তকিব তৌফিক
কিছুক্ষণ আগেও আমি এ-ঘরে একা ছিলাম। এখন আমরা দুজন।
আমাকে এখানে আনা হয়েছিল রাতের শুরুর দিকে। তারপর থেকে একা আছি। কজন ধরাধরি করে একটা স্ট্রেচার বেড থেকে নামিয়ে আমাকে রেখে গেছে বেশ হন্তদন্ত হয়ে। তারপর ধপাস শব্দে দরজা আটকে দিয়ে তারা চলে গিয়েছিল। যাওয়ার সময় তাদের দ্রুত পা ফেলার শব্দ ভীষণ কঠিন হয়ে কানে ভেসে এসেছিল। ধীরে ধীরে সেই শব্দও কমে এসেছিল। নিস্তব্ধতার আলাদা একটা নিজস্ব শব্দ আছে, তা আমি শুনেছি কি শুনিনি, আঁচ করতেই পারলাম না। শুধু মনে হলো, শব্দহীনতার ভিড় বেড়েছে, আমার ভেতর থেকেও কোনো শব্দ আসে না। তখন থেকে কাছাকাছি আর কোনো সাড়াশব্দ পাইনি। কারোর নড়াচড়ার শব্দও ভেসে এল না। তবে দূরে কোথাও ব্যস্ত রাস্তা আছে।
সেখান থেকে গাড়ির হর্নের শব্দ পাচ্ছিলাম। এখন সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কি এখন গভীর রাত? সব গাড়ি গন্তব্য পৌঁছে গেছে! ঘরের ভেতর থেকে কখন দিন হচ্ছে, কখন রাত হচ্ছে, তা বোঝার অবকাশ নেই। আলো বলতে ওই যতক্ষণ মাথার ওপর ইলেকট্রিক বাতিগুলো জ্বলে ওঠে, তা-ই। ওরা এলেই বাতি জ্বালায়, ফিরে যাওয়ার কালে বাতি নিভিয়ে দিয়ে যায়।
আমার অল্প দূরে যাকে রেখে গেছে, সে একজন যুবতী। তাকে এখন আর দেখা যাচ্ছে না। আঁধারের সঙ্গে সঙ্গে সে-ও অদৃশ্য হয়ে আছে। যখন তাকে নিয়ে আসা হলো, তার মেহেদিরাঙা হাতটা তখন উন্মুক্ত ছিল। সেটুকুই দেখেছিলাম। সেই হাত আঁধারে ঢেকেছে কিন্তু আমার স্মৃতিতে এনেছে আরেক হাত। সেই হাত আমি আঁধারেও দেখি। সুচন্দার কথা মনে পড়ে গেল আমার। সুন্দর মেহেদিরাঙা হাত।
হাসপাতালের করিডর হয়ে সুচন্দাকে নিয়ে যখন ছুটছিলাম, তার মেহেদিরাঙা হাত তখন স্ট্রেচার বেডের বাইরে ঝুলছিল। সেখানে মেহেদির সঙ্গে রক্ত মিশে হয়ে আছে যেন কারবালার ময়দান। আমি সেই ময়দানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বুঝতে পারলাম, কেউ একজন আমাকে থামিয়ে দিল আর একদল ডাক্তার সুচন্দাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে গেল। তারপর! তারপর সুচন্দার আর কী হলো, আমার আর জানা নেই। নিজেকে আবিষ্কার করলাম চলমান এক শবদেহ বাহনে। একটা পুরোনো ভবনের সামনে বাহনটি থামল। কজন তাড়াহুড়ো করে আমাকে নামিয়ে এই ঘরে নিয়ে এসেছিল।
সেই সময় তাদের কেউ একজন বলে উঠল, ‘ধীরে কর্। লাশের গায়ে মশা বসলে পাহাড়সমান ওজন লাগে আর তোরা যেভাবে লাশটাকে দোলাচ্ছিস! গজব পইড়ব তো ওপরে।’
অন্যজন বলল, ‘তুমিও এসবে বিশ্বাস করো সমীর দা! লাশের আবার দুঃখ-বেদনা আছে নাকি?’
‘আছে আছে। তুই ওসব বুঝবি নারে সেজু।’
‘এতই যখন জানো, তাইলে কবর না দিইয়্যা এইখানে আনলা কেন? সময় হইলে তো নির্দয়ের মতো শরীরটাকে ফালা ফালা কইরা ফেলাইব।’
‘ওটা কি আর আমি কইরব! পুলিশি ঝামেলা। ডাক্তার-কসাই মিলেমিশে করবেনে। আমার পৌঁছে দেওনের দায়িত্ব। সেটা শেষ করে চইলা যাব। ওসব কসাইগিরির দায়িত্ব তো আর আমি নেই নাই।’
সেজু আর কিছু বলেনি। চুপচাপ নিজের কাজটা সে করল। তারপর ওরা আমাকে রেখে চলে গিয়েছিল।
কাছাকাছি একটা শব্দ ভেসে এল। কেউ হেঁটে আসার শব্দ। না, কেউ নয়, কারা যেন এই ঘরের দিকেই হেঁটে আসছে। শব্দটা ক্রমশ বাড়ছে। তাড়াহুড়ো করে আসার শব্দ।
কট শব্দে দরজাটা খুলে গেল।
খোলা দরজা দিয়ে বাইরে থেকে কিছু আলো এসে ঘরের ভেতর ঢুকল। আলো-আঁধারি ঘরে কেউ একজন ভরাট কণ্ঠে বলল, ‘আলো জ্বালা!’
আলো ছড়িয়ে পড়ল সারা ঘরে। স্যাঁতসেঁতে ফ্লোর ডিঙিয়ে ওরা তিনজন এগিয়ে এল আমাদের দিকে।
হৃষ্টপুষ্ট একজন তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
‘ওই সমসের, রেজিস্টার দেইক্যা ল তো!’
‘উস্তাদ, দুই শ পঁচাত্তর।’
‘রেডি কর সব। স্যার আইস্যা কাটাকাটি শুরু কইরব। আমি একটা বিড়ি খাইয়া আসি।’
তাদের একজন আমার দিকে এগিয়ে এল। আমার পায়ের দিকে কী যেন দেখল।
বলল, ‘এইডার পরেরটা দুই শ ছিয়াত্তর।’
আমার পাশে যে যুবতী, তার পায়ের দিকের কাপড় সরিয়ে দেখে বলল, ‘এইডাই দুই শ পঁচাত্তর।’
দুজন নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কী যেন বলতে লাগল। আচমকা তাদের চেহারায় ফুটে ওঠে এক উন্মাদনা।
নিয়ন্ত্রণহীন যানের মতো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কাকে ভুলে তারা চড়ে বসল মৃতের শরীরে। মুহূর্তেই গায়ের ওপরের সাদা কাপড় সরিয়ে নগ্ন শবদেহকে তারা প্রকাশ্যে নিয়ে এল। চোখ বুজে থাকা নিথর দেহের স্তন মর্দনের মধ্য দিয়ে হায়েনার লালসা উন্মোচন করল একজন। অন্যজন ততক্ষণে যোনি ভোগে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
আমার চোখ স্পষ্ট দেখতে পারছে তাদের পৈশাচিক দেহলোভী কার্যক্রম। অথচ আমার দেখার ক্ষমতার বাইরে আমার আর কোনো ক্ষমতাই নেই, যা এখানে কার্যত হতে পারে। কারণ, আমাকে মৃত বলেই ঘোষণা করা হয়েছে আরও আগে।
‘ওরে কুকুরের দল, এত লালসা কেন তোগো! শালা সর। উস্তাদের আগে আগে চলবি তো আপদ গর্তে পইড়বি।’
‘উস্তাদ, ভুল হইয়্যা গেছে। নেন, আপাতত আপনারেই গর্ত দিলাম’, বলেই কুৎসিত হাসি হাসল একজন। লোকটা উন্মাদ মাতালের মতো মৃতের সঙ্গে মেতে উঠল নোংরা খেলায়। একবারের জন্যও তাদের বুকটা কাঁপল না। একবারের জন্যও ভাবল না, এটা মৃত একটা দেহ। ওরা একসঙ্গে উল্লাসে মেতে উঠল।
ওদের বীভৎস উল্লাস থামল দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে।
ইতস্তত হয়ে লাফিয়ে নিচে নেমে এল পিশাচের দলনেতা। মুহূর্তেই সাদা কাপড়ে ঢেকে গেল মৃতের শরীর। তিনজনই সাবলীল হয়ে প্রস্তুত যেন ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে। একজন গিয়ে দরজা খুলে দিল।
‘দরজা খুলতে দেরি হলো কেন!’ জানতে চেয়ে অ্যাপ্রোন গায়ে একজন মাঝবয়সী ডাক্তার ঢুকল ঘরে।
‘স্যার, এই তো এইদিকটা রেডি কইরতাছিলাম।’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে। চলো, কাজ শুরু করা যাক।’
ডাক্তার তার পোশাক পরে প্রস্তুত।
রেজিস্টার হাতে নিয়ে দেখলেন ‘দুই শ পঁচাত্তর’ সিরিয়ালে থাকা লাশটির ডিটেইলস। রেপ কেইস ইস্যু। একবার লাশটির দিকে তাকালেন তিনি।
‘মুখের ওপর থেকে কাপড়টা সরাও।’
তিনজনের একজন গিয়ে কাপড় সরিয়ে দিল।
‘শোনো, এ কাজটা কালকে করব। দুই শ ছিয়াত্তরের কাজটা আগে করতে হবে। ওপরমহল থেকে চাপ আছে। গুলি খেয়ে মারা গেছে। রিপোর্ট জমা দেওয়ার তাড়া আছে।’
ওরা সবাই আমার দিকে এগিয়ে এল।
আমি তাকিয়ে দেখছিলাম যুবতীর দিকে। যেন ঘুমিয়ে আছে। তার আরও একটি রাত এই দুনিয়ার অনাচার পোহাতে হবে। মানুষের মতো জানোয়ারেরা আরও একবার তাকে ছিঁড়ে খাবে তো নিশ্চয়ই। আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হলো, ‘ডাক্তার, আমাকে নয়, মেয়েটিকে আপনি আগে নিস্তার দিন।’ কিন্তু আমার বলা হলো না- আমি মৃত, আমি কথা বলতে পারি না।
কিছুক্ষণ আগেও আমি এ-ঘরে একা ছিলাম। এখন আমরা দুজন।
আমাকে এখানে আনা হয়েছিল রাতের শুরুর দিকে। তারপর থেকে একা আছি। কজন ধরাধরি করে একটা স্ট্রেচার বেড থেকে নামিয়ে আমাকে রেখে গেছে বেশ হন্তদন্ত হয়ে। তারপর ধপাস শব্দে দরজা আটকে দিয়ে তারা চলে গিয়েছিল। যাওয়ার সময় তাদের দ্রুত পা ফেলার শব্দ ভীষণ কঠিন হয়ে কানে ভেসে এসেছিল। ধীরে ধীরে সেই শব্দও কমে এসেছিল। নিস্তব্ধতার আলাদা একটা নিজস্ব শব্দ আছে, তা আমি শুনেছি কি শুনিনি, আঁচ করতেই পারলাম না। শুধু মনে হলো, শব্দহীনতার ভিড় বেড়েছে, আমার ভেতর থেকেও কোনো শব্দ আসে না। তখন থেকে কাছাকাছি আর কোনো সাড়াশব্দ পাইনি। কারোর নড়াচড়ার শব্দও ভেসে এল না। তবে দূরে কোথাও ব্যস্ত রাস্তা আছে।
সেখান থেকে গাড়ির হর্নের শব্দ পাচ্ছিলাম। এখন সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে কি এখন গভীর রাত? সব গাড়ি গন্তব্য পৌঁছে গেছে! ঘরের ভেতর থেকে কখন দিন হচ্ছে, কখন রাত হচ্ছে, তা বোঝার অবকাশ নেই। আলো বলতে ওই যতক্ষণ মাথার ওপর ইলেকট্রিক বাতিগুলো জ্বলে ওঠে, তা-ই। ওরা এলেই বাতি জ্বালায়, ফিরে যাওয়ার কালে বাতি নিভিয়ে দিয়ে যায়।
আমার অল্প দূরে যাকে রেখে গেছে, সে একজন যুবতী। তাকে এখন আর দেখা যাচ্ছে না। আঁধারের সঙ্গে সঙ্গে সে-ও অদৃশ্য হয়ে আছে। যখন তাকে নিয়ে আসা হলো, তার মেহেদিরাঙা হাতটা তখন উন্মুক্ত ছিল। সেটুকুই দেখেছিলাম। সেই হাত আঁধারে ঢেকেছে কিন্তু আমার স্মৃতিতে এনেছে আরেক হাত। সেই হাত আমি আঁধারেও দেখি। সুচন্দার কথা মনে পড়ে গেল আমার। সুন্দর মেহেদিরাঙা হাত।
হাসপাতালের করিডর হয়ে সুচন্দাকে নিয়ে যখন ছুটছিলাম, তার মেহেদিরাঙা হাত তখন স্ট্রেচার বেডের বাইরে ঝুলছিল। সেখানে মেহেদির সঙ্গে রক্ত মিশে হয়ে আছে যেন কারবালার ময়দান। আমি সেই ময়দানের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বুঝতে পারলাম, কেউ একজন আমাকে থামিয়ে দিল আর একদল ডাক্তার সুচন্দাকে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে ঢুকে গেল। তারপর! তারপর সুচন্দার আর কী হলো, আমার আর জানা নেই। নিজেকে আবিষ্কার করলাম চলমান এক শবদেহ বাহনে। একটা পুরোনো ভবনের সামনে বাহনটি থামল। কজন তাড়াহুড়ো করে আমাকে নামিয়ে এই ঘরে নিয়ে এসেছিল।
সেই সময় তাদের কেউ একজন বলে উঠল, ‘ধীরে কর্। লাশের গায়ে মশা বসলে পাহাড়সমান ওজন লাগে আর তোরা যেভাবে লাশটাকে দোলাচ্ছিস! গজব পইড়ব তো ওপরে।’
অন্যজন বলল, ‘তুমিও এসবে বিশ্বাস করো সমীর দা! লাশের আবার দুঃখ-বেদনা আছে নাকি?’
‘আছে আছে। তুই ওসব বুঝবি নারে সেজু।’
‘এতই যখন জানো, তাইলে কবর না দিইয়্যা এইখানে আনলা কেন? সময় হইলে তো নির্দয়ের মতো শরীরটাকে ফালা ফালা কইরা ফেলাইব।’
‘ওটা কি আর আমি কইরব! পুলিশি ঝামেলা। ডাক্তার-কসাই মিলেমিশে করবেনে। আমার পৌঁছে দেওনের দায়িত্ব। সেটা শেষ করে চইলা যাব। ওসব কসাইগিরির দায়িত্ব তো আর আমি নেই নাই।’
সেজু আর কিছু বলেনি। চুপচাপ নিজের কাজটা সে করল। তারপর ওরা আমাকে রেখে চলে গিয়েছিল।
কাছাকাছি একটা শব্দ ভেসে এল। কেউ হেঁটে আসার শব্দ। না, কেউ নয়, কারা যেন এই ঘরের দিকেই হেঁটে আসছে। শব্দটা ক্রমশ বাড়ছে। তাড়াহুড়ো করে আসার শব্দ।
কট শব্দে দরজাটা খুলে গেল।
খোলা দরজা দিয়ে বাইরে থেকে কিছু আলো এসে ঘরের ভেতর ঢুকল। আলো-আঁধারি ঘরে কেউ একজন ভরাট কণ্ঠে বলল, ‘আলো জ্বালা!’
আলো ছড়িয়ে পড়ল সারা ঘরে। স্যাঁতসেঁতে ফ্লোর ডিঙিয়ে ওরা তিনজন এগিয়ে এল আমাদের দিকে।
হৃষ্টপুষ্ট একজন তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
‘ওই সমসের, রেজিস্টার দেইক্যা ল তো!’
‘উস্তাদ, দুই শ পঁচাত্তর।’
‘রেডি কর সব। স্যার আইস্যা কাটাকাটি শুরু কইরব। আমি একটা বিড়ি খাইয়া আসি।’
তাদের একজন আমার দিকে এগিয়ে এল। আমার পায়ের দিকে কী যেন দেখল।
বলল, ‘এইডার পরেরটা দুই শ ছিয়াত্তর।’
আমার পাশে যে যুবতী, তার পায়ের দিকের কাপড় সরিয়ে দেখে বলল, ‘এইডাই দুই শ পঁচাত্তর।’
দুজন নিজেদের মধ্যে ফিসফিস করে কী যেন বলতে লাগল। আচমকা তাদের চেহারায় ফুটে ওঠে এক উন্মাদনা।
নিয়ন্ত্রণহীন যানের মতো দুর্ঘটনার সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কাকে ভুলে তারা চড়ে বসল মৃতের শরীরে। মুহূর্তেই গায়ের ওপরের সাদা কাপড় সরিয়ে নগ্ন শবদেহকে তারা প্রকাশ্যে নিয়ে এল। চোখ বুজে থাকা নিথর দেহের স্তন মর্দনের মধ্য দিয়ে হায়েনার লালসা উন্মোচন করল একজন। অন্যজন ততক্ষণে যোনি ভোগে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
আমার চোখ স্পষ্ট দেখতে পারছে তাদের পৈশাচিক দেহলোভী কার্যক্রম। অথচ আমার দেখার ক্ষমতার বাইরে আমার আর কোনো ক্ষমতাই নেই, যা এখানে কার্যত হতে পারে। কারণ, আমাকে মৃত বলেই ঘোষণা করা হয়েছে আরও আগে।
‘ওরে কুকুরের দল, এত লালসা কেন তোগো! শালা সর। উস্তাদের আগে আগে চলবি তো আপদ গর্তে পইড়বি।’
‘উস্তাদ, ভুল হইয়্যা গেছে। নেন, আপাতত আপনারেই গর্ত দিলাম’, বলেই কুৎসিত হাসি হাসল একজন। লোকটা উন্মাদ মাতালের মতো মৃতের সঙ্গে মেতে উঠল নোংরা খেলায়। একবারের জন্যও তাদের বুকটা কাঁপল না। একবারের জন্যও ভাবল না, এটা মৃত একটা দেহ। ওরা একসঙ্গে উল্লাসে মেতে উঠল।
ওদের বীভৎস উল্লাস থামল দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে।
ইতস্তত হয়ে লাফিয়ে নিচে নেমে এল পিশাচের দলনেতা। মুহূর্তেই সাদা কাপড়ে ঢেকে গেল মৃতের শরীর। তিনজনই সাবলীল হয়ে প্রস্তুত যেন ময়নাতদন্তের সহযোগী হিসেবে। একজন গিয়ে দরজা খুলে দিল।
‘দরজা খুলতে দেরি হলো কেন!’ জানতে চেয়ে অ্যাপ্রোন গায়ে একজন মাঝবয়সী ডাক্তার ঢুকল ঘরে।
‘স্যার, এই তো এইদিকটা রেডি কইরতাছিলাম।’
‘আচ্ছা, ঠিক আছে। চলো, কাজ শুরু করা যাক।’
ডাক্তার তার পোশাক পরে প্রস্তুত।
রেজিস্টার হাতে নিয়ে দেখলেন ‘দুই শ পঁচাত্তর’ সিরিয়ালে থাকা লাশটির ডিটেইলস। রেপ কেইস ইস্যু। একবার লাশটির দিকে তাকালেন তিনি।
‘মুখের ওপর থেকে কাপড়টা সরাও।’
তিনজনের একজন গিয়ে কাপড় সরিয়ে দিল।
‘শোনো, এ কাজটা কালকে করব। দুই শ ছিয়াত্তরের কাজটা আগে করতে হবে। ওপরমহল থেকে চাপ আছে। গুলি খেয়ে মারা গেছে। রিপোর্ট জমা দেওয়ার তাড়া আছে।’
ওরা সবাই আমার দিকে এগিয়ে এল।
আমি তাকিয়ে দেখছিলাম যুবতীর দিকে। যেন ঘুমিয়ে আছে। তার আরও একটি রাত এই দুনিয়ার অনাচার পোহাতে হবে। মানুষের মতো জানোয়ারেরা আরও একবার তাকে ছিঁড়ে খাবে তো নিশ্চয়ই। আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হলো, ‘ডাক্তার, আমাকে নয়, মেয়েটিকে আপনি আগে নিস্তার দিন।’ কিন্তু আমার বলা হলো না- আমি মৃত, আমি কথা বলতে পারি না।
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
২ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে