Ajker Patrika

এপির প্রতিবেদন /ইউরোপজুড়ে নাশকতা কি পুতিনের যুদ্ধের সম্প্রসারিত রূপ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২১ মার্চ ২০২৫, ২০: ৪৬
প্রতীকী ছবি। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি
প্রতীকী ছবি। ছবি: এআই দিয়ে তৈরি

ইউক্রেনে হামলার পর গত তিন বছরে ইউরোপজুড়ে রাশিয়া ও তার মিত্রদেশগুলোর বিরুদ্ধে বহু হামলা-নাশকতার অভিযোগ উঠেছে। পশ্চিমা কর্মকর্তাদের দাবি, এই নাশকতা মূলত রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধের একটি সম্প্রসারিত রূপ। তাঁর উদ্দেশ্য, ইউরোপীয় সমাজে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার প্রতি সমর্থন দুর্বল করা।

বার্তা সংস্থা এপি ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলার পর থেকে ৫৯টি হামলা-নাশকতার ঘটনা পর্যালোচনা করেছে। অধিকাংশ ঘটনার ক্ষেত্রে ইউরোপীয় সরকার, প্রসিকিউটর, গোয়েন্দা সংস্থা ও অন্য পশ্চিমা কর্মকর্তারা রাশিয়া এবং তার মিত্রদেশ বেলারুশকে দায়ী করেছে। এসব ঘটনার মধ্যে রয়েছে সাইবার হামলা, ভুয়া তথ্য প্রচার, গুপ্তহত্যার পরিকল্পনা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, গুপ্তচরবৃত্তি ও নানান ধরনের অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড।

এ ধরনের ঘটনায় জার্মানিতে গাড়ির এক্সস্ট পাইপে ফোম ঢোকানো থেকে কার্গো বিমানে বিস্ফোরক বসানোর চক্রান্তসহ নানা ঘটনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ ছাড়া রাজনীতিবিদ ও গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো লক্ষ্য করে সাইবার হামলা, ব্রিটেনে একটি গুপ্তচর চক্রের সন্ধান এবং জাদুঘর ও দোকানে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও রয়েছে।

ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই৬-এর প্রধান রিচার্ড মুর গত নভেম্বরে এসব কর্মকাণ্ডকে রাশিয়ার ‘চরম বেপরোয়া অভিযান’ বলে উল্লেখ করেন।

কিন্তু এসব ঘটনায় রাশিয়ার সম্পৃক্ততা কতটুকু—অনেকে এমন প্রশ্ন করেছেন। এপি সব কটি ঘটনা যাচাই-বাছাই করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ ঘটনার ক্ষেত্রে রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করা কঠিন। অন্যদিকে মস্কো বরাবরই পশ্চিমা দেশে নাশকতার অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তবে দিন দিন ইউরোপের বিভিন্ন সরকার প্রকাশ্যে এসব হামলার জন্য রাশিয়াকে দায়ী করছে।

ন্যাটোর কর্মকর্তা জেমস আপাথুরাই জানান, রাশিয়ার এসব অভিযানের দুটি মূল উদ্দেশ্য থাকতে পারে। একদিকে ইউরোপীয় সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা, অন্যদিকে ইউক্রেনকে সহায়তার প্রতি সমর্থন দুর্বল করা।

এপি ইউরোপের ১৫ জন বর্তমান কর্মকর্তা, দুই প্রধানমন্ত্রী, পাঁচটি ইউরোপীয় গোয়েন্দা সংস্থা, তিনটি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও ন্যাটোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছে। সবাই বলেন, এসব নাশকতা ইউক্রেনের মিত্রদেশগুলোর মধ্যে বেশি ঘটেছে।

কিছু ঘটনার ভয়াবহ পরিণতি হতে পারত। যেমন জার্মানি ও ব্রিটেনের শিপিং সেন্টারে পার্সেল বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার সন্দেহ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, রুশ গোয়েন্দারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার উদ্দেশে কার্গো বিমানে বিস্ফোরক পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল।

আরেকটি ঘটনায় ইউরোপীয় গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহকারী এক জার্মান অস্ত্র নির্মাতাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছিলেন রুশ এজেন্টরা।

এ ছাড়া বাল্টিক সাগরের তলদেশে বিদ্যুৎ কেবলে হামলার ঘটনায় রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতার তদন্ত চলছে। ফিনল্যান্ডে একটি জাহাজ আটক করা হয়েছে, যা রাশিয়ার ‘শ্যাডো ফ্লিট’ বা নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্য ব্যবহৃত (গোস্ট শিপ) জাহাজ হবে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের নামে ভুয়া ওয়েবসাইট চালু করা হয়। তারপর সেখানে দাবি করা হয়, ফরাসি নাগরিকদের ইউক্রেনে যুদ্ধে পাঠানো হবে। তবে একজন ফরাসি মন্ত্রী এটিকে রুশ অপপ্রচার বলে অভিহিত করেন। এ ছাড়া জার্মানিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে শত শত গাড়ির এক্সস্ট পাইপ বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনার জন্যও রাশিয়াকে সন্দেহ করা হচ্ছে।

এদিকে এস্তোনিয়া, পোল্যান্ড, লাটভিয়া ও ফিনল্যান্ডের কর্মকর্তারা রাশিয়া ও বেলারুশকে তাদের সীমান্তে শরণার্থীদের ঠেলে পাঠানোর জন্য অভিযুক্ত করেছেন।

এপি কীভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করেছে

এপি শত শত ঘটনার তথ্য পর্যালোচনা করেছে এবং কেবল তখনই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, যখন সংশ্লিষ্ট সরকার বা গোয়েন্দা সংস্থা স্পষ্টভাবে রাশিয়া বা এর মিত্রদের দায়ী করেছে। বেশির ভাগ অভিযোগ সরকারি কর্মকর্তারা সরাসরি এপিকে জানিয়েছেন বা তদন্তের সময় উঠে এসেছে।

যদিও বেশ কয়েকটি ঘটনায় প্রসিকিউটররা অভিযোগ গঠন করেছেন, তবে অনেক ক্ষেত্রে দোষীদের চিহ্নিত বা বিচারের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি।

পশ্চিমা বিশ্ব কীভাবে রাশিয়াকে মোকাবিলা করছে

ন্যাটোর কর্মকর্তা আপাথুরাইয়ের মতে, এসব হুমকি প্রতিরোধে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বাল্টিক সাগরের ঘটনাগুলোর পর ন্যাটো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো রক্ষার জন্য একটি বিশেষ মিশন শুরু করেছে।

ওয়াশিংটনের আটলান্টিক কাউন্সিলের বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ ব্রাউ বলেন, আগে রাশিয়া শুধু প্রোপাগান্ডা ও সাইবার হামলার কৌশল ব্যবহার করত, কিন্তু ইউক্রেন আক্রমণের পর তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এখন তারা নাশকতা, অগ্নিসংযোগ ও গুপ্তহত্যার পরিকল্পনা করছে।

চীনকেও ইউরোপে গুপ্তচরবৃত্তি ও সাইবার হামলার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, ২০২২ সালে নর্ড স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইন বিস্ফোরণের পেছনে ইউক্রেনের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে। যদিও কিয়েভ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

জার্মান মার্শাল ফান্ডের কর্মকর্তা ডেভিড সালভো বলেন, বিভিন্ন দেশ হাইব্রিড যুদ্ধ পরিচালনা করলেও ইউরোপে রাশিয়া সবচেয়ে বেশি নাশকতার জন্য দায়ী।

তাই পশ্চিমা দেশগুলো এখন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে, ন্যাটোর সদস্যদেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানো হচ্ছে। এলিজাবেথ ব্রাউ বলেন, ‘যদি আমরা এই হুমকি প্রতিহত করতে চাই, তাহলে আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত