আব্দুর রহমান, ঢাকা
অবরুদ্ধ গাজায় বড় আকারের স্থল অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে দেশটি বিগত ৭৫ বছরের ইতিহাসের মধ্যে রেকর্ড ৩ লাখ রিজার্ভ সেনাকে সক্রিয় দায়িত্বে ডেকে পাঠিয়েছে। কিন্তু গাজায় স্থল অভিযান যতটা সহজ ভাবা হচ্ছে, বাস্তবে তা নাও হতে পারে।
গাজায় জনসংখ্যার ঘনত্ব ও হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলি–মার্কিনদের কারণে অভিযানটি জটিল হবে। এ ছাড়া গাজা উপত্যকাজুড়ে বিস্তৃত ভূগর্ভস্থ টানেলের নেটওয়ার্ক ইসরায়েলি সৈন্যদের জন্য অভিযান সত্যিকার অর্থে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সিআইএ প্রধান লিওন প্যানেটা বলেন, ‘গাজায় অভিযানের ক্ষেত্রে মূল সমস্যাটি হলো, মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে যুদ্ধ করা। এটি করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীকে চড়া মূল্য চোকাতে হতে পারে।’ তবে হামাসকে নির্মূল করতে ইসরায়েলের এই অভিযানের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
গাজায় ইসরায়েলি অভিযান উভয় পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হবে। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—গাজায় অভিযান চালানোর পর যে প্রতিক্রিয়া হবে ইসরায়েল সেটি মোকাবিলা করতে পারবে কি না। বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের যে প্রক্রিয়া সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধ নতুন জ্বালানি পাবে কি না সেটিও প্রশ্ন। আর এমনটি হলে ইসরায়েল তা কীভাবে মোকাবিলা করবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গাজায় যুদ্ধের তীব্রতা কেমন হতে পারে সে বিষয়ে এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা বলেন, এ ক্ষেত্রে ২০০৪ সালে ইরাকে ফালুজা শহর মুক্ত করতে গিয়ে যে লড়াই হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। সে বছর ফালুজায় ব্যাপক স্ট্রিট ফাইট বা শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ হয়েছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘গাজায় হামাসের প্রতিরোধ অনেক তীব্র হবে। কারণ, প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ হামাসকে সহযোগিতা দেওয়ায় গোষ্ঠীটি আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং ইসরায়েলের স্থল অভিযানের সময় ওই দেশগুলো হামাসকে সহায়তা দিয়ে যাবে।’
যদিও ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় স্থল অভিযানের ঘোষণা দেয়নি। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আমরা আগামী দিনে আমাদের শত্রুদের এমন হাল করব যে, তাদের পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম তা মনে রাখবে।’
ইসরায়েলের সামরিক প্রস্তুতিও যেন নেতানিয়াহুর কথারই প্রতিধ্বনি করছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলছে, ইসরায়েল বড় একটা কিছু করার জন্যই প্রস্তুত হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটি গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে, নৌবাহিনী ব্যবহার করেও হামলা চালিয়েছে তারা। গাজা সীমান্তের ঠিক কাছে অবস্থিত সেনা ঘাঁটিতে কয়েক হাজার সেনা জড়ো করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ট্যাংক। ডেকে পাঠিয়েছে ৩ লাখ রিজার্ভ সৈন্যকেও।
এই অবস্থায় হামাসের প্রতি আগাম হুমকি দিয়ে ইসরায়েলের সশস্ত্রবাহিনীর মুখপাত্র রিচার্ড হেক্ট বলেছেন, ‘ইসরায়েল খুবই আগ্রাসী ও তীব্রভাবে হামাসের হামলার জবাব দিতে যাচ্ছে এবং সেখানে (গাজায়) ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে।’
গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযানের মূল কারণ বোধ হয়, গাজা উপত্যকাজুড়ে বিস্তৃত টানেল নেটওয়ার্ক। এগুলো হামাসের আশ্রয় এবং অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি গাজাবাসী এই টানেলকে দেশের বাইরে থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এনে থাকে। ইসরায়েলের প্রধান টার্গেট বোধ হয় এই টানেল নেটওয়ার্ক।
তবে টানেল নেটওয়ার্কে অভিযান পরিচালনা মোটেও সহজ হবে না বলে ধারণা সাবেক মার্কিন জেনারেল ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির পরিচালক কেইথ আলেক্সান্ডারের। তিনি বলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে তাদের (ইসরায়েলি বাহিনীকে) সেখানে প্রবেশ করতে হবেই। তবে সেখানে তাদের অভিযান পরিচালনার সুযোগ হবে খুব সামান্য।’ এ সময় তিনি টানেল নেটওয়ার্কের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এটি আসলেই একটি বড় এলাকা এবং এটি কভার করতে হলে বিপুল পরিমাণ সৈন্য লাগবে।’
ইসরায়েলের স্থল অভিযানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে গাজার জনসংখ্যা ঘনত্ব। মাত্র ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটারের এই এলাকায় বসবাস করেন ২০ লাখের বেশি মানুষ। ফলে এখানে স্থল অভিযান চালালে ব্যাপক বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারাতে পারে। আরব দেশগুলোর কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ব্যাপক বেসামরিক প্রাণহানি আরব জনগণকে ইসরায়েলের প্রতি আরও বেশি বিরূপ মনোভাব সম্পন্ন করে তুলতে পারে। যার ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে এসব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে প্রক্রিয়া তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক সিনিয়র ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস অফিসার উইলিয়াম উশার বলেন, ‘(গাজায়) ইসরায়েলি দখলদারি ও ইসরায়েলের প্রতি আরব দেশগুলোর নীরব সমর্থন যত দীর্ঘায়িত হবে আরব দেশগুলোর সরকার জনগণের কাছ থেকে তত বেশি চাপের মুখে পড়বে। এর ফলাফল হবে ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও গণসংযোগ ব্যর্থতা।’
ইসরায়েলের স্থল অভিযানের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় ইস্যু হলো—হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলি শ খানেক জিম্মি। হামাস এরই মধ্যে জানিয়েছে, ইসরায়েল যদি ঘোষণা ছাড়া কোনো অভিযান চালায় তাহলে তারা প্রতিটি অভিযানের বিপরীতে একজন করে জিম্মিকে হত্যা করবে। সব মিলিয়ে যেকোনো বিবেচনায় ইসরায়েলের স্থল অভিযানের সাফল্য অনিশ্চিত।
এর বাইরে, যুদ্ধ বিভিন্ন ফ্রন্ট বিশেষ করে সিরিয়া ও লেবাননের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এরই মধ্যে সিরিয়া থেকে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। পরিস্থিতি আরও কঠিন ও জটিল হয়ে পড়লে প্রেক্ষাপটে ইরানের আবির্ভাব হতে পারে। সেই ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেছেন, ‘গাজায় যেকোনো হত্যাকাণ্ড ও গণহত্যা ইসরায়েলের ওপর বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনবে।’ তবে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে সরাসরি এই সংকটে জড়িয়ে না পড়তে সতর্ক করে দিয়েছে।
দীর্ঘ ৭৫ বছরেও রাজনৈতিক উপায়ে ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ইসরায়েলের এই অভিযানের পর সবকিছু মিটে যাবে— এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। আবার দীর্ঘ মেয়াদে গাজায় বাহিনী মোতায়েন রাখাও ইসরায়েলের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে। ঠিক এ কারণেই ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেছিল।
তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইসরায়েলিরা এবার বেপরোয়া। সম্ভবত তারা হামাসের নির্মূল চায়। এ বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ইয়োশি কুপারওয়াসার বলেন, ‘যুদ্ধ তখনই শেষ হবে যখন তারা (হামাস) ভবিষ্যতে কোনো ধরনে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর বিষয়টি চিরতরে বন্ধ করে দেবে। কারণ ইসরায়েলি জনগণ বুঝতে পেরেছে, হামাসকে পাশে রেখে বসবাস করার অর্থ কী? তাই তারা তাদের পাশ থেকে হামাসকে উৎখাত করতে যেকোনো মূল্য চোকাতে প্রস্তুত।’
কিন্তু ইতিহাস কী কখনো একপক্ষের কথা বলে? ইতিহাসের দুই পৃষ্ঠায়ই লেখা থাকে উভয় পক্ষের কথা। ফলে ইসরায়েল চাইলেই সবকিছু তাদের মতো হবে— এমন হওয়ার নয়। কারণ গত বছরের ডিসেম্বরেই হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মাহমুদ আল–জাহার হুমকি দিয়ে রেখেছেন, ‘৫১ কোটি বর্গকিলোমিটারের পৃথিবী এমন ব্যবস্থার অধীনে আসবে, যেখানে কোনো অন্যায়, নিপীড়ন থাকবে না। ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাকের মতো আরবের অন্যান্য দেশের জনগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে যেরকম হত্যা ও অপরাধ সংঘটিত হয়, সেসবও থাকবে না।’
কেবল তাই নয়, হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা আলি বারাকাহ বলেছেন, হামাসের অস্ত্রাগারে দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালানোর মতো রকেট রয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। এমনকি যুদ্ধ যদি দীর্ঘায়িত হয়, তার জন্যও আমরা প্রস্তুত।’ ফলে গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান খুব সহজ হবে না— এটা নিশ্চিত।
তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ, আল জাজিরা, এএফপি
অবরুদ্ধ গাজায় বড় আকারের স্থল অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। এরই মধ্যে দেশটি বিগত ৭৫ বছরের ইতিহাসের মধ্যে রেকর্ড ৩ লাখ রিজার্ভ সেনাকে সক্রিয় দায়িত্বে ডেকে পাঠিয়েছে। কিন্তু গাজায় স্থল অভিযান যতটা সহজ ভাবা হচ্ছে, বাস্তবে তা নাও হতে পারে।
গাজায় জনসংখ্যার ঘনত্ব ও হামাসের হাতে জিম্মি ইসরায়েলি–মার্কিনদের কারণে অভিযানটি জটিল হবে। এ ছাড়া গাজা উপত্যকাজুড়ে বিস্তৃত ভূগর্ভস্থ টানেলের নেটওয়ার্ক ইসরায়েলি সৈন্যদের জন্য অভিযান সত্যিকার অর্থে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও সিআইএ প্রধান লিওন প্যানেটা বলেন, ‘গাজায় অভিযানের ক্ষেত্রে মূল সমস্যাটি হলো, মানুষের দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে যুদ্ধ করা। এটি করতে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীকে চড়া মূল্য চোকাতে হতে পারে।’ তবে হামাসকে নির্মূল করতে ইসরায়েলের এই অভিযানের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তিনি।
গাজায় ইসরায়েলি অভিযান উভয় পক্ষেরই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কারণ হবে। কিন্তু তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—গাজায় অভিযান চালানোর পর যে প্রতিক্রিয়া হবে ইসরায়েল সেটি মোকাবিলা করতে পারবে কি না। বিশেষ করে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের যে প্রক্রিয়া সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সীমান্ত সংক্রান্ত বিরোধ নতুন জ্বালানি পাবে কি না সেটিও প্রশ্ন। আর এমনটি হলে ইসরায়েল তা কীভাবে মোকাবিলা করবে তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
গাজায় যুদ্ধের তীব্রতা কেমন হতে পারে সে বিষয়ে এক মার্কিন সেনা কর্মকর্তা বলেন, এ ক্ষেত্রে ২০০৪ সালে ইরাকে ফালুজা শহর মুক্ত করতে গিয়ে যে লড়াই হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। সে বছর ফালুজায় ব্যাপক স্ট্রিট ফাইট বা শহরের রাস্তায় রাস্তায় যুদ্ধ হয়েছিল। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘গাজায় হামাসের প্রতিরোধ অনেক তীব্র হবে। কারণ, প্রতিবেশী কয়েকটি দেশ হামাসকে সহযোগিতা দেওয়ায় গোষ্ঠীটি আগের তুলনায় অনেক শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং ইসরায়েলের স্থল অভিযানের সময় ওই দেশগুলো হামাসকে সহায়তা দিয়ে যাবে।’
যদিও ইসরায়েল আনুষ্ঠানিকভাবে গাজায় স্থল অভিযানের ঘোষণা দেয়নি। তবে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘আমরা আগামী দিনে আমাদের শত্রুদের এমন হাল করব যে, তাদের পরবর্তী কয়েক প্রজন্ম তা মনে রাখবে।’
ইসরায়েলের সামরিক প্রস্তুতিও যেন নেতানিয়াহুর কথারই প্রতিধ্বনি করছে। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বলছে, ইসরায়েল বড় একটা কিছু করার জন্যই প্রস্তুত হচ্ছে। এরই মধ্যে দেশটি গাজায় বিমান হামলা চালিয়েছে, নৌবাহিনী ব্যবহার করেও হামলা চালিয়েছে তারা। গাজা সীমান্তের ঠিক কাছে অবস্থিত সেনা ঘাঁটিতে কয়েক হাজার সেনা জড়ো করা হয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আনা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ট্যাংক। ডেকে পাঠিয়েছে ৩ লাখ রিজার্ভ সৈন্যকেও।
এই অবস্থায় হামাসের প্রতি আগাম হুমকি দিয়ে ইসরায়েলের সশস্ত্রবাহিনীর মুখপাত্র রিচার্ড হেক্ট বলেছেন, ‘ইসরায়েল খুবই আগ্রাসী ও তীব্রভাবে হামাসের হামলার জবাব দিতে যাচ্ছে এবং সেখানে (গাজায়) ব্যাপক প্রাণহানি ঘটবে।’
গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযানের মূল কারণ বোধ হয়, গাজা উপত্যকাজুড়ে বিস্তৃত টানেল নেটওয়ার্ক। এগুলো হামাসের আশ্রয় এবং অস্ত্রাগার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাশাপাশি গাজাবাসী এই টানেলকে দেশের বাইরে থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এনে থাকে। ইসরায়েলের প্রধান টার্গেট বোধ হয় এই টানেল নেটওয়ার্ক।
তবে টানেল নেটওয়ার্কে অভিযান পরিচালনা মোটেও সহজ হবে না বলে ধারণা সাবেক মার্কিন জেনারেল ও দেশটির জাতীয় নিরাপত্তা এজেন্সির পরিচালক কেইথ আলেক্সান্ডারের। তিনি বলেন, ‘একটি নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে তাদের (ইসরায়েলি বাহিনীকে) সেখানে প্রবেশ করতে হবেই। তবে সেখানে তাদের অভিযান পরিচালনার সুযোগ হবে খুব সামান্য।’ এ সময় তিনি টানেল নেটওয়ার্কের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘এটি আসলেই একটি বড় এলাকা এবং এটি কভার করতে হলে বিপুল পরিমাণ সৈন্য লাগবে।’
ইসরায়েলের স্থল অভিযানের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে গাজার জনসংখ্যা ঘনত্ব। মাত্র ৩৬৫ বর্গ কিলোমিটারের এই এলাকায় বসবাস করেন ২০ লাখের বেশি মানুষ। ফলে এখানে স্থল অভিযান চালালে ব্যাপক বেসামরিক মানুষ প্রাণ হারাতে পারে। আরব দেশগুলোর কর্মকর্তারা আশঙ্কা করছেন, ব্যাপক বেসামরিক প্রাণহানি আরব জনগণকে ইসরায়েলের প্রতি আরও বেশি বিরূপ মনোভাব সম্পন্ন করে তুলতে পারে। যার ফলে ইসরায়েলের সঙ্গে এসব দেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার যে প্রক্রিয়া তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর সাবেক সিনিয়র ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস অফিসার উইলিয়াম উশার বলেন, ‘(গাজায়) ইসরায়েলি দখলদারি ও ইসরায়েলের প্রতি আরব দেশগুলোর নীরব সমর্থন যত দীর্ঘায়িত হবে আরব দেশগুলোর সরকার জনগণের কাছ থেকে তত বেশি চাপের মুখে পড়বে। এর ফলাফল হবে ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও গণসংযোগ ব্যর্থতা।’
ইসরায়েলের স্থল অভিযানের ক্ষেত্রে আরেকটি বড় ইস্যু হলো—হামাসের হাতে বন্দী ইসরায়েলি শ খানেক জিম্মি। হামাস এরই মধ্যে জানিয়েছে, ইসরায়েল যদি ঘোষণা ছাড়া কোনো অভিযান চালায় তাহলে তারা প্রতিটি অভিযানের বিপরীতে একজন করে জিম্মিকে হত্যা করবে। সব মিলিয়ে যেকোনো বিবেচনায় ইসরায়েলের স্থল অভিযানের সাফল্য অনিশ্চিত।
এর বাইরে, যুদ্ধ বিভিন্ন ফ্রন্ট বিশেষ করে সিরিয়া ও লেবাননের সীমান্তেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এরই মধ্যে সিরিয়া থেকে ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামলা চালানো হয়েছে। ইসরায়েলও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। পরিস্থিতি আরও কঠিন ও জটিল হয়ে পড়লে প্রেক্ষাপটে ইরানের আবির্ভাব হতে পারে। সেই ইঙ্গিত আগেই দিয়ে রেখেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। তিনি বলেছেন, ‘গাজায় যেকোনো হত্যাকাণ্ড ও গণহত্যা ইসরায়েলের ওপর বড় ধরনের বিপর্যয় ডেকে আনবে।’ তবে যুক্তরাষ্ট্র ইরানকে সরাসরি এই সংকটে জড়িয়ে না পড়তে সতর্ক করে দিয়েছে।
দীর্ঘ ৭৫ বছরেও রাজনৈতিক উপায়ে ইসরায়েল–ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ইসরায়েলের এই অভিযানের পর সবকিছু মিটে যাবে— এমনটা ভাবা ঠিক হবে না। আবার দীর্ঘ মেয়াদে গাজায় বাহিনী মোতায়েন রাখাও ইসরায়েলের জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে। ঠিক এ কারণেই ২০০৫ সালে ইসরায়েল গাজা থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করেছিল।
তবে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ইসরায়েলিরা এবার বেপরোয়া। সম্ভবত তারা হামাসের নির্মূল চায়। এ বিষয়ে ইসরায়েলের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের সাবেক শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ইয়োশি কুপারওয়াসার বলেন, ‘যুদ্ধ তখনই শেষ হবে যখন তারা (হামাস) ভবিষ্যতে কোনো ধরনে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর বিষয়টি চিরতরে বন্ধ করে দেবে। কারণ ইসরায়েলি জনগণ বুঝতে পেরেছে, হামাসকে পাশে রেখে বসবাস করার অর্থ কী? তাই তারা তাদের পাশ থেকে হামাসকে উৎখাত করতে যেকোনো মূল্য চোকাতে প্রস্তুত।’
কিন্তু ইতিহাস কী কখনো একপক্ষের কথা বলে? ইতিহাসের দুই পৃষ্ঠায়ই লেখা থাকে উভয় পক্ষের কথা। ফলে ইসরায়েল চাইলেই সবকিছু তাদের মতো হবে— এমন হওয়ার নয়। কারণ গত বছরের ডিসেম্বরেই হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা মাহমুদ আল–জাহার হুমকি দিয়ে রেখেছেন, ‘৫১ কোটি বর্গকিলোমিটারের পৃথিবী এমন ব্যবস্থার অধীনে আসবে, যেখানে কোনো অন্যায়, নিপীড়ন থাকবে না। ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাকের মতো আরবের অন্যান্য দেশের জনগোষ্ঠীদের বিরুদ্ধে যেরকম হত্যা ও অপরাধ সংঘটিত হয়, সেসবও থাকবে না।’
কেবল তাই নয়, হামাসের শীর্ষস্থানীয় নেতা আলি বারাকাহ বলেছেন, হামাসের অস্ত্রাগারে দীর্ঘদিন যুদ্ধ চালানোর মতো রকেট রয়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা সব ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রয়েছি। এমনকি যুদ্ধ যদি দীর্ঘায়িত হয়, তার জন্যও আমরা প্রস্তুত।’ ফলে গাজায় ইসরায়েলের স্থল অভিযান খুব সহজ হবে না— এটা নিশ্চিত।
তথ্যসূত্র: ব্লুমবার্গ, আল জাজিরা, এএফপি
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
৩ দিন আগেট্রাম্প ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে পারে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পেছনের সারিতে থাকলেও বাংলাদেশ,
৩ দিন আগেড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
৪ দিন আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৫ দিন আগে