অনলাইন ডেস্ক
বিপ্লবের ম্যুরালে ছেয়ে যাওয়া ঢাকা এখন কার নিয়ন্ত্রণে আছে, তা বোঝা কঠিন। যদিও আনুষ্ঠানিকতার বিচারে শেখ হাসিনার আসনে বসেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস; বেশ অনেকটা সময়ও কাটিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু তিনি এমন সুরক্ষিত অতিথিশালায় বাস করছেন, যেখানে সাধারণত রাষ্ট্রীয় অতিথিরা ওঠেন। ড. ইউনূস এখানে থাকছেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত সরকারি বাসভবন গণভবনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আর ড. ইউনূস যেখানেই যাচ্ছেন, তাঁকে অনুসরণ করছেন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত কামরাতেও তাঁদের বিচরণ।
আর কোনো পথ খোলা ছিল না বলেই ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের ভাষ্য। ছাত্ররা যখন ড. ইউনূসের কাছে এই প্রস্তাব নিয়ে যায়, ততক্ষণে বিক্ষোভে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছেন। তাঁর কাছে যেসব প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেগুলোর কারণেই মূলত ড. ইউনূস দায়িত্ব নেন এবং পুরো বিষয়টিকে তিনি ‘প্রত্যাশা ব্যবস্থাপনা’ বা ‘এক্সপেক্টেশনস ম্যানেজমেন্ট’ বলে আখ্যা দেন।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আলোচিত শব্দ হলো ‘ধৈর্য’। হাসিনার বিরোধীরা যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনে আগ্রহী। কিন্তু আন্দোলনের ছাত্রনেতারা ততটা আগ্রহী নন। তাঁরা চান, ড. ইউনূসের সরকার নির্বাচন কমিশনের সংস্কার করুক এবং নির্বাচনে যাওয়ার আগে অবাধ ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়া নিশ্চিত করুক। এই অচলাবস্থা কত দিন স্থায়ী হবে, তা কারও অনুমানেই নেই। ড. ইউনূস নিজেকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছেন। তাঁর উপদেষ্টারা বলছেন, উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের কর্মতালিকার শীর্ষে আছে মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল করা এবং মানসম্পন্ন চাকরির অভাব দূর করা।
শেখ হাসিনা সরকারকে ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি শিল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার জন্য ব্যাপক কৃতিত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, শেখ হাসিনা সরকার সম্ভবত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে উপস্থাপন করেছে। রপ্তানি, মূল্যস্ফীতি এবং মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির বিষয়ে ভুল তথ্য প্রকাশ করেছে। এই অসংগতিগুলো বিশ্লেষণ করে একটি শ্বেতপত্র প্রস্তুতের কাজ করছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
এক সাক্ষাৎকারে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ৮ শতাংশের কাছাকাছি বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত, যা ভারতের তুলনায় অর্ধেক মাত্র। বিশ্বের সবচেয়ে কম কর-জিডিপি অনুপাতের অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। দেবপ্রিয় বলেন, করপোরেট স্বার্থের কাছে সরকারকে বিক্রি করে দিয়েছেন হাসিনা। এক দশক ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে চলতি মাসেই নীতি সুদহার অর্ধশতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছর আইএমএফ থেকে পাওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ছাড়াও আরও ৫০০ কোটি ডলারের বেশি জরুরি সহায়তা প্রয়োজন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষ্য।
দেশপ্রিয়ের মতে, শেখ হাসিনা সরকার পুঁজিপতি বন্ধুদের টাকা দিয়েছে। এই পুঁজিপতিরাই এই শাসনকে টিকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু একসময়ে সরকার তার স্বায়ত্তশাসন হারিয়ে ফেলেছে।
বিগত কয়েক সপ্তাহে যেভাবে দেশজুড়ে হামলা, ভাঙচুর, পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনার কঠোর শাসনের প্রয়োজন বলে তাঁর সমর্থকেরা বলছেন। বাংলাদেশের রাজনীতি অনেকটাই ব্যক্তিগত। ১৯৭০-এর দশকে শেখ হাসিনা যখন বিদেশে ছিলেন, তখন তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও এর প্রধান খালেদা জিয়ার স্বামীকে—যিনি দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন—এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে সন্দেহ করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের কয়েক ডজন নেতা, ব্যবসায়ী টাইকুন এবং আওয়ামী লীগের পক্ষাবলম্বন করা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে আনা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এক বিচারপতি এবং শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের সমালোচক হেঁটে ভারতে প্রবেশের চেষ্টার সময় জনতার হাতে ধরা পড়েন। হাসিনার মন্ত্রীদের বেশির ভাগই গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁরা এখন আড়ালে থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছাত্র আন্দোলন কেন এখন মানবাধিকার উপেক্ষা করছে।
দেশ ছাড়ার পর থেকেই শেখ হাসিনা দিল্লিতে নিজের বিচরণ বেশ সীমিত করে রেখেছেন। সেখানে তিনি ভারত সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্রের নজরে আছেন বলে ধারণা করা হয়। কিছুদিন আগে এক বিবৃতিতে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা এবং যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের বিচার নিশ্চিত করতে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
স্বামী ফারুক মোল্লাকে হত্যার দিনটি স্মরণ করে ঢাকার উপকণ্ঠে এক অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা আয়েশা বেগম বলেন, গত মাসে একদল জনতা তাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং নিজেদের বিএনপির সদস্য বলে পরিচয় দেয়। তাঁরা আয়েশার মাথায় ছুরিকাঘাত করে এবং ফারুক মোল্লাকে কুড়াল দিয়ে আঘাত করে এবং তাদের সাত বছরের ছেলেকে হত্যা করবে কি না, তা নিয়ে তর্ক করে। সেই দলটি পাঁচ ঘণ্টা ঘটনাস্থলে অবস্থান করে এবং বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে চলে যায়। আয়শা ঢাকায় তাঁর বোনের বাসায় পালিয়ে যান।
আয়েশা বলেন, নিরীহ মানুষ ক্রসফায়ারে মারা যাচ্ছে। ফারুকের ভাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে তাঁকে হত্যা করা হয়। সরকারের কাছে স্বামীর হত্যার বিচার চান তিনি।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, প্রত্যেকের মনেই প্রতিশোধস্পৃহা কাজ করছে এবং সহিংসতার চক্র যেকোনো সময় শেষ হয়ে যাবে—এ রকমটা এখনই ভাবা কঠিন।
এসব হামলায় দলের ভূমিকা অস্বীকার করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হাসিনার সরকার ও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর কর্মকর্তারা প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড ও আওয়ামী লীগের সমর্থক সংখ্যালঘু হিন্দুদের টার্গেট করার বিষয়ে অতিরঞ্জিত প্রতিবেদন করেছেন। তাঁর মতে, ‘প্রকৃত অর্থে কোনো সমস্যা নেই।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম জোর দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনার নিজেরই কলঙ্কিত রেকর্ড। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অধীনে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা একটি গোপন কারাগার চালাত, যাকে ‘আয়নাঘর’ বলা হয়। বন্দীরা বলেছেন, তাঁদের অন্ধকার, জানালাবিহীন কক্ষে রাখা হয়েছিল। কখনো কখনো বছরের পর বছর ধরে সেখানে তাঁদের রাখা হয়। হাসিনার সমালোচনা করার বিষয়ে সেই বন্দিশালায় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ইউনূস সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নতুন সরকার যে হাসিনার সরকারের চেয়ে আলাদা, তা প্রমাণ করতে চান তাঁরা। এ কারণে এরই মধ্যে সংখ্যালঘু ও অন্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত শুরু করেছে।
পরিবেশ আন্দোলনের এই কর্মী আরও বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে হয়রানি, হত্যা, নিপীড়ন, দমন করার ফলে পচে যাওয়া একটি ব্যবস্থা থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হলো—সম্পূর্ণ নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করা।
কয়েক বছর আগে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে রিজওয়ানা হাসানের স্বামীকে অপহরণ করা হয়। পরে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু মুক্তির অনেক পর থেকে এখনো তিনি প্রতি রাতে আলো জ্বালিয়ে ঘুমান। রিজওয়ানা বলেন, ‘হাসিনা যা করেছেন, তা আমরা ক্ষমা করতে পারি না। মানুষ এখন দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাইছে। তালিকা যত দীর্ঘই হোক, তাদের দাবি পূরণ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যেসব তরুণ তুরিন আফরোজের ঘরে জোর করে প্রবেশ করেছিল, তারা তাঁর মাথা কামিয়ে দিয়েছিল। তাদের ধারণা, তুরিন আফরোজ শেখ হাসিনা সরকারের সমর্থক। যাহোক, তুরিন আফরোজ নতুন শাসন নিয়ে চিন্তিত এবং বর্তমান সময়কে তিনি ১৯৭০-এর দশকে পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীনতার লড়াইয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘চরমপন্থীরা সুযোগ পেলে তারা দেশের পতাকা, জাতীয় সংগীত এবং পরিচয় পরিবর্তন করে ফেলবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি না বাংলাদেশের কী হবে। তবে আমি প্রার্থনা করি, আমরা আমাদের রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়াই করব।’
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
বিপ্লবের ম্যুরালে ছেয়ে যাওয়া ঢাকা এখন কার নিয়ন্ত্রণে আছে, তা বোঝা কঠিন। যদিও আনুষ্ঠানিকতার বিচারে শেখ হাসিনার আসনে বসেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস; বেশ অনেকটা সময়ও কাটিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু তিনি এমন সুরক্ষিত অতিথিশালায় বাস করছেন, যেখানে সাধারণত রাষ্ট্রীয় অতিথিরা ওঠেন। ড. ইউনূস এখানে থাকছেন। কারণ, প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত সরকারি বাসভবন গণভবনে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। আর ড. ইউনূস যেখানেই যাচ্ছেন, তাঁকে অনুসরণ করছেন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা। এমনকি তাঁর ব্যক্তিগত কামরাতেও তাঁদের বিচরণ।
আর কোনো পথ খোলা ছিল না বলেই ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠদের ভাষ্য। ছাত্ররা যখন ড. ইউনূসের কাছে এই প্রস্তাব নিয়ে যায়, ততক্ষণে বিক্ষোভে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছেন। তাঁর কাছে যেসব প্রত্যাশা করা হয়েছিল, সেগুলোর কারণেই মূলত ড. ইউনূস দায়িত্ব নেন এবং পুরো বিষয়টিকে তিনি ‘প্রত্যাশা ব্যবস্থাপনা’ বা ‘এক্সপেক্টেশনস ম্যানেজমেন্ট’ বলে আখ্যা দেন।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি আলোচিত শব্দ হলো ‘ধৈর্য’। হাসিনার বিরোধীরা যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচনে আগ্রহী। কিন্তু আন্দোলনের ছাত্রনেতারা ততটা আগ্রহী নন। তাঁরা চান, ড. ইউনূসের সরকার নির্বাচন কমিশনের সংস্কার করুক এবং নির্বাচনে যাওয়ার আগে অবাধ ও সুষ্ঠু প্রক্রিয়া নিশ্চিত করুক। এই অচলাবস্থা কত দিন স্থায়ী হবে, তা কারও অনুমানেই নেই। ড. ইউনূস নিজেকে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ করেছেন। তাঁর উপদেষ্টারা বলছেন, উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে। এ ক্ষেত্রে তাঁদের কর্মতালিকার শীর্ষে আছে মন্থর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে গতিশীল করা এবং মানসম্পন্ন চাকরির অভাব দূর করা।
শেখ হাসিনা সরকারকে ৪৭ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি শিল্প গড়ে তোলার মাধ্যমে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনার জন্য ব্যাপক কৃতিত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে, শেখ হাসিনা সরকার সম্ভবত বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে উপস্থাপন করেছে। রপ্তানি, মূল্যস্ফীতি এবং মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির বিষয়ে ভুল তথ্য প্রকাশ করেছে। এই অসংগতিগুলো বিশ্লেষণ করে একটি শ্বেতপত্র প্রস্তুতের কাজ করছেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
এক সাক্ষাৎকারে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ৮ শতাংশের কাছাকাছি বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত, যা ভারতের তুলনায় অর্ধেক মাত্র। বিশ্বের সবচেয়ে কম কর-জিডিপি অনুপাতের অন্যতম দেশ বাংলাদেশ। দেবপ্রিয় বলেন, করপোরেট স্বার্থের কাছে সরকারকে বিক্রি করে দিয়েছেন হাসিনা। এক দশক ধরে চলা উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে চলতি মাসেই নীতি সুদহার অর্ধশতাংশ পয়েন্ট বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত বছর আইএমএফ থেকে পাওয়া ৪৭০ কোটি ডলার ছাড়াও আরও ৫০০ কোটি ডলারের বেশি জরুরি সহায়তা প্রয়োজন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভাষ্য।
দেশপ্রিয়ের মতে, শেখ হাসিনা সরকার পুঁজিপতি বন্ধুদের টাকা দিয়েছে। এই পুঁজিপতিরাই এই শাসনকে টিকিয়ে রেখেছিল, কিন্তু একসময়ে সরকার তার স্বায়ত্তশাসন হারিয়ে ফেলেছে।
বিগত কয়েক সপ্তাহে যেভাবে দেশজুড়ে হামলা, ভাঙচুর, পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে হাসিনার কঠোর শাসনের প্রয়োজন বলে তাঁর সমর্থকেরা বলছেন। বাংলাদেশের রাজনীতি অনেকটাই ব্যক্তিগত। ১৯৭০-এর দশকে শেখ হাসিনা যখন বিদেশে ছিলেন, তখন তাঁর পরিবারের বেশির ভাগ সদস্যকে এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে হত্যা করা হয়। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাঁর রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি ও এর প্রধান খালেদা জিয়ার স্বামীকে—যিনি দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন—এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত বলে সন্দেহ করছেন।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের কয়েক ডজন নেতা, ব্যবসায়ী টাইকুন এবং আওয়ামী লীগের পক্ষাবলম্বন করা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে গণহত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে আনা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের সাবেক এক বিচারপতি এবং শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের সমালোচক হেঁটে ভারতে প্রবেশের চেষ্টার সময় জনতার হাতে ধরা পড়েন। হাসিনার মন্ত্রীদের বেশির ভাগই গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁরা এখন আড়ালে থেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছাত্র আন্দোলন কেন এখন মানবাধিকার উপেক্ষা করছে।
দেশ ছাড়ার পর থেকেই শেখ হাসিনা দিল্লিতে নিজের বিচরণ বেশ সীমিত করে রেখেছেন। সেখানে তিনি ভারত সরকারের ঘনিষ্ঠ মিত্রের নজরে আছেন বলে ধারণা করা হয়। কিছুদিন আগে এক বিবৃতিতে নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, সহিংসতা এবং যারা সন্ত্রাসী আগ্রাসনের শিকার হয়েছেন, তাঁদের বিচার নিশ্চিত করতে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
স্বামী ফারুক মোল্লাকে হত্যার দিনটি স্মরণ করে ঢাকার উপকণ্ঠে এক অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা আয়েশা বেগম বলেন, গত মাসে একদল জনতা তাদের বাড়িতে ঢুকে পড়ে এবং নিজেদের বিএনপির সদস্য বলে পরিচয় দেয়। তাঁরা আয়েশার মাথায় ছুরিকাঘাত করে এবং ফারুক মোল্লাকে কুড়াল দিয়ে আঘাত করে এবং তাদের সাত বছরের ছেলেকে হত্যা করবে কি না, তা নিয়ে তর্ক করে। সেই দলটি পাঁচ ঘণ্টা ঘটনাস্থলে অবস্থান করে এবং বাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে চলে যায়। আয়শা ঢাকায় তাঁর বোনের বাসায় পালিয়ে যান।
আয়েশা বলেন, নিরীহ মানুষ ক্রসফায়ারে মারা যাচ্ছে। ফারুকের ভাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে তাঁকে হত্যা করা হয়। সরকারের কাছে স্বামীর হত্যার বিচার চান তিনি।
পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, প্রত্যেকের মনেই প্রতিশোধস্পৃহা কাজ করছে এবং সহিংসতার চক্র যেকোনো সময় শেষ হয়ে যাবে—এ রকমটা এখনই ভাবা কঠিন।
এসব হামলায় দলের ভূমিকা অস্বীকার করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, হাসিনার সরকার ও ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর কর্মকর্তারা প্রতিশোধমূলক হত্যাকাণ্ড ও আওয়ামী লীগের সমর্থক সংখ্যালঘু হিন্দুদের টার্গেট করার বিষয়ে অতিরঞ্জিত প্রতিবেদন করেছেন। তাঁর মতে, ‘প্রকৃত অর্থে কোনো সমস্যা নেই।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম জোর দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনার নিজেরই কলঙ্কিত রেকর্ড। সাবেক প্রধানমন্ত্রীর অধীনে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা একটি গোপন কারাগার চালাত, যাকে ‘আয়নাঘর’ বলা হয়। বন্দীরা বলেছেন, তাঁদের অন্ধকার, জানালাবিহীন কক্ষে রাখা হয়েছিল। কখনো কখনো বছরের পর বছর ধরে সেখানে তাঁদের রাখা হয়। হাসিনার সমালোচনা করার বিষয়ে সেই বন্দিশালায় তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
ইউনূস সরকারের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, নতুন সরকার যে হাসিনার সরকারের চেয়ে আলাদা, তা প্রমাণ করতে চান তাঁরা। এ কারণে এরই মধ্যে সংখ্যালঘু ও অন্যদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত শুরু করেছে।
পরিবেশ আন্দোলনের এই কর্মী আরও বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে হয়রানি, হত্যা, নিপীড়ন, দমন করার ফলে পচে যাওয়া একটি ব্যবস্থা থেকে বের হওয়ার একমাত্র উপায় হলো—সম্পূর্ণ নতুন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করা।
কয়েক বছর আগে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে রিজওয়ানা হাসানের স্বামীকে অপহরণ করা হয়। পরে তিনি মুক্তি পেয়েছেন। কিন্তু মুক্তির অনেক পর থেকে এখনো তিনি প্রতি রাতে আলো জ্বালিয়ে ঘুমান। রিজওয়ানা বলেন, ‘হাসিনা যা করেছেন, তা আমরা ক্ষমা করতে পারি না। মানুষ এখন দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ চাইছে। তালিকা যত দীর্ঘই হোক, তাদের দাবি পূরণ করতে হবে।’
শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর যেসব তরুণ তুরিন আফরোজের ঘরে জোর করে প্রবেশ করেছিল, তারা তাঁর মাথা কামিয়ে দিয়েছিল। তাদের ধারণা, তুরিন আফরোজ শেখ হাসিনা সরকারের সমর্থক। যাহোক, তুরিন আফরোজ নতুন শাসন নিয়ে চিন্তিত এবং বর্তমান সময়কে তিনি ১৯৭০-এর দশকে পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীনতার লড়াইয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘চরমপন্থীরা সুযোগ পেলে তারা দেশের পতাকা, জাতীয় সংগীত এবং পরিচয় পরিবর্তন করে ফেলবে।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি না বাংলাদেশের কী হবে। তবে আমি প্রার্থনা করি, আমরা আমাদের রক্তের শেষ বিন্দু পর্যন্ত লড়াই করব।’
অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
১৮ ঘণ্টা আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৩ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৭ দিন আগেপরিশেষে বলা যায়, হাসিনার চীনা ধাঁচের স্বৈরশাসক শাসিত রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রয়াস ব্যর্থ হয় একাধিক কারণে। তাঁর বৈষম্যমূলক এবং এলিটপন্থী বাঙালি-আওয়ামী আদর্শ জনসাধারণ গ্রহণ করেনি, যা চীনের কমিউনিস্ট পার্টির গণমুখী আদর্শের বিপরীত। ২০২১ সাল থেকে শুরু হওয়া অর্থনৈতিক মন্দা তাঁর শাসনকে দুর্বল করে দেয়, পাশাপাশি
১১ দিন আগে