সির পরাক্রমী ‘শাসনের সংকট’ থেকেই নতুন রূপ নেবে আগামীর চীন  

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২২, ১৫: ৫১
আপডেট : ১৪ অক্টোবর ২০২২, ১৬: ২৯

এক দশক আগে সি চিন পিং যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন সন্ধিক্ষণে ছিল দেশ। বাইরে থেকে চীনকে অদম্য পরাশক্তি মনে হচ্ছিল। দেশটি সবে জাপানকে ছাড়িয়ে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হয়েছিল। ২০০৮-এর বেইজিং সামার অলিম্পিক আয়োজনের বিগত চাকচিক্য তখনো দ্যুতি ছড়াচ্ছিল দেশটিতে। কিন্তু ঝংনানহাইয়ের উঁচু দেয়ালের বেশ ভেতরে কমিউনে (কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের যৌথ আবাস) বসে চীনের ভবিষ্যৎ নেতা দেখেছিলেন যে তাঁর দেশ সংকটে পড়েছে। এখানেই উদারপন্থি ভাইস প্রিমিয়ার বাবা সি ঝংজুনের সঙ্গে তাঁর শৈববকাল কেটেছিল।

নির্বিচার দুর্নীতি কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের মহামারির মতো আক্রান্ত করেছিল; তৈরি হয়েছিল জন অসন্তোষের। এভাবে বাবার সমর্থিত সরকারের বৈধতা হারাতে দেখছিলেন তিনি। অর্থনৈতিক সংস্কারের কয়েক দশকে ধনি হওয়ার দৌড় মানুষের মধ্যে সম্পদের বৈষম্য বাড়ানোর পাশাপাশি সমাজতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার ওপর অনাস্থা তৈরি করেছিল। আরব বসন্তের জোয়ারে যখন মধ্যপ্রাচ্যে স্বৈরশাসনের পতন ঘটছিল, তখন চীনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের উত্থান জন অসন্তোষের বিরল পরিসর তৈরি করেছিল। সব মিলে সামাজিক বিচার ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের জন্য সম্মিলিত আওয়াজ ওঠে।

আগে থেকেই এসব চ্যালেঞ্জ বুঝে নিয়েছিলেন সি। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা বিপ্লবী বীরের ঘরে জন্ম এই ‘রাজপুত্র’ নিজেকে তখন থেকেই চীনের নেতা ও ত্রাতা হিসেবে প্রস্তুত করছিলেন। টিকে থাকার পথে এসব হুমকি থেকে দলকে আগলে রেখে নেতৃত্ব দিতে তাঁর ওপর আস্থাও ছিল। কিন্তু বাবার সংস্কারপন্থি পদাঙ্ক অনুসরণ না করে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের পথে হাঁটেন সি। পুরোনো কর্তৃত্ববাদী ধারা ও নতুন নজরদারি প্রযুক্তির সংমিশ্রণের প্রয়োগে তিনি বিরোধী পক্ষকে নির্মূল করেছেন, অর্থনীতিতে নিজের মুষ্ঠি জোরালো করেছেন এবং দলকে চীনের সর্বময় ক্ষমতাধর বানিয়েছেন। এর মাধ্যমে দৈনন্দিন জীবনে নিজের ব্যক্তিত্বকে ‘গুরু’র রূপ দিয়েছেন।

হারানো গৌরব পুনরুদ্ধার করে বিশ্বদরবারে চীনকে তার উপযুক্ত আসনে প্রতিষ্ঠা করার লোভনীয় রূপকল্প হাজির করে জাতীয় পুনর্জাগরণের ‘চীনা স্বপ্ন’ স্লোগান সামনে রেখে সি এগোতে থাকেন। লোয়ি ইনস্টিটিউট ইন অস্ট্রেলিয়ার জ্যেষ্ঠ ফেলো রিচার্ড ম্যাকগ্রেগর সিএনএনকে বলেন, ‘দলের শীর্ষে সি চিন পিং, চীনের শীর্ষে আসীন দল। আর সারা বিশ্বের ওপর চীন বসে—মূলত এটাই তার কর্মসূচি।’

১০ বছর পার হয়েছে, এর মধ্যে সির চীন আরও ধনি, শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী হয়েছে। ঠিক একইভাবে আরও কর্তৃত্বপরায়ণ, অন্তর্মুখী ও আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে, যা কয়েক দশকের মধ্যে দেখা যায়নি। চীনের আন্তর্জাতিক প্রভাববলয়ও বেড়েছে, তবে তার জন্য পশ্চিমাসহ বিভিন্ন প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়েছে।

রোববার শুরু হতে যাওয়া দলের কংগ্রেসে রীতি ভেঙে তৃতীয়বারের মতো দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে নিয়োগ পেতে যাচ্ছেন। এর মাধ্যমে চেয়ারম্যান মাও জে দংয়ের পর চীনের সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর নেতা হিসেবে তাঁর অভিষেক হতে যাচ্ছে। এতে আজীবন ক্ষমতায় থাকার তাঁর রাস্তাও পরিষ্কার হবে।

তবে চীনের অর্থনীতির চরম শ্লথগতি, কোভিডের কড়া বিধিনিষেধ, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে উত্তেজনা এবং ক্ষমতা পোক্ত হওয়ার যে সংকট সি চিন পিংয়ের পিছু নিয়েছে, তা সামনের কয়েক দশক না হলেও, কয়েক বছরে তাঁর শাসনকে নতুন রূপ দেবে বলে ধরে নেওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত