Ajker Patrika

বিএমডিএতে অস্থিরতা, সেচ কার্যক্রম ব্যাহতের আশঙ্কা

  • রাসিকের সাবেক মেয়র ও আ.লীগ নেতা খায়রুজ্জামান লিটনের সহকারী ছিলেন ইডি শফিকুল
  • বদলির আদেশের পরও ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেন তিনি
  • মামলা, বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, সাময়িক বরখাস্ত ও শোকজের ঘটনাও ঘটে
  • বিষয়টা মন্ত্রণালয় দেখছে বলে জানান বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আপডেট : ১১ এপ্রিল ২০২৫, ০৮: ৫৬
বিএমডিএতে অস্থিরতা, সেচ কার্যক্রম ব্যাহতের আশঙ্কা

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সদ্য সাবেক নির্বাহী পরিচালক (ইডি) শফিকুল ইসলামকে তাঁর দপ্তর থেকে বের করে দেওয়াকে কেন্দ্র করে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে সংস্থাটিতে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শফিকুলের মামলা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো, দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও আটজনকে শোকজের মতো পদক্ষেপের ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাঁরাও পাল্টা কর্মসূচি দিতে যাচ্ছেন। এসব কারণে ভরা মৌসুমে যেকোনো সময় বন্ধ হতে পারে সেচ কার্যক্রম।

এদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তোপের মুখে শফিকুল অফিস ছাড়ার পর গত সোমবার নতুন ইডি নিয়োগ দেয় সরকার। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে অতিরিক্ত সচিব তরিকুল আলমকে ইডি নিয়োগ করা হয়। এ নিয়েও সংস্থার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাঝে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। তাঁরা বলছেন, বিএমডিএর কাজ প্রকৌশলবিদ্যার। প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ পদে অযোগ্য।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা

গত ১৪ জুলাই বিএমডিএর ইডি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন অতিরিক্ত সচিব শফিকুল ইসলাম। সূত্র বলছে, তিনি একসময় রাজশাহীর সাবেক সিটি মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সহকারী ছিলেন। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তাঁকে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়। কিন্তু এক মাস পেরিয়ে গেলেও তিনি বিএমডিএ ছাড়ছিলেন না।

ফলে ২৩ মার্চ একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী গিয়ে তাঁকে দপ্তর ছাড়তে বাধ্য করেন। এরপরই হেনস্তার অভিযোগে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন শফিকুল। ১৩ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম উল্লেখ করে তিনি মামলাও করেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় ৫০ থেকে ৬০ জনকে। ঘটনার পরপরই তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। একজন নির্বাহী প্রকৌশলী ও একজন সহকারী প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। শোকজ করা হয়েছে আটজনকে। ২৫ মার্চ স্বাক্ষর করা শোকজের এই চিঠি তাঁরা পেয়েছেন গত মঙ্গলবার। একের পর এক এই পদক্ষেপের ফলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এসবের বিরুদ্ধে তাঁরাও পাল্টা কর্মসূচি গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন। গত ২৬ মার্চ রাজশাহী এবং ২৭ মার্চ রংপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বিএমডিএর একজন পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ইডি শফিকুল ছিলেন প্রশাসনের কর্মকর্তা। তাই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি নিজের ক্ষমতা দেখিয়ে অর্ধশত কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। প্রভাব খাটিয়ে একজনকে বাধ্যতামূলক অবসর এবং দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করিয়েছেন। তদন্তের আগেই এভাবে অব্যাহতি ও সাময়িক বরখাস্ত করা একেবারেই নজিরবিহীন। ফলে বিএমডিএর সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ। তাঁরাও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে সেচ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।

বিরোধ কেন ইডির সঙ্গে খায়রুজ্জামান লিটনের সুপারিশে শফিকুল বিএমডিএর ইডি হয়েছিলেন বলে জানান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ফলে আওয়ামী সরকারের পতনের পরই তাঁর সঙ্গে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দূরত্ব বাড়তে থাকে। পরিস্থিতি আরও প্রকট হয় যখন আওয়ামী সরকারের পতনের পরও সেই দলের সমর্থক ও সুবিধাভোগী কর্মকর্তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পদায়ন করতে থাকেন তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, মাহফুজুর রহমান নামের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছাড়া কাউকেই পাত্তা দিতেন না শফিকুল। মাহফুজুর বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের রাজশাহী অঞ্চলের চাকরিবিষয়ক সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ মনোনীত আইইবি রাজশাহী কেন্দ্রের সদস্য। তাঁর পরামর্শ মোতাবেক ইডি ১৭ বছর ধরে বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের রাজশাহীতে বদলি করে না এনে বিগত সরকারের সুবিধাভোগীদেরই একের পর এক নানা সুবিধা দিতে থাকেন। নিজের বদলির আদেশের পরও ইডি শফিকুল ইসলাম বিএমডিএর নাজিরুল ইসলাম নামের এক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলীকে রাজশাহী সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে বদলির আদেশ জারি করেন। অথচ নাজিরুল বিগত সরকারের আমলে অনুমোদিত ২৫০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে কাজ করছেন। নাজিরুল গত সরকারের আমলে মোট তিনটি প্রকল্পের পিডি হিসেবে কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, বদলির আদেশের পরও ইডি শফিকুল গত ১৩ মার্চ দুটি আদেশে ২৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বদলি করেন। এর আগে ১৮ ফেব্রুয়ারি আরও দুই আদেশে ২৭ জনকে বদলি করা হয়। আর যেসব কর্মচারী জুলাই আন্দোলন দমনে সরাসরি লাঠি হাতে মাঠে নামেন, তাঁদের বহাল রাখা হয়। ইডির বদলির আদেশের পর মাহফুজুর রহমান কর্মচারী ইউনিয়নের নেতাদের ডেকে মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদনপত্র পাঠানোর নির্দেশনা দেন। এতে শফিকুল ইসলামকে বিএমডিএতেই রাখার দাবি জানাতে বলা হয়।

এসব বিষয়ে কথা বলতে সদ্য সাবেক ইডি শফিকুলকে কয়েক দফা ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

বিএমডিএর ভারপ্রাপ্ত সচিব এনামুল কাদির বলেন, ‘উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিএমডিএতে একটা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা ঠিক। তবে এটা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। বিষয়টা এখন মন্ত্রণালয় দেখছে।’

মনগড়া তদন্ত কমিটির অভিযোগ

এদিকে শফিকুলকে তাঁর দপ্তর থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনায় সংস্থার চেয়ারম্যান মনগড়া তদন্ত কমিটি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর নির্দেশনা অমান্য করে নিজের ইচ্ছেমতো তদন্ত কমিটি করেছেন বলে অভিযোগ।

বিএমডিএ পরিচালনা বোর্ডের সদস্য সাইফুল ইসলাম হীরকের দাবি, কৃষি উপদেষ্টা তাঁকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করতে বলেছিলেন। কিন্তু বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. এম আসাদুজ্জামান উপদেষ্টার নির্দেশনা আমলে না নিয়ে ইচ্ছেমতো তদন্ত কমিটি করেছেন। এই কমিটি ভেঙে দিতে তিনি গতকাল বৃহস্পতিবার বিএমডিএ চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছেন। চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী চিঠিটি গ্রহণ করেছেন।

সার্বিক বিষয়ে জানতে ফোন করা হয় বিএমডিএ চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামানকে। তিনি পরিচয় পেয়েই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আর ফোন ধরেননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জীবিকার একমাত্র অবলম্বন ঘোড়ার মৃত্যুতে দিশেহারা হালিমার পরিবার

কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি 
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় হালিমার ঘোড়া। ছবি: আজকের পত্রিকা
নীলফামারীর কিশোরগঞ্জে বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় হালিমার ঘোড়া। ছবি: আজকের পত্রিকা

ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ ও হাটবাজারে ভাড়া খাঁটিয়ে যার মাধ্যমে চলত হালিমা আক্তার ও তাঁর পরিবারের খরচ, সেই একমাত্র অবলম্বন হারিয়ে এখন দিশেহারা তাঁরা। কয়েক বছর ধরে একটি ঘোড়াকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল পরিবারের জীবিকা। সেই ঘোড়ার হঠাৎ মৃত্যুতে থমকে গেছে তাঁদের সব স্বপ্ন ও সংগ্রাম।

গতকাল বুধবার বিকেলে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার নিতাই ইউনিয়নের কেরানীপাড়ায় বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় হালিমার ঘোড়াটি। হালিমা আক্তার নওগাঁর ধামরাই এলাকার ওয়াবদুল ইসলামের মেয়ে। বাবা-মেয়েসহ পরিবারটি ঘোড়া নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিযোগিতায় অংশ নিত।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, প্রতিযোগিতা শুরুর আগে হঠাৎ ঘোড়াটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলেও তারাগঞ্জ বাজার এলাকায় পৌঁছালে ঘোড়াটির অবস্থার আরও অবনতি ঘটে। পরে দ্রুত তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঘোড়াটি মারা যায়।

এই ঘোড়া দিয়েই হালিমার বড় বোন তাসমিনা আক্তার একসময় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। বড় বোনের হাত ধরে হালিমার ঘোড়দৌড়ের সঙ্গে যুক্ত হওয়া। অন্যের ঘোড়া দিয়ে শুরু হলেও পরে বিভিন্ন মানুষের সহায়তায় পরিবারটি নিজস্ব একটি ঘোড়া পায়। সেই ঘোড়াই ছিল তাঁদের পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস।

হালিমার বাবা ওয়াবদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘোড়াটি দিয়ে আমাদের সংসার চলত। প্রতিযোগিতা, মালপত্র বহন সবই এই ঘোড়ার ওপর নির্ভরশীল ছিল। সুস্থ অবস্থায় নওগাঁ থেকে নিয়ে এসেছিলাম। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ায় আমরা এখন সম্পূর্ণ অসহায়।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে হালিমা আক্তার বলেন, ‘এই ঘোড়াটা আমরা নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করেছি। ওকে নিয়ে খেলায় যেতাম, সংসার চলত। এখন ঘোড়াটা নেই, আমাদেরও কিছু নেই। কীভাবে চলব বুঝতে পারছি না।’

ঘোড়দৌড় দেখতে আসা দর্শক মিজু সরকার হৃদয় বলেন, ‘হালিমা বেগম ও তাঁর ঘোড়াকে আমরা প্রায়ই প্রতিযোগিতায় দেখতাম। তাঁদের জীবিকার একমাত্র ভরসাটা হারিয়ে গেছে। সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।’

এ বিষয়ে তারাগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন ইসরাতুজ্জাহান ইমা বলেন, ‘ঘোড়াটি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় আমাদের কাছে আনা হয়। প্রচণ্ড জ্বর ও ব্যথায় ভুগছিল। প্রায় দুই ঘণ্টা চিকিৎসা দেওয়া হলেও অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যুবদল নেতা আরিফ শিকদার হত্যা: সুব্রত বাইনের মেয়ে ৫ দিনের রিমান্ডে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
খাদিজা ইয়াসমিন বিথীর গ্রেপ্তারের ফাইল ছবি
খাদিজা ইয়াসমিন বিথীর গ্রেপ্তারের ফাইল ছবি

যুবদল নেতা আরিফ সিকদার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের মেয়ে খাদিজা ইয়াসমিন বিথীকে ৫ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বৃহস্পতিবার এ নির্দেশ দেন বলে জানিয়েছেন আদালতের হাতিরঝিল থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) এসআই আরিফ রেজা।

কুমিল্লা জেলা কারাগারের সামনে থেকে ১৫ ডিসেম্বর খাদিজাকে আটক করা হয়। পরদিন তাঁকে আরিফ সিকদার হত্যার ঘটনায় রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এরপর ওই মামলায় খাদিজাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশ পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম।

তবে মামলার মূল নথি ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে না থাকায় সেদিন খাদিজাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে ১৮ ডিসেম্বর রিমান্ড শুনানির জন্য দিন ঠিক করা হয়।

খাদিজাকে আজ কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হলে শুনানি শেষে ৫ দিন রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও তাঁর মেয়ে খাদিজা মগবাজার ও হাতিরঝিল এলাকায় আধিপত্য বিস্তার শুরু করেন। যুবদল নেতা আরিফকে তাঁরা প্রতিপক্ষ মনে করতেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তাঁদের পরিকল্পনায় আরিফকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আসামি খাদিজা জড়িত ছিল বলে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যাচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, গত ১৯ এপ্রিল রাতে হাতিরঝিল থানার নয়াটোলা মোড়ল গলির দি ঝিল ক্যাফের সামনে আরিফ সিকদারকে গুলি করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২১ এপ্রিল মারা যান ঢাকা মহানগর উত্তরের ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সহ-ক্রীড়া সম্পাদক।

এ ঘটনায় নিহতের বোন রিমা আক্তার সুব্রত বাইনের সহযোগী মাহফুজুর রহমান বিপুসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ইউপি সদস্যের কার্যালয়ে আটকে রাখা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার, নির্যাতনে মৃত্যুর অভিযোগ

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি 
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের কাশিরা বাজারে এক ইউপি সদস্যের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে সুজন মণ্ডল (মাইক্রোবাসচালক) নামের এক ব্যক্তির ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জয়পুরহাট জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।

নিহত সুজন মণ্ডলের স্ত্রী মারুফা আক্তারের অভিযোগ, টাকা চুরির অভিযোগে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন তাঁর স্বামীকে রাতভর আটকে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। পরে ঘটনাটি আড়াল করতে গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যার নাটক সাজানো হয়েছে।

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন রেজা বলেন, ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের ব্যক্তিগত কার্যালয় থেকে সুজন মণ্ডলের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। মাথায় ব্যান্ডেজ ও শরীরের পেছনের অংশে কালশিটে দাগ দেখা গেছে। প্রাথমিকভাবে মারধরের আলামত পাওয়া গেছে।

নিহত সুজন মণ্ডল উপজেলার কাশিরা পুকুরিয়া গ্রামের ওসমান মণ্ডলের ছেলে। তিনি পেশায় মাইক্রোবাসচালক ছিলেন। এলাকায় তাঁর বিরুদ্ধে মাদক সেবন ও চুরির অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, গতকাল বুধবার পাকুরদাড়িয়া গ্রামে বিজয় দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ওই দিন বিকেলে সুজন মণ্ডল তাঁর খালাতো বোন সোনাভানের বাড়িতে গিয়ে দরজা ভেঙে ৭০ হাজার টাকা চুরি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। পরে সন্ধ্যার দিকে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেনের সহায়তায় তাঁকে আটক করা হয়। মারধরের একপর্যায়ে সুজন টাকা চুরির কথা স্বীকার করেন এবং চুরি হওয়া টাকার ৪৫ হাজার টাকা ফেরত দেন।

এরপর ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন সুজন মণ্ডলকে কাশিরা বাজারে তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে নিয়ে যান। তিনি থানায় খবর দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তি দেওয়ার কথা জানান। তবে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে না যাওয়ায় দুজন গ্রাম পুলিশ দিয়ে তাঁকে কার্যালয়ে আটকে রাখা হয়।

আজ সকালে সুজন মণ্ডল তাঁর স্ত্রী মারুফা আক্তারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। কিছু সময় পর পাহারায় থাকা গ্রাম পুলিশরা তাঁর আত্মহত্যার খবর দেন। পরে স্বজনেরা গিয়ে দেখেন, কার্যালয়ের ফ্যানের হুকের সঙ্গে রশি প্যাঁচানো অবস্থায় সুজন মণ্ডলের লাশ ঝুলে আছে।

নিহতের স্ত্রী মারুফা আক্তার বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন আমার স্বামীকে ডেকে এনে রাতভর দফায় দফায় লাঠিপেটা করেছেন। তাঁর মাথায় ব্যান্ডেজ ছিল। নির্যাতনের কারণেই আমার স্বামীর মৃত্যু হয়েছে। থানা থাকতে কেন তাঁকে সারা রাত আটকে রাখা হলো? আমি জড়িত সবার বিচার চাই।’

তবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি সদস্য সেলিম হোসেন বলেন, ‘সুজন টাকা চুরি করেছিল। গ্রামবাসী তাকে মারধর করেছে। পরে তাকে আমার কার্যালয়ে এনে রাত ১০টার পর পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ রাতে ভ্রাম্যমাণ আদালত হবে না জানালে দুজন গ্রাম পুলিশ পাহারায় রেখে আমি বাড়িতে চলে যাই। পাহারার দায়িত্বে থাকা গ্রাম পুলিশ প্রকৃতির ডাকে বাইরে গেলে সে আত্মহত্যা করে।’

গোপীনাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, ‘ইউপি সদস্যের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে কাউকে আটকে রাখার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়নি। ইউপি সদস্যের এমন ক্ষমতা নেই। ঘটনাস্থলে গিয়ে ঝুলন্ত মরদেহ দেখি।’

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা বলেন, সকালে ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা মনে হলেও ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাচ্ছে না। অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুমিল্লায় বাস ধর্মঘটে অচল গণপরিবহন, চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা

কুমিল্লা প্রতিনিধি
বাস বন্ধ রেখে সড়কে বিক্ষোভ করছেন পরিবহনের মালিক-শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাস বন্ধ রেখে সড়কে বিক্ষোভ করছেন পরিবহনের মালিক-শ্রমিকেরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করে জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল থেকে নতুন বাস সার্ভিস চালু করার প্রতিবাদে কুমিল্লা নগরীর তিনটি প্রধান বাস টার্মিনাল থেকে সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছে কুমিল্লা বাস মালিক সমিতি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির ফলে নগরীসহ জেলার অন্তত ৪০টি সড়কে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় কর্মজীবী মানুষ, শিক্ষার্থী ও দূরপাল্লার যাত্রীরা পড়েছে চরম ভোগান্তিতে।

বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই নগরীর জাঙ্গালিয়া, শাসনগাছা ও চকবাজার বাস টার্মিনাল থেকে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এতে কুমিল্লা-ঢাকা, কুমিল্লা-চট্টগ্রাম, কুমিল্লা-সিলেট, কুমিল্লা-চাঁদপুরসহ গুরুত্বপূর্ণ আন্তজেলা ও অভ্যন্তরীণ রুটগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়ে।

পরিবহন-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল ব্যবহার করে কুমিল্লা-চাঁদপুর সড়কে আইদি পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধের দাবিতে এই ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়।

বাস বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে যাত্রীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বাস বন্ধ রাখায় দুর্ভোগে যাত্রীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির নেতারা অভিযোগ করেন, আইদি পরিবহন প্রয়োজনীয় রুট পারমিট ছাড়াই কুমিল্লার টার্মিনাল ব্যবহার করতে চাইছে, যা পরিবহন আইন ও বিদ্যমান নিয়মের পরিপন্থী।

আইদি পরিবহনের চেয়ারম্যান মীর পারভেজ আলম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ২০২৩ সালে চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে কুমিল্লা-চাঁদপুর রুটে তাঁদের বাস চলাচল শুরু হয়। তবে শুরু থেকেই একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট তাঁদের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। তিনি দাবি করেন, এসব বাধার কারণেই কুমিল্লা জেলা প্রশাসন থেকে রুট পারমিট ও অনাপত্তিপত্র পাওয়া যাচ্ছে না। বাধ্য হয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জাঙ্গালিয়া বাস টার্মিনাল ব্যবহার বন্ধ রেখে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকা থেকে বাস সার্ভিস পরিচালনা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে অনুমতি থাকলেও কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের রুট পারমিট ছাড়া কোনো পরিবহন কুমিল্লার টার্মিনাল ব্যবহার করতে পারে না। এর আগেও আমরা তাদের একাধিকবার সতর্ক করেছি। কিন্তু বিজয় দিবস ও বুধবার হঠাৎ প্রভাব বিস্তার করে টার্মিনালে বাস ঢুকিয়ে চলাচল শুরু করে। বৃহস্পতিবার আবার একই চেষ্টা করলে বাধ্য হয়ে ধর্মঘট পালন করা হয়।’

এদিকে বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সকাল থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় যাত্রীদের দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকতে দেখা যায়। অনেকে নিরুপায় হয়ে অটোরিকশা, মাইক্রোবাস কিংবা অন্যান্য বিকল্প যানবাহনে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে রওনা হন। শিক্ষার্থী ও অফিসগামীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ পায়।

পরিবহন-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ও সমন্বিত সিদ্ধান্ত না এলে এই সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে, যার সরাসরি ভুক্তভোগী হবে সাধারণ যাত্রীরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত