অনলাইন ডেস্ক
একটি পথ বন্ধ হয়ে গেলে কোথাও না কোথাও অন্য একটি পথ খুলে যায়; বিকল্প আশা কখনোই নিঃশেষ হয়ে যায় না। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ দক্ষিণ কোরিয়ায় ইউটিউব সাম্রাজ্যের উত্থান। এই দেশে যত মানুষ প্রতিদিন ইউটিউবে লাইভ অনুষ্ঠান দেখেন, তা দেখে আপনি অবাক হবেন। সবাই যে শুধু কে-পপ আর কে-ড্রামার লাইভ দেখেন, তা কিন্তু নয়।
দেশটিতে বিপুলসংখ্যক দর্শক ইউটিউবে সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর টক শো দেখেন। এমন একটি টক শোর নাম ‘জিওমসন ইজ নাথিং’। জিওমসন অর্থ ‘বিনয়’। এর উপস্থাপক কিম ওউ জুন। কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রতি তিনি মোটেও বিনয়ী নন। যেখানে প্রচলিত গণমাধ্যমগুলো সরকারকে সন্তুষ্ট করে অনুষ্ঠান প্রচার করতে ব্যস্ত, সেখানে তিনি স্রোতের বিপরীতে গিয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে রীতিমতো খ্যাতিমান হয়ে উঠেছেন।
কিম খোলাখুলিভাবেই বলেছেন, তিনি পক্ষপাতদুষ্ট প্রচলিত গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে পাল্টা কণ্ঠস্বর তৈরি করতে চান, যাতে ভারসাম্য রক্ষা হয়।
সম্প্রতি মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কিম। সেখানে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক অবস্থান থেকে গণমাধ্যমগুলো পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন তৈরি করে। সেটি তারা করতেই পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তারা নিরপেক্ষ হওয়ার ভান করে। তারা মুখের ওপর একটা ন্যায্যতার মুখোশ সেঁটে রাখে।’
কিমের স্টাইলটা একটু ভিন্ন। দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা যেখানে বাক স্বাধীনতা সীমিত করা হচ্ছে মর্মে মানহানির মামলা করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, সেখানে কিম মামলা বা প্রতিবাদের দিকে না হেঁটে নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছেন।
কিমের অনুষ্ঠান কেন এত জনপ্রিয়
কিমের টক শো এ কারণেই বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, অন্য গণমাধ্যমগুলো যে প্রশ্নগুলো তুলতে পারে না, কিম সে প্রশ্নগুলো সাহসিকতার সঙ্গে করেন। প্রতিদিন সকাল ৭টা ৫ মিনিটে কিমের শো দেখার জন্য অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ ইউটিউব খুলে বসে থাকেন।
কিমের এ অনুষ্ঠান থেকে দিনে ৭০ হাজার ডলার আয় হয়। এ থেকেই বোঝার যায় অনুষ্ঠানটি কতটা জনপ্রিয়। কিমের চ্যানেলটিতে ১০ লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।
কিমের এই জনপ্রিয়তা প্রচলিত গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, সেটির দিকেও ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন সমসাময়িক বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠান দেখেতে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ ইউটিউবের দিকে ঝুঁকছে। কারণ, মানুষ বুঝে গেছে, সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন গণমাধ্যমগুলোর চেয়ে ইউটিউবে অনেক স্বাধীন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ইউটিউবের জনপ্রিয়তা চোখ কপালে ওঠার মতো। গবেষণা ও জরিপকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিসটা জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ কোটি ৬০ লাখ ইউটিউব ব্যবহারকারী রয়েছে। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জনসংখ্যায় ৯০ শতাংশেরও বেশি। এই হিসাব চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত। জানুয়ারির পর থেকে গত চার মাসে ব্যবহারকারী আরও বেড়েছে বলে ধারণা করা যায়।
প্রচলিত গণমাধ্যমগুলোর প্রত্যেকের এখন ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। ছোট বড় বেসরকারি স্বাধীন কোম্পানিগুলোরও চ্যানেল রয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোও ইউটিউব চ্যানেল খুলেছে। তাদের চ্যানেলগুলোতে লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবার।
ইউটিউব দক্ষিণ কোরিয়ায় কতটা প্রভাববিস্তারী, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল গত বছরের সাধারণ নির্বাচনের সময়। পিপল পাওয়ার পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। নির্বাচনের আগে তিনি ইউটিউব চ্যানেল থ্রিপ্রোটিভির সাক্ষাৎকারে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছিলেন। জরিপে দেখা গেছে, সেই সময়ে তাঁর জনপ্রিয়তা ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল এবং এ ঘটনার প্রভাব পড়েছিল তাঁর ভোটে। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও যতটা ভোট পাবেন বলে আশা করা হয়েছিল, ততটা ভোট পাননি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার বিগত কয়েক বছরের আন্দোলনগুলোতেও ডানপন্থী ও বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ইউটিউব চ্যানেলের প্রভাব দেখা গেছে। যেমন ২০১৭ সালে একটি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে অভিশংসিত হওয়ার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হাইয়ের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিল তার বিপুলসংখ্যক সমর্থক। আর এই সমর্থকদের রাস্তায় বিক্ষোভ করতে ইন্ধন জুগিয়েছে ডানপন্থী চ্যানেলগুলো। অন্যদিকে বামপন্থী চ্যানেলগুলো বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইউনের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করতে উৎসাহিত করেছে।
বাক স্বাধীনতার শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম
বাক স্বাধীনতার শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ইউটিউব দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার হ্যানিয়াং ইউনিভার্সিটির গণমাধ্যম বিষয়ের অধ্যাপক জং জুন-হি বলেছেন, ‘বেশির ভাগ প্রচলিত গণমাধ্যমগুলো সরকারের সমালোচনা এড়িয়ে চলে। কেউ কেউ রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে আবার কেউ কেউ মামলার ভয়ে সরকারের সমালোচনা করে না।’
এসব কারণে প্রচলিত গণমাধ্যমের ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেন সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যোগাযোগের অধ্যাপক রি জুন-উওং। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েছে ইউটিউবের মতো বিকল্প প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর।’
বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ‘নিউজ ফ্যাক্টরি’
জিওমসন ইজ নাথিং নামের শো করার আগে উপস্থাপক কিম ‘নিউজ ফ্যাক্টরি’ নামের একটি রেডিও শো করতেন। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সিউলে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। কিম ছিলেন সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া উপস্থাপক। সেই অনুষ্ঠানটি মতবিরোধের কারণে সরকার বন্ধ করে দেয়। পরে নিউজ ফ্যাক্টরের আদলে ইউটিউবে ‘জিওমসন ইজ নাথিং’ শুরু করেন কিম।
অধ্যাপক জং জুন-হি বলেন, সংবাদ বিশ্লেষণ ও লাইভ সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে প্রচলিত ছাঁচ ভেঙে ফেলেছেন কিম। তিনি রাজনৈতিক টক শোর ক্ষেত্রেও অনুকরণীয় বৈচিত্র্য এনেছেন।
সিউল সিটি কাউন্সিল ঘোষণা করেছে, তারা টিবিএস রেডিওর বাজেট কমানোর পরিকল্পনা করছে, যাতে নিউজ ফ্যাক্টরির মতো অনুষ্ঠান আর না হয়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিউলের মেয়র ওহ সে-হুন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।’
পতন ও উত্থান
গত বছরের ডিসেম্বরে নিউজ ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়ার পরের মাসেই জিওমসন ইজ নাথিং শুরু করেন কিম। আগের অনুষ্ঠান থেকে নতুন অনুষ্ঠানটির একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে অনুষ্ঠানের নাম ও প্রচারের প্ল্যাটফর্ম। এমনকি স্টুডিওটির ডিজাইন পর্যন্ত তিনি নিউজ ফ্যাক্টরির আদলে তৈরি করেছেন।
মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠানটির সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এটি দক্ষিণ কোরিয়ায় রিয়েল টাইম ভিউয়ের দিক থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইউটিউব অনুষ্ঠান।
অধ্যাপক জং বলেন, ‘এই সাফল্যই বলে দেয়, মুক্ত কণ্ঠস্বর কখনো স্তব্ধ করা যায় না।’
উপস্থাপক কিম বলেছেন, ‘আমি দেখিয়ে দিতে চাই যে, রাজনৈতিক কারণে আমার শো বন্ধ করে দেওয়া ভুল ছিল।’
সিএনএন থেকে অনুবাদ করেছেন মারুফ ইসলাম
একটি পথ বন্ধ হয়ে গেলে কোথাও না কোথাও অন্য একটি পথ খুলে যায়; বিকল্প আশা কখনোই নিঃশেষ হয়ে যায় না। এর সাম্প্রতিক উদাহরণ দক্ষিণ কোরিয়ায় ইউটিউব সাম্রাজ্যের উত্থান। এই দেশে যত মানুষ প্রতিদিন ইউটিউবে লাইভ অনুষ্ঠান দেখেন, তা দেখে আপনি অবাক হবেন। সবাই যে শুধু কে-পপ আর কে-ড্রামার লাইভ দেখেন, তা কিন্তু নয়।
দেশটিতে বিপুলসংখ্যক দর্শক ইউটিউবে সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর টক শো দেখেন। এমন একটি টক শোর নাম ‘জিওমসন ইজ নাথিং’। জিওমসন অর্থ ‘বিনয়’। এর উপস্থাপক কিম ওউ জুন। কর্তৃত্ববাদী সরকারের প্রতি তিনি মোটেও বিনয়ী নন। যেখানে প্রচলিত গণমাধ্যমগুলো সরকারকে সন্তুষ্ট করে অনুষ্ঠান প্রচার করতে ব্যস্ত, সেখানে তিনি স্রোতের বিপরীতে গিয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করে রীতিমতো খ্যাতিমান হয়ে উঠেছেন।
কিম খোলাখুলিভাবেই বলেছেন, তিনি পক্ষপাতদুষ্ট প্রচলিত গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে পাল্টা কণ্ঠস্বর তৈরি করতে চান, যাতে ভারসাম্য রক্ষা হয়।
সম্প্রতি মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কিম। সেখানে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক অবস্থান থেকে গণমাধ্যমগুলো পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন তৈরি করে। সেটি তারা করতেই পারে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, তারা নিরপেক্ষ হওয়ার ভান করে। তারা মুখের ওপর একটা ন্যায্যতার মুখোশ সেঁটে রাখে।’
কিমের স্টাইলটা একটু ভিন্ন। দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা যেখানে বাক স্বাধীনতা সীমিত করা হচ্ছে মর্মে মানহানির মামলা করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে, সেখানে কিম মামলা বা প্রতিবাদের দিকে না হেঁটে নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছেন।
কিমের অনুষ্ঠান কেন এত জনপ্রিয়
কিমের টক শো এ কারণেই বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে যে, অন্য গণমাধ্যমগুলো যে প্রশ্নগুলো তুলতে পারে না, কিম সে প্রশ্নগুলো সাহসিকতার সঙ্গে করেন। প্রতিদিন সকাল ৭টা ৫ মিনিটে কিমের শো দেখার জন্য অন্তত ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ ইউটিউব খুলে বসে থাকেন।
কিমের এ অনুষ্ঠান থেকে দিনে ৭০ হাজার ডলার আয় হয়। এ থেকেই বোঝার যায় অনুষ্ঠানটি কতটা জনপ্রিয়। কিমের চ্যানেলটিতে ১০ লাখের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে।
কিমের এই জনপ্রিয়তা প্রচলিত গণমাধ্যমের ভবিষ্যৎ কেমন হবে, সেটির দিকেও ইঙ্গিত দিচ্ছে। এখন সমসাময়িক বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠান দেখেতে দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ ইউটিউবের দিকে ঝুঁকছে। কারণ, মানুষ বুঝে গেছে, সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন গণমাধ্যমগুলোর চেয়ে ইউটিউবে অনেক স্বাধীন।
দক্ষিণ কোরিয়ায় ইউটিউবের জনপ্রিয়তা চোখ কপালে ওঠার মতো। গবেষণা ও জরিপকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্যাটিসটা জানিয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ কোটি ৬০ লাখ ইউটিউব ব্যবহারকারী রয়েছে। এটি দক্ষিণ কোরিয়ার মোট জনসংখ্যায় ৯০ শতাংশেরও বেশি। এই হিসাব চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত। জানুয়ারির পর থেকে গত চার মাসে ব্যবহারকারী আরও বেড়েছে বলে ধারণা করা যায়।
প্রচলিত গণমাধ্যমগুলোর প্রত্যেকের এখন ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। ছোট বড় বেসরকারি স্বাধীন কোম্পানিগুলোরও চ্যানেল রয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলগুলোও ইউটিউব চ্যানেল খুলেছে। তাদের চ্যানেলগুলোতে লাখ লাখ সাবস্ক্রাইবার।
ইউটিউব দক্ষিণ কোরিয়ায় কতটা প্রভাববিস্তারী, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল গত বছরের সাধারণ নির্বাচনের সময়। পিপল পাওয়ার পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল। নির্বাচনের আগে তিনি ইউটিউব চ্যানেল থ্রিপ্রোটিভির সাক্ষাৎকারে বেফাঁস মন্তব্য করে বিপাকে পড়েছিলেন। জরিপে দেখা গেছে, সেই সময়ে তাঁর জনপ্রিয়তা ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল এবং এ ঘটনার প্রভাব পড়েছিল তাঁর ভোটে। তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও যতটা ভোট পাবেন বলে আশা করা হয়েছিল, ততটা ভোট পাননি।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, দক্ষিণ কোরিয়ার বিগত কয়েক বছরের আন্দোলনগুলোতেও ডানপন্থী ও বামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর ইউটিউব চ্যানেলের প্রভাব দেখা গেছে। যেমন ২০১৭ সালে একটি দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে অভিশংসিত হওয়ার পর সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হাইয়ের সমর্থনে রাস্তায় নেমেছিল তার বিপুলসংখ্যক সমর্থক। আর এই সমর্থকদের রাস্তায় বিক্ষোভ করতে ইন্ধন জুগিয়েছে ডানপন্থী চ্যানেলগুলো। অন্যদিকে বামপন্থী চ্যানেলগুলো বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইউনের বাসভবনের সামনে বিক্ষোভ করতে উৎসাহিত করেছে।
বাক স্বাধীনতার শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম
বাক স্বাধীনতার শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ইউটিউব দিন দিন জনপ্রিয় হচ্ছে। দক্ষিণ কোরিয়ার হ্যানিয়াং ইউনিভার্সিটির গণমাধ্যম বিষয়ের অধ্যাপক জং জুন-হি বলেছেন, ‘বেশির ভাগ প্রচলিত গণমাধ্যমগুলো সরকারের সমালোচনা এড়িয়ে চলে। কেউ কেউ রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে আবার কেউ কেউ মামলার ভয়ে সরকারের সমালোচনা করে না।’
এসব কারণে প্রচলিত গণমাধ্যমের ওপর সাধারণ মানুষ আস্থা হারিয়েছে বলে মন্তব্য করেন সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির যোগাযোগের অধ্যাপক রি জুন-উওং। তিনি বলেন, ‘সাধারণ মানুষ এখন ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়েছে ইউটিউবের মতো বিকল্প প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর।’
বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ‘নিউজ ফ্যাক্টরি’
জিওমসন ইজ নাথিং নামের শো করার আগে উপস্থাপক কিম ‘নিউজ ফ্যাক্টরি’ নামের একটি রেডিও শো করতেন। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে সিউলে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিল। কিম ছিলেন সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক নেওয়া উপস্থাপক। সেই অনুষ্ঠানটি মতবিরোধের কারণে সরকার বন্ধ করে দেয়। পরে নিউজ ফ্যাক্টরের আদলে ইউটিউবে ‘জিওমসন ইজ নাথিং’ শুরু করেন কিম।
অধ্যাপক জং জুন-হি বলেন, সংবাদ বিশ্লেষণ ও লাইভ সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে প্রচলিত ছাঁচ ভেঙে ফেলেছেন কিম। তিনি রাজনৈতিক টক শোর ক্ষেত্রেও অনুকরণীয় বৈচিত্র্য এনেছেন।
সিউল সিটি কাউন্সিল ঘোষণা করেছে, তারা টিবিএস রেডিওর বাজেট কমানোর পরিকল্পনা করছে, যাতে নিউজ ফ্যাক্টরির মতো অনুষ্ঠান আর না হয়।
তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সিউলের মেয়র ওহ সে-হুন। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই।’
পতন ও উত্থান
গত বছরের ডিসেম্বরে নিউজ ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেওয়ার পরের মাসেই জিওমসন ইজ নাথিং শুরু করেন কিম। আগের অনুষ্ঠান থেকে নতুন অনুষ্ঠানটির একমাত্র পার্থক্য হচ্ছে অনুষ্ঠানের নাম ও প্রচারের প্ল্যাটফর্ম। এমনকি স্টুডিওটির ডিজাইন পর্যন্ত তিনি নিউজ ফ্যাক্টরির আদলে তৈরি করেছেন।
মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠানটির সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যায়। এটি দক্ষিণ কোরিয়ায় রিয়েল টাইম ভিউয়ের দিক থেকে সবচেয়ে জনপ্রিয় ইউটিউব অনুষ্ঠান।
অধ্যাপক জং বলেন, ‘এই সাফল্যই বলে দেয়, মুক্ত কণ্ঠস্বর কখনো স্তব্ধ করা যায় না।’
উপস্থাপক কিম বলেছেন, ‘আমি দেখিয়ে দিতে চাই যে, রাজনৈতিক কারণে আমার শো বন্ধ করে দেওয়া ভুল ছিল।’
সিএনএন থেকে অনুবাদ করেছেন মারুফ ইসলাম
ড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
১৭ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
১ দিন আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
২ দিন আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
৩ দিন আগে