অর্ণব সান্যাল
ভিডিওস্ট্রিমিং এখন বিনোদন জগতের ব্যবসাক্ষেত্রে অন্যতম উপায় বলে বিবেচিত। ভিডিও কনটেন্ট স্ট্রিমিংয়ের শুরু থেকেই রাজাধিরাজ ছিল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স। কয়েক বছর ধরেই প্রতিষ্ঠানটির একচ্ছত্র আধিপত্যে ধীরে ধীরে ভাগ বসানো শুরু হয়েছিল। এখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, স্ট্রিমিং ব্যবসায় মুকুট হারানোর অবস্থায় চলে গেছে নেটফ্লিক্স। সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যার দিক থেকে এখন সবার ওপরে যে ডিজনি!
করোনার করাঘাতের আগে থেকেই অবশ্য বেজায় অস্থির ছিল স্ট্রিমিং ব্যবসা। এক সময় তো শুরুই হয়ে গেল ‘স্ট্রিমিং ওয়ার’। করোনার লকডাউনে ফুলেফেঁপে ওঠা স্ট্রিমিং ব্যবসা সেই যুদ্ধে বাড়তি রসদ জুগিয়েছিল। যদিও লকডাউনের সংস্কৃতি থেকে বিভিন্ন দেশ বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আয়ের বেলুন চুপসে যায়। তবুও এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, স্ট্রিমিং ব্যবসা এখনো প্রচলিত বিনোদন ব্যবসার জগতে ‘ভালো’ পরিস্থিতিতেই আছে। আর এমন এক প্রেক্ষাপটেই গত মাসের শেষের দিকে নেটফ্লিক্স জানাল, তাদের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ কমে গেছে। চলে এল বিজ্ঞাপনসমৃদ্ধ ভিডিও কনটেন্ট স্ট্রিমিং করার পরিকল্পনা। নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির অনানুষ্ঠানিক মন্দার প্রভাবেই তাদের বিজ্ঞাপন চালু করতে হবে। একই সঙ্গে বিজ্ঞাপনমুক্ত কনটেন্ট দেখার প্যাকেজের দাম বৃদ্ধিরও আলোচনা ওঠে।
এসব সিদ্ধান্তে নেটফ্লিক্স স্ট্রিমিং ওয়ারে পিছিয়ে পড়ল কি না, সেই আলোচনার মধ্যেই এবার ডিজনি জানিয়ে দিল তাদের মোট সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যায় এগিয়ে যাওয়ার খবর। সম্প্রতি ডিজনি জানিয়েছে, তাদের মালিকানায় থাকা মোট তিনটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে মোট সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২২১ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এই তিন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হলো ডিজনি প্লাস, হুলু এবং ইএসপিএন প্লাস। এর মধ্যে শুধু ডিজনি প্লাসে গত প্রান্তিকে নতুন সাবস্ক্রাইবার যুক্ত হয়েছে ১৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন। অর্থাৎ, ডিজনি প্লাসে থাকা ভিডিও কনটেন্ট এখনো দর্শকদের মধ্যে আকর্ষণ তৈরি করে রেখেছে। অন্তত নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রাইবার হারানোর হারের সঙ্গে তুলনা করলে সেটিই বোধ হয়। আর এমন খবরে শেয়ার বাজারে ডিজনির দামও চড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপি ফোরসাইটের বিশ্লেষক পাওলো পেসকাতোরে মনে করেন, মোট সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যায় ডিজনির এগিয়ে যাওয়ার এই ঘটনা চলমান স্ট্রিমিং ওয়ারের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। কারণ, স্ট্রিমিং ব্যবসায় আরও বেশিসংখ্যক সাবস্ক্রাইবার সংগ্রহের সুযোগ এখনো বেশ তাজা। কারণ বিভিন্ন দেশের নিত্যনতুন বাজারে এখনো সমভাবে ঢোকেইনি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো।
নেটফ্লিক্সের বর্তমান সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২২০ মিলিয়নের চেয়ে কিছুটা বেশি। এখানে একটি বিতর্ক অবশ্য উঠছে যে, আসলেই কি নেটফ্লিক্সকে ছাড়িয়ে গেছে ডিজনি? কারণ, ডিজনির মোট সাবস্ক্রাইবার সংখ্যায় তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্ট্রিমিং ওয়েবসাইটের ভাগ আছে। এর মধ্যে ডিজনি প্লাসের আছে ১৫২ মিলিয়ন, ইএসপিন প্লাসের আছে ২২ দশমিক ৮ মিলিয়ন এবং হুলু–তে আছে ৪৬ মিলিয়নের একটু বেশি। অর্থাৎ, চিরাচরিত কনটেন্ট, খেলাধুলা ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ভিডিও কনটেন্ট—সব মিলিয়েই একা নেটফ্লিক্সকে ছাড়িয়েছে ডিজনি। এ ক্ষেত্রে নেটফ্লিক্সকে লড়তে হচ্ছে তিনটির সঙ্গে। শুধু ডিজনি প্লাসের কথা বিবেচনা করলে কিন্তু এখনো এগিয়েই আছে নেটফ্লিক্স।
সমস্যা হলো, স্ট্রিমিং দুনিয়ায় নেটফ্লিক্সের একাধিপত্য দূর করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন একাধিক ‘অস্ত্র’ নিয়ে মাঠে নামছে। ডিজনির দেখাদেখি গত বছরই ওয়ার্নার মিডিয়া ও ডিসকভারিকে ‘এক’ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল মালিক প্রতিষ্ঠান এটিঅ্যান্ডটি। ওয়ার্নারের আগে থেকেই একটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম আছে, নাম এইচবিও ম্যাক্স। ডিসকভারির আছে ডিসকভারি প্লাস। ওয়ার্নারের হাত পাকা উঁচু মানের টিভি সিরিজ তৈরিতে। আর মূলত তথ্যভিত্তিক কনটেন্ট তৈরিতে দক্ষ ডিসকভারি। অর্থাৎ, দুটি ভিন্ন ঘরানার ভিডিও কনটেন্ট তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্রিমিং ব্যবসায় এসে এক হয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, মিডিয়া ব্যবসায় আরও অনেক ছোট স্ট্রিমিং কোম্পানির একীভূত হতে পারে ভবিষ্যতে। ডিজনির পাওয়া সাফল্যে তেমন লক্ষণই এখন প্রকট।
সুতরাং, নেটফ্লিক্সের ‘দুর্গম গিরি, কান্তার মরু’ পরিস্থিতি খুব সহসাই শেষ হচ্ছে না। এদিকে স্ট্রিমিং ব্যবসায় সাবস্ক্রিপশন ফি বাড়ানো নিয়ে অব্যাহত আলোচনা শঙ্কা জাগাচ্ছে। আবার যে বিজ্ঞাপনের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে মানুষ স্ট্রিমিং বেছে নিত, সেখানেও আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত। নেটফ্লিক্সের দেখাদেখি এ পথে পা বাড়িয়েছে ডিজনিও। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ডিজনি প্লাসে আগামী ডিসেম্বর থেকে বিজ্ঞাপনসহ কনটেন্ট দেখার প্যাকেজ চালু হবে। এটি মাসে ৮ ডলারে পাওয়া গেলেও বিজ্ঞাপনমুক্ত সেবা পেতে খরচ করতে হবে ১১ ডলার। অথচ এখন বিজ্ঞাপন থেকে রেহাই পেতে ৮ ডলার খরচ করতে হয় ডিজনিতে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিজ্ঞাপন দেখলে স্বাভাবিকভাবেই প্যাকেজ কিছুটা সাশ্রয়ী থাকবে সাধারণ সাবস্ক্রাইবারদের জন্য। তবে বিরক্তিও উৎপাদিত হবে। এতে একদিকে যেমন সাবস্ক্রাইবাররা নিরুৎসাহিত হতে পারে, অন্যদিকে কোপ আসতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক আয়ে। ফলে স্ট্রিমিং ব্যবসায় সাময়িক মন্দা আসার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ব্যবসা, সাবস্ক্রাইবার ও আয় নিয়ে অনেক কথা হলো। এবার আসা যাক, কনটেন্টের বিচারে। ব্যবসা ও সাবস্ক্রাইবারের বিচারে বর্তমানে নেটফ্লিক্স বেকায়দায় আছে, তা সত্যি। কিন্তু এই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি যে সবচেয়ে পুরোনো খেলোয়াড়, সেটিও সমভাবে সত্য। কনটেন্টের বিচারে গেলে নেটফ্লিক্সকে একেবারে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া এখনো কঠিন ডিজনি–আমাজনদের জন্য। নানা ভাষা মিলিয়ে নেটফ্লিক্সের লাইব্রেরিতে ভিডিও কনটেন্টের সংখ্যা হাজার হাজার। এর ক্যাটালগে দেড় হাজারেরও বেশি অরিজিনাল ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্র আছে। ওয়েব সিরিজ ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ থেকে শুরু করে ধুমধাড়াক্কা অ্যাকশন ফিল্ম ‘দ্য গ্রে ম্যান’—নেটফ্লিক্সের ঝুড়িতে অভাব নেই কোনো কিছুরই। আছে স্কুইড গেম, সেক্রেড গেমস বা দ্য ক্রাউন–এর মতো সাড়া জাগানো কনটেন্ট। এমি অ্যাওয়ার্ড থেকে অস্কার—সব জেতাও হয়ে গেছে। চলতি বছরই কমপক্ষে ১০০ নতুন চলচ্চিত্র মুক্তির পরিকল্পনা আছে নেটফ্লিক্সের। প্রতি সপ্তাহেই নতুন ছবি দর্শকদের দেখাতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। আর এই নিত্য–নতুন অরিজিনাল সিরিজ ও চলচ্চিত্রের আধিক্যের কারণেই কনটেন্টের বিচারে নেটফ্লিক্সকে ঠিক পেছনে ফেলতে পারছে না বাজারে থাকা অন্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। সদ্যই মোট সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যায় এগিয়ে যাওয়া ডিজনির সঙ্গে তুলনাতেই যাওয়া যাক। অরিজিনাল সিরিজ বা চলচ্চিত্র—দুই ঘরানাতেই এখনো স্টার ওয়ারস বা মার্ভেলের তৈরি কাহিনির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে ডিজনি প্লাসকে (যেমন: দ্য মান্ডালোরিয়ান বা মিজ মার্ভেল)। ফলে সামগ্রিক কনটেন্টে বৈচিত্র্য নেই তেমন। ঘরের বাচ্চাদের কথা মাথায় নিলে তাই ডিজনি প্লাসের গ্রাহক হয়তো আপনি হবেনই। কিন্তু যদি একান্তই নিজের বিনোদনের (তা সে শৈল্পিক হোক বা জনপ্রিয় ধারার) জন্য ওটিটি প্ল্যাটফর্মের গ্রাহক হতে চান, তবে নেটফ্লিক্সকে অগ্রাহ্য করা সত্যিই ঢের কঠিন!
আর সে কারণেই স্ট্রিমিং ওয়ারে সাময়িকভাবে এগিয়ে গেলেও আদতে স্বস্তি পাচ্ছে না ডিজনি। ওদিকে ঈষৎ অস্বস্তিতে থাকলেও নেটফ্লিক্স পাচ্ছে ছন্দে ফেরার সুযোগ। কারণ কে না জানে, ওস্তাদের মার শেষ রাতে!
তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, বিবিসি, সিবিএস নিউজ, ডেডলাইন ডট কম, সিনেট, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এক্সিওস ডট কম ও দ্য গার্ডিয়ান
ভিডিওস্ট্রিমিং এখন বিনোদন জগতের ব্যবসাক্ষেত্রে অন্যতম উপায় বলে বিবেচিত। ভিডিও কনটেন্ট স্ট্রিমিংয়ের শুরু থেকেই রাজাধিরাজ ছিল ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্স। কয়েক বছর ধরেই প্রতিষ্ঠানটির একচ্ছত্র আধিপত্যে ধীরে ধীরে ভাগ বসানো শুরু হয়েছিল। এখন অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, স্ট্রিমিং ব্যবসায় মুকুট হারানোর অবস্থায় চলে গেছে নেটফ্লিক্স। সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যার দিক থেকে এখন সবার ওপরে যে ডিজনি!
করোনার করাঘাতের আগে থেকেই অবশ্য বেজায় অস্থির ছিল স্ট্রিমিং ব্যবসা। এক সময় তো শুরুই হয়ে গেল ‘স্ট্রিমিং ওয়ার’। করোনার লকডাউনে ফুলেফেঁপে ওঠা স্ট্রিমিং ব্যবসা সেই যুদ্ধে বাড়তি রসদ জুগিয়েছিল। যদিও লকডাউনের সংস্কৃতি থেকে বিভিন্ন দেশ বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই আয়ের বেলুন চুপসে যায়। তবুও এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, স্ট্রিমিং ব্যবসা এখনো প্রচলিত বিনোদন ব্যবসার জগতে ‘ভালো’ পরিস্থিতিতেই আছে। আর এমন এক প্রেক্ষাপটেই গত মাসের শেষের দিকে নেটফ্লিক্স জানাল, তাদের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ কমে গেছে। চলে এল বিজ্ঞাপনসমৃদ্ধ ভিডিও কনটেন্ট স্ট্রিমিং করার পরিকল্পনা। নেটফ্লিক্স কর্তৃপক্ষের বক্তব্য ছিল, সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং বর্তমান বিশ্ব অর্থনীতির অনানুষ্ঠানিক মন্দার প্রভাবেই তাদের বিজ্ঞাপন চালু করতে হবে। একই সঙ্গে বিজ্ঞাপনমুক্ত কনটেন্ট দেখার প্যাকেজের দাম বৃদ্ধিরও আলোচনা ওঠে।
এসব সিদ্ধান্তে নেটফ্লিক্স স্ট্রিমিং ওয়ারে পিছিয়ে পড়ল কি না, সেই আলোচনার মধ্যেই এবার ডিজনি জানিয়ে দিল তাদের মোট সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যায় এগিয়ে যাওয়ার খবর। সম্প্রতি ডিজনি জানিয়েছে, তাদের মালিকানায় থাকা মোট তিনটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে মোট সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২২১ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এই তিন স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম হলো ডিজনি প্লাস, হুলু এবং ইএসপিএন প্লাস। এর মধ্যে শুধু ডিজনি প্লাসে গত প্রান্তিকে নতুন সাবস্ক্রাইবার যুক্ত হয়েছে ১৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন। অর্থাৎ, ডিজনি প্লাসে থাকা ভিডিও কনটেন্ট এখনো দর্শকদের মধ্যে আকর্ষণ তৈরি করে রেখেছে। অন্তত নেটফ্লিক্সের সাবস্ক্রাইবার হারানোর হারের সঙ্গে তুলনা করলে সেটিই বোধ হয়। আর এমন খবরে শেয়ার বাজারে ডিজনির দামও চড়েছে প্রায় ৬ শতাংশ।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপি ফোরসাইটের বিশ্লেষক পাওলো পেসকাতোরে মনে করেন, মোট সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যায় ডিজনির এগিয়ে যাওয়ার এই ঘটনা চলমান স্ট্রিমিং ওয়ারের বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। কারণ, স্ট্রিমিং ব্যবসায় আরও বেশিসংখ্যক সাবস্ক্রাইবার সংগ্রহের সুযোগ এখনো বেশ তাজা। কারণ বিভিন্ন দেশের নিত্যনতুন বাজারে এখনো সমভাবে ঢোকেইনি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো।
নেটফ্লিক্সের বর্তমান সাবস্ক্রাইবার সংখ্যা ২২০ মিলিয়নের চেয়ে কিছুটা বেশি। এখানে একটি বিতর্ক অবশ্য উঠছে যে, আসলেই কি নেটফ্লিক্সকে ছাড়িয়ে গেছে ডিজনি? কারণ, ডিজনির মোট সাবস্ক্রাইবার সংখ্যায় তিনটি ভিন্ন ভিন্ন স্ট্রিমিং ওয়েবসাইটের ভাগ আছে। এর মধ্যে ডিজনি প্লাসের আছে ১৫২ মিলিয়ন, ইএসপিন প্লাসের আছে ২২ দশমিক ৮ মিলিয়ন এবং হুলু–তে আছে ৪৬ মিলিয়নের একটু বেশি। অর্থাৎ, চিরাচরিত কনটেন্ট, খেলাধুলা ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ভিডিও কনটেন্ট—সব মিলিয়েই একা নেটফ্লিক্সকে ছাড়িয়েছে ডিজনি। এ ক্ষেত্রে নেটফ্লিক্সকে লড়তে হচ্ছে তিনটির সঙ্গে। শুধু ডিজনি প্লাসের কথা বিবেচনা করলে কিন্তু এখনো এগিয়েই আছে নেটফ্লিক্স।
সমস্যা হলো, স্ট্রিমিং দুনিয়ায় নেটফ্লিক্সের একাধিপত্য দূর করতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখন একাধিক ‘অস্ত্র’ নিয়ে মাঠে নামছে। ডিজনির দেখাদেখি গত বছরই ওয়ার্নার মিডিয়া ও ডিসকভারিকে ‘এক’ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল মালিক প্রতিষ্ঠান এটিঅ্যান্ডটি। ওয়ার্নারের আগে থেকেই একটি স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম আছে, নাম এইচবিও ম্যাক্স। ডিসকভারির আছে ডিসকভারি প্লাস। ওয়ার্নারের হাত পাকা উঁচু মানের টিভি সিরিজ তৈরিতে। আর মূলত তথ্যভিত্তিক কনটেন্ট তৈরিতে দক্ষ ডিসকভারি। অর্থাৎ, দুটি ভিন্ন ঘরানার ভিডিও কনটেন্ট তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান স্ট্রিমিং ব্যবসায় এসে এক হয়ে যাচ্ছে। বাণিজ্য বিশ্লেষকেরা বলছেন, মিডিয়া ব্যবসায় আরও অনেক ছোট স্ট্রিমিং কোম্পানির একীভূত হতে পারে ভবিষ্যতে। ডিজনির পাওয়া সাফল্যে তেমন লক্ষণই এখন প্রকট।
সুতরাং, নেটফ্লিক্সের ‘দুর্গম গিরি, কান্তার মরু’ পরিস্থিতি খুব সহসাই শেষ হচ্ছে না। এদিকে স্ট্রিমিং ব্যবসায় সাবস্ক্রিপশন ফি বাড়ানো নিয়ে অব্যাহত আলোচনা শঙ্কা জাগাচ্ছে। আবার যে বিজ্ঞাপনের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে মানুষ স্ট্রিমিং বেছে নিত, সেখানেও আসতে পারে নতুন সিদ্ধান্ত। নেটফ্লিক্সের দেখাদেখি এ পথে পা বাড়িয়েছে ডিজনিও। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ডিজনি প্লাসে আগামী ডিসেম্বর থেকে বিজ্ঞাপনসহ কনটেন্ট দেখার প্যাকেজ চালু হবে। এটি মাসে ৮ ডলারে পাওয়া গেলেও বিজ্ঞাপনমুক্ত সেবা পেতে খরচ করতে হবে ১১ ডলার। অথচ এখন বিজ্ঞাপন থেকে রেহাই পেতে ৮ ডলার খরচ করতে হয় ডিজনিতে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিজ্ঞাপন দেখলে স্বাভাবিকভাবেই প্যাকেজ কিছুটা সাশ্রয়ী থাকবে সাধারণ সাবস্ক্রাইবারদের জন্য। তবে বিরক্তিও উৎপাদিত হবে। এতে একদিকে যেমন সাবস্ক্রাইবাররা নিরুৎসাহিত হতে পারে, অন্যদিকে কোপ আসতে পারে প্রতিষ্ঠানগুলোর সামগ্রিক আয়ে। ফলে স্ট্রিমিং ব্যবসায় সাময়িক মন্দা আসার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
ব্যবসা, সাবস্ক্রাইবার ও আয় নিয়ে অনেক কথা হলো। এবার আসা যাক, কনটেন্টের বিচারে। ব্যবসা ও সাবস্ক্রাইবারের বিচারে বর্তমানে নেটফ্লিক্স বেকায়দায় আছে, তা সত্যি। কিন্তু এই ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানটি যে সবচেয়ে পুরোনো খেলোয়াড়, সেটিও সমভাবে সত্য। কনটেন্টের বিচারে গেলে নেটফ্লিক্সকে একেবারে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেওয়া এখনো কঠিন ডিজনি–আমাজনদের জন্য। নানা ভাষা মিলিয়ে নেটফ্লিক্সের লাইব্রেরিতে ভিডিও কনটেন্টের সংখ্যা হাজার হাজার। এর ক্যাটালগে দেড় হাজারেরও বেশি অরিজিনাল ওয়েব সিরিজ ও চলচ্চিত্র আছে। ওয়েব সিরিজ ‘স্ট্রেঞ্জার থিংস’ থেকে শুরু করে ধুমধাড়াক্কা অ্যাকশন ফিল্ম ‘দ্য গ্রে ম্যান’—নেটফ্লিক্সের ঝুড়িতে অভাব নেই কোনো কিছুরই। আছে স্কুইড গেম, সেক্রেড গেমস বা দ্য ক্রাউন–এর মতো সাড়া জাগানো কনটেন্ট। এমি অ্যাওয়ার্ড থেকে অস্কার—সব জেতাও হয়ে গেছে। চলতি বছরই কমপক্ষে ১০০ নতুন চলচ্চিত্র মুক্তির পরিকল্পনা আছে নেটফ্লিক্সের। প্রতি সপ্তাহেই নতুন ছবি দর্শকদের দেখাতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। আর এই নিত্য–নতুন অরিজিনাল সিরিজ ও চলচ্চিত্রের আধিক্যের কারণেই কনটেন্টের বিচারে নেটফ্লিক্সকে ঠিক পেছনে ফেলতে পারছে না বাজারে থাকা অন্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। সদ্যই মোট সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যায় এগিয়ে যাওয়া ডিজনির সঙ্গে তুলনাতেই যাওয়া যাক। অরিজিনাল সিরিজ বা চলচ্চিত্র—দুই ঘরানাতেই এখনো স্টার ওয়ারস বা মার্ভেলের তৈরি কাহিনির ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে ডিজনি প্লাসকে (যেমন: দ্য মান্ডালোরিয়ান বা মিজ মার্ভেল)। ফলে সামগ্রিক কনটেন্টে বৈচিত্র্য নেই তেমন। ঘরের বাচ্চাদের কথা মাথায় নিলে তাই ডিজনি প্লাসের গ্রাহক হয়তো আপনি হবেনই। কিন্তু যদি একান্তই নিজের বিনোদনের (তা সে শৈল্পিক হোক বা জনপ্রিয় ধারার) জন্য ওটিটি প্ল্যাটফর্মের গ্রাহক হতে চান, তবে নেটফ্লিক্সকে অগ্রাহ্য করা সত্যিই ঢের কঠিন!
আর সে কারণেই স্ট্রিমিং ওয়ারে সাময়িকভাবে এগিয়ে গেলেও আদতে স্বস্তি পাচ্ছে না ডিজনি। ওদিকে ঈষৎ অস্বস্তিতে থাকলেও নেটফ্লিক্স পাচ্ছে ছন্দে ফেরার সুযোগ। কারণ কে না জানে, ওস্তাদের মার শেষ রাতে!
তথ্যসূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, বিবিসি, সিবিএস নিউজ, ডেডলাইন ডট কম, সিনেট, দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস, এক্সিওস ডট কম ও দ্য গার্ডিয়ান
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
৭ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগে