Ajker Patrika

চীন-বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গ্লোবাল সাউথের উন্নয়নে তাৎপর্যময়

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৯ জুলাই ২০২৪, ১৪: ০৪
চীন-বাংলাদেশ ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গ্লোবাল সাউথের উন্নয়নে তাৎপর্যময়

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার থেকে তাঁর চীন সফর শুরু করেছেন। এটি চীনে তাঁর পঞ্চম সফর। অনেক বিশ্লেষক শেখ হাসিনার এই চীন সফরের বিষয়টিকে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভের পর কূটনৈতিক অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনা করছেন। 

চলতি বছরের শুরুতে সাধারণ নির্বাচন জিতে পঞ্চম মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা। ফলাফল ঘোষণার আগে পশ্চিমা কয়েকটি দেশ নির্বাচন প্রক্রিয়ার বিশ্বাসযোগ্যতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে চীন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে স্বাধীনতা ও স্বায়ত্তশাসনকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে এবং দেশটির নির্বাচনে বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করে। তবে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারত তুলনামূলক একটু দেরিতেই তার অবস্থান পরিষ্কার করে। 

নির্বাচনের আগে, ৪ জানুয়ারি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জ্যাসওয়াল বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আমরা ধারাবাহিকভাবে বলে আসছি, এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করার বিষয়।’ বাংলাদেশের জন্য এটিকে সরাসরি সমর্থন বলে মনে হয়নি। 

শেখ হাসিনা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর তিনি প্রথম সফরের গন্তব্য হিসেবে কোন দেশকে বেছে নেন ভারতীয় গণমাধ্যম সেদিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখেছিল। তবে শেখ হাসিনা প্রথমে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের নেতাদের সঙ্গে ভারতের নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদান করেন এবং পরে আবারও পৃথক রাষ্ট্রীয় সফরে ভারত যান। 

দুই দফায় শেখ হাসিনার ভারত সফর দেশটির গণমাধ্যমকে আনন্দিত করে। তাঁরা বিশ্বাস করে যে, এক মাসের মধ্যে হাসিনার দুবার ভারত সফর দুই দেশের মধ্যে অটুট বন্ধুত্ব প্রদর্শন করেছে। এটা অনস্বীকার্য যে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী বন্ধন দুই দেশের মধ্যে আধুনিক কূটনৈতিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বা ধারাবাহিকতা আছে। 

তবে শেখ হাসিনা এখন তাঁর পঞ্চম মেয়াদে এবং আজকের বাংলাদেশ অতীত থেকে অনেক আলাদা। অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ প্রথম স্বাধীনতা লাভের সময়কার দারিদ্র্য ও দুর্বলতাকে সম্পূর্ণভাবে কাটিয়ে উঠেছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির তালিকায় আছে। জাতীয় শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ তার কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনকে আগের চেয়ে অনেক বেশি মূল্য দেয়। 

বাংলাদেশকে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে বিবেচনা হয়। তবে দেশটি ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের আকাঙ্ক্ষা ও দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি বিবেচনায় রেখেছে এবং ভূরাজনৈতিক খেলার চেয়ে দেশটি অর্থনৈতিক বিষয়গুলোতে বেশি মনোযোগী। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশের বৈদেশিক বিষয়গুলো মোকাবিলায় শেখ হাসিনার বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গি দেখেছে এবং তাঁরা এখন বাংলাদেশের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির সুযোগে আস্থা রেখেছে। বিশ্বের প্রধান দেশ ও সংস্থার সঙ্গে বাংলাদেশ সুসম্পর্কও বজায় রেখেছে। 

বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী বন্ধুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে চীন সব সময় বাংলাদেশের উন্নয়নে সমর্থন দিয়ে আসছে। চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের দ্রুত বিকাশের মূল ভিত্তি হলো, দেশটির কৌশলগত স্বাধীনতার জন্য চীনের সমর্থনের প্রতি বাংলাদেশের ক্রমাগত প্রশংসা। ২০২৩ সালের আগস্টে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের সময় জোর দিয়েছিলেন, চীন জাতীয় সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় এবং বহিরাগত হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করতে বাংলাদেশকে সমর্থন করে, যাতে দেশটি অভ্যন্তরীণ ঐক্য ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারে এবং উন্নয়ন ও পুনরুজ্জীবন অর্জন করতে পারে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-চীন সুদৃঢ় সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ওপর ভিত্তি করে গঠিত। এ সময় তিনি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বৃদ্ধিতে চীনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার প্রশংসা করেন। 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অর্থনৈতিক বিষয় ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা দ্রুত বিকশিত হয়েছে। টানা ১৩ বছর ধরে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে যেখানে ছিল ৩৩০ কোটি ডলার ২০২১-২০২২ অর্থ বছরে বেড়ে দাঁড়িয়ে তা হয়েছে ২ হাজার কোটি ডলার। 

বাংলাদেশ ২০১৬ সালে চীন-প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভে যোগদানের পর থেকে চীন দেশটিতে ৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিনিয়োগ আরও বেড়েছে এবং বহুমুখী হয়েছে। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিনিয়োগ ছাড়াও দুই দেশ কৃষি, মৎস্য, দুর্যোগ প্রতিরোধ ও ত্রাণ, সামুদ্রিক বিষয়, মানবিক ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমন্বয় ও সহযোগিতা করছে। বাংলাদেশিরা দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতার ফলে উদ্ভূত বাস্তব সুফলকে স্বাগত জানিয়েছে। 

বাংলাদেশে উন্নয়নের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। চীন সব সময়ই বাংলাদেশসহ অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে তার উন্নয়ন অভিজ্ঞতা ও অর্জন শেয়ার করতে ইচ্ছুক; বিশেষ করে, সমান ও পারস্পরিক উপকারী সহযোগিতার উন্নয়নে। শেখ হাসিনার সফর থেকে এই বিষয়টি বলা যায় যে, চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক সমান-সমান, পারস্পরিক কল্যাণকর এবং উইন-উইন সহযোগিতার ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে। উপরন্তু, গ্লোবাল সাউথের সব উন্নয়নশীল দেশের অভিন্ন সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্যই এই দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ। 
 
চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমসে কলামটি লিখেছেন দেশটির কমিউনিকেশন ইউনিভার্সিটি অব চায়নার সাউথ এশিয়ান স্টাডিজের বিশেষজ্ঞ চ্যাং শাওইয়ু।

অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত