অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে আগের যে কোনো সময়ের সংঘাতের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনকে জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যেখানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তাঁর শীর্ষ কর্মকর্তারা শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকে ইসরায়েলে হামাসের সর্বাত্মক হামলা এবং ফিলিস্তিনের গাজায় তেল আবিবের পাল্টা হামলা হজম করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক নিন্দা জানানো ছাড়া দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কয়েক দশকের পুরোনো বন্ধু। কিন্তু সর্বশেষ সরকার গঠনের সময় উগ্র ডানপন্থীদের সঙ্গে জোট বাঁধা নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্ক শীতল হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনে বসতি সম্প্রসারণ ও নিজ দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মতো বিষয় নিয়ে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কারণে দুই দেশের সম্পর্কে একটা চাপা উত্তেজনা চলছে।
হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে এরই মধ্যে দুই শতাধিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেনা সদস্যসহ বেশ কিছু বেসামরিক নাগরিক হামাস যোদ্ধাদের হাতে জিম্মি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমগুলো। জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী সহযোদ্ধাদের মুক্তি দাবি করছে হামাস। বিপরীতে গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলায় নিহত দুইশ ছাড়িয়ে গেছে। এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখনই অনুমান করা মুশকিল।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে রোববার (৮ অক্টোবর) জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তবে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবি বাস্তবায়নের যে প্রক্রিয়া জরুরি সেটি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ কঠিনই হতে যাচ্ছে, কারণ:
ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক পরিবেশ খুবই নাজুক, রাজনীতি মোটা দাগে হামাস এবং পিএলও—এ দুই দলে বিভক্ত। সেই সঙ্গে বেশ কিছু স্বাধীন সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে। ফলে আলোচনার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পক্ষ বেছে নেওয়া আমেরিকান কর্মকর্তাদের জন্য কঠিন হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার–প্রচারণার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই প্রচারণায় ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক চুক্তি ইসরায়েলে হামলার জ্বালানি জুগিয়েছে বলে বাইডেন প্রশাসনকে দোষারোপ করা হবে বলেই ধরে নেওয়া যায়।
এ ছাড়া ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তির মধ্যস্থতা করছেন বাইডেন। এই চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন বলেই আশা করছেন তিনি। এই পদক্ষেপও ইসরায়েলের আজকের পরিণতির পটভূমি তৈরি করেছে বলেও প্রচার করা হতে পারে।
সর্বোপরি বাইডেনের আমলেই ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি সবচেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে এরই মধ্যে নিজের ঘরে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বাইডেন।
শনিবার বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোন কল করে বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সরকার ও জনগণকে সব ধরনের সমর্থন দিতে প্রস্তুত আছি।’ পরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস কখনই ন্যায়সংগত হতে পারেন না। ইসরায়েলের নিজেকে এবং তার জনগণকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।’ এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন কোনো পক্ষ সুবিধা নিতে চায় কি না সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
শেষবার যখন গাজা এবং ইসরায়েলের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত শুরু হয়েছিল, তখন বাইডেন এবং জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তারা যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় পর্দার পেছনে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ওই সময় নেতানিয়াহুর সঙ্গে বাইডেন ছয়বার কথা বলেছেন। এ ছাড়া ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস (অবশ্য গাজার ওপর তাঁর কোনো কর্তৃত্ব নেই) এবং মিসরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসির সঙ্গেও একবার করে কথা বলেছেন বাইডেন।
মার্কিন কর্মকর্তারাও ঘণ্টায় ঘণ্টায় এই অঞ্চলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সমঝোতার জন্য গাজায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে কাজ করার জন্য মিসর ও কাতারের নেতাদের ওপর ভরসা করেছিলেন তাঁরা।
একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ডেমোক্র্যাট দলের অনেক নেতা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বল প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে হোয়াইট হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হিসাব নিকাশ করে দেখেছেন, সহিংসতার অবসান ঘটাতে মিত্রদের সঙ্গে শান্তভাবে কাজ করাই বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে।
এ হলো দুই বছরেরও বেশি সময় আগের কথা। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র–ইসরায়েল সম্পর্ক দ্রুত জটিল হয়ে উঠেছে।
নেতানিয়াহু সরকারের নিজ দেশের বিচার বিভাগের ক্ষমতা হ্রাসে আইন সংশোধন উদ্যোগের সরাসরি সমালোচনা করেছে বাইডেন প্রশাসন। বাইডেন নিজে এবং অন্য কর্মকর্তারা এমন পদক্ষেপকে ‘গণতন্ত্রের ক্ষয়’ বলে অভিহিত করেছেন। এই প্রতিক্রিয়া দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্কে আরও জল ঢেলেছে। গত মাসে দুই নেতা নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে সাইডলাইনে আলোচনার জন্য বসেছিলেন। অথচ এই বৈঠক আরও আগেই হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় বাইডেনও স্বীকার করেছিলেন যে, ভারসাম্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে তাঁদের দুজনের মধ্যে অনেক ‘কঠিন ইস্যু’ ছিল।
সেই বৈঠকটি শেষ পর্যন্ত ‘খুব গঠনমূলক’ এবং ‘খুব অকপট’ হয়েছে বলে একজন কর্মকর্তা পরে বলেছিলেন। বৈঠকে কোনো সহকারী উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠক ছিল দীর্ঘ। একের পর এক ইস্যু আলোচনায় এসেছে। বাইডেন পরে নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে আসার আমন্ত্রণ জানান।
তবুও নেতানিয়াহু তাঁর উগ্র ডানপন্থী শরিকদের সঙ্গে জোট অক্ষুণ্ন রাখারই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ফলে চলমান সংঘাতে মার্কিন কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ আরও কঠিন হয়ে উঠবে কারণ, নেতানিয়াহু তাঁর শরিকদের দিক থেকে ফিলিস্তিনে পাল্টা ও সর্বাত্মক হামলা পরিচালনার চাপে থাকবেন।
ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নেতা মাহমুদ আব্বাস। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) এ নেতা ইয়াসির আরাফাতের উত্তরসূরি। তিনি এখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট। আব্বাস সর্বশেষ ২০০৫ সালে চার বছর মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর বেশ কয়েকটি নির্বাচন বাতিল করার পর থেকে ক্ষমতায় রয়ে গেছেন। যেখানে গাজা উপত্যকায় তাঁর ও তাঁর দলের কোনো কর্তৃত্ব নেই। ইসরায়েলি অবরোধের মুখে থাকা এই বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে সশস্ত্র সংগঠন হামাস।
ফিলিস্তিনের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি সেখানে সংঘাত নিরসনে আমেরিকার কূটনৈতিক পদক্ষেপকে জটিলতার মুখে ঠেলে দিয়েছে। কারণ আলোচনার জন্য কোনো স্বীকৃত ও নির্ভরযোগ্য পক্ষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
গত সপ্তাহে ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি বড় চুক্তি সম্পাদনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন বাইডেন। আশা করা হচ্ছে, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের রূপই বদলে দেবে।
আশা করা হয়েছিল, ফিলিস্তিনিদের জন্য কিছু ছাড় দিতে সম্মত হবেন নেতানিয়াহু—এই মর্মে কিছু বিষয় চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর মধ্যে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ এবং একটি চূড়ান্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আমেরিকার কর্মকর্তারাও এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
শনিবার সংঘাত শুরু হওয়ার ফলে নেতানিয়াহু এখন সেই ছাড়গুলো দিতে সম্মত হবেন কি না তা বলা কঠিন।
ইসরায়েলে ৫ হাজার রকেট হামলা করেছে হামাস। নিহত হয়েছে দুই শতাধিক। বহু ইসরায়েলি তাদের হাতে জিম্মি। ইসরায়েলের এই পরিস্থিতির জন্য বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি বাইডেনকেই দায়ী করবে—এটা ধরেই নেওয়া যায়। এরই মধ্যে এক্স (টুইটার) প্ল্যাটফর্মে রিপাবলিকান ও রক্ষণশীল আমেরিকানরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের আব্রাহাম অ্যাকর্ডে বাইডেনের অনীহাই আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে প্রচার চালাচ্ছে। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বাইডেন নতুন ও অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন।
বাইডেন প্রশাসন চলতি বছর পাঁচজন আমেরিকানকে মুক্ত করার চুক্তির অংশ হিসেবে ইরানের কয়েকশ কোটি ডলারের তহবিল ছাড় করতে সম্মত হয়েছেন। ইরানের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র এই টাকা অন্যায়ভাবে আটকে রেখেছিল। নিশ্চিতভাবে এই ইস্যুটি বিরোধীরা সামনে আনবে। কারণ ইরান হামাসকে তহবিল জোগান দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে ইসরায়েল হামলায় ইরানের নামও উচ্চারিত হচ্ছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ইসরায়েলে হামলার জন্য হামাসকে অভিনন্দন জানিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের চুক্তি ইসরায়েল ইস্যুর দিকেই মোড় নেবে।
সিএনএন অবলম্বনে জাহাঙ্গীর আলম
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে আগের যে কোনো সময়ের সংঘাতের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনকে জটিল কূটনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। যেখানে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং তাঁর শীর্ষ কর্মকর্তারা শনিবার (৭ অক্টোবর) সকাল থেকে ইসরায়েলে হামাসের সর্বাত্মক হামলা এবং ফিলিস্তিনের গাজায় তেল আবিবের পাল্টা হামলা হজম করে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক নিন্দা জানানো ছাড়া দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কয়েক দশকের পুরোনো বন্ধু। কিন্তু সর্বশেষ সরকার গঠনের সময় উগ্র ডানপন্থীদের সঙ্গে জোট বাঁধা নিয়ে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বাইডেনের সম্পর্ক শীতল হতে শুরু করে। সেই সঙ্গে ফিলিস্তিনে বসতি সম্প্রসারণ ও নিজ দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের মতো বিষয় নিয়ে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের কারণে দুই দেশের সম্পর্কে একটা চাপা উত্তেজনা চলছে।
হামাসের আকস্মিক হামলায় ইসরায়েলে এরই মধ্যে দুই শতাধিক নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেনা সদস্যসহ বেশ কিছু বেসামরিক নাগরিক হামাস যোদ্ধাদের হাতে জিম্মি বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যমগুলো। জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দী সহযোদ্ধাদের মুক্তি দাবি করছে হামাস। বিপরীতে গাজায় ইসরায়েলের ব্যাপক বিমান হামলায় নিহত দুইশ ছাড়িয়ে গেছে। এই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা এখনই অনুমান করা মুশকিল।
এদিকে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি নিয়ে রোববার (৮ অক্টোবর) জরুরি বৈঠক ডেকেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। তবে এই পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবি বাস্তবায়নের যে প্রক্রিয়া জরুরি সেটি বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ কঠিনই হতে যাচ্ছে, কারণ:
ফিলিস্তিনের রাজনৈতিক পরিবেশ খুবই নাজুক, রাজনীতি মোটা দাগে হামাস এবং পিএলও—এ দুই দলে বিভক্ত। সেই সঙ্গে বেশ কিছু স্বাধীন সশস্ত্র সংগঠন রয়েছে। ফলে আলোচনার জন্য একটি নির্ভরযোগ্য পক্ষ বেছে নেওয়া আমেরিকান কর্মকর্তাদের জন্য কঠিন হবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার–প্রচারণার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী বাছাইয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই প্রচারণায় ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক চুক্তি ইসরায়েলে হামলার জ্বালানি জুগিয়েছে বলে বাইডেন প্রশাসনকে দোষারোপ করা হবে বলেই ধরে নেওয়া যায়।
এ ছাড়া ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে একটি ঐতিহাসিক স্বাভাবিকীকরণ চুক্তির মধ্যস্থতা করছেন বাইডেন। এই চুক্তির দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছেন বলেই আশা করছেন তিনি। এই পদক্ষেপও ইসরায়েলের আজকের পরিণতির পটভূমি তৈরি করেছে বলেও প্রচার করা হতে পারে।
সর্বোপরি বাইডেনের আমলেই ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি সবচেয়ে অস্থির হয়ে উঠেছে। এর মধ্যে ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে এরই মধ্যে নিজের ঘরে রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন বাইডেন।
শনিবার বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে ফোন কল করে বলেন, ‘আমরা ইসরায়েলের সরকার ও জনগণকে সব ধরনের সমর্থন দিতে প্রস্তুত আছি।’ পরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘সন্ত্রাস কখনই ন্যায়সংগত হতে পারেন না। ইসরায়েলের নিজেকে এবং তার জনগণকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে।’ এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন কোনো পক্ষ সুবিধা নিতে চায় কি না সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
শেষবার যখন গাজা এবং ইসরায়েলের মধ্যে বড় ধরনের সংঘাত শুরু হয়েছিল, তখন বাইডেন এবং জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তারা যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় পর্দার পেছনে থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। ওই সময় নেতানিয়াহুর সঙ্গে বাইডেন ছয়বার কথা বলেছেন। এ ছাড়া ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস (অবশ্য গাজার ওপর তাঁর কোনো কর্তৃত্ব নেই) এবং মিসরীয় প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসির সঙ্গেও একবার করে কথা বলেছেন বাইডেন।
মার্কিন কর্মকর্তারাও ঘণ্টায় ঘণ্টায় এই অঞ্চলের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন এবং যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সমঝোতার জন্য গাজায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে কাজ করার জন্য মিসর ও কাতারের নেতাদের ওপর ভরসা করেছিলেন তাঁরা।
একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ডেমোক্র্যাট দলের অনেক নেতা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বল প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে হোয়াইট হাউসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হিসাব নিকাশ করে দেখেছেন, সহিংসতার অবসান ঘটাতে মিত্রদের সঙ্গে শান্তভাবে কাজ করাই বেশি ফলপ্রসূ হতে পারে।
এ হলো দুই বছরেরও বেশি সময় আগের কথা। এরপর থেকে যুক্তরাষ্ট্র–ইসরায়েল সম্পর্ক দ্রুত জটিল হয়ে উঠেছে।
নেতানিয়াহু সরকারের নিজ দেশের বিচার বিভাগের ক্ষমতা হ্রাসে আইন সংশোধন উদ্যোগের সরাসরি সমালোচনা করেছে বাইডেন প্রশাসন। বাইডেন নিজে এবং অন্য কর্মকর্তারা এমন পদক্ষেপকে ‘গণতন্ত্রের ক্ষয়’ বলে অভিহিত করেছেন। এই প্রতিক্রিয়া দুই পক্ষের মধ্যে সম্পর্কে আরও জল ঢেলেছে। গত মাসে দুই নেতা নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে সাইডলাইনে আলোচনার জন্য বসেছিলেন। অথচ এই বৈঠক আরও আগেই হওয়ার কথা ছিল। ওই সময় বাইডেনও স্বীকার করেছিলেন যে, ভারসাম্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে তাঁদের দুজনের মধ্যে অনেক ‘কঠিন ইস্যু’ ছিল।
সেই বৈঠকটি শেষ পর্যন্ত ‘খুব গঠনমূলক’ এবং ‘খুব অকপট’ হয়েছে বলে একজন কর্মকর্তা পরে বলেছিলেন। বৈঠকে কোনো সহকারী উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠক ছিল দীর্ঘ। একের পর এক ইস্যু আলোচনায় এসেছে। বাইডেন পরে নেতানিয়াহুকে হোয়াইট হাউসে আসার আমন্ত্রণ জানান।
তবুও নেতানিয়াহু তাঁর উগ্র ডানপন্থী শরিকদের সঙ্গে জোট অক্ষুণ্ন রাখারই চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ফলে চলমান সংঘাতে মার্কিন কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ আরও কঠিন হয়ে উঠবে কারণ, নেতানিয়াহু তাঁর শরিকদের দিক থেকে ফিলিস্তিনে পাল্টা ও সর্বাত্মক হামলা পরিচালনার চাপে থাকবেন।
ফিলিস্তিনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নেতা মাহমুদ আব্বাস। প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) এ নেতা ইয়াসির আরাফাতের উত্তরসূরি। তিনি এখন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট। আব্বাস সর্বশেষ ২০০৫ সালে চার বছর মেয়াদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর বেশ কয়েকটি নির্বাচন বাতিল করার পর থেকে ক্ষমতায় রয়ে গেছেন। যেখানে গাজা উপত্যকায় তাঁর ও তাঁর দলের কোনো কর্তৃত্ব নেই। ইসরায়েলি অবরোধের মুখে থাকা এই বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে সশস্ত্র সংগঠন হামাস।
ফিলিস্তিনের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতি সেখানে সংঘাত নিরসনে আমেরিকার কূটনৈতিক পদক্ষেপকে জটিলতার মুখে ঠেলে দিয়েছে। কারণ আলোচনার জন্য কোনো স্বীকৃত ও নির্ভরযোগ্য পক্ষ খুঁজে পাওয়া কঠিন।
গত সপ্তাহে ইসরায়েল এবং সৌদি আরবের মধ্যে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য একটি বড় চুক্তি সম্পাদনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন বাইডেন। আশা করা হচ্ছে, এই চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যের রূপই বদলে দেবে।
আশা করা হয়েছিল, ফিলিস্তিনিদের জন্য কিছু ছাড় দিতে সম্মত হবেন নেতানিয়াহু—এই মর্মে কিছু বিষয় চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর মধ্যে ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ বন্ধ এবং একটি চূড়ান্ত ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে। আমেরিকার কর্মকর্তারাও এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
শনিবার সংঘাত শুরু হওয়ার ফলে নেতানিয়াহু এখন সেই ছাড়গুলো দিতে সম্মত হবেন কি না তা বলা কঠিন।
ইসরায়েলে ৫ হাজার রকেট হামলা করেছে হামাস। নিহত হয়েছে দুই শতাধিক। বহু ইসরায়েলি তাদের হাতে জিম্মি। ইসরায়েলের এই পরিস্থিতির জন্য বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি বাইডেনকেই দায়ী করবে—এটা ধরেই নেওয়া যায়। এরই মধ্যে এক্স (টুইটার) প্ল্যাটফর্মে রিপাবলিকান ও রক্ষণশীল আমেরিকানরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের আব্রাহাম অ্যাকর্ডে বাইডেনের অনীহাই আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী বলে প্রচার চালাচ্ছে। ফলে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে সামনে রেখে এখন অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বাইডেন নতুন ও অপ্রত্যাশিত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে যাচ্ছেন।
বাইডেন প্রশাসন চলতি বছর পাঁচজন আমেরিকানকে মুক্ত করার চুক্তির অংশ হিসেবে ইরানের কয়েকশ কোটি ডলারের তহবিল ছাড় করতে সম্মত হয়েছেন। ইরানের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র এই টাকা অন্যায়ভাবে আটকে রেখেছিল। নিশ্চিতভাবে এই ইস্যুটি বিরোধীরা সামনে আনবে। কারণ ইরান হামাসকে তহবিল জোগান দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। ফলে ইসরায়েল হামলায় ইরানের নামও উচ্চারিত হচ্ছে। ইরানি কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ইসরায়েলে হামলার জন্য হামাসকে অভিনন্দন জানিয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তেহরানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের চুক্তি ইসরায়েল ইস্যুর দিকেই মোড় নেবে।
সিএনএন অবলম্বনে জাহাঙ্গীর আলম
ইউক্রেনের ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র সারা বিশ্বে আতঙ্ক সৃষ্টি করলেও, রাশিয়ার এ ধরনের আক্রমণকে স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে মেনে নেওয়া হয়েছে—যেমনটি ইসরায়েল উত্তর গাজাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে হয়েছে।
৩ দিন আগেট্রাম্প ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে পারে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পেছনের সারিতে থাকলেও বাংলাদেশ,
৩ দিন আগেড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
৪ দিন আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
৫ দিন আগে