জাহাঙ্গীর আলম, ঢাকা
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ এখন রাজপথ ছাড়িয়ে নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাপক ধরপাকড় ও পুলিশি অ্যাকশনের পর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়েছে। যুদ্ধবিরতির দাবিতে এ বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে পুলিশ ৫৫০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। কোনোভাবেই বিক্ষোভ ঠেকাতে পারছে না প্রশাসন।
সর্বশেষ শনিবার (২৭ এপ্রিল) ওয়াশিংটন হিল্টনে আয়োজিত হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টদের ডিনারে আবারও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় জো বাইডেনকে। সেখানেও বাইডেনের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সেলিব্রিটি। বিক্ষোভকারীরা ‘তোমার লজ্জা হয় না!’ বলে স্লোগান দিয়ে আমন্ত্রিতদের স্বাগত জানান। কোড পিংক নামে একটি সংগঠনের আয়োজনে ওই বিক্ষোভে ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’, ‘যুদ্ধবিরতি’, ‘জেনোসাইড জো’, ‘পশ্চিমা গণমাধ্যম, তোমাদের জন্য লজ্জা, তোমরা গণহত্যা গোপন করছ’।
এর আগে রমজানে হোয়াইট হাউসে নিয়মিত ইফতার মাহফিল বর্জন করেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নেতারা। যেখানে বেশ কয়েকটি সুইং স্টেটে মুসলিম ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফল নির্ধারক এই মুসলিম ভোটাররা এরই মধ্যে বাইডেনকে হুমকি দিয়ে রেখেছেন।
পরিস্থিতি যখন এ-ই, এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে খুবই উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ট্রাম্প তাঁর উত্থানের মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে যে ট্রাম্প কার্ডটি আগে খেলেছিলেন, সেটির ধার কমে আসছে। তিনি রক্ষণশীলদের রাজপুত্র হয়ে থাকাটা ভোটে জেতার নিশ্চয়তা হিসেবে আর দেখছেন না।
গত বছরের সেপ্টেম্বরেই ট্রাম্প তাঁর এবারের নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল নির্ধারণে সরাসরি গর্ভপাতের পক্ষে কথা বলেছেন। যদিও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থীরা রক্ষণশীলদের মধ্যে তথাকথিত প্রাণ-প্রকৃতিবাদীদের মন জয় করতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাতের বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত আইনে স্বাক্ষর করেছেন।
বহু বছর ধরে মার্কিন রাজনীতিতে গর্ভপাতের ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঙ্গরাজ্যে বড় নির্ধারক হিসেবে থেকেছে। তবে এখন পরিস্থিতি যে বদলেছে, সেটি রিপাবলিকানরা টের পাচ্ছেন। ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ট্রাম্প বিষয়টি ধরতে না পারলেও অনেক সচেতন রিপাবলিকানের চাপেই নাকি তিনি গর্ভপাত ইস্যুতে সাবধানে কথা বলা শুরু করেছেন। পার্টির মনোনয়নের দৌড়ে উতরে গিয়ে বাস্তব পরিস্থিতির শিক্ষা তিনি নিশ্চয়ই পেয়েছেন।
তবে একই সঙ্গে আলোচিত রো বনাম ওয়েড মামলার ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হয়ে যাওয়ার ক্রেডিটও নিচ্ছেন ট্রাম্প। কারণ, তাঁর আমলে নিয়োগ পাওয়া দুই বিচারপতি এ রায় দেন। রো বনাম ওয়েড মামলার রায়েই গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া হয়েছিল।
এবার সামনে এসেছে আরও কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভূরাজনীতি, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ ক্যাম্পেইন মার খেতে বসেছে জেনেও ট্রাম্প রাজপথের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন এবং গ্রাহ্য করছেন।
গত মার্চে একটি ইসরায়েলি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতি নিয়ে কিছুটা সমালোচনা করেছেন। এই যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই খুব সতর্ক হতে হবে। কারণ, গাজায় বোমা ফেলার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার কারণে ইসরায়েল দ্রুত বিশ্বব্যাপী সমর্থন হারাচ্ছে।
সম্প্রতি পেনসিলভানিয়ায় এক নির্বাচনী সমাবেশে অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সম্মুখীন হন ট্রাম্প। তাঁর সমর্থকদের মধ্য থেকেই একদল ‘জেনোসাইড জো’ বলে স্লোগান দেয়। মূলত মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা বোঝাতে এই বিশেষণ ব্যবহার করেন তাঁরা।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে এভাবে বিশেষায়িত করছেন। বিক্ষোভকারী এবং প্রগতিশীল সবার অভিযোগ, গাজায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধে জো বাইডেন যথেষ্ট করছেন না। তিনি চাইলেই ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করতে পারেন, কিন্তু তিনি করছেন না। এই কারণে তাঁকে ‘গণহত্যার সহযোগী’ বলছেন তাঁরা।
এখনো অভিবাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান পরিবর্তন না করলেও মুসলিমদের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি সম্ভবত নরম করেছেন ট্রাম্প। গতবারের মতো ইসলামভীতির বক্তৃতাবাজি আর শোনা যাচ্ছে না।
স্পষ্টত ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাইডেন বেশ চাপে। বিক্ষোভকারীদের কারণে কোথাও শান্তিতে নির্বাচনী সমাবেশ করতে পারছেন না বাইডেন।
অনেকে বলছেন, এই চাপমুক্তির কৌশল হিসেবে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের দিকে নিতে চেয়েছিলেন বাইডেন। এ কারণেই ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় মৌন সম্মতি দিয়ে গেছেন। এমনকি ইসরায়েলের পাল্টা হামলার স্পষ্ট বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইরানের সঙ্গে কৌশলগত দূরত্ব বজায় রেখেই চলেছে।
এবারের নির্বাচনে—নির্দিষ্ট কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট, অর্থনীতি, অভিবাসন ও গর্ভপাত ইস্যু এবং দুই প্রেসিডেন্টের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা— এই চারটি বিষয়কে প্রধান ফল নির্ধারক বলে মনে করা হলেও ফিলিস্তিন ইস্যু ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ওদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনা এগোচ্ছে। নেতানিয়াহু সরাসরি হামাসকে প্রস্তাব দিয়েছে। ইসরায়েল বলছে, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে রাফাহে তাদের পরিকল্পিত অভিযান স্থগিত হবে। হামাস বলেছে, দুই রাষ্ট্র সমাধানে রাজি হলে এখনই তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি আছে। যুক্তরাষ্ট্রও অনেকগুলো বিকল্প নিয়ে ভাবছে। এর মধ্যে গাজায় প্রশাসনিক ক্ষমতা থেকে হামাসকে বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক বাহিনী রাখা অন্যতম।
এদিকে রক্ষণশীলেরা ট্রাম্পের ওপরই আস্থা রাখছেন। কারণ, তাঁকে তাঁদের কণ্ঠস্বর বলে মনে করছেন। জনতুষ্টিবাদের রমরমার কালে ট্রাম্পের মতো আরও যারা হঠাৎ জননেতা হয়ে উঠেছেন, তাঁরা মূলত ‘একেকটা নৈতিক বিপর্যয়’—এটি জেনেও মানুষ তাঁদের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হতে দেখাটা পীড়াদায়ক হলেও, স্পষ্টত এটি সেক্যুলার রাজনীতিকদের ব্যর্থতা!
ডোনাল্ড ট্রাম্প, হাভিয়ের মিলেই, মেরিল লু পেন, মার্ক রুত্তের মতো নেতারা মূলত সুযোগ সন্ধানী। সেক্যুলারদের ব্যর্থতার সুযোগে সৃষ্টি শূন্যতা পূর্ণ করার একমাত্র বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের কৌশলই হচ্ছে, আপাত অমীমাংসিত প্রশ্নগুলোর পুনরাবৃত্তি করে বিদ্যমান ব্যবস্থার ব্যর্থতার বয়ান হাজির করা। এতে তাঁদের সহায়তা করেন তথাকথিত পেশাদার ইলেকশন ইঞ্জিনিয়াররা।
আবার নরেন্দ্র মোদির মতো কথায় কথায় অ্যাক্রোনিমের ব্যবহার। এটি খুবই চমৎকার সাইকোলজিক্যাল ট্রিক। সামগ্রিক পরিস্থিতির এমন সরলীকরণ এবং এই ধরনের ‘তালিকাভুক্তি’ মানুষের মনে সহজে গেঁথে যায়। সে তুলনায় গভীর সমালোচনামূলক বক্তব্য সাধারণের মর্মমূল পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই হারিয়ে যায়।
এখন দেখার বিষয়, রক্ষণশীলদের এসব সুযোগ সন্ধানী নেতাদের এই রং পাল্টানোর কৌশল কতটা কাজে দেয়। আশার কথা হচ্ছে, গত এক দশকে উগ্র ডানপন্থী ও রক্ষণশীলদের হঠাৎ উত্থান, নিদারুণ অস্বস্তি তৈরি করলেও সেই জোয়ারে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। বাকিটা নির্ভর করছে সেক্যুলার, লিবারেলরা কতটা পরিস্থিতি অনুধাবন করে নিজেদের সময়োপযোগী করে তুলতে পারছেন!
লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক
যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ এখন রাজপথ ছাড়িয়ে নামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েছে। ব্যাপক ধরপাকড় ও পুলিশি অ্যাকশনের পর ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ আরও জোরালো হয়েছে। যুদ্ধবিরতির দাবিতে এ বিক্ষোভে যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। গত এক সপ্তাহে পুলিশ ৫৫০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। কোনোভাবেই বিক্ষোভ ঠেকাতে পারছে না প্রশাসন।
সর্বশেষ শনিবার (২৭ এপ্রিল) ওয়াশিংটন হিল্টনে আয়োজিত হোয়াইট হাউস করেসপন্ডেন্টদের ডিনারে আবারও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় জো বাইডেনকে। সেখানেও বাইডেনের বিরুদ্ধে স্লোগান ওঠে। আমন্ত্রিতদের মধ্যে ছিলেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও সেলিব্রিটি। বিক্ষোভকারীরা ‘তোমার লজ্জা হয় না!’ বলে স্লোগান দিয়ে আমন্ত্রিতদের স্বাগত জানান। কোড পিংক নামে একটি সংগঠনের আয়োজনে ওই বিক্ষোভে ‘ফিলিস্তিনকে মুক্ত করো’, ‘যুদ্ধবিরতি’, ‘জেনোসাইড জো’, ‘পশ্চিমা গণমাধ্যম, তোমাদের জন্য লজ্জা, তোমরা গণহত্যা গোপন করছ’।
এর আগে রমজানে হোয়াইট হাউসে নিয়মিত ইফতার মাহফিল বর্জন করেন যুক্তরাষ্ট্রের মুসলিম নেতারা। যেখানে বেশ কয়েকটি সুইং স্টেটে মুসলিম ভোট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফল নির্ধারক এই মুসলিম ভোটাররা এরই মধ্যে বাইডেনকে হুমকি দিয়ে রেখেছেন।
পরিস্থিতি যখন এ-ই, এর মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে খুবই উল্লেখযোগ্য কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, ট্রাম্প তাঁর উত্থানের মোক্ষম অস্ত্র হিসেবে যে ট্রাম্প কার্ডটি আগে খেলেছিলেন, সেটির ধার কমে আসছে। তিনি রক্ষণশীলদের রাজপুত্র হয়ে থাকাটা ভোটে জেতার নিশ্চয়তা হিসেবে আর দেখছেন না।
গত বছরের সেপ্টেম্বরেই ট্রাম্প তাঁর এবারের নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল নির্ধারণে সরাসরি গর্ভপাতের পক্ষে কথা বলেছেন। যদিও তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান প্রার্থীরা রক্ষণশীলদের মধ্যে তথাকথিত প্রাণ-প্রকৃতিবাদীদের মন জয় করতে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে গর্ভপাতের বিরুদ্ধে প্রস্তাবিত আইনে স্বাক্ষর করেছেন।
বহু বছর ধরে মার্কিন রাজনীতিতে গর্ভপাতের ইস্যুটি গুরুত্বপূর্ণ কিছু অঙ্গরাজ্যে বড় নির্ধারক হিসেবে থেকেছে। তবে এখন পরিস্থিতি যে বদলেছে, সেটি রিপাবলিকানরা টের পাচ্ছেন। ব্যবসায়ী থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ট্রাম্প বিষয়টি ধরতে না পারলেও অনেক সচেতন রিপাবলিকানের চাপেই নাকি তিনি গর্ভপাত ইস্যুতে সাবধানে কথা বলা শুরু করেছেন। পার্টির মনোনয়নের দৌড়ে উতরে গিয়ে বাস্তব পরিস্থিতির শিক্ষা তিনি নিশ্চয়ই পেয়েছেন।
তবে একই সঙ্গে আলোচিত রো বনাম ওয়েড মামলার ঐতিহাসিক রায় সুপ্রিম কোর্টে বাতিল হয়ে যাওয়ার ক্রেডিটও নিচ্ছেন ট্রাম্প। কারণ, তাঁর আমলে নিয়োগ পাওয়া দুই বিচারপতি এ রায় দেন। রো বনাম ওয়েড মামলার রায়েই গর্ভপাতের সাংবিধানিক অধিকার দেওয়া হয়েছিল।
এবার সামনে এসেছে আরও কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ভূরাজনীতি, ‘মেক আমেরিকা গ্রেট অ্যাগেইন’ ক্যাম্পেইন মার খেতে বসেছে জেনেও ট্রাম্প রাজপথের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন এবং গ্রাহ্য করছেন।
গত মার্চে একটি ইসরায়েলি পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নেতানিয়াহুর যুদ্ধনীতি নিয়ে কিছুটা সমালোচনা করেছেন। এই যুদ্ধ দ্রুত শেষ করার তাগিদ দিয়ে ট্রাম্প বলেছিলেন, ইসরায়েলকে অবশ্যই খুব সতর্ক হতে হবে। কারণ, গাজায় বোমা ফেলার ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার কারণে ইসরায়েল দ্রুত বিশ্বব্যাপী সমর্থন হারাচ্ছে।
সম্প্রতি পেনসিলভানিয়ায় এক নির্বাচনী সমাবেশে অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সম্মুখীন হন ট্রাম্প। তাঁর সমর্থকদের মধ্য থেকেই একদল ‘জেনোসাইড জো’ বলে স্লোগান দেয়। মূলত মধ্যপ্রাচ্য সংঘাত নিয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ব্যর্থতা ও নিষ্ক্রিয়তা বোঝাতে এই বিশেষণ ব্যবহার করেন তাঁরা।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে এভাবে বিশেষায়িত করছেন। বিক্ষোভকারী এবং প্রগতিশীল সবার অভিযোগ, গাজায় নির্বিচারে মানুষ হত্যা বন্ধে জো বাইডেন যথেষ্ট করছেন না। তিনি চাইলেই ইসরায়েলকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করতে পারেন, কিন্তু তিনি করছেন না। এই কারণে তাঁকে ‘গণহত্যার সহযোগী’ বলছেন তাঁরা।
এখনো অভিবাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান পরিবর্তন না করলেও মুসলিমদের বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি সম্ভবত নরম করেছেন ট্রাম্প। গতবারের মতো ইসলামভীতির বক্তৃতাবাজি আর শোনা যাচ্ছে না।
স্পষ্টত ফিলিস্তিন ইস্যুতে বাইডেন বেশ চাপে। বিক্ষোভকারীদের কারণে কোথাও শান্তিতে নির্বাচনী সমাবেশ করতে পারছেন না বাইডেন।
অনেকে বলছেন, এই চাপমুক্তির কৌশল হিসেবে মানুষের দৃষ্টি সরিয়ে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের দিকে নিতে চেয়েছিলেন বাইডেন। এ কারণেই ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় মৌন সম্মতি দিয়ে গেছেন। এমনকি ইসরায়েলের পাল্টা হামলার স্পষ্ট বিরোধিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ইরানের সঙ্গে কৌশলগত দূরত্ব বজায় রেখেই চলেছে।
এবারের নির্বাচনে—নির্দিষ্ট কয়েকটি অঙ্গরাজ্যের ইলেকটোরাল ভোট, অর্থনীতি, অভিবাসন ও গর্ভপাত ইস্যু এবং দুই প্রেসিডেন্টের শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা— এই চারটি বিষয়কে প্রধান ফল নির্ধারক বলে মনে করা হলেও ফিলিস্তিন ইস্যু ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ওদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনা এগোচ্ছে। নেতানিয়াহু সরাসরি হামাসকে প্রস্তাব দিয়েছে। ইসরায়েল বলছে, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে রাফাহে তাদের পরিকল্পিত অভিযান স্থগিত হবে। হামাস বলেছে, দুই রাষ্ট্র সমাধানে রাজি হলে এখনই তারা যুদ্ধবিরতিতে রাজি আছে। যুক্তরাষ্ট্রও অনেকগুলো বিকল্প নিয়ে ভাবছে। এর মধ্যে গাজায় প্রশাসনিক ক্ষমতা থেকে হামাসকে বাদ দিয়ে আন্তর্জাতিক বাহিনী রাখা অন্যতম।
এদিকে রক্ষণশীলেরা ট্রাম্পের ওপরই আস্থা রাখছেন। কারণ, তাঁকে তাঁদের কণ্ঠস্বর বলে মনে করছেন। জনতুষ্টিবাদের রমরমার কালে ট্রাম্পের মতো আরও যারা হঠাৎ জননেতা হয়ে উঠেছেন, তাঁরা মূলত ‘একেকটা নৈতিক বিপর্যয়’—এটি জেনেও মানুষ তাঁদের পেছনে ঐক্যবদ্ধ হতে দেখাটা পীড়াদায়ক হলেও, স্পষ্টত এটি সেক্যুলার রাজনীতিকদের ব্যর্থতা!
ডোনাল্ড ট্রাম্প, হাভিয়ের মিলেই, মেরিল লু পেন, মার্ক রুত্তের মতো নেতারা মূলত সুযোগ সন্ধানী। সেক্যুলারদের ব্যর্থতার সুযোগে সৃষ্টি শূন্যতা পূর্ণ করার একমাত্র বিকল্প হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন তাঁরা। তাঁদের কৌশলই হচ্ছে, আপাত অমীমাংসিত প্রশ্নগুলোর পুনরাবৃত্তি করে বিদ্যমান ব্যবস্থার ব্যর্থতার বয়ান হাজির করা। এতে তাঁদের সহায়তা করেন তথাকথিত পেশাদার ইলেকশন ইঞ্জিনিয়াররা।
আবার নরেন্দ্র মোদির মতো কথায় কথায় অ্যাক্রোনিমের ব্যবহার। এটি খুবই চমৎকার সাইকোলজিক্যাল ট্রিক। সামগ্রিক পরিস্থিতির এমন সরলীকরণ এবং এই ধরনের ‘তালিকাভুক্তি’ মানুষের মনে সহজে গেঁথে যায়। সে তুলনায় গভীর সমালোচনামূলক বক্তব্য সাধারণের মর্মমূল পর্যন্ত পৌঁছানোর আগেই হারিয়ে যায়।
এখন দেখার বিষয়, রক্ষণশীলদের এসব সুযোগ সন্ধানী নেতাদের এই রং পাল্টানোর কৌশল কতটা কাজে দেয়। আশার কথা হচ্ছে, গত এক দশকে উগ্র ডানপন্থী ও রক্ষণশীলদের হঠাৎ উত্থান, নিদারুণ অস্বস্তি তৈরি করলেও সেই জোয়ারে ভাটা পড়তে শুরু করেছে। বাকিটা নির্ভর করছে সেক্যুলার, লিবারেলরা কতটা পরিস্থিতি অনুধাবন করে নিজেদের সময়োপযোগী করে তুলতে পারছেন!
লেখক: আজকের পত্রিকার জ্যেষ্ঠ সহসম্পাদক
ড. ইউনূস যখন অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন পুরো জাতি তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিল। তবে তাঁকে পরিষ্কারভাবে এই পরিকল্পনা প্রকাশ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে দেশ শাসন করবেন এবং ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।
৬ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
১ দিন আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১ দিন আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
৩ দিন আগে