আব্দুর রহমান
ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে ৯২ বছর হয়ে গেল। তবে এই ফুটবল বিশ্বকাপ কেবলই খেলা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিও। যেমন রাশিয়া বিশ্বকাপকে দেশটি ব্যবহার করেছে পশ্চিমা বিশ্বের অবরোধের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে, দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপকে ব্যবহার করেছে অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে। ব্রাজিল ব্যবহার করেছে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত সরকারকে দেশের মানুষের চোখে ভালো সাজাতে। তবে ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনায় আয়োজিত বিশ্বকাপকে দেশটির তৎকালীন স্বৈরশাসক যেভাবে ব্যবহার করেছে, তা আর কোনো দেশের শাসকই পারেনি!
প্রায় এক যুগ আগেই নির্ধারিত ছিল যে, ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ হবে আর্জেন্টিনায়। কিন্তু তখন কেউই জানত না যে বিশ্বকাপের সময় দেশটির ক্ষমতা দখল করে থাকবে এক কুখ্যাত স্বৈরশাসক। সেই স্বৈরশাসক বিশ্বকাপকে হাতিয়ার করে দেশে চলমান দুর্নীতি, খুন-গুম, অর্থনৈতিক সংকট, গণতন্ত্রহীনতা ইত্যাদি থেকে দেশ ও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে দেবে, তা কেউই হয়তো সেভাবে অনুমান করতে পারেনি। কিন্তু এমনটাই হয়েছে।
ঘটনার শুরু ১৯৭৬ সালে। সেবারের মার্চে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইসাবেলা পেরনকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল জর্জ রাফায়েল ভিদেলা। ক্ষমতা দখলের পরপরই শুরু হয় দমন-পীড়ন। গুম-খুন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তাঁর শাসনামলে ৩০ হাজার মানুষ স্রেফ গায়েব হয়ে গেছে। তারা আর কখনো ফেরেনি।
সাধারণ জনগণকে স্বাধীনভাবে রাস্তায় চলাফেরা করতেও দেওয়া হতো না। বের হলেই চলত জিজ্ঞাসাবাদ-গ্রেপ্তার। ছাড়া পেতে ঘুষ দিতে হতো জান্তা সদস্যদের। কেউ সামান্য প্রতিবাদ করলেই তুলে নিয়ে যাওয়া হতো, নির্যাতন করা হতো সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন কার্যালয়ে বন্দী করে। সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো কঠোর হাতে।
এত সব করেও দেশের অর্থনীতিকে বশে রাখতে পারছিলেন না ভিদেলা। এই সময়ই তাঁর হাতে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে ধরা দেয় ১৯৭৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন। এ বিষয়ে ভিদেলাকে উৎসাহিত করেন ১৯৭৬ সালের সেনা অভ্যুত্থানের অন্যতম কুশীলব অ্যাডমিরাল এমিলো মাসেরা। তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্টের আয়োজন বিশ্বকে দেখাবে যে আর্জেন্টিনা একটি বিশ্বস্ত দেশ, বড় ধরনের প্রকল্প পরিচালনায় সক্ষম।’
ঠান্ডা মাথার শীতল-ক্রূর চাহনির এই স্বৈরশাসক ফুটবল পছন্দ করতেন না। খেলা তো দূরের কথা, তিনি কখনো ফুটবল খেলা দেখেছেন—এমনটাও কেউ বলতে পারে না। যাহোক, এই অবস্থায় ফুটবল বিশ্বকাপকে তিনি তাঁর ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা এবং জনগণসহ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর এক অনন্য সুযোগ হিসেবে দেখেন। তবে তাঁর এই ইচ্ছায় বাদ সাধে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম অনুযায়ী কোনো দেশের সরকার সরাসরি বিশ্বকাপ আয়োজনে জড়িত থাকতে পারবে না। তাই রাতারাতি ভিদেলা একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন এবং দায়িত্ব দেন বিশ্বকাপ আয়োজনের। এমনকি তাঁকে সে সময় সতর্ক করা হয়েছিল—এই আয়োজনের ফলে দেশ দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ভিদেলা কারও কথায় কান দেননি।
শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। রাজধানী বুয়েনস এইরেসে নির্মাণ করা হয় এস্তাদিও মনুমেন্তাল। ৬৭ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে গিয়ে সেখানকার কয়েক হাজার বস্তিবাসীকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদ করা হয়। রাস্তাঘাট চওড়া করতে উচ্ছেদ করা হয় আরও কয়েক হাজার মানুষকে। খেলার ভেন্যুগুলোর আশপাশ থেকে গরিব লোকদের বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করা হয়। এই নিপীড়িত মানুষগুলোর আওয়াজ বিশ্বের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। কারণ, ভিদেলা দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর গলাও চেপে ধরেছিলেন দৃঢ় হস্তে। সংবাদমাধ্যমগুলো কেবল সেটিই প্রকাশ করতে পারত, যা জান্তা বাহিনী অনুমোদন করত। সংবাদমাধ্যমগুলোকে ‘আপনার আর্জেন্টিনাকে রক্ষা করুন’, ‘বিশ্বকে সত্য দেখিয়ে দাও’—এমন স্লোগান ও মোটিফকে কেন্দ্র করে সংবাদ ছাপাতে বাধ্য করা হতো।
কেবল তা-ই নয়, ভিদেলা সরকার মার্কিন জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান বারসন-মার্স্টেলারকে ১০ লাখ ডলার চুক্তিতে নিয়োগ করেছিল। জান্তা সরকারের প্রত্যাশা ছিল—আর্জেন্টিনার বাইরে দেশ ও সরকারের প্রতি আস্থা ও সদিচ্ছার বিষয়টি প্রচারে সহায়তা করবে তারা। তাদের মূল কাজ ছিল ‘স্থিতিশীল’ ও ‘উন্নয়নশীল’ আর্জেন্টিনার একটি ‘নয়া চিত্র’ তুলে ধরা। যে পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিশ্বকাপ। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে ভিদেলা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারের জবাব দেওয়ার জন্যও দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।
ভিদেলা যে শুধু বন্দুকের জোরে এমনটা করছিলেন, তা কিন্তু নয়। ফিফার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ব্রাজিলের নাগরিক জোয়াঁও হ্যাভেলঞ্জ এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারও তাল দিয়েছিলেন ভিদেলার সঙ্গে। বিশ্বকাপ শুরুর সপ্তাহখানেক আগে ২৩ মে ভিদেলার হয়ে ওকালতি করেন ফিফার প্রেসিডেন্ট। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি হতাশ নই, বরং আমি গর্বিত যে আর্জেন্টিনার সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো ছিল, তা দারুণভাবে সামলে নিয়েছে।’ আর হেনরি কিসিঞ্জার তো বিশ্বকাপ চলাকালে আর্জেন্টিনায় উপস্থিত হয়ে ভিদেলার সঙ্গে থেকে সেমি এবং ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করেন!
অবশ্য স্বৈরশাসকের বিশ্বকাপ আয়োজনের বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি অনেকেই। এ নিয়ে ১৯৭৭ সালের শেষ দিকে একদল ফরাসি সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী আর্জেন্টিনায় বিশ্বকাপ আয়োজনের বিরোধিতা করে ‘অর্গানাইজিং কমিটি ফর দ্য বয়কট অব দ্য আর্জেন্টিনা ওয়ার্ল্ড কাপ’ প্রতিষ্ঠা করেন, যার ফরাসি নামের সংক্ষেপ ছিল সিওবিএ। সে সময় ফ্রান্স ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন মিশেল প্লাতিনি। সংগঠনটি প্লাতিনি এবং ফরাসি ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অনুরোধ করে, যেন তারা আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে না যায়। কেবল ফ্রান্সেই নয়, সংগঠনটি ইতালি, স্পেন, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ডকেও অনুরোধ করেছিল অংশ না নিতে। এমনকি একাধিক ব্যঙ্গাত্মক পোস্টারও ছড়িয়ে দিয়েছিল ইউরোপজুড়ে।
কিন্তু কোনো কিছুই বন্ধ করতে পারেনি ওই বিশ্বকাপ। সব প্রচারণা, আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ১৯৭৮ সালের ১ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বিশ্বকাপের ১১তম আসর। আর্জেন্টিনার পাঁচটি শহরের ছয় ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচগুলো। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেবারই টাইব্রেকার নিয়ম চালু হয়। ১৬ দেশের ওই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় স্বাগতিক আর্জেন্টিনাই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিদেলা বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় অঞ্চলের এই দেশ সফরের জন্য হাজার হাজার নারী-পুরুষকে আমরা সম্মান জানাচ্ছি। আমরা আশা করব, এই উৎসব একটি ভালোবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার পরিবেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।’
কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি বিষয়টি। গুঞ্জন ছিল এবং এখনো রয়েছে—আর্জেন্টিনা তাদের সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ পেরুকে ভয় দেখিয়েছে, ঘুষ দিয়ে এবং দেশটির স্বৈরশাসক জেনারেল মোরালেস বারমুদেজের সঙ্গে ভিদেলা সরকারের গোপন আঁতাত হয়েছে। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত খেলেছিল পেরু। নিয়ম অনুসারে ফাইনালে যেতে হলে অন্তত ৪ গোলের ব্যবধানে জিততে হবে। কিন্তু ভালো খেলা পেরু সেটি করতে পারেনি। তারা হেরে যায় ৬-০ গোলের ব্যবধানে।
সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে নানাভাবে হয়রানি করা হয় পেরুর খেলোয়াড়দের। ম্যাচের আগের রাতে যে হোটেলে তাঁরা অবস্থান করছিলেন, সেখান থেকে পাহারায় থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যান। আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা হোটেলের বাইরে এসে চিৎকার-চেঁচামেচি এবং তীব্র স্বরে গাড়ির হর্ন বাজাতে থাকে। হোটেল থেকে স্টেডিয়ামে নেওয়ার রাস্তা যেখানে মাত্র ৩০ মিনিটের পথ, সেখানে নানা রাস্তা দিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ঘুরিয়ে তাঁদের স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়।
রাতে ঘুম না হওয়ায় এবং দীর্ঘ বাস জার্নিতে এমনিতেই ক্লান্ত ছিলেন পেরুর খেলোয়াড়েরা। এরপর তাঁদের জন্য আরও চমক অপেক্ষা করছিল। খেলা শুরুর মাত্র ৩০ মিনিট আগে রাফায়েল ভিদেলা পেরুর ড্রেসিংরুমে যান এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ আলাপ করেন। আলাপকালে ভিদেলা বলেন, ‘আমি আপনাদের বলতে চাই যে, আজ রাতের এই ম্যাচ ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের। আমি এখানে লাতিন ভ্রাতৃত্বের দাবি নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি, সবকিছু ঠিকঠাকভাবে শেষ হবে।’ ভাষণের পর ভিদেলা পেরুর ফুটবলারদের দেশটির প্রেসিডেন্ট জেনারেল মোরালেস বারমুদেজের একটি চিঠি পড়ে শোনান।
এখানেই শেষ নয়, গুজব শোনা যায়—আর্জেন্টিনা পেরু সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের তৎকালীন ৫ কোটি ডলার অর্থ ও খাদ্যসহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এমনকি খাদ্যশস্য নিয়ে একটি চালান পেরুতে পর্যন্ত গিয়েছিল। এ ছাড়া পেরুর খেলোয়াড়দের নগদ অর্থ এবং উন্নত বাসস্থানের লোভও দেখানো হয়েছিল। খেলোয়াড়দের মধ্যে পেরুর ডিফেন্ডার রুদলফো মাঞ্জোকে ৫০ হাজার ডলার ঘুষ সাধা হয়েছিল বলেও শোনা যায়। এমনকি দলের অন্য খেলোয়াড়দের সব মিলিয়ে আড়াই লাখ ডলার সাধা হয়েছিল হারের বিপরীতে।
যা-ই হয়ে থাকুক, সেমিফাইনালে সেই ম্যাচে পেরু সুবিধা করতে পারেনি। বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল। ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল নেদারল্যান্ডস। সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনা জিতে গিয়েছিল ৩-১ ব্যবধানে। ফাইনালে আর্জেন্টিনার জয়ে যখন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ এস্তাদিও মনুমেন্তালে হর্ষধ্বনি দিচ্ছিল, ঠিক সেই সময়েই হয়তো স্টেডিয়াম থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের নেভি হেডকোয়ার্টার্সে নির্যাতনের শিকার হয়ে গোঙাচ্ছিলেন কোনো নিরপরাধ নাগরিক!
খেলা নিয়ে গুজব যা-ই থাক, ভিদেলা যে সেই বিশ্বকাপকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন, তাতে সন্দেহ নেই। বামপন্থী সশস্ত্র যোদ্ধাদের দমন, অর্থনীতির সংকট থেকে দৃষ্টি ফেরানোসহ স্বৈরশাসনের সব নেতিবাচক দিক ঢাকতে ভিদেলা বিশ্বকাপকে ব্যবহার করেছিলেন। আর্জেন্টিনার খেলা শেষে সরকার গুম করা ব্যক্তিদের হঠাৎ হাজির করত। তাদের নিয়ে বের হতো শহরে শহরে। দেখাত যে মানুষ কত আনন্দের মধ্যে রয়েছে।
যাহোক, সেই আগের পরিস্থিতি আবারও অনেকটাই যেন ফিরে এসেছে আর্জেন্টিনায়। দেশটিতে আবারও অর্থনৈতিক সংকট ফিরে এসেছে। এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। সংকট এতটাই গভীর যে, দেশটির অনেকেই চান না আর্জেন্টিনা এবার বিশ্বকাপ জিতুক। কারণ, তাতে পরিস্থিতি দীর্ঘ সময়ের জন্য আবারও চাপা পড়ে যাবে। এদেরই একজন হলেন লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা চিকিৎসক দিয়েগো শোয়ার্জস্টাইন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি চান না আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতুক। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন কথাই স্পষ্ট করে বলেছেন।
যেসব উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল চালু হয়েছিল, তার কতটা অর্জিত হয়েছে, কত দূর মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেছে, তা বিতর্কের বিষয়। তেমনি বিতর্কের বিষয় আর্জেন্টিনার ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন। সেই বিশ্বকাপ যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, স্বৈরশাসকেরা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে হেন কোনো কাজ নেই, যা করে না!
তথ্যসূত্র: এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, হিস্টোরি ডট কম, স্পোর্টস বাইবেল, দ্য টাইমস এবং পেপেলিতোস
ফুটবল বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে ৯২ বছর হয়ে গেল। তবে এই ফুটবল বিশ্বকাপ কেবলই খেলা নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিও। যেমন রাশিয়া বিশ্বকাপকে দেশটি ব্যবহার করেছে পশ্চিমা বিশ্বের অবরোধের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে, দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপকে ব্যবহার করেছে অর্থনৈতিক সংকট কাটাতে। ব্রাজিল ব্যবহার করেছে দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত সরকারকে দেশের মানুষের চোখে ভালো সাজাতে। তবে ১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনায় আয়োজিত বিশ্বকাপকে দেশটির তৎকালীন স্বৈরশাসক যেভাবে ব্যবহার করেছে, তা আর কোনো দেশের শাসকই পারেনি!
প্রায় এক যুগ আগেই নির্ধারিত ছিল যে, ১৯৭৮ সালের বিশ্বকাপ হবে আর্জেন্টিনায়। কিন্তু তখন কেউই জানত না যে বিশ্বকাপের সময় দেশটির ক্ষমতা দখল করে থাকবে এক কুখ্যাত স্বৈরশাসক। সেই স্বৈরশাসক বিশ্বকাপকে হাতিয়ার করে দেশে চলমান দুর্নীতি, খুন-গুম, অর্থনৈতিক সংকট, গণতন্ত্রহীনতা ইত্যাদি থেকে দেশ ও বিশ্ববাসীর দৃষ্টি সরিয়ে দেবে, তা কেউই হয়তো সেভাবে অনুমান করতে পারেনি। কিন্তু এমনটাই হয়েছে।
ঘটনার শুরু ১৯৭৬ সালে। সেবারের মার্চে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইসাবেলা পেরনকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করেন জেনারেল জর্জ রাফায়েল ভিদেলা। ক্ষমতা দখলের পরপরই শুরু হয় দমন-পীড়ন। গুম-খুন নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়। ১৯৭৬ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত তাঁর শাসনামলে ৩০ হাজার মানুষ স্রেফ গায়েব হয়ে গেছে। তারা আর কখনো ফেরেনি।
সাধারণ জনগণকে স্বাধীনভাবে রাস্তায় চলাফেরা করতেও দেওয়া হতো না। বের হলেই চলত জিজ্ঞাসাবাদ-গ্রেপ্তার। ছাড়া পেতে ঘুষ দিতে হতো জান্তা সদস্যদের। কেউ সামান্য প্রতিবাদ করলেই তুলে নিয়ে যাওয়া হতো, নির্যাতন করা হতো সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন কার্যালয়ে বন্দী করে। সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হতো কঠোর হাতে।
এত সব করেও দেশের অর্থনীতিকে বশে রাখতে পারছিলেন না ভিদেলা। এই সময়ই তাঁর হাতে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে ধরা দেয় ১৯৭৮ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন। এ বিষয়ে ভিদেলাকে উৎসাহিত করেন ১৯৭৬ সালের সেনা অভ্যুত্থানের অন্যতম কুশীলব অ্যাডমিরাল এমিলো মাসেরা। তিনি বলেন, ‘টুর্নামেন্টের আয়োজন বিশ্বকে দেখাবে যে আর্জেন্টিনা একটি বিশ্বস্ত দেশ, বড় ধরনের প্রকল্প পরিচালনায় সক্ষম।’
ঠান্ডা মাথার শীতল-ক্রূর চাহনির এই স্বৈরশাসক ফুটবল পছন্দ করতেন না। খেলা তো দূরের কথা, তিনি কখনো ফুটবল খেলা দেখেছেন—এমনটাও কেউ বলতে পারে না। যাহোক, এই অবস্থায় ফুটবল বিশ্বকাপকে তিনি তাঁর ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা এবং জনগণসহ বিশ্ববাসীর দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরানোর এক অনন্য সুযোগ হিসেবে দেখেন। তবে তাঁর এই ইচ্ছায় বাদ সাধে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম অনুযায়ী কোনো দেশের সরকার সরাসরি বিশ্বকাপ আয়োজনে জড়িত থাকতে পারবে না। তাই রাতারাতি ভিদেলা একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন এবং দায়িত্ব দেন বিশ্বকাপ আয়োজনের। এমনকি তাঁকে সে সময় সতর্ক করা হয়েছিল—এই আয়োজনের ফলে দেশ দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে। কিন্তু ভিদেলা কারও কথায় কান দেননি।
শুরু হয় কর্মযজ্ঞ। রাজধানী বুয়েনস এইরেসে নির্মাণ করা হয় এস্তাদিও মনুমেন্তাল। ৬৭ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার এই স্টেডিয়াম নির্মাণ করতে গিয়ে সেখানকার কয়েক হাজার বস্তিবাসীকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উচ্ছেদ করা হয়। রাস্তাঘাট চওড়া করতে উচ্ছেদ করা হয় আরও কয়েক হাজার মানুষকে। খেলার ভেন্যুগুলোর আশপাশ থেকে গরিব লোকদের বিনা নোটিশে উচ্ছেদ করা হয়। এই নিপীড়িত মানুষগুলোর আওয়াজ বিশ্বের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। কারণ, ভিদেলা দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর গলাও চেপে ধরেছিলেন দৃঢ় হস্তে। সংবাদমাধ্যমগুলো কেবল সেটিই প্রকাশ করতে পারত, যা জান্তা বাহিনী অনুমোদন করত। সংবাদমাধ্যমগুলোকে ‘আপনার আর্জেন্টিনাকে রক্ষা করুন’, ‘বিশ্বকে সত্য দেখিয়ে দাও’—এমন স্লোগান ও মোটিফকে কেন্দ্র করে সংবাদ ছাপাতে বাধ্য করা হতো।
কেবল তা-ই নয়, ভিদেলা সরকার মার্কিন জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান বারসন-মার্স্টেলারকে ১০ লাখ ডলার চুক্তিতে নিয়োগ করেছিল। জান্তা সরকারের প্রত্যাশা ছিল—আর্জেন্টিনার বাইরে দেশ ও সরকারের প্রতি আস্থা ও সদিচ্ছার বিষয়টি প্রচারে সহায়তা করবে তারা। তাদের মূল কাজ ছিল ‘স্থিতিশীল’ ও ‘উন্নয়নশীল’ আর্জেন্টিনার একটি ‘নয়া চিত্র’ তুলে ধরা। যে পরিকল্পনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল বিশ্বকাপ। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে ভিদেলা সরকারের বিরুদ্ধে চলমান বিভিন্ন নেতিবাচক প্রচারের জবাব দেওয়ার জন্যও দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রতিষ্ঠানটিকে।
ভিদেলা যে শুধু বন্দুকের জোরে এমনটা করছিলেন, তা কিন্তু নয়। ফিফার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ব্রাজিলের নাগরিক জোয়াঁও হ্যাভেলঞ্জ এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারও তাল দিয়েছিলেন ভিদেলার সঙ্গে। বিশ্বকাপ শুরুর সপ্তাহখানেক আগে ২৩ মে ভিদেলার হয়ে ওকালতি করেন ফিফার প্রেসিডেন্ট। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতি পর্যবেক্ষণ করে তিনি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি হতাশ নই, বরং আমি গর্বিত যে আর্জেন্টিনার সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো ছিল, তা দারুণভাবে সামলে নিয়েছে।’ আর হেনরি কিসিঞ্জার তো বিশ্বকাপ চলাকালে আর্জেন্টিনায় উপস্থিত হয়ে ভিদেলার সঙ্গে থেকে সেমি এবং ফাইনাল ম্যাচ উপভোগ করেন!
অবশ্য স্বৈরশাসকের বিশ্বকাপ আয়োজনের বিষয়টি ভালো চোখে দেখেনি অনেকেই। এ নিয়ে ১৯৭৭ সালের শেষ দিকে একদল ফরাসি সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী আর্জেন্টিনায় বিশ্বকাপ আয়োজনের বিরোধিতা করে ‘অর্গানাইজিং কমিটি ফর দ্য বয়কট অব দ্য আর্জেন্টিনা ওয়ার্ল্ড কাপ’ প্রতিষ্ঠা করেন, যার ফরাসি নামের সংক্ষেপ ছিল সিওবিএ। সে সময় ফ্রান্স ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন মিশেল প্লাতিনি। সংগঠনটি প্লাতিনি এবং ফরাসি ফুটবল নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অনুরোধ করে, যেন তারা আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে না যায়। কেবল ফ্রান্সেই নয়, সংগঠনটি ইতালি, স্পেন, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, স্কটল্যান্ডকেও অনুরোধ করেছিল অংশ না নিতে। এমনকি একাধিক ব্যঙ্গাত্মক পোস্টারও ছড়িয়ে দিয়েছিল ইউরোপজুড়ে।
কিন্তু কোনো কিছুই বন্ধ করতে পারেনি ওই বিশ্বকাপ। সব প্রচারণা, আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে ১৯৭৮ সালের ১ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় বিশ্বকাপের ১১তম আসর। আর্জেন্টিনার পাঁচটি শহরের ছয় ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হয় ম্যাচগুলো। ফুটবল বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেবারই টাইব্রেকার নিয়ম চালু হয়। ১৬ দেশের ওই বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় স্বাগতিক আর্জেন্টিনাই। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিদেলা বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে বৈচিত্র্যময় অঞ্চলের এই দেশ সফরের জন্য হাজার হাজার নারী-পুরুষকে আমরা সম্মান জানাচ্ছি। আমরা আশা করব, এই উৎসব একটি ভালোবাসা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার পরিবেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।’
কিন্তু এখানেই শেষ হয়নি বিষয়টি। গুঞ্জন ছিল এবং এখনো রয়েছে—আর্জেন্টিনা তাদের সেমিফাইনালের প্রতিপক্ষ পেরুকে ভয় দেখিয়েছে, ঘুষ দিয়ে এবং দেশটির স্বৈরশাসক জেনারেল মোরালেস বারমুদেজের সঙ্গে ভিদেলা সরকারের গোপন আঁতাত হয়েছে। টুর্নামেন্টজুড়ে দুর্দান্ত খেলেছিল পেরু। নিয়ম অনুসারে ফাইনালে যেতে হলে অন্তত ৪ গোলের ব্যবধানে জিততে হবে। কিন্তু ভালো খেলা পেরু সেটি করতে পারেনি। তারা হেরে যায় ৬-০ গোলের ব্যবধানে।
সেমিফাইনাল ম্যাচের আগে নানাভাবে হয়রানি করা হয় পেরুর খেলোয়াড়দের। ম্যাচের আগের রাতে যে হোটেলে তাঁরা অবস্থান করছিলেন, সেখান থেকে পাহারায় থাকা সেনাবাহিনীর সদস্যরা হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যান। আর্জেন্টাইন সমর্থকেরা হোটেলের বাইরে এসে চিৎকার-চেঁচামেচি এবং তীব্র স্বরে গাড়ির হর্ন বাজাতে থাকে। হোটেল থেকে স্টেডিয়ামে নেওয়ার রাস্তা যেখানে মাত্র ৩০ মিনিটের পথ, সেখানে নানা রাস্তা দিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ঘুরিয়ে তাঁদের স্টেডিয়ামে নেওয়া হয়।
রাতে ঘুম না হওয়ায় এবং দীর্ঘ বাস জার্নিতে এমনিতেই ক্লান্ত ছিলেন পেরুর খেলোয়াড়েরা। এরপর তাঁদের জন্য আরও চমক অপেক্ষা করছিল। খেলা শুরুর মাত্র ৩০ মিনিট আগে রাফায়েল ভিদেলা পেরুর ড্রেসিংরুমে যান এবং খেলোয়াড়দের সঙ্গে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ আলাপ করেন। আলাপকালে ভিদেলা বলেন, ‘আমি আপনাদের বলতে চাই যে, আজ রাতের এই ম্যাচ ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের। আমি এখানে লাতিন ভ্রাতৃত্বের দাবি নিয়ে হাজির হয়েছি। আশা করি, সবকিছু ঠিকঠাকভাবে শেষ হবে।’ ভাষণের পর ভিদেলা পেরুর ফুটবলারদের দেশটির প্রেসিডেন্ট জেনারেল মোরালেস বারমুদেজের একটি চিঠি পড়ে শোনান।
এখানেই শেষ নয়, গুজব শোনা যায়—আর্জেন্টিনা পেরু সরকারের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের তৎকালীন ৫ কোটি ডলার অর্থ ও খাদ্যসহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এমনকি খাদ্যশস্য নিয়ে একটি চালান পেরুতে পর্যন্ত গিয়েছিল। এ ছাড়া পেরুর খেলোয়াড়দের নগদ অর্থ এবং উন্নত বাসস্থানের লোভও দেখানো হয়েছিল। খেলোয়াড়দের মধ্যে পেরুর ডিফেন্ডার রুদলফো মাঞ্জোকে ৫০ হাজার ডলার ঘুষ সাধা হয়েছিল বলেও শোনা যায়। এমনকি দলের অন্য খেলোয়াড়দের সব মিলিয়ে আড়াই লাখ ডলার সাধা হয়েছিল হারের বিপরীতে।
যা-ই হয়ে থাকুক, সেমিফাইনালে সেই ম্যাচে পেরু সুবিধা করতে পারেনি। বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল। ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ছিল নেদারল্যান্ডস। সেই ম্যাচে আর্জেন্টিনা জিতে গিয়েছিল ৩-১ ব্যবধানে। ফাইনালে আর্জেন্টিনার জয়ে যখন ৬০ হাজারের বেশি মানুষ এস্তাদিও মনুমেন্তালে হর্ষধ্বনি দিচ্ছিল, ঠিক সেই সময়েই হয়তো স্টেডিয়াম থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরের নেভি হেডকোয়ার্টার্সে নির্যাতনের শিকার হয়ে গোঙাচ্ছিলেন কোনো নিরপরাধ নাগরিক!
খেলা নিয়ে গুজব যা-ই থাক, ভিদেলা যে সেই বিশ্বকাপকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করেছিলেন, তাতে সন্দেহ নেই। বামপন্থী সশস্ত্র যোদ্ধাদের দমন, অর্থনীতির সংকট থেকে দৃষ্টি ফেরানোসহ স্বৈরশাসনের সব নেতিবাচক দিক ঢাকতে ভিদেলা বিশ্বকাপকে ব্যবহার করেছিলেন। আর্জেন্টিনার খেলা শেষে সরকার গুম করা ব্যক্তিদের হঠাৎ হাজির করত। তাদের নিয়ে বের হতো শহরে শহরে। দেখাত যে মানুষ কত আনন্দের মধ্যে রয়েছে।
যাহোক, সেই আগের পরিস্থিতি আবারও অনেকটাই যেন ফিরে এসেছে আর্জেন্টিনায়। দেশটিতে আবারও অর্থনৈতিক সংকট ফিরে এসেছে। এরই মধ্যে পদত্যাগ করেছেন বেশ কয়েকজন মন্ত্রী। সংকট এতটাই গভীর যে, দেশটির অনেকেই চান না আর্জেন্টিনা এবার বিশ্বকাপ জিতুক। কারণ, তাতে পরিস্থিতি দীর্ঘ সময়ের জন্য আবারও চাপা পড়ে যাবে। এদেরই একজন হলেন লিওনেল মেসির ক্যারিয়ারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা চিকিৎসক দিয়েগো শোয়ার্জস্টাইন। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি চান না আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জিতুক। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টাইমসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এমন কথাই স্পষ্ট করে বলেছেন।
যেসব উদ্দেশ্য নিয়ে বিশ্বকাপ ফুটবল চালু হয়েছিল, তার কতটা অর্জিত হয়েছে, কত দূর মূল লক্ষ্য থেকে সরে গেছে, তা বিতর্কের বিষয়। তেমনি বিতর্কের বিষয় আর্জেন্টিনার ১৯৭৮ সালে বিশ্বকাপ আয়োজন। সেই বিশ্বকাপ যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, স্বৈরশাসকেরা নিজেদের টিকিয়ে রাখতে হেন কোনো কাজ নেই, যা করে না!
তথ্যসূত্র: এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, হিস্টোরি ডট কম, স্পোর্টস বাইবেল, দ্য টাইমস এবং পেপেলিতোস
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
৬ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগে