মোশারফ হোসেন
শিরোনামের উত্তর যদি ‘না’ হয়, তবে প্রতিটি যুদ্ধে যে হাজার, লক্ষ, কোটি প্রাণী মারা যায়, তার হিসাব আমরা কজন রাখি? আমরা শুধু হিসাব কষি, কোন যুদ্ধে ঠিক কজন নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধা মারা গেছেন। কিন্তু ৭০০ কোটি মানুষের মতো প্রায় ৮৭ লাখ প্রজাতির প্রাণীরও আবাস পৃথিবীতে। তাদের মৃত্যুর খবর কি আর মানুষ রাখে!
প্রশ্ন তোলাই যায়, এই যে বন, পাহাড়, সমুদ্র—এসব কি শুধু মানুষেরই? এক দেশ অন্য দেশ দখল করার জন্য, অন্যের ওপর প্রভুত্ব করার জন্য পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত অনেকগুলো যুদ্ধ হয়েছে। আর সেসব যুদ্ধে মারা গেছে প্রায় ১৫ থেকে ১০০ কোটি মানুষ। আহত কত, তারও তথ্য খুঁজে পাওয়া যাবে হয়তো। কিন্তু ঠিক কতসংখ্যক প্রাণী মারা গেছে, এই যুদ্ধগুলোতে, তা কি আমরা জানি? জানলেও সেসব তথ্য নিয়ে যুদ্ধবাজ মানুষের ভ্রুক্ষেপ কতটা? যুদ্ধের দোহাই দিয়ে যারা মানুষ মারতে তোয়াক্কা করে না, প্রাণীর মূল্য আর কতটুকু তাদের কাছে!
ধারণা করা হয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ প্রাণী অংশগ্রহণ করেছিল। শুধু ব্রিটিশদের পক্ষে অংশগ্রহণ করে প্রায় ৫ লাখ প্রাণী মারা যায়। এর মধ্যে ঘোড়া, খচ্চর, উট ও বলদের সংখ্যাই বেশি। এদের মূলত গোলাবারুদ পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু প্রতিপক্ষের বোমা ও গুলির আঘাতেই নয়, অনেক প্রাণী মারা যায় প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণেও।
খচ্চরদের সহনশীলতা অনেক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পশ্চিম ফ্রন্টে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মন্টে ক্যাসিনোতে বরফ শীতল কাদায় সাহসিকতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে গেছে তারা। একইভাবে তারা বার্মা (আজকের মিয়ানমার), ইরিত্রিয়া ও তিউনিসিয়ার তীব্র গরমে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।
ঘোড়া, খচ্চর কিংবা গাধা গত শতাব্দীর এমন অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে কোনো না কোনো পক্ষের হয়ে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। অথচ তাতে তাদের বিন্দুমাত্র সায় ছিল না। মানুষের সেসব যুদ্ধে তাদের বিন্দু পরিমাণ স্বার্থ ছিল না। কিন্তু তারা মারা গেছে।
অনুমান করা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে ব্রিটেনে এক সপ্তাহে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ গৃহপালিত প্রাণী মারা যায়। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল বেড়াল ও কুকুর। এ ছাড়া প্রায় ২০ লাখ ঘোড়া মারা গিয়েছিল সে যুদ্ধে।
১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত চলা স্পেনের গৃহযুদ্ধে প্রায় ৯০ লাখ প্রাণী প্রাণ হারায়। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত চলা ভিয়েতনাম যুদ্ধে ‘এজেন্ট অরেঞ্জ’ নামে এক ধরনের রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে বাঘ, হাতি, চিতাবাঘ ও অন্যান্য প্রজাতির প্রায় পুরো আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের দুই দশকে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়ে কমপক্ষে ৪০ হাজার প্রাণী মারা গিয়েছিল।
মোজাম্বিকের গৃহযুদ্ধের (১৯৭৭-৯২) কারণে গোরোঙ্গোসা ন্যাশনাল পার্কে জিরাফ ও হাতির পালের ৯০ শতাংশ কমে গেছে। ইরান-ইরাক যুদ্ধে (১৯৮০-৮৮) বন্য ছাগল, নেকড়ে, ডোরাকাটা হায়েনা, নদীর ডলফিন ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর সংখ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আর সুদানের গৃহযুদ্ধের (১৯৮৩-২০০৫) কারণে দক্ষিণ সুদানে হাতির সংখ্যা ১ লাখ থেকে নেমে এসেছে মাত্র ৫ হাজারে। নব্বইয়ের দশকে আফগান যুদ্ধে ৭৫ হাজারেরও বেশি প্রাণী হারিয়ে গেছে, যা দেশটির মোট পশুসম্পদের অর্ধেকেরও বেশি।
উপসাগরীয় যুদ্ধের (১৯৯০-৯১) দরুন কুয়েতে ৮০ শতাংশেরও বেশি গবাদিপশু মারা যায়। তার মধ্যে ৭ লাখ ৯০ হাজার ভেড়া, ১২ হাজার ৫০০ গরু ও ২ হাজার ৫০০ ঘোড়া ছিল। কুয়েত আন্তর্জাতিক চিড়িয়াখানার প্রায় ৮৫ শতাংশ প্রাণী মারা যায় সে যুদ্ধে। পারস্য উপসাগরে ইরাকি সৈন্যরা ইচ্ছে করে ট্যাংকারের তেল লিক করায় প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার জলজ প্রাণী ও পাখির মৃত্যু হয়।
এগুলো হচ্ছে আনুমানিক সংখ্যা মাত্র। প্রকৃতপক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঠিক কতসংখ্যক প্রাণী মারা যায়, তা বের করা বেশ দুঃসাধ্য। যুদ্ধে এসব প্রাণীর অংশগ্রহণ ছিল অস্ত্র, খাদ্য কিংবা সৈন্য পরিবহন বা সরবরাহের জন্য। যুদ্ধংদেহী মানুষের মতো তাদের কোনো পক্ষ অবলম্বন করার সুযোগ ছিল না। শত্রুপক্ষ, মিত্রপক্ষ যে যেভাবে পেরেছে, সেভাবেই ব্যবহার করেছে সেসব প্রাণীদের।
কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়, প্রাণীদের জন্য মন কাঁদে না কারওরই। প্রাণীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ হাতে গোনা কয়টিই-বা আছে! যুদ্ধের অমোঘ নিয়তি হিসেবে উজাড় হয়ে যায় সবুজ বন। তাতে খাদ্য বিপর্যয় এবং যুদ্ধের অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারা পড়ে লাখ লাখ প্রাণী। এতেও টনক নড়ে কি মানুষের? না, সত্যি করে বললে নড়ে না। যৎসামান্য সহমর্মিতা দেখিয়ে সব ভুলে আবার ধ্বংসযজ্ঞে নেমে পড়ে মানুষ।
পৃথিবীজুড়ে শিল্প বিপ্লবের কারণে কলকারখানা গড়ে উঠেছে। আর এ থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক নিঃসরণের ফলে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের জন্য ওজন স্তরে ক্ষয় দেখা দিচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা। মেরু অঞ্চলে বরফ গলে উজাড় হচ্ছে মেরু ভাল্লুকসহ অনেক বিপন্নপ্রায় প্রাণী।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ২০ মিনিটে একটি প্রাণী বা উদ্ভিদ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর গত ৫০ বছরে শিল্প বিপ্লবের সময়ের চেয়ে ৪০ গুন বেশি প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে আমাদের এই নীলচে সবুজ গ্রহ থেকে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ প্রজাতির প্রাণী হারিয়ে যাবে। আর ২১০০ সালের মধ্যে হারিয়ে যাবে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক প্রজাতির প্রাণী। আর নানা কারণে বন উজাড়ের ঘটনা তো উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর প্রায় ৩০০ থেকে ৭০০ কোটি গাছ কাটা হয় বন থেকে। এভাবে চলতে থাকলে ১০০ বছরের মধ্যেই পৃথিবীর সব বন উজাড় হয়ে যাবে।
ওদিকে যুদ্ধের দামামা তো থাকছেই। আজ ইউরোপে তো কাল মধ্যপ্রাচ্যে, আফ্রিকাও বাদ নেই। যার ফলে উজাড় হচ্ছে বন ও বন্যপ্রাণী। প্রাণীরা হারাচ্ছে থাকার জায়গা, নষ্ট হচ্ছে বাস্তুসংস্থান।
প্রতিটি যুদ্ধ শেষে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করার একটি রেওয়াজ আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক হারে যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে দেখা যায়। কিন্তু কখনো কি প্রাণী হত্যায় বৃহৎ পরিসরে বিচার হয়েছে? হয়নি! কখনোই হয়নি কিংবা হওয়ার কোনো উদ্যোগও দেখা যায়নি। যাবেও কি-না, তা নিয়েও প্রচুর সন্দেহ আছে।
১৯৯২ সালের জীববৈচিত্র্য বিষয়ক কনভেনশনে যুদ্ধকালীন প্রাণী সুরক্ষার একটি ধারণা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তবে সেটি আসলে কতটুকু কার্যকর করা সম্ভব, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে হাতি, বাঘ, ঘোড়া প্রভৃতি প্রাণীর ভবিষ্যৎ আঁধারে ডুবে যেতে সময় লাগবে না। আজ আমরা ডাইনোসরের কথা পড়ছি বইয়ে। কাল কী তবে সেখানে থাকবে হাতি, বাঘ, ঘোড়া?
যুদ্ধ আসে, দুর্যোগ আসে, জলবায়ুর পরিবর্তন হয়। এখনো পর্যন্ত পাওয়া ইতিহাসে দেখা যাচ্ছে, মানুষ শুধু মেলায় নিজেদের টিকে থাকার হিসাব। সে জন্য মহাবিশ্বে নতুন গ্রহের খোঁজও চলে লাগাতার। কিন্তু একই গ্রহের অন্য প্রাণীদের কথা ভাববার সময় মেলে কই?
তথ্যসূত্র: কনফ্লিক্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অবজারভেটরি, গার্ডিয়ান, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও অ্যানিমেলস ইন ওয়ার
শিরোনামের উত্তর যদি ‘না’ হয়, তবে প্রতিটি যুদ্ধে যে হাজার, লক্ষ, কোটি প্রাণী মারা যায়, তার হিসাব আমরা কজন রাখি? আমরা শুধু হিসাব কষি, কোন যুদ্ধে ঠিক কজন নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ কিংবা বৃদ্ধা মারা গেছেন। কিন্তু ৭০০ কোটি মানুষের মতো প্রায় ৮৭ লাখ প্রজাতির প্রাণীরও আবাস পৃথিবীতে। তাদের মৃত্যুর খবর কি আর মানুষ রাখে!
প্রশ্ন তোলাই যায়, এই যে বন, পাহাড়, সমুদ্র—এসব কি শুধু মানুষেরই? এক দেশ অন্য দেশ দখল করার জন্য, অন্যের ওপর প্রভুত্ব করার জন্য পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত অনেকগুলো যুদ্ধ হয়েছে। আর সেসব যুদ্ধে মারা গেছে প্রায় ১৫ থেকে ১০০ কোটি মানুষ। আহত কত, তারও তথ্য খুঁজে পাওয়া যাবে হয়তো। কিন্তু ঠিক কতসংখ্যক প্রাণী মারা গেছে, এই যুদ্ধগুলোতে, তা কি আমরা জানি? জানলেও সেসব তথ্য নিয়ে যুদ্ধবাজ মানুষের ভ্রুক্ষেপ কতটা? যুদ্ধের দোহাই দিয়ে যারা মানুষ মারতে তোয়াক্কা করে না, প্রাণীর মূল্য আর কতটুকু তাদের কাছে!
ধারণা করা হয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে প্রায় ১ কোটি ৬০ লাখ প্রাণী অংশগ্রহণ করেছিল। শুধু ব্রিটিশদের পক্ষে অংশগ্রহণ করে প্রায় ৫ লাখ প্রাণী মারা যায়। এর মধ্যে ঘোড়া, খচ্চর, উট ও বলদের সংখ্যাই বেশি। এদের মূলত গোলাবারুদ পরিবহনের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। শুধু প্রতিপক্ষের বোমা ও গুলির আঘাতেই নয়, অনেক প্রাণী মারা যায় প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণেও।
খচ্চরদের সহনশীলতা অনেক। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পশ্চিম ফ্রন্টে এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মন্টে ক্যাসিনোতে বরফ শীতল কাদায় সাহসিকতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে গেছে তারা। একইভাবে তারা বার্মা (আজকের মিয়ানমার), ইরিত্রিয়া ও তিউনিসিয়ার তীব্র গরমে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে।
ঘোড়া, খচ্চর কিংবা গাধা গত শতাব্দীর এমন অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে কোনো না কোনো পক্ষের হয়ে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। অথচ তাতে তাদের বিন্দুমাত্র সায় ছিল না। মানুষের সেসব যুদ্ধে তাদের বিন্দু পরিমাণ স্বার্থ ছিল না। কিন্তু তারা মারা গেছে।
অনুমান করা হয়, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতে ব্রিটেনে এক সপ্তাহে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ গৃহপালিত প্রাণী মারা যায়। এদের মধ্যে বেশির ভাগই ছিল বেড়াল ও কুকুর। এ ছাড়া প্রায় ২০ লাখ ঘোড়া মারা গিয়েছিল সে যুদ্ধে।
১৯৩৬ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত চলা স্পেনের গৃহযুদ্ধে প্রায় ৯০ লাখ প্রাণী প্রাণ হারায়। ১৯৫৫ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত চলা ভিয়েতনাম যুদ্ধে ‘এজেন্ট অরেঞ্জ’ নামে এক ধরনের রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে বাঘ, হাতি, চিতাবাঘ ও অন্যান্য প্রজাতির প্রায় পুরো আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এ ছাড়া যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরের দুই দশকে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরিত হয়ে কমপক্ষে ৪০ হাজার প্রাণী মারা গিয়েছিল।
মোজাম্বিকের গৃহযুদ্ধের (১৯৭৭-৯২) কারণে গোরোঙ্গোসা ন্যাশনাল পার্কে জিরাফ ও হাতির পালের ৯০ শতাংশ কমে গেছে। ইরান-ইরাক যুদ্ধে (১৯৮০-৮৮) বন্য ছাগল, নেকড়ে, ডোরাকাটা হায়েনা, নদীর ডলফিন ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর সংখ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে বা বিলুপ্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। আর সুদানের গৃহযুদ্ধের (১৯৮৩-২০০৫) কারণে দক্ষিণ সুদানে হাতির সংখ্যা ১ লাখ থেকে নেমে এসেছে মাত্র ৫ হাজারে। নব্বইয়ের দশকে আফগান যুদ্ধে ৭৫ হাজারেরও বেশি প্রাণী হারিয়ে গেছে, যা দেশটির মোট পশুসম্পদের অর্ধেকেরও বেশি।
উপসাগরীয় যুদ্ধের (১৯৯০-৯১) দরুন কুয়েতে ৮০ শতাংশেরও বেশি গবাদিপশু মারা যায়। তার মধ্যে ৭ লাখ ৯০ হাজার ভেড়া, ১২ হাজার ৫০০ গরু ও ২ হাজার ৫০০ ঘোড়া ছিল। কুয়েত আন্তর্জাতিক চিড়িয়াখানার প্রায় ৮৫ শতাংশ প্রাণী মারা যায় সে যুদ্ধে। পারস্য উপসাগরে ইরাকি সৈন্যরা ইচ্ছে করে ট্যাংকারের তেল লিক করায় প্রায় ২ লাখ ৩০ হাজার জলজ প্রাণী ও পাখির মৃত্যু হয়।
এগুলো হচ্ছে আনুমানিক সংখ্যা মাত্র। প্রকৃতপক্ষে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ঠিক কতসংখ্যক প্রাণী মারা যায়, তা বের করা বেশ দুঃসাধ্য। যুদ্ধে এসব প্রাণীর অংশগ্রহণ ছিল অস্ত্র, খাদ্য কিংবা সৈন্য পরিবহন বা সরবরাহের জন্য। যুদ্ধংদেহী মানুষের মতো তাদের কোনো পক্ষ অবলম্বন করার সুযোগ ছিল না। শত্রুপক্ষ, মিত্রপক্ষ যে যেভাবে পেরেছে, সেভাবেই ব্যবহার করেছে সেসব প্রাণীদের।
কিন্তু যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়, প্রাণীদের জন্য মন কাঁদে না কারওরই। প্রাণীদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ হাতে গোনা কয়টিই-বা আছে! যুদ্ধের অমোঘ নিয়তি হিসেবে উজাড় হয়ে যায় সবুজ বন। তাতে খাদ্য বিপর্যয় এবং যুদ্ধের অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় মারা পড়ে লাখ লাখ প্রাণী। এতেও টনক নড়ে কি মানুষের? না, সত্যি করে বললে নড়ে না। যৎসামান্য সহমর্মিতা দেখিয়ে সব ভুলে আবার ধ্বংসযজ্ঞে নেমে পড়ে মানুষ।
পৃথিবীজুড়ে শিল্প বিপ্লবের কারণে কলকারখানা গড়ে উঠেছে। আর এ থেকে ক্ষতিকর রাসায়নিক নিঃসরণের ফলে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। মাত্রাতিরিক্ত কার্বন নির্গমনের জন্য ওজন স্তরে ক্ষয় দেখা দিচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা। মেরু অঞ্চলে বরফ গলে উজাড় হচ্ছে মেরু ভাল্লুকসহ অনেক বিপন্নপ্রায় প্রাণী।
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ২০ মিনিটে একটি প্রাণী বা উদ্ভিদ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। আর গত ৫০ বছরে শিল্প বিপ্লবের সময়ের চেয়ে ৪০ গুন বেশি প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে আমাদের এই নীলচে সবুজ গ্রহ থেকে।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, মনুষ্যসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ প্রজাতির প্রাণী হারিয়ে যাবে। আর ২১০০ সালের মধ্যে হারিয়ে যাবে পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক প্রজাতির প্রাণী। আর নানা কারণে বন উজাড়ের ঘটনা তো উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েই চলেছে। প্রতি বছর প্রায় ৩০০ থেকে ৭০০ কোটি গাছ কাটা হয় বন থেকে। এভাবে চলতে থাকলে ১০০ বছরের মধ্যেই পৃথিবীর সব বন উজাড় হয়ে যাবে।
ওদিকে যুদ্ধের দামামা তো থাকছেই। আজ ইউরোপে তো কাল মধ্যপ্রাচ্যে, আফ্রিকাও বাদ নেই। যার ফলে উজাড় হচ্ছে বন ও বন্যপ্রাণী। প্রাণীরা হারাচ্ছে থাকার জায়গা, নষ্ট হচ্ছে বাস্তুসংস্থান।
প্রতিটি যুদ্ধ শেষে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচার করার একটি রেওয়াজ আছে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যাপক হারে যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে দেখা যায়। কিন্তু কখনো কি প্রাণী হত্যায় বৃহৎ পরিসরে বিচার হয়েছে? হয়নি! কখনোই হয়নি কিংবা হওয়ার কোনো উদ্যোগও দেখা যায়নি। যাবেও কি-না, তা নিয়েও প্রচুর সন্দেহ আছে।
১৯৯২ সালের জীববৈচিত্র্য বিষয়ক কনভেনশনে যুদ্ধকালীন প্রাণী সুরক্ষার একটি ধারণা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। তবে সেটি আসলে কতটুকু কার্যকর করা সম্ভব, তা প্রশ্নসাপেক্ষ। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এভাবে চলতে থাকলে হাতি, বাঘ, ঘোড়া প্রভৃতি প্রাণীর ভবিষ্যৎ আঁধারে ডুবে যেতে সময় লাগবে না। আজ আমরা ডাইনোসরের কথা পড়ছি বইয়ে। কাল কী তবে সেখানে থাকবে হাতি, বাঘ, ঘোড়া?
যুদ্ধ আসে, দুর্যোগ আসে, জলবায়ুর পরিবর্তন হয়। এখনো পর্যন্ত পাওয়া ইতিহাসে দেখা যাচ্ছে, মানুষ শুধু মেলায় নিজেদের টিকে থাকার হিসাব। সে জন্য মহাবিশ্বে নতুন গ্রহের খোঁজও চলে লাগাতার। কিন্তু একই গ্রহের অন্য প্রাণীদের কথা ভাববার সময় মেলে কই?
তথ্যসূত্র: কনফ্লিক্ট অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অবজারভেটরি, গার্ডিয়ান, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস ও অ্যানিমেলস ইন ওয়ার
ট্রাম্প ফিরে আসায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের ধারাবাহিকতাই বজায় থাকতে পারে, সামান্য কিছু পরিবর্তন নিয়ে। ট্রাম্পের নতুন মেয়াদে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান পেছনের সারিতে থাকলেও বাংলাদেশ,
২৫ মিনিট আগেড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
১ দিন আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
২ দিন আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
২ দিন আগে