Ajker Patrika

নোবেলজয়ী আনি এরনোর উপন্যাস ‘লজ্জা’

জাহীদ রেজা নূর
আপডেট : ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১৭: ৫৮
নোবেলজয়ী আনি এরনোর উপন্যাস ‘লজ্জা’

অনুবাদকের কথা: অন্য অনেকের মতো আমিও নোবেলপ্রাপ্তির আগে আনি এরনোর নাম শুনিনি। নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তিই তাঁর সম্পর্কে আগ্রহের জন্ম দিল। যেহেতু রুশ ভাষা জানি এবং রুশ দেশটি সাহিত্যকে দেয় উচ্চমূল্য, তাই তাদের সাইটগুলোয় গেলাম দেখতে, সেখানে কি আনি এরনো আছেন? সবিস্ময়ে লক্ষ করলাম, আনি এরনো শুধু আছেন বললেই হবে না, তাঁর অনেকগুলো বই বহু আগেই রুশ ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এরই একটি হলো ‘লজ্জা’। লজ্জা আনি এরনোর দ্বিতীয় উপন্যাস। প্রথম উপন্যাসের মতোই এই উপন্যাসে তিনি এমন এক কথকের ভূমিকা নিয়েছেন, যে কথক তাঁর শৈশবের বিশ্বকে পুনরাবিষ্কার করেন। জীবনের ঘনিষ্ঠ বিষয়গুলো তুলে আনেন এবং চেষ্টা করেন এই লজ্জা থেকে চিরতরে পরিত্রাণ পেতে। উপন্যাসটির আকার খুব বড় নয়। উপন্যাসটির দ্বিতীয় পর্ব প্রকাশ হলো আজ—জাহীদ রেজা নূর।

বায়ান্ন সাল থেকে আমার নিজেরই আরও কিছু জিনিসপত্তর ছিল: এর একটি হলো রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের একটা সাদা-কালো ছবি। ছবিটা আমাকে উপহার দিয়েছিল লা হাভরে পরিবারের মেয়েটি। ওরা রানির সিংহাসনে আরোহণের সময় ক্লাসসুদ্ধ সবাই লন্ডনে গিয়েছিল। যখন ছবিটা পেয়েছিলাম, তখন থেকেই ছবির উল্টোপিঠে একটা খয়েরি রঙের দাগ আমি খেয়াল করেছিলাম। সে দাগটা আমার মেজাজ খারাপ করে দিত। যখনই ছবিটা আমার চোখে পড়ত, তখনই মনে ভেসে উঠত ওই খয়েরি রঙের দাগটা।

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছবিটা তোলা হয়েছিল সামনাসামনি, প্রোফাইল। তার চোখের দৃষ্টি মনে হচ্ছিল অনেক গভীর থেকে উঠে আসছে, ছোট চুলগুলো ছিল পেছন দিকে শক্ত করে বাঁধা, মোটা ঠোঁটটা আরও মোটা লাগছিল গাঢ় লিপস্টিকের কারণে। বাঁ হাতটা ছিল পশমের ওপর, ডান হাতে ছিল পাখা। এখন মনে পড়ছে না, রানিকে তখন সুশ্রী নাকি কুশ্রী লাগছিল। সম্ভবত আমি সে রকম করে ভেবেও দেখিনি। রানি সুশ্রী না কুশ্রী, সেটা কি কোনো প্রশ্ন হতে পারে, রানি তো রানিই; আমার আরও ছিল লাল রঙের একটা চামড়ার ব্যাগ। এর মধ্যে ছিল কাঁচি, একটা হুক, ছিদ্র সেলাই করার জন্য মুচিদের ব্যবহার্য একটা সুঁই ইত্যাদি। সেটা হারিয়ে গেছে। ক্রিসমাস ডেতে আমাকে উপহার দেওয়া হয়েছিল ব্যাগটা, সেটা আরাম করে ব্যবহার করা যেত। এটির মধ্যে আমি আমার লেখালেখির কাগজপত্র রাখতাম, লিমোজেস ক্যাথিড্রালের ছবিওয়ালা পোস্টকার্ড ছিল তাতে। আমি আর বাবা যখন লুর্দসে গিয়েছিলাম, তখন সেখান থেকে মাকে পাঠিয়েছিলাম এই পোস্টকার্ডটি। পোস্টকার্ডের উল্টো পিঠে বড় বড় অক্ষরে লেখা ছিল, ‘লিমোজেস হোটেলটা অনেক বড়, অনেক বিদেশি পর্যটক আছে এখানে। তোমার জন্য চুমু।’ নিচে আমার নাম লেখা আর ‘বাবা’। ঠিকানা লিখে দিয়েছিল বাবা। পোস্টাপিসের সিল ছিল ২২-০৮-৫২; আরও ছিল লুর্দেস ক্যাসেলের এক সেট আর পাইরেনিয়ান জাদুঘরের এক সেট পোস্টকার্ড। বোঝাই যাচ্ছে, এগুলো আমি কিনেছিলাম ওখানে যাওয়ার পর। ‘কিউবা ভ্রমণ’ গানের কথা ও নোটেশন কিনেছিলাম। সেটা লেখা ছিল আকাশি রঙে দুই পৃষ্ঠাজুড়ে। প্রথম পাতায় চলমান নৌকার ছবি ছিল, আর তাতে লেখা ছিল কণ্ঠশিল্পীদের নাম। যারা গানটি করেছিলেন, তারা হলেন: পাত্রিস আর মারিও, ইতেন ভগ্নীদ্বয়, মার্সেল আজ্জোলা, ঝান সাবলোন প্রমুখ।

মনে হয় গানটি আমার খুব প্রিয় ছিল, কারণ এই গানের লিরিক কেনার জন্য আমি মায়ের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিয়েছিলাম। মা অবশ্য বলেছিলেন, তুচ্ছ এ জিনিস পড়াশোনার কোনো কাজে আসবে না। তবে সেই গ্রীষ্মে সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছিল ‘আমার ছোট্ট পাগল করা ভালোবাসা’ আর ‘মেক্সিকো’ গান দুটি। গান দুটি লুর্দেসে যাওয়ার পথে একজন গাড়িচালকের মুখে শুনেছিলাম। আমার হাতের নিচে চাপা পড়ে ছিল প্রার্থনাবিষয়ক বইটি। ‘রোমান মিসাল উইথ টেক্সট অব দ্য সার্ভিসেস’ নাম বইটির। ব্রুজেস থেকে ছাপা হওয়া। প্রতিটি পৃষ্ঠায় দুটো কলাম। এক কলামে লেখা ফরাসি ভাষায়, অন্য কলামে লাতিন। তবে বইয়ের মাঝামাঝি এসে ‘প্রতিদিনের প্রার্থনা’ পাতায় এসে দেখা যাচ্ছে পুরো ডান দিকের পাতায় ফরাসি, বাঁ দিকের পাতায় লাতিন। প্রার্থনার বইটির শুরুতেই ছিল ১৯৫২ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত কোন কোন উৎসব হবে এবং কোন কোন উৎসব হবে না, এর দীর্ঘ একটি ক্যালেন্ডার।

বইটিতে তারিখগুলো আজব, দেখে মনে হয় বইটি বুঝি কয়েক শতাব্দী আগে লেখা। রহস্যময় কত শব্দ তাতে! স্যাক্রামেন্ট, গ্রাজুয়াল, অ্যান্টিফোন (আমার মনে নেই, সে সময় আমি এই শব্দগুলোর অর্থ জানার চেষ্টা করেছিলাম কি না)। বইটি আমাকে শান্তি দিত না, বরং ভয় ধরাত। মনে হতো আমার সামনে অবোধ্য, রহস্যময় এক ভাষা!

শব্দগুলো মোটামুটি পরিচিত, আমি বিনা বাধায় পড়ে ফেলতে পারি ‘অ্যাগনাস ডে’ (ঈশ্বরের মেষশাবক) কিংবা ছোটখাটো কোনো প্রার্থনা, কিন্তু বাল্যকালে আমি নিজের ইচ্ছায় রোববার বা অন্য কোনো ধর্মীয় উৎসবে প্রার্থনা না করলে মনে করতাম না যে আমার পাপ হবে।

ছবিগুলো প্রমাণ করে, ১৯৫২ সালে আমি শারীরিকভাবে এখানে ছিলাম আর প্রার্থনার বইটি প্রমাণ করে, ছোটবেলায় (না হলে কেন আমি এতবার স্থান পরিবর্তনের পরও বইটি সংরক্ষণ করেছি) ধর্মীয় বইয়ের প্রতি আমার একটা আকর্ষণ ছিল, যা আজ অতীত হয়ে গেছে। কিন্তু ওই গানটা! ভ্রমণ আর ভালোবাসা দিয়ে মোড়া ‘কিউবায় ভ্রমণ’ গানটি এখনো মনে হয় আমার খুব কাছের একটা ব্যাপার। খুবই আনন্দের সঙ্গে আমি গানের পঙ্‌ক্তিগুলো আওড়াই:

দুই কিশোর আর দুই কিশোরী
ঢেউ তুমি খেলতে থাক, উল্লাসে মাতো
ছোট্ট এক তরিই সম্বল
তাতে করেই কিউবার পথে…

সেই রবিবারের কথাটাই ভাবছিলাম শেষ কয়েক দিন ধরে। ঘটনাগুলো লিখতে গিয়ে মনে হচ্ছে কতটা রঙিন হয়ে, কণ্ঠস্বর হয়ে, অঙ্গভঙ্গি হয়ে তা আমার কাছে দৃশ্যমান হয়েছে। এখন অবশ্য আবার তা স্তিমিত হয়ে গেছে আর কণ্ঠটাও মিইয়ে গেছে সেই চলচ্চিত্রের মতো, যেটা এনক্রিপ্টেড চ্যানেলে ডেকোডার না বসিয়েই যেমন দেখা হয়। আমি সেই সত্যকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারি কি না পারি, তাতে কিছুই পরিবর্তিত হচ্ছে না। সেটা সব সময়ই পাগলামি আর মৃত্যুর সঙ্গে জড়াজড়ি করে থাকছে। আর এই দৃশ্যের সঙ্গেই আমি আমার জীবনের সবচেয়ে যন্ত্রণাময় ঘটনাগুলো মিলিয়ে নিচ্ছিলাম, যেগুলো একটার চেয়ে আরেকটা আরও বেশি বেদনাদায়ক ছিল।

যেহেতু আমাকে আবার আমার লেখালেখির মধ্যে ফিরে আসতে হবে এবং আমি এ ছাড়া আর কিছুই করতে পারি না এবং সবাই যখন বলছে যে, আমি আবার নতুন বই লেখা শুরু করছি, তখন আমাকে আবার সবকিছু নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, নিরেট কিছু বাস্তব ঘটনাই শুধু আমার মনে আছে। এই দৃশ্যটা আমার মধ্যে ছিল একেবারে স্থিরচিত্রের মতো, আর আমি সে দৃশ্যটাকে গতিশীল করতে চাইছি, যেন তা আইকনিক পবিত্রতা অর্জন করে উঠতে না পারে (এবং আমি নিশ্চিত, এই দৃশ্যটাই আমাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করেছে এবং কোনো না কোনোভাবে তা আমার বইগুলোতে সুপ্তভাবে বিরাজ করছে)।

বহুদিন হয়ে গেছে আমি মনোবিশ্লেষণ কিংবা পারিবারিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মনোবিজ্ঞানীর দেওয়া পরিকল্পনামাফিক চলি না: বশ্যতা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় আমার মা ও বাবা কত কীই না করেছেন। ‘পারিবারিক আঘাত’, ‘শৈশবের দয়ালু মনটা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে’ এই ধরনের কথা আমার জন্য জুতসই নয়। যে অনুভূতিটা সব সময় আমাকে ঘিরে রেখেছে, সে অনুভূতিকেই সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস করেছি, এবং সেটা আমি পেয়েছি সেই দিনটি থেকেই, ‘জীবনের জন্য পাগল হও।’—এ ছাড়া আর কোনো বাক্যই আমার জন্য প্রযোজ্য নয়।

* * *
কাল আমি রুয়েনস আর্কাইভে গিয়েছিলাম ‘প্যারিস-নরমান্দি’ পত্রিকায় ১৯৫২ সালে কী লেখা হয়েছে, তা দেখার জন্য। এই পত্রিকাটি একজন হকার সব সময় আমার মা-বাবার কাছে দিয়ে যেত। এর আগপর্যন্ত আমি সাহসে ভর করে ১৯৫২ সালের জুন মাসের পত্রিকা দেখার কথা ভাবতে পারিনি। সিঁড়ি বেয়ে আর্কাইভে উঠছিলাম যখন, তখন বীভৎস কিছু একটা দেখব মনে করে আমার শরীর বেয়ে শীতল আতঙ্ক নেমে আসছিল। আর্কাইভটা ছিল মেয়রের অফিসে, সেখানকার একজন কর্মচারী আমার জন্য নিয়ে এলেন ১৯৫২ সালের দুটো বড় ফাইল। আমি পহেলা জানুয়ারি থেকে দেখতে শুরু করলাম। আমি জুন মাস পর্যন্ত পৌঁছানোর আগে কিছু সময় নিচ্ছিলাম। আগের তারিখগুলোর সুখকর সংবাদগুলোতে নিবিষ্ট হচ্ছিলাম।

প্রথম পাতার একেবারে ডান দিকের ওপরের অংশে অ্যাবট গ্যাব্রিয়েলের করা আবহাওয়ার প্রতিবেদনগুলো থাকত। আমার এখন একেবারেই মনে পড়ে না, কেমন ছিল সে দিনগুলোর আবহাওয়া। আমি তখন কী খেলতাম? আমি কি ঘুরতে বের হতাম? সূর্যের আলোময় দিন কিংবা মেঘে ঢাকা আকাশ ধীরে ধীরে পরিষ্কার হয়ে ওঠা, দমকা হাওয়া ইত্যাদি এখন আমাকে আর কোনো কথা মনে করিয়ে দেয় না। যে ঘটনাগুলোর কথা আমার মনে আছে, তা হলো ইন্দোচীনে আর কোরিয়ায় যুদ্ধ, অরলিয়ানে বিক্ষোভ, পিনের পরিকল্পনা, কিন্তু আমি এ ঘটনাগুলোকে ৫২ সালের সঙ্গেই যুক্ত করেছিলাম বলে মনে পড়ে না। তখন নয়, পরে এগুলো আমার কাছে কোনো না কোনো অর্থ পেয়েছিল। ‘সাইগনে ৬টি বাইসাইকেল বিস্ফোরণ হয়েছে’, কিংবা ‘ফ্রেনে দ্যুকলো’র (ফ্রান্সের কমিউনিস্ট নেতা—অনুবাদক) সঙ্গে ১৯৫২ সালের সেই কিশোরীকে কোনোভাবেই মেলাতে পারি না। অবাক কাণ্ড হচ্ছে, স্তালিন, চার্চিল, আইজেনহাওয়ারকে আমার ঠিক তেমনই লাগত, যেমন এখন লাগে ইয়েলৎসিন, ক্লিনটন বা কোহলকে। আমি কিছুই জানতে পারি না, যেন আমি সে সময়টা এই পৃথিবীতে কাটাইনি।

পিনের ছবি দেখে আমি খুবই অবাক হয়েছিলাম তার সঙ্গে ঝিসকার দ্য’এস্তেনের চেহারার মিল দেখে। আমি এখনকার টেকোমাথা ঝিসকারের কথা বলছি না, বলছি আজ থেকে কুড়ি বছর আগে সে যেমন ছিল, তার কথা। ‘আয়রন কার্টেন’ বা লৌহপর্দা বিষয়টি মনে এলেই আমার মনে পড়ে প্রাইভেট স্কুলে পড়ার সময় নারী শিক্ষক আমাদের জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘খ্রিষ্টধর্মে দশ পুঁতির জপমালা দিয়ে কী বোঝায়’, আর আমার তখন মনে হতো একটি লোহার খাঁচায় অনেকগুলো পুরুষ এবং নারী বন্দী হয়ে খাঁচাটিকে প্রবলভাবে নাড়াচ্ছেন। তবে বলতেই পারি, আমি অবলীলায় মনে করতে পারলাম, কৌতুক স্ট্রিপ ‘পুস্তিক’-এর কথা। এই স্ট্রিপ বহু বহুদিন ধরে ‘ফ্রান্স-সুয়ার’ পত্রিকার শেষের পাতায় প্রকাশ হয়েছে। সে সময় কৌতুক পড়ে আমি মজা পেতাম কি পেতাম না, তা মনে করতে পারি না। যেমন একটা কৌতুক ছিল: 
 ‘কী হে মৎস্যশিকারি, কামড়াচ্ছে?’ 
 ‘না না, এরা খুব ছোট। কামড়ালেও ব্যথা লাগছে না।’ 
আমি সিনেমার বিজ্ঞাপন এবং যে সিনেমাগুলো আসত প্রথমে রুয়ান শহরে, পরে আমাদের শহরে, সেগুলো সম্পর্কে জানতাম। ‘মিশর থেকে আসা প্রেমিকেরা’ ‘দারুণ বউ আমার’ ইত্যাদি সিনেমার কথা মনে আছে।

প্রতিদিনই কোনো না কোনো অঘটন ঘটত: দুই বছর বয়সী এক শিশু ক্রসাঁ খেয়ে আকস্মিকভাবে মারা গেছে, খেত পরিষ্কার করতে গিয়ে গমের খেতে খেলতে খেলতে লুকিয়ে পড়া ছেলের পা কেটে ফেলেছে এক কৃষক, ক্রেইলে মাইন বিস্ফোরণে তিন শিশু নিহত। এ ধরনের ঘটনায় আমার মনে আগ্রহ জাগত।

খবরের কাগজের প্রথম পৃষ্ঠায়—মাখন আর দুধের দাম। সে সময় গ্রামকে বেশ দাম দেওয়া হতো। পা ও মুখের রোগ সম্পর্কে খবর বের হতো, থাকত কৃষকদের বউদের নিয়ে প্রতিবেদন, পশু চিকিৎসা নিয়ে লেখালেখি, লাপিক্রিন কিংবা ওসপোরৎসিন নিয়ে প্রতিবেদন থেকে তা ঢের বোঝা যেত।

কাশির লজেন্স আর সিরাপের এত বেশি বিজ্ঞাপন বের হতো যে মনে হতো, সব মানুষই কাশিতে ভুগছে এবং তারা চিকিৎসকের শরণাপন্ন না হয়ে এসব লজেন্স আর সিরাপ খেয়েই সেরে উঠছে। 
শনিবারের পত্রিকায় ছিল ফিচার, ‘নারী, আপনার জন্য’। আমি সে পাতায় যে জ্যাকেট দেখেছি, এর সঙ্গে আমার বিয়ারিৎসে নিয়ে যাওয়া জ্যাকেটের মিল খুঁজে পাই। কিন্তু আমি নিশ্চিত, আমি বা মা কেউই এইটুকু ছাড়া আর কোনোভাবেই সে সময়ের ফ্যাশন অনুযায়ী সাজগোজ করিনি। আর চুলের যে কার্লগুলো দেখেছি, এর সঙ্গে আমার টুপিওয়ালা চুলের স্টাইলের কোনো মিল ছিল না। 
আমি পত্রিকার ১৪-১৫ তারিখের শনি-রবিবারের পাতায় চোখ রাখলাম। প্রথম পাতায় বড় বড় করে লেখা ছিল:

শস্যের ফলন প্রত্যাশার চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি হয়েছে
 ২৪ ঘণ্টার গাড়ির প্রতিযোগিতায় প্যারিসে কোনো ফেবারিট নেই
মি. ঝ্যাক দ্যুকলো দীর্ঘ জেরার পরও অপরাধ স্বীকার করেননি
 ১০ দিন খোঁজাখুঁজির পর জোয়েল নামের শিশুটির মরদেহ তার বাড়ির পাশ থেকেই উদ্ধার: 
স্বীকারোক্তি—প্রতিবেশিনী তাকে নর্দমায় ফেলে দেয়

এসব দেখে আর পত্রিকার পাতা ওল্টাতে ইচ্ছে হলো না। আর্কাইভ থেকে বের হয়ে, সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে আমি হঠাৎ বুঝতে পারলাম, আর একটু হলেই ১৯৫২ সালের সেই দিনটির, সেই খবরটির দেখা বুঝি পেয়ে যেতাম! পরে আমি বিস্মিত হয়ে ভেবেছি, ঘটনাটা তো সেই দিনটিতে ঘটেছিল, যে দিনে লে-মানে’তে সারা দিন ক্রমাগত গাড়ির গর্জন শোনা গিয়েছিল। দুটো ঘটনার এত সাদৃশ্য আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছিল। সেই রোববার পৃথিবীতে যত ঘটনাই ঘটে থাকুক না কেন, আমি ওই একটি ঘটনার সঙ্গে আর কোনো ঘটনাকে মেলাতে পারি না। শুধু সেটা আমার জন্য ছিল এক বাস্তব অভিজ্ঞতা। 
 (চলবে)

আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

তৌহিদুল হক
তৌহিদুল হকের গুচ্ছ কবিতা

রক্ত লাল

আলসেমি শরীরে এদিক-ওদিক চেয়ে আটকে

গেল চোখ পশ্চিমান্তে। রক্তিম সূর্যের বিদায়

ধীর গতিতে। খুব লাল হয়েছে, সারা দিনের

জ্বলন্ত প্রহরে পেয়েছে এক অপূর্ব রূপ।

যা স্বভাববিদ্ধ, তবে কতটা উপকারী বা বাঁচিয়ে

রাখার নিরলস অভিপ্রায়। মানুষের তরে

প্রাণীর অফুরন্ত প্রাচুর্য বিস্তৃতকরণে, কিংবা

উদ্ভিদের অন্তিম প্রেমে বসন্তের অভিষেকে।

কতটা জ্বলতে হয় পরের জন্য, কতটা ফুটন্ত

শরীর নিয়ে চালিয়ে যায় সেবার পরিধি।

এক চিরন্তন শিক্ষা, আবার উদিত হয়

দিনের শুরুতে, বিদায় প্রান্তিক অপূর্ব

মায়ায়-দিনের শেষ প্রান্তে।

এতটুকু কার্পণ্য রেখে যায়নি, হয়তো মুখ

ফিরিয়ে নিবে না কোনো দিন। তবে ভাবনার

অন্তিমে শেষ দৃশ্যের সংলাপে ভেসে

ওঠে জনদরদি রাজার মুখ। যেখানে রক্ত ঝরে

বন্যার বেগে সেখানেও প্রতিদিন ফুল ফোটে ফুল হয়ে।

যত দেখি

যত দেখি তৃপ্ত হই, শীতল হয়ে

জড়িয়ে পড়ি তোমার সমস্ত শরীরে। এক অজানা

শিহরণ ছুঁয়ে যায় হৃদয়ের সমস্ত পৃষ্ঠা জুড়ে।

যেন দীর্ঘদিনের শুষ্কতা ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে দূরে।

হারিয়ে যাওয়া রস ফিরছে মূলে, নিয়ে যাচ্ছে আদিপর্বে।

যেমন নেয় নদীর কূল, জোয়ারের ফেনা।

ভাবনার অতলে অদ্ভুত মায়া, দীর্ঘক্ষণ মোহগ্রস্ত

করে রাখে চোখের পলক, তাকিয়ে থাকি মায়ার মায়ায়। কী অপরূপ মায়া!

সেখানেও দেখি তৃষ্ণার ব্যাকুলতা নিয়ে অপেক্ষারত কান্না।

জীবনের তল্লাটে হারিয়ে খুঁজি আজ

আমারও জীবন ছিল। মায়ায় ভরা নির্বিঘ্ন আয়োজন, কলমিলতার মতো নিষ্পাপ।

তৃপ্ত হই ঘাসে, বাতাসের বেহায়া আঘাতে

অভিমানের মোড়ক ছুড়ে ফেলে হাতে তুলে নেই

কচু পাতায় টলোমলো জলের লজ্জা। এ জীবনের চাহিদা তোমায় দেখার

প্রয়োজনে তপ্ত, হয় উত্তপ্ত অথবা সহ্যের অতীত শীতল।

এ যেন কেমন

গহিন অরণ্যে সবুজ পাতার মতো, মগজে

চিন্তার রাজ্যে ভাবের উদয়, আকুল বিন্যাসে

একটু একটু করে এগিয়ে নেয়, আবার ভরা কলসির

মতো বসিয়ে রাখে-ভবের রাজ্যে। একদিন সমস্ত ভাবনা থেকে মুক্ত হয়ে

এদিক-ওদিক চলন, জীবন্ত মরণ! মানুষ

কেন বাঁচে, কীভাবে বাঁচে-প্রশ্নের সমাধা

আজ তর্কপ্রিয় সন্ধানে, মূর্ত প্রার্থনা।

সকল প্রিয়জন পরিত্যাগে, নিগূঢ় যত্নে হৃদয়ে প্রবেশ করে

নিজের অপরিচিত চেহারা, সব জিজ্ঞাসার

অন্ত-ক্রিয়ার এক উচ্চতম বিলাস।

জীবনের মানে অর্থশুন্য ভবিতব্য! এ কী হয়?

চোখের পলকে নিষ্পাপ দৃশ্যলোক-পেছন ডাকে বারবার

যেখানে থাকে আবার দেখার ইচ্ছা, নামে যে মুক্তকরণ। মিলনকান্তির আবাস।

চতুর্মুখ সমীকরণে খেলে যায় সময়ের ঝাঁজালো সিদ্ধান্ত। কেউ কী অপ্রিয় হয় কারও?

যেখানে ভেসে ওঠে নীলপদ্ম, অতীতের নিটোল কিতাব। সে-তো মানুষের ছবি!

চলে আসুন সবজি বাজারে

মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে দেখেছি অনেক কিছু

যা মানুষের নয়। অ-মানুষের জন্ম-উত্তর বাঁচার

উপায় হতে পারে। পোশাকে সজ্জিত দেহ কতভাবে

হিংস্র হয়, গোপনে, অন্ধের গহনে।

প্রবেশের আগেই পেয়েছি সংকেত। কত নোংরা, পচা, আবর্জনায় ভরা একটি থালার মতো

পড়ে আছে সম্মুখে। কেউ কি দেখেছে?

হয়তো মেনে নিয়েছে সবাই, সবার আগে সে

যে ভেবেছে, কী বা আছে উপায়!

চারপাশে কত কিছুর ঘ্রাণ, চোখ যা বলে তা কি মেনে নেয় স্বাস্থ্যবার্তা

ফুটে আছে ফুলের মতো দোকানের পসরা। খেতে বা কেনায় বারণ বালাই নেই।

যা পাচ্ছে নিচ্ছে, অনেকে। কেউ গায়ে কেউ পেটে।

আহা! দেখার কেউ নেই!

এক অন্ধকারে হাঁটছে আমাদের পা।

কেউ কি আছে কোথাও, আলো নিয়ে হাতে? ভেবেছে কি কেউ

কেন আমাদের আয়োজনে সবাই নেই?

কেউ এসে শুধু একবার বলুক, এই নিন-আপনাদের জীবন টিকিট যা উত্তরণ।

চলে আসুন সবজির বাজারে, সবুজের খোঁজে।

ইতিহাস

আজ স্পষ্ট ঘোষণা, আমার চোখের সামনে কেউ নেই

নেই কেউ ভাবের অন্তিম ঘরে। এক অস্পৃশ্য অনুভব

ছুঁয়ে চলে, ভাসিয়ে দেয় অগণিত স্রোতের তুমুল আলিঙ্গনে।

আজ কিছু ভেবে বলছি না, সরাসরি জবাব---

আমি নই কারও!

সব বাতাসের সাথে মিশে থাকা চোখের প্রেম

ভাবনার বিলাসে জড়িয়ে পড়ার বাসনা----সকলের অগোচরে

অথবা সকলের মাঝে। জীবনের অর্থে হৃদয়ের গুড়গুড় আলাপ

ঘুটঘুটে অন্ধকারে হৃদয়ে খোলা আকাশ, শুধু

এক মুখচ্ছবি।

আজ কোনো ক্ষমা নেই---নিজের প্রতি! নিজের পাপে

হাঁটি আমি, সবার মাঝে একলা হয়ে। বেদনার

কালো রং নিয়ে। শুধু দেখে যাই, শুধু দেখতে যাই।

কত রং বিরাজ করে ভাবনার গরমিলে, স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রই।

দাঁড়িয়ে থেকেও হেঁটে যাই!

আজকের না বলা কথা, কোনো দিন বলা হবে না

হবে না দাঁড়িয়ে আবার ভাবা আর একটু বসলে

ভালো হতো। যে বসিয়ে রাখে যে আশায় বসে থাকে

সবকিছুর-ই সময় থাকে---

এরপর---ইতিহাস!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জন্মদিনের শ্রদ্ধাঞ্জলি

বিদায় নেওয়া হুমায়ূন এখনো আছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ০৮: ৪২
হুমায়ূন আহমেদ
হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ তখন ক্যানসার আক্রান্ত। যুক্তরাষ্ট্রে কেমোথেরাপি নিচ্ছেন। হঠাৎ চিকিৎসকের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে চলে এলেন নুহাশপল্লীতে। নাটক বানাবেন। অভিনেতা ফারুক আহমেদকে ডাকলেন। নুহাশপল্লীতে নাটকের শুটিংয়ের ফাঁকে গল্প করছিলেন হুমায়ূন ও ফারুক। হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘কী আশ্চর্য, তাই না ফারুক!’ জবাবে ফারুক বললেন, ‘কী আশ্চর্য ভাই?’ হুমায়ূন আহমেদ বললেন, ‘এই যে প্রকৃতি, জোছনা, বৃষ্টি, নদী— কী সুন্দর! একদিন হয়তো আমি এসব আর দেখতে পারব না। একুশের বইমেলা হবে। লোকেদের ভিড়, আড্ডা; আমি সেখানে থাকব না। এটা কি মেনে নেওয়া যায়! হায় রে জীবন!’

‘আমার না বলা কথা’ বইয়ে ফারুক আহমেদ এই স্মৃতিচারণ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি কিছু না বলে মূর্তির মতো বসে রইলাম। একসময় তাকিয়ে দেখলাম, হুমায়ূন ভাইয়ের দুচোখের কোনায় পানি।’

হুমায়ূন আহমেদ নেই। তবে তিনি রয়েছেন দেশের তরুণদের মনে। যে বইমেলায় তিনি থাকবেন না বলে আক্ষেপ, সেই বইমেলায় তাঁর বইয়ের স্টলে তরুণদের ঢলের মধ্যে আছেন।

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে হুমায়ূন আহমেদের জন্ম এই দিনে (১৩ নভেম্বর); ভারত ভাগের এক বছর পরে ১৯৪৮ সালে। ছোট সময়ে তাঁর নাম ছিল শামসুর রহমান। তাঁর বাবা ছেলেমেয়েদের নাম পাল্টে ফেলতেন। তাঁর নাম পাল্টে রাখেন হুমায়ূন আহমেদ। হিমু, মিসির আলি, শুভ্রর মতো চরিত্রের স্রষ্টা তিনি। শুধু কথাসাহিত্যেই নয়; ‘বহুব্রীহি’, ‘অয়োময়’, ‘কোথাও কেউ নেই’,

‘আজ রবিবার’-এর মতো নাটক বানিয়েছেন, তৈরি করেছেন ‘আগুনের পরশমণি’, ‘শ্যামল ছায়া’র মতো চলচ্চিত্র।

হুমায়ূন আহমেদ বৃষ্টি, জোছনা ভালোবাসতেন। তাঁর লেখায় সেসব উঠে এসেছে বারবার। ২০১২ সালের জুলাইয়ে বর্ষাতেই তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ওপারে।

তিনি নেই। কিন্তু তাঁর লেখায় উঠে আসা চান্নিপসর, বৃষ্টি বিলাস আজও আছে তরুণদের মনে। ফারুক আহমেদ তাঁর ওই বইয়ে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে আরেকটি স্মৃতিচারণ করেছিলেন এভাবে—‘এক বিকেলে শুটিং শেষে তাঁর প্রিয় লিচুগাছের দিকে তাকিয়ে আছেন হুমায়ূন। সেখানে ঝুলছে পাকা লিচু। তিনি তাঁর কেয়ারটেকার মুশাররফকে ডেকে গ্রামের ছোট ছেলেমেয়েদের ডেকে নিয়ে এলেন। তাদের বললেন, গাছে উঠে যে যত পারে লিচু খেতে। বাচ্চারা কেউ গাছে উঠে লিচু খাচ্ছে, হইচই করছে। কেউ পকেটে ভরছে। হুমায়ূন আহমেদ অবাক হয়ে সেই লিচু খাওয়া দেখতে লাগলেন।’

ফারুক আহমেদ লিখেছেন, ‘হুমায়ূন ভাই একসময় আমাকে বললেন, এমন সুন্দর দৃশ্য তুমি কখনো দেখেছো? এমন ভালো লাগার অনুভূতি কি অন্য কোনোভাবে পাওয়া যায়? আমি কী বলব বুঝতে পারছিলাম না। হঠাৎ বললাম, না ভাই এমন ভালো লাগার অনুভূতি কোনোভাবেই পাওয়া যায় না।’

হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিন ঘিরে রাজধানীসহ জন্মস্থান নেত্রকোনাতে রয়েছে নানা আয়োজন। নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়নের কুতুবপুরে হুমায়ূন আহমেদ প্রতিষ্ঠিত শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ এবং এলাকাবাসীর উদ্যোগে এসব কর্মসূচি পালন করা হবে। সকালে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোরআন খতম করবেন। এরপর শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ প্রাঙ্গণ থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এলাকাবাসী এবং হুমায়ূনভক্তদের আনন্দ শোভাযাত্রা বের হবে। পরে লেখকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ, জন্মদিনের কেক কাটা, বৃক্ষরোপণ, কুইজ, হুমায়ূন আহমেদের রচিত নাটক ও সিনেমার অংশবিশেষ নিয়ে অভিনয়, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ ছাড়া রাজধানীতে হুমায়ূন আহমেদের চলচ্চিত্র নিয়ে চলচ্চিত্র সপ্তাহ, হুমায়ূন প্রতিযোগিতা, হুমায়ূন জন্মোৎসব, টেলিভিশন চ্যানেলে নাটক ও অনুষ্ঠান প্রচারসহ নানা আয়োজনে মুখর থাকছে দিনটি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত