নারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার পথ দেখাচ্ছে খুবি শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ ‘সমৃদ্ধি’

রুবায়েত হোসেন, খুবি
Thumbnail image
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বিরাট গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের পুরোনো কাপড় ও পাট ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাগ, টুপিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সমৃদ্ধির সদস্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বিরাট গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের জীবনে পরিবর্তনের আশা জাগাচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) শিক্ষার্থীদের উদ্যোগ ‘প্রজেক্ট সমৃদ্ধি’। পুরোনো কাপড় আর পাটের সৃজনশীল ব্যবহারের মাধ্যমে শুধু পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরি নয় নারীদের স্বাবলম্বী করার পথ দেখাচ্ছে। পাশাপাশি, শিশুদের সৃজনশীলতা বিকাশ এবং শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর কাজেও রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ অবদান। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষার্থীর হাত ধরে গড়ে ওঠা এই উদ্যোগ ব্র্যাকের ‘আমরা নতুন নেটওয়ার্ক’ প্রোগ্রামের খুলনা অঞ্চলের অংশ।

২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতজন শিক্ষার্থী—নিশাত জাহান নাদিরা, এম ডি আব্দুল খালেক সরকার, সুমাইয়া আফরিন অর্থি, আরাফাত বিন সোহেল, মো. সৌরভ হোসেন, মশিউর রহমান ও জারিন তাসনিম রিথি মিলে শুরু করেন ‘সমৃদ্ধি’। নিজেদের সঞ্চিত অর্থ দিয়ে শুরু হওয়া এই প্রজেক্ট এখন পরিচালিত হচ্ছে পণ্য বিক্রি থেকে অর্জিত লভ্যাংশের মাধ্যমে।

প্রজেক্টের সদস্যরা জানান, তাঁদের উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পণ্য তৈরির মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত নারীদের আয়ের সুযোগ তৈরি করা। নারীদের দেওয়া হয় বিশেষ প্রশিক্ষণ, যেখানে পুরোনো কাপড় এবং পাট ব্যবহার করে বাজারের ব্যাগ, মাল্টিপল ইউজ ব্যাগ, পরিবেশবান্ধব প্যাকেজিং ব্যাগ, পাপস, জায়নামাজ, নকশিকাঁথা এবং ডিজাইনার টুপি তৈরির কৌশল শেখানো হয়। প্রশিক্ষণ শেষে তাঁরা নিজেরা এই পণ্য তৈরি ও বাজারজাত করেন।

সমৃদ্ধি উদ্যোগের সুফল ভোগ করছেন খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বিরাট গ্রামের অনেক নারী। তাঁদের মধ্যে অন্যতম শিমলা বেগম। যিনি আগে থেকেই দরজির কাজ জানতেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানতাম না, পুরোনো কাপড় দিয়ে ব্যাগ বানিয়ে রোজগার করা সম্ভব। এখানে এসে নতুন কিছু শিখেছি। এখন আমার আয় বেড়েছে, যা আমার দুই সন্তানের পড়াশোনার খরচ চালাতে কাজে লাগছে।’

সমৃদ্ধির সদস্য মশিউর রহমান বলেন, সমৃদ্ধি শুধু নারীদের স্বাবলম্বী করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি এলাকার শিশুদের জন্যও কাজ করছে। পাশের বিরাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শুরু হয়েছে ক্লাইমেট আইডল গড়ে তোলার উদ্যোগ। সৃজনশীল কার্যক্রম, গ্রুপ অনুশীলন এবং সচেতনতা সেশনের মাধ্যমে শিশুদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সম্পর্কে জানানো হচ্ছে এবং তাঁদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশে সহায়তা করা হচ্ছে।

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বিরাট গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের পুরোনো কাপড় ও পাট ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাগ, টুপিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সমৃদ্ধির সদস্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার বিরাট গ্রামের সুবিধাবঞ্চিত নারীদের পুরোনো কাপড় ও পাট ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যাগ, টুপিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরির বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন সমৃদ্ধির সদস্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভবিষ্যতের লক্ষ্য নিয়ে মশিউর রহমান জানান, সমৃদ্ধি বড় স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে তাঁরা গরিব ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি প্রদান, স্কুলে একটি মানসম্মত পাঠাগার স্থাপন এবং বই-খাতা ও বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ বিতরণের পরিকল্পনা করছেন।

সমৃদ্ধির সহপ্রতিষ্ঠাতা নিশাত জাহান নাদিরা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য শুধু নারীদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা নয়, তাঁদের পরিবার এবং এলাকার শিশুদের জীবনমান উন্নত করা। আমরা চাই, এই উদ্যোগটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠুক, যা অন্যরাও অনুসরণ করতে পারে।’

নিশাত জাহান আরও বলেন, সমৃদ্ধি পুরোনো কাপড় ও পাটকে নতুন রূপ দিয়ে শুধু পণ্য নয়, জীবনের গল্পও গড়ে তুলছে। এটি নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ রক্ষা এবং শিশুদের বিকাশে এক অনন্য উদ্যোগ। এলাকাবাসীর প্রত্যাশা, এ ধরনের উদ্যোগ সমাজে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে এবং অন্যদেরও অনুপ্রাণিত করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত