ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন

ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের টানাপোড়েন: সংকটে রোগী আর শিক্ষার্থীরা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১০: ৫৬
Thumbnail image
বাংলাদেশ ও ভারতের পতাকা। ছবি: সংগৃহীত

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলমান কূটনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভিসা ও চিকিৎসাসেবা ব্যাপকভাবে সীমিত হয়ে পড়েছে। গত আগস্টে শেখ হাসিনার পতনের পর রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভারত বাংলাদেশে তাদের ভিসা সেন্টারগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখে। এর মধ্যে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভারতীয় হাইকমিশন ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ভিসা সেবা স্থগিত করে প্রায় ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি নাগরিকের পাসপোর্ট ফেরত পাঠায়।

শুধু বাংলাদেশ নয়, এই পরিস্থিতির জন্য অর্থনৈতিক প্রভাব পড়েছে ভারতের ওপরেও। কারণ পর্যটননির্ভর ভারতের কিছু অঞ্চলে বাংলাদেশি পর্যটক না যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেসব এলাকার মানুষ। বিশেষ করে কলকাতা, চেন্নাই ও বেঙ্গালুরুতে বাংলাদেশি রোগীদের ভ্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। ফলে, বিপাকে পড়েছেন সেখানকার ব্যবসায়ীরা।

তবে নতুন বছরের জানুয়ারি থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট ও খুলনার পাঁচটি ভিসা সেন্টারে কেবল জরুরি ও মানবিক আবেদনের ক্ষেত্রে ভিসা প্রক্রিয়াকরণ চালু রেখেছে।

ভিসা সেন্টারগুলোর তথ্যমতে, আগে দৈনিক ভিসা প্রক্রিয়ার সংখ্যা ছিল ৭ হাজারের মতো। কিন্তু বর্তমানে তা ৫০০ থেকে ৭০০-তে নেমে এসেছে। এদিকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার বিষয়েও কোনো নিশ্চিত সময়সীমা নেই।

ভারত বাংলাদেশিদের জন্য ১৫ ধরনের ভিসা প্রদান করে, যার মধ্যে ‘জরুরি সেবা’ ভিসাও অন্তর্ভুক্ত। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ডিডব্লিউকে বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। স্বাভাবিক হলে পূর্ণাঙ্গ ভিসা সেবা চালু করব।’

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য কর্মকর্তারা জানান, ভিসা সেবা পুরোপুরি চালু করতে আরও সময় লাগবে।

সম্প্রতি সীমান্তে ভারতের কিছু কর্মকাণ্ডে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বাড়ছে। ভারত সীমান্তের পাঁচটি স্থানে শূন্য রেখার প্রায় শেষ প্রান্তে এসে বেড়া নির্মাণ করেছে বলে অভিযোগ করে সীমান্তবর্তী এলাকার বাংলাদেশিরা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে এই বিষয়টির সত্যতাও পাওয়া যায়। ফলে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতীয় হাইকমিশনারকে তলব করে।

এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মো. নূরুল ইসলামকেও তলব করে দিল্লি।

চলমান সামাজিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা চিকিৎসা পর্যটনেও প্রভাব ফেলেছে। ভারতীয় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাংলাদেশিদের সংখ্যা ২৫ থেকে প্রায় ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

কেয়ারএজ রেটিংস নামে একটি জ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণী সংস্থার মতে, ভারতের সাশ্রয়ী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় হাজারো রোগী বিপাকে পড়েছেন। তবে বিকল্প চিকিৎসার জন্য অনেক বাংলাদেশি এখন থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও তুরস্কের দিকেও ঝুঁকছেন।

সাবেক কূটনীতিক অজয় বিসারিয়া বলেন, ‘দেশ দুটির মধ্যে চলাচলে বিধিনিষেধ রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের ফলাফল। ভারত ও বাংলাদেশকে সংলাপের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে হবে।’

অজয় বিসারিয়া আরও বলেন, ‘পারস্পরিক বিশ্বাস পুনর্গঠন করতে হবে। এগুলো সহজেই সমাধানযোগ্য, তবে ২০২৫ সালে ভিসা ব্যবস্থার উন্নতিতে সমঝোতা ও আলোচনার প্রয়োজন।’

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ইউরোপীয় দেশগুলোতে, যেমন; ফিনল্যান্ড, রোমানিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রে পড়াশোনার জন্য ভিসা আবেদন করলে ভারতে যেতে হয়। কিন্তু ভারতীয় ভিসার অনিশ্চয়তা তাঁদের জন্য বড় ধরনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ইতিমধ্যে প্রায় ১ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী ইউরোপের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অফার লেটার পেলেও ভিসা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারছেন না।

গত ডিসেম্বরে ইউরোপীয় কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ইউরোপীয় দেশগুলোকে তাদের ভিসা কেন্দ্র দিল্লি থেকে ঢাকায় স্থানান্তরের আহ্বান জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

টিউলিপ সিদ্দিকের পতন ঘটাতে বাংলাদেশি ও ব্রিটিশ রাজনীতির আঁতাত

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

কিশোরগঞ্জে বিএনপি নেতা হত্যা: সাবেক চেয়ারম্যানসহ গ্রেপ্তার ৪

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত