Ajker Patrika

রাশিয়া–ইউক্রেন সংকট: সামরিক শক্তিতে ইউক্রেন কতটা পিছিয়ে

মারুফ ইসলাম
আপডেট : ০২ মার্চ ২০২২, ১৫: ০০
রাশিয়া–ইউক্রেন সংকট: সামরিক শক্তিতে ইউক্রেন কতটা পিছিয়ে

১৯৪৫ সালের পর এবারই সম্ভবত সবচেয়ে উত্তেজক মুহূর্ত পার করছে ইউরোপ ও পশ্চিমা বিশ্ব। এমন দমবন্ধ করা ‘এই বুঝি যুদ্ধ লাগল’ পরিস্থিতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আর আসেনি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে এই সংকটের শুরু সীমান্তে রাশিয়ার লক্ষাধিক সৈন্য মোতায়েনের মাধ্যমে। বলা হচ্ছে, প্রতিবেশী দেশের সীমান্তে ১ লাখ ৩০ হাজার সৈন্য মোতায়েনের মাধ্যমে পুরো ইউক্রেনকে ঘিরে ফেলেছে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ।

স্বাভাবিকভাবেই এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইউক্রেন। যৌক্তিক ব্যাখ্যা দাবি করেছে রাশিয়ার কাছে। কিন্তু রাশিয়া কোনো উত্তর দেয়নি। 

এদিকে রাশিয়ার সৈন্য মোতায়েন দেখে যুক্তরাষ্ট্র বারবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলছে, যেকোনো সময় ইউক্রেনে সামরিক হামলা চালাতে পারে রাশিয়া। দেশটি তার নাগরিকদের অতিসত্বর ইউক্রেন ত্যাগ করতে বলেছে। যদিও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুরু থেকেই বলে আসছেন, ইউক্রেনে হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা তাঁদের নেই। তবে মুখে হামলা চালানোর ইচ্ছা নেই বললেও রুশ সেনারা বেলারুশের সেনাদের সঙ্গে ঠিকই মহড়ায় অংশ নিয়েছে। প্রায় ৩০ হাজার রুশ সৈন্য সেই মহড়ায় যোগ দিয়েছে। 

রাশিয়ার ৯ হাজার ৭৮০টি ট্যাংকর বিপরীতে ইউক্রেনের ট্যাংক আছে ২ হাজার ১৭২টি।সংগত ও খুবই যৌক্তিক কারণে ইউক্রেনও বসে নেই। দেশটিও নিজেদের সেনাদের সংগঠিত করছে। ইউক্রেনের নাগরিকরা পর্যন্ত যুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। অনেক ইউক্রেনীয়কে গভীর অরণ্যে গিয়ে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গেছে। ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের এই যুদ্ধ প্রস্তুতিই বলে দিচ্ছে, তারা সমর শক্তিতে রাশিয়ার চেয়ে পিছিয়ে আছে। কিন্তু কতটা পিছিয়ে? 

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের (সিএফআর) প্রতিবেদন বলছে, ইউক্রেনের সক্রিয় সৈন্য রয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার। সেখানে রাশিয়ার সক্রিয় সৈন্য সংখ্যা ৯ লাখ।

নিজেদের সেনাদের সংগঠিত করছে ইউক্রেন সৈন্য মজুতের দিক দিয়ে ইউক্রেনের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের ট্যাংক আছে ২ হাজার ১৭২টি, অপরদিকে রাশিয়ার ট্যাংক আছে ৯ হাজার ৭৮০টি। ইউক্রেনের কামান রয়েছে ১ হাজার ৯৬২টি। তুলনায় রাশিয়ার কামান রয়েছে ৫ হাজার ৭২৫টি। 

ভূমি থেকে ভূমিতে উৎক্ষেপণের মিসাইল লঞ্চার ইউক্রেনের আছে ৯০টি। রাশিয়ার তা ১৫১টি। ইউক্রেনের যুদ্ধবিমান রয়েছে ১৬০টি, অন্যদিকে রাশিয়ার যুদ্ধবিমান রয়েছে ১ হাজার ৮৫৭টি। কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ইউক্রেনের মাত্র ১টি, আর রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ রয়েছে ১২টি। 

এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে সব দিক থেকেই সমরশক্তিতে পিছিয়ে আছে ইউক্রেন। তাই অপেক্ষাকৃত দুর্বল ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে বিশ্বের আরেক মোড়ল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি বেশ কিছু বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, সশস্ত্র যানবাহন এবং ট্যাংক পাঠিয়েছে ইউক্রেনে। পোল্যান্ডে প্রায় ৩ হাজার সেনা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেনকে সহায়তা করার জন্যই এই সেনা পাঠানো হয়েছে। 

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর একটি ইউনিট ইউক্রেনের সেনাবাহিনী ও গেরিলা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে বলেও পশ্চিমা গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে। গত ডিসেম্বরেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০০ মিলিয়ন প্রতিরক্ষা প্যাকেজের অংশ হিসেবে অস্ত্রের দ্বিতীয় চালান পাঠিয়েছেন ইউক্রেনে। 

রাশিয়া সব সময়ই সামরিক খাতে বেশি ব্যয় করে থাকে। ২০২০ সালে রাশিয়ার সামরিক ব্যয় ছিল ৬১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারি ব্যয়ের ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। সেখানে ইউক্রেনের কী অবস্থা? দেশটি ২০২০ সালে সামরিক খাতে ব্যয় করেছে ৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার, যা সরকারি ব্যয়ের ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। 

ইউক্রেনের মজুত সৈন্য রয়েছে ৯ লাখরাশিয়া ও ইউক্রেন একসময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ ছিল। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর স্বাধীনতা লাভ করে ইউক্রেন। ওই সময় দুই দেশের সামরিক সম্পর্কের চরম অবনতি হয়েছিল। এর কারণ—সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিরক্ষাসামগ্রী ও সমরাস্ত্রের বড় একটি অংশ মোতায়েন করা ছিল ইউক্রেনের মাটিতে। ইউক্রেন স্বাধীন হওয়ার পর মস্কো এসব অস্ত্র ফেরত চাইলে বিরোধের সূচনা হয়েছিল। 

ওই সময় ৫ হাজার পারমাণবিক অস্ত্র, ইউআর-হান্ড্রেড মডেলের ১৩০টি ও আরটি-২৩ মডেলের ৪৬টি আন্তমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক মিসাইল, ৩৩টি হেভি বোম্বারসহ সব মিলিয়ে ১ হাজার ৭০০ ওয়ারহেড ছিল ইউক্রেনের মাটিতে।

যুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে ইউক্রেনের নাগরিকরাস্বাধীন হওয়ার পর ইউক্রেন এসব অস্ত্র দখল করলেও অস্ত্রগুলো পরিচালনার মতো প্রযুক্তি ও দক্ষ লোকবল ছিল না তাদের। এ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে অনেক দর-কষাকষি হয় এবং একপর্যায়ে ইউক্রেন পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তির আওতায় এসব অস্ত্র ধ্বংস করে। এরপর রাশিয়া থেকে গ্যাস আমদানির বকেয়া মওকুফের বিনিময়ে রাশিয়াকে কিছু যুদ্ধবিমান ফেরত দিয়েছিল ইউক্রেন।

নতুন করে দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা বাড়ে ১৯৯৪ সালে। সে বছর ন্যাটোর পার্টনারশিপ প্রোগ্রামে ইউক্রেন যুক্ত হলে ভীষণ গোসসা করে মস্কো। নিন্দুকদের মতে, এর রেশ ধরেই ২০১৪ সালে ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দিয়ে ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয় রাশিয়া। এর পর থেকে সময়ে-সময়ে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

সূত্র: বিবিসি, আল জাজিরা, সিআরএফ ও রয়টার্স

রাশিয়া ইউক্রেন সংকট সম্পর্কিত খবর আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আমিনুল ইসলাম নন, শিক্ষা উপদেষ্টা হচ্ছেন অধ্যাপক আবরার

গণপিটুনিতে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম ও তাঁর বাহিনী গুলি ছোঁড়ে, মিলেছে বিদেশি পিস্তল: পুলিশ

উপদেষ্টা হচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

বসুন্ধরায় ছিনতাইকারী সন্দেহে ২ বিদেশি নাগরিককে মারধর

বিএনপির দুই পেশাজীবী সংগঠনের কমিটি বিলুপ্ত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত