Ajker Patrika

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কখন জরুরি সতর্কতা জারি করে

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২২, ১৪: ১৭
Thumbnail image

দুই বছর আগে বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি দেখা দেওয়ার পর থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নাম ঘন ঘন শোনা যাচ্ছে। মাত্রই এক দিন আগে সংস্থাটি মাঙ্কিপক্স বিষয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছে। যদিও ‘জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা’ শব্দটি খুব কম ব্যবহার করে থাকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, তারপরও ইদানীং যেন একটু বেশি শোনা যাচ্ছে। 

অনেকের মনেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ঠিক কোন পরিস্থিতিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিশ্বজুড়ে জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে? সাধারণত কোনো রোগের বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাব মোকাবিলার জন্য সংস্থাটি জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে থাকে। 

জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা কী

কোন কোন শর্ত সাপেক্ষে জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হবে, তা ২০০৫ সালের আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য প্রবিধান অনুসারে নির্ধারণ করা হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য প্রবিধানে বলা হয়েছে, জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কোনো একটি রোগ যখন এক দেশ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে বিস্তার লাভের মাধ্যমে অন্যান্য দেশে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি তৈরি করে, তখন আন্তর্জাতিকভাবে সব দেশ মিলে তাকে প্রতিহত করা প্রয়োজন। 

প্রবিধানে আরও বলা হয়েছে, রোগ ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি যখন গুরুতর, আকস্মিক, অস্বাভাবিক ও অপ্রত্যাশিত হয় এবং এক দেশ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ার তীব্র ঝুঁকিতে থাকে, তখন জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করার প্রয়োজন হয়। 

জরুরি কমিটি

মাঙ্কিপক্স সম্পর্কিত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৬ সদস্যের একটি কমিটি রয়েছে। এই কমিটির প্রধান গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের জিন মেরি ওকো বেলে। তিনি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ভ্যাকসিন ও ইমিউনাইজেশন বিভাগের প্রাক্তন পরিচালক ছিলেন। 

কমিটিতে ভাইরোলজিস্ট, ভ্যাকসিনোলজিস্ট, এপিডেমিওলজিস্ট ও গুরুতর রোগ বিশেষজ্ঞরা রয়েছেন। কমিটিতে উপপ্রধান হিসেবে রয়েছেন বার্ন ইউনিভার্সিটির এপিডেমিওলজি ও পাবলিক হেলথ মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক নিকোলো লো। 

বিশ্বের ১১৪টি দেশে ব্যাপক আকারে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান এটিকে মহামারি বলে ঘোষণা করেন। ছবি: রয়টার্সবাকি ১৪ জন সদস্য ব্রাজিল, যুক্তরাজ্য, জাপান, মরক্কো, নাইজেরিয়া, রাশিয়া, সেনেগাল, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। 

শনিবার মাঙ্কিপক্স নিয়ে জরুরি বৈঠকে এই ১৬ সদস্য ছাড়াও কানাডা, গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের আটজন উপদেষ্টাও অংশ নিয়েছিলেন। 

সিদ্ধান্ত

বৈঠকের পর জরুরি কমিটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস আধানম ঘেব্রেসাসকে একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদন দিয়েছেন। সেখানে তাঁরা মাঙ্কিপক্স মানব স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ঝুঁকিপূর্ণ, বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি কতটা, আন্তর্জাতিক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা জরুরি কি না—এসব তুলে ধরেছেন। তবে এখনই সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হবে কি না, সে ব্যাপারে কমিটির সবাই একমত হতে পারেননি। 
শনিবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, কমিটি যেহেতু সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে একমত হতে পারেননি, তাই তিনি নিজে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 

আগের ছয়টি জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা

এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছয়বার জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছিল। 

 ২০০৯: এইচওয়ান এনওয়ান সোয়াইন ফ্লু। এই মহামারি প্রথমে মেক্সিকোতে দেখা দিয়েছিল। তারপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তখন জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। 

 ২০১৪: পোলিও ভাইরাস। ২০১৪ সালে বন্য পোলিও ও সঞ্চালিত ভ্যাকসিন থেকে পাওয়া পোলিও ভাইরাস দ্রুত বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনা ছাড়া এই একটি জরুরি সতর্কতা এখনো জারি আছে। 

 ২০১৪: ইবোলা। একই বছরে পশ্চিম আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় এবং তা দ্রুত ইউরোপসহ যুক্তরাষ্ট্রে ছড়িয়ে পড়ে। তখন জরুরি সতর্কতা জারি করা হয়। 

 ২০১৬: জিকা ভাইরাস। মহামারি আকারে জিকা ভাইরাস প্রথমে ছড়িয়ে পড়েছিল ব্রাজিলে। এরপর ছড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্রে। তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি সতর্কতা জারি করেছিল। মশাবাহিত ভাইরাসের ওপর এটিই একমাত্র স্বাস্থ্য সতর্কতা। 

করোনার আগে ইবোলা নিয়ে জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করেছিল ডব্লিউএইচও।  ২০১৯: ইবোলা। গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের কিভুতে ২০১৯ সালে ইবোলার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। পরে তা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। 

 ২০২০: কোভিড-১৯। চীনে প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ ভাইরাস দেখা দেওয়ার পর তা দ্রুতই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করে। 

করোনা নিয়ে হতাশা

করোনা ভাইরাস মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগে দুবার বৈঠক করেছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি কমিটি। প্রথম বৈঠকটি জানুয়ারির ২২ তারিখে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় বৈঠক হয় ২৩ জানুয়ারি। দুটি বৈঠকেই জরুরি সতর্কতা জারি করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি তাঁরা। তবে জরুরি কমিটির সদস্যরা এ রোগের প্রাদুর্ভাবের ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছিলেন। 

পরে ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদ্রোস নিজেই ক্রমবর্ধমান পরিস্থিতিকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা দেন। তখন চীনের বাইরে বিশ্বের ১১৪টি দেশে ১ লাখ ১৮ হাজার ব্যক্তির শরীরে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। এ ছাড়া ইতালি ও ইরানে করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪ হাজার ২১৯ ব্যক্তি মারা গিয়েছিলেন। 

এমন পরিস্থিতে জরুরি স্বাস্থ্য সতর্কতা জারি করার পদ্ধতি নিয়ে সেই সময়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন। 

এ ব্যাপারে করোনা মহামারি ঘোষণার দ্বিতীয় বার্ষিকীতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জরুরি পরিস্থিতিবিষয়ক পরিচালক মাইকেল রায়ান বলেছিলেন, ‘জানুয়ারিতে আমরা যে সতর্কবার্তা দিয়েছিলাম, তা মার্চের ঘোষণার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমরা ক্রমাগত পাগলাঘণ্টা বাজিয়ে গিয়েছি, কিন্তু মানুষ তা কানে তোলেনি।’ 

তথ্যসূত্র: এএফপি

ইংরেজি থেকে অনুবাদ মারুফ ইসলাম

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারী সহকর্মীর সঙ্গে রাতযাপন: হাইটেক পার্কের ডিডি আতিক বরখাস্ত

বাংলাদেশসহ ৩ দেশে উন্নয়ন সহায়তা বন্ধের সিদ্ধান্ত সুইজারল্যান্ডের

পদ্মা সেতু ও ড. ইউনূসকে নিয়ে ভারত থেকে শেখ হাসিনার ভাষণ! ভাইরাল ভিডিওর পেছনের ঘটনা জানুন

বিচারপতি শাহেদ নূরউদ্দিনের পদত্যাগ

২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ফেসবুক প্রোফাইল পিকচার পরিবর্তন কর্মসূচি শুরু

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত