জাহাঙ্গীর আলম
মঙ্গল গ্রহে মানুষের উপনিবেশ স্থাপনের পরিকল্পনা অন্তত এক দশক আগেই বলেছেন ইলন মাস্ক। সে লক্ষ্যেই তিনি ইতিহাসের বৃহত্তম রকেট স্টারশিপ বানাচ্ছেন বলে বারবার উল্লেখ করেছেন। এরই মধ্যে সেই রকেটের সফল উৎক্ষেপণ দেখিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন! এবার মঙ্গলে মানুষের শাসনব্যবস্থা নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার ধারণা দিয়েছেন। এক কথায় সেটিকে ‘প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র’ বলেই অভিহিত করেছেন। সম্ভব প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রে চর্চিত প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের দিকেই তিনি ইঙ্গিত করেছেন। বলা বাহুল্য সেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পৃথিবী গ্রহের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো হবে না। সেই ব্যবস্থার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করবে সেখানকার অর্থনীতি, প্রযুক্তি, নিরাপত্তা এবং সর্বোপরি সামাজিক শ্রেণি।
তাহলে ইলন মাস্ক কি মঙ্গলগ্রহে আদতে ময়নাদ্বীপের মতো কোনো নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছেন বা দেখাতে চাইছেন? তার আগে একবার স্মরণ করা যাক, হোসেন মিয়ার সেই ময়নাদ্বীপ কেমন রাষ্ট্র বা সমাজের ইঙ্গিত দেয়।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহুল আলোচিত উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’। এই উপন্যাসের মূল চরিত্র হোসেন মিয়া। এক রহস্যময় সংগ্রামী চরিত্র হোসেন মিয়াকে মানিক এমন এক জায়গায় নিয়ে যান, যেটি তখনো মানুষের বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত সেখানে নিয়ে যান দারিদ্র্যের কশাঘাতে নুয়ে পড়া এক জেলে কুবেরকেও। সঙ্গে দিয়ে দেন উঠতি যৌবনা শ্যালিকা কপিলাকে।
মনুষ্য বসবাসের অনুপযোগী ময়নাদ্বীপ আমাদের যেন প্রাগৈতিহাসিক যুগের ভূপ্রকৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। মানিক নতুন করে বসতি স্থাপনের মাধ্যমে এক নতুন সমাজব্যবস্থা সৃষ্টি করতে চান সেখানে—এমনই ইঙ্গিত মেলে। তিনি তখনো পুরোপুরি মার্ক্সবাদী কিনা সেটি নিয়ে হয়তো বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু নতুন একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা চেতনায় ও চিত্তে ধারণ করেছিলেন সেটি পরিষ্কার। মূলত সেই স্বপ্নেরই প্রারম্ভিক একটি পরীক্ষা–নিরীক্ষার স্থল সম্ভবত ময়নাদ্বীপ।
আপাতদৃষ্টিতে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণিনির্বিশেষে সবকিছুর ঊর্ধ্বে এক নতুন সমাজব্যবস্থা গড়ার প্রয়াস দেখা যায় ময়নাদ্বীপে। দ্বীপে মসজিদ, মন্দির কোনোটাই বানানো হবে না, সব লৌকিক ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে এক অসাম্প্রদায়িক সমাজ হবে ময়নাদ্বীপ। হোসেন মিয়ার প্রথম অগ্রাধিকার সেখানে মানুষের প্রজনন। দ্রুত সন্তান উৎপাদনের মাধ্যমে দ্বীপকে জনবহুল করে তুলে চান তিনি।
গণতন্ত্রের কথাও কি বলেছিলেন হোসেন মিয়া? না, কারণ সেখানে হোসেন মিয়া সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনিই ঠিক করে দেন সেখানে কার শাসন চলবে। আপাতত শ্রেণিহীন এক সমাজের খোদা হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায় তাঁর প্রতিটি কথায়, তৎপরতায়।
এক্ষণে আমরা ইলন মাস্কের প্রসঙ্গ আনতে পারি। ইলন মাস্কও মনে করেন, মানুষের সবচেয়ে বড় ভবিষ্যৎ সংকট জনসংখ্যার সংকোচন। এ কারণে বেশি বেশি সন্তান উৎপাদনের পক্ষে তিনি। নিজেও এরই মধ্যে ১২ সন্তানের জনক!
মাস্ক খাঁটি গণতন্ত্র ও বাক্স্বাধীনতার অবতার হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। তথাকথিত উদারনৈতিক গণতন্ত্রের (লিবারেল ডেমোক্রেসি) বড় সমালোচক মাস্ক। এই গণতন্ত্র সমাজের একটি বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব তো করেই না, বরং এই ব্যবস্থার উপাদান ও হাতিয়ারগুলো ওই বৃহৎ অংশকে প্রান্তিক করে রাখার আয়োজন করে রেখেছে—এমনই মত ইলন মাস্কের।
মাস্ক যখন জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার (পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে রাখেন এক্স) ৪৪ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেন, তখন বলেছিলেন, তাঁর অধীনে টুইটার হয়ে উঠবে বাক্স্বাধীনতা চর্চার প্রধান ক্ষেত্র। মালিকানা নেওয়ার পর অনেক বিতর্কিত অ্যাকাউন্ট যেগুলো ভুল তথ্য, অপতথ্য, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, বর্ণবাদ ও উসকানিমূলক তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো ফেরত আনেন মাস্ক।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইলন মাস্ক। নব্যরক্ষণশীলদের অবতার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম আমলে সরাসরি সমর্থন না জানালেও এবার সরাসরি তিনি তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে তহবিল জোগান দিয়েছেন। এরই মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তাঁর কাজ হবে আমলাতন্ত্র সংকুচিত করে সরকারের অনুন্নয়ন ব্যয় কমানো।
এখানেই থেমে থাকেননি ইলন মাস্ক। পশ্চিমের অন্যান্য দেশেও একই দৃষ্টিভঙ্গির ব্যক্তি ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম একজন ব্রিটেনের নাইজেল ফারাজ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছেদে (ব্রেক্সিট) সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন ফারাজ। যদিও পরবর্তীতে ভোটের রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারেননি। ফারাজকে এবার অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন ইলন মাস্ক।
এই নব্যরক্ষণশীলদের নিয়ে লিবারেলদের সবচেয়ে বড় শঙ্কা হলো, এরা সেই অর্থে রক্ষণশীল নয়, যারা ঐতিহ্যগতভাবে বিদ্যমান ব্যবস্থার রক্ষক হিসেবে তৎপর থাকে। এই নব্যরক্ষণশীলেরা বিদ্যমান ব্যবস্থা ভেঙে ঢেলে সাজাতে চায়। তারা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি ও করপোরেট আঁতাত ভেঙে দেওয়ার কথা বলে। আধুনিককালের দৃষ্টিভঙ্গিকে সামাজিক সংহতি ও স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর মনে করে। বঞ্চিতদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তাদের সামগ্রিক পরিকল্পনা কখনো স্পষ্ট হয়নি। তাদের প্রতিশ্রুত ব্যবস্থাটি শুধু তারাই ভালো জানে!
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবতার হোসেন মিয়া যেমন ময়নাদ্বীপে এমন এক ব্যবস্থার কথা বলে সেটিও অস্পষ্ট, শুধুই ইঙ্গিতময়। সেটি এক শ্রেণিহীন সমাজ, যেখানে সবকিছু চলে একক ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর শর্তে।
ইলন মাস্ক ও ডোনাল্ড ট্রাম্প নেক্সাস কোন ধরনের ব্যবস্থা চান সেটিও পরিষ্কার নয়। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প তাঁর অনেক প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এবারও পারবেন এমন সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকেরা।
মাস্ক বলছেন, মঙ্গলেও তিনি গণতন্ত্রই চাইবেন। তবে সেখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেমন হবে সেটি তিনি সেখানকার বাসিন্দাদের হাতেই ছেড়ে দিতে চান। কথাটি আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ ও সরল মনে হলেও তিনি যে হোসেন মিয়ার চরিত্রে আবির্ভূত হবেন না সেটি বলা যায় না।
রকেট বাণিজ্যে বলতে গেলে একাধিপত্য কায়েম করেছেন ইলন মাস্ক। এমনকি নাসাও এখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মালামাল ও ক্রু পাঠানোর পাশাপাশি চাঁদ ও মঙ্গল অভিযানে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের ওপর নির্ভর করছে। মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর মতো প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত শুধু মাস্কেরই আছে। অন্যরা সেই সম্ভাবনাও দেখাতে পারেনি। বলাবাহুল্য, মঙ্গলে কারা যাবে, কীভাবে যাবে, উপনিবেশ কেমন হবে, প্রশাসনিক ব্যবস্থাও কী হবে সেটি যে মাস্কের শর্ত মেনেই হতে হবে তা নিশ্চিত।
ইলন মাস্ক মঙ্গলে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র চান, প্রশাসনিক কাঠামো নির্মাণ মঙ্গলবাসীদের হাতেই দিতে চান—এই সব উদারনৈতিক বয়ানের আড়ালে ময়নাদ্বীপের হোসেন মিয়ার কণ্ঠস্বরই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে! ধরা নেওয়া যেতে পারে, মঙ্গলে উপনিবেশ সত্যি হলে, সেটি হবে পৃথিবীর অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী অতি ধনীদের নিয়ে গঠিত এক ‘শ্রেণিহীন সমাজ’, ইলন মাস্কের শর্তে পরিচালিত আরেক ‘ময়নাদ্বীপ’!
লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক
মঙ্গল গ্রহে মানুষের উপনিবেশ স্থাপনের পরিকল্পনা অন্তত এক দশক আগেই বলেছেন ইলন মাস্ক। সে লক্ষ্যেই তিনি ইতিহাসের বৃহত্তম রকেট স্টারশিপ বানাচ্ছেন বলে বারবার উল্লেখ করেছেন। এরই মধ্যে সেই রকেটের সফল উৎক্ষেপণ দেখিয়ে বিশ্ববাসীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন! এবার মঙ্গলে মানুষের শাসনব্যবস্থা নিয়ে তাঁর পরিকল্পনার ধারণা দিয়েছেন। এক কথায় সেটিকে ‘প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র’ বলেই অভিহিত করেছেন। সম্ভব প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রে চর্চিত প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের দিকেই তিনি ইঙ্গিত করেছেন। বলা বাহুল্য সেই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পৃথিবী গ্রহের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো হবে না। সেই ব্যবস্থার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণ করবে সেখানকার অর্থনীতি, প্রযুক্তি, নিরাপত্তা এবং সর্বোপরি সামাজিক শ্রেণি।
তাহলে ইলন মাস্ক কি মঙ্গলগ্রহে আদতে ময়নাদ্বীপের মতো কোনো নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখছেন বা দেখাতে চাইছেন? তার আগে একবার স্মরণ করা যাক, হোসেন মিয়ার সেই ময়নাদ্বীপ কেমন রাষ্ট্র বা সমাজের ইঙ্গিত দেয়।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বহুল আলোচিত উপন্যাস ‘পদ্মা নদীর মাঝি’। এই উপন্যাসের মূল চরিত্র হোসেন মিয়া। এক রহস্যময় সংগ্রামী চরিত্র হোসেন মিয়াকে মানিক এমন এক জায়গায় নিয়ে যান, যেটি তখনো মানুষের বসবাসের উপযোগী হয়ে ওঠেনি। শেষ পর্যন্ত সেখানে নিয়ে যান দারিদ্র্যের কশাঘাতে নুয়ে পড়া এক জেলে কুবেরকেও। সঙ্গে দিয়ে দেন উঠতি যৌবনা শ্যালিকা কপিলাকে।
মনুষ্য বসবাসের অনুপযোগী ময়নাদ্বীপ আমাদের যেন প্রাগৈতিহাসিক যুগের ভূপ্রকৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। মানিক নতুন করে বসতি স্থাপনের মাধ্যমে এক নতুন সমাজব্যবস্থা সৃষ্টি করতে চান সেখানে—এমনই ইঙ্গিত মেলে। তিনি তখনো পুরোপুরি মার্ক্সবাদী কিনা সেটি নিয়ে হয়তো বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু নতুন একটি সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা চেতনায় ও চিত্তে ধারণ করেছিলেন সেটি পরিষ্কার। মূলত সেই স্বপ্নেরই প্রারম্ভিক একটি পরীক্ষা–নিরীক্ষার স্থল সম্ভবত ময়নাদ্বীপ।
আপাতদৃষ্টিতে ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণিনির্বিশেষে সবকিছুর ঊর্ধ্বে এক নতুন সমাজব্যবস্থা গড়ার প্রয়াস দেখা যায় ময়নাদ্বীপে। দ্বীপে মসজিদ, মন্দির কোনোটাই বানানো হবে না, সব লৌকিক ধর্মের ঊর্ধ্বে উঠে এক অসাম্প্রদায়িক সমাজ হবে ময়নাদ্বীপ। হোসেন মিয়ার প্রথম অগ্রাধিকার সেখানে মানুষের প্রজনন। দ্রুত সন্তান উৎপাদনের মাধ্যমে দ্বীপকে জনবহুল করে তুলে চান তিনি।
গণতন্ত্রের কথাও কি বলেছিলেন হোসেন মিয়া? না, কারণ সেখানে হোসেন মিয়া সর্বময় ক্ষমতার মালিক। তিনিই ঠিক করে দেন সেখানে কার শাসন চলবে। আপাতত শ্রেণিহীন এক সমাজের খোদা হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ পায় তাঁর প্রতিটি কথায়, তৎপরতায়।
এক্ষণে আমরা ইলন মাস্কের প্রসঙ্গ আনতে পারি। ইলন মাস্কও মনে করেন, মানুষের সবচেয়ে বড় ভবিষ্যৎ সংকট জনসংখ্যার সংকোচন। এ কারণে বেশি বেশি সন্তান উৎপাদনের পক্ষে তিনি। নিজেও এরই মধ্যে ১২ সন্তানের জনক!
মাস্ক খাঁটি গণতন্ত্র ও বাক্স্বাধীনতার অবতার হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। তথাকথিত উদারনৈতিক গণতন্ত্রের (লিবারেল ডেমোক্রেসি) বড় সমালোচক মাস্ক। এই গণতন্ত্র সমাজের একটি বড় অংশের প্রতিনিধিত্ব তো করেই না, বরং এই ব্যবস্থার উপাদান ও হাতিয়ারগুলো ওই বৃহৎ অংশকে প্রান্তিক করে রাখার আয়োজন করে রেখেছে—এমনই মত ইলন মাস্কের।
মাস্ক যখন জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার (পরবর্তীতে নাম পরিবর্তন করে রাখেন এক্স) ৪৪ বিলিয়ন ডলারে কিনে নেন, তখন বলেছিলেন, তাঁর অধীনে টুইটার হয়ে উঠবে বাক্স্বাধীনতা চর্চার প্রধান ক্ষেত্র। মালিকানা নেওয়ার পর অনেক বিতর্কিত অ্যাকাউন্ট যেগুলো ভুল তথ্য, অপতথ্য, ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, বর্ণবাদ ও উসকানিমূলক তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, সেগুলো ফেরত আনেন মাস্ক।
এরপর যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীলদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইলন মাস্ক। নব্যরক্ষণশীলদের অবতার ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম আমলে সরাসরি সমর্থন না জানালেও এবার সরাসরি তিনি তাঁকে সমর্থন দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, নির্বাচনে তহবিল জোগান দিয়েছেন। এরই মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের জন্য মনোনীত হয়েছেন। তাঁর কাজ হবে আমলাতন্ত্র সংকুচিত করে সরকারের অনুন্নয়ন ব্যয় কমানো।
এখানেই থেমে থাকেননি ইলন মাস্ক। পশ্চিমের অন্যান্য দেশেও একই দৃষ্টিভঙ্গির ব্যক্তি ও রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলোর প্রতি সমর্থন ঘোষণা করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম একজন ব্রিটেনের নাইজেল ফারাজ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছেদে (ব্রেক্সিট) সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন ফারাজ। যদিও পরবর্তীতে ভোটের রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারেননি। ফারাজকে এবার অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন ইলন মাস্ক।
এই নব্যরক্ষণশীলদের নিয়ে লিবারেলদের সবচেয়ে বড় শঙ্কা হলো, এরা সেই অর্থে রক্ষণশীল নয়, যারা ঐতিহ্যগতভাবে বিদ্যমান ব্যবস্থার রক্ষক হিসেবে তৎপর থাকে। এই নব্যরক্ষণশীলেরা বিদ্যমান ব্যবস্থা ভেঙে ঢেলে সাজাতে চায়। তারা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতি ও করপোরেট আঁতাত ভেঙে দেওয়ার কথা বলে। আধুনিককালের দৃষ্টিভঙ্গিকে সামাজিক সংহতি ও স্থিতিশীলতার জন্য ক্ষতিকর মনে করে। বঞ্চিতদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু তাদের সামগ্রিক পরিকল্পনা কখনো স্পষ্ট হয়নি। তাদের প্রতিশ্রুত ব্যবস্থাটি শুধু তারাই ভালো জানে!
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবতার হোসেন মিয়া যেমন ময়নাদ্বীপে এমন এক ব্যবস্থার কথা বলে সেটিও অস্পষ্ট, শুধুই ইঙ্গিতময়। সেটি এক শ্রেণিহীন সমাজ, যেখানে সবকিছু চলে একক ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র গোষ্ঠীর শর্তে।
ইলন মাস্ক ও ডোনাল্ড ট্রাম্প নেক্সাস কোন ধরনের ব্যবস্থা চান সেটিও পরিষ্কার নয়। প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প তাঁর অনেক প্রতিশ্রুতিই বাস্তবায়ন করতে পারেননি। এবারও পারবেন এমন সম্ভাবনা দেখছেন না বিশ্লেষকেরা।
মাস্ক বলছেন, মঙ্গলেও তিনি গণতন্ত্রই চাইবেন। তবে সেখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা কেমন হবে সেটি তিনি সেখানকার বাসিন্দাদের হাতেই ছেড়ে দিতে চান। কথাটি আপাতদৃষ্টিতে নির্দোষ ও সরল মনে হলেও তিনি যে হোসেন মিয়ার চরিত্রে আবির্ভূত হবেন না সেটি বলা যায় না।
রকেট বাণিজ্যে বলতে গেলে একাধিপত্য কায়েম করেছেন ইলন মাস্ক। এমনকি নাসাও এখন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মালামাল ও ক্রু পাঠানোর পাশাপাশি চাঁদ ও মঙ্গল অভিযানে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের ওপর নির্ভর করছে। মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর মতো প্রস্তুতি এখন পর্যন্ত শুধু মাস্কেরই আছে। অন্যরা সেই সম্ভাবনাও দেখাতে পারেনি। বলাবাহুল্য, মঙ্গলে কারা যাবে, কীভাবে যাবে, উপনিবেশ কেমন হবে, প্রশাসনিক ব্যবস্থাও কী হবে সেটি যে মাস্কের শর্ত মেনেই হতে হবে তা নিশ্চিত।
ইলন মাস্ক মঙ্গলে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র চান, প্রশাসনিক কাঠামো নির্মাণ মঙ্গলবাসীদের হাতেই দিতে চান—এই সব উদারনৈতিক বয়ানের আড়ালে ময়নাদ্বীপের হোসেন মিয়ার কণ্ঠস্বরই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে! ধরা নেওয়া যেতে পারে, মঙ্গলে উপনিবেশ সত্যি হলে, সেটি হবে পৃথিবীর অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী অতি ধনীদের নিয়ে গঠিত এক ‘শ্রেণিহীন সমাজ’, ইলন মাস্কের শর্তে পরিচালিত আরেক ‘ময়নাদ্বীপ’!
লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক
এনডিটিভির এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, নিজের লিবারেল পার্টির অভ্যন্তরেই ক্রমবর্ধমান অসন্তোষ এবং বিরোধিতার মধ্যে সম্প্রতি ভারতের বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগ তুলে ধরেছিলেন ট্রুডো। সমালোচকেরা বলছেন...
১ ঘণ্টা আগেপুতিন ও ট্রাম্প উভয়েই একধরনের ‘আদর্শহীন বাস্তবতাবাদী’ রাজনীতিতে বিশ্বাসী। পুতিন মানবাধিকার ও পশ্চিমা উদারনৈতিক মূল্যবোধকে প্রত্যাখ্যান করেন। ট্রাম্পও প্রায় একই ধাঁচে আদর্শের চেয়ে ক্ষমতার গতিপ্রকৃতির বাস্তবতাকে বেশি প্রাধান্য দেন। পুতিন ট্রাম্পের এই বৈশিষ্ট্যকে একটি সুযোগ হিসেবে দেখছেন, যেখানে একটি..
২ দিন আগেভূতাত্ত্বিক ফান সিয়াও বলেছিলেন, বাঁধটির অবস্থান একটি বিরল ‘জৈববৈচিত্র্য হটস্পটে’ এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে একটি অস্থিতিশীল অঞ্চলে এটি অবস্থিত। বিষয়টি পরিবেশের জন্য ‘অপ্রত্যাবর্তনীয় ক্ষতির’ কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকা খুব বেশি ভূমিকম্পপ্রবণ।
২ দিন আগেগত বছরটি ছিল এমন এক বছর, যেখানে সারা বিশ্বে ক্ষমতাসীনেরা হয় নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন অথবা ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন। এ প্রসঙ্গে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মন্ত্রিপরিষদ বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ আল গারজাভির একটি কথা গুরুত্বপূর্ণ, ‘সরকারের কাজ হলো এমন এক ভবিষ্যৎ তৈরি করা, যা নাগরিকদের আশার আলো দেয়।’
৫ দিন আগে