Ajker Patrika

বিবিসির প্রতিবেদন /পুতিন-ট্রাম্প জুটি এক সপ্তাহেই ভিত নাড়িয়ে দিল বিশ্বকূটনীতির

অনলাইন ডেস্ক
২০১৭ সালে ভিয়েতনামে এপেক সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি
২০১৭ সালে ভিয়েতনামে এপেক সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: এএফপি

আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বিশ্বকূটনীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছেন। এসবের শুরু হয় ১২ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প-পুতিন ফোনালাপের মধ্য দিয়ে। এই ফোনালাপে তাঁরা সম্পর্ক পুনর্গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন। এরপরই মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনের ডাক দেয় ইউরোপের দেশগুলো; যা আমেরিকার সঙ্গে তাদের বিভাজনকে আরও প্রকট করে।

অন্যদিকে, রাশিয়া-আমেরিকার বৈঠক আয়োজন করে কূটনৈতিকভাবে নিজেদের শক্তিশালী অবস্থান প্রকাশ করেছে সৌদি আরব। একসময় প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়া সৌদি আরবের জন্য একটি বড় অর্জন।

তবে এই কূটনৈতিক পালাবদলে কঠিন অবস্থায় পড়েছে ইউরোপ ও ইউক্রেন। ইউরোপের নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন শঙ্কা। অন্যদিকে, এই সুযোগে রাশিয়া তাঁর কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন করেছে; কাউকে কোনো ছাড় না দিয়েই আন্তর্জাতিক আলোচনার শীর্ষ টেবিলে জায়গা করে নিয়েছে।

রাশিয়ার সংবাদপত্রগুলো তাদের প্রথম পাতায় সৌদি আরবে হওয়া আমেরিকা-রাশিয়া বৈঠকের ছবি ছেপেছে। তাদের বার্তা স্পষ্ট—‘পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে একঘরে করতে ব্যর্থ হয়েছে।’

ক্রেমলিনের একটি পত্রিকা লিখেছে, ‘ট্রাম্প জানেন, রাশিয়াকে কিছু ছাড় দিতে হবে। কারণ ইউক্রেনে রাশিয়া বিজয়ী পক্ষ। কিন্তু তিনি আমেরিকার স্বার্থ জলাঞ্জলি দেবেন না, বরং ইউরোপ ও ইউক্রেনকেই এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে।’

পত্রিকাটি আরও লিখেছে, ‘ইউরোপ এত দিন নিজেকে ‘‘সভ্য জগতের’’ অংশ ভেবে অহংকার করত। অথচ এখন তাদের গায়ে কাপড় নেই।’

তবে মস্কোর রাস্তায় সাধারণ মানুষের মাঝে এতটা উচ্ছ্বাস দেখা যায়নি। তাঁরা দেখছেন, অপেক্ষা করছেন আর ভাবছেন—ট্রাম্প সত্যিই রাশিয়ার নতুন বন্ধু হয়ে উঠবেন কি না এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কোনো ভূমিকা রাখবেন কি না।

নাদেজদা নামে ক্রেমলিনের এক বাসিন্দা বলেন, ‘ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। তিনি শুধু টাকা কামাতে চান। আমি মনে করি না যে, কোনো কিছুর পরিবর্তন হবে।’

জিওর্গি নামের আরেকজন বলেন, ‘সৌদি আরবের এই আলোচনা হয়তো কাজে দেবে। আমাদের শত্রুতা বন্ধ করার সময় এসেছে।’

ইরিনা নামের একজন বলেন, ‘ট্রাম্প খুবই সক্রিয় ও উদ্যমী ব্যক্তি। কিন্তু তিনি যে কথা বললেন, তেমনটা করবেন তো?’

রাশিয়ার অনেক মানুষই আশা করছেন, এই আলোচনার মাধ্যমে যুদ্ধ শেষ হবে এবং রাশিয়ার অর্থনীতির উন্নতি হবে। ইউক্রেন যুদ্ধে জড়িয়ে খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের দাম বৃদ্ধি, রাশিয়ার সাধারণ মানুষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রিয়াদে মার্কিন-রুশ প্রতিনিধিদের একটি আলোচনা হয়েছে। এখানে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও উপস্থিত ছিলেন। তিনি আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের জানান, ইউক্রেন ইস্যুতে ট্রাম্প-পুতিন শীর্ষ সম্মেলনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারিত হয়নি। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, তিনি এ মাসেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দেখা করতে পারেন।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পুতিন ও ট্রাম্পের সম্ভাব্য বৈঠক বিশ্বরাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এটি ন্যাটো ও ইউক্রেনের জন্য ঝুঁকি বয়ে আনবে। আর ইউক্রেনকে যদি বেশি ছাড় দিতে হয়, তবে দেশটি সার্বভৌমত্ব হারাবে।

রুশ সংবাদপত্র মস্কোভোস্কি কমসোমোলেটস মজার ছলে লিখেছে, পুতিনকে ফোন করেছেন ট্রাম্প—ট্রাম্প: ‘পুতিন! তোমার দেশ তো দারুণ, আমার দেশও দারুণ। আমরা পুরো বিশ্বটা ভাগাভাগি করে নিতে পারি না?’

পুতিন: ‘আমি তো এমনটাই বলেছিলাম! চল শুরু করি!...’

এটি কি কেবলই কল্পনা? নাকি বাস্তবতা? সময়ই দেবে এর উত্তর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত