মলয় বালা
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’-এর ১৯তম আসর আয়োজনের কথা ছিল ২০২০ সালে। তখন কোভিডের আতঙ্ক আর অনিশ্চিত জীবন-ভাবনায় মানুষের মন চুপসে ছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। আত্মায় ফিরে এসেছে আনন্দ উৎসব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা ছিল ১০০টি দেশের শিল্পকর্ম দিয়ে আয়োজন হবে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনী। প্রত্যাশা ছাড়িয়ে ১১৪টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে, যা আমাদের আনন্দের এবং গর্বের। এশীয় নামকরণ হলেও এর পরিধি এখন পৃথিবীর সকল দেশের জন্য উন্মুক্ত।
চারুশিল্পের এই উৎসবে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনেক প্রাপ্তি আছে, আছে মুক্তির পথনির্দেশনা। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি—পৃথিবীর শতাধিক দেশের শিল্পকর্ম আমরা অনায়াসে যেমন দেখতে পারছি, তেমনি এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সারা বিশ্বে আমাদের দেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখানোর সুযোগ হচ্ছে। এই দেখা ও দেখানোর মধ্য দিয়ে একটা তুলনামূলক যাচাইয়ে নিজেদের অবস্থান মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সাধারণ দর্শক নয়, খোদ চারুশিল্পীদের জন্য এই প্রদর্শনী এক শিক্ষণীয়। এক কথায় শিল্পশিক্ষার খোলা জানালা। এই আয়োজনে বিদেশের শিল্পী, শিল্পরসিক ও পর্যটকদের আগমন ঘটেছে। দেশি-বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার, নৌভ্রমণ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, আর্টক্যাম্প, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৈশভোজ সব মিলিয়ে উৎসবমুখর চারু শিল্পাঙ্গন। এই আয়োজন কতটা সফল হয়েছে, তা এবার আত্মবিশ্লেষণ করে দেখার বিষয়।
প্রায় ৫০০ শিল্পীর অংশগ্রহণের মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশের শিল্পী। গ্যালারি পর্যবেক্ষণে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। যার মধ্যে আমন্ত্রিত বরেণ্য ও প্রবাসী শিল্পীদের শিল্পকর্ম, উন্মুক্ত আহ্বান বা ওপেন কলে নির্বাচিত শিল্পীর শিল্পকর্ম, তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের নানা আঙ্গিক ও মাধ্যমের স্থাপনাশিল্প, পারফরম্যান্স আর্ট। এর মধ্যে কিছু শিল্পকর্মের গবেষণাধর্মী উপস্থাপন দর্শকদের মুগ্ধ করছে, এ কথা বলা যায়।
উপকরণ আর উপস্থাপনের ভিন্নতায় শিল্পী আব্দুল মোমেন মিল্টনের স্থাপনাশিল্প বা ইনস্টলেশন আর্ট ‘হারপাট সম্মেলন’ রীতিমতো গবেষণাধর্মী। শিল্পকর্মে কৃষিপ্রধান বাংলার কৃষিজ কারুশিল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্ধবৃত্তাকার বা অর্ধচন্দ্র আকৃতির বেশির ভাগ হারপাট গঠনবৈচিত্র্যে নান্দনিক। উঠানে ধান বা শস্য শুকানো প্রক্রিয়ায় বহুল ব্যবহৃত বিভিন্ন অঞ্চলের সরল যন্ত্রগুলোকে শিল্পী ‘কারুশিল্প’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে গ্যালারির ফ্লোরজুড়ে বিছানো ধানের পাশে এই হারপাটগুলো বাংলার কৃষিজ ঐতিহ্যের বার্তাবাহক। শিল্পী দেবাশীষ পালের ‘সময়ের প্রতিফলন: ১৯৫২ থেকে ২০২০’ শীর্ষক মৃৎশিল্পেও তেমনই বাংলার ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষিত হয়েছে। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী ময়নুল ইসলাম পলের স্থাপনাচিত্রে পরিলক্ষিত হয় গবেষণামূলক বয়ান। যেখানে দোচালা ঘর আচ্ছাদিত বিভিন্ন রকম পোস্টকার্ডে বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরবগাথার জয়গান।
বিভিন্ন উপকরণের সমারোহে উৎসবমুখর মেলার মতো আমেজ সৃষ্টি হয়েছে ৭ নম্বর গ্যালারিতে। যেখানে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত ১০টি স্থাপনাশিল্প, কখনো নীরবতা, কখনো শব্দ, কখনো আলোর প্রক্ষেপণে গুপ্তধন গহ্বরে প্রবেশ করে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার মতো অনুভূতি হয়। শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরীর ‘বক্স লাইফ’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পের রহস্য উদ্ঘাটন করতে হয় জাদুর বাক্স দেখার মতো। তরুণ প্রজন্মের শিল্পী ইয়াসমিন জাহান নুপুর পেয়েছেন গ্র্যান্ড প্রাইজ। এ ছাড়া তরুণ প্রজন্মের শিল্পী রত্নেশ্বর সূত্রধর, মো. ইমতিয়াজ ইসলাম, সোমা সুরভী জান্নাত, সজীব সেন, মো. মোজাহিদুর রহমান সরকার, সাগর দের শিল্পকর্মে উপকরণ ব্যবহারের বৈচিত্র্য ও আঙ্গিক সমকালীন শিল্পচর্চার এক সম্ভাবনাময় দিক উন্মোচন করে।
এই প্রদর্শনীর আরেকটি বিশেষ দিক বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক শিল্পকর্ম। বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের ‘শব্দের অপেক্ষা দ্রুতগামী’ শীর্ষক তেলরং চিত্রে লাল-সবুজ পতাকাবাহী মুক্তিযোদ্ধার শক্তি-সামর্থ্য গতিতে দেখানো হয়েছে। নেপথ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গালে হাত রাখা মুখাবয়ব। দূর সীমানায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধুর পাশফেরা মুখ কালি-তুলির জাদুতে ফুটে উঠেছে শাহ্জাহান আহমেদ বিকাশের ড্রয়িং চিত্রে। এস এম মিজানুর রহমানের ‘শ্রেষ্ঠ বিকালের গল্প’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পে দেখা যায়, ৭ মার্চের ভাষণের টাইপোগ্রাফির নান্দনিকতা। পরিবেশবান্ধব ও সহজ উপকরণে মহাকাব্যের এই উপস্থাপন প্রশংসনীয়। শুধু কি বাংলাদেশি? বিদেশি শিল্পীর কাজেও উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু। এঁকেছেন শ্রীলঙ্কান শিল্পী রাজা সিজার। ‘বঙ্গবন্ধুর শেষ নৈশভোজ: ১৪ আগস্ট ১৯৭৫’ শীর্ষক এই তেলরং চিত্রের মধ্যমণি বঙ্গবন্ধু। দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কুশীলবগণ। শিল্পকর্মটি রয়েছে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত বিদেশি শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত ‘গ্যালারি ৪’-এ।
বিভিন্ন দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া ধরা পড়ে এই গ্যালারিতে উপস্থাপিত শিল্পকর্মে। ভারতীয় শিল্পী মো. নিয়াজ মজুমদারের স্থাপনাশিল্পে দৃশ্যমান ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের গণহত্যা। ইউক্রেনের শিল্পী মার্গারিলা শেরস্টিউক এঁকেছেন বাংলার বসন্তবিষয়ক ভূপ্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য। বিদেশি শিল্পীর বিষয়ভাবনায় বাংলাদেশ, যা আমাদের প্রাপ্তি ও গৌরবের। বাস্তবানুগ গাছপালার ভেতরে ভৌতিক পশুপাখির অবয়ব তাঁর শৈলীর স্বাতন্ত্র্য। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত পর্তুগালের শিল্পী আনা সিলভিয়া মালহাদো চা-ব্যাগের পাতলা কাগজে ফুল, পাখি, গাছপালা এঁকে সারিবদ্ধভাবে ঝুলিয়ে দিয়েছেন সুতোয়। উপস্থাপনের এই ধরনটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ভারতীয় শিল্পী স্বপন দাসের ঘোড়া জীবনসংগ্রামের নানা ইঙ্গিত বহন করে। নেপালি শিল্পীদের কাজে এসেছে তাঁদের সংস্কৃতির পরিচয়, চীনা শিল্পীদের কিছু ভাস্কর্য মুগ্ধ করে। ইতালির শিল্পী সোনিয়া চেক্কোত্তির আঁকা একগুচ্ছ মুখাবয়বে রয়েছে দক্ষতার ছাপ। প্রায় প্রতিটি দেশের শিল্পীর শিল্পের উপকরণ ব্যবহার এবং বিষয়চিন্তায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। তবে কিউরেটিং প্রক্রিয়ায় দূতাবাসের মাধ্যমে বিদেশি শিল্পীদের যেসব শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা আপত্তি তোলা যায়। কারণ, প্রদর্শিত কাজগুলোতে কোনো ট্যাগ না থাকায় কোনো কোনো শিল্পকর্ম উপভোগ ও অনুধাবনে দর্শকদের ব্যর্থ হতে হয়। প্রশ্ন জাগে মান নিয়েও।
প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত শিল্পীর মধ্যে ছিলেন এ দেশের স্বনামধন্য শিল্পী এবং প্রবাসী শিল্পীগণ। বিশেষত, স্বনামধন্য দেশীয় শিল্পীদের শিল্পকর্মের বিষয়, শৈলী ও মাধ্যমের স্বাতন্ত্র্য আমাদের বেশ পরিচিত। শহীদ কবিরের এগ টেম্পারা, অলকেশ ঘোষের জলরঙের পাহাড়ি দৃশ্য, নাসরিন বেগমের প্রাচ্যরীতির রং লেপন, শফিকুল কবীর চন্দনের ট্রাপস্টি, গিয়াস উদ্দিনের বিমূর্তাঙ্গিক, ফরিদা জামানের মাছ ও জালের ফর্ম, রফিকুন নবীর গ্রাম্য জীবনের দৃশ্য, হাশেম খানের প্রকৃতি—এরূপ অনেক শিল্পীর কাজের দেখা মিলবে। ব্যতিক্রম শুধু কয়েকটি ভাস্কর্য। কাঠ খোদাইয়ে শামীম সিকদারের ‘বাংলার সত্যিকারের নায়ক’, আইভি জামানের ফর্ম প্রধান ভাস্কর্য ও ভাস্কর রাসার হিরোশিমা ভাস্কর্য প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। হিরোশিমা-নাগাসাকির পারমাণবিক আক্রমণের বীভৎসতার বিরুদ্ধে খণ্ডিত মানুষের আর্তনাদ করা দেহাবয়ব সহযোগে মডেল ভাস্কর্য এটি।
৫ লাখ মানুষের সম্পৃক্ততা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে ভাস্কর্যটি গড়ার স্বপ্ন রয়েছে শিল্পীর। ওপেন কলে নির্বাচিত বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে শিল্পী সুশান্ত কুমার অধিকারীর গ্র্যান্ড প্রাইজপ্রাপ্ত ‘আত্ম-উপলব্ধির ভেতর বাহির’ শীর্ষক প্রাচ্যধারার চিত্রকর্মটি অসাধারণ। টেম্পারা পদ্ধতিতে আঁকা চিত্রে আত্ম-উপলব্ধি ও আত্ম-বিশ্লেষণের সমীকরণ দর্শকদের প্রশান্তি দেয়। ভাস্কর সুমন কুমার দাস (কুয়াশা বিন্দু) ভাস্কর্যের জন্য পেয়েছেন সম্মানসূচক পুরস্কার। সমাজের মানুষ ভাগ হয়ে হয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছে, সে বয়ানটিও উঠে এসেছে তাঁর ভাস্কর্যে। সাদা-কালোর রেখাবিন্যাসে আলো-ছায়া, ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্যের পার্থক্য দেখিয়েছেন শিল্পী আলপ্তগীন তুষার। এভাবে শিল্পীদের বয়ানে দেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির অনিয়ম, অনাচার, মানুষসৃষ্ট দুর্ভোগ কিংবা একান্ত মনোজাগতিক ভাবনাগুলো উঠে এসেছে। এসব শিল্পকর্ম দেখলে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, উত্তরও খুঁজে পাওয়া যায়। সুন্দর পৃথিবী গড়ায় উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়।
হারুন অর রশীদের ভিডিও ইনস্টলেশনটি দেখলে মনে হয় সিনেমা দেখছি। ছেলেবেলার দেখা কাচের ‘বর্ণচ্ছটা’ খেলনার আদলে তিনি সমাজ ও মানবতা বিপন্নের দৃশ্য দেখিয়েছেন অনেকটাই প্রতীকীভাবে। মূলত শিল্পকর্ম সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের পথের দেখায়। চ্যালেঞ্জ বাসযোগ্য পৃথিবীকে গড়ে তোলা। লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ, যুদ্ধের বিপরীতে শান্তি প্রতিস্থাপন করা। প্রকৃতিকে মানবসৃষ্ট বিপন্নের হাত থেকে রক্ষা করা। সমাজ সংস্কারে শিল্পীদের এই সমন্বিত প্রয়াস সকল প্রজন্মের মানুষের জন্য অবমুক্ত হওয়া আমাদের প্রত্যাশা হওয়া উচিত। শিল্প-সংস্কৃতির বলয়ের বাইরের মানুষের এই উৎসবে হাজির করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তরুণ প্রজন্মকে নান্দনিক বোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এই চারুকলা উৎসবের আনন্দ উপভোগে। অন্তত ডকুমেন্টারির মাধ্যমে এবং পরবর্তী বছরগুলোর আয়োজনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এই শিল্প রসাস্বাদনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিল্প ও সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে যে চেতনার পরিবর্তন হবে, তা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীনতম মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক চারুকলা উৎসব ‘দ্বিবার্ষিক এশীয় চারুকলা প্রদর্শনী বাংলাদেশ’-এর ১৯তম আসর আয়োজনের কথা ছিল ২০২০ সালে। তখন কোভিডের আতঙ্ক আর অনিশ্চিত জীবন-ভাবনায় মানুষের মন চুপসে ছিল। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক। আত্মায় ফিরে এসেছে আনন্দ উৎসব। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রস্তুতি ও প্রত্যাশা ছিল ১০০টি দেশের শিল্পকর্ম দিয়ে আয়োজন হবে আন্তর্জাতিক এই প্রদর্শনী। প্রত্যাশা ছাড়িয়ে ১১৪টি দেশ অংশগ্রহণ করেছে, যা আমাদের আনন্দের এবং গর্বের। এশীয় নামকরণ হলেও এর পরিধি এখন পৃথিবীর সকল দেশের জন্য উন্মুক্ত।
চারুশিল্পের এই উৎসবে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনেক প্রাপ্তি আছে, আছে মুক্তির পথনির্দেশনা। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি—পৃথিবীর শতাধিক দেশের শিল্পকর্ম আমরা অনায়াসে যেমন দেখতে পারছি, তেমনি এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে সারা বিশ্বে আমাদের দেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখানোর সুযোগ হচ্ছে। এই দেখা ও দেখানোর মধ্য দিয়ে একটা তুলনামূলক যাচাইয়ে নিজেদের অবস্থান মূল্যায়ন করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। সাধারণ দর্শক নয়, খোদ চারুশিল্পীদের জন্য এই প্রদর্শনী এক শিক্ষণীয়। এক কথায় শিল্পশিক্ষার খোলা জানালা। এই আয়োজনে বিদেশের শিল্পী, শিল্পরসিক ও পর্যটকদের আগমন ঘটেছে। দেশি-বিদেশি শিল্পীদের নিয়ে আন্তর্জাতিক সেমিনার, নৌভ্রমণ, বিভিন্ন ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন, আর্টক্যাম্প, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৈশভোজ সব মিলিয়ে উৎসবমুখর চারু শিল্পাঙ্গন। এই আয়োজন কতটা সফল হয়েছে, তা এবার আত্মবিশ্লেষণ করে দেখার বিষয়।
প্রায় ৫০০ শিল্পীর অংশগ্রহণের মধ্যে পাঁচ ভাগের এক ভাগ বাংলাদেশের শিল্পী। গ্যালারি পর্যবেক্ষণে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়। যার মধ্যে আমন্ত্রিত বরেণ্য ও প্রবাসী শিল্পীদের শিল্পকর্ম, উন্মুক্ত আহ্বান বা ওপেন কলে নির্বাচিত শিল্পীর শিল্পকর্ম, তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের নানা আঙ্গিক ও মাধ্যমের স্থাপনাশিল্প, পারফরম্যান্স আর্ট। এর মধ্যে কিছু শিল্পকর্মের গবেষণাধর্মী উপস্থাপন দর্শকদের মুগ্ধ করছে, এ কথা বলা যায়।
উপকরণ আর উপস্থাপনের ভিন্নতায় শিল্পী আব্দুল মোমেন মিল্টনের স্থাপনাশিল্প বা ইনস্টলেশন আর্ট ‘হারপাট সম্মেলন’ রীতিমতো গবেষণাধর্মী। শিল্পকর্মে কৃষিপ্রধান বাংলার কৃষিজ কারুশিল্প উপস্থাপন করা হয়েছে। অর্ধবৃত্তাকার বা অর্ধচন্দ্র আকৃতির বেশির ভাগ হারপাট গঠনবৈচিত্র্যে নান্দনিক। উঠানে ধান বা শস্য শুকানো প্রক্রিয়ায় বহুল ব্যবহৃত বিভিন্ন অঞ্চলের সরল যন্ত্রগুলোকে শিল্পী ‘কারুশিল্প’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। তবে গ্যালারির ফ্লোরজুড়ে বিছানো ধানের পাশে এই হারপাটগুলো বাংলার কৃষিজ ঐতিহ্যের বার্তাবাহক। শিল্পী দেবাশীষ পালের ‘সময়ের প্রতিফলন: ১৯৫২ থেকে ২০২০’ শীর্ষক মৃৎশিল্পেও তেমনই বাংলার ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও সমসাময়িক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষিত হয়েছে। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী ময়নুল ইসলাম পলের স্থাপনাচিত্রে পরিলক্ষিত হয় গবেষণামূলক বয়ান। যেখানে দোচালা ঘর আচ্ছাদিত বিভিন্ন রকম পোস্টকার্ডে বাংলার ইতিহাস ও সংস্কৃতির গৌরবগাথার জয়গান।
বিভিন্ন উপকরণের সমারোহে উৎসবমুখর মেলার মতো আমেজ সৃষ্টি হয়েছে ৭ নম্বর গ্যালারিতে। যেখানে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত ১০টি স্থাপনাশিল্প, কখনো নীরবতা, কখনো শব্দ, কখনো আলোর প্রক্ষেপণে গুপ্তধন গহ্বরে প্রবেশ করে নতুন কিছু খুঁজে পাওয়ার মতো অনুভূতি হয়। শিল্পী অভিজিৎ চৌধুরীর ‘বক্স লাইফ’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পের রহস্য উদ্ঘাটন করতে হয় জাদুর বাক্স দেখার মতো। তরুণ প্রজন্মের শিল্পী ইয়াসমিন জাহান নুপুর পেয়েছেন গ্র্যান্ড প্রাইজ। এ ছাড়া তরুণ প্রজন্মের শিল্পী রত্নেশ্বর সূত্রধর, মো. ইমতিয়াজ ইসলাম, সোমা সুরভী জান্নাত, সজীব সেন, মো. মোজাহিদুর রহমান সরকার, সাগর দের শিল্পকর্মে উপকরণ ব্যবহারের বৈচিত্র্য ও আঙ্গিক সমকালীন শিল্পচর্চার এক সম্ভাবনাময় দিক উন্মোচন করে।
এই প্রদর্শনীর আরেকটি বিশেষ দিক বঙ্গবন্ধু-বিষয়ক শিল্পকর্ম। বরেণ্য শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের ‘শব্দের অপেক্ষা দ্রুতগামী’ শীর্ষক তেলরং চিত্রে লাল-সবুজ পতাকাবাহী মুক্তিযোদ্ধার শক্তি-সামর্থ্য গতিতে দেখানো হয়েছে। নেপথ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গালে হাত রাখা মুখাবয়ব। দূর সীমানায় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। বঙ্গবন্ধুর পাশফেরা মুখ কালি-তুলির জাদুতে ফুটে উঠেছে শাহ্জাহান আহমেদ বিকাশের ড্রয়িং চিত্রে। এস এম মিজানুর রহমানের ‘শ্রেষ্ঠ বিকালের গল্প’ শীর্ষক স্থাপনাশিল্পে দেখা যায়, ৭ মার্চের ভাষণের টাইপোগ্রাফির নান্দনিকতা। পরিবেশবান্ধব ও সহজ উপকরণে মহাকাব্যের এই উপস্থাপন প্রশংসনীয়। শুধু কি বাংলাদেশি? বিদেশি শিল্পীর কাজেও উঠে এসেছে বঙ্গবন্ধু। এঁকেছেন শ্রীলঙ্কান শিল্পী রাজা সিজার। ‘বঙ্গবন্ধুর শেষ নৈশভোজ: ১৪ আগস্ট ১৯৭৫’ শীর্ষক এই তেলরং চিত্রের মধ্যমণি বঙ্গবন্ধু। দুই পাশে সারিবদ্ধভাবে ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের কুশীলবগণ। শিল্পকর্মটি রয়েছে ওপেন কলের মাধ্যমে নির্বাচিত বিদেশি শিল্পীদের শিল্পকর্ম প্রদর্শিত ‘গ্যালারি ৪’-এ।
বিভিন্ন দেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ভূ-প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনস্তাত্ত্বিক বোঝাপড়া ধরা পড়ে এই গ্যালারিতে উপস্থাপিত শিল্পকর্মে। ভারতীয় শিল্পী মো. নিয়াজ মজুমদারের স্থাপনাশিল্পে দৃশ্যমান ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের গণহত্যা। ইউক্রেনের শিল্পী মার্গারিলা শেরস্টিউক এঁকেছেন বাংলার বসন্তবিষয়ক ভূপ্রাকৃতিক মনোরম দৃশ্য। বিদেশি শিল্পীর বিষয়ভাবনায় বাংলাদেশ, যা আমাদের প্রাপ্তি ও গৌরবের। বাস্তবানুগ গাছপালার ভেতরে ভৌতিক পশুপাখির অবয়ব তাঁর শৈলীর স্বাতন্ত্র্য। সম্মানসূচক পুরস্কারপ্রাপ্ত পর্তুগালের শিল্পী আনা সিলভিয়া মালহাদো চা-ব্যাগের পাতলা কাগজে ফুল, পাখি, গাছপালা এঁকে সারিবদ্ধভাবে ঝুলিয়ে দিয়েছেন সুতোয়। উপস্থাপনের এই ধরনটি বেশ দৃষ্টিনন্দন। ভারতীয় শিল্পী স্বপন দাসের ঘোড়া জীবনসংগ্রামের নানা ইঙ্গিত বহন করে। নেপালি শিল্পীদের কাজে এসেছে তাঁদের সংস্কৃতির পরিচয়, চীনা শিল্পীদের কিছু ভাস্কর্য মুগ্ধ করে। ইতালির শিল্পী সোনিয়া চেক্কোত্তির আঁকা একগুচ্ছ মুখাবয়বে রয়েছে দক্ষতার ছাপ। প্রায় প্রতিটি দেশের শিল্পীর শিল্পের উপকরণ ব্যবহার এবং বিষয়চিন্তায় রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ। তবে কিউরেটিং প্রক্রিয়ায় দূতাবাসের মাধ্যমে বিদেশি শিল্পীদের যেসব শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়েছে, তা নিয়ে কিছুটা আপত্তি তোলা যায়। কারণ, প্রদর্শিত কাজগুলোতে কোনো ট্যাগ না থাকায় কোনো কোনো শিল্পকর্ম উপভোগ ও অনুধাবনে দর্শকদের ব্যর্থ হতে হয়। প্রশ্ন জাগে মান নিয়েও।
প্রদর্শনীতে আমন্ত্রিত শিল্পীর মধ্যে ছিলেন এ দেশের স্বনামধন্য শিল্পী এবং প্রবাসী শিল্পীগণ। বিশেষত, স্বনামধন্য দেশীয় শিল্পীদের শিল্পকর্মের বিষয়, শৈলী ও মাধ্যমের স্বাতন্ত্র্য আমাদের বেশ পরিচিত। শহীদ কবিরের এগ টেম্পারা, অলকেশ ঘোষের জলরঙের পাহাড়ি দৃশ্য, নাসরিন বেগমের প্রাচ্যরীতির রং লেপন, শফিকুল কবীর চন্দনের ট্রাপস্টি, গিয়াস উদ্দিনের বিমূর্তাঙ্গিক, ফরিদা জামানের মাছ ও জালের ফর্ম, রফিকুন নবীর গ্রাম্য জীবনের দৃশ্য, হাশেম খানের প্রকৃতি—এরূপ অনেক শিল্পীর কাজের দেখা মিলবে। ব্যতিক্রম শুধু কয়েকটি ভাস্কর্য। কাঠ খোদাইয়ে শামীম সিকদারের ‘বাংলার সত্যিকারের নায়ক’, আইভি জামানের ফর্ম প্রধান ভাস্কর্য ও ভাস্কর রাসার হিরোশিমা ভাস্কর্য প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। হিরোশিমা-নাগাসাকির পারমাণবিক আক্রমণের বীভৎসতার বিরুদ্ধে খণ্ডিত মানুষের আর্তনাদ করা দেহাবয়ব সহযোগে মডেল ভাস্কর্য এটি।
৫ লাখ মানুষের সম্পৃক্ততা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে ভাস্কর্যটি গড়ার স্বপ্ন রয়েছে শিল্পীর। ওপেন কলে নির্বাচিত বাংলাদেশের শিল্পীদের মধ্যে শিল্পী সুশান্ত কুমার অধিকারীর গ্র্যান্ড প্রাইজপ্রাপ্ত ‘আত্ম-উপলব্ধির ভেতর বাহির’ শীর্ষক প্রাচ্যধারার চিত্রকর্মটি অসাধারণ। টেম্পারা পদ্ধতিতে আঁকা চিত্রে আত্ম-উপলব্ধি ও আত্ম-বিশ্লেষণের সমীকরণ দর্শকদের প্রশান্তি দেয়। ভাস্কর সুমন কুমার দাস (কুয়াশা বিন্দু) ভাস্কর্যের জন্য পেয়েছেন সম্মানসূচক পুরস্কার। সমাজের মানুষ ভাগ হয়ে হয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছে, সে বয়ানটিও উঠে এসেছে তাঁর ভাস্কর্যে। সাদা-কালোর রেখাবিন্যাসে আলো-ছায়া, ভালো-মন্দ, পাপ-পুণ্যের পার্থক্য দেখিয়েছেন শিল্পী আলপ্তগীন তুষার। এভাবে শিল্পীদের বয়ানে দেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির অনিয়ম, অনাচার, মানুষসৃষ্ট দুর্ভোগ কিংবা একান্ত মনোজাগতিক ভাবনাগুলো উঠে এসেছে। এসব শিল্পকর্ম দেখলে মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে, উত্তরও খুঁজে পাওয়া যায়। সুন্দর পৃথিবী গড়ায় উদ্বুদ্ধ হওয়া যায়।
হারুন অর রশীদের ভিডিও ইনস্টলেশনটি দেখলে মনে হয় সিনেমা দেখছি। ছেলেবেলার দেখা কাচের ‘বর্ণচ্ছটা’ খেলনার আদলে তিনি সমাজ ও মানবতা বিপন্নের দৃশ্য দেখিয়েছেন অনেকটাই প্রতীকীভাবে। মূলত শিল্পকর্ম সত্য-সুন্দর-মঙ্গলের পথের দেখায়। চ্যালেঞ্জ বাসযোগ্য পৃথিবীকে গড়ে তোলা। লোভ, হিংসা, বিদ্বেষ, যুদ্ধের বিপরীতে শান্তি প্রতিস্থাপন করা। প্রকৃতিকে মানবসৃষ্ট বিপন্নের হাত থেকে রক্ষা করা। সমাজ সংস্কারে শিল্পীদের এই সমন্বিত প্রয়াস সকল প্রজন্মের মানুষের জন্য অবমুক্ত হওয়া আমাদের প্রত্যাশা হওয়া উচিত। শিল্প-সংস্কৃতির বলয়ের বাইরের মানুষের এই উৎসবে হাজির করা জরুরি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যাশা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের তরুণ প্রজন্মকে নান্দনিক বোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এই চারুকলা উৎসবের আনন্দ উপভোগে। অন্তত ডকুমেন্টারির মাধ্যমে এবং পরবর্তী বছরগুলোর আয়োজনে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনায় সারা দেশের শিক্ষার্থীদের এই শিল্প রসাস্বাদনে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। শিল্প ও সংস্কৃতিচর্চার মধ্য দিয়ে যে চেতনার পরিবর্তন হবে, তা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়।
আকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
২ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৩ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২০ দিন আগেপ্রকাশনা সংস্থা ‘ঐতিহ্য’ তার দুই যুগের পথচলা (২০০০-২০২৪) স্মরণীয় করে রাখতে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে দশ দিনব্যাপী ‘ঐতিহ্য বই উৎসব ২০২৪’ আয়োজন করেছে। আজ ২ নভেম্বর শনিবার বেলা ১১টায় যৌথভাবে উৎসব উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, বিশিষ্ট লেখক-গবেষক শারমিন আহমদ এবং তরুণ
২০ দিন আগে