খাবারের পাতে কবে থাকবে উদ্ভিজ্জ দুধ?

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৯ মে ২০২২, ১৬: ৫৩
আপডেট : ৩০ মে ২০২২, ১৮: ২০

উদ্ভিদজাত বিভিন্ন প্রোটিন খাবার উৎপাদনে ইদানীং গতি এসেছে। বর্তমান সময়ে উদ্ভিদজাত প্রোটিনের তালিকায় দুধ থেকে মাংস, পনির—সবই আছে। বলা হচ্ছে, ধীরে ধীরে প্রাণিজ প্রোটিনের জায়গা নিয়ে নেবে উদ্ভিদ।

উদ্ভিদজাত প্রোটিনের মধ্যে দুধ উল্লেখযোগ্য। ভালো ভিগান (উদ্ভিদজাত) দুধ দেখতে আসলের মতোই হওয়া প্রয়োজন এবং স্বাদও তেমনই হওয়া দরকার। কারণ, উদ্ভিদজাত দুধ চর্বিযুক্ত খাবারে কিংবা স্বাস্থ্যসচেতনদের পছন্দনীয় বেকারিপণ্যে ব্যবহার করার চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এ রকম আসলের মতো দুধ তৈরি করতে বছরের পর বছর নানা সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন উৎপাদকেরা। তবে ক্রমবর্ধমান রাজস্ব আয় বলছে, তাঁরা এ ক্ষেত্রে দিনে দিনে সফল হয়ে উঠছেন। শুধু ২০২১ সালেই যুক্তরাষ্ট্রে উদ্ভিদজাত দুধ বিক্রি হয়েছে ২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের, যা ২০১৮ সালের চেয়ে ২ বিলিয়ন ডলার বেশি।

উদ্ভিদজাত আরও যেসব খাবার রয়েছে, তার মধ্যে দুধ একটি বিভাগ মাত্র। এখন শুধু মাংস নয়, পনির, ডিম, এমনকি চিংড়িরও এমন বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প খাদ্যপণ্য বেরিয়েছে। বার্গার কিং ও ম্যাকডোনাল্ড এর মধ্যেই ‘ভিগান পেটিস’ বিক্রি শুরু করেছে। চিপোটল (একটি রেস্টুরেন্ট) তৈরি করেছে উদ্ভিদজাত চরিজো (একধরনের সস)। গত বছর বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্যানড টুনা উৎপাদক প্রতিষ্ঠান থাই ইউনিয়ন গ্রুপ উদ্ভিদজাত পণ্য উৎপাদন শুরু করেছে।

বিসিজি নামের একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে বিকল্প প্রোটিন থেকে বৈশ্বিক রাজস্ব আয় ২৯০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকবে।

আগ্রহী বিনিয়োগকারীরা ওটমিল্কের মতো ব্যবসায় প্রচুর বিনিয়োগ করছেন। বিকল্প প্রোটিন উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলো গত বছর ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। এটি ২০২০ সালের তুলনায় ৬০ শতাংশ বেশি বিনিয়োগ। সুইডেনের প্রতিষ্ঠান ওটলি ইতিমধ্যে উদ্ভিদজাত দুধ উৎপাদন শুরু করেছে। মার্কিন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নাসদাক বলেছে, গত বছর ওটলি ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ বাড়িয়েছে।

খাদ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ইমপসিবল ফুডস গত বছরের নভেম্বরে ৫০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে। কোম্পানিটি মাংসবিহীন বার্গার তৈরির জন্য সুপরিচিত। প্যাকেটজাত পণ্যের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান নেসলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে উদ্ভিদজাত প্রোটিন পাউডার তৈরির জন্য ২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে বলে বাজারে রটেছে।

বিকল্প প্রোটিনের যাত্রা ইদানীং শুরু, এমন নয়। ১৯৮০ সালে এ ধরনের খাবারের যাত্রা শুরু হয়। তখন মাংসের বিকল্প হিসেবে ‘কর্ন’ নামের একটি ছত্রাকজাত খাবার প্রথমবারের মতো সুপারশপগুলোতে দেখা যায়। ১৯৯০ সালে বাজারে আসে সিল্ক নামের একটি সয়া মিল্ক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে প্রথম দিকের ওই সব খাবার মোটেও সুস্বাদু ছিল না এবং অতটা পুষ্টিকরও ছিল না। ধীরে ধীরে উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব খাবারের মান ও স্বাদ বাড়িয়েছে। এর জন্য খাবারগুলোতে মটর ও মটরশুঁটিজাতীয় শস্যদানা যোগ করতে হয়েছে।

উদ্ভিদজাত খাদ্যপণ্যের বাজার বাড়ছে।খাদ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলো দুগ্ধজাতীয় পণ্য নিয়ে এখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা অব্যাহত রেখেছে। ক্রমশ তারা স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বাড়ানোর চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে এসব পণ্য ক্রেতাদের আরও আকৃষ্ট করবে, তাতে সন্দেহ নেই। শুনলে বিস্ময়কর মনে হতে পারে, মার্কিন স্টার্টআপ কোম্পানি টেরভিভা মাখনের বিকল্প তৈরি করতে বিশেষ এক গাছের তেল ব্যবহার করছে। এশিয়ার কয়েকটি দেশে ওই গাছ জন্মাতে দেখা যায়। ইসরায়েলি খাদ্য উৎপাদক ফার্ম চিকপি মেয়োনিজে ডিমের বিকল্প পুষ্টিগুণ হিসেবে ছোলার নির্যাস ব্যবহার করছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, উদ্ভিদজাত পণ্যের দিকে ভোক্তাদের আকৃষ্ট করতে কোম্পানিগুলো ভালো সফলতা দেখাচ্ছে। উৎপাদন কৌশলে উন্নতি করার কারণে কোম্পানিগুলো কম মূল্যে ভালো পণ্য দিতে পারছে। কোলেস্টেরল না বাড়িয়ে যারা ফুলে ওঠা পেশি চায়, তাদের কাছে এসব খাবার দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

পশুপালন খামারগুলো থেকে প্রচুর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়। সে জন্য অনেক দিন ধরেই জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা পশুদের কাছ থেকে উৎপাদিত খাবার খাওয়া সীমিত করার পরামর্শ দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক গ্রাম গরুর মাংস উৎপাদন করতে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন হয়, তা এক গ্রাম টফু (শিম থেকে তৈরি একধরনের খাবার) উৎপাদনের চেয়ে ২৫ গুণ বেশি।

তবে এসব খাবারের কিছু সমালোচনাও রয়েছে। নিন্দুকেরা বলে থাকেন, উদ্ভিদজাত খাবারগুলো কখনোই প্রাণিজ খাবারের সমপর্যায়ের স্বাদ ও পুষ্টিগুণসম্পন্ন হয় না। উদ্ভিদজাত জাঙ্কফুড এখনো জাঙ্কফুড হিসেবেই বিবেচিত। সয়া ফুড সাধারণত অ্যালার্জিজনিত রোগ ও হরমোনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। দুধের মতো পানীয় তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণে বাদাম চাষ করতে হয়। আর বাদাম চাষ করতে প্রচুর পানির অপচয় করতে হয়।

আবার এসব পণ্য বাজারজাতকরণেও সমস্যা রয়েছে। যেমন ভারতের মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই সবজি ও উদ্ভিদজাতীয় খাবার খেয়ে অভ্যস্ত। সুতরাং ভারতের বিশাল বাজারে এ ধরনের গবেষণাগারে তৈরি উদ্ভিদজাত খাবার বিক্রি করা কঠিন হয়ে উঠবে। একইভাবে নাইজেরিয়ায়ও কঠিন হবে। কারণ, সেখানে মাংস খাওয়াকে আভিজাত্যের অংশ মনে করা হয়। সেখানে খুব সহজে মাংসের বিকল্প খাবার বিক্রি করা সম্ভব হবে না।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, প্রাণিজ খাদ্যের যতই সমালোচনা থাকুক, শিশুদের হাড়ের বিকাশ ও অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়া লালন-পালনে এখনো তা অনেক ভালো। সব মিলিয়ে প্রাণিজ প্রোটিনের বিকল্প হিসেবে উদ্ভিদজাত প্রোটিনের ব্যবহার সর্বজনীন হয়ে উঠতে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। 

ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট থেকে ভাষান্তর করেছেন: মারুফ ইসলাম

বিশ্লেষণ সম্পর্কিত পড়ুন:

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত