হ্যালুসিনেশন

রানাকুমার সিংহ
Thumbnail image

ভোরেই ঘুম ভেঙে গিয়েছে রাশেদের। বাসায় তখন সিলিং ফ্যানের ঘটঘট ঘটঘট আওয়াজ ছাড়া অন্য কোনো শব্দ নেই। বাইরে পাখিদের কিচিরমিচির। কয়েকটি চড়ুই রোজকার মতো কার্নিশে দুরন্তপনায় মেতে উঠেছে। সারা রাত জেগে পাহারা দেওয়া কুকুরগুলো হয় তো বেঘোর ঘুমোচ্ছে। বিছানায় কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করে নামল রাশেদ। তারা এই বাসায় নতুন। বড়জোর তিন মাস আগে এই বাসায় উঠেছে। রাশেদের বাবা বন বিভাগের কর্মকর্তা। সেই সূত্রে জন্ম থেকেই বনজঙ্গলের সঙ্গে রাশেদের ওঠাবসা। নতুন বাসাটিও ব্যতিক্রম নয়। দুটি বড় পাহাড়ের মাঝখানে স্টাফ কোয়ার্টার। মোট আটটি বাসা। রাশেদদের বাসা পাহাড় ঘেঁষা। ঘড়ি বলছে, এখন ভোর পাঁচটা ত্রিশ। ডিজিটাল ঘড়ির পিচ্চি কণ্ঠস্বরের ঘোষণা রাশেদের খুব ভালো লাগে।

তিনটা ছিটকিনি খুলে সদর দরজা খুলতেই মিহি বাতাস রাশেদের চোখে মুখ লাগল। আহা! কী মনোরম বাতাস। পূর্বদিক লাল হয়ে উঠেছে। কিছুটা কুয়াশাও যেন ডানা মেলেছে এই ভোরে। রাশেদ বাসার বাইরে পা বাড়াল, মৃদু পায়ে হাঁটতে শুরু করল সে। পাখিরা যেন তাকে স্বাগত জানাচ্ছে। ছানাপোনা নিয়ে ক’টি বানর অবিরত ভেঙাচ্চে তাকে। খুব মজা পাচ্ছে সে।

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ থমকে দাঁড়াল রাশেদ। পাহাড়ের ওপরে তার চোখ আটকে গেল। চোখ কচলে দেখার চেষ্টা করলে সে। হ্যাঁ, তার মা-ই তো! ধবধবে সাদা শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন, আর হাতের ইশারায় রাশেদকে ডাকছেন। রাশেদ কোনো কিছু না ভেবে পাহাড়ে উঠতে লাগল। সাদা শাড়ি পড়া মায়ের কাছ থেকে কিছুটা দূরে থাকতেই সংবিৎ ফেরে রাশেদের—     মা কে তো সে বাসায় ঘুমে রেখে এসেছে! দ্রুত পাহাড় থেকে নামতে লাগল সে। এক দৌড়ে বাসায় ফিরেই জ্ঞান হারাল।

জ্ঞান ফিরতেই মুখের ওপর বাসার সবার মুখ দেখতে পেল সে। আতঙ্কিত বাবা-মা এটা-ওটা জিজ্ঞেস করছেন। রাশেদ কিছুই বলতে পারে না। প্রচণ্ড জ্বরে গা পুডছিল তার। জ্বর আর নামে না। রাশেদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু অনিও রাশেদকে জিজ্ঞাসা করে কোনো উত্তর বের করতে পারল না।

রাশেদের খুব জ্বর। হাসপাতালে ভর্তি করা হলো তাকে। কিছুদিন পর বাসায় ফিরল সে। চড়ুইগুলো দুরন্তপনায় ব্যস্ত, পড়ার টেবিলে একটি খোলা বইয়ের পাতা বাতাসে নড়ছে। রাশেদ বইটির অর্ধেক পড়ে শেষ করেছিল। বইটির একটি অধ্যায়ের শিরোনামে তার চোখ আটকে গেল, শিরোনামটি হচ্ছে, হ্যালুসিনেশন!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত