযজ্ঞ তুলে ধরলেও হামাসকে কভারেজ দিচ্ছে না। কিন্তু প্রায়ই আরবিভাষী ইহুদিদের আলোচনায় ডেকে আনছে। এর পাশাপাশি ফিলিস্তিনের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীকে দখলদার বাহিনী বলা হবে কি না, তা নিয়েও সৌদি আরবের গণমাধ্যমগুলোতে বিতর্ক রয়েছে।
দ্বিতীয় আরেকটি বিষয় হলো বড় আকারের সংঘাতের আশঙ্কা। ২০১৪ সালের যুদ্ধ ফিলিস্তিনে সীমাবদ্ধ থাকলেও এবার তা আশপাশের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার তীব্র আশঙ্কা রয়েছে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে। যেমন—যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিসরকে উদ্বাস্তু গাজাবাসীদের আশ্রয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মিসরীয়দের প্রতিক্রিয়া আগের মতো নয়।
মিসরীয় সমাজের বড় একটি অংশ চায় না গাজার উদ্বাস্তুদের গ্রহণ করতে। এ বিষয়ে মিসরের সরকারপন্থী রাজনীতি বিশ্লেষক ইব্রাহিম ঈসা হামাসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনারা কেন আপনাদের যুদ্ধ আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চাইছেন?’ তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা কেন আপনাদের স্বার্থে ১০ কোটি মিসরীয়র জীবন বিপন্ন করতে চান?’ মিসরীয় সমাজের অন্যান্য পণ্ডিতও প্রায় একই ধরনের মনোভাব পোষণ করেছেন। অনেকে হয়তো বলতে পারেন, এটি মিসর সরকারের অবস্থান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মিসরের জনগণের বড় একটি অংশই এমন মনোভাব পোষণ করে।
একই পরিস্থিতি লেবাননেও। বিগত চার বছর ধরে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে থাকা লেবাননবাসী আশঙ্কা করছে, দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী গেরিলা গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ হয়তো ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। ফলে রাষ্ট্র হিসেবে লেবানন ২০০৬ সালের মতো আবারও দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ বিষয়ে লেবাননের জনপ্রিয় কলামিস্ট ও ফিলিস্তিনপন্থী সাংবাদিক দিমা সাদেক হামাসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আমাদের এই নরকে প্রবেশ করতে বাধ্য করবেন না।’
তৃতীয় যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, এই অঞ্চল আগের চেয়ে অনেক বেশি বিভক্ত। উদাহরণ হিসেবে সিরিয়ার কথাই ধরা যাক। দেশটিতে ইসরায়েলবিরোধী মানুষের অভাব নেই। আবার হামাসবিরোধী মানুষেরও অভাব নেই। এর বাইরেও বিগত কয়েক দিনে বিভিন্ন আরব দেশের অনেকেই গাজা ও হামাস সম্পর্কে এমন কিছু কথা বলেছেন, যা কেবল কট্টর ডানপন্থী ইসরায়েলিদের পক্ষ থেকেই শোনা যায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা জানিয়েছেন, হামাসের জন্য তাঁদের কোনো সমর্থন নেই। কিন্তু তাঁরা খোলাখুলি বিষয়টি প্রকাশ করতে সাহস পান না।
বিপরীত চিত্রও আছে। যেমন—ফিলিস্তিন ইস্যুতে আলোচনার আগে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে কয়েক ঘণ্টা বসিয়ে রেখেছিলেন মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি এমনটা করেছেন, কারণ তার দেশের সাধারণ জনগণ এখনো ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলে। জনরোষ কমাতে তিনি হয়তো এ ধরনের আচরণের আশ্রয় নিয়েছেন।
আবার জর্ডান ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিলেও গাজার আল আহলি আরব হাসপাতালে ইসরায়েলি বোমা হামলার তীব্র নিন্দা করেছে। এর প্রতিক্রিয়ায় দেশটির বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ ইস্যুতে বাইডেন ও মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে যে বৈঠক হওয়ার কথা ছিল তা বাতিল করেন। এর কারণও একটি। ফিলিস্তিন ইস্যুতে জর্ডানের রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ জনগণের ক্ষোভ প্রশমন।
আরব বিশ্বের জনসাধারণের মনে চলমান যুদ্ধ নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণের একটি কারণ হলো ইসরায়েলের গোয়েন্দা ব্যর্থতা। অনেক বিশ্লেষকই ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের আক্রমণকে ১৯৭৩ সালের ইয়াম কিপ্পুরের যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করেছেন। সর্বশেষ সেবারই ইসরায়েল ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়েছিল।
তবে ১৯৭৩ সালে আরব দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যে আক্রমণ চালিয়েছিল, তা দেশটির জন্য অস্তিত্বের সংকট ছিল। সে সময় ইসরায়েল আরব দেশগুলোর বিরুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারেরও চিন্তাভাবনা করেছিল। সেই ঘটনার ৫০ বছর পর সেই ইসরায়েলকেই যুদ্ধে টেনে নামিয়েছে কোনো দেশ নয়; স্রেফ একটি সশস্ত্র সংগঠন, যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক একটি অনারব দেশ। ফলে এই সংকটের প্রকৃতি কোনোভাবেই ইয়াম কিপ্পুরের যুদ্ধের সময়কার ঘটনার মতো নয়।
ইসরায়েলের জন্য এই যুদ্ধ হয়তো অস্তিত্বের সংকট নয়, কিন্তু অনেক আরব দেশের বিদ্যমান ‘ভঙ্গুর’ রেজিমের জন্য হানিকর হয়ে উঠতে পারে এই যুদ্ধ। এ বিষয়ে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতি বলেন, যুদ্ধে লেবানন জড়িয়ে পড়বে কি না, সেবিষয়ক সিদ্ধান্ত আসলে তাঁর হাতে নেই। মিসর ও জর্ডানের শাসকেরা চাইবেন না এই যুদ্ধে তাদের দেশ জড়িয়ে পড়ুক। কারণ তাতে তাঁদের ক্ষমতার তখত কেবলই নাজুক হয়ে উঠবে। আবার উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোও চাইবে না হামাসের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ইরানকে চটাতে। সে ক্ষেত্রে ইরানের হয়ে সৌদি আরব ও আরব আমিরাতে আশপাশের অনেক গোষ্ঠীই তাদের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে। সব মিলিয়ে এই যুদ্ধ আরব রাষ্ট্রগুলোর জন্য এক উভয়সংকট নিয়ে হাজির হয়েছে।
দ্য ইকোনমিস্টের নিবন্ধ অনুবাদ করেছে আব্দুর রহমান
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
১ দিন আগেট্রাম্প ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে পারে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পেছনের সারিতে থাকলেও বাংলাদেশ,
১ দিন আগেড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
২ দিন আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৩ দিন আগে