Ajker Patrika

আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে কি আরও একধাপ এগোল মধ্যপ্রাচ্য

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ১২: ৪২
আঞ্চলিক যুদ্ধের দিকে কি আরও একধাপ এগোল মধ্যপ্রাচ্য

ইসরায়েলের প্রতিবেশী দেশ জর্ডানে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় ৩ মার্কিন সেনা নিহত ও ৩৪ জন আহত হয়েছে। গাজা যুদ্ধ শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে এই প্রথম কোনো হামলায় মার্কিন সেনা হতাহতের ঘটনা ঘটল। তবে এমন ঘটনা প্রথম ঘটলেও বিশ্লেষকেরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে গাজা যুদ্ধের কারণে যে উত্তেজনার আগুন মধ্যপ্রাচ্যে জ্বলে উঠেছে তা আরও উসকে উঠবে। 

এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম চিরশত্রু দেশ ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরান সমর্থিত গোষ্ঠী এই ড্রোন হামলা চালিয়েছে এবং মনে হচ্ছে, এটি সিরিয়া থেকে এসেছিল। তবে কোন মিলিশিয়া গোষ্ঠী এই হামলার জন্য দায়ী তা এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতি মধ্যপ্রাচ্যের অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে আরও অনিশ্চিত করে তুলবে। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই হামলার পরপরই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘আমরা এর জবাব দেব।’ তিনি বলেছেন, যারা এই হামলার সঙ্গে জড়িত তাদের শিগগির পাকড়াও করা হবে এবং শাস্তি দেওয়া হবে। বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন, এই হামলায় কারা জড়িত সে বিষয়েও শিগগির প্রমাণাদি হাজির করা হবে। 

এই হামলার সঙ্গে ইরানকে অভিযুক্ত করে বাইডেন বলেন, ‘আমরা জানি, এটি (জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা) সিরিয়া ও ইরাকে সক্রিয় ইরান সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী চালিয়েছিল।’ এ সময় তিনি জড়িতদের শাস্তি দেওয়ার প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করে বলেন, ‘কোনো সন্দেহ নেই, আমরা যথাসময়ে ও আমাদেরই বেছে নেওয়া পদ্ধতিতে এই ঘটনায় দায়ীদের জবাবদিহির আওতায় আনব।’ 

মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন মার্কিন ও পশ্চিমা বাহিনীর ঘাঁটির ওপর এই হামলাই প্রথম নয়। এ নিয়ে, মোট ১৫৮ বার হামলা চালানো হয়েছে ইরাক ও সিরিয়ার মার্কিন ও আন্তর্জাতিক ঘাঁটিতে। তবে এসব হামলার অধিকাংশই ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। তবে জর্ডানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ফাঁকি দিয়ে টাওয়ার-২২ তে হামলা কীভাবে হলো তা এখনো নিশ্চিত নয়। 
 
সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া ও ইরাকে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরেই দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে যাচ্ছে। বিশেষ করে ইরাকে কাতাইব হিজবুল্লাহ ও ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো তিনটি মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত করেছিল সপ্তাহ খানিক আগে। এ ছাড়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য যৌথভাবে ইয়েমেন ইরান সমর্থিত আরেকটি গোষ্ঠী হুতিদের বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্র দেশগুলো যখন ইরাক, সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো দেশে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ে ব্যস্ত। তার আরও আগে থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মিত্র ইসরায়েল ব্যস্ত গাজা ও লেবাননকে নিয়ে। পশ্চিমা বিশ্বের অভিযোগ, গাজার হামাস ও লেবাননের হিজবুল্লাহকেও সমর্থন দিচ্ছে ইরান। ইরান এসব অভিযোগ সেভাবে কখনো অস্বীকার করেনি। 

ইসরায়েল ও লেবাননের পরিস্থিতি তুলে ধরে লন্ডনভিত্তিক আরেক প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিসের (আইআইএসএস) ফেলো রাইম মমতাজ বলেন, ইসরায়েল আসলে সেখানে আগুন নিয়ে খেলছে। 
 
এই অবস্থায় গাজা সংকট শুরুর পর থেকেই যে আশঙ্কা করা হচ্ছিল যে, এই যুদ্ধ পুরো মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি ও অস্থিরতার আগুন উসকে দিতে পারে। বিষয়টি যেন এখন বাস্তবে পরিণত হতে যাচ্ছে। বাইডেন প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যে ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না, এমন অভিযোগের তীরে বিদ্ধ হচ্ছে নিয়মিত। বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি এমনকি নিজ দল ডেমোক্রেটিক পার্টিতেও বাইডেনের সমালোচনা তীব্র হচ্ছে। 

সিনেটের লিন্ডসে গ্রাহাম বলেছেন, বাইডেন প্রশাসনের ‘ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ’ গড়ে তোলার নীতি শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বাইডেন প্রশাসন ইরান সমর্থিত সব গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারলেও তাঁরা ইরানি আগ্রাসনকে বাধা দেবে না। আমি বাইডেন প্রশাসনকে ইরানের অভ্যন্তরে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুগুলোতে হামলা চালানোর আহ্বান জানাচ্ছি।’ আরেক রিপাবলিকান সিনেটর ও সিনেটের সশস্ত্র পরিষেবা কমিটির সর্বোচ্চ নেতা রজার উইকারও গতকাল রোববার সরাসরি ইরানি লক্ষ্যবস্তু ও ইরানি নেতৃত্বের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। 

এই অবস্থায় বাইডেন যদি ইরান সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন তাহলে গোষ্ঠীগুলোও যে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না তা বলাই বাহুল্য। এমনকি ইরানও যে ছাড় দিয়ে কথা বলবে এমন সম্ভাবনাও নেই। ইরানে আক্রমণ হলে এখনো পর্যন্ত লো-প্রোফাইল যুদ্ধ নীতিতে চলতে থাকা হামাস ও হিজবুল্লাহও যে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যাপক শক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এ ছাড়া ইরান অবশ্যই হুতিদের আরও ব্যাপকভাবে লোহিত সাগরের জলপথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে উৎসাহিত করবে। ফলে কোনো সন্দেহ নেই যে, মধ্যপ্রাচ্যে জ্বলতে থাকা উত্তেজনার আগুন আরও তীব্র হয়ে উসকে উঠবে। 

এরই মধ্যে একাধিক ফ্রন্টে চলতে থাকা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ার পরও মার্কিন কর্মকর্তারা বারবার বলছেন, আঞ্চলিক পর্যায়ের উত্তেজনাকে আঞ্চলিক লড়াইয়ে রূপ দেওয়ার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। এ বিষয়ে পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিংয়ের কাছে জানতে চাওয়া হয়, ইরানি প্রক্সি গোষ্ঠীগুলো মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাহিনীর ওপর হামলা বাড়াচ্ছে কি না? জবাবে তিনি বলেন, অবশ্যই না। 

এর আগে, মার্কিন জয়েন্ট চিফস অব স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল সি কিউ ব্রাউন বলেছেন, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত যাতে প্রসারিত না হয় তা নিশ্চিত করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাজের একটি অংশ। তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো (ইরানি প্রক্সি গোষ্ঠীগুলোকে) তাদের নিবৃত্ত করা। আমরা বৃহত্তর উত্তেজনার পথে যেতে চাই না যা এই অঞ্চলকে বিস্তৃত সংঘাতের দিকে নিয়ে যায়।’ 

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র যা বলছে আর মধ্যপ্রাচ্যে যা করছে তার সঙ্গে তফাৎ আছে। মুখে শান্তির কথা বললেও যুক্তরাষ্ট্র ইরাক থেকে সেনা সরিয়ে নিতে টালবাহানা করছে, সিরিয়ায় এখনো হামলা চালাচ্ছে। ইয়েমেনে হামলা চালানোর কথা আগেই বলা হয়েছে। লোহিত সাগরেও বিমানবাহী রণতরী পাঠিয়ে টহল দিচ্ছে। সব মিলিয়ে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে—মধ্যপ্রাচ্যে গাজা যুদ্ধ দিয়ে শুরু হওয়া মধ্যপ্রাচ্য সংকট আরও গভীর হওয়ার দিকেই যাচ্ছে। 

তথ্যসূত্র: এবিসি, সিএনএন, রয়টার্স ও এএফপি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত