তামান্না-ই-জাহান
করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বছর পার হতে চললেও যুদ্ধ শিগগির শেষ হবে এমন সুস্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত মেলেনি। এমন বাস্তবতায় চলতি বছরও যে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা ভালো যাবে না, তা ভবিতব্য।
২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাময় ১০টি বাণিজ্য ও শিল্প খাত কেমন যাবে সে বিষয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জ্বালানি, প্রযুক্তি, গাড়িশিল্প, প্রতিরক্ষা, ভোগ্যপণ্য, খুচরা বিক্রয়, আর্থিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, বিজ্ঞাপন ও বিনোদন- এই খাতগুলি চলতি বছর ঠিক কেমন যেতে পারে, তা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
জ্বালানি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ডলারের দামও। ফলে সংকটে জ্বালানি আমদানিকারক দেশগুলো। এরই মধ্যে আবার ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো তেলের দাম বাড়াতে উৎপাদন কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির তেল ও গ্যাস উৎপাদন কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংগত কারণেই ২০২৩ সালে জ্বালানির ব্যবহারও কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কিন্তু ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের জ্বালানি ব্যবহার ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রাক-মহামারির মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর উৎপাদন কিছুটা বাড়ানোয় দাম কমলেও তা হবে নামমাত্র।
প্রযুক্তি
২০২০ ও ২০২১ সালে অর্থনীতির অন্যান্য খাতে মন্দা থাকলেও প্রযুক্তি খাত ভালো করেছিল। তবে অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি এবং সুদের হার বৃদ্ধির মতো বিষয় ২০২৩ সালে প্রযুক্তি খাতের ব্যয় কমাতে পারবে না। এ বছর প্রযুক্তিগত ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পাবে। তবে সাইবার হামলা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, যন্ত্রাংশ বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার ফুলে ফেঁপে ৫০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে।
প্রতিরক্ষা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে উত্তেজনা বিভিন্ন দেশের সরকার প্রতিরক্ষা বাজেট শক্তিশালী করবে। বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাজেটের দেশ যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে এই খাতে প্রায় ৯ শতাংশ ব্যয় বাড়াবে। এবছর দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় ৮০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে বলে আভাস মিলেছে, যা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীনের চেয়ে তিনগুণ বেশি। তবে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে গিয়ে সংকুচিত হতে পারে মার্কিনীদের বাজেট। জাপান এবং জার্মানি আগামী পাঁচ বছরে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করার লক্ষ্য অনুসরণ করবে। এ ছাড়া ন্যাটো উদ্ভাবনী তহবিল প্রসারিত করলে আমেরিকা গবেষণা ব্যয় বাড়াতে পারে। তবে ২০২৩ সালে জনশক্তিও গুরুত্বপূর্ণ হবে, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপে।
গাড়ি নির্মাণ
২০২৩ সালে নতুন গাড়ি বিক্রি বাড়বে মাত্র এক শতাংশ। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির হার বাড়তে পারে ২৫ শতাংশ। অটোমোটিভ বা গাড়ি নির্মাণ শিল্পের অবস্থা খুব একটা ভালো যাবে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম হবে বৈদ্যুতিক গাড়ি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সারা বিশ্ব যখন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি বাড়বে।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াবে এককোটি ৮ লাখে। এ বিক্রি প্রাক-মহামারি পর্যায়ের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অন্যান্য অনেক খাতের মতো এ ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দেবে চীন। আগামী এক বছরের মধ্যে চীনের রাস্তায় বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে।
খাদ্য ও কৃষি
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০২৩ সালে খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে। জাতিসংঘের আশঙ্কা, ১ কোটি ৯ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগবে আর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮৩ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে। অনেক অঞ্চলে ফসলের ফলন কমে যাবে। গম ও ভুট্টার উৎপাদন কমবে, তবে চালের উৎপাদন বাড়বে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য ও পানীয় এবং পশুখাদ্যের মূল্য সূচক ১২ শতাংশ কমতে পারে। ব্যয় কমাতে ভোক্তারা গমের বদলে বাজরা কিংবা সূর্যমুখী তেলের পরিবর্তে অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেলে স্বাদ পরিবর্তন করবে। খাদ্য সরবরাহ ঝুঁকির পাশাপাশি কিছু দেশ নতুন খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটতে পারে। ফলে দাম বৃদ্ধি পেতে পারে খাদ্য ও কৃষি খাতে। আর এতে লাভবান হবে খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলো। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কমতে পারে। যা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের ৮৩ কোটি ক্ষুধার্ত মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।
পর্যটন খাত
বিশ্বজুড়ে পর্যটন খাত গেল বছর থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে এ খাতে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। তবে পর্যটন খাত প্রাক-মহামারির পর্যায়ে ফিরবে না বলে জানিয়েছে অনেক সংস্থা। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা, চীনে করোনার বিধিনিষেধ, অর্থনীতির শ্লথগতি—এসব কারণে বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের ভ্রমণ ব্যাহত হবে। এ ছাড়া এখনো অনেকে সশরীরে যাওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে সাক্ষাৎ পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন। তবে এত কিছু সত্ত্বেও বিমান সংস্থাগুলো মুনাফার ধারায় ফিরবে বলে জানিয়েছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তবে সেটি প্রাক-মহামারির পর্যায়ের নিচেই থাকবে।
বিজ্ঞাপন
মহামারি পরবর্তী ব্যয় বৃদ্ধির পর বিজ্ঞাপন ব্যবসা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছে বলতে হয়। তবে বিজ্ঞাপন জায়ান্ট ডেন্টসু আশা করছে, বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞাপনের আয় ২০২৩ সালে ৫ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৭৮ হাজার কোটিতে উন্নীত হবে। এ ছাড়া মহামারির সময়ে শুরু হওয়া ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ধারা অব্যাহত থাকবে। এর মধ্যে, জনপ্রিয় বিভিন্ন গেম এবং ছোট ভিডিওর জন্য মোবাইল বিজ্ঞাপনের ব্যয় দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার হু হু করে বাড়ছে। বিশেষ করে ব্রাজিল এবং ভারত—এই খাতে নেতৃত্ব দেবে। তবে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা সুরক্ষা নিয়ে আগের তুলনায় উদ্বেগ বাড়বে।
বিনোদন
নতুন সাবস্ক্রাইবার পাওয়া কঠিন হওয়ায় এবং প্রতিযোগিতার বাজার কঠিন হয়ে উঠলেও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো কনটেন্ট তৈরিতে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে এ বছর। যেমন-স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্স বার্ষিক ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনায় অবিচল থাকতে পারে। করোনা আতঙ্ক কমে যাওয়ার সাথে সাথে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এ খাতে আরও বেশি অর্থ লগ্নিতে মনোনিবেশ করতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে বক্স অফিস আয় ২০১৯ সালের আয়কে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো মাসিক ফি বৃদ্ধির কারণে সাবস্ক্রাইবার হারাবে। তবে এ ক্ষেত্রে ঘাটতি মেটাতে নতুন নতুন পরিষেবা যুক্ত করতে পারে কোম্পানিগুলো। যেমন, ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারি প্লাস ও এইচবিও ম্যাক্সের সমন্বয়ে একটি পরিষেবা চালু করবে। এরই মধ্যে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও বিশ্বকাপের মতো খেলা সম্প্রচারে বেশ সাড়া ফেলেছে। ২০২৩ সাল থেকে অ্যাপল টিভি প্লাস আমেরিকার মেজর লিগ সকার সরাসরি সম্প্রচার করবে। সব মিলিয়ে এ বছর বিনোদন খাত যে বেশ ভালোই ব্যবসা করবে, তার আভাস মিলছে।
স্বাস্থ্যসেবা
২০২৩ সালেও করোনাভাইরাস আরও অনেকের প্রাণ নিতে পারে। যদি কোনো বিপজ্জনক নতুন ধরন না বের হয় তবে এ সংখ্যা ফ্লুতে মৃতের সংখ্যার চেয়ে অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসতে পারে। ২০২৩ সালে জন্মহার বৃদ্ধি ও শিশু মৃত্যুহার কমতে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘ। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর বিভিন্ন দেশের সরকার স্বাস্থ্য পরিচর্যা খাতে ব্যয় বাড়াতে অন্য খাতে অর্থায়ন কমানোর চেষ্টা করবে। ভারত থেকে শুরু করে নাইজেরিয়ার মতো দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করবে। এ ছাড়া ওষুধের দাম নামমাত্র বৃদ্ধি ও গড়ে একজন মানুষে চিকিৎসা ব্যয় ৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আর্থিক খাত
চলতি বছর বিশ্বে একটি মন্থর অর্থনীতি বিরাজ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের ব্যাংক খাত ২০২৩ সালে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। বিমা খাত, তহবিল ব্যবস্থাপনার মতো আর্থিক খাতের জন্যও এ পূর্বাভাস প্রযোজ্য। প্রযুক্তিভিত্তিক আর্থিক খাত ও ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্টরাও আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবেন। এ ছাড়া রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে পুঁজিবাজারে নতুন ক্ষতির মুখে পড়বে দেশটি। চীন যদি ২০২৩ সালে তাইওয়ান অধিগ্রহণ করে, তাহলে এই পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করেছে, ঝুঁকিপূর্ণ বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত ব্যাংকগুলোতে এ বছর মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়তে পারে।
করোনা মহামারির ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার আগেই গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বছর পার হতে চললেও যুদ্ধ শিগগির শেষ হবে এমন সুস্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত এখন পর্যন্ত মেলেনি। এমন বাস্তবতায় চলতি বছরও যে বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা খুব একটা ভালো যাবে না, তা ভবিতব্য।
২০২৩ সালে বিশ্ব অর্থনীতির প্রেক্ষাপটে প্রবৃদ্ধি সম্ভাবনাময় ১০টি বাণিজ্য ও শিল্প খাত কেমন যাবে সে বিষয়ে সম্প্রতি ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জ্বালানি, প্রযুক্তি, গাড়িশিল্প, প্রতিরক্ষা, ভোগ্যপণ্য, খুচরা বিক্রয়, আর্থিক সেবা, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন, বিজ্ঞাপন ও বিনোদন- এই খাতগুলি চলতি বছর ঠিক কেমন যেতে পারে, তা তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে।
জ্বালানি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বেড়েই চলেছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে ডলারের দামও। ফলে সংকটে জ্বালানি আমদানিকারক দেশগুলো। এরই মধ্যে আবার ওপেক ও সহযোগী দেশগুলো তেলের দাম বাড়াতে উৎপাদন কমানোর বিষয়ে একমত হয়েছে। এছাড়া রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির তেল ও গ্যাস উৎপাদন কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সংগত কারণেই ২০২৩ সালে জ্বালানির ব্যবহারও কমে যাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। কিন্তু ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট বলছে, ২০২৩ সালে বিশ্বের জ্বালানি ব্যবহার ১ দশমিক ৫ শতাংশ বাড়বে। বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদা প্রাক-মহামারির মাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। ওপেক ও সহযোগী দেশগুলোর উৎপাদন কিছুটা বাড়ানোয় দাম কমলেও তা হবে নামমাত্র।
প্রযুক্তি
২০২০ ও ২০২১ সালে অর্থনীতির অন্যান্য খাতে মন্দা থাকলেও প্রযুক্তি খাত ভালো করেছিল। তবে অর্থনৈতিক মন্দার ঝুঁকি এবং সুদের হার বৃদ্ধির মতো বিষয় ২০২৩ সালে প্রযুক্তি খাতের ব্যয় কমাতে পারবে না। এ বছর প্রযুক্তিগত ব্যয় আগের বছরের চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পাবে। তবে সাইবার হামলা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের তথ্যমতে, যন্ত্রাংশ বিক্রি আশঙ্কাজনক হারে কমে যাবে। কিন্তু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বাজার ফুলে ফেঁপে ৫০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছাবে।
প্রতিরক্ষা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও তাইওয়ান ইস্যু নিয়ে উত্তেজনা বিভিন্ন দেশের সরকার প্রতিরক্ষা বাজেট শক্তিশালী করবে। বিশ্বের বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাজেটের দেশ যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে এই খাতে প্রায় ৯ শতাংশ ব্যয় বাড়াবে। এবছর দেশটির প্রতিরক্ষা ব্যয় ৮০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হবে বলে আভাস মিলেছে, যা দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা চীনের চেয়ে তিনগুণ বেশি। তবে মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য করতে গিয়ে সংকুচিত হতে পারে মার্কিনীদের বাজেট। জাপান এবং জার্মানি আগামী পাঁচ বছরে প্রতিরক্ষা খাতে জিডিপির ২ শতাংশ ব্যয় করার লক্ষ্য অনুসরণ করবে। এ ছাড়া ন্যাটো উদ্ভাবনী তহবিল প্রসারিত করলে আমেরিকা গবেষণা ব্যয় বাড়াতে পারে। তবে ২০২৩ সালে জনশক্তিও গুরুত্বপূর্ণ হবে, বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপে।
গাড়ি নির্মাণ
২০২৩ সালে নতুন গাড়ি বিক্রি বাড়বে মাত্র এক শতাংশ। তবে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রির হার বাড়তে পারে ২৫ শতাংশ। অটোমোটিভ বা গাড়ি নির্মাণ শিল্পের অবস্থা খুব একটা ভালো যাবে না বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম হবে বৈদ্যুতিক গাড়ি। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সারা বিশ্ব যখন জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি বাড়বে।
ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি ২৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়াবে এককোটি ৮ লাখে। এ বিক্রি প্রাক-মহামারি পর্যায়ের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি হবে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অন্যান্য অনেক খাতের মতো এ ক্ষেত্রেও নেতৃত্ব দেবে চীন। আগামী এক বছরের মধ্যে চীনের রাস্তায় বৈদ্যুতিক গাড়ির সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হতে পারে।
খাদ্য ও কৃষি
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ২০২৩ সালে খাদ্যঘাটতি দেখা দিতে পারে। জাতিসংঘের আশঙ্কা, ১ কোটি ৯ লাখ মানুষ অপুষ্টিতে ভুগবে আর বিশ্বব্যাপী প্রায় ৮৩ কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়বে। অনেক অঞ্চলে ফসলের ফলন কমে যাবে। গম ও ভুট্টার উৎপাদন কমবে, তবে চালের উৎপাদন বাড়বে।
ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, খাদ্য ও পানীয় এবং পশুখাদ্যের মূল্য সূচক ১২ শতাংশ কমতে পারে। ব্যয় কমাতে ভোক্তারা গমের বদলে বাজরা কিংবা সূর্যমুখী তেলের পরিবর্তে অন্যান্য উদ্ভিজ্জ তেলে স্বাদ পরিবর্তন করবে। খাদ্য সরবরাহ ঝুঁকির পাশাপাশি কিছু দেশ নতুন খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞার পথে হাঁটতে পারে। ফলে দাম বৃদ্ধি পেতে পারে খাদ্য ও কৃষি খাতে। আর এতে লাভবান হবে খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য রপ্তানিকারক দেশগুলো। এ ছাড়া নিত্যপণ্যের দামে ঊর্ধ্বগতি কিছুটা কমতে পারে। যা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি বিশ্বের ৮৩ কোটি ক্ষুধার্ত মানুষকে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেবে।
পর্যটন খাত
বিশ্বজুড়ে পর্যটন খাত গেল বছর থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে এ খাতে ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে। তবে পর্যটন খাত প্রাক-মহামারির পর্যায়ে ফিরবে না বলে জানিয়েছে অনেক সংস্থা। রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা, চীনে করোনার বিধিনিষেধ, অর্থনীতির শ্লথগতি—এসব কারণে বিশ্বজুড়ে পর্যটকদের ভ্রমণ ব্যাহত হবে। এ ছাড়া এখনো অনেকে সশরীরে যাওয়ার পরিবর্তে অনলাইনে সাক্ষাৎ পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন। তবে এত কিছু সত্ত্বেও বিমান সংস্থাগুলো মুনাফার ধারায় ফিরবে বলে জানিয়েছে ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট। তবে সেটি প্রাক-মহামারির পর্যায়ের নিচেই থাকবে।
বিজ্ঞাপন
মহামারি পরবর্তী ব্যয় বৃদ্ধির পর বিজ্ঞাপন ব্যবসা কঠিন সময়ের মুখোমুখি হয়েছে বলতে হয়। তবে বিজ্ঞাপন জায়ান্ট ডেন্টসু আশা করছে, বিশ্বব্যাপী বিজ্ঞাপনের আয় ২০২৩ সালে ৫ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৭৮ হাজার কোটিতে উন্নীত হবে। এ ছাড়া মহামারির সময়ে শুরু হওয়া ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ধারা অব্যাহত থাকবে। এর মধ্যে, জনপ্রিয় বিভিন্ন গেম এবং ছোট ভিডিওর জন্য মোবাইল বিজ্ঞাপনের ব্যয় দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার হু হু করে বাড়ছে। বিশেষ করে ব্রাজিল এবং ভারত—এই খাতে নেতৃত্ব দেবে। তবে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা সুরক্ষা নিয়ে আগের তুলনায় উদ্বেগ বাড়বে।
বিনোদন
নতুন সাবস্ক্রাইবার পাওয়া কঠিন হওয়ায় এবং প্রতিযোগিতার বাজার কঠিন হয়ে উঠলেও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো কনটেন্ট তৈরিতে মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ অব্যাহত রাখবে এ বছর। যেমন-স্ট্রিমিং জায়ান্ট নেটফ্লিক্স বার্ষিক ১ হাজার ৭০০ কোটি ডলার ব্যয়ের পরিকল্পনায় অবিচল থাকতে পারে। করোনা আতঙ্ক কমে যাওয়ার সাথে সাথে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা এ খাতে আরও বেশি অর্থ লগ্নিতে মনোনিবেশ করতে শুরু করেছে। ২০২৩ সালে বক্স অফিস আয় ২০১৯ সালের আয়কে ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। যদিও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলো মাসিক ফি বৃদ্ধির কারণে সাবস্ক্রাইবার হারাবে। তবে এ ক্ষেত্রে ঘাটতি মেটাতে নতুন নতুন পরিষেবা যুক্ত করতে পারে কোম্পানিগুলো। যেমন, ওয়ার্নার ব্রোস ডিসকভারি প্লাস ও এইচবিও ম্যাক্সের সমন্বয়ে একটি পরিষেবা চালু করবে। এরই মধ্যে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও বিশ্বকাপের মতো খেলা সম্প্রচারে বেশ সাড়া ফেলেছে। ২০২৩ সাল থেকে অ্যাপল টিভি প্লাস আমেরিকার মেজর লিগ সকার সরাসরি সম্প্রচার করবে। সব মিলিয়ে এ বছর বিনোদন খাত যে বেশ ভালোই ব্যবসা করবে, তার আভাস মিলছে।
স্বাস্থ্যসেবা
২০২৩ সালেও করোনাভাইরাস আরও অনেকের প্রাণ নিতে পারে। যদি কোনো বিপজ্জনক নতুন ধরন না বের হয় তবে এ সংখ্যা ফ্লুতে মৃতের সংখ্যার চেয়ে অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসতে পারে। ২০২৩ সালে জন্মহার বৃদ্ধি ও শিশু মৃত্যুহার কমতে পারে বলে মনে করছে জাতিসংঘ। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর বিভিন্ন দেশের সরকার স্বাস্থ্য পরিচর্যা খাতে ব্যয় বাড়াতে অন্য খাতে অর্থায়ন কমানোর চেষ্টা করবে। ভারত থেকে শুরু করে নাইজেরিয়ার মতো দেশ সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রসারিত করবে। এ ছাড়া ওষুধের দাম নামমাত্র বৃদ্ধি ও গড়ে একজন মানুষে চিকিৎসা ব্যয় ৫ শতাংশ বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আর্থিক খাত
চলতি বছর বিশ্বে একটি মন্থর অর্থনীতি বিরাজ করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বের ব্যাংক খাত ২০২৩ সালে আরও কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। বিমা খাত, তহবিল ব্যবস্থাপনার মতো আর্থিক খাতের জন্যও এ পূর্বাভাস প্রযোজ্য। প্রযুক্তিভিত্তিক আর্থিক খাত ও ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্টরাও আর্থিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হবেন। এ ছাড়া রাশিয়ার ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে পুঁজিবাজারে নতুন ক্ষতির মুখে পড়বে দেশটি। চীন যদি ২০২৩ সালে তাইওয়ান অধিগ্রহণ করে, তাহলে এই পরিস্থিতি আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে। এদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করেছে, ঝুঁকিপূর্ণ বৈদেশিক ঋণে জর্জরিত ব্যাংকগুলোতে এ বছর মুদ্রার অবমূল্যায়ন এবং ঋণ পরিশোধের বোঝা বাড়তে পারে।
গত সেপ্টেম্বরে ভ্লাদিভস্টকের একটি অর্থনৈতিক ফোরামে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। এ বিষয়ে পরে তিনি একটি উপহাসমূলক হাসি দিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
১৫ ঘণ্টা আগেআব্রাহাম অ্যাকর্ডস মূলত একটি চটকদার বিষয়। এতে বাস্তব, স্থায়ী আঞ্চলিক শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কিছুই এতে ছিল না। যেসব রাষ্ট্র এতে স্বাক্ষর করেছে তারা তা করেছে—কারণ, তারা ইসরায়েলকে ওয়াশিংটনে প্রভাব বিস্তারের পথ হিসেবে দেখে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ইসরায়েলের ওপর মার
৯ দিন আগেযুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বেখেয়ালি, সেটা আগা থেকেই সবার জানা। তবে দেশটির নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে এসেও তিনি অসংলগ্ন, অশ্লীল, স্বৈরতান্ত্রিক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। এ থেকে অন্তত একটি ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে একটি ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ সরকারের নেতৃত্ব দেবেন।
৯ দিন আগেএবারের আইএমইএক্স মহড়ায়ও কিছু দেশ আছে যারা আগেরবারও অংশগ্রহণ করেছিল। এসব দেশের নাম আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই মহড়ার একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো—ইরান ক্রমবর্ধমানভাবে নিজেকে এমন দেশগুলোর কক্ষপথে নিয়ে যাচ্ছে যেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত
১০ দিন আগে