আলমগীর শাহরিয়ার
কবি ও কথাসাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন কতটা জনপ্রিয় ও আলোচিত, তাঁকে নিয়ে প্রচলিত একটি গল্পে এর কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়। একসময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটা সাপ্তাহিক ছিল ‘বিচিন্তা’। ‘বিচিন্তা’র সম্পাদক ছিলেন সাংবাদিক মিনার মাহমুদ। তিনি কিছু কারণে দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে ট্যাক্সি চালাতেন। একদিন তিনি যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। তো, যাত্রী তাঁর দেশ বাংলাদেশ শুনে জানতে চেয়েছিলেন তসলিমা নাসরিনকে চেনেন কি না। মিনার মাহমুদ বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, তসলিমা নাসরিনকে চিনি। তিনি আমার স্ত্রী ছিলেন।’ যাত্রী তাঁর কথা শুনে আঁতকে উঠেছিলেন। চিৎকার করে মিনার মাহমুদকে ট্যাক্সি থামিয়ে তাঁকে নামিয়ে দিতে বলেছিলেন। হয়তো যাত্রী ভেবেছিলেন, চালক মাতাল বা মাথায় গন্ডগোল আছে। তা না হলে নিজেকে তসলিমার স্বামী দাবি করে একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার!
নিবন্ধের শুরুতে গল্পটা বলার একটা উদ্দেশ্য আছে। তা হলো, বাংলা সাহিত্যে যে কজন সাহিত্যিকের নাম বিশ্বব্যাপী পরিচিত, তাঁদের একজন তসলিমা নাসরিন। বিতর্কিত লেখনীর জন্য তিনি যেমন নন্দিত, তেমনি নিন্দিতও। মূলত নারীবাদ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁর আপসহীন ভূমিকার জন্য তিনি নানা সময়ে হামলা, মামলা, জীবননাশের হুমকির মুখে যেমন পড়েছেন, তেমনি সারা বিশ্বে নানা সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তসলিমা নাসরিন যখন লেখালেখির কারণে, সত্য বলার কারণে, মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, তখন তিনি বসবাসের জন্য ইউরোপ-আমেরিকায় থাকতে পারতেন। নিরাপত্তা ও আরাম-আয়েশের জীবন যাপন করতে পারতেন। ইউরোপ-আমেরিকায় ছিলেনও তিনি। শুধু লেখালেখি করার জন্যই, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সান্নিধ্যের জন্যই বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী কলকাতায় চলে এসেছিলেন। প্রায় তিন দশক ধরে দেশের বাইরে থাকছেন তিনি। কখনো ভারতে, কখনো ইউরোপ-আমেরিকায়। ভারত তাঁর দেশ নয়, ইউরোপ-আমেরিকাও তাঁর দেশ নয়; বাংলাদেশের জল-হাওয়া-মাটিতেই তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। বাংলাদেশই তাঁর আরাধ্য ভূমি, প্রিয় স্বদেশ। বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তিনি নিজের জন্মভূমিতে কেন ফিরতে পারছেন না?
কয়েক দিন আগে তসলিমা নাসরিনের ৬০তম জন্মদিন উদ্যাপিত হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁর অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। তসলিমাও অনেক দিন ধরে চেষ্টা করেছেন, দাবি জানিয়েছেন, অনুরোধ-আবদার করেছেন—তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হোক। বিভিন্ন সময়ে তসলিমা তাঁর কবিতায়, উপন্যাসে, আত্মজীবনীতে, সোশ্যাল মিডিয়ার নানা পোস্টে দেশে ফেরার প্রবল আকুতি প্রকাশ করেছেন। দেশ থেকে দূরে থাকার গভীর দীর্ঘশ্বাস শুধু পাঠক নয়, মানবিক মানুষমাত্রই যে কাউকে স্পর্শ করবে। কবিতায় তিনি লিখেছেন—
‘মেঘ উড়ে যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, তাকে ক’ফোটা জল দিচ্ছি চোখের,
যেন গোল পুকুরপাড়ের বাড়ির টিনের চালে একবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
শীতের পাখিরা যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, ওরা একটি করে পালক ফেলে আসবে
শাপলা পুকুরে, শীতলক্ষ্যায়, বঙ্গোপসাগরে।
ব্রহ্মপুত্র শোনো, আমি ফিরব।
শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকুণ্ড পাহাড়—আমি ফিরব।
যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন।’
তসলিমা নাসরিন শুধু নন, পৃথিবীর অনেকে দেশেই কবি-লেখকেরা নিগৃহের শিকার হয়েছেন, হামলা-মামলা ও দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আলেকজান্ডার সোলঝিনিৎসিনের কথা বলা যায়। তিনি খ্যাতিমান রাশিয়ান কথাসাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। তাঁর লেখালেখিতে উঠে আসত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন-শোষণের প্রতিবাদ। ফলে তিনি নিজেও শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। শুধু কারাদণ্ড নয়, নির্যাতন-নিপীড়ন নয়, নিজ দেশ থেকে নির্বাসিতও হয়েছিলেন। একসময়ের প্রতাপশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়, তারপর ১৯৯৪ সালে তিনি রাশিয়ায় ফিরে আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাশিয়াতেই বসবাস করেন। তসলিমা নাসরিনের নির্বাসনের প্রায় তিন দশক হতে চলল। তিনি কি ফিরতে পারবেন নিরাপদ স্বদেশে?
তসলিমা নাসরিন দেশে ফিরতে পারছেন না—এই দুর্ভাগ্য কি তাঁর একার? এই ব্যর্থতার দায় কি রাষ্ট্র এড়াতে পারে? দীর্ঘ নির্বাসনজীবনে তসলিমা নাসরিন তাঁর মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন। মায়ের পর পিতৃবিয়োগের মতো শোক সইতে হয়েছে। অনেক স্বজন হারিয়েছেন। তবু দেশে ফিরতে পারেননি। তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার আসল বাধা কোথায়?
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে পত্রিকায় কলাম ও নারীদের অধিকার নিয়ে জোরালো লেখালেখির মধ্য দিয়ে তসলিমা বেশ আলোচনায় আসেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘খবরের কাগজ’ নামক পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন বলে সেই অফিসে একদল ধর্মান্ধ লোক হামলা চালায়। এ সময় তাঁর আলোচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘নির্বাচিত কলাম’ প্রকাশিত হয়। বইটির জন্য ১৯৯২ সালে তসলিমা আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর ভারতের অযোধ্যায় হিন্দু উগ্রবাদীদের দ্বারা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটে, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা হয়। এটা নিয়ে তসলিমা লিখেছিলেন তাঁর আলোচিত উপন্যাস ‘লজ্জা’। বইটি প্রকাশের পরপরই নিষিদ্ধ হয় এবং তাঁর জীবননাশের হুমকি আসতে থাকে। বইমেলায় তিনি নিগ্রহের শিকার হন। এর কিছুদিন পরে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন।
তসলিমা নাসরিন প্রায়ই বলেন, শুধু উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীই নয়, তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেয়নি বিএনপি-জামায়াত জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারও। নানা সময়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি দেশ ছাড়ার পর তসলিমা নাসরিন নবায়ন করতে পারেননি নিজ দেশের পাসপোর্ট। দূতাবাসগুলো বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁকে। তবু তিনি হাল ছাড়েননি। বিএনপি আমলে দেশ ছাড়লেও উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভয়ে খালেদা জিয়া কিংবা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তসলিমা নাসরিন প্রশ্নে অভিন্ন ঐক্য বলে লেখক নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর লেখায় মন্তব্য করেছেন। কারও আমলেই তিনি দেশে বসবাসের জন্য ফিরে আসতে পারেননি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পর বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারও তসলিমার দেশে ফেরার ব্যাপারে ইতিবাচক নয়।
তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার আইনি বাধা নিয়ে কথা হয়েছিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাশের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘তসলিমা নাসরিনের দেশে ফিরতে আইনি কোনো বাধা নেই। কোনো নাগরিককে নিজ দেশে আসতে সরকার বাধা দিতে পারে না। কোনো কারণেই পারে না। এমনকি কেউ অপরাধী হলেও দেশে তার বিচার হতে পারে, শাস্তি হতে পারে; কিন্তু দেশে আসতে বাধা দেওয়া যায় না। তসলিমা নাসরিনের দেশে প্রবেশে বাধা সামাজিক ও রাজনৈতিক। ধর্মীয় মৌলবাদীদের ভয়ে কোনো সরকারই তাঁকে দেশে আসতে দিতে ইচ্ছুক নয়। সে জন্যই তাঁর পাসপোর্ট নবায়ন করে দিচ্ছে না।’
তসলিমা নাসরিন একজন লেখক; তিনি খুনি নন, যুদ্ধাপরাধী বা দেশদ্রোহী নন, দুর্নীতিবাজও নন। একজন লেখক তাঁর মা, মাটি ও ভাষাকে গভীরভাবে ভালোবেসেই লেখালেখি করেন। তিনি তাঁর মাতৃভূমিতে বসবাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? কেন নির্বাসিত থাকবেন দীর্ঘদিন? সভ্যতার এত উন্নতির কালে রাষ্ট্রই তার জবাব দিক।
লেখক: তরুণ কবি ও গবেষক
কবি ও কথাসাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন কতটা জনপ্রিয় ও আলোচিত, তাঁকে নিয়ে প্রচলিত একটি গল্পে এর কিছুটা নমুনা পাওয়া যায়। একসময় বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটা সাপ্তাহিক ছিল ‘বিচিন্তা’। ‘বিচিন্তা’র সম্পাদক ছিলেন সাংবাদিক মিনার মাহমুদ। তিনি কিছু কারণে দেশ ছেড়ে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলেন। সেখানে ট্যাক্সি চালাতেন। একদিন তিনি যাত্রী নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন। তো, যাত্রী তাঁর দেশ বাংলাদেশ শুনে জানতে চেয়েছিলেন তসলিমা নাসরিনকে চেনেন কি না। মিনার মাহমুদ বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, তসলিমা নাসরিনকে চিনি। তিনি আমার স্ত্রী ছিলেন।’ যাত্রী তাঁর কথা শুনে আঁতকে উঠেছিলেন। চিৎকার করে মিনার মাহমুদকে ট্যাক্সি থামিয়ে তাঁকে নামিয়ে দিতে বলেছিলেন। হয়তো যাত্রী ভেবেছিলেন, চালক মাতাল বা মাথায় গন্ডগোল আছে। তা না হলে নিজেকে তসলিমার স্বামী দাবি করে একজন ট্যাক্সি ড্রাইভার!
নিবন্ধের শুরুতে গল্পটা বলার একটা উদ্দেশ্য আছে। তা হলো, বাংলা সাহিত্যে যে কজন সাহিত্যিকের নাম বিশ্বব্যাপী পরিচিত, তাঁদের একজন তসলিমা নাসরিন। বিতর্কিত লেখনীর জন্য তিনি যেমন নন্দিত, তেমনি নিন্দিতও। মূলত নারীবাদ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে তাঁর আপসহীন ভূমিকার জন্য তিনি নানা সময়ে হামলা, মামলা, জীবননাশের হুমকির মুখে যেমন পড়েছেন, তেমনি সারা বিশ্বে নানা সম্মাননা ও পুরস্কার অর্জন করেছেন। তসলিমা নাসরিন যখন লেখালেখির কারণে, সত্য বলার কারণে, মৌলবাদীদের সমালোচনা করার কারণে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, তখন তিনি বসবাসের জন্য ইউরোপ-আমেরিকায় থাকতে পারতেন। নিরাপত্তা ও আরাম-আয়েশের জীবন যাপন করতে পারতেন। ইউরোপ-আমেরিকায় ছিলেনও তিনি। শুধু লেখালেখি করার জন্যই, বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সান্নিধ্যের জন্যই বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী কলকাতায় চলে এসেছিলেন। প্রায় তিন দশক ধরে দেশের বাইরে থাকছেন তিনি। কখনো ভারতে, কখনো ইউরোপ-আমেরিকায়। ভারত তাঁর দেশ নয়, ইউরোপ-আমেরিকাও তাঁর দেশ নয়; বাংলাদেশের জল-হাওয়া-মাটিতেই তাঁর জন্ম, বেড়ে ওঠা। বাংলাদেশই তাঁর আরাধ্য ভূমি, প্রিয় স্বদেশ। বাংলাদেশের নাগরিক হয়েও তিনি নিজের জন্মভূমিতে কেন ফিরতে পারছেন না?
কয়েক দিন আগে তসলিমা নাসরিনের ৬০তম জন্মদিন উদ্যাপিত হয়েছে। বরাবরের মতো এবারও তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁর অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী। তসলিমাও অনেক দিন ধরে চেষ্টা করেছেন, দাবি জানিয়েছেন, অনুরোধ-আবদার করেছেন—তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেওয়া হোক। বিভিন্ন সময়ে তসলিমা তাঁর কবিতায়, উপন্যাসে, আত্মজীবনীতে, সোশ্যাল মিডিয়ার নানা পোস্টে দেশে ফেরার প্রবল আকুতি প্রকাশ করেছেন। দেশ থেকে দূরে থাকার গভীর দীর্ঘশ্বাস শুধু পাঠক নয়, মানবিক মানুষমাত্রই যে কাউকে স্পর্শ করবে। কবিতায় তিনি লিখেছেন—
‘মেঘ উড়ে যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, তাকে ক’ফোটা জল দিচ্ছি চোখের,
যেন গোল পুকুরপাড়ের বাড়ির টিনের চালে একবার বৃষ্টি হয়ে ঝরে।
শীতের পাখিরা যাচ্ছে পশ্চিম থেকে পুবে, ওরা একটি করে পালক ফেলে আসবে
শাপলা পুকুরে, শীতলক্ষ্যায়, বঙ্গোপসাগরে।
ব্রহ্মপুত্র শোনো, আমি ফিরব।
শোনো শালবন বিহার, মহাস্থানগড়, সীতাকুণ্ড পাহাড়—আমি ফিরব।
যদি মানুষ হয়ে না পারি, পাখি হয়েও ফিরব একদিন।’
তসলিমা নাসরিন শুধু নন, পৃথিবীর অনেকে দেশেই কবি-লেখকেরা নিগৃহের শিকার হয়েছেন, হামলা-মামলা ও দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছেন। আলেকজান্ডার সোলঝিনিৎসিনের কথা বলা যায়। তিনি খ্যাতিমান রাশিয়ান কথাসাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ। সাহিত্যে অবদানের জন্য ১৯৭০ সালে পেয়েছেন নোবেল পুরস্কার। তাঁর লেখালেখিতে উঠে আসত তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের শাসন-শোষণের প্রতিবাদ। ফলে তিনি নিজেও শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। শুধু কারাদণ্ড নয়, নির্যাতন-নিপীড়ন নয়, নিজ দেশ থেকে নির্বাসিতও হয়েছিলেন। একসময়ের প্রতাপশালী সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়, তারপর ১৯৯৪ সালে তিনি রাশিয়ায় ফিরে আসেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি রাশিয়াতেই বসবাস করেন। তসলিমা নাসরিনের নির্বাসনের প্রায় তিন দশক হতে চলল। তিনি কি ফিরতে পারবেন নিরাপদ স্বদেশে?
তসলিমা নাসরিন দেশে ফিরতে পারছেন না—এই দুর্ভাগ্য কি তাঁর একার? এই ব্যর্থতার দায় কি রাষ্ট্র এড়াতে পারে? দীর্ঘ নির্বাসনজীবনে তসলিমা নাসরিন তাঁর মায়ের মৃত্যুসংবাদ পেয়েছেন। মায়ের পর পিতৃবিয়োগের মতো শোক সইতে হয়েছে। অনেক স্বজন হারিয়েছেন। তবু দেশে ফিরতে পারেননি। তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার আসল বাধা কোথায়?
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে পত্রিকায় কলাম ও নারীদের অধিকার নিয়ে জোরালো লেখালেখির মধ্য দিয়ে তসলিমা বেশ আলোচনায় আসেন। ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদিত সাপ্তাহিক ‘খবরের কাগজ’ নামক পত্রিকায় তিনি নিয়মিত লিখতেন বলে সেই অফিসে একদল ধর্মান্ধ লোক হামলা চালায়। এ সময় তাঁর আলোচিত প্রবন্ধ সংকলন ‘নির্বাচিত কলাম’ প্রকাশিত হয়। বইটির জন্য ১৯৯২ সালে তসলিমা আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর ভারতের অযোধ্যায় হিন্দু উগ্রবাদীদের দ্বারা বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা ঘটে, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর। বিভিন্ন জায়গায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা হয়। এটা নিয়ে তসলিমা লিখেছিলেন তাঁর আলোচিত উপন্যাস ‘লজ্জা’। বইটি প্রকাশের পরপরই নিষিদ্ধ হয় এবং তাঁর জীবননাশের হুমকি আসতে থাকে। বইমেলায় তিনি নিগ্রহের শিকার হন। এর কিছুদিন পরে তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন।
তসলিমা নাসরিন প্রায়ই বলেন, শুধু উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীই নয়, তাঁকে দেশে ফেরার সুযোগ দেয়নি বিএনপি-জামায়াত জোট এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারও। নানা সময়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তব্য দিয়েছেন। ১৯৯৪ সালের মাঝামাঝি দেশ ছাড়ার পর তসলিমা নাসরিন নবায়ন করতে পারেননি নিজ দেশের পাসপোর্ট। দূতাবাসগুলো বারবার ফিরিয়ে দিয়েছে তাঁকে। তবু তিনি হাল ছাড়েননি। বিএনপি আমলে দেশ ছাড়লেও উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভয়ে খালেদা জিয়া কিংবা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার তসলিমা নাসরিন প্রশ্নে অভিন্ন ঐক্য বলে লেখক নিজেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাঁর লেখায় মন্তব্য করেছেন। কারও আমলেই তিনি দেশে বসবাসের জন্য ফিরে আসতে পারেননি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের পর বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারও তসলিমার দেশে ফেরার ব্যাপারে ইতিবাচক নয়।
তসলিমা নাসরিনের দেশে ফেরার আইনি বাধা নিয়ে কথা হয়েছিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুবীর নন্দী দাশের সঙ্গে। তিনি জানালেন, ‘তসলিমা নাসরিনের দেশে ফিরতে আইনি কোনো বাধা নেই। কোনো নাগরিককে নিজ দেশে আসতে সরকার বাধা দিতে পারে না। কোনো কারণেই পারে না। এমনকি কেউ অপরাধী হলেও দেশে তার বিচার হতে পারে, শাস্তি হতে পারে; কিন্তু দেশে আসতে বাধা দেওয়া যায় না। তসলিমা নাসরিনের দেশে প্রবেশে বাধা সামাজিক ও রাজনৈতিক। ধর্মীয় মৌলবাদীদের ভয়ে কোনো সরকারই তাঁকে দেশে আসতে দিতে ইচ্ছুক নয়। সে জন্যই তাঁর পাসপোর্ট নবায়ন করে দিচ্ছে না।’
তসলিমা নাসরিন একজন লেখক; তিনি খুনি নন, যুদ্ধাপরাধী বা দেশদ্রোহী নন, দুর্নীতিবাজও নন। একজন লেখক তাঁর মা, মাটি ও ভাষাকে গভীরভাবে ভালোবেসেই লেখালেখি করেন। তিনি তাঁর মাতৃভূমিতে বসবাসের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবেন কেন? কেন নির্বাসিত থাকবেন দীর্ঘদিন? সভ্যতার এত উন্নতির কালে রাষ্ট্রই তার জবাব দিক।
লেখক: তরুণ কবি ও গবেষক
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ছায়া পড়েছে দেশের শিল্পাঙ্গনেও। শিল্পকলার বিভিন্ন শাখা চর্চার প্রাণকেন্দ্র শিল্পকলা একাডেমিতে চলছিল অস্থিরতা ও কিছুটা স্থবিরতা। সেই অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সচেষ্ট হয়েছে কর্তৃপক্ষ। তার অংশ হিসেবে চলছে নানা কার্যক্রম। চীন থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একাডেমির শিল্পীরা গতকাল শনিবার...
১৩ ঘণ্টা আগেআকাশি রঙের বাড়ি। দোতলায় দুটি কক্ষে আলো জ্বলছে। সন্ধ্যার আবছা আঁধারে ছেয়ে আছে বাড়িটির চারদিকের গাছগুলো। সন্ধ্যার নীল আকাশে ভেসে বেড়াচ্ছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। বাড়ির সামনে ল্যাম্পপোস্টের আলোয় জলাশয়ে প্রকৃতির এই মোহনীয় ছবি প্রতিফলিত হয়েছে।
৪ দিন আগেচারুশিল্প হচ্ছে মানুষের অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। একটি ছবি একটি বিপ্লবের উন্মেষ ঘটাতে পারে। ছবি শুধু বিনোদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি বিপ্লবের বার্তাও নিয়ে আসে।
১৫ দিন আগেআপনি যে বয়সেরই হোন না কেন, এই বই পড়লে তারুণ্যশক্তিকে অনুভব করবেন, অনুপ্রাণিত হবেন। নতুন শুরুর একটা তাগিদ পাবেন। এই তরুণদের প্রত্যেকের মতো আপনিও বলে উঠবেন—সব সম্ভব! এই বইয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে জন্ম নেওয়া অবহেলিত অবস্থা থেকে সাফল্যের শীর্ষে যাওয়ার পথচলার গল্প উঠে এসেছে। প্রায় চার শ পৃষ্ঠার বইটির দাম
২২ দিন আগে