ফয়সাল হাসান

গত গ্রীষ্মে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে সিরিয়ার ফার্স্ট লেডির একটি ছবি। সে সময় সিরীয় সামরিক বাহিনী ব্যস্ত দেশটির উত্তর-পশ্চিমে বিদ্রোহী দমনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবিতে দেখা যায়, সেনা সুরক্ষা বলয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন আসমা আসাদ ও তাঁর স্বামী বাশার আল-আসাদ।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা আসাদের প্রশান্তির পেছনের গল্পটা বিভ্রান্তিকর। দমনমূলক শাসন ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে ঘটে যাওয়া আরব বসন্তের ১০ বছর পর এসেও ক্ষমতা ধরে রেখেছে সিরিয়ার শাসক গোষ্ঠী। এ জন্য সিরীয়দের দিতে হয়েছে ভয়াবহ মূল্য।
গণতন্ত্র, মুক্তি ও সমৃদ্ধির আশায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরের শেষ ভাগে তিউনিসিয়ায় আরব বসন্তের সূচনা হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে লিবিয়া, মিসর, ইয়েমেনসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাশার আল-আসাদের বাথ পার্টি নিজেদের শাসন পাকা করে ফেলায় সিরিয়ায় আরব বসন্তের প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেছিলেন দেশটির নেতারা। কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে সিরিয়ায়ও ছোট পরিসরে বিক্ষোভ দেখা দেয়। পরে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ গিয়ে তা বড় আকার ধারণ করে। এই দিনকেই সিরিয়ায় গণ-আন্দোলনের শুরুর দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।
এর পর থেকে দেশটির সরকারি বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে হাজার হাজার সিরীয়। নির্যাতনের মধ্য দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি মানুষকে। সেখানকার প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট। সিরিয়ার মাটিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য যুদ্ধ করে আসছে ইরান, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। রাশিয়া ও ইরান বাশার আল-আসাদ সরকারের পক্ষে থাকলেও বিপক্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের বিভিন্ন মিত্র দেশ। আরব বিশ্বজুড়ে এক দশক আগের সব আশা ও স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গেলেও সিরিয়ার চেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর কোথাও ঘটেনি।
কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যেও আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন বাশারের স্ত্রী আসমা আসাদ। বিধ্বস্ত ভূখণ্ডের ওপর তাঁর আধিপত্যের যাত্রা হার মানায় রূপকথার গল্পকেও।
লন্ডন থেকে সিরিয়ার প্রাসাদে
লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে স্নাতক শেষ করার পর জেপি মরগ্যান ব্যাংকে কাজ শুরু করেন আসমা। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় বাশার আল-আসাদের। ২০০০ সালে দুজনের বিয়ে হয়। সেই বছরই ক্ষমতায় আসেন বাশার আল-আসাদ। রাতারাতি সিরিয়ার ফার্স্ট লেডি বনে যান আসমা।
আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ এখন আর সিরিয়া পর্যবেক্ষকদের জন্য গালগল্পের বিষয় নয়। গত বছর আসমাকে সিরিয়ার ‘সবচেয়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করে মার্কিন সরকার। তিনি একদিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর স্বামীর উত্তরাধিকারী হতে পারেন বলেও মনে করেন অনেকে। লন্ডনে বেড়ে ওঠা আসমা আসাদ নিজের গণ্ডি পেরিয়ে এগিয়ে এসেছেন অনেক দূর। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বৈরশাসকের স্ত্রী হিসেবে এটি কেবল তাঁর যাত্রার শুরু।
১৯৭৫ সালে পশ্চিম লন্ডনের ছোট শহর অ্যাকটনে জন্ম হয় আসমা আখ্রাসের। বাশার আল–আসাদের সঙ্গে বিয়ের আগে এটাই ছিল তাঁর নাম। সিরিয়ার বেশির ভাগ নাগরিকের মতো তাঁর মা–বাবাও সুন্নি মুসলিম। একটি ছোট প্রান্তিক সম্প্রদায় অভ্যুত্থান ঘটানোর আগে ১৯৬০–এর দশক পর্যন্ত যারা ছিল সিরিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দল।
উন্নত জীবনের আশায় ১৯৭০–এর দশকে লন্ডনে আসেন আসমার মা–বাবা। কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা আসমার পরিবারকে সাংস্কৃতিকভাবে রক্ষণশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন তাঁর বন্ধুরা। ইংল্যান্ডের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসমা পরিচিত ছিলেন এমা নামে।
লন্ডনের সম্ভ্রান্ত অভিজাতদের মতোই জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন আসমা। ব্রিটেনের প্রাচীনতম বেসরকারি গার্লস স্কুলে ভর্তি হন, পড়েছেন কুইন্স কলেজেও। এর পর কিংস কলেজ লন্ডনে কম্পিউটার বিজ্ঞানে একটি ডিগ্রি নেন, যেখানে আসমার বন্ধুরা তাঁকে স্মরণ করেন চতুর ও পরিশ্রমী হিসেবে।
সম্পর্ক সূত্রে ক্ষমতার স্বাদ
আসমার মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না বলেও জানান তাঁর বন্ধুরা। মা–বাবার সঙ্গে দামেস্কে বেড়াতে গেলে তিনি বেশির ভাগ সময় কাটাতেন হোটেলে। আসমার জন্য উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ছিল তাঁর মা সাহারের। আসমার চাচা বাশারের বাবা হাফেজ আসাদকে ১৯৭০ সালে ক্ষমতা দখল করতে সহায়তা করেছিলেন। পরে লন্ডনে সিরিয়ার দূতাবাসে চাকরি পেতে এই সম্পর্ক ব্যবহার করেছিলেন সাহার।
‘আসাদ অর উই বার্ন দ্য কান্ট্রি’ বইয়ের লেখক স্যাম দাঘেরের মতে, আসমা ও বাশারের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির বিষয়েও আগ্রহী ছিলেন সাহার। নব্বইয়ের দশকে বাশার লন্ডনে মেডিকেল ছাত্র থাকাকালে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছিল দুজনের।
ওয়াফিক সাঈদ নামে সিরিয়ার এক ধনী প্রবাসী জানান, বাশারের বড় ভাই বাসিল সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে চাকরি করলেও তাঁর জীবনযাপন ছিল বেপরোয়া। এর বিপরীতে বাশার ছিলেন ‘কঠোর পরিশ্রমী ও সময়নিষ্ঠ।’
১৯৯৪ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় বাসিলের মৃত্যুর পর হঠাৎ করেই আসাদ রাজবংশের ভাগ্য বাশারের কাঁধে পড়ে। আসমা দামেস্কে যাওয়ার আগেই ২০০০ সালের জুনে মৃত্যু হয় বাশারের বাবা হাফিজের। অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য তাঁর সমর্থন সিরিয়াকে পশ্চিমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেও পুনরায় সম্পর্কোন্নয়নের একটি সুযোগ ছিল বাশারের সামনে।
ক্ষমতা গ্রহণর পর উদ্বোধনী ভাষণে বাশার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও প্রকৃত বহু-দলীয় নির্বাচনের অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন দেশের অন্যতম বড় কারাগারও। এসবের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল আসমার।
আশা ছিল অন্য রকম
নতুন সিরীয় নেতাদের জন্য আসমা আসাদকে মনে করা হচ্ছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একজন ফার্স্ট লেডি। বাশার-আসমা দম্পতির বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে ওয়াফিক সাঈদ বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এই দুজনের সংমিশ্রণ সিরিয়াকে স্বর্গে পরিণত করবে।’
তবে আসমাকে নিয়ে বিবাদ ছিল তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। বাশারের মা আনিসা চেয়েছিলেন, তাঁর ছেলে নিজ জাতির মধ্যেই বিয়ে করবে, যাতে তাঁরা আরবের সৌদদের মতো দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশ তৈরি করতে পারে।
কিন্তু বিয়ে ঠেকানো যায়নি। বিয়ে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে বাশারের মা বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি তাঁদের বিয়ের খবর নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে কোনো সংবাদও প্রচার হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি আনুষ্ঠানিক ছবিও। আসমাকে বারবার বলা হয়েছিল, তাঁর কাজ ওয়ারিশ তৈরি করা এবং খবর থেকে দূরে থাকা।
আইমান আবদেল নূর নামে বাশারের এক সাবেক উপদেষ্টা বলেন, ‘আসমার গৃহজীবন ছিল দুর্বিষহ। তারা (আসাদের পরিবার) তাঁকে ঘৃণা করত। বছরের পর বছর তাঁকে বাড়ির ভেতরে রাখা হয়েছিল। আসমা তখন আরবি ভাষাতেও সাবলীল ছিলেন না।’
ক্ষমতাসীন উচ্চবিত্ত শ্রেণিও বন্ধুসুলভ ছিলেন না। বাশারের সংস্কারগুলোও নানা বাধার মুখে পড়ে, বিশেষত তাঁর বাবার সাবেক সহযোগীদের কাছ থেকে।
ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বাশারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতিগুলো ছিল যুক্তিহীন, যা তিনি কেবল নিজের পক্ষে সমর্থন জোরদার করতে ব্যবহার করেছিলেন।
ওয়াফিক সাঈদ বলেন, ‘আপনি যা শুনতে চান, বাশার আপনাকে ঠিক তাই বলবে এবং এর পর কিছুই করবে না।’ শিক্ষাবিদদের কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল। জনসমাগমের ক্ষেত্রে এতটাই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় যে, হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যও নিতে হয়েছে সরকারি অনুমতি।
আধিপত্যের যাত্রা শুরু
২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হন লেবাননের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ রফিক হারিরি। এরপরই সিরিয়া তার ছোট, অকার্যকর প্রতিবেশীকে কোণঠাসা করে ফেলে। বাশার আল–আসাদই হারিরিকে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবং লেবাননের বিশাল বিক্ষোভের মুখে একসময় পিছু হটেন আসাদ। সিরিয়ার কট্টরপন্থীদের দাবি উপেক্ষা করে প্রায় ৩০ বছর ধরে দখলদারির পর লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় সিরিয়া।
বাশার আল-আসাদের কাছে তাঁর দেশি মিত্রদের প্রয়োজনীয়তাও কমে এসেছিল। কারণ, তাঁর ব্রিটিশ স্ত্রী সম্ভবত পশ্চিমা সরকারের সমর্থন পেতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আসমাকে সিরিয়ার ‘ফার্স্ট লেডি’ হিসেবে মনোনীত করার প্রতিশ্রুতি দেন আসাদ। এর মধ্য দিয়ে অবশেষে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিজের আসন অর্জন করে নেন আসমা।
হারিরি হত্যার দু মাস পর ২০০৫ সালের এপ্রিলে পোপ দ্বিতীয় জন পলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে আসাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আসমা। ওই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবিতে তাঁকে দেখা যায় বিশ্বনেতাদের সঙ্গেও।
এটি ছিল এই দম্পতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কারণ, এরপরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাশারের ভাবমূর্তি উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকায় নামেন আসমা। বাশারের সাবেক উপদেষ্টা আবদেল নূর বলেন, ‘তিনি (আসাদ) যেসব দেশের সঙ্গে মিশতে পারতেন না, সেসব দেশে তাঁর মুখপাত্র হয়ে কাজ করতেন আসমা।’
এই জুটির জন্য ইউরোপে একটি সফর আয়োজন করা প্রবাসী এক সিরীয় কূটনীতিক বলেন, ‘আমি মন্ত্রমুগ্ধ ছিলাম। আপনি আসমার সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্তেই তাঁর প্রেমে পড়বেন। আর আসাদ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্বৈরশাসকের চেয়ে আলাদা। তিনি দেখতে আধুনিক ও পরিশীলিত। এটিই তাঁকে এত বিপজ্জনক করে তুলেছে।’
আসমার পরবর্তী প্রকল্প ছিল সিরিয়া নিয়েই। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সিরিয়াকে তিনি চাঙা করতে চেয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থাগুলোর জন্য ব্যাংকিং খাত উন্মুক্ত করে দিতে আসাদকে পরামর্শ দেন আসমা। সিরিয়ার এক অর্থনীতিবিদের মতে, ‘আসমা দামেস্ককে করমুক্ত একটি আঞ্চলিক দুবাইতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।’
তবে দুর্ভাগ্যক্রমে অর্থনৈতিক এই সংস্কার হুমকির মধ্যে ফেলে সিরিয়ার বেশির ভাগ ক্ষমতাধর ব্যক্তির স্বার্থকে। সিরিয়ার প্রচলিত ব্যবসায়িক ধারায় পরিবর্তন আনতে আসাদ পরিবারের সদস্য রামি মাখলুফের বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় আসমার। কারণ অনুমান করা হয়, সে সময় মাখলুফের সংস্থাগুলো সিরিয়ার অর্ধেকের বেশি অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করত। ২০০৭ সালে নিজস্ব হোল্ডিং সংস্থা তৈরি করে মাখলুফের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেছিলেন আসমা। তবে দেশের বেশির ভাগ বড় ব্যবসায়ী মাখলুফের সঙ্গে থেকে যাওয়ায় ব্যর্থ হয় আসমা আসাদের প্রচেষ্টা। তাই সিরিয়ার অর্থনীতির জন্য তাঁর পরিকল্পনা থেকে যায় অপেক্ষমাণ।
আসমা দ্রুতই তাঁর প্রভাব বিস্তারের জন্য একটি নতুন উপায় বের করেন। তিনি তাঁর বিয়ের প্রথম দিকে বিভিন্ন দাতব্য কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন। এই প্রকল্পগুলো তিনি ‘দ্য সিরিয়া ট্রাস্ট ফর ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি সংস্থার মধ্যে একত্রীকরণের উদ্যোগ নেন। বিদেশে বসবাসকারী সিরীয় নাগরিক, জাতিসংঘে দেশটির সাবেক কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষক দলের কৌশলবিদ, বোস্টনভিত্তিক ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরামর্শদাতা, এমনকি জার্মান এক কূটনীতিকের মেয়েকেও ওই সংস্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দামেস্কে থাকা পশ্চিমা কূটনীতিকেরা আনন্দের সঙ্গে আসমার ট্রাস্টকে সমর্থন করেছিলেন। লক্ষ্য অর্জনে ওই ট্রাস্টে অর্থায়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও কাতারের মনোযোগ আকর্ষণেও সক্ষম হন আসমা।
নিজের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে জনসংযোগ সংস্থা নিয়োগ করেন আসমা। সংস্থাগুলো তাঁর ভালো কাজের প্রশংসা করার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রচার শুরু করে। ফলে দামেস্ক এসেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ব্র্যাড পিট, স্টিং ও ড্যামন অ্যালবার্নের মতো তারকারা।
এখানেই শেষ নয়। আসমা জায়গা করে নেন বিশ্বখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনে। ২০১১ সালের মার্চে মার্কিন জনসংযোগ সংস্থা ব্রাউন লয়েড জেমসের উদ্যোগে ভোগ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে উঠে আসেন আসমা। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল—‘মরুভূমির গোলাপ (আ রোজ ইন দ্য ডেজার্ট) ’।
সিরিয়ার অনেক সরকারি কর্মচারী তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন—আসমার ট্রাস্ট কেবল তাঁর নিজস্ব প্রচারের একটি বাহন কিনা। যদিও তাঁর সাবেক এক সহযোগী বলেছিলেন, আসমা সত্যিই সিরিয়ার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তবে এ বিষয়ে তাঁর ওপর অন্যদের আস্থার অভাব ছিল।
পরিবারে ক্ষমতার বিস্তৃতি
আসমার উত্থানের মধ্য দিয়ে যারা উঠে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম তাঁর বাবা ফওয়াজ আখ্রাস। আসমা-বাশারের বিয়ের পরপরই আখ্রাস লন্ডনে ব্রিটিশ-সিরিয়ান সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন, যা সিরিয়ার রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তায় বড় ভূমিকা রেখেছিল। তিনি সামাজিক বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে আসমার সংগঠনের সমন্বয় করেছিলেন, যা ধনী সিরীয়দের আকৃষ্ট করে।
ক্ষমতার নৈকট্য পাওয়ার বিষয়ে আখ্রাস ছিলেন স্পষ্টভাষী। বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি প্রায়ই ‘প্রেসিডেন্টের শ্বশুর হিসেবে...’ কথাটি উচ্চারণ করতেন। এমনকি সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রীও বাশার আল-আসাদের কাছে কোনো বার্তা পাঠানোর জন্য আসমার বাবার শরণাপন্ন হতেন বলে জানান সরকারি অনেক কর্মকর্তা।
আসমা আসাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্নতি হয় সিরিয়ার ভাবমূর্তিরও। মার্কিন কর্মকর্তারা ফের দামেস্কে যেতে শুরু করেন। বিশেষত ২০০৮ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এমন সফর বাড়তে থাকে।

আরব বসন্ত এবং...
আসমার পরোক্ষ এ ক্ষমতা আরব বসন্তের সময় মধ্যপ্রাচ্যে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ২০১১ সালের প্রথম দুই মাসে অশান্ত হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। কয়েক দশকের স্থবিরতা ও নিপীড়নের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তিউনিসিয়া থেকে লিবিয়া, আলজেরিয়া থেকে বাহরাইন, জর্ডান থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত। কায়রোতে গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন মিসরের স্বৈরশাসক হোসনি মুবারাক। প্রতিবাদের জোয়ার হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য।
বিক্ষোভের ঢেউ পৌঁছেছিল সিরিয়াতেও, কিন্তু ভয়ে রাস্তায় নেমে আসা থেকে বিরত ছিল বেশির ভাগ মানুষ। এর পর ফেব্রুয়ারির এক রাতে দামেস্কের দক্ষিণের ডেরা নামক শহরে, একদল স্কুলছাত্র একটি প্রাচীরে গ্রাফিতি তৈরি করে যেখানে লেখা ছিল ‘এবার আপনাদের পালা’।
স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ছিলেন বাশারের এক দূর সম্পর্কের ভাই। তাঁর লোকেরা গ্রাফিতি তৈরি করা স্কুলছাত্রদের আটক করে নির্যাতন শুরু করে। এ ঘটনার পর নাগরিক মর্যাদা ও স্বাধীনতার দাবিতে ডেরার মসজিদের বাইরে সমবেত হয় সাধারণ জনগণ। কিন্তু সেখানে নির্বিচারে গুলি চালায় সেনারা।
এ ঘটনায় আসমা ও বাশার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সে বিষয়টি প্রথমে পরিষ্কার ছিল না। আসাদের একজন জেনারেল তাঁকে স্থানীয় নিরাপত্তা প্রধানকে কারাবন্দী করার এবং ডেরায় রক্তপাতের জন্য ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সিরিয়ার বড় শহরগুলো তখনো শান্ত থাকায় জনসাধারণের সংকট ও পরিবর্তনের নতুন প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ছিল।
কিন্তু একই বছরের ৩০ মার্চ সংসদে দেওয়া এক ভাষণে বাশার ঘোষণা দেন, ‘সিরিয়া একটি বড় ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি।’ বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনার একটি ফুটেজকে তিনি ‘জাল তথ্য’ বলে আখ্যা দেন এবং সংস্কারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।
বাশারের এ ভাষণের পর বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে। শুরু হয় প্রতিবাদ ও সহিংসতার একটি ক্রমবর্ধমান চক্র। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ওপরও চড়াও হয়ে ওঠে সরকারি বাহিনী। এ সময় দামেস্কে থাকা সাবেক এক ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানান, বাশার প্রায়ই বলতেন, ‘আমার বাবাই ঠিক ছিলেন। হামায় হাজার হাজার মৃত্যু আমাদের তিন দশকের স্থিতিশীলতা এনে দিয়েছিল।’ এদিকে সিরিয়ায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছিল আসমার লক্ষ্যগুলোও।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাশারের ছোট ভাই মাহেরের নেতৃত্বে পশ্চিম সিরিয়ার হোমসে সেনাদের আর্টিলারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেনারা বিদ্রোহী দমন শুরুর পর তখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৭ হাজার বেসামরিক মানুষ। আসমা তখন কী করছিলেন? তিনি কি পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিলেন, নাকি তিনি তাঁর স্বামীর পদক্ষেপকে সমর্থন করছিলেন—এমন প্রশ্ন তখন ছিল সবার মধ্যেই।
আসমা আসাদ সে সময় তাঁর এক সহযোগীকে বলেছিলেন, ‘এটি সব সময়ই মিথ্যা ছিল (সিরিয়া সংস্কারের প্রতিশ্রুতি)। আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে।’
সূত্র অনুসারে, আসমা লন্ডনেও ফিরে যেতে পারতেন। উপসাগরীয় রাজ্যগুলোর সহায়তায় নিরাপদে সিরিয়া ছাড়ার সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। ব্রিটিশ সরকার বারবার বলে আসছিল—একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আসমাকে তারা দেশে প্রবেশে বাধা দিতে পারে না। তবে লন্ডনের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। অ্যাকটনে আসমার বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ জানায় প্রতিবাদকারীরা। এমনকি সাবেক শিক্ষার্থীদের তালিকা থেকে আসমা আসাদের নাম সরিয়ে দেয় কুইন্স কলেজ কর্তৃপক্ষ।
তবে পারস্পরিক বোঝাপড়া অক্ষুণ্ন রেখেছিলেন বাশার ও আসমা। ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর সেনারা যখন হোমস শহরে ট্যাংক হামলা চালায়, আসমা তখন বাশারকে লিখেছিলেন, ‘আমরা যদি একসঙ্গে থাকি, তাহলে এই সমস্যা আমরা একসঙ্গে কাটিয়ে উঠব...আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ তবে তাঁদের যে সমস্যাগুলো ‘কাটিয়ে ওঠার’ দরকার ছিল, তা সিরিয়ার নাকি পারিবারিক, সেটি স্পষ্ট নয়।

যুদ্ধ ও ক্ষমতা
বিদ্রোহ শুরুর পর আসমা তাঁর প্রথম সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে লেখা ছিল—‘বাশার আল-আসাদ পুরো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট, সিরীয়দের একটি দলের প্রধান নন এবং এই ভূমিকায় ফার্স্ট লেডি তাঁকে সমর্থন করেন।’ এই বিবৃতির মধ্য দিয়ে আসাদের পাশে দাঁড়ান আসমা।
বাশারের সঙ্গে তাঁর পুনর্মিলনের অংশ হিসেবে আসমা তাঁর বাবার সহায়তায় জনসম্মুখে ফিরে আসার বিষয়ে আলোচনা করেন। ২০১২ সালে বোমা বিস্ফোরণে স্বামী নিহত হওয়ার পর দুবাই পালিয়ে যান বাশারের বোন বুশরা। বিদ্রোহীরা ওই হামলার দায় স্বীকার করলেও এটি সরকারি মদদে হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করতেন অনেকে। কারণ, আসাদ পরিবারের মধ্যে আসমাবিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন বুশরা ও তাঁর স্বামী।
পরের বছরগুলোতে বাশারের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়। হোমস শহরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী দমনে সফল হয়ে ওঠেন তিনি। সরকারবিরোধী বাহিনী দামেস্কের কিছু শহর নিয়ন্ত্রণে রাখলেও আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি তারা।
যুদ্ধ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও নির্মম হয়ে ওঠেন বাশার। সহিংসতার মাত্রা ধীর গতিতে বেড়ে যাওয়ার কথা স্মরণ করে পশ্চিমা এক কূটনীতিক জানান, বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে প্রথমে কামান এবং এর পর বিমান ও ব্যারেল বোমা হামলা চালানো শুরু করে সরকারি বাহিনী।
২০১৩ সালের ২১ আগস্ট নতুন এক ফুটেজে দেখা যায়, দামেস্কের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এক বিধ্বস্ত শহরের ছবি, যেখানে সরকারি বাহিনীর হামলায় মৃত্যু হয় শত শত বেসামরিক মানুষের। পরে এক তদন্তে জাতিসংঘ নিশ্চিত করে—সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল ‘সেরিন’ নামে বিষাক্ত এক স্নায়ু গ্যাস। ১৯৮৮ সালের পর যা ছিল সর্বকালের ভয়াবহ রাসায়নিক অস্ত্র হামলা। পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই হামলার ছবি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু এ নিয়ে অনেকটাই নির্লিপ্ত ছিল আসমা-বাশার দম্পতি।
এর পরের বছরগুলোতে সিরিয়ায় ধ্বংসের মাত্রা গণনা করা কঠিন। বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ২০১৪ সালে সিরিয়া ও ইরাকে বিস্তৃত একটি তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল চরমপন্থী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। এর সাম্প্রদায়িক উগ্রতা বাশার বাহিনীকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছিল; কিন্তু দুর্বল করেছিল তাঁর বিরোধী পক্ষের সমর্থনও।
বাশার সিরিয়ার বড় শহরগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৬ সালে পুনরায় আলেপ্পো দখল করলেও তিনি বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছিলেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল সিরিয়ার প্রায় অর্ধেক শহর। এই সময়ের মধ্যে মৃতের সংখ্যা পৌঁছায় প্রায় পাঁচ লাখে, শরণার্থী হন সিরিয়ার ১ কোটিরও বেশি মানুষ।
সিরিয়ার নতুন বাস্তবতায় প্রয়োজন ছিল নতুন এক আসমার। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাশারের মা আনিসার মৃত্যুর পর আসমা তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারান। যদিও তাঁর বড় পরীক্ষা ছিল নিজের ব্যক্তিগত পরিবর্তন।
২০১৮ সালে আসমার স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। তবে অসুস্থতাকে জনগণের সামনে নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি তিনি। চিকিৎসার জন্য যে তিনি সিরিয়াতেই রয়েছেন, সেটিও দেশের সাধারণ মানুষকে জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন আসমা। তাঁর সংগ্রামের বিবরণ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশদভাবে প্রচার করা হয়।
চিকিৎসা চলাকালে যখন চুল পড়া শুরু হলো, তখন মাথায় স্কার্ফ পরা ছবিতে দুর্বলতা এবং শক্তি উভয়ই তুলে ধরেছিলেন আসমা, যা ছিল তাঁর স্বামী বাশার আল-আসাদের বিদ্রোহী দমনের বিপরীতে এক অপ্রতিরোধ্য রূপক। এমনকি তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই সরকার সমর্থক মিডিয়া সিরিয়ার দুঃসময়ে আসমার বিভিন্ন ভূমিকার কথা প্রচার করা শুরু করে।
আসমা সচেতনভাবে চেষ্টা করতে থাকেন নিজের ব্রিটিশ পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার। তিনি আরবি ভাষা নিয়ে এত কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন যে, সিরীয়রাও আর তাঁর কোনো ইংরেজি উচ্চারণ শনাক্ত করতে পারেনি।
কেবলমাত্র রাশিয়া এবং স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম ছাড়া পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর সাক্ষাৎকারের অনুরোধ ফিরিয়ে দিতে শুরু করেন আসমা। পশ্চিমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক বজায় ছিল।
তবে ২০১২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার পর তাঁর দাতব্য সংস্থা সিরিয়া ট্রাস্টের আয় কমে আসে। অন্যদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরীয়দের জন্য বেড়ে যায় আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা। আর সেই অর্থের বেশির ভাগই আসা শুরু করে আসমা আসাদের হাত ধরে। সিরিয়া ট্রাস্টের প্রধান হিসেবে ধনসম্পদের চেয়েও অনেক বেশি অর্জন করেছিলেন আসমা। পৃষ্ঠপোষকদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি, যেখানে ছিল সিরিয়ার যুদ্ধবাজরাও।
যুদ্ধই যখন পুঁজি
যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, বাশার তাঁর স্ত্রীর আর্থিক সাফল্যে সন্তুষ্ট এবং তাঁর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ ছিলেন। এক দশক দীর্ঘ যুদ্ধের পর বাশার ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং অর্থনীতি নিয়ে তিনি কখনো চিন্তিত ছিলেন না। ইউরোপে আসাদের এক লবিস্টের মতে, আসমা ছিলেন তাঁর ‘প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা’।
ঋণ পরিশোধের জন্য ২০১৯ সালে বাশারকে চাপ দিতে শুরু করে রাশিয়া এবং আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সিরিয়া সরকারের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মুখ্য হয়ে ওঠেন দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী ধনকুবের এবং বাশারের নিকটাত্মীয় রামি মাখলুফ।
তবে বাশারের মা আনিসার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবক হারান মাখলুফ। সেই সুযোগে মাখলুফের দাতব্য সংস্থার দায়িত্ব নিয়ে নেয় আসমার অধীনস্থ সিরিয়া ট্রাস্ট। সেই সঙ্গে মাখলুফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়। সিরিয়ায় অর্থনৈতিক এ দোলাচলের মধ্যে আসমার বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন মাখলুফ।
জবাবে আসমাকে হেয় করার চেষ্টা করেছিলেন মাখলুফ। ২০২০ সালের মে মাসে তিনি ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করে অভিযোগ তোলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের ‘শীর্ষে থাকা একটি দল’ ষড়যন্ত্র করছে। একই সঙ্গে আরব সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন রুশ মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়—সিরিয়ার আর্থিক সংকটের মধ্যেই বাশার তাঁর স্ত্রীর জন্য ডেভিড হকনির একটি পেইন্টিং কিনতে ৩ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন। তবে এ ঘটনায় খুব বেশি উপকার হয়নি মাখলুফের। কারণ, গল্পটি মিথ্যা ছিল বলে পরে প্রমাণিত হয়। পক্ষান্তরে এ ঘটনার পর আংশিক গৃহবন্দী করা হয় তাঁকে। গুঞ্জন ছিল—মাখলুফকে জীবিত রাখা হয়েছিল কারণ, তাঁর কাছে আনুমানিক ১০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বিদেশি সম্পদের পাসওয়ার্ড এবং দলিল ছিল।

লেডি অব জেসমিন
মাখলুফকে কোণঠাসা করার মধ্য দিয়ে অব্যাহত ছিল আসমার আধিপত্য এবং অধিগ্রহণের ক্ষমতা। আসমা আসাদকে ‘লেডি অব জেসমিন’ আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রচারও বৃদ্ধি পায় সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে। দেশটির মন্ত্রীরা তাঁদের অফিসে আসাদের পাশাপাশি ঝুলিয়ে রাখতে শুরু করেন ফার্স্ট লেডি আসমার ছবিও।
মাখলুফকে দমন, বাশারের বোনের দেশত্যাগ এবং তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর অভ্যন্তরীণ বৃত্তে আসমার আর তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তাঁর নিকটতম উপদেষ্টাদের অনেকেই অধিষ্ঠিত হন প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শীর্ষ পদে।
দামেস্ক ও ইউরোপে ভ্রমণকারী এক ব্যবসায়ীর মতে, ‘আসমা আসাদ প্রাসাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তিনি যাকে খুশি তাঁকে ক্ষমতায় বসাতে পারেন।’
শেষ কথা
সিরীয়দের অনুমান, দেশের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ে ওঠার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে আসমার। বাশারের অবস্থান যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আসমা কি দেশের সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন? গুজব রয়েছে—আসাদ পরিবারের একজন সদস্য সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে সমর্থন চেয়েছেন।
সিরিয়ার সাবেক এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, ‘বাশার ও আসমা দুজনেই এ নিয়ে ভাবছেন। আসমা প্রেসিডেন্ট হতে চান এবং উভয়েই এ পদক্ষেপকে সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার বিপ্লবী সমাধান হিসেবে বিবেচনা করছেন।’
তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য দেশটির কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদদের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই আসমার। এ ছাড়া বর্তমানে তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেন বাশারের ছোট ভাই মাহের, যিনি এখনো সিরীয় সেনাবাহিনীর চতুর্থ আর্মর্ড ডিভিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন।
দুবাইয়ের এক সিরীয় ব্যবসায়ীর মতে, ‘সামরিক বাহিনী এবং কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদেরা আসমার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।’
আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হলেও আসমা এখন বেশ অরক্ষিতও। এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাষী কথাও আসমার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যদিও বহু আগেই আসমার অনেক বন্ধু তাঁর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন, তবে আসমার সুরক্ষার বিষয়ে তাঁরা এখনো উদ্বিগ্ন। বৃহত্তম পুরস্কারের লক্ষ্যে পশ্চিম লন্ডনের মেয়েটি শেষ পর্যন্ত পলাতকও হতে পারেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু আসমা আসাদ হয়তো অনেক আগেই বুঝে গেছেন—যেখানে পৌঁছেছেন তিনি, সেখান থেকে আর ফিরে আসার পথ নেই।

গত গ্রীষ্মে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে সিরিয়ার ফার্স্ট লেডির একটি ছবি। সে সময় সিরীয় সামরিক বাহিনী ব্যস্ত দেশটির উত্তর-পশ্চিমে বিদ্রোহী দমনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সেই ছবিতে দেখা যায়, সেনা সুরক্ষা বলয়ে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন আসমা আসাদ ও তাঁর স্বামী বাশার আল-আসাদ।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাসার আল-আসাদের স্ত্রী আসমা আসাদের প্রশান্তির পেছনের গল্পটা বিভ্রান্তিকর। দমনমূলক শাসন ব্যবস্থা চালুর মধ্য দিয়ে ঘটে যাওয়া আরব বসন্তের ১০ বছর পর এসেও ক্ষমতা ধরে রেখেছে সিরিয়ার শাসক গোষ্ঠী। এ জন্য সিরীয়দের দিতে হয়েছে ভয়াবহ মূল্য।
গণতন্ত্র, মুক্তি ও সমৃদ্ধির আশায় ২০১০ সালের ডিসেম্বরের শেষ ভাগে তিউনিসিয়ায় আরব বসন্তের সূচনা হয়। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে লিবিয়া, মিসর, ইয়েমেনসহ আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে। বাশার আল-আসাদের বাথ পার্টি নিজেদের শাসন পাকা করে ফেলায় সিরিয়ায় আরব বসন্তের প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেছিলেন দেশটির নেতারা। কিন্তু ২০১১ সালের জানুয়ারির শেষ দিকে সিরিয়ায়ও ছোট পরিসরে বিক্ষোভ দেখা দেয়। পরে ২০১১ সালের ১৫ মার্চ গিয়ে তা বড় আকার ধারণ করে। এই দিনকেই সিরিয়ায় গণ-আন্দোলনের শুরুর দিন হিসেবে গণ্য করা হয়।
এর পর থেকে দেশটির সরকারি বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে হাজার হাজার সিরীয়। নির্যাতনের মধ্য দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ১৪ হাজারের বেশি মানুষকে। সেখানকার প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী নিজ বাড়িঘর ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যা সবচেয়ে বড় শরণার্থী সংকট। সিরিয়ার মাটিতে প্রভাব বিস্তারের জন্য যুদ্ধ করে আসছে ইরান, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। রাশিয়া ও ইরান বাশার আল-আসাদ সরকারের পক্ষে থাকলেও বিপক্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের বিভিন্ন মিত্র দেশ। আরব বিশ্বজুড়ে এক দশক আগের সব আশা ও স্বপ্ন চূর্ণ হয়ে গেলেও সিরিয়ার চেয়ে বেশি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ আর কোথাও ঘটেনি।
কিন্তু এই সবকিছুর মধ্যেও আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন বাশারের স্ত্রী আসমা আসাদ। বিধ্বস্ত ভূখণ্ডের ওপর তাঁর আধিপত্যের যাত্রা হার মানায় রূপকথার গল্পকেও।
লন্ডন থেকে সিরিয়ার প্রাসাদে
লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে স্নাতক শেষ করার পর জেপি মরগ্যান ব্যাংকে কাজ শুরু করেন আসমা। সেখানেই তাঁর সঙ্গে পরিচয় হয় বাশার আল-আসাদের। ২০০০ সালে দুজনের বিয়ে হয়। সেই বছরই ক্ষমতায় আসেন বাশার আল-আসাদ। রাতারাতি সিরিয়ার ফার্স্ট লেডি বনে যান আসমা।
আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ এখন আর সিরিয়া পর্যবেক্ষকদের জন্য গালগল্পের বিষয় নয়। গত বছর আসমাকে সিরিয়ার ‘সবচেয়ে কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে বর্ণনা করে মার্কিন সরকার। তিনি একদিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর স্বামীর উত্তরাধিকারী হতে পারেন বলেও মনে করেন অনেকে। লন্ডনে বেড়ে ওঠা আসমা আসাদ নিজের গণ্ডি পেরিয়ে এগিয়ে এসেছেন অনেক দূর। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, স্বৈরশাসকের স্ত্রী হিসেবে এটি কেবল তাঁর যাত্রার শুরু।
১৯৭৫ সালে পশ্চিম লন্ডনের ছোট শহর অ্যাকটনে জন্ম হয় আসমা আখ্রাসের। বাশার আল–আসাদের সঙ্গে বিয়ের আগে এটাই ছিল তাঁর নাম। সিরিয়ার বেশির ভাগ নাগরিকের মতো তাঁর মা–বাবাও সুন্নি মুসলিম। একটি ছোট প্রান্তিক সম্প্রদায় অভ্যুত্থান ঘটানোর আগে ১৯৬০–এর দশক পর্যন্ত যারা ছিল সিরিয়ার সবচেয়ে প্রভাবশালী দল।
উন্নত জীবনের আশায় ১৯৭০–এর দশকে লন্ডনে আসেন আসমার মা–বাবা। কঠোর ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা আসমার পরিবারকে সাংস্কৃতিকভাবে রক্ষণশীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন তাঁর বন্ধুরা। ইংল্যান্ডের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসমা পরিচিত ছিলেন এমা নামে।
লন্ডনের সম্ভ্রান্ত অভিজাতদের মতোই জীবনযাপন করতে চেয়েছিলেন আসমা। ব্রিটেনের প্রাচীনতম বেসরকারি গার্লস স্কুলে ভর্তি হন, পড়েছেন কুইন্স কলেজেও। এর পর কিংস কলেজ লন্ডনে কম্পিউটার বিজ্ঞানে একটি ডিগ্রি নেন, যেখানে আসমার বন্ধুরা তাঁকে স্মরণ করেন চতুর ও পরিশ্রমী হিসেবে।
সম্পর্ক সূত্রে ক্ষমতার স্বাদ
আসমার মধ্যপ্রাচ্যের প্রতি তেমন আগ্রহ ছিল না বলেও জানান তাঁর বন্ধুরা। মা–বাবার সঙ্গে দামেস্কে বেড়াতে গেলে তিনি বেশির ভাগ সময় কাটাতেন হোটেলে। আসমার জন্য উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা ছিল তাঁর মা সাহারের। আসমার চাচা বাশারের বাবা হাফেজ আসাদকে ১৯৭০ সালে ক্ষমতা দখল করতে সহায়তা করেছিলেন। পরে লন্ডনে সিরিয়ার দূতাবাসে চাকরি পেতে এই সম্পর্ক ব্যবহার করেছিলেন সাহার।
‘আসাদ অর উই বার্ন দ্য কান্ট্রি’ বইয়ের লেখক স্যাম দাঘেরের মতে, আসমা ও বাশারের মধ্যে সম্পর্ক সৃষ্টির বিষয়েও আগ্রহী ছিলেন সাহার। নব্বইয়ের দশকে বাশার লন্ডনে মেডিকেল ছাত্র থাকাকালে বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ হয়েছিল দুজনের।
ওয়াফিক সাঈদ নামে সিরিয়ার এক ধনী প্রবাসী জানান, বাশারের বড় ভাই বাসিল সিরিয়ার সেনাবাহিনীতে চাকরি করলেও তাঁর জীবনযাপন ছিল বেপরোয়া। এর বিপরীতে বাশার ছিলেন ‘কঠোর পরিশ্রমী ও সময়নিষ্ঠ।’
১৯৯৪ সালে গাড়ি দুর্ঘটনায় বাসিলের মৃত্যুর পর হঠাৎ করেই আসাদ রাজবংশের ভাগ্য বাশারের কাঁধে পড়ে। আসমা দামেস্কে যাওয়ার আগেই ২০০০ সালের জুনে মৃত্যু হয় বাশারের বাবা হাফিজের। অঞ্চলজুড়ে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর জন্য তাঁর সমর্থন সিরিয়াকে পশ্চিমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিলেও পুনরায় সম্পর্কোন্নয়নের একটি সুযোগ ছিল বাশারের সামনে।
ক্ষমতা গ্রহণর পর উদ্বোধনী ভাষণে বাশার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ও প্রকৃত বহু-দলীয় নির্বাচনের অনুমতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই তিনি বন্ধ করে দিয়েছিলেন দেশের অন্যতম বড় কারাগারও। এসবের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল আসমার।
আশা ছিল অন্য রকম
নতুন সিরীয় নেতাদের জন্য আসমা আসাদকে মনে করা হচ্ছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একজন ফার্স্ট লেডি। বাশার-আসমা দম্পতির বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে ওয়াফিক সাঈদ বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম এই দুজনের সংমিশ্রণ সিরিয়াকে স্বর্গে পরিণত করবে।’
তবে আসমাকে নিয়ে বিবাদ ছিল তাঁর শ্বশুরবাড়িতে। বাশারের মা আনিসা চেয়েছিলেন, তাঁর ছেলে নিজ জাতির মধ্যেই বিয়ে করবে, যাতে তাঁরা আরবের সৌদদের মতো দীর্ঘস্থায়ী রাজবংশ তৈরি করতে পারে।
কিন্তু বিয়ে ঠেকানো যায়নি। বিয়ে ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে বাশারের মা বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করেছিলেন। এমনকি তাঁদের বিয়ের খবর নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমগুলোতে কোনো সংবাদও প্রচার হয়নি। এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি আনুষ্ঠানিক ছবিও। আসমাকে বারবার বলা হয়েছিল, তাঁর কাজ ওয়ারিশ তৈরি করা এবং খবর থেকে দূরে থাকা।
আইমান আবদেল নূর নামে বাশারের এক সাবেক উপদেষ্টা বলেন, ‘আসমার গৃহজীবন ছিল দুর্বিষহ। তারা (আসাদের পরিবার) তাঁকে ঘৃণা করত। বছরের পর বছর তাঁকে বাড়ির ভেতরে রাখা হয়েছিল। আসমা তখন আরবি ভাষাতেও সাবলীল ছিলেন না।’
ক্ষমতাসীন উচ্চবিত্ত শ্রেণিও বন্ধুসুলভ ছিলেন না। বাশারের সংস্কারগুলোও নানা বাধার মুখে পড়ে, বিশেষত তাঁর বাবার সাবেক সহযোগীদের কাছ থেকে।
ক্ষমতায় আসার কয়েক মাসের মধ্যেই এটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে, বাশারের সংস্কারের প্রতিশ্রুতিগুলো ছিল যুক্তিহীন, যা তিনি কেবল নিজের পক্ষে সমর্থন জোরদার করতে ব্যবহার করেছিলেন।
ওয়াফিক সাঈদ বলেন, ‘আপনি যা শুনতে চান, বাশার আপনাকে ঠিক তাই বলবে এবং এর পর কিছুই করবে না।’ শিক্ষাবিদদের কারাগারে বন্দী করা হয়েছিল। জনসমাগমের ক্ষেত্রে এতটাই বিধিনিষেধ আরোপ করা হয় যে, হোটেলে বিয়ের অনুষ্ঠানের জন্যও নিতে হয়েছে সরকারি অনুমতি।
আধিপত্যের যাত্রা শুরু
২০০৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি গাড়ি বোমা হামলায় নিহত হন লেবাননের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিবিদ রফিক হারিরি। এরপরই সিরিয়া তার ছোট, অকার্যকর প্রতিবেশীকে কোণঠাসা করে ফেলে। বাশার আল–আসাদই হারিরিকে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার হুমকি এবং লেবাননের বিশাল বিক্ষোভের মুখে একসময় পিছু হটেন আসাদ। সিরিয়ার কট্টরপন্থীদের দাবি উপেক্ষা করে প্রায় ৩০ বছর ধরে দখলদারির পর লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেয় সিরিয়া।
বাশার আল-আসাদের কাছে তাঁর দেশি মিত্রদের প্রয়োজনীয়তাও কমে এসেছিল। কারণ, তাঁর ব্রিটিশ স্ত্রী সম্ভবত পশ্চিমা সরকারের সমর্থন পেতে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া আসমাকে সিরিয়ার ‘ফার্স্ট লেডি’ হিসেবে মনোনীত করার প্রতিশ্রুতি দেন আসাদ। এর মধ্য দিয়ে অবশেষে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নিজের আসন অর্জন করে নেন আসমা।
হারিরি হত্যার দু মাস পর ২০০৫ সালের এপ্রিলে পোপ দ্বিতীয় জন পলের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে আসাদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন আসমা। ওই অনুষ্ঠানের বিভিন্ন ছবিতে তাঁকে দেখা যায় বিশ্বনেতাদের সঙ্গেও।
এটি ছিল এই দম্পতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। কারণ, এরপরই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাশারের ভাবমূর্তি উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকায় নামেন আসমা। বাশারের সাবেক উপদেষ্টা আবদেল নূর বলেন, ‘তিনি (আসাদ) যেসব দেশের সঙ্গে মিশতে পারতেন না, সেসব দেশে তাঁর মুখপাত্র হয়ে কাজ করতেন আসমা।’
এই জুটির জন্য ইউরোপে একটি সফর আয়োজন করা প্রবাসী এক সিরীয় কূটনীতিক বলেন, ‘আমি মন্ত্রমুগ্ধ ছিলাম। আপনি আসমার সঙ্গে দেখা হওয়ার মুহূর্তেই তাঁর প্রেমে পড়বেন। আর আসাদ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য স্বৈরশাসকের চেয়ে আলাদা। তিনি দেখতে আধুনিক ও পরিশীলিত। এটিই তাঁকে এত বিপজ্জনক করে তুলেছে।’
আসমার পরবর্তী প্রকল্প ছিল সিরিয়া নিয়েই। কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা এবং আমদানি নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সিরিয়াকে তিনি চাঙা করতে চেয়েছিলেন। এ লক্ষ্যে বেসরকারি ও বিদেশি সংস্থাগুলোর জন্য ব্যাংকিং খাত উন্মুক্ত করে দিতে আসাদকে পরামর্শ দেন আসমা। সিরিয়ার এক অর্থনীতিবিদের মতে, ‘আসমা দামেস্ককে করমুক্ত একটি আঞ্চলিক দুবাইতে পরিণত করতে চেয়েছিলেন।’
তবে দুর্ভাগ্যক্রমে অর্থনৈতিক এই সংস্কার হুমকির মধ্যে ফেলে সিরিয়ার বেশির ভাগ ক্ষমতাধর ব্যক্তির স্বার্থকে। সিরিয়ার প্রচলিত ব্যবসায়িক ধারায় পরিবর্তন আনতে আসাদ পরিবারের সদস্য রামি মাখলুফের বিরুদ্ধে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় আসমার। কারণ অনুমান করা হয়, সে সময় মাখলুফের সংস্থাগুলো সিরিয়ার অর্ধেকের বেশি অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করত। ২০০৭ সালে নিজস্ব হোল্ডিং সংস্থা তৈরি করে মাখলুফের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করেছিলেন আসমা। তবে দেশের বেশির ভাগ বড় ব্যবসায়ী মাখলুফের সঙ্গে থেকে যাওয়ায় ব্যর্থ হয় আসমা আসাদের প্রচেষ্টা। তাই সিরিয়ার অর্থনীতির জন্য তাঁর পরিকল্পনা থেকে যায় অপেক্ষমাণ।
আসমা দ্রুতই তাঁর প্রভাব বিস্তারের জন্য একটি নতুন উপায় বের করেন। তিনি তাঁর বিয়ের প্রথম দিকে বিভিন্ন দাতব্য কাজের সঙ্গে জড়িত হয়েছিলেন। এই প্রকল্পগুলো তিনি ‘দ্য সিরিয়া ট্রাস্ট ফর ডেভেলপমেন্ট’ নামে একটি সংস্থার মধ্যে একত্রীকরণের উদ্যোগ নেন। বিদেশে বসবাসকারী সিরীয় নাগরিক, জাতিসংঘে দেশটির সাবেক কর্মকর্তা, পর্যবেক্ষক দলের কৌশলবিদ, বোস্টনভিত্তিক ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরামর্শদাতা, এমনকি জার্মান এক কূটনীতিকের মেয়েকেও ওই সংস্থায় নিয়োগ দেওয়া হয়।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দামেস্কে থাকা পশ্চিমা কূটনীতিকেরা আনন্দের সঙ্গে আসমার ট্রাস্টকে সমর্থন করেছিলেন। লক্ষ্য অর্জনে ওই ট্রাস্টে অর্থায়নের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক ও কাতারের মনোযোগ আকর্ষণেও সক্ষম হন আসমা।
নিজের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রে জনসংযোগ সংস্থা নিয়োগ করেন আসমা। সংস্থাগুলো তাঁর ভালো কাজের প্রশংসা করার জন্য বিশ্বজুড়ে প্রচার শুরু করে। ফলে দামেস্ক এসেছিলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, ব্র্যাড পিট, স্টিং ও ড্যামন অ্যালবার্নের মতো তারকারা।
এখানেই শেষ নয়। আসমা জায়গা করে নেন বিশ্বখ্যাত ভোগ ম্যাগাজিনে। ২০১১ সালের মার্চে মার্কিন জনসংযোগ সংস্থা ব্রাউন লয়েড জেমসের উদ্যোগে ভোগ ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে উঠে আসেন আসমা। প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল—‘মরুভূমির গোলাপ (আ রোজ ইন দ্য ডেজার্ট) ’।
সিরিয়ার অনেক সরকারি কর্মচারী তখন প্রশ্ন তুলেছিলেন—আসমার ট্রাস্ট কেবল তাঁর নিজস্ব প্রচারের একটি বাহন কিনা। যদিও তাঁর সাবেক এক সহযোগী বলেছিলেন, আসমা সত্যিই সিরিয়ার উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। তবে এ বিষয়ে তাঁর ওপর অন্যদের আস্থার অভাব ছিল।
পরিবারে ক্ষমতার বিস্তৃতি
আসমার উত্থানের মধ্য দিয়ে যারা উঠে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম তাঁর বাবা ফওয়াজ আখ্রাস। আসমা-বাশারের বিয়ের পরপরই আখ্রাস লন্ডনে ব্রিটিশ-সিরিয়ান সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন, যা সিরিয়ার রাজনৈতিক ও আর্থিক সহায়তায় বড় ভূমিকা রেখেছিল। তিনি সামাজিক বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের সঙ্গে আসমার সংগঠনের সমন্বয় করেছিলেন, যা ধনী সিরীয়দের আকৃষ্ট করে।
ক্ষমতার নৈকট্য পাওয়ার বিষয়ে আখ্রাস ছিলেন স্পষ্টভাষী। বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি প্রায়ই ‘প্রেসিডেন্টের শ্বশুর হিসেবে...’ কথাটি উচ্চারণ করতেন। এমনকি সিরিয়ার প্রধানমন্ত্রীও বাশার আল-আসাদের কাছে কোনো বার্তা পাঠানোর জন্য আসমার বাবার শরণাপন্ন হতেন বলে জানান সরকারি অনেক কর্মকর্তা।
আসমা আসাদের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উন্নতি হয় সিরিয়ার ভাবমূর্তিরও। মার্কিন কর্মকর্তারা ফের দামেস্কে যেতে শুরু করেন। বিশেষত ২০০৮ সালে বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর এমন সফর বাড়তে থাকে।

আরব বসন্ত এবং...
আসমার পরোক্ষ এ ক্ষমতা আরব বসন্তের সময় মধ্যপ্রাচ্যে টিকে থাকার জন্য যথেষ্ট ছিল না। ২০১১ সালের প্রথম দুই মাসে অশান্ত হয়ে ওঠে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি। কয়েক দশকের স্থবিরতা ও নিপীড়নের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে তিউনিসিয়া থেকে লিবিয়া, আলজেরিয়া থেকে বাহরাইন, জর্ডান থেকে ইয়েমেন পর্যন্ত। কায়রোতে গণবিক্ষোভের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন মিসরের স্বৈরশাসক হোসনি মুবারাক। প্রতিবাদের জোয়ার হয়ে ওঠে অপ্রতিরোধ্য।
বিক্ষোভের ঢেউ পৌঁছেছিল সিরিয়াতেও, কিন্তু ভয়ে রাস্তায় নেমে আসা থেকে বিরত ছিল বেশির ভাগ মানুষ। এর পর ফেব্রুয়ারির এক রাতে দামেস্কের দক্ষিণের ডেরা নামক শহরে, একদল স্কুলছাত্র একটি প্রাচীরে গ্রাফিতি তৈরি করে যেখানে লেখা ছিল ‘এবার আপনাদের পালা’।
স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ছিলেন বাশারের এক দূর সম্পর্কের ভাই। তাঁর লোকেরা গ্রাফিতি তৈরি করা স্কুলছাত্রদের আটক করে নির্যাতন শুরু করে। এ ঘটনার পর নাগরিক মর্যাদা ও স্বাধীনতার দাবিতে ডেরার মসজিদের বাইরে সমবেত হয় সাধারণ জনগণ। কিন্তু সেখানে নির্বিচারে গুলি চালায় সেনারা।
এ ঘটনায় আসমা ও বাশার কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবেন, সে বিষয়টি প্রথমে পরিষ্কার ছিল না। আসাদের একজন জেনারেল তাঁকে স্থানীয় নিরাপত্তা প্রধানকে কারাবন্দী করার এবং ডেরায় রক্তপাতের জন্য ক্ষমা চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। সিরিয়ার বড় শহরগুলো তখনো শান্ত থাকায় জনসাধারণের সংকট ও পরিবর্তনের নতুন প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ছিল।
কিন্তু একই বছরের ৩০ মার্চ সংসদে দেওয়া এক ভাষণে বাশার ঘোষণা দেন, ‘সিরিয়া একটি বড় ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি।’ বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনীর গুলি চালানোর ঘটনার একটি ফুটেজকে তিনি ‘জাল তথ্য’ বলে আখ্যা দেন এবং সংস্কারের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেন।
বাশারের এ ভাষণের পর বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়ে ওঠে। শুরু হয় প্রতিবাদ ও সহিংসতার একটি ক্রমবর্ধমান চক্র। একই সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ওপরও চড়াও হয়ে ওঠে সরকারি বাহিনী। এ সময় দামেস্কে থাকা সাবেক এক ফরাসি রাষ্ট্রদূত জানান, বাশার প্রায়ই বলতেন, ‘আমার বাবাই ঠিক ছিলেন। হামায় হাজার হাজার মৃত্যু আমাদের তিন দশকের স্থিতিশীলতা এনে দিয়েছিল।’ এদিকে সিরিয়ায় বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে ব্যর্থতার দিকে ধাবিত হচ্ছিল আসমার লক্ষ্যগুলোও।
২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাশারের ছোট ভাই মাহেরের নেতৃত্বে পশ্চিম সিরিয়ার হোমসে সেনাদের আর্টিলারি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেনারা বিদ্রোহী দমন শুরুর পর তখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রাণ হারিয়েছিল প্রায় ৭ হাজার বেসামরিক মানুষ। আসমা তখন কী করছিলেন? তিনি কি পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছিলেন, নাকি তিনি তাঁর স্বামীর পদক্ষেপকে সমর্থন করছিলেন—এমন প্রশ্ন তখন ছিল সবার মধ্যেই।
আসমা আসাদ সে সময় তাঁর এক সহযোগীকে বলেছিলেন, ‘এটি সব সময়ই মিথ্যা ছিল (সিরিয়া সংস্কারের প্রতিশ্রুতি)। আমাকে ব্যবহার করা হয়েছে।’
সূত্র অনুসারে, আসমা লন্ডনেও ফিরে যেতে পারতেন। উপসাগরীয় রাজ্যগুলোর সহায়তায় নিরাপদে সিরিয়া ছাড়ার সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। ব্রিটিশ সরকার বারবার বলে আসছিল—একজন ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে আসমাকে তারা দেশে প্রবেশে বাধা দিতে পারে না। তবে লন্ডনের পরিস্থিতি ছিল ভিন্ন। অ্যাকটনে আসমার বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ জানায় প্রতিবাদকারীরা। এমনকি সাবেক শিক্ষার্থীদের তালিকা থেকে আসমা আসাদের নাম সরিয়ে দেয় কুইন্স কলেজ কর্তৃপক্ষ।
তবে পারস্পরিক বোঝাপড়া অক্ষুণ্ন রেখেছিলেন বাশার ও আসমা। ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর সেনারা যখন হোমস শহরে ট্যাংক হামলা চালায়, আসমা তখন বাশারকে লিখেছিলেন, ‘আমরা যদি একসঙ্গে থাকি, তাহলে এই সমস্যা আমরা একসঙ্গে কাটিয়ে উঠব...আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ তবে তাঁদের যে সমস্যাগুলো ‘কাটিয়ে ওঠার’ দরকার ছিল, তা সিরিয়ার নাকি পারিবারিক, সেটি স্পষ্ট নয়।

যুদ্ধ ও ক্ষমতা
বিদ্রোহ শুরুর পর আসমা তাঁর প্রথম সরকারি বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন। সেখানে লেখা ছিল—‘বাশার আল-আসাদ পুরো সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট, সিরীয়দের একটি দলের প্রধান নন এবং এই ভূমিকায় ফার্স্ট লেডি তাঁকে সমর্থন করেন।’ এই বিবৃতির মধ্য দিয়ে আসাদের পাশে দাঁড়ান আসমা।
বাশারের সঙ্গে তাঁর পুনর্মিলনের অংশ হিসেবে আসমা তাঁর বাবার সহায়তায় জনসম্মুখে ফিরে আসার বিষয়ে আলোচনা করেন। ২০১২ সালে বোমা বিস্ফোরণে স্বামী নিহত হওয়ার পর দুবাই পালিয়ে যান বাশারের বোন বুশরা। বিদ্রোহীরা ওই হামলার দায় স্বীকার করলেও এটি সরকারি মদদে হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করতেন অনেকে। কারণ, আসাদ পরিবারের মধ্যে আসমাবিরোধী মনোভাব পোষণ করতেন বুশরা ও তাঁর স্বামী।
পরের বছরগুলোতে বাশারের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়। হোমস শহরের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্রোহী দমনে সফল হয়ে ওঠেন তিনি। সরকারবিরোধী বাহিনী দামেস্কের কিছু শহর নিয়ন্ত্রণে রাখলেও আসাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে তেমন কোনো সুবিধা করতে পারেনি তারা।
যুদ্ধ অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আরও নির্মম হয়ে ওঠেন বাশার। সহিংসতার মাত্রা ধীর গতিতে বেড়ে যাওয়ার কথা স্মরণ করে পশ্চিমা এক কূটনীতিক জানান, বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে প্রথমে কামান এবং এর পর বিমান ও ব্যারেল বোমা হামলা চালানো শুরু করে সরকারি বাহিনী।
২০১৩ সালের ২১ আগস্ট নতুন এক ফুটেজে দেখা যায়, দামেস্কের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত এক বিধ্বস্ত শহরের ছবি, যেখানে সরকারি বাহিনীর হামলায় মৃত্যু হয় শত শত বেসামরিক মানুষের। পরে এক তদন্তে জাতিসংঘ নিশ্চিত করে—সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল ‘সেরিন’ নামে বিষাক্ত এক স্নায়ু গ্যাস। ১৯৮৮ সালের পর যা ছিল সর্বকালের ভয়াবহ রাসায়নিক অস্ত্র হামলা। পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই হামলার ছবি ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনার ঝড় ওঠে বিশ্বব্যাপী। কিন্তু এ নিয়ে অনেকটাই নির্লিপ্ত ছিল আসমা-বাশার দম্পতি।
এর পরের বছরগুলোতে সিরিয়ায় ধ্বংসের মাত্রা গণনা করা কঠিন। বিশৃঙ্খলার সুযোগ নিয়ে ২০১৪ সালে সিরিয়া ও ইরাকে বিস্তৃত একটি তথাকথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল চরমপন্থী গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট। এর সাম্প্রদায়িক উগ্রতা বাশার বাহিনীকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলেছিল; কিন্তু দুর্বল করেছিল তাঁর বিরোধী পক্ষের সমর্থনও।
বাশার সিরিয়ার বড় শহরগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ২০১৬ সালে পুনরায় আলেপ্পো দখল করলেও তিনি বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছিলেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল সিরিয়ার প্রায় অর্ধেক শহর। এই সময়ের মধ্যে মৃতের সংখ্যা পৌঁছায় প্রায় পাঁচ লাখে, শরণার্থী হন সিরিয়ার ১ কোটিরও বেশি মানুষ।
সিরিয়ার নতুন বাস্তবতায় প্রয়োজন ছিল নতুন এক আসমার। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাশারের মা আনিসার মৃত্যুর পর আসমা তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে হারান। যদিও তাঁর বড় পরীক্ষা ছিল নিজের ব্যক্তিগত পরিবর্তন।
২০১৮ সালে আসমার স্তন ক্যানসার ধরা পড়ে। তবে অসুস্থতাকে জনগণের সামনে নিজের ভাবমূর্তি ধরে রাখার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি তিনি। চিকিৎসার জন্য যে তিনি সিরিয়াতেই রয়েছেন, সেটিও দেশের সাধারণ মানুষকে জানানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেন আসমা। তাঁর সংগ্রামের বিবরণ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিশদভাবে প্রচার করা হয়।
চিকিৎসা চলাকালে যখন চুল পড়া শুরু হলো, তখন মাথায় স্কার্ফ পরা ছবিতে দুর্বলতা এবং শক্তি উভয়ই তুলে ধরেছিলেন আসমা, যা ছিল তাঁর স্বামী বাশার আল-আসাদের বিদ্রোহী দমনের বিপরীতে এক অপ্রতিরোধ্য রূপক। এমনকি তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার আগেই সরকার সমর্থক মিডিয়া সিরিয়ার দুঃসময়ে আসমার বিভিন্ন ভূমিকার কথা প্রচার করা শুরু করে।
আসমা সচেতনভাবে চেষ্টা করতে থাকেন নিজের ব্রিটিশ পরিচয় এড়িয়ে যাওয়ার। তিনি আরবি ভাষা নিয়ে এত কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন যে, সিরীয়রাও আর তাঁর কোনো ইংরেজি উচ্চারণ শনাক্ত করতে পারেনি।
কেবলমাত্র রাশিয়া এবং স্থানীয় কিছু গণমাধ্যম ছাড়া পশ্চিমা মিডিয়াগুলোর সাক্ষাৎকারের অনুরোধ ফিরিয়ে দিতে শুরু করেন আসমা। পশ্চিমাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেও আন্তর্জাতিক দাতাদের সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্ক বজায় ছিল।
তবে ২০১২ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার পর তাঁর দাতব্য সংস্থা সিরিয়া ট্রাস্টের আয় কমে আসে। অন্যদিকে যুদ্ধ বিধ্বস্ত সিরীয়দের জন্য বেড়ে যায় আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা। আর সেই অর্থের বেশির ভাগই আসা শুরু করে আসমা আসাদের হাত ধরে। সিরিয়া ট্রাস্টের প্রধান হিসেবে ধনসম্পদের চেয়েও অনেক বেশি অর্জন করেছিলেন আসমা। পৃষ্ঠপোষকদের একটি বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন তিনি, যেখানে ছিল সিরিয়ার যুদ্ধবাজরাও।
যুদ্ধই যখন পুঁজি
যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। সাবেক সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, বাশার তাঁর স্ত্রীর আর্থিক সাফল্যে সন্তুষ্ট এবং তাঁর সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞ ছিলেন। এক দশক দীর্ঘ যুদ্ধের পর বাশার ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন এবং অর্থনীতি নিয়ে তিনি কখনো চিন্তিত ছিলেন না। ইউরোপে আসাদের এক লবিস্টের মতে, আসমা ছিলেন তাঁর ‘প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা’।
ঋণ পরিশোধের জন্য ২০১৯ সালে বাশারকে চাপ দিতে শুরু করে রাশিয়া এবং আরও কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে সিরিয়া সরকারের প্রচুর অর্থের প্রয়োজন ছিল। এমন পরিস্থিতিতে মুখ্য হয়ে ওঠেন দেশটির অন্যতম প্রভাবশালী ধনকুবের এবং বাশারের নিকটাত্মীয় রামি মাখলুফ।
তবে বাশারের মা আনিসার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে অভিভাবক হারান মাখলুফ। সেই সুযোগে মাখলুফের দাতব্য সংস্থার দায়িত্ব নিয়ে নেয় আসমার অধীনস্থ সিরিয়া ট্রাস্ট। সেই সঙ্গে মাখলুফের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়। সিরিয়ায় অর্থনৈতিক এ দোলাচলের মধ্যে আসমার বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠেন মাখলুফ।
জবাবে আসমাকে হেয় করার চেষ্টা করেছিলেন মাখলুফ। ২০২০ সালের মে মাসে তিনি ফেসবুকে একটি ভিডিও প্রকাশ করে অভিযোগ তোলেন, তাঁর বিরুদ্ধে সরকারের ‘শীর্ষে থাকা একটি দল’ ষড়যন্ত্র করছে। একই সঙ্গে আরব সূত্রের বরাত দিয়ে বিভিন্ন রুশ মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে বলা হয়—সিরিয়ার আর্থিক সংকটের মধ্যেই বাশার তাঁর স্ত্রীর জন্য ডেভিড হকনির একটি পেইন্টিং কিনতে ৩ কোটি ডলার ব্যয় করেছেন। তবে এ ঘটনায় খুব বেশি উপকার হয়নি মাখলুফের। কারণ, গল্পটি মিথ্যা ছিল বলে পরে প্রমাণিত হয়। পক্ষান্তরে এ ঘটনার পর আংশিক গৃহবন্দী করা হয় তাঁকে। গুঞ্জন ছিল—মাখলুফকে জীবিত রাখা হয়েছিল কারণ, তাঁর কাছে আনুমানিক ১০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের বিদেশি সম্পদের পাসওয়ার্ড এবং দলিল ছিল।

লেডি অব জেসমিন
মাখলুফকে কোণঠাসা করার মধ্য দিয়ে অব্যাহত ছিল আসমার আধিপত্য এবং অধিগ্রহণের ক্ষমতা। আসমা আসাদকে ‘লেডি অব জেসমিন’ আখ্যা দিয়ে সংবাদ প্রচারও বৃদ্ধি পায় সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে। দেশটির মন্ত্রীরা তাঁদের অফিসে আসাদের পাশাপাশি ঝুলিয়ে রাখতে শুরু করেন ফার্স্ট লেডি আসমার ছবিও।
মাখলুফকে দমন, বাশারের বোনের দেশত্যাগ এবং তাঁর মায়ের মৃত্যুর পর অভ্যন্তরীণ বৃত্তে আসমার আর তেমন কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। তাঁর নিকটতম উপদেষ্টাদের অনেকেই অধিষ্ঠিত হন প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের শীর্ষ পদে।
দামেস্ক ও ইউরোপে ভ্রমণকারী এক ব্যবসায়ীর মতে, ‘আসমা আসাদ প্রাসাদের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। তিনি যাকে খুশি তাঁকে ক্ষমতায় বসাতে পারেন।’
শেষ কথা
সিরীয়দের অনুমান, দেশের একেবারে শীর্ষ পর্যায়ে ওঠার রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে আসমার। বাশারের অবস্থান যদি নড়বড়ে হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য আসমা কি দেশের সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠদের কাছে প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দিতে পারেন? গুজব রয়েছে—আসাদ পরিবারের একজন সদস্য সম্প্রতি মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছে এ বিষয়ে সমর্থন চেয়েছেন।
সিরিয়ার সাবেক এক কূটনীতিক জানিয়েছেন, ‘বাশার ও আসমা দুজনেই এ নিয়ে ভাবছেন। আসমা প্রেসিডেন্ট হতে চান এবং উভয়েই এ পদক্ষেপকে সিরিয়ার শাসন ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার বিপ্লবী সমাধান হিসেবে বিবেচনা করছেন।’
তবে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য দেশটির কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদদের সমর্থন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই আসমার। এ ছাড়া বর্তমানে তাঁর সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হলেন বাশারের ছোট ভাই মাহের, যিনি এখনো সিরীয় সেনাবাহিনীর চতুর্থ আর্মর্ড ডিভিশনের নেতৃত্বে রয়েছেন।
দুবাইয়ের এক সিরীয় ব্যবসায়ীর মতে, ‘সামরিক বাহিনী এবং কট্টরপন্থী রাজনীতিবিদেরা আসমার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।’
আগের চেয়ে আরও বেশি শক্তিশালী হলেও আসমা এখন বেশ অরক্ষিতও। এমনকি প্রেসিডেন্ট হওয়ার উচ্চাভিলাষী কথাও আসমার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। যদিও বহু আগেই আসমার অনেক বন্ধু তাঁর থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে নিয়েছেন, তবে আসমার সুরক্ষার বিষয়ে তাঁরা এখনো উদ্বিগ্ন। বৃহত্তম পুরস্কারের লক্ষ্যে পশ্চিম লন্ডনের মেয়েটি শেষ পর্যন্ত পলাতকও হতে পারেন বলে মনে করেন অনেকে। কিন্তু আসমা আসাদ হয়তো অনেক আগেই বুঝে গেছেন—যেখানে পৌঁছেছেন তিনি, সেখান থেকে আর ফিরে আসার পথ নেই।

ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
১ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
১ দিন আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

চার বছর আগে যিনি ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী, সেই ইমরান খান আজ নিজ দেশেই ধুঁকে ধুঁকে মরছেন। ৭৩ বছর বয়সী এই ক্রিকেট কিংবদন্তি বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডির আদিয়ালা কারাগারে বন্দী। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তাঁকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে। ইমরান খানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘এটা মানসিক নির্যাতন। তাঁকে মানসিকভাবে দুর্বল করতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু আমার বাবা শক্ত মানুষ।’
ইমরান খানের প্রথম স্ত্রী জেমিমা গোল্ডস্মিথের দুই ছেলে কাসিম ও সুলাইমান। গত আড়াই বছর ধরে তাঁরা এক দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার নেয়। সেনাপ্রধান আসিম মুনিরকে নিয়ে ইমরান খানের নির্দেশনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এরপরই সরকার কারাগারে থাকা ইমরান খানের সব সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দেয়। দুর্নীতির মামলায় দেওয়া ১৪ বছরের সাজার সঙ্গে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক নতুন মামলা। ইমরানের পরিবারের আশঙ্কা—এই সংকট সমাধানের কোনো সহজ পথ নেই।
কাসিম বলেন, ‘বাবার বিরুদ্ধে ২০০টির বেশি মামলা আছে। একটি মামলা বাতিল হলে সঙ্গে সঙ্গে দু-তিনটি নতুন মামলা দেওয়া হয়। এটা শুধু সময়ক্ষেপণের কৌশল।’
কারাগারের পরিস্থিতিও ভয়াবহ। সুলাইমান বলেন, ‘বাবাকে যে ছোট কক্ষে রাখা হয়েছে, সেটিকে “ডেথ সেল” বলা হয়। এখানে সাধারণত মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের রাখা হয়। ওই বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। দেওয়া হয় না বই বা পড়ার কোনো উপকরণ।’
কাসিমের ভাষায়, ‘যে পানিতে তিনি গোসল করেন, সেটি খুবই নোংরা। ওই কারাগারে অন্তত এক ডজন বন্দী হেপাটাইটিসে মারা গেছে, আর তাঁরা সবাই ছিলেন পিটিআইয়ের সমর্থক।’
তবে কারা কর্তৃপক্ষ বলছে, সংক্রামক রোগে আক্রান্ত বন্দীদের আলাদা রাখা হয়।
জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক অ্যালিস জিল এডওয়ার্ডসের এক প্রতিবেদনে ইমরান খানের সেলের চিত্র আরও ভয়াবহভাবে উঠে এসেছে। সেখানে বলা হয়েছে, কক্ষটি ছোট, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা নেই বললেই চলে, প্রাকৃতিক আলোর অভাব রয়েছে এবং চরম তাপমাত্রা ও পোকামাকড়ের উপদ্রবজনিত কারণে তিনি বমি বমি ভাব এবং ওজন হ্রাসের শিকার হচ্ছেন।

কিন্তু ইমরানের খানের মতো একজন মানুষের জীবনে এই পরিস্থিতি কীভাবে তৈরি হলো
পাকিস্তানের ইতিহাসে ইমরান খান শুধু একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। ১৯৯২ সালে তাঁর নেতৃত্বেই পাকিস্তান একমাত্র ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে। সেই আসরে খেলোয়াড়দের তিনি বলেছিলেন, ‘কোণঠাসা বাঘের মতো লড়ো।’ প্রতীক হিসেবে বাঘ আঁকা টি-শার্টও পরেছিলেন তিনি।
মাঠের বাইরে ইমরান খানের জীবনও ছিল আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। নব্বইয়ের দশকে লন্ডনের ট্রাম্পস নাইটক্লাব থেকে শুরু করে গসিপ কলাম—সবখানেই ছিল তাঁর উপস্থিতি। মডেল মারি হেলভিন একবার বলেছিলেন, ‘ইমরানের মতো বিধ্বংসী পুরুষ আর কেউ ছিলেন না।’

১৯৯৫ সালে ২১ বছর বয়সী জেমিমা গোল্ডস্মিথকে বিয়ে করেন ইমরান খান। বয়স ও সংস্কৃতিগত পার্থক্য নিয়ে সমালোচনা থাকলেও জেমিমা তখন বলেছিলেন, ‘আমার জন্য ইমরান পাশ্চাত্যের রাতজাগা ও মদের জীবন ছেড়ে দিতে প্রস্তুত।’
এরপর ২০০৪ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। তবে বিচ্ছেদ হলেও, বন্দী ইমরান খানের জন্য জেমিমার উদ্বেগ আজও রয়ে গেছে। সম্প্রতি তিনি ইলন মাস্ককে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স ইমরান খান-সংক্রান্ত পোস্ট গোপনে সীমিত করছে।
ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমরা বাবার সংস্পর্শে বড় হয়েছি। এখন বাবা নেই, এটা আমাদের জন্য খুব কষ্টের। আমাদের মায়ের জন্যও এটা কষ্টের।’

দুই ভাই আশা করছেন, এ বিষয়গুলো সামনে আনলে আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। কিন্তু আসলেই কি ইমরান খানের বিষয়টি আন্তর্জাতিক মহলের নজরে আসবে? এমন প্রশ্ন অবান্তর নয়। কারণ, প্রায় আড়াই বছর থেকে কারাগারে থাকলেও কেউ ইমরান খানের খোঁজ নেয়নি।
অ্যাশেজের মতো বড় আয়োজন চললেও, ক্রিকেট বিশ্ব থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ নেই। আইসিসি হল অব ফেমে জায়গা পেয়েছেন ইমরান খান, কিন্তু সেখানেও নীরবতা। তবে অনেকেই মনে করেন, কথা বললে সরকার আরও কঠোর হতে পারে। ইমরানের ছেলে কাসিম বলেন, ‘প্রতিবার আমরা কিছু বললে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত ৫০ বছরে পাকিস্তানের প্রতিটি প্রধানমন্ত্রীকেই কারাবরণ করতে হয়েছে। চ্যাথাম হাউসের গবেষক ফারজানা শেখ মনে করেন, ইমরান খানের সামনে বর্তমানে দুটি পথ—হয় লন্ডনে নির্বাসন অথবা পাকিস্তানে গৃহবন্দিত্ব।
কিন্তু তাঁর ছেলেরা বলছেন, দুটোই অগ্রহণযোগ্য। কাসিমের মতে, ‘লন্ডনে গেলে বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়বেন।’ আর সুলাইমান বলেন, ‘গৃহবন্দিত্ব মানে রাজনীতি থেকে নির্বাসন—বাবা সেটা মানবেন না।’
ওয়াশিংটনে গিয়ে মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেও তেমন অগ্রগতি হয়নি। সুলাইমান বলেন, ‘সেনাপ্রধান ও ট্রাম্পের সম্পর্ক এখন ভালো। ফলে আমাদের আশার জায়গা কম।’
শেষ বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানে যাওয়ার কথাও ভাবছেন তাঁরা। কিন্তু সেটিও ঝুঁকিপূর্ণ। কাসিম বলেন, ‘পাকিস্তানে যাওয়ার পর আমাদের গ্রেপ্তার করা হলে হয়তো সেটাই বাবাকে কোনো সমঝোতায় যেতে বাধ্য করবে। কিন্তু আমরা এ রকম কিছু করতে চাই না। সবচেয়ে ভয়াবহ আশঙ্কা—তিনি ৭৩ বছরের একজন মানুষ। আমরা কি আর কখনো তাঁকে দেখতে পাব?’
ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফ থেকে অনূদিত

পশ্চিম লন্ডন থেকে এসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ ও উত্থান এখন আর কোনো গালগল্পের বিষয় নয়। যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। অনেকের মতে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, প্রভাবশালীদের নির্মাতাও।
১৬ জুলাই ২০২১
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
১ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
১ দিন আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত ব্রিফ করেছেন।
হিব্রু ভাষার ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম মারিভের খবরে বলা হয়েছে, ওই বৈঠকে এক সামরিক প্রতিনিধি সংসদ সদস্যদের জানান, তেহরান ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন বাড়িয়েছে এবং হামলার সক্ষমতা পুরোপুরি পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের চেষ্টা করছে। আইডিএফের আশঙ্কা, আগের মতোই ইরান একযোগে শত শত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের ভূখণ্ডে বড় ধরনের আঘাত হানতে পারে।
গত এক মাসে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতেও ইসরায়েল-ইরান উত্তেজনা নিয়ে সতর্কবার্তা জোরালো হয়েছে। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের ও কিছু বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, দুই দেশের মধ্যে সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ এড়ানো দিন দিন কঠিন হয়ে পড়ছে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, উভয় পক্ষ দ্রুত সামরিক সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, পরোক্ষ বা প্রক্সি ফ্রন্ট বিস্তৃত করছে এবং কূটনৈতিক পথ থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যুদ্ধের ঝুঁকি প্রতি সপ্তাহেই বাড়ছে।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বর্তমান উত্তেজনার একটি বড় কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির (জেসিপিওএ) মেয়াদ শেষ হওয়া। চলতি বছরের অক্টোবরে চুক্তিটি বাতিল হয়ে যাওয়ার পর ইরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়। ফলে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তেহরানের দাবি অনুযায়ী তারা উচ্চমাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের সব মজুত ধ্বংস করেছে। কিন্তু ইসরায়েলি কর্মকর্তারা মনে করেন, এর একটি অংশ গোপনে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগ বাড়ছে—তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলের আরেকটি হামলা ‘হবে কি না’ এটা প্রশ্ন নয়, হামলা ‘কবে হবে’—সেটাই বড় প্রশ্ন। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। তেল আবিবের এই মনোভাব সামরিক হামলার সম্ভাবনাকে প্রায় অনিবার্য করে তুলছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক সংকট বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ইরান প্রকল্পের পরিচালক আলি ভায়েজ জানান, তাঁর ইরানি সূত্র অনুযায়ী দেশটির ক্ষেপণাস্ত্র কারখানাগুলো দিনে ২৪ ঘণ্টাই চালু আছে। তাঁর ভাষায়, নতুন কোনো সংঘাত হলে ইরান আগের মতো ১২ দিনে ৫০০টি নয়, বরং একযোগে ২ হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে দিতে চায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান-ইসরায়েল দ্বন্দ্বের মূল কারণগুলো এখনো অমীমাংসিত থাকায় সংঘাতের একটি চক্রাকার ধারা তৈরি হয়েছে, যেখানে উত্তেজনা প্রায় কাঠামোগতভাবেই অনিবার্য। ইরানের দীর্ঘদিন ধরে গড়ে তোলা তথাকথিত ‘প্রতিরোধের অক্ষ’ (যার মধ্যে বিভিন্ন আঞ্চলিক মিত্র ও গোষ্ঠী রয়েছে) গত জুনে ১২ দিনের যুদ্ধে এবং বিশেষ করে গত বছর সিরিয়ায় সরকার পরিবর্তনের পর বড় ধাক্কা খেয়েছে। তবু ইরানের হাতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক রসদ রয়েছে। যেমন—ইয়েমেনের আনসারুল্লাহ (হুতি), লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইরাকের বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া। এসব শক্তির মাধ্যমে তেহরান এখনো এক ধরনের অপ্রতিসম প্রতিরোধ সক্ষমতা ধরে রেখেছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম কার্সরইনফোর বরাতে জানা যায়, দেশটির নিরাপত্তা সংস্থার এক শীর্ষ সূত্রের দাবি—ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই, অর্থাৎ ২০২৯ সালের জানুয়ারির আগে ইরানে শাসক পরিবর্তনের সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখেছে ইসরায়েল। সূত্রটি জানায়, ইরান একদিকে যেমন ক্ষেপণাস্ত্র ভান্ডার বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক ও প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে নজরদারিতে রেখেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আরেকটি সামরিক সংঘাত এখন কেবল সময়ের ব্যাপার।
নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান নাতানজের দক্ষিণে ‘পিকঅ্যাক্স মাউন্টেন’ নামে একটি নতুন ভূগর্ভস্থ স্থাপনায় পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির মূল উপাদান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার কাজ করছে। সেখানে এখনো আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শকদের প্রবেশাধিকার দেওয়া হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, তেহরান শান্তি ও সংলাপ চায়, তবে চাপের কাছে মাথা নত করবে না, পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচিও পরিত্যাগ করবে না। তাঁর মতে, এসব কর্মসূচি জাতীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তিনি বহুপক্ষীয় আলোচনায় ফেরার আগ্রহ দেখালেও শর্ত দিয়েছেন—‘ইরানের বৈজ্ঞানিক, প্রযুক্তিগত ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ বাধলে যুক্তরাষ্ট্র কি আবারও তাতে জড়াবে?
গেল নভেম্বরের শুরুতে ডোনাল্ড ট্রাম্প স্বীকার করেন, জুনে ইরানে ইসরায়েলি হামলায় যুক্তরাষ্ট্র সম্পৃক্ত ছিল। বিষয়টি এত দিন হোয়াইট হাউস অস্বীকার করে আসছিল। ওই সময় ট্রাম্প আরও বলেন, ওয়াশিংটন চাইলে তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতেও প্রস্তুত।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ওয়াশিংটনে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। সেখানে ট্রাম্প আবার বলেন, ইরান যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি চায় এবং ওয়াশিংটন আলোচনায় প্রস্তুত। একই দিনে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির উপদেষ্টা কামাল খারাজি জানান, পারস্পরিক সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত ইরান, তবে প্রথম পদক্ষেপ ওয়াশিংটনকেই নিতে হবে। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি আলোচনার বাইরে, কারণ এটি জাতীয় প্রতিরোধের মূল স্তম্ভ। কেবল পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়েই সীমিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে, তাও সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ন না হলে।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি ইরানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়াতে চান না। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক চাপে আরেকটি যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ব্যয়বহুল হবে। কিন্তু ইসরায়েল এই পরিস্থিতিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে দেখছে। ইসরায়েল চাচ্ছে, তারা এই সুযোগে ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।
সব মিলিয়ে, তেহরান আশাবাদী কথাবার্তায় ভরসা করছে না। ইরানি কূটনীতিকদের ধারণা, ইসরায়েল আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের আপত্তি উপেক্ষা করেই সামরিক পরিকল্পনা এগিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ইসরায়েল হামলা চালালে যুক্তরাষ্ট্রকে যেকোনোভাবে সংঘাতে টেনে আনার চেষ্টা করবে—যদিও ট্রাম্প নতুন যুদ্ধ এড়াতে চান।
যুক্তরাষ্ট্র চাক বা না চাক, পরিস্থিতির চাপে তাকে শেষ পর্যন্ত সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে হতে পারে। আর যদি ইরান ইসরায়েলি হামলার জবাবে আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাহলে ওয়াশিংটনের সামনে কঠিন সিদ্ধান্ত এসে দাঁড়াবে—হস্তক্ষেপ করবে, নাকি নিয়ন্ত্রণ হারাবে। ইরান অবশ্য স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে—তারা ধ্বংসের ভয় পায় না এবং সর্বাত্মক যুদ্ধে নামলে ‘ইসরায়েলকেও সঙ্গে নিয়ে ডুববে’।
আরটি থেকে অনুবাদ করেছেন জগৎপতি বর্মা

পশ্চিম লন্ডন থেকে এসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ ও উত্থান এখন আর কোনো গালগল্পের বিষয় নয়। যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। অনেকের মতে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, প্রভাবশালীদের নির্মাতাও।
১৬ জুলাই ২০২১
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
১ দিন আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
মনে রাখা দরকার, এ বছরের মে মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক হামলার পর দুই দেশের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘাত বাধে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকেও আরও মার্কিন অস্ত্র কেনার জন্য চাপ দিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের কী চুক্তি হলো
ব্রাসেলসভিত্তিক থিংকট্যাংক আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক প্রবীণ দোন্থি জানান, এই অনুমোদনটি মূলত ২০২২ সালের এক রক্ষণাবেক্ষণ চুক্তির অংশ। এই চুক্তির লক্ষ্য পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বহরকে কার্যক্ষম রাখা। তিনি বলেন, ‘এই এফ-১৬ চুক্তিটি বৃহত্তর যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ কারণে কিছুটা দেরি হলেও প্রেসিডেন্ট বাইডেনের দেখানো পথেই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রশাসনও এটিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। দুই পক্ষই এই অঞ্চলে যৌথ সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে এই যুদ্ধবিমানগুলোর উপযোগিতার ওপর জোর দেয়।’
সর্বশেষ এই চুক্তি নতুন কোনো যুদ্ধবিমান বিক্রির জন্য নয়, বরং পাকিস্তানের হাতে থাকা এফ-১৬ বহরের জন্য প্রযুক্তি বিক্রি এবং সেগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য। যুক্তরাষ্ট্রর প্রতিরক্ষা নিরাপত্তা সহযোগিতা সংস্থা (ডিএসসিএ) ৪ ডিসেম্বর দেশটির কংগ্রেসে একটি প্রতিবেদন পাঠিয়ে চুক্তিটি নিশ্চিত করে।
ধারণা করা হয়, পাকিস্তানের কাছে ৭০ থেকে ৮০টি কার্যক্ষম এফ-১৬ বিমান আছে। এর মধ্যে কিছু পুরোনো কিন্তু পরে আধুনিক করে তোলা ‘ব্লক-১৫’ মডেল, জর্ডানের কাছ থেকে পাওয়া কিছু এফ-১৬ এবং কিছু নতুন ‘ব্লক ৫২+’ মডেলের বিমান রয়েছে।
এই প্যাকেজে আছে—উন্নত ফ্লাইট অপারেশন ও বিমানের ইলেকট্রনিক সিস্টেমের জন্য হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার আপডেট। অ্যাডভান্সড আইডেনটিফিকেশন ফ্রেন্ড অর ফো (আইএফএফ) সিস্টেম, যা পাইলটদের শত্রু বিমান থেকে মিত্র বিমান শনাক্ত করতে সাহায্য করে। নেভিগেশন আপগ্রেড, খুচরা পার্টস ও মেরামত সুবিধা।
এফ-১৬-এর সাপোর্ট ও আপগ্রেডের জন্য ৬৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জাম (এমডিই) দেওয়া হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ৯২টি লিংক-১৬ সিস্টেম। এই লিংক-১৬ একটি সুরক্ষিত সামরিক ট্যাকটিক্যাল ডেটা লিংক নেটওয়ার্ক, যার মাধ্যমে সামরিক বিমান, জাহাজ এবং স্থলবাহিনীর মধ্যে খুদে বার্তা বা ছবির মাধ্যমে রিয়েল টাইম বা তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা যায়।
বিক্রির জন্য অনুমোদিত অন্য গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জামগুলোর মধ্যে রয়েছে ছয়টি এমকে-৮২ ৫০০-পাউন্ড সাধারণ বোমার কাভার। এগুলো বিস্ফোরক ছাড়া কংক্রিট বা বালু দিয়ে পূর্ণ থাকে এবং প্রশিক্ষণ বা পরীক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়। এমকে-৮২ যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি আনগাইডেড বোমা, যা নিখুঁত-নির্দেশনা দেওয়া অস্ত্রের ওয়ারহেড হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
এফ-১৬ যুদ্ধবিমান কী
এফ-১৬ যুদ্ধবিমানটি এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকন বা ভাইপার নামেও পরিচিত। এটি এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট যুদ্ধবিমান। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের দ্বারা আকাশপথে যুদ্ধ ও আকাশ থেকে ভূমিতে আক্রমণের জন্য ব্যবহৃত হয়। প্রথমে এটি তৈরি করেছিল জেনারেল ডাইনামিকস নামে একটি মার্কিন কোম্পানি। বর্তমানে এটি উৎপাদন করে লকহিড মার্টিন।
ভিয়েতনাম যুদ্ধের শেষ দিকে সোভিয়েত মিকোয়ান-গুরেভিচ (মিগ) বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটিকে তৈরি করা হয়। এটি প্রথম উড্ডয়ন করে ১৯৭৪ সালে। লকহিড মার্টিনের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, এফ-১৬ এখন বিশ্বের ২৯টি দেশে ব্যবহৃত অন্যতম বহুল ব্যবহৃত যুদ্ধবিমান। পাকিস্তান ছাড়াও ইউক্রেন, তুরস্ক, ইসরায়েল, মিশর, পোল্যান্ড, গ্রিস, তাইওয়ান, চিলি, সিঙ্গাপুর, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ডস ও নরওয়ের মতো দেশগুলো এফ-১৬ ব্যবহার করে।
ভারত-পাকিস্তানের মে মাসের সংঘাতে এফ-১৬-এর ভূমিকা কী ছিল
এপ্রিলের ২২ তারিখে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে সশস্ত্র হামলায় ২৬ জন নিহত হয়। হামলার দায় স্বীকার করে ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) ’ নামে একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র এটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। নয়াদিল্লির অভিযোগ, এর সঙ্গে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তাইয়্যেবার যোগসূত্র আছে। তবে ইসলামাবাদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
পেহেলগাম হামলার পর নয়াদিল্লি ইসলামাবাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে নামিয়ে আনে এবং ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সিন্ধু নদের পানি ভাগাভাগি নিশ্চিত করার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে। ৭ মে ভারত ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাকিস্তান ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের ৯টি জায়গায় আঘাত হানে। ইসলামাবাদের দাবি, এসব হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। এরপরের তিন দিন দুই দেশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে একে অপরের সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে আকাশপথে তীব্র সংঘাত চালায়।
পাকিস্তানের এয়ার ভাইস মার্শাল আওরঙ্গজেব আহমেদের ভাষ্যমতে, এই আকাশযুদ্ধে পাকিস্তান ৪২টি ‘হাই-টেক বিমান’ ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে এফ-১৬ ছাড়াও চীনের তৈরি জেএফ-১৭ ও জে-১০ বিমান ছিল। অবশেষে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ১০ মে একটি যুদ্ধবিরতি ঘোষিত হয়।
পাকিস্তানকে এফ-১৬-এর প্রযুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র কি ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে
হ্যাঁ, কয়েকটি কারণে। পাকিস্তানের এফ-১৬ আপগ্রেডের জন্য যুক্তরাষ্ট্রর এই অনুমোদন এমন এক সময় এল, যখন ট্রাম্প প্রশাসন ভারতকে তাদের থেকে আরও অস্ত্র কিনতে চাপ দিচ্ছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স তিন ভারতীয় কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, গত আগস্টে নয়াদিল্লি মার্কিন অস্ত্র ও বিমান কেনার পরিকল্পনা স্থগিত করে। এর ঠিক কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের ওয়াশিংটন সফরের কথা ছিল, যেখানে তিনি কিছু অস্ত্র কেনার কথা ঘোষণা করতে পারতেন। সেই সফরটি বাতিল হয়ে যায়।
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কেও সম্প্রতি উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ৬ আগস্ট ট্রাম্প প্রশাসন ভারতের আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছিলেন। এর আগে থেকেই ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বহাল ছিল। ফলে মোট শুল্কের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ শতাংশে। ভারতকে রাশিয়া থেকে সস্তা অপরিশোধিত তেল কেনার শাস্তি হিসেবে এই শুল্ক আরোপ করা হয়।
ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই শুল্কের ঘোষণা দিয়ে লেখেন, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক কার্যকলাপ অব্যাহত থাকায় এটি একটি ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ এবং তাই রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের শীর্ষ ক্রেতা ভারতের ওপর বর্ধিত শুল্ক আরোপ করা ‘প্রয়োজনীয় ও যথাযথ।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেখছি যে ভারত সরকার বর্তমানে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাশিয়ান ফেডারেশনের তেল আমদানি করছে।’
যদিও যুক্তরাষ্ট্রর চাপের ফলস্বরূপ ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা সামান্য কমিয়েছে, তবে নয়াদিল্লি মস্কো থেকে কেনা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। রাশিয়া থেকে তেল কেনার ক্ষেত্রে চীনের পর ভারতই দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রেতা। গত সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে রাশিয়া-ভারত বার্ষিক দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং সেখানে বলেন, ‘ভারতকে জ্বালানির নিরবচ্ছিন্ন চালান সরবরাহ করতে রাশিয়া প্রস্তুত।’
পাকিস্তানের এফ-১৬ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের এই সর্বশেষ চুক্তি ঘোষণার ফলে ভারত সন্তুষ্ট হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। প্রবীণ দোন্থি জানান, আগে থেকেই পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, যার আওতায় পাকিস্তানের এফ-১৬ বহরের রক্ষণাবেক্ষণ করা নিয়ে নয়াদিল্লি আপত্তি জানিয়েছিল। ভারতের দাবি, এফ-১৬ বিমান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়।
দোন্থি বলেন, ‘ওয়াশিংটন এবার আগেভাগেই বলে দিয়েছে যে এই বিক্রির ফলে অঞ্চলের মৌলিক সামরিক ভারসাম্যের পরিবর্তন হবে না।’
ওয়াশিংটন ডিসিভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশ্লেষক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, ‘এখানে ভারতের দিকটি বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা উচিত নয়। কেউ কেউ এটিকে হয়তো ওয়াশিংটনের সর্বশেষ কৌশল হিসেবে দেখতে পারে, পাকিস্তানের প্রতি উদারতা দেখিয়ে ভারতকে বাণিজ্য আলোচনায় আরও ছাড় দিতে চাপ দেওয়া।’
তবে তিনি আরও যোগ করেন, এই চুক্তির ‘একটি নিজস্ব যুক্তি আছে, যা ভারতের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়।’ কুগেলম্যানের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, এটি মূলত পাকিস্তানের যুক্তরাষ্ট্র নির্মিত বিমানগুলোকে রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য এক দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির অধীনে এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা। এটি ভারতের সঙ্গে অব্যাহত, যদিও কম উদার মার্কিন প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পাশাপাশি বিদ্যমান।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অনুমোদন পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করবে
কুগেলম্যান জানান, এই প্যাকেজটি তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তানকে দেওয়া অন্যতম উদার নিরাপত্তা সহায়তা প্যাকেজ। প্রায় ৭০ কোটি ডলারকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই।’ এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতায় ট্রাম্প প্রশাসন যে গুরুত্ব দিচ্ছে, তার ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের পুনরুত্থান নিয়ে আলোচনায় সাধারণত গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও অন্যান্য বাণিজ্যিক সুযোগগুলোই বেশি শিরোনামে আসে। কিন্তু সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতা, যার ব্যাপ্তি সামান্য হলেও এই প্রশাসনের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’
তবে দোন্থি মনে করিয়ে দেন, যুক্তরাষ্ট্রর এই সর্বশেষ প্যাকেজটি পাকিস্তানকে ২০৪০ সাল পর্যন্ত তার বহর রক্ষণাবেক্ষণে সাহায্য করবে বটে, কিন্তু ২০২০ সাল থেকে পাকিস্তানের ৮০ শতাংশের বেশি অস্ত্র সরবরাহ করেছে চীন। সুইডিশ থিংকট্যাংক সিআইপিআরআইয়ের এই বছরের একটি প্রতিবেদনেও এই পরিসংখ্যানের সমর্থন পাওয়া যায়।
দোন্থি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে মে মাসের সংঘাতে পাকিস্তান চীনের তৈরি জে-১০ বিমান ব্যবহার করেছিল। ইসলামাবাদ ওয়াশিংটন ও বেইজিং—উভয় পক্ষ থেকেই সুবিধা নিয়ে ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে।’
আল জাজিরা থেকে অনুবাদ করেছেন আজকের পত্রিকার সহসম্পাদক আব্দুর রহমান

পশ্চিম লন্ডন থেকে এসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ ও উত্থান এখন আর কোনো গালগল্পের বিষয় নয়। যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। অনেকের মতে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, প্রভাবশালীদের নির্মাতাও।
১৬ জুলাই ২০২১
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
১ দিন আগে
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর।
৩ দিন আগেআজকের পত্রিকা ডেস্ক

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে তেল পাচারে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত বুধবার মার্কিন বাহিনী ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছাকাছি অভিযান চালিয়ে একটি তেল ট্যাংকার জব্দ করেছে। ট্যাংকারে ভেনেজুয়েলা ও ইরানের তেল বহন করা হচ্ছিল বলে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের। এই ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার তেল বহনের অভিযোগের আরও ছয়টি জাহাজের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
জাহাজ ট্র্যাকিং ডেটা অনুযায়ী, প্রথম ট্যাংকারটির অবস্থান (লোকেশন) গোপন করার বা মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। মার্কিন অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি নিশ্চিত করেছেন, জব্দ হওয়া জাহাজটির নাম ‘স্কিপার’। তাঁর দাবি, এটি ভেনেজুয়েলা এবং ইরানের নিষেধাজ্ঞা ভুক্ত অপরিশোধিত তেল পরিবহনে ব্যবহৃত ক্রুড অয়েল ট্যাংকার।
আন্তর্জাতিক সমুদ্র চুক্তি অনুযায়ী, একটি নির্দিষ্ট টনেজের চেয়ে বেশি ওজনের সব জাহাজেই স্বয়ংক্রিয় শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এআইএস) থাকা বাধ্যতামূলক, যা জাহাজের অবস্থান নিয়মিতভাবে সম্প্রচার করে। কিন্তু ‘স্কিপার’-এর গতিবিধির পাবলিক রেকর্ড হয় অসম্পূর্ণ অথবা বিভ্রান্তিকর। জব্দ হওয়ার আগে এটি গত ৭ নভেম্বর থেকে তার অবস্থান প্রকাশ করেনি।
মেরিন অ্যানালিটিক্স ফার্ম কেপ্লার (Kpler) জানিয়েছে, ‘স্কিপার’-এর অবস্থান গোপন করার (স্পুফিং) দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। জানা যায়, ২০২২ সালে যখন জাহাজটি ‘আদিশা’ (Adisa) নামে চলছিল, তখন মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ এটিকে একটি ‘আন্তর্জাতিক তেল পাচার নেটওয়ার্কের’ অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রথম নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘স্কিপার’ ঘন ঘন ট্র্যাকারকে মিথ্যা তথ্য দিত। যেমন, এআইএস সিস্টেমে জাহাজটি ৭ ও ৮ জুলাই ইরাকের বসরা অয়েল টার্মিনালে অবস্থান দেখালেও, টার্মিনাল রিপোর্টে এর কোনো রেকর্ড ছিল না। উল্টো কেপ্লার জানিয়েছে, সেই সময়েই ট্যাংকারটি ইরানের খার্গ দ্বীপ থেকে অপরিশোধিত তেল বোঝাই করছিল। এ ছাড়া, ২৮ অক্টোবর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত জাহাজটি এআইএস-এ সম্পূর্ণ ভুল সংকেত পাঠাচ্ছিল, যা এর আসল অবস্থানকে প্রতিফলিত করেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘স্কিপার’ সম্ভবত ‘ডার্ক ফ্লিট’ নামক বিশ্বব্যাপী তেলবাহী ট্যাংকারের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। এই নেটওয়ার্কটি মালিকানা, পরিচয় এবং ভ্রমণ ইতিহাস গোপন করে তেলের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কাজ করে।
যদিও ‘স্কিপার’ গায়ানার পতাকা ব্যবহার করে যাত্রা করছিল, কিন্তু গায়ানা সরকার দ্রুত বিবৃতি দিয়ে জানায় যে ২০ বছর বয়সী এই ট্যাংকারটি তাদের দেশে নিবন্ধিত নয় এবং এটি ‘অবৈধভাবে গায়ানার পতাকা ব্যবহার করছিল’। জাহাজটির নিবন্ধিত মালিক হিসেবে মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ-ভিত্তিক ‘ট্রাইটন নেভিগেশন করপোরেশন’-এর নাম রয়েছে। তবে, মার্কিন ট্রেজারি বিভাগ জানিয়েছে, এই ট্রাইটন করপোরেশনকে একজন নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত রুশ জ্বালানি ধনকুবের ভিক্তর আর্তেমভ তাঁর বৈশ্বিক ‘তেল পাচার নেটওয়ার্ক’ পরিচালনার জন্য ব্যবহার করতেন।
ভেনেজুয়েলার তেল মজুত বিশ্বের বৃহত্তম হলেও, মাদুরোর প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার চেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র ২০১৯ সাল থেকে দেশটির তেল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞা এড়াতে ‘স্কিপার’ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করত। কেপ্লার বিশ্লেষকেরা জানান, ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দর থেকে প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন (১১ লাখ) ব্যারেল মেরে ক্রুড তেল বোঝাই করেছিল এবং গন্তব্য হিসেবে কিউবার নাম উল্লেখ করেছিল।
১১ থেকে ১৩ আগস্টের মধ্যে এটি পূর্বে যাত্রা করে একটি ‘শিপ-টু-শিপ ট্রান্সফার’ সম্পন্ন করে। এটির কার্গো পরে চীনেও ‘ভুয়া ঘোষিত’ হয়েছিল। মার্কিন অভিযানের মাত্র কয়েক দিন আগে, ৭ ডিসেম্বরে এটি ভেনেজুয়েলা উপকূলের কাছে অন্য একটি জাহাজের সঙ্গে স্থানান্তরে জড়িত ছিল বলে স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা যায়। বেলজিয়ামের নৌবাহিনীর সাবেক লেফটেন্যান্ট ফ্রেডেরিক ভ্যান লোকারেন জানান, এই ধরনের স্থানান্তর আইনত অবৈধ না হলেও, তা ‘অত্যন্ত অস্বাভাবিক’ এবং সাধারণত নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর জন্যই করা হয়।
‘স্কিপার’ সর্বশেষ ৭ নভেম্বর তার অবস্থান ঘোষণা করে ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। মার্কিন অভিযানে ১০ ডিসেম্বর এর অবস্থান পুনরায় দৃশ্যমান হয়। এই অন্তর্বর্তী সময়ে, ১৮ নভেম্বর স্যাটেলাইট চিত্রগুলো নিশ্চিত করছে যে ট্যাংকারটি ভেনেজুয়েলার হোসে বন্দরে ছিল।
তথ্যসূত্র: বিবিসি

পশ্চিম লন্ডন থেকে এসে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের প্রাসাদে আসমার প্রবেশ ও উত্থান এখন আর কোনো গালগল্পের বিষয় নয়। যুদ্ধের অর্থনীতি থেকে সরাসরি লাভ করছিলেন আসমা। সিরিয়ার অর্থনীতিতে ক্রমশ প্রভাবশালী হয়ে ওঠে তাঁর পরিবারও। অনেকের মতে তিনি শুধু প্রভাবশালী নন, প্রভাবশালীদের নির্মাতাও।
১৬ জুলাই ২০২১
ইমরান খানকে প্রতিদিন ২২ ঘণ্টা একা একটি সেলে রাখা হচ্ছে। সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে থাকা ওই কক্ষে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও নেই। পরিবারের অভিযোগ, পাকিস্তানের সামরিক নেতৃত্ব ইচ্ছাকৃতভাবে ইমরান খানের মনোবল ভেঙে দিতে চাইছে।
১৭ ঘণ্টা আগে
ইরানের সঙ্গে নতুন করে বড় ধরনের সামরিক সংঘাতের আশঙ্কা ঘনীভূত হচ্ছে—এমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক তৎপরতা। দেশটির পার্লামেন্টের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা কমিটির এক গোপন বৈঠকে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত...
১ দিন আগে
পাকিস্তানের কাছে ৬৮ কোটি ৬০ লাখ ডলার মূল্যের উন্নত প্রযুক্তি ও আধুনিক পার্টস বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই প্যাকেজটি পাকিস্তানের কাছে থাকা এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর আধুনিকীকরণের জন্য দেওয়া হয়েছে। চির প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত–পাকিস্তানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার আবহে এই চুক্তি সম্পন্ন হলো।
১ দিন আগে