অনলাইন ডেস্ক
মহামারি কি তবে শেষ হয়ে গেছে? বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোর সরকার কি এমনটাই ভাবছে? সম্ভাবনা প্রবল। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় হাজারো মানুষ ভিড় করছে রাজনৈতিক সমাবেশে, লক্ষাধিক লোক একসঙ্গে হোলি খেলছে ভারতে, দক্ষিণ কোরিয়ায় বিটিএসের কনসার্ট দেখতে কয়েক হাজার মানুষ স্টেডিয়ামে জড়ো হচ্ছে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মানুষ কোনোরকম সতর্কতা ছাড়াই বিস্ময়করভাবে মহামারির স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে। এমনকি এটা জানার পরও যে—ভাইরাসটির ‘ওমিক্রন’ ধরনটি এখনো এই অঞ্চলের কিছু অংশে রয়ে গেছে।
সাধারণ মানুষ নিয়ম ভাঙার এমন আচরণ মূলত অর্থনৈতিক চাপ এবং মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় একঘেয়ে জীবনযাপনের ক্লান্তি ঘোচাতেই করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
টানা ২৯ সপ্তাহ ঘরে থাকার পর ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন ম্যানিলার বাসিন্দা শেলি ব্যাকলিয়া। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর জানেন, আমাদের এই অবকাশের দরকার আছে। দীর্ঘ লকডাউনের পর এটি আমাদের জন্য এক ধরনের সান্ত্বনা পুরস্কার।’
এমন সান্ত্বনা পুরস্কার ভেবেই হয়তো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়ছেন। কিন্তু করোনাভাইরাস পুরোপুরি দূর হয়ে যাওয়ার আগেই এমন চলাফেরা আবারও বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেজ্ঞদের।
চীনের মূল ভূখণ্ডের উহান থেকে সারা বিশ্বে কোভিড ছড়িয়ে পড়লেও দেশটির দাবি তারা কঠোর লকডাউন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে এত বেশি মানুষের দেশ হয়েও সবচেয়ে কম ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো জোর দিয়ে বলে—প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের দেশ এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সেরা রেকর্ড করেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা চীনের পদ্ধতির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, চীন যদি তাদের সেরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে তাহলে কী করে উহানে মহামারি শুরুর পর তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। কেবল তাই নয়, শুরুর দিকে দেশটির কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়, খাদ্য সরবরাহ চেইন স্থবির হয়ে যায়। একই অবস্থা হয়েছিল প্রায় বিশ্বের সব দেশেই।
কানাডার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক ভিক্টর রামরাজ বলেন, ‘চীনের জিরো-কোভিড নীতি সংকট পরিস্থিতিকে সম্প্রসারিত করবে। হংকং যদি এই নীতি অনুসরণ করে তবে তা তাকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।’
চীন নিয়ন্ত্রিত হংকং একটি সময় পর্যন্ত চীনের মূল ভূখণ্ডের কোভিড নীতিগুলো অনুসরণ করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি চীনের এই অংশটি সেই নীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। এর আগে কঠোর সীমান্ত বিধিনিষেধের কারণে হংকং নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলায় কেবল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়ে।
অনুসৃত নতুন নিয়মানুযায়ী গত সোমবার (২১ মার্চ) হংকংয়ে প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বিশ্বের নয়টি দেশের ওপর থেকে ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন। একই সঙ্গে হংকংয়ের কোভিড নিয়মগুলো আরও শিথিল করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমন এক সময় এই ঘোষণা এল যখন হংকংয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে; প্রতি ১ লাখে ৩ জন মারা যাচ্ছে সেখানে।
তবে প্রায় একইরকম পরিস্থিতি থাকার পরও এশিয়ার প্রায় সর্বত্রই কোভিড নিয়মগুলো তুলে নেওয়া হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে—অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা বা রাজনৈতিক চাপ।
ভারতে কোভিড আক্রান্ত হয়ে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেই দেশেও মাস্ক পরার মতো বাধ্যতামূলক বিষয়গুলোসহ সব ধরনের কোভিড নিয়ম প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। এ দেশে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ মাস্ক পরে না। গত সপ্তাহে দেশটিতে কোটি কোটি মানুষ হোলি উৎসব করেছে।
৬৮ বছর বয়সী দিল্লির বাসিন্দা শিবরমন তাঁর পরিবারসহ প্রায় ১০০ প্রতিবেশীর সঙ্গে এক হোলি পার্টিতে গিয়েছিলেন। সেখানে লোকজন একে অপরের দিকে আবির নিক্ষেপ করছিল এবং সেখানে উপস্থিত সবাই আক্ষরিক অর্থেই কোভিড এবং তৎসংশ্লিষ্ট নিয়মগুলো ভুলেই গিয়েছিল। শিবরমন বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পর আমরা খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে খুব খুশি।’
এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ডও সম্প্রতি বিদেশি পর্যটকদের ওপর করোনা বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। শিথিল করেছে অন্যান্য নিয়মও। ইন্দোনেশিয়াও পর্যটন খাতের প্রাণকেন্দ্র বালিতে বিদেশি পর্যটক প্রবেশের বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। দেশটির পর্যটন খাতের অপরিহার্য এই প্রদেশটি দেশের বাকি অংশের তুলনায় অনেক আগেই উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছিল, ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার আগামী এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া রোজায় কোভিড বিষয়ে নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করবে। তবে বালির হোটেল ড্যাশ সেমিনিয়াকের ম্যানেজার থেরেশিয়া অ্যালেনা বলেছেন, এ নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। তিনি বলেন, ‘এমনটা ঘটবে না। এই বিষয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।’
এ দিকে নিউজিল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা কোভিড বিষয়ে তুলনামূলক কম বিধিনিষেধ আরোপের আহ্বান জানানোর পর এবং বিদেশে বসবাসরত কিউইরা দেশে ফেরার ব্যাপারে জোর দাবি জানানোর পর দেশটির সরকার খানিকটা বেকায়দায় পড়েছে। ফলে দারুণভাবে সংক্রমণ মোকাবিলা করা নিউজিল্যান্ডের জন্য এখন করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ এবং কার্যকর করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এসব অভ্যন্তরীণ চাপ এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগেই, আগামী এপ্রিলে বিদেশি পর্যটকদের জন্য দেশটির দুয়ার উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, ‘আগামী ৪ এপ্রিল থেকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানগুলোতে প্রবেশের জন্য আর ভ্যাকসিন পাসের প্রয়োজন হবে না। এমনকি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুলিশ এবং প্রতিরক্ষা কর্মীদের জন্য নির্ধারিত ভ্যাকসিন পাসও বাদ দেওয়া হবে।’
চলতি মাসেই দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার জানিয়েছে, তারা বাণিজ্য খাতের পুনরুদ্ধারে বেশ কয়েকটি কোভিড নীতিমালা শিথিল করবে। দেশটির বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মুন জা ইন একটি নির্বাচনী প্রচারণার সময় এই নিয়মগুলো শিথিল করার ঘোষণা দেন। তবে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে দক্ষিণ কোরিয়ার হ্যালিম ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জ্যাকব লি বলেন, ‘এটি স্পষ্টভাবে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। সামাজিক দূরত্বের পরিধি বাড়ানো যেখানে সঠিক ও বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত হতো। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার আগে থেকেই দূরত্ব কমিয়ে ফেলার মতো অর্থহীন পদক্ষেপ নিয়েছে।’
পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র জাপানই কেবল কিছু কড়া বিধিনিষেধ বজায় রেখেছে। তবে দেশটিও বিদেশি ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের জন্য কোয়ারেন্টিন বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো পর্যটকদের আবারও স্বাগত জানাচ্ছে। তবে দেশগুলো স্বাস্থ্যবিধির নামে আলাদা কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা এবং করোনাভাইরাস পরীক্ষার বিষয়ে যে অস্পষ্ট নির্দেশিকা রেখেছে তাতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফিলিপাইনেও একই অবস্থা। আগামী মে মাসে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার-সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশটির কোভিড নীতি উপেক্ষা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহেও ম্যানিলায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী লেনি রব্রেডোকে দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছিলেন। বিগত দুই বছরের মধ্যে এটিই ছিল দেশটির সবচেয়ে বড় জনসমাগম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশগুলো খুব বেশি দ্রুততার সঙ্গে কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নিচ্ছে। অথচ জনসমাগমের জায়গাগুলোতে এখনো মাস্কের প্রয়োজন এবং কোভিড বিধিনিষেধগুলো তুলে নেওয়ার আগে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিগুলো পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। কারণ, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে জানা যাচ্ছে, চীনে করোনাভাইরাস আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে অর্থনীতির ক্ষতি করে চীন ঠিক কত দিন জিরো কোভিড নীতি ধরে রাখতে পারবে— সে নিয়ে সংশয় রয়েছে।
চলতি মাসেই চীনের অন্যতম বড় বাণিজ্যকেন্দ্র সাংহাই ও শেনজেনে আবারও নতুন করে ৭০ জনের কাছাকাছি সংখ্যক মানুষ নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এবং এ কারণে শহর দুটির কর্তৃপক্ষ সেখানকার বাসিন্দাদের চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
তবে চীনও কোভিড বিধিনিষেধে পরিবর্তন আনছে এবং আনতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। বিশেষ করে, দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দেশটির কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করার আহ্বান জানানোর পর এই ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
মহামারি কি তবে শেষ হয়ে গেছে? বিশেষ করে এশিয়ার দেশগুলোর সরকার কি এমনটাই ভাবছে? সম্ভাবনা প্রবল। ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় হাজারো মানুষ ভিড় করছে রাজনৈতিক সমাবেশে, লক্ষাধিক লোক একসঙ্গে হোলি খেলছে ভারতে, দক্ষিণ কোরিয়ায় বিটিএসের কনসার্ট দেখতে কয়েক হাজার মানুষ স্টেডিয়ামে জড়ো হচ্ছে।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর মানুষ কোনোরকম সতর্কতা ছাড়াই বিস্ময়করভাবে মহামারির স্বাস্থ্যবিধিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করছে। এমনকি এটা জানার পরও যে—ভাইরাসটির ‘ওমিক্রন’ ধরনটি এখনো এই অঞ্চলের কিছু অংশে রয়ে গেছে।
সাধারণ মানুষ নিয়ম ভাঙার এমন আচরণ মূলত অর্থনৈতিক চাপ এবং মহামারির কারণে দীর্ঘ সময় একঘেয়ে জীবনযাপনের ক্লান্তি ঘোচাতেই করছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
টানা ২৯ সপ্তাহ ঘরে থাকার পর ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় চিড়িয়াখানায় গিয়েছিলেন ম্যানিলার বাসিন্দা শেলি ব্যাকলিয়া। তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর জানেন, আমাদের এই অবকাশের দরকার আছে। দীর্ঘ লকডাউনের পর এটি আমাদের জন্য এক ধরনের সান্ত্বনা পুরস্কার।’
এমন সান্ত্বনা পুরস্কার ভেবেই হয়তো এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েক কোটি মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়ছেন। কিন্তু করোনাভাইরাস পুরোপুরি দূর হয়ে যাওয়ার আগেই এমন চলাফেরা আবারও বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেজ্ঞদের।
চীনের মূল ভূখণ্ডের উহান থেকে সারা বিশ্বে কোভিড ছড়িয়ে পড়লেও দেশটির দাবি তারা কঠোর লকডাউন, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থার কারণে এত বেশি মানুষের দেশ হয়েও সবচেয়ে কম ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। দেশটির রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যমগুলো জোর দিয়ে বলে—প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের দেশ এখন পর্যন্ত সারা বিশ্বে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সেরা রেকর্ড করেছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা চীনের পদ্ধতির যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁরা বলছেন, চীন যদি তাদের সেরা ব্যবস্থা নিয়ে থাকে তাহলে কী করে উহানে মহামারি শুরুর পর তা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ল। কেবল তাই নয়, শুরুর দিকে দেশটির কারখানাগুলো বন্ধ হয়ে যায়, খাদ্য সরবরাহ চেইন স্থবির হয়ে যায়। একই অবস্থা হয়েছিল প্রায় বিশ্বের সব দেশেই।
কানাডার ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অধ্যাপক ভিক্টর রামরাজ বলেন, ‘চীনের জিরো-কোভিড নীতি সংকট পরিস্থিতিকে সম্প্রসারিত করবে। হংকং যদি এই নীতি অনুসরণ করে তবে তা তাকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।’
চীন নিয়ন্ত্রিত হংকং একটি সময় পর্যন্ত চীনের মূল ভূখণ্ডের কোভিড নীতিগুলো অনুসরণ করেছিল। কিন্তু সম্প্রতি চীনের এই অংশটি সেই নীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। এর আগে কঠোর সীমান্ত বিধিনিষেধের কারণে হংকং নিজেদের বিচ্ছিন্ন করে ফেলায় কেবল আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল অর্থনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব পড়ে।
অনুসৃত নতুন নিয়মানুযায়ী গত সোমবার (২১ মার্চ) হংকংয়ে প্রধান নির্বাহী ক্যারি লাম বিশ্বের নয়টি দেশের ওপর থেকে ফ্লাইট নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছেন। একই সঙ্গে হংকংয়ের কোভিড নিয়মগুলো আরও শিথিল করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। এমন এক সময় এই ঘোষণা এল যখন হংকংয়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে; প্রতি ১ লাখে ৩ জন মারা যাচ্ছে সেখানে।
তবে প্রায় একইরকম পরিস্থিতি থাকার পরও এশিয়ার প্রায় সর্বত্রই কোভিড নিয়মগুলো তুলে নেওয়া হচ্ছে। এর মূলে রয়েছে—অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা বা রাজনৈতিক চাপ।
ভারতে কোভিড আক্রান্ত হয়ে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেই দেশেও মাস্ক পরার মতো বাধ্যতামূলক বিষয়গুলোসহ সব ধরনের কোভিড নিয়ম প্রায় অদৃশ্য হয়ে গেছে। এ দেশে খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ মাস্ক পরে না। গত সপ্তাহে দেশটিতে কোটি কোটি মানুষ হোলি উৎসব করেছে।
৬৮ বছর বয়সী দিল্লির বাসিন্দা শিবরমন তাঁর পরিবারসহ প্রায় ১০০ প্রতিবেশীর সঙ্গে এক হোলি পার্টিতে গিয়েছিলেন। সেখানে লোকজন একে অপরের দিকে আবির নিক্ষেপ করছিল এবং সেখানে উপস্থিত সবাই আক্ষরিক অর্থেই কোভিড এবং তৎসংশ্লিষ্ট নিয়মগুলো ভুলেই গিয়েছিল। শিবরমন বলেন, ‘দীর্ঘ সময় পর আমরা খাঁচা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরে খুব খুশি।’
এশিয়ার আরেক দেশ থাইল্যান্ডও সম্প্রতি বিদেশি পর্যটকদের ওপর করোনা বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। শিথিল করেছে অন্যান্য নিয়মও। ইন্দোনেশিয়াও পর্যটন খাতের প্রাণকেন্দ্র বালিতে বিদেশি পর্যটক প্রবেশের বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। দেশটির পর্যটন খাতের অপরিহার্য এই প্রদেশটি দেশের বাকি অংশের তুলনায় অনেক আগেই উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছিল, ইন্দোনেশিয়ার কেন্দ্রীয় সরকার আগামী এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া রোজায় কোভিড বিষয়ে নতুন বিধিনিষেধ ঘোষণা করবে। তবে বালির হোটেল ড্যাশ সেমিনিয়াকের ম্যানেজার থেরেশিয়া অ্যালেনা বলেছেন, এ নিয়ে তিনি চিন্তিত নন। তিনি বলেন, ‘এমনটা ঘটবে না। এই বিষয়ে আমাদের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।’
এ দিকে নিউজিল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা কোভিড বিষয়ে তুলনামূলক কম বিধিনিষেধ আরোপের আহ্বান জানানোর পর এবং বিদেশে বসবাসরত কিউইরা দেশে ফেরার ব্যাপারে জোর দাবি জানানোর পর দেশটির সরকার খানিকটা বেকায়দায় পড়েছে। ফলে দারুণভাবে সংক্রমণ মোকাবিলা করা নিউজিল্যান্ডের জন্য এখন করোনা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ এবং কার্যকর করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
এসব অভ্যন্তরীণ চাপ এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ড নির্ধারিত সময়ের কয়েক মাস আগেই, আগামী এপ্রিলে বিদেশি পর্যটকদের জন্য দেশটির দুয়ার উন্মুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্ন বলেছেন, ‘আগামী ৪ এপ্রিল থেকে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত স্থানগুলোতে প্রবেশের জন্য আর ভ্যাকসিন পাসের প্রয়োজন হবে না। এমনকি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুলিশ এবং প্রতিরক্ষা কর্মীদের জন্য নির্ধারিত ভ্যাকসিন পাসও বাদ দেওয়া হবে।’
চলতি মাসেই দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার জানিয়েছে, তারা বাণিজ্য খাতের পুনরুদ্ধারে বেশ কয়েকটি কোভিড নীতিমালা শিথিল করবে। দেশটির বিদায়ী রাষ্ট্রপতি মুন জা ইন একটি নির্বাচনী প্রচারণার সময় এই নিয়মগুলো শিথিল করার ঘোষণা দেন। তবে এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে দক্ষিণ কোরিয়ার হ্যালিম ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ জ্যাকব লি বলেন, ‘এটি স্পষ্টভাবে একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল। সামাজিক দূরত্বের পরিধি বাড়ানো যেখানে সঠিক ও বৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত হতো। কিন্তু দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার আগে থেকেই দূরত্ব কমিয়ে ফেলার মতো অর্থহীন পদক্ষেপ নিয়েছে।’
পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র জাপানই কেবল কিছু কড়া বিধিনিষেধ বজায় রেখেছে। তবে দেশটিও বিদেশি ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থীদের জন্য কোয়ারেন্টিন বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করছে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলো পর্যটকদের আবারও স্বাগত জানাচ্ছে। তবে দেশগুলো স্বাস্থ্যবিধির নামে আলাদা কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা এবং করোনাভাইরাস পরীক্ষার বিষয়ে যে অস্পষ্ট নির্দেশিকা রেখেছে তাতে হতাশা ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফিলিপাইনেও একই অবস্থা। আগামী মে মাসে অনুষ্ঠেয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার-সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশটির কোভিড নীতি উপেক্ষা করা হচ্ছে। গত সপ্তাহেও ম্যানিলায় প্রেসিডেন্ট প্রার্থী লেনি রব্রেডোকে দেখতে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেছিলেন। বিগত দুই বছরের মধ্যে এটিই ছিল দেশটির সবচেয়ে বড় জনসমাগম।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশগুলো খুব বেশি দ্রুততার সঙ্গে কোভিড বিধিনিষেধ তুলে নিচ্ছে। অথচ জনসমাগমের জায়গাগুলোতে এখনো মাস্কের প্রয়োজন এবং কোভিড বিধিনিষেধগুলো তুলে নেওয়ার আগে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিগুলো পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। কারণ, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর খবরে জানা যাচ্ছে, চীনে করোনাভাইরাস আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে অর্থনীতির ক্ষতি করে চীন ঠিক কত দিন জিরো কোভিড নীতি ধরে রাখতে পারবে— সে নিয়ে সংশয় রয়েছে।
চলতি মাসেই চীনের অন্যতম বড় বাণিজ্যকেন্দ্র সাংহাই ও শেনজেনে আবারও নতুন করে ৭০ জনের কাছাকাছি সংখ্যক মানুষ নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এবং এ কারণে শহর দুটির কর্তৃপক্ষ সেখানকার বাসিন্দাদের চলাচলের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে।
তবে চীনও কোভিড বিধিনিষেধে পরিবর্তন আনছে এবং আনতে পারে বলেই বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন। বিশেষ করে, দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং দেশটির কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙা করার আহ্বান জানানোর পর এই ধারণা আরও দৃঢ় হয়েছে।
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে অনুবাদ করেছেন আব্দুর রহমান
সম্প্রতি দুই বিলিয়ন ডলার মূল্যের মার্কিন ডলারনির্ভর বন্ড বিক্রি করেছে চীন। গত তিন বছরের মধ্যে এবারই প্রথম দেশটি এমন উদ্যোগ নিয়েছে। ঘটনাটি বিশ্লেষকদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তাঁরা মনে করছেন, এই উদ্যোগের মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে একটি বার্তা দিয়েছে চীন।
১২ ঘণ্টা আগেএকটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
১৯ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৫ দিন আগে