অনলাইন ডেস্ক
মানুষের পক্ষে যেকোনো তথ্য গোপন রাখাটা অনেক কঠিন। আর সেটি যদি হয় বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বোমা তৈরি সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাহলে তো তা নিরাপদ রাখা আরও কঠিন। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যখন ১৯৩৯ সালে ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’ শুরু করে তখন স্বভাবতই গোপনীয়তা নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিল। এমনকি বিষয়টি বাড়াবাড়ির পর্যায়েও দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এতটাই বাড়াবাড়ি যে, সন্দেহ করা হতো পারমাণবিক বোমার জনক খ্যাত রবার্ট ওপেনহাইমারকেও।
রবার্ট ওপেনহাইমারের সঙ্গে কমিউনিস্ট মতাদর্শের কিছু লোকের ঘনিষ্ঠতা ছিল। মূলত সেটিই সন্দেহের কারণ। একই সন্দেহের কারণে সেই সময়ের প্রখ্যাত পদার্থবিদ আলবার্ট আইনস্টাইনকেও ম্যানহাটন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলেও কথিত রয়েছে। অবশ্য আইনস্টাইন নিজেও যে এ প্রকল্পে খুব একটা উৎসাহী ছিলেন এমন কিছু জানা যায় না।
ঘটনার শুরু ১৯৩৯ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে। সে সময় জোর গুজব, জার্মানি আণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি কতটা সত্য তা যাচাই করার কোনো উপায় ছিল না। এই পরিস্থিতিতে আরও তিন বিজ্ঞানী লিও জিলার্ড, এডওয়ার্ড টেলার এবং ইউজিন ভিগনার পারমাণবিক অস্ত্রের গুরুত্ব জানিয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কাছে চিঠি লিখতে আইনস্টাইনকে উদ্বুদ্ধ করেন। অনেকে বলেন, চিঠি লিখেছিলেন জিলার্ড নিজে, আইনস্টাইন শুধু সই করেছিলেন। কারণ, তাঁরা মনে করতেন তাঁদের চেয়ে মার্কিন সরকারের কাছে আইনস্টাইনের গুরুত্ব বেশি।
যাই হোক, আইনস্টাইন চিঠিতে রুজভেল্টকে সতর্ক করে লিখেছিলেন, ‘এই আবিষ্কারের (নিউক্লিয়ার ফিশন) আলোকে এমন শক্তিশালী বোমা তৈরি করা সম্ভব যা কিনা বড় আকারের বন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারে।’ আইনস্টাইনের সেই চিঠির সূত্র ধরে রুজভেল্ট একটি কমিটি গঠন করেন, এই পদক্ষেপই পরে ম্যানহাটন প্রজেক্টের সূত্রপাত ঘটায়। অবশ্য এর আগে, পারমাণবিক বোমা তৈরির বিষয়ে যাবতীয় তাত্ত্বিক গবেষণা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তাত্ত্বিক গবেষণা শেষে শুরু হয় মূল কাজ। যেটির কোড নাম দেওয়া হয় ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’। প্রকল্পটি এতটাই বিশাল ছিল যে,১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটিতে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার লোক কাজ করেন। এত লোকের মাঝে প্রকল্পের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা ছিল সত্যিকার অর্থেই ‘ম্যামথ টাস্ক’—বিশাল চ্যালেঞ্জ। প্রকল্পের গোপনীয়তা নিশ্চিতে মাঠে নামে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এবং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জি-২। তারা এতটাই খুঁতখুঁতে ছিল যে, প্রকল্পের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক রবার্ট ওপেনহাইমারকেও সন্দেহ করতে শুরু করে।
ম্যানহাটন প্রকল্পটি মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত ছিল। একটি অংশ ছিল টেনেসি অঙ্গরাজ্যের ওক রিজে—যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হতো। দ্বিতীয়টি ছিল ওয়াশিংটনের হ্যানফোর্ডে—যেখানে প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করা হতো এবং তৃতীয়টি ছিল নিউ মেক্সিকোর লস অ্যালামোসে। এখানেই মূলত প্রকল্পটির অধিকাংশ কাজ—বোমার নকশা থেকে শুরু করে পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ—সম্পন্ন হয়েছে।
১৯৪৩ সালে যখন প্রকল্পটি মাঝপথে তখন লস অ্যালামোস সাইটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন রবার্ট ওপেনহাইমার। সে বছরের এপ্রিলে ওপেনহাইমার লস অ্যালামোসে পৌঁছান প্রকল্পের দায়িত্ব বুঝে নিতে। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র না থাকায় তিনি দায়িত্ব নিতে পারছিলেন না। এফবিআই এবং জি–২–এর সন্দেহ ছিল, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দাদের সঙ্গে ওপেনহাইমারের যোগাযোগ রয়েছে। এমনকি জি–২–এর এক এজেন্ট ওপেনহাইমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে এমন তথ্য চুরি করে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বার্থ রক্ষা করেছেন।
অভিযোগের পক্ষে গোয়েন্দারা দাবি করে, ওপেনহাইমারের সঙ্গে এমন কিছু লোকের যোগাযোগ রয়েছে যারা হয় অতীতে, নয়তো বর্তমানে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। যদিও ওপেনহাইমার নিজে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন না, এরপরও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সময় তাঁর সঙ্গে কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন লোকের পরিচয় হয়। তিনি তাঁদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীলও ছিলেন।
গোয়েন্দাদের আপত্তি থাকার পরও ওপেনহাইমারকে মূলত বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন ম্যানহাটন প্রজেক্টের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল লেসলি গ্রোভস। তিনি বিশ্বাস করতেন, কেবল ওপেনহাইমারের মধ্যেই অন্য বিজ্ঞানীদের পরিচালনার মাধ্যমে একটি পারমাণবিক বোমা তৈরির চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠার যোগ্যতা রয়েছে।
ওপেনহাইমারের যোগ্যতায় কেবল লেসলি গ্রোভসই নন, আস্থা রাখতেন প্রকল্পের অন্য বিজ্ঞানীরাও। প্রকল্পটির শীর্ষ বিজ্ঞানীদের একজন ছিলেন এডওয়ার্ড টেলার। তিনি বলেন, ‘ওপেনহাইমার জানতেন কীভাবে সংগঠিত করতে হয়।...লস অ্যালামোসের সাফল্য আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে কেবল ওপেনহাইমার তেজ, উদ্যম এবং ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বের গুণেই।’
যাই হোক, ব্রিগেডিয়ার গ্রোভস এফবিআই কিংবা জি–২ গোয়েন্দাদের অভিযোগ বিশ্বাস করেননি। বরং তিনি তাঁর নিজের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ক্যাপটেন জন ল্যান্সডেলের ওপর নির্ভর করেছিলেন। দীর্ঘদিনের খোঁজখবরের পর ল্যান্সডেল রায় দিয়েছিলেন যে, ওপেনহাইমার রাশিয়া নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিই অনুগত।
সেদিন যদি ওপেনহাইমার ম্যানহাটন প্রকল্প থেকে বাদ পড়ে যেতেন তাহলে হয়তো ইতিহাস অন্যরকম হতো। পারমাণবিক বোমার জনক না, হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনি খলনায়ক হিসেবে বিবেচিত হতেন।
অবশ্য ওপেনহাইমার সন্দেহমুক্ত হলেও ধারণা করা হয় যে, ম্যানহাটন প্রকল্পেরই কেউ পরমাণু বোমা তৈরির তথ্য রাশিয়ার কাছে পাচার করতেন। এমনকি জুলিয়াস এবং এথেল রোজেনবার্গ নামে দুজনকে ১৯৫১ সালের ২৯ মার্চ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল—তাঁরা সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ম্যানহাটন প্রজেক্টের গোপন নথি পাচার করেছিলেন।
ওপেনহাইমারের বিরুদ্ধের অভিযোগের শুনানির সংক্ষিপ্ত অংশ প্রকাশ করা হয় ১৯৫৪ সালের জুনে। এরপর ২০১৪ সালের মার্কিন জ্বালানি বিভাগ পুরো শুনানির নথি প্রকাশ করে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রী জেনিফার গ্রানহোম তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। তিনি বলেন, ওই সময় ওপেনহাইমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া ছিল ত্রুটিপূর্ণ।
উল্লেখ্য, রবার্ট ওপেনহাইমারের জীবনের নানা দিক নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘ওপেনহাইমার’ আজ শুক্রবার (২১ জুলাই) মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছে হলিউডের বিখ্যাত নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান। মুক্তির আগেই সিনেমাটি বেশ সাড়া ফেলেছে।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও উইকিপিডিয়া
মানুষের পক্ষে যেকোনো তথ্য গোপন রাখাটা অনেক কঠিন। আর সেটি যদি হয় বিশ্বের প্রথম পারমাণবিক বোমা তৈরি সংক্রান্ত কোনো তথ্য তাহলে তো তা নিরাপদ রাখা আরও কঠিন। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যখন ১৯৩৯ সালে ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’ শুরু করে তখন স্বভাবতই গোপনীয়তা নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিল। এমনকি বিষয়টি বাড়াবাড়ির পর্যায়েও দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এতটাই বাড়াবাড়ি যে, সন্দেহ করা হতো পারমাণবিক বোমার জনক খ্যাত রবার্ট ওপেনহাইমারকেও।
রবার্ট ওপেনহাইমারের সঙ্গে কমিউনিস্ট মতাদর্শের কিছু লোকের ঘনিষ্ঠতা ছিল। মূলত সেটিই সন্দেহের কারণ। একই সন্দেহের কারণে সেই সময়ের প্রখ্যাত পদার্থবিদ আলবার্ট আইনস্টাইনকেও ম্যানহাটন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি বলেও কথিত রয়েছে। অবশ্য আইনস্টাইন নিজেও যে এ প্রকল্পে খুব একটা উৎসাহী ছিলেন এমন কিছু জানা যায় না।
ঘটনার শুরু ১৯৩৯ সালে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে। সে সময় জোর গুজব, জার্মানি আণবিক অস্ত্র তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি কতটা সত্য তা যাচাই করার কোনো উপায় ছিল না। এই পরিস্থিতিতে আরও তিন বিজ্ঞানী লিও জিলার্ড, এডওয়ার্ড টেলার এবং ইউজিন ভিগনার পারমাণবিক অস্ত্রের গুরুত্ব জানিয়ে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টের কাছে চিঠি লিখতে আইনস্টাইনকে উদ্বুদ্ধ করেন। অনেকে বলেন, চিঠি লিখেছিলেন জিলার্ড নিজে, আইনস্টাইন শুধু সই করেছিলেন। কারণ, তাঁরা মনে করতেন তাঁদের চেয়ে মার্কিন সরকারের কাছে আইনস্টাইনের গুরুত্ব বেশি।
যাই হোক, আইনস্টাইন চিঠিতে রুজভেল্টকে সতর্ক করে লিখেছিলেন, ‘এই আবিষ্কারের (নিউক্লিয়ার ফিশন) আলোকে এমন শক্তিশালী বোমা তৈরি করা সম্ভব যা কিনা বড় আকারের বন্দর এবং এর আশপাশের এলাকাকে পুরোপুরি ধ্বংস করে দিতে পারে।’ আইনস্টাইনের সেই চিঠির সূত্র ধরে রুজভেল্ট একটি কমিটি গঠন করেন, এই পদক্ষেপই পরে ম্যানহাটন প্রজেক্টের সূত্রপাত ঘটায়। অবশ্য এর আগে, পারমাণবিক বোমা তৈরির বিষয়ে যাবতীয় তাত্ত্বিক গবেষণা করা হয় যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে।
তাত্ত্বিক গবেষণা শেষে শুরু হয় মূল কাজ। যেটির কোড নাম দেওয়া হয় ‘ম্যানহাটন প্রজেক্ট’। প্রকল্পটি এতটাই বিশাল ছিল যে,১৯৩৯ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত প্রকল্পটিতে মোট ১ লাখ ৩০ হাজার লোক কাজ করেন। এত লোকের মাঝে প্রকল্পের গোপনীয়তা নিশ্চিত করা ছিল সত্যিকার অর্থেই ‘ম্যামথ টাস্ক’—বিশাল চ্যালেঞ্জ। প্রকল্পের গোপনীয়তা নিশ্চিতে মাঠে নামে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই এবং সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা জি-২। তারা এতটাই খুঁতখুঁতে ছিল যে, প্রকল্পের প্রধান তত্ত্বাবধায়ক রবার্ট ওপেনহাইমারকেও সন্দেহ করতে শুরু করে।
ম্যানহাটন প্রকল্পটি মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত ছিল। একটি অংশ ছিল টেনেসি অঙ্গরাজ্যের ওক রিজে—যেখানে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হতো। দ্বিতীয়টি ছিল ওয়াশিংটনের হ্যানফোর্ডে—যেখানে প্লুটোনিয়াম উৎপাদন করা হতো এবং তৃতীয়টি ছিল নিউ মেক্সিকোর লস অ্যালামোসে। এখানেই মূলত প্রকল্পটির অধিকাংশ কাজ—বোমার নকশা থেকে শুরু করে পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণ—সম্পন্ন হয়েছে।
১৯৪৩ সালে যখন প্রকল্পটি মাঝপথে তখন লস অ্যালামোস সাইটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন রবার্ট ওপেনহাইমার। সে বছরের এপ্রিলে ওপেনহাইমার লস অ্যালামোসে পৌঁছান প্রকল্পের দায়িত্ব বুঝে নিতে। কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার কাছ থেকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র না থাকায় তিনি দায়িত্ব নিতে পারছিলেন না। এফবিআই এবং জি–২–এর সন্দেহ ছিল, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দাদের সঙ্গে ওপেনহাইমারের যোগাযোগ রয়েছে। এমনকি জি–২–এর এক এজেন্ট ওপেনহাইমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিল যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে এমন তথ্য চুরি করে সোভিয়েত ইউনিয়নের স্বার্থ রক্ষা করেছেন।
অভিযোগের পক্ষে গোয়েন্দারা দাবি করে, ওপেনহাইমারের সঙ্গে এমন কিছু লোকের যোগাযোগ রয়েছে যারা হয় অতীতে, নয়তো বর্তমানে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য। যদিও ওপেনহাইমার নিজে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন না, এরপরও ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর সময় তাঁর সঙ্গে কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন লোকের পরিচয় হয়। তিনি তাঁদের আন্দোলনের প্রতি সহানুভূতিশীলও ছিলেন।
গোয়েন্দাদের আপত্তি থাকার পরও ওপেনহাইমারকে মূলত বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন ম্যানহাটন প্রজেক্টের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল লেসলি গ্রোভস। তিনি বিশ্বাস করতেন, কেবল ওপেনহাইমারের মধ্যেই অন্য বিজ্ঞানীদের পরিচালনার মাধ্যমে একটি পারমাণবিক বোমা তৈরির চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে ওঠার যোগ্যতা রয়েছে।
ওপেনহাইমারের যোগ্যতায় কেবল লেসলি গ্রোভসই নন, আস্থা রাখতেন প্রকল্পের অন্য বিজ্ঞানীরাও। প্রকল্পটির শীর্ষ বিজ্ঞানীদের একজন ছিলেন এডওয়ার্ড টেলার। তিনি বলেন, ‘ওপেনহাইমার জানতেন কীভাবে সংগঠিত করতে হয়।...লস অ্যালামোসের সাফল্য আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে কেবল ওপেনহাইমার তেজ, উদ্যম এবং ক্যারিশমাটিক নেতৃত্বের গুণেই।’
যাই হোক, ব্রিগেডিয়ার গ্রোভস এফবিআই কিংবা জি–২ গোয়েন্দাদের অভিযোগ বিশ্বাস করেননি। বরং তিনি তাঁর নিজের নিরাপত্তা কর্মকর্তা ক্যাপটেন জন ল্যান্সডেলের ওপর নির্ভর করেছিলেন। দীর্ঘদিনের খোঁজখবরের পর ল্যান্সডেল রায় দিয়েছিলেন যে, ওপেনহাইমার রাশিয়া নয় বরং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিই অনুগত।
সেদিন যদি ওপেনহাইমার ম্যানহাটন প্রকল্প থেকে বাদ পড়ে যেতেন তাহলে হয়তো ইতিহাস অন্যরকম হতো। পারমাণবিক বোমার জনক না, হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে তিনি খলনায়ক হিসেবে বিবেচিত হতেন।
অবশ্য ওপেনহাইমার সন্দেহমুক্ত হলেও ধারণা করা হয় যে, ম্যানহাটন প্রকল্পেরই কেউ পরমাণু বোমা তৈরির তথ্য রাশিয়ার কাছে পাচার করতেন। এমনকি জুলিয়াস এবং এথেল রোজেনবার্গ নামে দুজনকে ১৯৫১ সালের ২৯ মার্চ গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল—তাঁরা সোভিয়েত ইউনিয়নের কাছে ম্যানহাটন প্রজেক্টের গোপন নথি পাচার করেছিলেন।
ওপেনহাইমারের বিরুদ্ধের অভিযোগের শুনানির সংক্ষিপ্ত অংশ প্রকাশ করা হয় ১৯৫৪ সালের জুনে। এরপর ২০১৪ সালের মার্কিন জ্বালানি বিভাগ পুরো শুনানির নথি প্রকাশ করে। সর্বশেষ ২০২২ সালের ১৬ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রী জেনিফার গ্রানহোম তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। তিনি বলেন, ওই সময় ওপেনহাইমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রক্রিয়া ছিল ত্রুটিপূর্ণ।
উল্লেখ্য, রবার্ট ওপেনহাইমারের জীবনের নানা দিক নিয়ে নির্মিত সিনেমা ‘ওপেনহাইমার’ আজ শুক্রবার (২১ জুলাই) মুক্তি পেয়েছে। সিনেমাটি পরিচালনা করেছে হলিউডের বিখ্যাত নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান। মুক্তির আগেই সিনেমাটি বেশ সাড়া ফেলেছে।
তথ্যসূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ও উইকিপিডিয়া
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
৪ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগে