অনলাইন ডেস্ক
ভারত ঘিরে থাকা এশিয়ার তিন দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থ দিয়েছে চীন। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা ও পাকিস্তানের গোয়াদরের বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বন্দরও আছে এই তালিকায়। এই অঞ্চলে কৌশলগত আধিপত্য বজায় রাখতে চীন এই বন্দরগুলোকে ব্যবহার করছে বলে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।
এই তিন বন্দরকে চীনের ‘ট্রায়াঙ্গল অব ডেথ’ আখ্যা দিয়ে তারা বলছেন, চীনকে ঠেকাতে ঢাকা ও কলম্বোর ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে দিল্লি। এ ক্ষেত্রে জ্বালানি, সমুদ্র ও যোগাযোগ খাতে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে। পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জাম দিয়েও সহযোগিতার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ভারত শ্রীলঙ্কার সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে কাজ করছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে রুশ সামরিক সরঞ্জাম কেনার পক্ষে ওকালতি করছে। ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি তেজাস যুদ্ধবিমান কিনতেও নাকি আগ্রহ দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর নজর ইউরোপীয় যুদ্ধবিমানের দিকে ঘুরে যায়।
বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর এমন কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে, যেখান দিয়ে বিশ্বের মোট বাণিজ্যের অন্তত ৫০ শতাংশ পরিবাহিত হয়। এই উপসাগরের বুক চিরে যাওয়া সামুদ্রিক রুটগুলো চীন, জাপান, দুই কোরিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।
বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর হলো বঙ্গোপসাগর। এর পশ্চিমে ভারত এবং পূর্বে ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার এর উপকূলীয় দেশ। অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত গুরুত্বের কারণে এই অঞ্চল বরাবরই পূর্ব ও পশ্চিমের প্রধান শক্তিগুলোকে চীন, জাপান, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি রাশিয়া আকৃষ্ট করেছে।
এ বছরই বঙ্গোপসাগরের বুকে কক্সবাজারে বিএনএস শেখ হাসিনা নামে ঘাঁটি চালু হয়েছে। ওই ঘাঁটি তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়েছে চীন। সব মিলে ছয়টি সাবমেরিন ও আটটি অন্যান্য নৌযান জায়গা করে নিতে পারবে। বঙ্গোপসাগরে চীনের উপস্থিতি ভারতের জন্য পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে। যে চুক্তির আওতায় এই সহায়তা, তা এই অঞ্চলে চীনের উপস্থিতিকেও বৈধ করে তোলে। তাই, স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সামনে জটিল পরিস্থিতি হাজির হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে জোরালো সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতই প্রথম স্বীকৃতি দেয় এবং প্রথম দেশ হিসেবে ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু প্রথম চীনা প্রেসিডেন্ট হিসেবে সি চিন পিং বাংলাদেশ সফর করার পর এই চিত্র বদলে যায়। সির সেই সফরের পরপরই বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ২৩ কোটি ডলারে দুটি সাবমেরিন কেনে। পরে এই সাবমেরিন দুটিকে বিএনএস নবযাত্রা ও জয়যাত্রা নামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশন করানো হয়। এই সাবমেরিনগুলো ভারতের জন্য হুমকি না হলেও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে আসা চীনা কর্মকর্তাদের বিষয়টি আলাদা।
এর বাইরে বাংলাদেশ চীন থেকে ৪৪টি টি-২০০০ মেইন ব্যাটল ট্যাংক, দুই রেজিমেন্ট এফএম-৯০ স্বল্পপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, কিউডব্লিউ-২ এবং এফএন-৬ হাতে বহনযোগ্য অ্যান্টি এয়ারক্রাফট ক্ষেপণাস্ত্র, পিএফ-৯৮ অ্যান্টি ট্যাংক রকেট এবং ৩৬টি ডব্লিউএস-২২ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম কিনেছে। এ ছাড়া চীনের কাছ থেকে ১৬টি এফ-৭ বিজি লাইট অ্যাটাক যুদ্ধবিমানও কিনেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ রাশিয়া থেকেও ১৬টি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান এবং লাইট অ্যাটাক যুদ্ধবিমান কিনেছে।
এসবের বিপরীতে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সড়ক ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সামরিক সংযোগও বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যেমন—বাংলাদেশে থাকা রুশ সরঞ্জাম এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, আন্তনভ এএন-৩২ পরিবহন বিমান এবং মিগ-২৯-এর মতো যুদ্ধবিমানগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ভারতের সহায়তার সুযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ ভারতের এমন ধরনের বিমান এবং হেলিকপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিজস্ব সুবিধা আছে। কেবল তাই নয়, ভারত বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রতিরক্ষাসামগ্রী কেনার জন্য ঋণও দিচ্ছে।
এ বিষয়ে ভারতীয় এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য।’
এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশ বিমনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মসীহুজ্জামান সেরনিয়াবাত ভারতের ডিফেন্স এক্সপো-২০২১-এ ভারতের তেজাস যুদ্ধবিমানে উড়ে বেশ অভিভূত হয়েছিলেন। ভারত আশা করেছিল, বাংলাদেশের কাছে হয়তো কিছু তেজাস বিক্রি করা যাবে। কিন্তু মসীহুজ্জামান সেরনিয়াবাত অবসরে যাওয়ায় এবং মহামারি চলে আসায় বিষয়টি ঝুলে যায়।
নতুন সূত্রে পাওয়া খবর বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার আগে আর কোনো চুক্তির সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ইউরোপীয় বিমানকে প্রাধান্য দিচ্ছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
বাংলাদেশ সরকারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্ভবত ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান কিনতে যাচ্ছে। হয় ইউরো ফাইটার টাইফুন, আর না হয় ফরাসি রাফালে। তবে এই চুক্তিও আগামী নির্বাচনের আগে সম্ভব হবে না।’
২০২৩ সালের জুলাই মাসে ভারত সফর করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে সফরে গিয়ে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব বিমান, সমুদ্র, জ্বালানি ও শক্তি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় ভারত শ্রীলঙ্কায় বেশ কয়েকটি বন্দর তৈরি করবে। এর মধ্যে আছে দ্বীপের দেশটির পশ্চিম উপকূলে কলম্বো, পূর্বে ত্রিঙ্কোমালি এবং দেশের উত্তর প্রান্তে পাক প্রণালির মুখে কাঙ্কেসান্থুরাই বন্দর। ত্রিঙ্কোমালি বিশ্বের প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়গুলোর একটি হলেও বন্দরটিতে বড় আকারে জাহাজ ভেড়ানোর কোনো সুবিধা নেই। দিল্লি এই সুযোগটিই নিতে চায় এবং চীনের ট্রায়াঙ্গেল অব ডেথের পাশেই নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে চায়।
এ ছাড়া দিল্লি ও কলম্বো সমন্বিত বিদ্যুৎ গ্রিড বা সঞ্চালন ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি যৌথ উদ্যোগ নিয়ে কথা বলছে। এই গ্রিড বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালসহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে সংযুক্ত করবে। এই দেশগুলোর আঞ্চলিক উদ্যোগ, যা বিবিআইএন নামে (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল) পরিচিত হতে পারে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের চিরবৈরী সম্পর্কের কারণে সার্ক অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠায় এই জোটের ভবিষ্যৎ দেখছেন না অনেকে।
এর বাইরে পাইপলাইন নির্মাণে কলম্বোর সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন। এটি শ্রীলঙ্কার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জায়গা নাগাপট্টিনাম, কলম্বো ও ত্রিঙ্কোমালিকে সংযুক্ত করবে। এই ত্রিঙ্কোমালিতেই ভারত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার তেলের ডিপো সংস্কার করে দিতে চাইছে। এ ছাড়া দক্ষিণ ভারত থেকে আরেকটি পাইপলাইন শ্রীলঙ্কার মূল ভূখণ্ডে নেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। জ্বালানিসংকটে থাকা দেশটির জন্য এই পাইপলাইন লাইফলাইন হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
২০২২ সালে যখন শ্রীলঙ্কা চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন দেশটি চীনের কাছে ঋণ নবায়নের অনুরোধ জানিয়েছিল, কিন্তু কোনো জবাব পায়নি। বিপরীতে ভারত সে সময় শ্রীলঙ্কাকে ৪০০ কোটি ডলারেরও বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল। এর মধ্যে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি সহায়তা ছিল। ভারতের এই আর্থিক সহায়তা ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে অনেকটাই আশার আলো দেখিয়েছিল। এর বাইরেও ২০২৩ সালে ভারত ভারতীয় মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সুবিধার আওতায় শ্রীলঙ্কাকে ১০ বছরের জন্য ঋণ পরিশোধ স্থগিত এবং ১৫ বছরের জন্য ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে চীন দ্বীপরাষ্ট্রকে মাত্র দুই বছরের ঋণ স্থগিত করার প্রস্তাব দেয়। অথচ বেইজিংকে শ্রীলঙ্কা ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানটোটা বন্দর ইজারা দিয়েছে।
ভারত মহাসাগরে কৌশলগত অবস্থানের কারণে চীন ও ভারত উভয়ের কাছেই শ্রীলঙ্কা গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তাই চীন এই অঞ্চলে প্রভাববলয় প্রসারিত করতে চায় এবং ভারত তার স্বার্থের জন্য এটিকে রক্ষা করতে চায়।
এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক বিশ্লেষক অরুণা কুলাতুঙ্গা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, ভারত শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে ‘চীনের ডি-ফ্যাক্টো স্যাটেলাইট স্টেট’ হিসেবে দেখে। কারণ দেশগুলো চীনকে জমি লিজ দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই তিন দেশ ভারতের জন্য একটি ট্রায়াঙ্গেল অব ডেথ গঠন করেছে, যা ভারতের জন্য অনেকটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মতো। তাই তাঁর মতে, এই অঞ্চলে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক রুট রক্ষার জন্য ভারতকে এই অঞ্চলে আরও বেশি রিসোর্স ব্যবহার করতে হবে।
অনুবাদ: আব্দুর রহমান
ভারত ঘিরে থাকা এশিয়ার তিন দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রবন্দর নির্মাণে অর্থ দিয়েছে চীন। শ্রীলঙ্কার হাম্বানটোটা ও পাকিস্তানের গোয়াদরের বন্দরের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি বন্দরও আছে এই তালিকায়। এই অঞ্চলে কৌশলগত আধিপত্য বজায় রাখতে চীন এই বন্দরগুলোকে ব্যবহার করছে বলে ভারতের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা।
এই তিন বন্দরকে চীনের ‘ট্রায়াঙ্গল অব ডেথ’ আখ্যা দিয়ে তারা বলছেন, চীনকে ঠেকাতে ঢাকা ও কলম্বোর ঘনিষ্ঠ হতে চাইছে দিল্লি। এ ক্ষেত্রে জ্বালানি, সমুদ্র ও যোগাযোগ খাতে সম্পর্ক উন্নয়ন করছে। পাশাপাশি সামরিক সরঞ্জাম দিয়েও সহযোগিতার চেষ্টা চালাচ্ছে।
ভারত শ্রীলঙ্কার সমুদ্রবন্দর উন্নয়নে কাজ করছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে রুশ সামরিক সরঞ্জাম কেনার পক্ষে ওকালতি করছে। ভারতের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি তেজাস যুদ্ধবিমান কিনতেও নাকি আগ্রহ দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু পরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর নজর ইউরোপীয় যুদ্ধবিমানের দিকে ঘুরে যায়।
বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত বঙ্গোপসাগর এমন কৌশলগত অবস্থানে রয়েছে, যেখান দিয়ে বিশ্বের মোট বাণিজ্যের অন্তত ৫০ শতাংশ পরিবাহিত হয়। এই উপসাগরের বুক চিরে যাওয়া সামুদ্রিক রুটগুলো চীন, জাপান, দুই কোরিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।
বিশ্বের বৃহত্তম উপসাগর হলো বঙ্গোপসাগর। এর পশ্চিমে ভারত এবং পূর্বে ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমার এর উপকূলীয় দেশ। অর্থনৈতিক, কূটনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত গুরুত্বের কারণে এই অঞ্চল বরাবরই পূর্ব ও পশ্চিমের প্রধান শক্তিগুলোকে চীন, জাপান, ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, এমনকি রাশিয়া আকৃষ্ট করেছে।
এ বছরই বঙ্গোপসাগরের বুকে কক্সবাজারে বিএনএস শেখ হাসিনা নামে ঘাঁটি চালু হয়েছে। ওই ঘাঁটি তৈরিতে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়েছে চীন। সব মিলে ছয়টি সাবমেরিন ও আটটি অন্যান্য নৌযান জায়গা করে নিতে পারবে। বঙ্গোপসাগরে চীনের উপস্থিতি ভারতের জন্য পরিস্থিতি জটিল করে তুলতে পারে। যে চুক্তির আওতায় এই সহায়তা, তা এই অঞ্চলে চীনের উপস্থিতিকেও বৈধ করে তোলে। তাই, স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সামনে জটিল পরিস্থিতি হাজির হয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে জোরালো সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ভারতই প্রথম স্বীকৃতি দেয় এবং প্রথম দেশ হিসেবে ঢাকার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলে। কিন্তু প্রথম চীনা প্রেসিডেন্ট হিসেবে সি চিন পিং বাংলাদেশ সফর করার পর এই চিত্র বদলে যায়। সির সেই সফরের পরপরই বাংলাদেশ চীনের কাছ থেকে ২৩ কোটি ডলারে দুটি সাবমেরিন কেনে। পরে এই সাবমেরিন দুটিকে বিএনএস নবযাত্রা ও জয়যাত্রা নামে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে কমিশন করানো হয়। এই সাবমেরিনগুলো ভারতের জন্য হুমকি না হলেও বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দিতে আসা চীনা কর্মকর্তাদের বিষয়টি আলাদা।
এর বাইরে বাংলাদেশ চীন থেকে ৪৪টি টি-২০০০ মেইন ব্যাটল ট্যাংক, দুই রেজিমেন্ট এফএম-৯০ স্বল্পপাল্লার ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র, কিউডব্লিউ-২ এবং এফএন-৬ হাতে বহনযোগ্য অ্যান্টি এয়ারক্রাফট ক্ষেপণাস্ত্র, পিএফ-৯৮ অ্যান্টি ট্যাংক রকেট এবং ৩৬টি ডব্লিউএস-২২ মাল্টিপল রকেট লঞ্চার সিস্টেম কিনেছে। এ ছাড়া চীনের কাছ থেকে ১৬টি এফ-৭ বিজি লাইট অ্যাটাক যুদ্ধবিমানও কিনেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ রাশিয়া থেকেও ১৬টি ইয়াক-১৩০ প্রশিক্ষণ বিমান এবং লাইট অ্যাটাক যুদ্ধবিমান কিনেছে।
এসবের বিপরীতে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সড়ক ও অভ্যন্তরীণ নৌপথে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি সামরিক সংযোগও বাড়ানোর চেষ্টা করছে। যেমন—বাংলাদেশে থাকা রুশ সরঞ্জাম এমআই-১৭ হেলিকপ্টার, আন্তনভ এএন-৩২ পরিবহন বিমান এবং মিগ-২৯-এর মতো যুদ্ধবিমানগুলো রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে ভারতের সহায়তার সুযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ ভারতের এমন ধরনের বিমান এবং হেলিকপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিজস্ব সুবিধা আছে। কেবল তাই নয়, ভারত বাংলাদেশকে বিভিন্ন প্রতিরক্ষাসামগ্রী কেনার জন্য ঋণও দিচ্ছে।
এ বিষয়ে ভারতীয় এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ভারত বাংলাদেশকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কেনার জন্য।’
এর আগে ২০২১ সালে বাংলাদেশ বিমনাবাহিনীর তৎকালীন প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মসীহুজ্জামান সেরনিয়াবাত ভারতের ডিফেন্স এক্সপো-২০২১-এ ভারতের তেজাস যুদ্ধবিমানে উড়ে বেশ অভিভূত হয়েছিলেন। ভারত আশা করেছিল, বাংলাদেশের কাছে হয়তো কিছু তেজাস বিক্রি করা যাবে। কিন্তু মসীহুজ্জামান সেরনিয়াবাত অবসরে যাওয়ায় এবং মহামারি চলে আসায় বিষয়টি ঝুলে যায়।
নতুন সূত্রে পাওয়া খবর বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচন হওয়ার আগে আর কোনো চুক্তির সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশ ভারতের চেয়ে ইউরোপীয় বিমানকে প্রাধান্য দিচ্ছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
বাংলাদেশ সরকারের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বাংলাদেশ সম্ভবত ইউরোপীয় যুদ্ধবিমান কিনতে যাচ্ছে। হয় ইউরো ফাইটার টাইফুন, আর না হয় ফরাসি রাফালে। তবে এই চুক্তিও আগামী নির্বাচনের আগে সম্ভব হবে না।’
২০২৩ সালের জুলাই মাসে ভারত সফর করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে সফরে গিয়ে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব বিমান, সমুদ্র, জ্বালানি ও শক্তি খাতে সহযোগিতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির আওতায় ভারত শ্রীলঙ্কায় বেশ কয়েকটি বন্দর তৈরি করবে। এর মধ্যে আছে দ্বীপের দেশটির পশ্চিম উপকূলে কলম্বো, পূর্বে ত্রিঙ্কোমালি এবং দেশের উত্তর প্রান্তে পাক প্রণালির মুখে কাঙ্কেসান্থুরাই বন্দর। ত্রিঙ্কোমালি বিশ্বের প্রাকৃতিক পোতাশ্রয়গুলোর একটি হলেও বন্দরটিতে বড় আকারে জাহাজ ভেড়ানোর কোনো সুবিধা নেই। দিল্লি এই সুযোগটিই নিতে চায় এবং চীনের ট্রায়াঙ্গেল অব ডেথের পাশেই নিজের অবস্থান নিশ্চিত করতে চায়।
এ ছাড়া দিল্লি ও কলম্বো সমন্বিত বিদ্যুৎ গ্রিড বা সঞ্চালন ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি যৌথ উদ্যোগ নিয়ে কথা বলছে। এই গ্রিড বাংলাদেশ, ভুটান ও নেপালসহ দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সঙ্গে শ্রীলঙ্কাকে সংযুক্ত করবে। এই দেশগুলোর আঞ্চলিক উদ্যোগ, যা বিবিআইএন নামে (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপাল) পরিচিত হতে পারে। ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের চিরবৈরী সম্পর্কের কারণে সার্ক অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠায় এই জোটের ভবিষ্যৎ দেখছেন না অনেকে।
এর বাইরে পাইপলাইন নির্মাণে কলম্বোর সঙ্গে আলাপ চালিয়ে যাচ্ছে ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন। এটি শ্রীলঙ্কার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি জায়গা নাগাপট্টিনাম, কলম্বো ও ত্রিঙ্কোমালিকে সংযুক্ত করবে। এই ত্রিঙ্কোমালিতেই ভারত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার তেলের ডিপো সংস্কার করে দিতে চাইছে। এ ছাড়া দক্ষিণ ভারত থেকে আরেকটি পাইপলাইন শ্রীলঙ্কার মূল ভূখণ্ডে নেওয়ারও প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। জ্বালানিসংকটে থাকা দেশটির জন্য এই পাইপলাইন লাইফলাইন হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।
২০২২ সালে যখন শ্রীলঙ্কা চরম আর্থিক দুর্দশার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন দেশটি চীনের কাছে ঋণ নবায়নের অনুরোধ জানিয়েছিল, কিন্তু কোনো জবাব পায়নি। বিপরীতে ভারত সে সময় শ্রীলঙ্কাকে ৪০০ কোটি ডলারেরও বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছিল। এর মধ্যে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি সহায়তা ছিল। ভারতের এই আর্থিক সহায়তা ঋণে জর্জরিত শ্রীলঙ্কাকে অনেকটাই আশার আলো দেখিয়েছিল। এর বাইরেও ২০২৩ সালে ভারত ভারতীয় মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সুবিধার আওতায় শ্রীলঙ্কাকে ১০ বছরের জন্য ঋণ পরিশোধ স্থগিত এবং ১৫ বছরের জন্য ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দেওয়ার ঘোষণা দেয়। অন্যদিকে চীন দ্বীপরাষ্ট্রকে মাত্র দুই বছরের ঋণ স্থগিত করার প্রস্তাব দেয়। অথচ বেইজিংকে শ্রীলঙ্কা ৯৯ বছরের জন্য হাম্বানটোটা বন্দর ইজারা দিয়েছে।
ভারত মহাসাগরে কৌশলগত অবস্থানের কারণে চীন ও ভারত উভয়ের কাছেই শ্রীলঙ্কা গুরুত্বপূর্ণ দেশ। তাই চীন এই অঞ্চলে প্রভাববলয় প্রসারিত করতে চায় এবং ভারত তার স্বার্থের জন্য এটিকে রক্ষা করতে চায়।
এ বিষয়ে শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক বিশ্লেষক অরুণা কুলাতুঙ্গা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টকে বলেন, ভারত শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানকে ‘চীনের ডি-ফ্যাক্টো স্যাটেলাইট স্টেট’ হিসেবে দেখে। কারণ দেশগুলো চীনকে জমি লিজ দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, এই তিন দেশ ভারতের জন্য একটি ট্রায়াঙ্গেল অব ডেথ গঠন করেছে, যা ভারতের জন্য অনেকটা শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মতো। তাই তাঁর মতে, এই অঞ্চলে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক রুট রক্ষার জন্য ভারতকে এই অঞ্চলে আরও বেশি রিসোর্স ব্যবহার করতে হবে।
অনুবাদ: আব্দুর রহমান
ড. ইউনূসকে যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
১ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
১৯ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১ দিন আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
৩ দিন আগে