মারুফ ইসলাম
যেকোনো সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায় সবার আগে তা চিহ্নিত করা। এই মুহূর্তে পশ্চিমা নেতাদের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা চীনকে তাঁরা কী হিসেবে চিহ্নিত করবেন—‘প্রতিযোগী’ না ‘প্রতিপক্ষ’।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস চীনকে একবার ‘হুমকি’ আখ্যা দেন। সেই আখ্যাকে ‘অফিশিয়াল’ ঘোষণায় পরিণত করার আগেই প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন তিনি। তাঁর উত্তরসূরি ঋষি সুনাক এখন পর্যন্ত চীনকে ‘পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ’ বলছেন, সরাসরি ‘হুমকি’ বলেননি। তবে এমপিরা চীনকে যুক্তরাজ্যের জন্য হুমকি ঘোষণা দিতে চাপ দিচ্ছেন।
চীন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কী সিদ্ধান্ত নেয়, আপাতত তা দেখার অপেক্ষায় আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য তার মিত্রদের ছাড়া এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।
এ মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা রাজ্যের আকাশে সন্দেহজনক ‘স্পাই বেলুন’ শনাক্ত করে ওয়াশিংটন। সেটি উড়তে উড়তে আটলান্টিক মহাসাগরের ওপরে গেলে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে গুলি করে বেলুনটি ধ্বংস করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আলাস্কা রাজ্যের আকাশেও তেমন বেলুন উড়তে দেখার পর সেটিকেও গুলি করে ভূপাতিত করে যুদ্ধবিমান। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, গুপ্তচরবৃত্তির উদ্দেশ্যে চীন এসব বেলুন তার আকাশে পাঠিয়েছে। তবে চীন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, সেগুলো ছিল ‘আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ’ বেলুন, স্পাই বেলুন নয়। চীন ইচ্ছা করে পাঠায়নি, বরং পথ ভুল করে উড়তে উড়তে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চলে গেছে।
চীনের এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন তাঁর পূর্বনির্ধারিত বেইজিং সফর স্থগিত করেছেন।
এরই মধ্যে গতকাল বুধবার চীনের জিনজিয়াং ও তিব্বতের আকাশে দুটি বেলুন শনাক্ত করেছে চীন। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি চীনের কিংডাও বন্দরের আকাশে একটি বেলুন উড়তে দেখা গেছে। চীনের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র এসব গোয়েন্দা বেলুন পাঠাচ্ছে চীনের আকাশে। তাদের দাবি, গত বছরের মে মাস থেকে এ পর্যন্ত চীনের আকাশে ১০ বারের বেশি বেলুন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চীনের এসব দাবি ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে ওয়াশিংটন সম্প্রতি নজরদারি বেলুন কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছয় চীনা সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এরপর চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিং কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে; শক্তির অপব্যবহার করছে এবং একই সঙ্গে অবৈধভাবে চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
চীনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র আঘাত হানলে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ওয়াং ওয়েনবিং।
সাম্প্রতিক এই বেলুনকাণ্ড দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। যদিও প্রকাশ্যে তারা তা স্বীকার করছে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বেলুনকাণ্ডে দুই দেশের সম্পর্ক দুর্বল হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যানও বলেছেন, চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়নি। ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের কোনো বৈঠক হবে কি না, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। তবে সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এ সপ্তাহে জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠেয় নিরাপত্তা সম্মেলনে ওয়াং ওয়েনবিংয়ের সঙ্গে ব্লিনকেন সাক্ষাৎ করবেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলপত্রে রাশিয়াকে ‘তীব্র হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আর চীনকে ‘প্রতিযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এখন বাইডেন প্রশাসন কী করবে সেটি দেখার বিষয়। চীনকে তিনি প্রতিযোগীর কাতারেই রাখবেন নাকি প্রতিপক্ষের কাতারে ফেলবেন।
বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নানা দিক থেকে চীনের প্রভাব বাড়ছে। ফলে চীনকে এখনই কোনো বিশেষ ক্যাটাগরিতে ফেলার সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। এ কারণেই ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস মারফি বলেছেন, সেই পুরোনো আমলের ঠান্ডাযুদ্ধ আবার শুরু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ফরেন পলিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্রিস মারফি বলেছেন, ‘সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বিরোধের সময় আমরা যেসব পরিভাষা ব্যবহার করতাম, চীনের সঙ্গে বিরোধের ক্ষেত্রে সেই একই পরিভাষা ব্যবহার করা উচিত হবে না। কারণ একটি আপেল আরেকটি কমলা—দুটি দুই জিনিস। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের কোনো বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে হওয়া ঠান্ডাযুদ্ধ আর চীনের সঙ্গে ঠান্ডাযুদ্ধ এক নয়। দুটির ধরন ভিন্ন।’
বিষয়টি মাথায় রেখেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, সম্পর্কটি হওয়া উচিত কখনো কখনো প্রতিযোগিতামূলক, কখনো কখনো সহযোগিতামূলক এবং কখনো কখনো প্রতিপক্ষের মতো।
এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশ্বব্যাপী চীনের দাপট মোকাবিলায় ওয়াশিংটন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এ প্রতিযোগিতাকে যুক্তরাষ্ট্র বেশ উপভোগই করছে বলে মনে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ধরে নিয়েছে, প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র চীনের চেয়ে ভালো করবে এবং তাদের গণতান্ত্রিক মডেলটিও একসময় জিতবে।
সেই লক্ষ্যে তারা কাজও করছে। বাইডেন প্রশাসন এখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে বন্ধ মিশন পুনরায় চালু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনকে মোকাবিলার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘চায়না হাউস’ খোলা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, উদীয়মান শক্তির দেশ চীনকে মোকাবিলার জন্য বেশ আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সব সময় যে প্রতিপক্ষ হিসেবেই চীনকে মোকাবিলা করা হবে তা নয়, কখনো কখনো সহযোগিতার হাত বাড়িয়েও চীনকে মোকাবিলা করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। যেমন মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান বলেছেন, জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেইজিংয়ের সঙ্গে কাজ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
তবে জলবায়ু ছাড়া আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পর প্রতিপক্ষ ছাড়া আর কিছু নয়। দুই দেশের গোয়েন্দা প্রতিযোগিতায় সাম্প্রতিক ‘বেলুনকাণ্ড’ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর মধ্যে গোয়েন্দা তৎপরতায় গত কয়েক বছরে চীন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের নকশা চুরি করেছে চীন। এ ছাড়া চীনা হ্যাকাররা ২ কোটি ২০ লাখ ফেডারেল কর্মীর ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করেছে।
চীনের প্রযুক্তি খাতের অবিশ্বাস্য উত্থান ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপটি হচ্ছে, গত বছরের অক্টোবরে সেমিকন্ডাক্টরগুলোর ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাইডেন প্রশাসন। এটি চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এক অঘোষিত অর্থনৈতিক যুদ্ধ। তবে মার্কিন রিপাবলিকানরা চীনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ চান। তাঁরা বাইডেনের এই পদক্ষেপকে ‘অপেক্ষাকৃত দুর্বল পদক্ষেপ’ বলছেন। রিপাবলিকানরা চীনা অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া চীনা নাগরিকেরা যাতে যুক্তরাষ্ট্রে জমি কিনতে না পারেন, সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
চীনের সঙ্গে প্রতিপক্ষ হিসেবে লড়াই করার আরকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হচ্ছে সামরিক ক্ষেত্র। আপাতত দুই দেশের সামরিক ক্ষেত্র প্রতিযোগিতামূলক হলেও অচিরেই এটি প্রতিপক্ষমূলক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। গত সপ্তাহে পেন্টাগন বলেছে, চীনের কাছে এখন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীন কতটা হুমকি হয়ে উঠবে তা নির্ভর করবে তাইওয়ান সীমান্তে চীন কতটা সামরিক শক্তি জড়ো করবে, তার ওপর। গত মাসের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার মোবিলিটি কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইক মিনিহান তাঁর অধীনস্থ কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যুদ্ধে জড়াতে পারে।’
এটি নিঃসন্দেহে একটি অনুমান। এ অনুমানকে পেন্টাগনসহ অন্যরা অবশ্য নাকচ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক পরাজয় বেশ ভালোভাবেই খেয়াল করছেন। সুতরাং তিনি যুদ্ধের বিকল্প খুঁজবেন এবং সেটাই স্বাভাবিক।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, চীনকে বারবার ‘হুমকি’ হিসেবে উপস্থাপন করা উচিত হবে না। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক চরম মাত্রায় অবনতি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। তার চেয়ে এমন নীতি অবলম্বন করা উচিত, যাতে স্বাভাবিক নিয়মেই যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবে পরিণত হয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, বিবিসি ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
যেকোনো সমস্যা সমাধানের প্রধান উপায় সবার আগে তা চিহ্নিত করা। এই মুহূর্তে পশ্চিমা নেতাদের সামনে সবচেয়ে বড় সমস্যা চীনকে তাঁরা কী হিসেবে চিহ্নিত করবেন—‘প্রতিযোগী’ না ‘প্রতিপক্ষ’।
সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস চীনকে একবার ‘হুমকি’ আখ্যা দেন। সেই আখ্যাকে ‘অফিশিয়াল’ ঘোষণায় পরিণত করার আগেই প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন তিনি। তাঁর উত্তরসূরি ঋষি সুনাক এখন পর্যন্ত চীনকে ‘পদ্ধতিগত চ্যালেঞ্জ’ বলছেন, সরাসরি ‘হুমকি’ বলেননি। তবে এমপিরা চীনকে যুক্তরাজ্যের জন্য হুমকি ঘোষণা দিতে চাপ দিচ্ছেন।
চীন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কী সিদ্ধান্ত নেয়, আপাতত তা দেখার অপেক্ষায় আছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছেন, এ বিষয়ে যুক্তরাজ্য তার মিত্রদের ছাড়া এককভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না।
এ মাসের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রের মন্টানা রাজ্যের আকাশে সন্দেহজনক ‘স্পাই বেলুন’ শনাক্ত করে ওয়াশিংটন। সেটি উড়তে উড়তে আটলান্টিক মহাসাগরের ওপরে গেলে যুদ্ধবিমান পাঠিয়ে গুলি করে বেলুনটি ধ্বংস করে যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আলাস্কা রাজ্যের আকাশেও তেমন বেলুন উড়তে দেখার পর সেটিকেও গুলি করে ভূপাতিত করে যুদ্ধবিমান। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, গুপ্তচরবৃত্তির উদ্দেশ্যে চীন এসব বেলুন তার আকাশে পাঠিয়েছে। তবে চীন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, সেগুলো ছিল ‘আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ’ বেলুন, স্পাই বেলুন নয়। চীন ইচ্ছা করে পাঠায়নি, বরং পথ ভুল করে উড়তে উড়তে যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চলে গেছে।
চীনের এই ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন তাঁর পূর্বনির্ধারিত বেইজিং সফর স্থগিত করেছেন।
এরই মধ্যে গতকাল বুধবার চীনের জিনজিয়াং ও তিব্বতের আকাশে দুটি বেলুন শনাক্ত করেছে চীন। এর আগে গত ১০ ফেব্রুয়ারি চীনের কিংডাও বন্দরের আকাশে একটি বেলুন উড়তে দেখা গেছে। চীনের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র এসব গোয়েন্দা বেলুন পাঠাচ্ছে চীনের আকাশে। তাদের দাবি, গত বছরের মে মাস থেকে এ পর্যন্ত চীনের আকাশে ১০ বারের বেশি বেলুন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে চীনের এসব দাবি ‘মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে ওয়াশিংটন সম্প্রতি নজরদারি বেলুন কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত ছয় চীনা সংস্থাকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। এরপর চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিং কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছেন। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে; শক্তির অপব্যবহার করছে এবং একই সঙ্গে অবৈধভাবে চীনা কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
চীনের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র আঘাত হানলে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন ওয়াং ওয়েনবিং।
সাম্প্রতিক এই বেলুনকাণ্ড দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়িয়েছে। যদিও প্রকাশ্যে তারা তা স্বীকার করছে না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, বেলুনকাণ্ডে দুই দেশের সম্পর্ক দুর্বল হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না।
যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যানও বলেছেন, চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ হয়নি। ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের কোনো বৈঠক হবে কি না, সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি। তবে সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, এ সপ্তাহে জার্মানির মিউনিখে অনুষ্ঠেয় নিরাপত্তা সম্মেলনে ওয়াং ওয়েনবিংয়ের সঙ্গে ব্লিনকেন সাক্ষাৎ করবেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলপত্রে রাশিয়াকে ‘তীব্র হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। আর চীনকে ‘প্রতিযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এখন বাইডেন প্রশাসন কী করবে সেটি দেখার বিষয়। চীনকে তিনি প্রতিযোগীর কাতারেই রাখবেন নাকি প্রতিপক্ষের কাতারে ফেলবেন।
বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নানা দিক থেকে চীনের প্রভাব বাড়ছে। ফলে চীনকে এখনই কোনো বিশেষ ক্যাটাগরিতে ফেলার সমস্যা রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। এ কারণেই ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস মারফি বলেছেন, সেই পুরোনো আমলের ঠান্ডাযুদ্ধ আবার শুরু হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ফরেন পলিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্রিস মারফি বলেছেন, ‘সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে বিরোধের সময় আমরা যেসব পরিভাষা ব্যবহার করতাম, চীনের সঙ্গে বিরোধের ক্ষেত্রে সেই একই পরিভাষা ব্যবহার করা উচিত হবে না। কারণ একটি আপেল আরেকটি কমলা—দুটি দুই জিনিস। সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে আমাদের কোনো বাণিজ্য সম্পর্ক ছিল না। কিন্তু চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক রয়েছে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুতরাং সোভিয়েত ইউনিয়নের সঙ্গে হওয়া ঠান্ডাযুদ্ধ আর চীনের সঙ্গে ঠান্ডাযুদ্ধ এক নয়। দুটির ধরন ভিন্ন।’
বিষয়টি মাথায় রেখেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছেন, সম্পর্কটি হওয়া উচিত কখনো কখনো প্রতিযোগিতামূলক, কখনো কখনো সহযোগিতামূলক এবং কখনো কখনো প্রতিপক্ষের মতো।
এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশ্বব্যাপী চীনের দাপট মোকাবিলায় ওয়াশিংটন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এ প্রতিযোগিতাকে যুক্তরাষ্ট্র বেশ উপভোগই করছে বলে মনে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ধরে নিয়েছে, প্রযুক্তির প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র চীনের চেয়ে ভালো করবে এবং তাদের গণতান্ত্রিক মডেলটিও একসময় জিতবে।
সেই লক্ষ্যে তারা কাজও করছে। বাইডেন প্রশাসন এখন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তার কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি দেশে বন্ধ মিশন পুনরায় চালু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনকে মোকাবিলার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘চায়না হাউস’ খোলা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, উদীয়মান শক্তির দেশ চীনকে মোকাবিলার জন্য বেশ আটঘাট বেঁধেই মাঠে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র।
সব সময় যে প্রতিপক্ষ হিসেবেই চীনকে মোকাবিলা করা হবে তা নয়, কখনো কখনো সহযোগিতার হাত বাড়িয়েও চীনকে মোকাবিলা করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। যেমন মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়েন্ডি শেরম্যান বলেছেন, জলবায়ুর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেইজিংয়ের সঙ্গে কাজ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
তবে জলবায়ু ছাড়া আরও অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পরস্পর প্রতিপক্ষ ছাড়া আর কিছু নয়। দুই দেশের গোয়েন্দা প্রতিযোগিতায় সাম্প্রতিক ‘বেলুনকাণ্ড’ নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এর মধ্যে গোয়েন্দা তৎপরতায় গত কয়েক বছরে চীন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করছে, তা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। প্রমাণ হিসেবে বলা যায়, মার্কিন এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানের নকশা চুরি করেছে চীন। এ ছাড়া চীনা হ্যাকাররা ২ কোটি ২০ লাখ ফেডারেল কর্মীর ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করেছে।
চীনের প্রযুক্তি খাতের অবিশ্বাস্য উত্থান ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপটি হচ্ছে, গত বছরের অক্টোবরে সেমিকন্ডাক্টরগুলোর ওপর রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বাইডেন প্রশাসন। এটি চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের এক অঘোষিত অর্থনৈতিক যুদ্ধ। তবে মার্কিন রিপাবলিকানরা চীনের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ চান। তাঁরা বাইডেনের এই পদক্ষেপকে ‘অপেক্ষাকৃত দুর্বল পদক্ষেপ’ বলছেন। রিপাবলিকানরা চীনা অ্যাপ টিকটক নিষিদ্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া চীনা নাগরিকেরা যাতে যুক্তরাষ্ট্রে জমি কিনতে না পারেন, সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
চীনের সঙ্গে প্রতিপক্ষ হিসেবে লড়াই করার আরকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হচ্ছে সামরিক ক্ষেত্র। আপাতত দুই দেশের সামরিক ক্ষেত্র প্রতিযোগিতামূলক হলেও অচিরেই এটি প্রতিপক্ষমূলক হয়ে ওঠার সম্ভাবনা রয়েছে। গত সপ্তাহে পেন্টাগন বলেছে, চীনের কাছে এখন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে বেশি ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য চীন কতটা হুমকি হয়ে উঠবে তা নির্ভর করবে তাইওয়ান সীমান্তে চীন কতটা সামরিক শক্তি জড়ো করবে, তার ওপর। গত মাসের শেষের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের এয়ার মোবিলিটি কমান্ডের প্রধান জেনারেল মাইক মিনিহান তাঁর অধীনস্থ কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘২০২৫ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন যুদ্ধে জড়াতে পারে।’
এটি নিঃসন্দেহে একটি অনুমান। এ অনুমানকে পেন্টাগনসহ অন্যরা অবশ্য নাকচ করে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলেছেন, চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক পরাজয় বেশ ভালোভাবেই খেয়াল করছেন। সুতরাং তিনি যুদ্ধের বিকল্প খুঁজবেন এবং সেটাই স্বাভাবিক।
যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন, চীনকে বারবার ‘হুমকি’ হিসেবে উপস্থাপন করা উচিত হবে না। এতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্পর্ক চরম মাত্রায় অবনতি হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। তার চেয়ে এমন নীতি অবলম্বন করা উচিত, যাতে স্বাভাবিক নিয়মেই যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যদ্বাণী বাস্তবে পরিণত হয়।
সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স, বিবিসি ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট
একটা সময় ইসরায়েলের ছোট ও সুসংহত সমাজকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার কাছে প্রায় অপ্রতিরোধ্য বলে বিবেচনা করা হতো। কিন্তু এখন বিষয়টি কার্যত বদলে গেছে। বর্তমান সংঘাত, ইসরায়েলে উগ্র ডানপন্থার উত্থান এবং নেতানিয়াহুর নেতৃত্বে ২০২৩ সালের বিচার বিভাগ সংস্কারের মতো বিষয়গুলো দেশটির সমাজে বিদ্যমান সূক্ষ্ম বিভাজনগুলো
৪ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের রূপ এবং যুদ্ধ ও বাণিজ্য সম্পর্কের পরিবর্তন নিয়ে বিশ্লেষণ। চীন, রাশিয়া ও ইউরোপের সাথে নতুন কৌশল এবং মার্কিন আধিপত্যের ভবিষ্যৎ।
২ দিন আগেকোভিড-১৯ মহামারির পর সোশ্যাল মিডিয়া ফাস্ট ফ্যাশন শিল্পকে ভঙ্গুর করে তুলেছে। জায়গা করে নিচ্ছে ভয়াবহ মানবাধিকার সংকট সৃস্টিকারী ‘আলট্রা-ফাস্ট ফ্যাশন’। সেই শিল্পে তৈরি মানুষেরই ‘রক্তে’ রঞ্জিত পোশাক সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রল করে কিনছে অনবরত। আর রক্তের বেসাতি থেকে মালিক শ্রেণি মুনাফা কামিয়েই যাচ্ছে।
৪ দিন আগেনবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ডিপার্টমেন্ট অব গর্ভমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা সরকারি কার্যকারী বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছেন ধনকুবের ইলন মাস্ক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প জানিয়েছেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণ, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমানো ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পুনর্গ
৮ দিন আগে