অনলাইন ডেস্ক
বলিউডের কথা ভাবলেই মনে ভেসে ওঠে আলো-ঝলমলে এক জগৎ—ঘণ্টার পর ঘণ্টা রঙিন নাটক, বৃষ্টিভেজা আইটেম নাম্বার এবং দম বন্ধ করা আঁটসাঁট পোশাকে ঘুরতে থাকা নায়িকা। মানুষ এখন বলিউড সিনেমা দেখে মূলত উচ্ছলতা, নিখাদ আনন্দ দেওয়ার প্রচেষ্টা আর ঝকঝকে দৃশ্যায়নের জন্য। মানুষ এখন আর বর্ণনামূলক স্বচ্ছতার জন্য এসব সিনেমা দেখে না। যদিও এমন এক সময় ছিল, বিশেষ করে ১৯৭০-এর দশকে, যখন চলচ্চিত্রগুলোতে দরিদ্র, শ্রমিকশ্রেণি এবং গ্রামীণ ভারতীয়দের সংগ্রাম রুপালি পর্দায় তুলে আনা হতো। সেসব দিন এখন অতীত।
বলিউডের ব্লকবাস্টার সিনেমা থেকে আজকাল আর নৈতিক শিক্ষা নেওয়ার কিছু নেই। এখনকার সিনেমার কোনো নায়ক আর শ্রেণিসংগ্রাম বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেন না। সমসাময়িক নায়কেরা হয়ে থাকেন লাগামহীন পুঁজিবাদের সেবক, ফ্যাশনদুরস্ত ধনীর দুলাল, অথবা হিন্দু আধিপত্যবাদী মতাদর্শের পদলেহী সৈনিক, যার লড়াই হিন্দুত্বের পক্ষে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে।
এমন নয় যে বলিউডের সেই নির্মাতারা রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছেন। ডানপন্থী চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাঁদের স্থান দখল করেছেন এমন নয়; বরং বলিউড সব সময় ভারতের মেজাজ প্রতিফলিত করেছে। এক দশক ধরে ভারতের মেজাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত। পর্দায় বা পর্দার বাইরে বলিউড বা বলিউড তারকাদের কাছ থেকে কেউ আর সেই সৎ সাহস বা প্রতিবাদী ভাবমূর্তি আশা করে না। কারণ, বলিউড যেন ক্ষমতার সঙ্গে এক সৌহার্দ্যের কারখানা হয়ে গেছে। ভারতের চলচ্চিত্রশিল্প দীর্ঘদিন ধরে এই মেরুদণ্ডহীনতার জন্য বিখ্যাত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দীর্ঘ শাসনামলে, বেশির ভাগ বলিউড সিনেমা এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সরকারের ক্রমবর্ধমান অসামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক নীতি এবং ডানপন্থী রাজনীতির জন্য অনানুষ্ঠানিক চিয়ারলিডার হিসেবে কাজ করেছেন। তারকা অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত দীর্ঘদিন ধরে মোদিকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে এমপি পদও বাগিয়েছেন।
কিন্তু কঙ্গনার এই জয়টা এসেছে এক চমকপ্রদ ফলের পটভূমিতে। যদিও মোদি তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকবেন, কিন্তু তিনি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। জোট সরকারের নেতৃত্বে সরকার গঠনের মতো অস্বস্তিকর এক ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়েছেন মোদি।
গত মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই ভারতীয় সাংবাদিক এবং লেখক রানা আইয়ুব টুইট করেছেন, ‘বলিউড কি এখন এসব মাঝারি মানের বা অপর পক্ষকে ছোট করার প্রবণতাযুক্ত, ইসলামফোবিক চলচ্চিত্রকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া বন্ধ করবে?’
এটি এমন একটি প্রশ্ন, যা অনেকে এত দিন ধরে ভাবছিলেন। আশা করা যায়, মোদির কষ্টার্জিত জয় এবং বিরোধীদের ভোটের ঢেউ বলিউডের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে ইতিবাচক দিকেই ধাবিত করবে। তবে এটি না হওয়া পর্যন্ত মোদির রাজনৈতিক প্রকল্পে ভারতের চলচ্চিত্র সংঘ কতটা জটিল ছিল, তা দেখা গুরুত্বপূর্ণ।
সেই হাওয়া কিছুটা এরই মধ্যে বইতে শুরু করেছে। গত দুবারের লোকসভা নির্বাচন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন কিংবা অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলিউড তারকাদের পোস্টের ঢল নেমেছিল, এবার তা এখনো দেখা যায়নি। অনুপম খের, পরেশ রাওয়াল ও ভূমি পেডনেকরের মতো দু–চারজন ছাড়া অধিকাংশ তারকাই চুপ।
মোদির বলিউড দখল এবং ভোটের রাজনীতিতে সিনেমাশিল্পকে ব্যবহারের অভিযাত্রায় বলিউডের তিন খান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। ২০১৬ সালে যখন মোদির বিমুদ্রাকরণ বা নোটবন্দীর (ডিমনিটাইজেশন) সিদ্ধান্তে ভারত কেঁপে উঠেছিল। এই সিদ্ধান্ত রাতারাতি বাজার থেকে ভারতের মুদ্রার ৮৬ শতাংশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল।
বলিউডের সবচেয়ে বড় মুসলিম তারকা আমির খান—তিনি ওই সময় এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সরকারকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। আমির খান বলেছিলেন, ‘সাধারণত পদক্ষেপ! এটি জাতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন ছিল।’ যত দূর জানা যায়, আমির খানের অর্থনীতিতে ডিগ্রি নেই। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জানি, সাধারণ মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং আমি এ নিয়ে দুঃখিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন এবং আমাদের অবশ্যই তাঁকে সমর্থন করতে হবে।’
২০১৯ সালের যে লোকসভা ভোটে মোদি পুনর্নির্বাচিত হন, সেই ভোটের প্রচারের সময় নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং বলিউড তারকাদের প্রতি টুইটের পেছনে প্রতি এক ঘণ্টায় দুই মিনিট করে সময় ব্যয় করেছেন। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ডাকতে এই তারকাদের তাঁদের প্রভাব ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন মোদি। একজন রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে এটি ছিল অস্বাভাবিক ও বেআইনি। কিন্তু কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস পাননি। অনেক তারকা যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এমন প্রকাশ্যে অনুরোধ পেয়েছেন, তাঁদের অনেকে উৎসাহের সঙ্গে এবং দ্রুত সাড়া দিয়েছেন।
একজন তারকা অবশ্য সাড়া দিতে সময় নিয়েছেন: শাহরুখ খান। দীর্ঘকাল ধরে বহির্বিশ্বে বলিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী তারকা তিনি। প্রতিক্রিয়া জানাতে বিলম্বের একটি ভালো অজুহাত দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। তিনি হিন্দিতে টুইট করে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সৃজনশীলতার জন্য বলেছেন। আমি একটু দেরি করেছি; কারণ, একটি ভিডিও নির্মাণে ব্যস্ত ছিলাম।’
শাহরুখ খান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই করেছিলেন, তিনি টুইটের ২২০ ক্যারেক্টারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। এক মিনিট দীর্ঘ একটি চটকদার ভিডিওতে শাহরুখকে দেখা যায়। বাতাসে এলোমেলো ঘন কালো চুলের ঝলক দেখিয়ে ভারতীয় ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান শাহরুখ।
একই কাজ করেছেন আরেক খান—সালমান খান। বলিউডের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যাচেলর বলা হয় তাঁকে। কয়েক দশক ধরে বলিষ্ঠ, পৌরুষদীপ্ত, আবেদনময় পুরুষালি এক ভাবমূর্তি ধরে রেখেছেন তিনি। সেই খানও কিন্তু নরেন্দ্র মোদির আহ্বান উপেক্ষা করতে পারেননি।
অবশ্য নরেন্দ্র মোদি যেভাবে বলিউডকে ব্যবহার করতে চেয়েছেন এবং এ ক্ষেত্রে যতটা আগ্রাসী ছিলেন, তাতে অনেক তারকাই ক্যারিয়ার বাঁচাতে আত্মসমর্পণ করেছেন বলেই মনে হয়। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ সংঘ প্রথমেই মহারাষ্ট্র সরকার দখল করেছে। এই সরকারের সঙ্গে বলিউড তারকাদের বরাবরই ঘনিষ্ঠতা ছিল। এরপর তিন খানকে হেনস্তা করার নানা কৌশল নিয়েছে বিজেপি। সালমান খানের বিরুদ্ধে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলা; আমির খানের সিনেমার বিরুদ্ধে বারবার উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আপত্তি ও মুক্তিতে বাধা, সিনেমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার এমনকি বাড়িতে ঢিল ছোড়ার মতো ঘটনা; শাহরুখ খানের ছেলেকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া, বিভিন্ন রাজ্যে সিনেমা মুক্তিতে বাধা, সেই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার তো ছিলই। একপর্যায়ে তিন খান চোখের সামনে মুসলিম বিদ্বেষ এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেখেও কথা বলা থেকে বিরত থাকাকেই বেছে নিয়েছিলেন।
২০১৫ সালে দেশব্যাপী অসহিষ্ণুতার বিস্তারে সরকারের ভূমিকা নিয়ে একটি মন্তব্য করার পর তোপের মুখে পড়েন আমির খান। ই-কমার্স সাইট স্ন্যাপডিলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। সরকারের পর্যটন প্রচারের বিজ্ঞাপন ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’-এর মুখ ছিলেন আমির খান। সেখান থেকেও তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। বিজেপির আইটি সেল ব্যাপক অপপ্রচার চালায়। একপর্যায়ে ঘোষণা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিদায় নেন আমির।
আর শাহরুখ খান ছেলের মাদক-কাণ্ডের মামলা নিয়ে কয়েক মাস ধরে যে হেনস্তার শিকার হয়েছেন, তা বর্ণনাতীত! সিনেমা মুক্তির জন্য তাঁকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী এবং খোদ প্রধানমন্ত্রীকে ফোনকল করে অনুরোধ জানাতে হয়েছিল।
মেহেদি হাসানের জেতেওতে প্রকাশিত ফাতেমা ভুট্টোর নিবন্ধ অবলম্বনে
বলিউডের কথা ভাবলেই মনে ভেসে ওঠে আলো-ঝলমলে এক জগৎ—ঘণ্টার পর ঘণ্টা রঙিন নাটক, বৃষ্টিভেজা আইটেম নাম্বার এবং দম বন্ধ করা আঁটসাঁট পোশাকে ঘুরতে থাকা নায়িকা। মানুষ এখন বলিউড সিনেমা দেখে মূলত উচ্ছলতা, নিখাদ আনন্দ দেওয়ার প্রচেষ্টা আর ঝকঝকে দৃশ্যায়নের জন্য। মানুষ এখন আর বর্ণনামূলক স্বচ্ছতার জন্য এসব সিনেমা দেখে না। যদিও এমন এক সময় ছিল, বিশেষ করে ১৯৭০-এর দশকে, যখন চলচ্চিত্রগুলোতে দরিদ্র, শ্রমিকশ্রেণি এবং গ্রামীণ ভারতীয়দের সংগ্রাম রুপালি পর্দায় তুলে আনা হতো। সেসব দিন এখন অতীত।
বলিউডের ব্লকবাস্টার সিনেমা থেকে আজকাল আর নৈতিক শিক্ষা নেওয়ার কিছু নেই। এখনকার সিনেমার কোনো নায়ক আর শ্রেণিসংগ্রাম বা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেন না। সমসাময়িক নায়কেরা হয়ে থাকেন লাগামহীন পুঁজিবাদের সেবক, ফ্যাশনদুরস্ত ধনীর দুলাল, অথবা হিন্দু আধিপত্যবাদী মতাদর্শের পদলেহী সৈনিক, যার লড়াই হিন্দুত্বের পক্ষে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে।
এমন নয় যে বলিউডের সেই নির্মাতারা রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গেছেন। ডানপন্থী চলচ্চিত্র নির্মাতারা তাঁদের স্থান দখল করেছেন এমন নয়; বরং বলিউড সব সময় ভারতের মেজাজ প্রতিফলিত করেছে। এক দশক ধরে ভারতের মেজাজ অন্ধকারে নিমজ্জিত। পর্দায় বা পর্দার বাইরে বলিউড বা বলিউড তারকাদের কাছ থেকে কেউ আর সেই সৎ সাহস বা প্রতিবাদী ভাবমূর্তি আশা করে না। কারণ, বলিউড যেন ক্ষমতার সঙ্গে এক সৌহার্দ্যের কারখানা হয়ে গেছে। ভারতের চলচ্চিত্রশিল্প দীর্ঘদিন ধরে এই মেরুদণ্ডহীনতার জন্য বিখ্যাত।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দীর্ঘ শাসনামলে, বেশির ভাগ বলিউড সিনেমা এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সরকারের ক্রমবর্ধমান অসামঞ্জস্যপূর্ণ অর্থনৈতিক নীতি এবং ডানপন্থী রাজনীতির জন্য অনানুষ্ঠানিক চিয়ারলিডার হিসেবে কাজ করেছেন। তারকা অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত দীর্ঘদিন ধরে মোদিকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির টিকিটে এমপি পদও বাগিয়েছেন।
কিন্তু কঙ্গনার এই জয়টা এসেছে এক চমকপ্রদ ফলের পটভূমিতে। যদিও মোদি তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকবেন, কিন্তু তিনি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন। জোট সরকারের নেতৃত্বে সরকার গঠনের মতো অস্বস্তিকর এক ভবিষ্যতের মুখোমুখি হয়েছেন মোদি।
গত মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরপরই ভারতীয় সাংবাদিক এবং লেখক রানা আইয়ুব টুইট করেছেন, ‘বলিউড কি এখন এসব মাঝারি মানের বা অপর পক্ষকে ছোট করার প্রবণতাযুক্ত, ইসলামফোবিক চলচ্চিত্রকে পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া বন্ধ করবে?’
এটি এমন একটি প্রশ্ন, যা অনেকে এত দিন ধরে ভাবছিলেন। আশা করা যায়, মোদির কষ্টার্জিত জয় এবং বিরোধীদের ভোটের ঢেউ বলিউডের সাংস্কৃতিক পরিবর্তনকে ইতিবাচক দিকেই ধাবিত করবে। তবে এটি না হওয়া পর্যন্ত মোদির রাজনৈতিক প্রকল্পে ভারতের চলচ্চিত্র সংঘ কতটা জটিল ছিল, তা দেখা গুরুত্বপূর্ণ।
সেই হাওয়া কিছুটা এরই মধ্যে বইতে শুরু করেছে। গত দুবারের লোকসভা নির্বাচন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন কিংবা অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনে যেভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলিউড তারকাদের পোস্টের ঢল নেমেছিল, এবার তা এখনো দেখা যায়নি। অনুপম খের, পরেশ রাওয়াল ও ভূমি পেডনেকরের মতো দু–চারজন ছাড়া অধিকাংশ তারকাই চুপ।
মোদির বলিউড দখল এবং ভোটের রাজনীতিতে সিনেমাশিল্পকে ব্যবহারের অভিযাত্রায় বলিউডের তিন খান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। ২০১৬ সালে যখন মোদির বিমুদ্রাকরণ বা নোটবন্দীর (ডিমনিটাইজেশন) সিদ্ধান্তে ভারত কেঁপে উঠেছিল। এই সিদ্ধান্ত রাতারাতি বাজার থেকে ভারতের মুদ্রার ৮৬ শতাংশ প্রত্যাহার করে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছিল।
বলিউডের সবচেয়ে বড় মুসলিম তারকা আমির খান—তিনি ওই সময় এই সিদ্ধান্তের পক্ষে সরকারকে প্রশ্রয় দেওয়ার জন্য দাঁড়িয়েছিলেন। আমির খান বলেছিলেন, ‘সাধারণত পদক্ষেপ! এটি জাতির উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন ছিল।’ যত দূর জানা যায়, আমির খানের অর্থনীতিতে ডিগ্রি নেই। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি জানি, সাধারণ মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এবং আমি এ নিয়ে দুঃখিত। আমাদের প্রধানমন্ত্রী একটি ভালো উদ্যোগ নিয়েছেন এবং আমাদের অবশ্যই তাঁকে সমর্থন করতে হবে।’
২০১৯ সালের যে লোকসভা ভোটে মোদি পুনর্নির্বাচিত হন, সেই ভোটের প্রচারের সময় নরেন্দ্র মোদি ভারতীয় জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব এবং বলিউড তারকাদের প্রতি টুইটের পেছনে প্রতি এক ঘণ্টায় দুই মিনিট করে সময় ব্যয় করেছেন। ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে ডাকতে এই তারকাদের তাঁদের প্রভাব ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়েছেন মোদি। একজন রাষ্ট্রপ্রধানের কাছ থেকে এটি ছিল অস্বাভাবিক ও বেআইনি। কিন্তু কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস পাননি। অনেক তারকা যাঁরা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এমন প্রকাশ্যে অনুরোধ পেয়েছেন, তাঁদের অনেকে উৎসাহের সঙ্গে এবং দ্রুত সাড়া দিয়েছেন।
একজন তারকা অবশ্য সাড়া দিতে সময় নিয়েছেন: শাহরুখ খান। দীর্ঘকাল ধরে বহির্বিশ্বে বলিউডের সবচেয়ে প্রভাবশালী তারকা তিনি। প্রতিক্রিয়া জানাতে বিলম্বের একটি ভালো অজুহাত দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। তিনি হিন্দিতে টুইট করে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সৃজনশীলতার জন্য বলেছেন। আমি একটু দেরি করেছি; কারণ, একটি ভিডিও নির্মাণে ব্যস্ত ছিলাম।’
শাহরুখ খান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য অন্যদের চেয়ে একটু বেশিই করেছিলেন, তিনি টুইটের ২২০ ক্যারেক্টারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেননি। এক মিনিট দীর্ঘ একটি চটকদার ভিডিওতে শাহরুখকে দেখা যায়। বাতাসে এলোমেলো ঘন কালো চুলের ঝলক দেখিয়ে ভারতীয় ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানান শাহরুখ।
একই কাজ করেছেন আরেক খান—সালমান খান। বলিউডের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ব্যাচেলর বলা হয় তাঁকে। কয়েক দশক ধরে বলিষ্ঠ, পৌরুষদীপ্ত, আবেদনময় পুরুষালি এক ভাবমূর্তি ধরে রেখেছেন তিনি। সেই খানও কিন্তু নরেন্দ্র মোদির আহ্বান উপেক্ষা করতে পারেননি।
অবশ্য নরেন্দ্র মোদি যেভাবে বলিউডকে ব্যবহার করতে চেয়েছেন এবং এ ক্ষেত্রে যতটা আগ্রাসী ছিলেন, তাতে অনেক তারকাই ক্যারিয়ার বাঁচাতে আত্মসমর্পণ করেছেন বলেই মনে হয়। নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ সংঘ প্রথমেই মহারাষ্ট্র সরকার দখল করেছে। এই সরকারের সঙ্গে বলিউড তারকাদের বরাবরই ঘনিষ্ঠতা ছিল। এরপর তিন খানকে হেনস্তা করার নানা কৌশল নিয়েছে বিজেপি। সালমান খানের বিরুদ্ধে কৃষ্ণসার হরিণ হত্যা মামলা; আমির খানের সিনেমার বিরুদ্ধে বারবার উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আপত্তি ও মুক্তিতে বাধা, সিনেমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার এমনকি বাড়িতে ঢিল ছোড়ার মতো ঘটনা; শাহরুখ খানের ছেলেকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া, বিভিন্ন রাজ্যে সিনেমা মুক্তিতে বাধা, সেই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় অপপ্রচার তো ছিলই। একপর্যায়ে তিন খান চোখের সামনে মুসলিম বিদ্বেষ এবং সাম্প্রদায়িক সহিংসতা দেখেও কথা বলা থেকে বিরত থাকাকেই বেছে নিয়েছিলেন।
২০১৫ সালে দেশব্যাপী অসহিষ্ণুতার বিস্তারে সরকারের ভূমিকা নিয়ে একটি মন্তব্য করার পর তোপের মুখে পড়েন আমির খান। ই-কমার্স সাইট স্ন্যাপডিলের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। সরকারের পর্যটন প্রচারের বিজ্ঞাপন ‘ইনক্রেডিবল ইন্ডিয়া’-এর মুখ ছিলেন আমির খান। সেখান থেকেও তাঁকে বাদ দেওয়া হয়। বিজেপির আইটি সেল ব্যাপক অপপ্রচার চালায়। একপর্যায়ে ঘোষণা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে বিদায় নেন আমির।
আর শাহরুখ খান ছেলের মাদক-কাণ্ডের মামলা নিয়ে কয়েক মাস ধরে যে হেনস্তার শিকার হয়েছেন, তা বর্ণনাতীত! সিনেমা মুক্তির জন্য তাঁকে আসামের মুখ্যমন্ত্রী এবং খোদ প্রধানমন্ত্রীকে ফোনকল করে অনুরোধ জানাতে হয়েছিল।
মেহেদি হাসানের জেতেওতে প্রকাশিত ফাতেমা ভুট্টোর নিবন্ধ অবলম্বনে
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
৩ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগে