অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহারে পুলিশ ও বিজিবির ওপর বোমা হামলার পরিকল্পনায় গ্রেপ্তার ৪

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৯ মে ২০২১, ২৩: ০৬

ঢাকা: পুলিশের স্থাপনা ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) চেক‌পোস্ট হামলার পরিকল্পনা ছিল জ‌ঙ্গি‌দের। অক্সি‌জেন সি‌লিন্ডা‌রে বি‌স্ফোরক ভ‌রে হামলার প‌রিকল্পনা ক‌রে‌ছিল দল‌টি। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের চারজ‌নের এমন এক‌টি দল‌কে গ্রেপ্তার ক‌রে‌ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। আজ রোববার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টেলিগ্রাম আ্যপসের মাধ‌্যমে সায়েন্স প্রজেক্ট নামে এই গ্রু‌পটি সংঘবদ্ধ হ‌য়ে‌ছিল। ব‌লে দাবি করেন সি‌টি‌টি‌সির প্রধান ডিআইজি মো. আসাদুজ্জামান। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. জসিমুল ইসলাম জ্যাক, আবদুল মুকিত, আমিনুল হক ও সজীব ইখতিয়ার। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে একটি ব্যাগ, একটা চাপাতি, পাঁচটি স্মার্টফোন ও দুটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।

আসাদুজ্জামান বলেন, জঙ্গিরা ঢাকা ও সিলেটে পুলিশ ও বিজিবির টহল দলের ওপর হামলার পরিকল্পনা করেছিল। এ চক্রের বাকি দুই সদস্য হিজরতের উদ্দেশ্যে আফগানিস্তানে চ‌লে গে‌ছেন। গ্রেপ্তার চারজনেরও আইন–শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা করে আফগানিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল। এ জন্য তারা পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে রেকি করে।

পুলিশের সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান, আনসার আল ইসলামের গ্রেপ্তার সদস্যরা অনলাইনে টেলিগ্রাম আ্যপসে সায়েন্স প্রজেক্ট নামে একটি গ্রুপ তৈরি করে। সায়েন্স প্রজে‌ক্টের আড়া‌লে অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার করে বিস্ফোরক প্রস্তুতের চেষ্টা করে তারা। তাদের কাছ থেকে এ–সংক্রান্ত ডিভাইসও জব্দ করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা জানান, তাঁরা নাশকতামূলক কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে মোহাম্মদপুরে এসে একত্রিত হয়েছিলেন। আনসার আল ইসলামের দায়িত্বশীল বা মাসুল, ফরিদ ওরফে তারিক আবদুল্লাহর সহযোগিতায় সামাজিক যোগাযোগের আ্যপস গ্রুপ ও অনলাইনে সিক্রেট চ্যাটিং আ্যপস ব্যবহার করে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতেন তাঁরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সম্প্রতি সিলেটের কোতয়ালী থানা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা করে হোটেল ব্যবস্থাপককে আহত করে পালিয়ে যায়। এ সময় পু‌লিশ ভে‌বে‌ছি‌ল সাধারণ সন্ত্রাসী হামলা।

পু‌লিশের তথ্যমতে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে জসিমুল হক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অতীশ দীপংকর ইউনিভার্সিটির বিবিএ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী, মো. আবদুল মুকিত হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থানার মারকাজুস সুন্নাহ আল ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক, মো. আমিনুল হক সিলেটের আল হিদায়া ইসলামিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র ও মো. সজীব ইখতিয়ার সুনামগঞ্জ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। এদের সঙ্গে থাকা বাকি দুজন সম্প্রতি চট্টগ্রাম থে‌কে ভারতে যায়। সেখান থে‌কে পা‌কিস্তান হয়ে তারা আফগানিস্তান চ‌লে গেছে।

এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান বলেন, `আমাদের দেশে যারা নব্য জেএমবির বা অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্য, তারা বরাবরই ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার একটি বিষয়ে বলে। সেই প্রবণতা থেকেই কেউ আফগানিস্তানে গিয়ে থাকতে পারে।' মোহাম্মদপুর বসিলা এলাকায় জঙ্গিদের আনাগোনা বেশি কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, `শহরতলী এলাকাগুলোতে নিম্ন আয়ের মানুষ বসবাস করে এবং ঘনবসতি।‌ এসব জায়গা জঙ্গিরা তাদের আস্তানা হিসেবে বেছে নেয়।

বসিলা এলাকায় আশ্রয় নেওয়া জঙ্গিদের সঙ্গে মামুনুল হকের কোনো যোগাযোগ ছিল কি না—এমন প্রশ্নের উত্তরে আসাদুজ্জামান বলেন, `মামুনুল হকের বিষয়ে আমাদের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছেন। মামুনুল হকের সঙ্গে জঙ্গির বিষয়ে কিছু কথাবার্তা উঠে এসেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা মামুনুল হকের জিজ্ঞাসাবাদ করব।

সায়েন্স প্রজেক্টের বাকি সদস‌্যদের ব‌্যাপ‌রে সি‌টি‌টি‌সির উপক‌মিশনার সাইফুল ইসলাম ব‌লেন, দলটির সদস্য ১০ জন। এর ম‌ধ্যে আবদুর রাজ্জাকসহ দুজন আফগানিস্তা‌নে পা‌লি‌য়ে গে‌ছেন। চারজন গ্রেপ্তার হ‌য়ে‌ছেন। আর বাকি চারজন‌কে গ্রেপ্তা‌রের চেষ্টা চল‌ছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত