কমলা হ্যারিস মিশিগানের মুসলিমদের ভোট পাবেন কী

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ২৬ আগস্ট ২০২৪, ১৪: ০২

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান সুইং স্টেট বা জয়-পরাজয়ের অনিশ্চিত অঙ্গরাজ্য মিশিগান। আরব বংশোদ্ভূতদের বড় অংশ বসবাস করেন এই অঙ্গরাজ্যে। এসব ভোটাররা নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখেন। গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসন পরিচালনা ও তাতে বাইডেন প্রশাসনের সহায়তার কারণে এখানকার ডেমোক্র্যাটপন্থী আরব ভোটাররা বাইডেনের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এরপর নতুন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হয়েছেন কমলা হ্যারিস। তবে তাঁর জয়ের ব্যাপারে মিশিগানের আরব-ডেমোক্র্যাট ভোটাররা বলছেন, জয় পেতে হলে কমলা হ্যারিসকে তাঁদের মন জয় করতে হবে আগে। আর এর জন্য তাঁকে লড়াই করতে হবে। 

গাজায় ইসরায়েলি হামলা নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অবস্থানের কারণে ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এই মুসলিম ভোটাররা। চলতি বছরের শুরুতে ডেমোক্র্যাটদের প্রাইমারিতে (দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের ভোট) এই ভোটারদের একটি বড় অংশ ‘আনকমিটেড’ (প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়) ভোট দেয়। অর্থাৎ কোনো পক্ষকে ভোটদানে বিরত থাকে তাঁরা। 

মিশিগানের ডিয়ারবর্ন শহরে এক লাখ ১০ হাজার লোকের বসবাস এবং আরব আমেরিকানদের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। আগামী নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই ব্যাটলগ্রাউন্ড অঙ্গরাজ্যে প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর ভাগ্য নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এই শহর। আরব আমেরিকানরা বলছেন, তাঁরা ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কথা শুনতে এবং বিকল্প বিবেচনা করতে ইচ্ছুক। 

গত বৃহস্পতিবার শিকাগোতে ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় সম্মেলনে মনোনয়ন গ্রহণের পর কমলা হ্যারিস গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর এবং ফিলিস্তিনিদের মর্যাদা, নিরাপত্তা, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয় নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দেন। 

তবে সম্মেলনে ফিলিস্তিনি কাউকে বক্তব্য দিতে না দেওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে ফিলিস্তিনপন্থী ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধিদের মধ্যে। মুসলিম উইমেন ফর হ্যারিস-ওয়ালজ নামের একটি সংগঠন এরই মধ্যে কমলার প্রচারাভিযান থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছে। ফিলিস্তিনিদের দুর্ভোগ নিয়ে চুপ না থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া কমলা সম্প্রতি ‘আনকমিটেড’ আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি কোনো জোরালো প্রতিশ্রুতি না দিলেও নেতারা বলছেন, সহমর্মিতা প্রকাশের মাধ্যমে কমলা তাঁদের প্রভাবিত করেছেন। 

আরবদের প্রভাব বাড়ছেই
বড় তিনটি অটোমেকার ফোর্ড, জেনারেল মোটরস এবং ক্রাইসলারের কারখানা মিশিগানে অবস্থিত। ফলে হোয়াইট হাউসের এই আসনে জয় পেতে দীর্ঘকাল ধরেই প্রার্থীদের মধ্যে চলে তুমুল প্রতিযোগিতা। সত্তরের দশকে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে অনেকেই যুক্তরাষ্ট্রের তথাকথিত ‘রাস্ট বেল্ট’ ছাড়তে বাধ্য হন। ওই সময় মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা কারণে প্রচুর পরিমাণে লেবানিজ, ইরাকি, ইয়েমেনি এবং ফিলিস্তিনি অভিবাসীরা ভিড়ে যুক্তরাষ্ট্রে। 

ডিয়ারবর্নের মেয়র আবদুল্লাহ হাম্মুদ সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘এটি একটি বৈশ্বিক শহর, যেখানকার মোট বাসিন্দাদের প্রায় ৫৫ শতাংশ আরব বংশোদ্ভূত। আপনার কাছে গাজা নিছক আলোচনার ইস্যু হতে পারে, কিন্তু আমাদের কাছে তা নয়। সেখানকার অসংখ্য হতাহত আমাদের পরিবারের সদস্য বা বন্ধুবান্ধব।’ 

হেনরি ফোর্ডের জন্মস্থান হিসাবে বিখ্যাত ডিয়ারবর্ন এখন আমেরিকার ইসলামিক সেন্টার। আমেরিকার বৃহত্তম মসজিদ, মধ্যপ্রাচ্যের অগণিত সুপারমার্কেট, খাবারের দোকান এবং কফিশপ রয়েছে এখানে। 

আশির দশকের মাঝামাঝি যখন সিব্লানি প্রথম তার সংবাদপত্র শুরু করেন, তখন তৎকালীন মেয়র ‘আরব সমস্যা’ মোকাবিলার জন্য প্রচার করেছিলেন। কিন্তু আরব সম্প্রদায়ের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্লু-কলার (নিম্ন শ্রেণির কর্মী) শ্রমিকদের সন্তানেরা আইনজীবী, ডাক্তার এবং ব্যবসায়ী হতে শুরু করেন। তাঁদের রাজনৈতিক প্রভাবও বাড়তে থাকে। 

দুই মন্দ থেকে এক ভালো নির্বাচন 
ঐতিহাসিক ও সামাজিকভাবে রক্ষণশীল আরব আমেরিকানরা ২০০০ সালের নির্বাচনে জর্জ ডব্লিউ বুশকে সমর্থন দিয়েছিলেন। তবে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চাপিয়ে দেওয়া যুদ্ধের কারণে ডেমোক্র্যাট শিবিরে ঝুঁকে পড়েন তাঁরা। 

সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মুসলিম দেশগুলোতে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনে সমর্থন দেওয়ায় আরব আমেরিকানরা ২০২০ সালে বাইডেনকে সমর্থন দেন। এর ফলে সামান্য ব্যবধানে মিশিগানে জয় পান তিনি। 

২০১৮ সালে দক্ষিণ-পূর্ব মিশিগানরা কংগ্রেসে প্রথম ফিলিস্তিনি-আমেরিকান নারী রাশিদা তলাইবকে নির্বাচিত করেন। এটি আমেরিকার-আরব সম্প্রদায়ের জন্য মাইলফলক ছিল। এ ছাড়া ঐতিহাসিকভাবে অ-শ্বেতাঙ্গদের প্রতি বর্ণবাদ চলে আসা শহরেও সম্প্রতি তিনজন আরব-আমেরিকান মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন। 

তবে এখানকার বাসিন্দারা মন্দের ভালোর পক্ষে ভোট দিতে দিতে ক্লান্ত। তাঁরা এমন প্রার্থী চান, যারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের মতো দাবি পূরণ করবেন। 

মেনা আমেরিকান চেম্বার অব কমার্সের একজন কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট এবং সিইও ফায়ে নেমার বলেছেন, আমি মনে করি, কমলা হ্যারিসের জয় পাওয়া সুযোগ আছে। তিনি প্রেসিডেন্ট বাইডেনের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি প্রচার করতে পারেন বা নিজের নতুন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন।’ 

তিরি আরও জানান, কমলা রানিং মেট হিসেবে টিম ওয়ালজকে বেছে নেওয়ায় খুশি ডিয়ারবোর্নের আরব-আমেরিকানরা। পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরোর মতো গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের ওপর কঠোর ব্যবস্থা নেননি ওয়ালজ। তিনি যুদ্ধবিরোধীদের প্রতি সমঝোতামূলক পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন। কিন্তু দাবিগুলো ধীরে ধীরে কঠিন হচ্ছে। 

ডিয়ারবোর্নের ব্যবসায়ী আইনজীবী এবং দীর্ঘদিনের ডেমোক্র্যাট সৌজউদ হামাদে গ্রিন পার্টির প্রার্থী জিল স্টেইনকে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে ডেমোক্র্যাটদের জাতীয় সম্মেলনে গাজা যুদ্ধ বন্ধে কমলা হ্যারিসের জোরালো বক্তব্য দেওয়ার পর অবস্থান পরিবর্তন করেছন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা আর বিভেদ চাই না।’ 

ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি থেকে অনুবাদ করেছেন আবদুল বাছেদ

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত